ক্রয়-বিক্রয়ের
প্রয়োজনে মানুষ বাজারে গমন করে। সেখানে গিয়ে তারা কেনাকাটায় ব্যতিব্যস্ত
হয়ে পড়ায় অনেক সময় আল্লাহকে ভুলে যায়, তাঁর যিকর ও ইবাদতের কথাও বিস্মৃত
হয়ে যায়। এজন্য বাজার পৃথিবীতে আল্লাহ্র নিকটে সবচেয়ে অপ্রিয় স্থান।
তারপরেও জীবনের বিভিন্ন দরকারে বাজারে যেতে হয়। বাজারে গিয়েও মানুষ যেন
আল্লাহ্র স্মরণ থেকে গাফেল না হয় এবং তাঁর ইবাদত থেকে বিরত না থাকে সেজন্য
ইসলামে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো মেনে চললে পার্থিব জীবনের
প্রয়োজন মিটবে এবং পরকালে অগণিত ছওয়াব পাওয়া যাবে। তাই বাজার সংশ্লিষ্ট
আদব-কায়েদা সমূহ মেনে চলা যরূরী। আলোচ্য নিবন্ধে বাজারের আদব বা শিষ্টাচার
সমূহ আলোচনা করা হবে।-
বাজারের পরিচয় : যে স্থানে পণ্য বা প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য আনা হয় তাকে বাজার বলা হয়। একে বাজার নামকরণের কারণ হচ্ছে- এখানে বিক্রেতা পণ্য নিয়ে আসে তা বিক্রি করার জন্য এবং ক্রেতা প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে স্বীয় বাসস্থানে নিয়ে যায়।
বাজারের আদব সমূহ : বাজার উদাসীনতা, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি, ধোঁকা-প্রবঞ্চনা, মিথ্যাচার, বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতি পাপাচারের স্থান। এজন্য বাজারে গিয়েও মুমিন নিজেকে এসব থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি বাজারের শিষ্টাচার পালন করার চেষ্টা করবে। বাজারের আদব সমূহকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। ক. বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট, খ. বিক্রেতার সাথে সংশ্লিষ্ট, গ. ক্রেতার সাথে সংশ্লিষ্ট ও ঘ. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট।
ক. বাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট আদব :
১. উত্তম স্থান নির্বাচন করা : বাজারের জন্য উত্তম স্থান নির্বাচন করা যেখানে যাতায়াতের সুন্দর সুযোগ-সুবিধা থাকে। সে স্থান ক্রেতা-বিক্রেতা কারো জন্য যেন ক্ষতিকর স্থানে পরিণত না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা। আর সেখানে যাতে শরী‘আত পরিপন্থী দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় না হয় তার ব্যবস্থা করা।
২. ক্রেতা-বিক্রেতাকে হালাল-হারাম অবহিত করা : ইসলামে
কোন পণ্য হালাল এবং কোনটা হারাম সে সম্পর্কে ক্রেতা-বিক্রেতাকে অবহিত করার
ব্যবস্থা করা। কেননা এ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে বাজারকে কলুষিত করে ফেলবে।
ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, যার দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আছে কেবল
সেই যেন আমাদের বাজারে ব্যবসা করে।[1]
৩. বাজার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করা :
বাজারে ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নোংরা না করে সাধ্যমত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন
রাখার চেষ্টা করা মুমিনের জন্য করণীয়। কেননা ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখলে
সেগুলি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, যাতে অন্য মানুষের কষ্ট হয়। তাছাড়া
ছড়ানো-ছিটানো এসব ময়লা-আবর্জনার কারণে পথচারীর চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا مَعْشَرَ مَنْ قَدْ أَسْلَمَ بِلِسَانِهِ وَلَمْ
يُفْضِ الإِيمَانُ إِلَى قَلْبِهِ لاَ تُؤْذُوا الْمُسْلِمِينَ- ‘হে ঐ
জামা‘আত! যারা মুখে ইসলাম কবুল করেছ কিন্তু অন্তরে এখনো ঈমান মজবূত হয়নি।
তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দিবে না’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন,كُفَّ أَذَاكَ عَنِ
النَّاسِ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ تَصَدَّقُ بِهَا عَنْ نَفْسِكَ، ‘তুমি
মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাক। কেননা এটা ছাদাক্বাহ, যা তুমি নিজের
পক্ষ থেকে ছাদাক্বাহ করছ’।[3] তিনি আরো বলেন,مَنْ آذَى المُسْلِمِيْنَ فِيْ
