ভূমিকা :

দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুকে রাস্তা-ঘাটে চলাচল করতে হয়। মানুষের এই চলার পথ নিরাপদ, নিষ্কণ্টক ও শান্তিপূর্ণ হওয়া যরূরী। সেই সাথে পথচারীকেও সজাগ ও সচেতন হ’তে হয়। পথে বা রাস্তায় চলাফেরার সময় বিভিন্ন নিয়ম-কানূন মেনে চলার জন্য ইসলামে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো মেনে চললে পার্থিব জীবনে যেমন বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি পরকালেও অশেষ ছওয়াব লাভ করা যাবে। আলোচ্য নিবন্ধে রাস্তার আদব বা শিষ্টাচার সমূহ আলোচনা করা হ’ল।-

রাস্তার পরিধি

পৃথিবীতে পথ বা রাস্তা মানুষের জন্য আবশ্যকীয় বিষয়গুলির অন্যতম। পার্থিব প্রয়োজনে মানুষকে বাড়ীতে প্রবেশ ও বের হওয়া, বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত ইত্যাদি কারণে রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। মানুষের চলাচলের এই রাস্তাকে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন ও নিষ্কণ্টক করাই ইসলামের নির্দেশ। কিন্তু কোন কোন মানুষ এই পথ বা রাস্তাকে বন্ধ করে দিয়ে অন্যকে বিপদে ফেলে, যা ইসলামে বৈধ নয়। এই রাস্তার পরিধি বা প্রশস্ততা সম্পর্কে ইসলামে নির্দেশনা রয়েছে। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন,قَضَى النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا تَشَاجَرُوْا فِى الطَّرِيْقِ بِسَبْعَةِ أَذْرُعٍ، ‘যখন মালিকেরা রাস্তার ব্যাপারে পরস্পরে বিবাদ করল, তখন নবী করীম (ছাঃ) রাস্তার জন্য সাত হাত জমি ছেড়ে দেয়ার ফায়ছালা দেন’।[1] অন্যত্র তিনি বলেন, اجْعَلُوا الطَّرِيْقَ سَبْعَةَ أَذْرُعٍ ‘সাত হাত প্রশস্ত করে রাস্তা তৈরী কর’।[2] এই প্রশস্ততা এজন্য যে, যাতে সেখানে যানবাহন প্রবেশ ও বের হ’তে কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয়। এমনকি ঐ রাস্তা ব্যবহারকারীরা যাতে তাদের প্রয়োজনীয় মালপত্রও সহজে আনা নেওয়া করতে পারে।

রাস্তার আদব দ্বারা উদ্দেশ্য

রাস্তা বা পথের আদব বলতে এমন কিছু কাজকে বুঝানো হয়, যা পথচারী, রাস্তা বা পথে উপবেশনকারী ও অবস্থানকারীর জন্য পালন করা যরূরী। আর কারো পক্ষে তা পালন করা সম্ভব না হ’লেও যেন তার প্রতি সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখে। এ সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوْسَ عَلَى الطُّرُقَاتِ. فَقَالُوْا مَا لَنَا بُدٌّ، إِنَّمَا هِىَ مَجَالِسُنَا نَتَحَدَّثُ فِيْهَا. قَالَ فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجَالِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيْقَ حَقَّهَا، قَالُوْا وَمَا حَقُّ الطَّرِيْقِ قَالَ غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ، وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ.

‘তোমরা রাস্তার উপর বসা থেকে বিরত থাক। লোকজন বলল, এছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। কেননা এটাই আমাদের উঠা-বসার জায়গা এবং এখানে আমরা কথাবার্তা বলে থাকি। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক্ব কী? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেয়া হ’তে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা’।[3]

রাস্তার আদব সমূহ

রাস্তার হক বা আদব সমূহ পালনে ইসলাম উৎসাহিত করেছে। এগুলি প্রতিপালনের ফযীলত ও ছওয়াবও বর্ণিত হয়েছে। সেই সাথে এগুলির মধ্যে কোন কোনটিকে ঈমানের শাখা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিম্নে আদব সমূহ উল্লেখ করা হ’ল।-

১. নম্রভাবে চলাচল করা :

