উত্তর : ছূফী মতবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ। এটি রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈদের যুগে পরিচিত ছিল না। এমনকি হিজরী তৃতীয় শতক পর্যন্ত ছূফীবাদ বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেনি (ইবনু তায়মিয়াহহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া ১১/০৫)। হিন্দু, পারসিক ও গ্রীক দর্শনের কু-প্রভাবে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীতে মা‘রেফাতের নামে ছূফীবাদের সূচনা হয়। সর্বপ্রথম ইরাকের বছরা নগরীতে যুহ্দ বা দুনিয়া ত্যাগের প্রেরণা থেকে এটা শুরু হয়। প্রবল আল্লাহভীতি ও দুনিয়াত্যাগের বাড়াবাড়ি, সার্বক্ষণিক যিকর, আযাবের আয়াত পাঠে বা শুনে অজ্ঞান হওয়া বা মৃত্যু বরণ করা ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয় ছূফীবাদের যাত্রা। ছূফীবাদের পরিভাষায় এই অবস্থাকে ‘হাল’ বলে। তাদের আক্বীদাকে তিনটি মাযহাবে ভাগ করা যায়।

- প্রাচ্য দর্শনভিত্তিক মাযহাব, যা দক্ষিণ এশীয় হিন্দু ও বৌদ্ধদের নিকট থেকে এসেছে। এই মাযহাবের অনুসারী ছূফীরা মা‘রেফাত হাছিল করার জন্য দেহকে চরমভাবে কষ্ট দিয়ে স্বীয় ক্বলবকে তাদের ধারণা মতে জ্যোতির্ময় করার চেষ্টা করে থাকে। প্রায় সকল ছূফীই এরূপ প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন।

২- খ্রিষ্টানদের নিকট থেকে আগত মাযহাব, যা ‘হুলূল’ ও ‘ইত্তেহাদ’ দ’ুভাগে বিভক্ত। হুলূল অর্থ ‘মানুষের দেহে আল্লাহর অনুপ্রবেশ’। হিন্দু মতে ‘নররূপী নারায়ণ’। ইরানের আবু ইয়াযীদ বিস্তামী (মৃঃ ২৬১ হিঃ) ওরফে বায়েযীদ বুস্তামী ছিলেন এই মতের হোতা। এই মাযহাবের অন্যতম নেতা হুসাইন বিন মনছূর হাল্লাজ (মৃঃ ৩০৯ হিঃ) নিজেকে সরাসরি আল্লাহ (আনাল হক্ব) বলে দাবী করায় মুরতাদ হওয়ার কারণে তাকে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।

৩- ইত্তেহাদ বা ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে অদ্বৈতবাদী দর্শন বুঝায়, যা ‘হুলূল’-এর পরবর্তী পরিণতি হিসাবে রূপ লাভ করে। এর অর্থ হ‘ল আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ।  এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আঃ) -এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলতঃ আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছূতে বিরাজমান। অতএব, মানষের মধ্যে মুমিন ও মুশরিক বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মুর্তিপুজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পুজা করে, সে মূলতঃ আল্লাহকেই পুজা করে। সবকিছুর মধ্যে মুমিন আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা  কাফের  এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আঃ)-কেই প্রভূ বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহ’লে তারা কাফের হ’ত না। বলা বাহুল্য এটাই হ‘ল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট হ’লেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী (মৃঃ ৬৩৮হিঃ)। বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রেফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হ‘ল এই যে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হ’তে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে।