طُرقِهِمْ وَجَبَتْ عَلَيْهِ لَعْنَتُهُمْ، ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদেরকে
তাদের চলাচলের রাস্তায় কষ্ট দেয়, তার জন্য অভিশাপ ওয়াজিব হয়ে যায়’।[4]
৪. বাজারকে হারাম পণ্য ক্রয়-বিক্রয় থেকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করা : শরী‘আতে যেসব বস্ত্ত হারাম সেগুলো থেকে বাজারকে মুক্ত রাখা আবশ্যক। কারণ বাজারে হারাম দ্রব্য সহজলভ্য হ’লে মানুষ এতে লিপ্ত হবে। আর হারামে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে তারা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খ. বিক্রেতার সাথে সংশ্লিষ্ট আদব :
১. ব্যবসায়ের মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য কামনা করা : ব্যবসায়ীরা যখন তার কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ্র নিকটে ছওয়াব আশা করবে তখন সে যাবতীয় হারাম থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে। আর তার এ উপার্জন দ্বারা পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত সৃষ্টির জন্য ব্যয় করার চেষ্টা করবে। তার অর্জিত সম্পদ থেকে সে দান-ছাদাক্বা করবে। অপরদিকে নিয়তের কারণে তার দুনিয়াবী কর্মকান্ড ইবাদতে রূপান্তরিত হবে।
২. হালাল পণ্য বিক্রয় করা : ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে হারাম পণ্য পরিহার করতে হবে। পানাহার, পোষাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা যেসব দ্রব্য হারাম করেছেন সেগুলো বিক্রি করা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। কেননা যা খাওয়া ও ব্যবহার করা হারাম তার ব্যবসাও হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا حَرَّمَ شَيْئًا حَرَّمَ ثَمَنَهُ ‘আল্লাহ যখন কোন বস্ত্ত হারাম করেন, তখন তার মূল্যও হারাম করেন’।[5] সুতরাং হালাল পন্য বিক্রি করার চেষ্টা করবে।
৩. সততা বজায় রাখা এবং পণ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা : ব্যবসায়ে
সততা ও ন্যয়পরায়ণতা বজায় রাখা এবং পণ্যের কোন দোষ-ত্রুটি থাকলে তা গোপন না
করে ক্রেতার কাছে তা ব্যক্ত করা মুসলমান ব্যক্তি মাত্রের করণীয়। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ
مِنْ أَخِيهِ بَيْعًا فِيهِ عَيْبٌ إِلاَّ بَيَّنَهُ لَهُ. ‘এক মুসলমান অপর
মুসলমানের ভাই। অতএব কোন মুসলমানের পক্ষে তার ভাইয়ের কাছে পণ্যের ত্রুটি
বর্ণনা না করে তা বিক্রয় করা বৈধ নয়’।[6]
আব্দুর
রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,ما سبب كثرة مالك؟ قال ما كتمت
عيبا، ولا رددت ربحا- ‘আপনার সম্পদের প্রবৃদ্ধির কারণ কি? তিনি বললেন, আমি
মালের দোষ-ত্রুটি গোপন করি না এবং অতিরিক্ত মুনাফা করি না’।[7]
৪. ব্যবসায়ে অধিক কসম খাওয়া পরিহার করা :
ব্যবসায়ে অধিক কসম খাওয়া থেকে বিরত থাকা। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِيَّاكُمْ
وَكَثْرَةَ الْحَلِفِ فِى الْبَيْعِ فَإِنَّهُ يُنَفِّقُ ثُمَّ يَمْحَقُ،
‘তোমরা ক্রয়-বিক্রয়কালে অধিক শপথ করা থেকে বিরত থাক। কেননা মিথ্যা শপথের
ফলে পণ্য বিক্রয় হ’লেও তার বরকত নষ্ট হয়ে যায়’।[8]
৫. হারাম ব্যবসা থেকে বিরত থাকা : হারাম ব্যবসা পরিহার করা ব্যবসায়ীর জন্য অপরিহার্য। যেমন ধোঁকা-প্রবঞ্চনামূলক ব্যবসা, সূদী ব্যবসা এবং ওযনে ও পরিমাপে কম দেওয়া ইত্যাদি থেকে সর্বতোভাবে বিরত থাকা কর্তব্য। এগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে পেশ করা হ’ল।-
ক. ধোঁকা-প্রবঞ্চনা ও ভেজাল মিশ্রিত করা :
মানুষকে ধোঁকা দেওয়া ও পণ্যে ভেজাল মিশ্রিত করা গোনাহের কাজ। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَرَّ عَلَى صُبْرَةٍ مِنْ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلاً فَقَالَ يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ مَا هَذَا. قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ أَفَلاَ جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ حَتَّى يَرَاهُ النَّاسُ. ثُمَّ قَالَ مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنَّا.
