এ
মুহূর্তে বিশ্বে ১১০ ট্রিলিয়ন মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত বছর মশার কারণে সাড়ে ৮
লাখ মানুষ মারা গেছে। মশাবাহিত ম্যালেরিয়া থামিয়ে দিয়েছিল চেঙ্গিস খানের
পশ্চিমমুখী লুন্ঠন। পশ্চিমা গবেষক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক টিমোথি
সি.ওয়াইনগার্ড লিখিত ও সম্প্রতি প্রকাশিত ‘দি মসকুইটো : এ হিউম্যান হিস্টরি
অব আওয়ার ডেডলিয়েস্ট প্রিডেটর’ বইয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে তিনি এই
উড়ন্ত পতঙ্গকে ‘মানব বিনাশকারী’, ‘ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূত’, ‘বিশে^র মারাত্মক
প্রাণ সংহারক’ বলে বর্ণনা করেছেন। ওয়াইনগার্ড বলেন, মানব ইতিহাসে অন্য যে
কোন ঘটনার চেয়ে মশা সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ হত্যা করেছে। এ পর্যন্ত
বিশ্বে যত লোকের মৃত্যু হয়েছে তার অর্ধেকেরই হয়েছে মশার দ্বারা।
ওয়াইনগার্ড বলেন, মশা ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্তে অদৃশ্য খেলোয়াড়ের মত হানা দিয়েছে। মশা অনেক সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনও ঘটিয়েছে। বহু স্মরণীয় যুদ্ধে ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, মশা আলেকজান্ডার দি গ্রেটের পতন ঘটাতে সাহায্য করেছিল। পূর্ব ও পশ্চিমকে একত্রিত করতে সক্ষম হওয়ার আগেই ম্যালেরিয়াবাহী মশার কারণে তার জীবনাবসান ঘটেছিল। অন্যথায় ইতিহাস ও মানব সভ্যতার গতিপথ ভিন্ন হ’তে পারত।
ওয়াইনগার্ডের ভাষায়, মশা চেঙ্গিস খান ও তার মোঙ্গল সেনাবাহিনীর অগ্রাভিযান থেকে পাশ্চাত্যকে রক্ষা করে। তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর মাধ্যমে তাদের বিজয়যাত্রা থামিয়ে দিয়ে ইউরোপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
আমেরিকার বিপ্লব ও গৃহযুদ্ধেও মশার ভূমিকা ছিল। ম্যালেরিয়া ওয়াশিংটনের সেনাবাহিনীকে ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে আসে। কারণ আমেরিকানরা ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিলেও অধিকাংশ ব্রিটিশ সৈন্য ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক গ্রহণের বাইরে ছিল। ফলে তা আমেরিকানদের জন্য বিরাট সুবিধা বয়ে আনে।
আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় যুদ্ধে যত ব্রিটিশ সৈন্য মারা যায় তার পাঁচগুণ মারা যায় ম্যালেরিয়ায়। দেশের দক্ষিণে কয়েকটি অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞরা মিত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবাণু যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ইতালীতে নাজী সৈন্যদের পরিখা খনন ও জলাভূমিগুলো লোনা পানিতে ভরে তুলতে বাধ্য করে। যাতে সেসব স্থানে মারাত্মক প্রজাতির এনোফিলিস ল্যাবরানসিয়া মশার বিস্তার ঘটানো যায়।
ওয়াইনগার্ড আরো বলেন, মশার হাত থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য বিশ্বে প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে ১১ বিলিয়ন ডলার, যার অধিকাংশই কাজে আসছে না।
১৯৩০-এর দশকে হলুদ জ্বর বা ইয়েলো ফিভার প্রতিরোধে সফল ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়। এখনো প্রতি বছর ৩০ হাযার লোক ইয়েলো ফিভারে মারা যায়। জিকা ভাইরাস, যাতে গর্ভবতী মা আক্রান্ত হ’লে তা মাইক্রোসেফালির (শিশুর ত্রুটিপূর্ণ মাথা) মত জন্মত্রুটির কারণ হ’তে পারে। ২০১৬ সালে আমেরিকায় জিকা বিস্তার লাভ করলে বিশ্বব্যাপী যরূরী অবস্থা জারী করা হয়।
ওয়াইনগার্ড বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণহীন মানব জন্মহারের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে। তিনি মনে করেন, মশাজনিত মৃত্যু বাড়তেই থাকবে। আধুনিক বিজ্ঞান ও ঔষধ সত্ত্বেও মশা মানব সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর পতঙ্গ হিসাবে থাকবে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর মশার কারণে গড়ে ২০ লাখ, মানুষের হাতে পৌনে পাঁচ লাখ, সাপের কামড়ে ৫০ হাযার, স্যান্ড ফ্লাই-এর কামড়ে ২৫ হাযার, সেৎসি মাছির কামড়ে ১০ হাযার, কুমিরের আক্রমণে এক হাযার, জলহস্তির আক্রমণে ৫০০, হাতির আক্রমণে ১০০, সিংহের আক্রমণে ১০০, হাঙরের আক্রমণে ১০ ও নেকড়ের আক্রমণে ১০ জন মারা যায়।
[আল্লাহ বলেন, তোমার প্রতিপালকের সেনাবাহিনীর সংখ্যা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)। তাঁর হুকুমে এগুলি সীমালংঘণকারী বান্দাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। অতএব অবাধ্য নেতারা সাবধান হও (স.স.)]