রাস্তায় চলার সময় গর্ব-অহংকার প্রকাশ পায় এমনভাবে চলাচল করা মুমিনের জন্য সমীচীন নয়। কেননা অহংকার আল্লাহর বৈশিষ্ট্য, যা হরণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আর মুমিনকে নম্রভাবে রাস্তায় চলার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ- ‘আর অহংকারবশে তুমি মানুষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং যমীনে উদ্ধতভাবে চলাফেরা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালবাসেন না’ (লোকমান ৩১/১৮)

২. দৃষ্টি নিম্নগামী রাখা :

দৃষ্টি নিম্নগামী রাখার অর্থ হচ্ছে মুমিন নারী-পুরুষের লজ্জাস্থান, যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয় এবং যার দিকে তাকালে ফিৎনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এমন বস্ত্তর দিকে না তাকানো। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوْا فُرُوْجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا يَصْنَعُوْنَ- وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوْجَهُنّ -

‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থান সমূহের হেফাযত করে’ (নূর ২৪/৩০-৩১)

দৃষ্টি অবনমিত রাখাকে রাসূল (ছাঃ) রাস্তার হক বা আদব হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যাতে মুমিন অপসন্দনীয় জিনিসের দিকে দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিরত থাকে অন্য মুমিনের সম্মানের দিকে লক্ষ্য করে। বিশেষত বর্তমানে যেভাবে নারীরা বেপর্দায় চলাফেরা করে, তাতে পুরুষদের ফিৎনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। তাই দৃষ্টি নিম্নগামী রাখা যরূরী। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে বললেন,يَا عَلِىُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ، ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির অনুসরণ কর না (কোন নারীকে একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না)। কেননা তোমার জন্য প্রথমবার দেখার অনুমতি আছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার নয়’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে (কারো প্রতি) হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন’।[5]

৩. মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা :

মানুষকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেসব কথা-কাজে কোন কল্যাণ নেই সেগুলো থেকে বিরত থাকা। অনুরূপভাবে পথচারীদের কষ্ট দেয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন তাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, তাদের গীবত করা অথবা অনুরূপ কষ্টদায়ক কথা ও কাজ পরিহার করা। তাছাড়া পথচারীদের চলাচলে কষ্ট হয় এমনভাবে রাস্তা সংকীর্ণ করে না বসা, কারো বাড়ীতে যাতায়াতের পথে না বসা, কারো বাড়ীর পার্শ্ববর্তী রাস্তায় এমনভাবে না বসা যাতে বাড়ীর লোকজনের ইয্যত-আব্রু রক্ষায় সমস্যা হয়। মোটকথা পথচারীকে কথা-কাজের মাধ্যমে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) বলেন, আমি বললাম,يَا رَسُولَ اللهِ دُلَّنِى عَلَى عَمَلٍ أَنْتَفِعُ بِهِ. قَالَ اعْزِلِ الأَذَى عَنْ طَرِيْقِ الْمُسْلِمِيْنَ. ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে এমন একটি কাজের নির্দেশ দিন যার দ্বারা আমি উপকৃত হ’তে পারি। তিনি বলেন, মুসলমানদের যাতায়াতের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে ফেল’।[6] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ قِيْلَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَجِدْ قَالَ يَعْتَمِلُ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ قَالَ قِيلَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ قَالَ يُعِينُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ قَالَ قِيلَ لَهُ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ قَالَ يَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ أَوِ الْخَيْرِ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَفْعَلْ

قَالَ يُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ.

‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর ছাদাক্বাহ করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হ’ল, যদি ছাদাক্বাহ করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও ছাদাক্বাহ করবে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হ’ল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কি হবে? তিনি বললেন, তাহ’লে সে অসহায় আর্ত মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞেস করা হ’ল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহ’লে সৎ কাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবারো জিজ্ঞেস করা হ’ল, যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও ছাদাক্বাহ’।[7]

৪. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানো :

রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত অপসারণ করতে ইসলাম উৎসাহিত করেছে এবং একে ঈমানের শাখা বলে অভিহিত করেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الإِيْمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُوْنَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّوْنَ شُعْبَةً فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيْمَانِ. ‘ঈমানের সত্তরটির অধিক শাখা রয়েছে। অথবা ষাটটিরও অধিক। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে এ সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত ইলাহ নেই। আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি অন্যতম শাখা’।[8] রাস্তা হ’তে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরানোর ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ- ‘এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় রাস্তায় একটি কাঁটাযুক্ত ডাল দেখতে পেয়ে তা সরিয়ে ফেলল। আল্লাহ তা‘আলা তার এ কাজ সাদরে কবুল করে তার গুনাহ মাফ করে দিলেন’।[9]

অন্যত্র তিনি বলেন,نَزَعَ رَجُلٌ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ غُصْنَ شَوْكٍ عَنِ الطَّرِيْقِ إِمَّا كَانَ فِى شَجَرَةٍ فَقَطَعَهُ وَأَلْقَاهُ وَإِمَّا كَانَ مَوْضُوْعًا فَأَمَاطَهُ فَشَكَرَ اللهُ لَهُ بِهَا فَأَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ. ‘এক ব্যক্তি কখনো কোন ভালো কাজ করেনি, শুধু একটি কাঁটাযুক্ত ডাল রাস্তা থেকে সরিয়েছিল। হয়তো ডালটি গাছেই ছিল, কেউ তা কেটে ফেলে রেখেছিল অথবা রাস্তায়ই পড়েছিল। সে তা সরিয়ে ফেলেছিল। আল্লাহ তার একাজ সাদরে গ্রহণ করলেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন’।[10]

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,لَقَدْ رَأَيْتُ رَجُلاً يَتَقَلَّبُ فِى الْجَنَّةِ فِى شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَّرِيْقِ كَانَتْ تُؤْذِى النَّاسَ- ‘আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম জান্নাতে একটি গাছের নীচে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটছে। সে এমন একটি গাছ রাস্তার মধ্য থেকে কেটে ফেলে দিয়েছিল যা মানুষকে কষ্ট দিত’।[11]

৫. পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দেওয়া :

রাস্তার আরেকটি আদব হচ্ছে সকল মুসলমানকে সালাম দেওয়া। আর রাসূল (ছাঃ) ব্যাপকভাবে সালামের প্রসার ঘটাতে বলেছেন। আর এটাকে মানুষের পারস্পরিক মহববত বৃদ্ধির উপায় বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,

لاَ تَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوْا وَلاَ تُؤْمِنُوْا حَتَّى تَحَابُّوْا أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوْهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ،

‘তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না ঈমানদার হবে। আর তোমরা ঈমানদার হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর ভালোবাসা স্থাপন করবে। আমি কি এমন একটি কাজের কথা তোমাদেরকে বলে দিব না, যখন তোমরা তা করবে, পরস্পর ভালোবাসা স্থাপিত হবে? তোমরা একে অপরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও’।[12]

অন্যত্র এসেছে, আব্দুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল,أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ. ‘ইসলামের কোন্ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও পরিচিত-অপরিচিত সকলকে সালাম দিবে’।[13]

সালাম প্রদানের নিয়ম সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِى، وَالْمَاشِى عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيْلُ عَلَى الْكَثِيْرِ، ‘আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’।[14] অন্যত্র তিনি বলেন,يُسَلِّمُ الصَّغِيْرُ عَلَى الْكَبِيْرِ، وَالْمَارُّ عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيْلُ عَلَى الْكَثِيْرِ، ‘বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে’।[15]

৬. সকলের সালামের উত্তর দেওয়া :

রাস্তার আরেকটি আদব হচ্ছে সালামের উত্তর দেওয়া। আর কেউ সালাম দিলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوْا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوْهَا ‘আর যখন তোমরা সম্ভাষণ প্রাপ্ত হও, তখন তার চেয়ে উত্তম সম্ভাষণ প্রদান কর অথবা ওটাই প্রত্যুত্তর কর’ (নিসা ৪/৮৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,خَمْسٌ تَجِبُ لِلْمُسْلِمِ عَلَى أَخِيْهِ رَدُّ السَّلاَمِ وَتَشْمِيْتُ الْعَاطِسِ وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ وَعِيَادَةُ الْمَرِيْضِ وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ، ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর তার মুসলিম ভাইয়ের পাঁচটি অবশ্য কর্তব্য রয়েছে। সালামের জবাব দেয়া, হাঁচি শুনে জবাব দেয়া, দাওয়াত কবুল করা, অসুস্থ হ’লে দেখতে যাওয়া এবং জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা’।[16]