‘একদিন
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (বিক্রির জন্য) স্তূপীকৃত খাদ্যদ্রব্যের পাশ দিয়ে যাওয়ার
সময় এর ভিতর হাত ঢুকালে তাঁর আঙুলগুলো ভিজা পেলেন। তিনি মালিককে জিজ্ঞেস
করলেন, এটা কি? সে উত্তর দিল, বৃষ্টির পানিতে এ খাদ্যদ্রব্যগুলো ভিজে
গিয়েছিল হে আল্লাহ্র রাসূল! তখন তিনি বললেন, ভিজাগুলোকে স্তূপের উপরে রাখলে
না কেন, যাতে করে লোকেরা তা দেখতে পায়? অতঃপর তিনি বললেন, যে প্রতারণা করে
সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়’।[9]
খ. ওযন ও পরিমাপে কম দেওয়া :
ওযনে ও পরিমাপে কম দেওয়া কবীরা গোনাহ। এটি বান্দার সাথে সংশ্লিষ্ট পাপ। যা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন,وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ، الَّذِيْنَ إِذَا اكْتَالُوْا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُوْنَ، وَإِذَا كَالُوْهُمْ أَوْ وَزَنُوْهُمْ يُخْسِرُوْنَ، ‘দুর্ভোগ মাপে কম দানকারীদের জন্য। যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদের মেপে দেয়, বা ওযন করে দেয়, তখন কম দেয়’ (মুতাফফিফীন ১-৩)।
গ. সূদী ব্যবসা-বাণিজ্য :
আল্লাহ তা‘আলা সূদকে হারাম করেছেন। তিনি বলেন,وَأَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا- ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,لَعَنَ اللهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ- ‘আল্লাহ সূদগ্রহীতা, সূদদাতা, সাক্ষী ও লেখককে অভিসম্পাত করেছেন।[10] তাই বাজারে ও অন্যত্র সূদী ব্যবসা থেকে সর্বতোভাবে বিরত থাকা আবশ্যক।
ঘ. দালালীর মাধ্যমে ক্রেতাকে প্রতারিত করা :
কোন
কোন সময় ক্রেতার নিকটে অধিক মূল্য চাওয়া হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য থাকে
প্রতারণার মাধ্যমে ক্রেতার নিকট থেকে অধিক মূল্য আদায় করা। আবার এখানে
ক্রয়ের উদ্দেশ্য ব্যতিরেকে পণ্যের মূল্য বেশী বলে নিজে সটকে পড়া এবং
ক্রেতাকে ঐ অধিক মূল্যে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করা। এ ধরনের কাজকে আল্লাহ্র
রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেছেন। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন,أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى
الله عليه وسلم نَهَى عَنِ النَّجْشِ، ‘নবী করীম (ছাঃ) প্রতারণামূলক দালালী
হ’তে নিষেধ করেছেন’।[11]
৬. মজুদদারী কারবার না করা : ব্যবসার
উদ্দেশ্যে মজুদ করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন বাজারে সে খাদ্যবস্ত্তর
সংকট না থাকে। যদি বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মুনাফাখোরীর উদ্দেশ্যে
মজুদ করা হয়, তবে অবশ্যই তা অপরাধ হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি
মজুদদারী করে সে পাপী।[12] বর্তমানে ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে বাজারমূল্য
বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে মজুদদারী করে, তা থেকে আল্লাহভীরু মুসলিম ব্যবসায়ীকে
অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ التُّجَّارَ يُبْعَثُوْنَ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ فُجَّارًا إِلاَّ مَنِ اتَّقَى اللهَ وَبَرَّ
وَصَدَقَ- ‘ব্যবসায়ীরা ক্বিয়ামতের দিন পাপী হিসাবে উত্থিত হবে। কেবল তারা
ব্যতীত যারা আল্লাহকে ভয় করে, সৎকর্ম করে এবং ছাদাক্বা করে’।[13]
গ. ক্রেতার সাথে সংশ্লিষ্ট আদব :
১. উত্তম বাজার নির্বাচন করা : ক্রেতাকে এমন বাজার নির্বাচন করা উচিত যেখানে পাপাচার থেকে দূরে থাকা যায়। সেই সাথে এমন সময় নির্ধারণ করা উচিত যাতে নিজের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যেমন অতিরিক্ত ভিড়, মহিলাদের সমাগম প্রভৃতি।
২. ক্রয়কৃত পণ্য হালাল হওয়া : মুমিনের
পানাহার, পোষাক-পরিচ্ছদ, আসবাব পত্র, বাহন ইত্যাদি হালাল হওয়া যরূরী।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ، نَبَتَ مِن السُحْت