মাসীবী বলেন, আমরা একদিন ইমাম মালেক (রহঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, জনৈক নাছীবী বলল, হে আবু আব্দিল্লাহ! আমাদের এলাকায় ছূফী নামে কিছু লোক রয়েছে, যারা অনেক খায়। এরপর ক্বাছীদাহ (দীর্ঘ কবিতা) আবৃত্তি করে এবং একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে নেচে নেচে যিকির শুরু করে। ইমাম মালেক বললেন, তারা কি শিশু? সে বলল, না। তিনি বললেন, তারা কি পাগলের দল? সে বলল, না বরং আলেম-ওলামা। তিনি বললেন, কোন মুসলমান এমনটি করে বলে জানি না (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ২/৫৩-৫৪; ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। মারওয়ান বিন মুহাম্মাদ দামেশকী বলেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষের নিকট দ্বীন নিরাপদ নয়- ছূফী, গল্পকার ও বিদ‘আতী’ (কাযী ইয়ায, তারতীবুল মাদারেক ৩/২২৬)। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, কোন লোক যদি দিনের প্রথম প্রহরে ছূফী মতবাদ গ্রহণ করে তাহ’লে তুমি তাকে যোহরের সময় হ’তে না হ’তেই একেবারে আহম্মক অবস্থায় পাবে (বায়হাক্বী, মানাক্বিবুশ শাফেঈ ২/২০৭)। তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন ছূফী মতবাদে ঢুকে থাকবে সে আর কখনো সুস্থ আক্বীদায় ফিরতে পারবে না’ (ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস ১/৩২৭)। তিনি আরো বলেন, আমি ছূফীদের সংস্পর্শে গিয়ে কেবল দু’টি বিষয়ে উপকৃত হয়েছি। তারা বলে, ‘সময় তরবারী তুল্য। তুমি যদি তাকে না কাটো তাহ’লে সে তোমাকে কাটবে। আর তুমি যদি আল্লাহকে নিয়ে ব্যস্ত না হও, তাহ’লে বাতিল তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবে’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, মাদারিজুস সালেকীন ৩/১২৪)। আবু যুর‘আকে ছূফী হারেছ মুহাসেবী ও তার কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই এই কিতাবগুলো থেকে দূরে থাকবে। কারণ সেগুলো বিদ‘আত ও ভ্রষ্টতায় ভরপুর। তোমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল হাদীছের অনুসরণ করা। তাতে তোমরা এমন কিছু পাবে, যা তোমাদের জন্য যথেষ্ট (যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ১/৪৩১)। আবুবকর তুরতুশী বলেন, ‘ছূফী মাযহাব বাতিল এবং মূর্খতা ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ। কেবল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীছের মধ্যে ইসলাম রয়েছে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা ত্বোয়াহা ৯০ আয়াত, ১১/২৩৮)। ইমাম কুরতুবী বলেন, ছূফী তরীকা সত্য থেকে অনেক দূরে, মানুষের জন্য অনুপযোগী ও সুন্নাতের সাথে সাংঘর্ষিক (তাফসীরে কুরতুবী ১১/২৩৮)

এছাড়া ইবনু তায়মিয়াহহ, ইবনুল ক্বাইয়িম, ইবনু কুদামাহ, যাহাবী, ইবনুল জাওযী (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান উক্ত মতবাদের সমালোচনা করে স্বতন্ত্র গ্রন্থ সমূহ রচনা করেছেন (বিস্তারিত দ্র. দ্রঃ দরসে কুরআন, মা‘রেফতে দ্বীন, আত-তাহরীক, ২য় বর্ষ ৪র্থ সংখ্যা, জানুয়ারী ১৯৯৯; আব্দুর রহমান আল-ওয়াকীল, হাযিহী হিয়াছ ছূফিয়াহ, ১-১৮৮ পৃ.; ড. সাঈদ আব্দুল আযীম জামীল গাযী, আছ-ছূফিয়াহ)

সুতরাং ছূফীদের মধ্যে যারা বিশেষত হুলূল ও ইত্তেহাদ তথা অদ্বৈতবাদী ও সর্বেশ্বরবাদী আক্বীদা পোষণ করে এবং সেমতে আমল করে, যা কুফরীর পর্যায়ভুক্ত সেসব ইমামের পিছনে জেনেশুনে ছালাত আদায় করা সিদ্ধ হবে না।