৭. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা :

সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপরে আবশ্যক। আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর নৈকট্য হাছিল, মানবতার কল্যাণ সাধন এবং শরী‘আত সম্মত যাবতীয় কাজের প্রতি মানুষকে আহবান জানানো সৎকাজের আদেশের অন্তর্ভুক্ত। পক্ষান্তরে যাবতীয় অন্যায়-অপকর্ম যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ ও নিন্দনীয় কাজ থেকে মানুষকে বাধা দেওয়া বা বিরত রাখার চেষ্টা করা অসৎকাজের নিষেধের অন্তর্গত। এসব কাজ মুমিনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলে আল্লাহ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ বলেন,كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ، ‘তোমরাই হ’লে শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)

মহান আল্লাহ এই কর্মকে মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে পার্থক্যকারী নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেন,وَالْمُؤْمِنُوْنَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ، ‘আর মুমিন পুরুষ ও নারী পরস্পরের বন্ধু। তারা সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৭১)। অন্যত্র তিনি বলেন,الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُمْ مِنْ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمُنْكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ ‘মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরস্পরে সমান। তারা অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎকাজে নিষেধ করে’ (তওবা ৯/৬৭)

ধ্বংসে নিপতিত হওয়া থেকে প্রধান রক্ষাকবচ হিসাবে রাসূল (ছাঃ) সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধকে নির্ধারণ করেছেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوْشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلاَ يُسْتَجَابُ لَكُمْ. ‘সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অন্যায় কাজের প্রতিরোধ করবে। অন্যথা আল্লাহ তা‘আলা শীঘ্রই তোমাদের উপরে তাঁর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। তোমরা তখন তাঁর নিকট দো‘আ করলেও তিনি তোমাদের সেই দো‘আ কবুল করবেন না’।[17]

অন্য হাদীছে এসেছে, কায়েস ইবনে আবূ হাযেম (রাঃ) বলেন, আবূবকর (রাঃ) দাঁড়ালেন, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করলেন, অতঃপর বললেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ هَذِهِ الآيَةَ (يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لاَ يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ) وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْمُنْكَرَ لاَ يُغَيِّرُوْنَهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ.

‘হে লোকসকল! তোমরা তো এই আয়াত তেলাওয়াত করো যে, (অনুবাদ) ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সাধ্যমত তোমাদের কাজ করে যাও। পথভ্রষ্টরা তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না, যখন তোমরা সৎপথে থাকবে’ (মায়েদা ৫/১০৫)। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, লোকেরা মন্দ কাজ হ’তে দেখে তা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে অচিরেই আল্লাহ তাদের সকলের উপর ব্যাপকভাবে শাস্তি পাঠাবেন’।[18]

৮. পথ প্রদর্শন করা :

পথ দেখিয়ে দেয়া রাস্তার একটি আদব, যা অতি ছওয়াবের কাজ। যাকে ছাদাক্বার সাথে তুলনা করা হয়েছে। পথ দেখানো বিভিন্নভাবে হ’তে পারে। যেমন-

ক. সাধারণ পথিককে পথ দেখানো : যারা গন্তব্যে পৌঁছার পথ চেনে না, তাদেরকে সহজ ও সঠিক পথ বাতলে দেওয়া মুমিনের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এ ব্যাপারে ইসলাম উৎসাহিত করেছে এবং এর অনেক ফযীলত রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَإِرْشَادُ السَّبِيلِ ‘(রাস্তার হক হ’ল) পথ দেখানো’।[19] তিনি আরো বলেন,إِنْ أَبَيْتُمْ إِلاَّ أَنْ تَجْلِسُوْا فَاهْدُوا السَّبِيلَ وَرُدُّوا السَّلاَمَ وَأَعِيْنُوا الْمَظْلُوْمَ، ‘রাস্তায় বসা ছাড়া তোমাদের কোন উপায় না থাকলে (পথহারাকে) পথ প্রদর্শন করবে, সালামের উত্তর দিবে এবং অত্যাচারিতকে সাহায্য করবে’।[20]