وَكُلُّ لَحْمٍ نَبَتَ مِن السُحْت، كانت النَّارُ أَوْلَى بِهِ، ‘যে দেহের
গোশত হারাম দ্বারা গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম দ্বারা
গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী’।[14] সুতরাং মুমিন মুত্তাক্বী ব্যক্তির
জন্য হারাম ভক্ষণ করা কিংবা হারাম দ্বারা জীবন যাপন করা সমীচীন নয়। আয়েশা
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-এর একজন ক্রীতদাস ছিল। সে
প্রতিদিন তার উপর ধার্য কর আদায় করত। আর আবূ বকর (রাঃ) তার দেওয়া কর হ’তে
আহার করতেন। একদিন সে কিছু খাবার জিনিস এনে দিল। তা হ’তে তিনি আহার করলেন।
তারপর গোলাম বলল, আপনি জানেন কি ওটা কিভাবে উপার্জিত করা হয়েছে যা আপনি
খেয়েছেন? তিনি বললেন, বলত কিভাবে (উপার্জিত)? গোলাম উত্তরে বলল, আমি জাহিলী
যুগে এক ব্যক্তির ভবিষ্যৎ গণনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু ভবিষ্যৎ গণনা করা
আমার ভালভাবে জানা ছিল না। তথাপি প্রতারণা করে তা করেছিলাম। আমার সাথে তার
দেখা হ’লে গণনার বিনিময়ে এ দ্রব্যাদি সে আমাকে হাদিয়া দিল যা হ’তে আপনি
আহার করলেন। আবূ বকর (রাঃ) এটা শুনামাত্র মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং
পেটের ভিতর যা কিছু ছিল সব বমি করে দিলেন।[15]
৩. হারাম দ্রব্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা : আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক হারামকৃত পণ্য ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা। এ ব্যাপারে মুমিন ক্রেতা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
৪. বিক্রেতার সাথে বিশ্বস্ত ও ন্যায়ানুগ ব্যবহার করা : মিথ্যা, শঠতা ও বিশ্বাসঘাতকতা মূলক আচরণ থেকে মুসলিম ক্রেতা অবশ্যই বিরত থাকবেন। যেমন বিক্রেতা জাল টাকা প্রদান করা, তাকে টাকা না দিয়েই মূল্য পরিশোধের দাবী করা, পণ্য চুরি বা আত্মসাৎ করা এবং পণ্যমূল্য নিয়ে বিক্রেতার সাথে বাক-বিতন্ডা ও দুর্ব্যবহার করা ইত্যাদি।
৫. বিক্রেতাকে উপদেশ দেওয়া : মুসলিম
ক্রেতার জন্য করণীয় হ’ল বিক্রেতার মাঝে কোন ত্রুটি দেখলে তাকে উপদেশ
দেওয়া। রাসূল (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ الْكَسْبِ كَسْبُ يَدِ الْعَامِلِ إِذَا
نَصَحَ، ‘উত্তম উপার্জন হচ্ছে ঐ কর্মীর হাতের কামাই যখন সে (মানুষকে) উপদেশ
দেয়’।[16] অন্য হাদীছে এসেছে, জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,بَايَعْتُ
رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ
الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ- ‘আমি আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)-এর
নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি ছালাত কায়েম করার, যাকাত প্রদান করার এবং সমস্ত
মুসলিমের মঙ্গল কামনা করার’।[17] অতএব মুসলিমের কল্যাণ কামনায় সর্বাবস্থায়
তাকে উপদেশ দিতে হবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে,فَكَانَ إِذَا اشْتَرَى
شَيْئًا أَوْ بَاعَهُ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهِ اِعْلَمْ أَنَّ مَا اَخَذْنَا
مِنْكَ أَحَبُّ إِلَيْنَا مِمَّا أَعْطَيْنَاكَهُ فَاخْتَرْ- ‘অতঃপর যখন সে
কিছু কিনবে কিংবা বিক্রয় করবে সে তার সাথীকে বলবে, জেনে রেখ যে, আমরা
তোমার থেকে যা গ্রহণ করেছি, সেটা আমাদের নিকটে পসন্দনীয় তোমাকে যা দিয়েছি
তদপেক্ষা। সুতরাং তুমি পসন্দ কর’।[18]
৬. মহিলা ক্রেতা হ’লে শরী‘আতের সীমা বজায় রাখা : মহিলারা
সাধারণভাবে একাকী বাজারে গমন থেকে বিরত থাকবে। কেননা আল্লাহ বলেন,وَقَرْنَ
فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى،
‘আর তোমরা নিজ নিজ গৃহে অবস্থান করবে। প্রাচীন জাহেলী যুগের ন্যায়
সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িয়ো না’ (আহযাব ৩৩/৩৩)। আর যদি তাদের
প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে দেওয়ার মত কেউ না থাকে এবং তারা বাজারে যেতে বাধ্য
হয় তাহ’লে শারঈ পর্দা বজায় রেখে নিরাপদ সময়ে গমন করবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ ‘মহিলা
হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হ’লে শয়তান তার দিকে চোখ তুলে
তাকায়’।[19]
ঘ. ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আদব :
১. বাজারে প্রবেশ করে আল্লাহ্র যিকর করা : বাজার এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে মানুষ ব্যস্ততার কারণে আল্লাহ্র স্মরণ ভুলে যায়। কিন্তু মুমিনের কর্তব্য হ’ল সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ রাখা। তাই বাজারে গিয়েও সে যিকর করবে। আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللهِ وَاذْكُرُوا اللهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ، ‘অতঃপর ছালাত শেষ হ’লে তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহ্র অনুগ্রহ তালাশ কর। আর তোমরা আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ কর যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (জুমু‘আহ ৬২/১০)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে বলবে,لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِى وَيُمِيتُ وَهُوَ حَىٌّ لاَ يَمُوتُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ- ‘(আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁর। তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেন। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। তাঁর হাতেই সকল কল্যাণ। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী)। আল্লাহ তার জন্য হাযার হাযার নেকী লিখবেন, হাযার হাযার গোনাহ মোচন করবেন এবং তার হাযার হাযার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন’।[20] হাযার হাযার বলতে এখানে অধিক সংখ্যক বুঝানো হয়েছে।
২. সালামের ব্যাপক প্রসার করা : সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো। ছাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ সালাম বিনিময়ের জন্যই কেবল বাজারে যেতেন। তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা‘ব হ’তে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-এর কাছে আসতেন এবং সকালে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)-এর নিকট গেলাম।
তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতে
বললেন। আমি বললাম, ‘আপনি বাজারে গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচা-কেনার জন্য
কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন না, তার দর-দাম জানতে চান
না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান,
এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেজন্য) তিনি বললেন,
‘ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে
যাই। যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দেই’।[21]
৩. শোরগোল ও উচ্চবাচ্য পরিহার করা :
বাজারে শোরগোল ও চিৎকার করা থেকে বিরত থাকা যরূরী। হাদীছে কুদসীতে রাসূল
(ছাঃ)-এর কতিপয় গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে,لَيْسَ بِفَظٍّ
وَلاَ غَلِيظٍ وَلاَ سَخَّابٍ فِى الأَسْوَاقِ، وَلاَ يَدْفَعُ
بِالسَّيِّئَةِ السَّيِّئَةَ وَلَكِنْ يَعْفُو وَيَغْفِرُ، ‘তিনি বাজারে
কঠোর, রূঢ় ও নির্দয় স্বভাবের ছিলেন না। তিনি মন্দের প্রতিশোধ মন্দ দ্বারা
নিতেন না বরং মাফ করে দিতেন, ক্ষমা করে দিতেন’।[22]
৪. ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিকে সাক্ষী বা লেখার মাধ্যমে সুদৃঢ় করা : ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে সাক্ষী ও লেখার মাধ্যমে সুদৃঢ় রাখা। আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا تَدَايَنْتُمْ بِدَيْنٍ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَاكْتُبُوْهُ وَلْيَكْتُبْ بَيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! যখন তোমরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ কর। তোমাদের মধ্যেকার কোন লেখক যেন তা ন্যায়সঙ্গতভাবে