প্রশ্ন (১২/৪১২) : মৃতের জন্য দ্রুত দাফন করার বিধান থাকা সত্ত্বেও রাসূল (ছাঃ)-এর দাফন মৃত্যুর দু’দিন পরে সম্পন্ন হওয়ার কারণ কি?
প্রশ্ন (২৩/৩০৩) : একজন প্রাণী চিকিৎসক হিসাবে কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির চিকিৎসা করে অর্থ উপার্জন করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?
প্রশ্ন (২৩/১৪৩) : আমি একটু খাটো হওয়ায় স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য বাসার ভিতরে বা বাইরে হাই হিল জাতীয় একটু উচু জুতা ব্যবহার করতে চাই। এতে শারঈ কোন বাধা আছে কি?
প্রশ্ন (২৪/১০৪) : পিতা-মাতা চান আমি ডাক্তার হই। আমি চাই ধর্মীয় বিষয়ে পড়াশুনা করতে। যাতে আমার অন্তরজগৎ আলোকিত হয় এবং আমি বেশী বেশী ইবাদত করতে পারি। ডাক্তার হতে গেলে আমাকে বিজ্ঞানের কঠিন কঠিন বিষয় নিয়ে এত বেশী সময় ব্যয় করতে হবে যে, আমি আবশ্যিক ইবাদতগুলিই ঠিকমত করতে পারব না। এক্ষণে আমার করণীয় কি? - -মুহাম্মাদ রেযা, গাইবান্ধা।
প্রশ্ন (৩৪/৪৩৪) : জনৈক আলেম বলেন, কোন নারী যদি কাউকে বালেগ হওয়ার পরেও স্বীয় দুগ্ধ পান করায়, সে উক্ত নারীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। এর সত্যতা আছে কি?
প্রশ্ন (৩৬/৩৯৬) : অন্যের জমি অবৈধভাবে দখল করলে তার কোন ইবাদত কবুল হয় না- কথাটি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত?
প্রশ্ন (৩/৪০৩) : কুরআন খতমের বিশেষ কোন দো‘আ পাঠ বা দলবদ্ধ মুনাজাতের নিয়ম আছে কি? কুরআনের মুছহাফে যে সকল দো‘আ লেখা থাকে, সেগুলোর কোন ভিত্তি আছে কি? - -বদীউয্যামান, নাচোল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ।
প্রশ্ন (২৫/৩০৫) : হক-বাতিল প্রকাশের ক্ষেত্রে বড়দের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে কি? এছাড়া বড়দের নাম ধরে ডাকায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?
প্রশ্ন (৩৬/১৯৬) : জনৈক ব্যক্তির স্ত্রী যেনায় লিপ্ত হয়েছে। তাদের একটি সন্তানও আছে। এক্ষণে স্বামীর করণীয় কি?
প্রশ্ন (১৩/২৫৩) : মসজিদের ইমাম চলে গেলে বা ছুটিতে থাকলে স্থানীয় শারঈ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি (যিনি ইতিপূর্বে উক্ত মসজিদে ৩০ বছর ইমাম ছিলেন) সঠিক সময়ে আযান দেন ও ইমামতি করেন। কিন্তু দ্বন্দ্ব ও হিংসার কারণে কিছু লোক আউয়াল ওয়াক্তে তার ইমামতিতে মূল জামা‘আতে অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। তারা দ্বিতীয় জামা‘আত করে বা একা একা ছালাত আদায় করে। এক্ষণে তাদের ছালাতের অবস্থা কী হবে? - -কায়েদ মাহমূদ ইমরানদক্ষিণ মাদারশী, উযীরপুর, বরিশাল।
প্রশ্ন (১৩/২৫৩) : আমি আমার স্ত্রীকে হোয়াটসএ্যাপে তিন তালাক দিয়ে দেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পর স্ত্রী দেখার আগেই আমি তা ডিলিট করে দেই। তাহ’লে তার বিধান কি হবে?
প্রশ্ন (১/৪১): কোন ব্যক্তি ঋণ রেখে মারা গেলে তার ওয়ারিছগণ যদি তা পরিশোধ না করে, তাহ’লে মৃত ব্যক্তি কি দায়ী হবে? না ওয়ারিছগণ অপরাধী সাব্যস্ত হবে?
আরও
আরও
.