খ. পথহারাকে পথ দেখানো : মানুষ উদ্দিষ্ট স্থানে পেŠঁছার পথ হারিয়ে ফেললে সীমাহীন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। এ অবস্থা থেকে তাকে উত্তরণের জন্য সঠিক পথ বাতলে দেওয়া যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوْسَ فِي الصُّعُدَاتِ، فَإِنْ كُنْتُمْ لابُدَ فَاعِلِيْنَ فَأَعْطُوا الطَّرِيْقَ حَقَّهُ، قِيْلَ وَمَا حَقُّهُ؟ قَالَ غَضُّ الْبَصَرِ، وَرَدُّ السَّلامِ، وَإِرْشَادُ الضَّالِّ. ‘তোমরা পথে বা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাক। আর যদি তোমরা সেখানে বসতে বাধ্য হও, তাহ’লে রাস্তার হক আদায় করবে। বলা হ’ল, রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি নিম্নগামী রাখা, সালামের উত্তর দেওয়া এবং পথহারাকে পথ প্রদর্শন করা’।[21] পথহারাকে পথ প্রদর্শনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَإِرْشَادُكَ الرَّجُلَ فِىْ أَرْضِ الضَّلاَلِ لَكَ صَدَقَةٌ،  ‘পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাহ’।[22] তিনি আরো বলেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎকাজ হ’তে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাহ, স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। পথ হ’তে পাথর, কাটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য ছাদাক্বাহ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাহ’।[23] অন্যত্র তিনি বলেন,مَنْ مَنَحَ مَنِيْحَةَ لَبَنٍ أَوْ وَرِقٍ أَوْ هَدَى زُقَاقًا كَانَ لَهُ مِثْلُ  عِتْقِ رَقَبَةٍ، ‘যে ব্যক্তি একবার দোহন করা দুধ দান করে অথবা টাকা-পয়সা ধার দেয় অথবা পথ হারিয়ে যাওয়া লোককে সঠিক পথের সন্ধান দেয়, তার জন্য রয়েছে একটি গোলাম মুক্ত করে দেয়ার সমপরিমাণ ছওয়াব’।[24]

গ. অন্ধকে পথ চলতে সাহায্য করা : পথ চলার ক্ষেত্রে অন্ধ ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কখনও তাকে হাত ধরে তার সাথে চলে তাকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা। এটা একটি বড় শিষ্টাচার। যার প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করেছে। পক্ষান্তরে অন্ধকে ভুল পথ প্রদর্শন করা হ’তে ইসলাম সাবধান করেছে এবং একে অভিশাপে পতিত হওয়ার কারণ বলে আখ্যায়িত করেছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَلَعَنَ اللهُ مَنْ كَمَهَ الأَعْمَى عَنِ السَّبِيْلِ، ‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে অভিশাপ করেন যে অন্ধকে ভুল পথ দেখায়’।[25]

৯. বোঝা বহনকারীকে সাহায্য করা :

রাস্তায় উপবেশনকারী বা পথিক অন্যকে তার বোঝা বহনে বা মাথায় উঠাতে অপারগ দেখলে তাকে সাহায্য করবে। এটা রাস্তার অন্যতম আদব। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ خَيْرَ فِيْ جُلُوْسٍ فِي الطُّرُقَاتِ إِلا لِمَنْ هَدَى السَّبِيْلَ، وَرَدَّ التَّحِيَّةَ، وَغَضَّ الْبَصَرَ، وَأَعَانَ عَلَى الْحُمُوْلَةِ، ‘রাস্তার উপর বসা ভালো নয়। তবে হ্যাঁ, সে ব্যক্তির জন্য ভালো, যে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, সালামের জবাব দেয়, চক্ষু অবনত রাখে এবং বোঝা বহনকারীকে সাহায্য করে’।[26] এটাও ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