লিপিবদ্ধ করে’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)। তিনি আরো বলেন,وَاسْتَشْهِدُوْا شَهِيْدَيْنِ مِنْ رِجَالِكُمْ فَإِنْ لَمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّنْ تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَنْ تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَى، ‘এ ব্যাপারে তোমরা তোমাদের মধ্যেকার দু’জন পুরুষকে সাক্ষী রাখবে। যদি দু’জন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দু’জন নারী, ঐসব সাক্ষীদের মধ্যে যাদেরকে তোমরা পসন্দ কর। যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে অন্যজন স্মরণ করিয়ে দেয়’ (বাক্বারাহ ২/২৮২)।
৫. ওয়াদা পূর্ণ করা : ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে যে ওয়াদা করা হবে তা পূর্ণ করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের চুক্তিগুলি পূর্ণ কর’ (মায়েদাহ ৫/১)।
৬. ক্রয়-বিক্রয়ে উদার ও নম্র হওয়া :
ক্রয়-বিক্রয়ে উদারতা ও নম্রতা বজায় রাখা যরূরী। কারণ এর জন্য নেকী রয়েছে।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحًا إِذَا بَاعَ، وَإِذَا
اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى. ‘আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন
যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে চায়’।[23]
৭. আত্মসাৎকৃত ও চোরাই দ্রব্য ক্রয় থেকে দূরে থাকা : আত্মসাৎ করা বা চুরি করে আনা কোন পণ্য-দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় থেকে বিরত থাকা। কেননা এসব হারাম। আল্লাহ বলেন, يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا لَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অপরের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না, তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা ব্যতীত’ (নিসা ৪/২৯)।
৮. মহিলাদের থেকে চোখ অবনত রাখা, তাদের সাথে সংমিশ্রণ ও তাদের ভিড় এড়িয়ে চলা : বাজারে আগত মহিলাদের দিকে তাকানো থেকে চোখকে সংযত রাখা। তাদের সাথে মিশে যাওয়া এবং তাদের ভিড়ের মধ্যে না গিয়ে সেখান থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন,قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ، وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنَّ وَلَا يُبْدِيْنَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوْبِهِنَّ، ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে। আর তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তবে যেটুকু স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পায় সেটুকু ব্যতীত। আর তারা যেন তাদের মাথার কাপড় বক্ষদেশের উপর রাখে’ (নূর ২৪/৩০-৩১)।
৯. বেচা-কেনায় লিপ্ত হয়ে আল্লাহ্র যিকর ও ছালাত থেকে দূরে না থাকা : বাজারে গিয়ে মানুষ নিজের প্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা-কাটায় যেমন মশগূল হয়ে পড়ে, তেমনি বিক্রেতারাও পণ্য বিক্রয়ে ব্যাপৃত হয়ে আল্লাহ্র যিকর এবং কোন কোন সময় ছালাতের কথা ভুলে যায়। কোনক্রমেই এরূপ হওয়া চলবে না। বরং ছালাতের সময় হয়ে গেলে ছালাত আদায় করে নিতে হবে। তাছাড়া মাঝে-মধ্যে আল্লাহ্র যিকর ও তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করতে হবে। আল্লাহ বলেন,رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ، ‘ঐ লোকগুলি হ’ল তারাই, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য বা ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহ্র স্মরণ থেকে এবং ছালাত কায়েম ও যাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন তাদের হৃদয় ও চক্ষু বিপর্যস্ত হবে’ (নূর ২৪/৩৭)।
পরিশেষে বলব, বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উপরোক্ত আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি পরকালীন জীবনে অশেষ ছওয়াব হাছিল হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!