كُلُّ سُلاَمَى مِنَ النَّاسِ عَلَيْهِ صَدَقَةٌ كُلَّ يَوْمٍ تَطْلُعُ فِيْهِ الشَّمْسُ، يَعْدِلُ بَيْنَ الاِثْنَيْنِ صَدَقَةٌ، وَيُعِيْنُ الرَّجُلَ عَلَى دَابَّتِهِ، فَيَحْمِلُ عَلَيْهَا، أَوْ يَرْفَعُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ خَطْوَةٍ يَخْطُوْهَا إِلَى الصَّلاَةِ صَدَقَةٌ، وَيُمِيْطُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيْقِ صَدَقَةٌ،

‘মানুষের প্রত্যেক জোড়ার প্রতি ছাদাক্বাহ রয়েছে, প্রতিদিন যাতে সূর্য উদিত হয়। দু’জন লোকের মধ্যে সুবিচার করাও ছাদাকাহ, কাউকে সাহায্য করে সাওয়ারীতে আরোহণ করিয়ে দেয়া বা তার উপরে তার মালপত্র তুলে দেয়াও ছাদাক্বাহ, ভাল কথাও ছাদাক্বাহ, ছালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে পথ চলায় প্রতিটি কদমেও ছাদাক্বাহ, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করাও ছাদাক্বাহ’।[27]

১০. অধিক পরিমাণে যিকর করা :

আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে অধিক হারে যিকর করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا، وَسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وَأَصِيْلًا- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ কর এবং সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (আহযাব ৩৩/৪১-৪২)। ছাহাবীগণের প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) রাস্তার হক সম্পর্কে বলেন, ذِكْرُ اللهِ كَثِيْرًا، وَأَرْشِدُوا السَّبِيْلَ، وَغُضُّوا الْأَبْصَارَ، ‘আল্লাহর অধিক যিকর করা, পথ প্রদর্শন করা এবং দৃষ্টি অবনমিত রাখা’।[28] কোন বসার স্থানে যিকর না করার পরিণতি সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ قَعَدَ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ فِيْهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةً، ‘যে ব্যক্তি কোন স্থানে বসল অথচ আল্লাহকে স্মরণ করল না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা’।[29]

১১. উত্তম কথা বলা :

পথচারী ও অন্যদের সাথে উত্তম ও শালীন কথাবার্তা বলা রাস্তার অন্যতম শিষ্টাচার। যার প্রতি ইসলাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ বলেন, وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا- ‘(হে নবী!) তুমি আমার বান্দাদের বল, তারা যেন (পরস্পরে) উত্তম কথা বলে। (কেননা) শয়তান সর্বদা তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৫৩)। এটা সর্বসাধারণের জন্য পালনীয় আদব। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، ‘যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[30]

উত্তম কথাকে রাসূল (ছাঃ) ছাদাক্বাহ হিসাবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন,وَالْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ، ‘উত্তম কথাও ছাদাক্বাহ’।[31] আবু শুরাইহ আল-খুযাঈ বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বললাম, আমাকে বলুন, কোন বস্ত্ত জান্নাত অবধারিত করে? তিনি বললেন,عَلَيْكَ بِحُسْنِ الْكَلامِ وَبَذْلِ الطَّعَامِ، ‘তোমার জন্য আবশ্যক হ’ল উত্তম কথা বলা এবং খাদ্য দান করা’।[32] অন্যত্র তিনি আরো বলেন, اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَإِنْ لَمْ تَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন হ’তে বাঁচ এক টুকরা খেজুর দিয়ে হ’লেও। আর যদি তা না পাও, তবে উত্তম কথার মাধ্যমে’।[33]

১২. অসহায়কে সাহায্য করা :

অসহায়কে সাহায্য করা ও আশ্রয়হীনকে আশ্রয় দেওয়া অশেষ ছওয়াবের কাজ এবং আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের অন্যতম মাধ্যম। মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করা এবং তাদের অসুবিধা দূর করা অনেক বড় ছাদাক্বাহ। এ সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেন,

عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ. فَقَالُوْا يَا نَبِىَّ اللهِ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ قَالَ يَعْمَلُ بِيَدِهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ. قَالُوْا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ قَالَ يُعِيْنُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ. قَالُوْا فَإِنْ لَمْ يَجِدْ. قَالَ فَلْيَعْمَلْ بِالْمَعْرُوْفِ، وَلْيُمْسِكْ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهَا لَهُ صَدَقَةٌ.