[1]. তিরমিযী হা/৪৮৭, সনদ হাসান।
[2]. তিরমিযী হা/২০৩২; ছহীহুল জামে হা/৭৯৮৫; মিশকাত হা/৫০৪৪।
[3]. মুসনাদে আহমাদ হা/২১৩৬৯, সনদ ছহীহ।
[4]. তাবারানী, আল-কাবীর, ছহীহাহ হা/২২৯৪; ছহীহুল জামে হা/৫৯২৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৪৮।
[5]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮; তা‘লীকাতুল হাসান হা/৪৯১৭, সনদ ছহীহ।
[6]. ইবনু মাজাহ হা/২২৪৬; ইরওয়া হা/১৩২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭০৫।
[7]. আন-নাজমুল ওয়াহাজ, ৪/১৭৭ পৃঃ।
[8]. মুসলিম হা/১৬০৭; নাসাঈ হা/৪৪৬০; ইবনু মাজাহ হা/২২০৯; মিশকাত হা/২৮৬০।
[9]. মুসলিম হা/১০২; মিশকাত হা/২৮৬০।
[10]. আহমাদ হা/৩৭২৫; ছহীহাহ হা/২৩২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৮৯-৯০।
[11]. বুখারী হা/৬৯৬৩; মুসলিম হা/১৫১৬; ইবনু মাজাহ হা/২১৭৩।
[12]. মুসলিম হা/১৬০৫; ইবনু মাজাহ হা/২১৫৪; মিশকাত হা/২৮৯২।
[13]. তিরমিযী হা/১২১০; ইবনু মাজাহ হা/২১৪৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৯৪।
[14]. আহমাদ হা/১৪৪১; শু‘আবুল ঈমান হা/৮৯৭২; দারিমী হা/২৭৭৯; মিশকাত হা/২৭৭২, সনদ হাসান।
[15]. বুখারী হা/৩৮৪২; মিশকাত হা/২৭৮৬।
[16]. মুসনাদে আহমাদ হা/৮৩৯৩; ছহীহুল জামে হা/৩২৮৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৭৭৬।
[17]. বুখারী হা/৫৭, ৫২৪; মুসলিম হা/৫৬।
[18]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/৪৫৪৬; আত-তালীকাতুল হাসান হা/৪৫২৯, সনদ ছহীহ।
[19]. তিরমিযী হা/১১৭৩; মিশকাত হা/৩১০৯; ইরওয়া হা/২৭৩, সনদ ছহীহ।
[20]. তিরমিযী হা/৩৪২৮-২৯; ইবনু মাজাহ হা/২২৩৫; মিশকাত হা/২৪৩১, সনদ ছহীহ।
[21]. বুখারী হা/২১২৫; মিশকাত হা/৫৭৫২, ৫৭৭১।
[22]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/১৭৯৩; আদাবুল মুফরাদ হা/১০০৬; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৮৫৩।
[23]. বুখারী হা/২০৭৬; ইবনু মাজাহ হা/২২০৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪৯৫।