‘প্রতিটি মুসলিমের ছাদাক্বাহ করা উচিত। ছাহাবীগণ আরয করলেন, কেউ যদি ছাদাক্বাহ দেয়ার মত কিছু না পায়? (তিনি উত্তরে) বললেন, সে ব্যক্তি নিজ হাতে কাজ করবে এতে নিজেও লাভবান হবে, ছাদাক্বাও করতে পারবে। তাঁরা বললেন, যদি এরও ক্ষমতা না থাকে? তিনি বললেন, কোন বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। তাঁরা বললেন, যদি এতটুকুরও সামর্থ্য না থাকে? তিনি বললেন, এ অবস্থায় সে যেন সৎ আমল করে এবং অন্যায় কাজ হ’তে বিরত থাকে। এটা তার জন্য ছাদাক্বাহ বলে গণ্য হবে’।[34] অন্যত্র তিনি বলেন,

عَلَى كُلِّ نَفْسٍ فِى كُلِّ يَوْمٍ طَلَعَتْ فِيهِ الشَّمْسُ صَدَقَةٌ مِنْهُ عَلَى نَفْسِهِ. قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مِنْ أَيْنَ أَتَصَدَّقُ وَلَيْسَ لَنَا أَمْوَالٌ قَالَ لأَنَّ مِنْ أَبْوَابِ الصَّدَقَةِ التَّكْبِيرَ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَتَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ وَتَعْزِلُ الشَّوْكَةَ عَنْ طَرِيقِ النَّاسِ وَالْعَظْمَ وَالْحَجَرَ وَتَهْدِى الأَعْمَى وَتُسْمِعُ الأَصَمَّ وَالأَبْكَمَ حَتَّى يَفْقَهَ وَتَدُلُّ الْمُسْتَدِلَّ عَلَى حَاجَةٍ لَهُ قَدْ عَلِمْتَ مَكَانَهَا وَتَسْعَى بِشِدَّةِ سَاقَيْكَ إِلَى اللَّهْفَانِ الْمُسْتَغِيثِ وَتَرْفَعُ بِشِدَّةِ ذِرَاعَيْكَ مَعَ الضَّعِيفِ كُلُّ ذَلِكَ مِنْ أَبْوَابِ الصَّدَقَةِ مِنْكَ عَلَى نَفْسِكَ وَلَكَ فِى جِمَاعِكَ زَوْجَتَكَ أَجْرٌ.

‘প্রত্যেক দিন যাতে সূর্য উদিত হয় তাতে প্রত্যেক ব্যক্তির উপরে ছাদাক্বাহ করা আবশ্যক। (রাবী বলেন,) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কোথা থেকে ছাদাক্বাহ করব, আমাদের কোন সম্পদ নেই? তিনি বললেন, (শুধু অর্থ-সম্পদ ব্যয় করাই ছাদাক্বাহ নয় বরং) ছাদাক্বার মধ্যে গণ্য আল্লাহু আকবার বলা, সুবহানাল্লাহ বলা, আল-হামদুলিল্লাহ বলা এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আস্তাগফিরুল্লাহ বলা (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) ছাদাক্বাহ। তুমি সৎ কাজের আদেশ করবে, অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করবে। মানুষের চলাচলের পথ হ’তে কাঁটা, হাড্ডি ও পাথর সরিয়ে ফেলবে। অন্ধকে পথ দেখাবে, বধির ও বোবাকে শুনিয়ে দিবে যেন সে বুঝে (তাদেরকে কথা বুঝার উপযুক্ত করে গড়ে তুলবে)। কোন অভাবীর অভাব পূরণের পন্থা তোমার জানা থাকলে তাকে সে পথ দেখিয়ে দেওয়া। কোন বিপদগামী সাহায্যপ্রার্থীর দিকে তুমি দ্রুত ছুটে যাবে। দুর্বলের জন্য তোমার বাহুকে দৃঢ়ভাবে উঠাবে (অর্থাৎ পূর্ণরূপে সাহায্য করবে)। এসবই হল ছাদাক্বাহ যা তোমার পক্ষ হ’তে তোমার নিজের কল্যাণের জন্য। আর স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করার মধ্যে তোমার জন্য নেকী রয়েছে’।[35]

১৩. মাযলূম বা অত্যাচারিতকে সাহায্য করা :

রাস্তার অন্যতম আদব হচ্ছে অত্যাচারিতকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। সম্ভব হ’লে বল প্রয়োগে, নতুবা মুখের মাধ্যমে সাহায্য করা। রাসূল (ছাঃ) বলেন,انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُوْمًا، ‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে যালিম হোক অথবা মাযলূম’।[36] অর্থাৎ যালিম ভাইকে যুলুম থেকে বিরত রাখবে এবং মাযলূম ভাইকে যালিমের হাত হ’তে রক্ষা করবে। অন্য হাদীছে এসেছে, জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

اقْتَتَلَ غُلاَمَانِ غُلاَمٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَغُلاَمٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَنَادَى الْمُهَاجِرُ أَوِ الْمُهَاجِرُونَ يَا لَلْمُهَاجِرِينَ. وَنَادَى الأَنْصَارِىُّ يَا لَلأَنْصَارِ. فَخَرَجَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا هَذَا دَعْوَى أَهْلِ الْجَاهِلِيَّةِ. قَالُوا لاَ يَا رَسُولَ اللهِ إِلاَّ أَنَّ غُلاَمَيْنِ اقْتَتَلاَ فَكَسَعَ أَحَدُهُمَا الآخَرَ قَالَ فَلاَ بَأْسَ وَلْيَنْصُرِ الرَّجُلُ أَخَاهُ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا إِنْ كَانَ ظَالِمًا فَلْيَنْهَهُ فَإِنَّهُ لَهُ نَصْرٌ وَإِنْ كَانَ مَظْلُومًا فَلْيَنْصُرْهُ.

আনছার ও মুহাজিরদের দু’টি গোলাম হাতাহাতি করছিল। তখন মুহাজির গোলাম এই বলে চীৎকার দিল, হে মুহাজিরগণ! পক্ষান্তরে আনসারী গোলামও ডাকল, হে আনছারগণ! তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বের হয়ে বললেন, এ কি ব্যাপার! জাহিলী যুগের লোকেদের মতো হাক-ডাক করছ? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! না, দু’টি গোলাম ঝগড়া করেছে। তাদের একজন অপরজনের পশ্চাতে আঘাত করেছে। তখন তিনি বললেন, এতো মামুলী ব্যাপার। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উচিত যেন সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে, সে অত্যাচারী হোক কিংবা অত্যাচারিত। যদি সে অত্যাচারী হয় তাহ’লে তাকে (যুলম থেকে) বিরত রাখবে। এ হচ্ছে তার জন্য সাহায্য। আর যদি সে অত্যাচারিত হয় তাহ’লে তাকে সাহায্য করবে’।[37]

মাযলূমকে সাহায্য না করার শাস্তি সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেন, আল্লাহর জনৈক বান্দাকে কবরে একশত কশাঘাতের আদেশ দেওয়া হ’ল। তখন সে তা কমানোর জন্য বার বার আবেদন-নিবেদন করতে থাকল। শেষ পর্যন্ত একটি কশাঘাত অবশিষ্ট থাকল। তাকে একটি মাত্র কশাঘাতই করা হ’ল। তাতেই তার কবর আগুনে ভরে গেল। তারপর যখন আঘাতের প্রভাব দূর হ’ল এবং সে হুঁশ ফিরে পেল তখন বলল, তোমরা আমাকে কেন কশাঘাত করলে? তারা বলল, তুমি এক ওয়াক্ত ছালাত বিনা ওযূতে আদায় করেছিলে আর এক মাযলূম বান্দার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলে। কিন্তু তাকে তুমি সাহায্য করনি’।[38]

১৪. মহিলাদের রাস্তার পার্শ্ব দিয়ে চলা :

রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে মহিলাদের উচিত নিজেদের ইয্যত-আব্রু বজায় রাখার জন্য এক পার্শ্ব দিয়ে চলাচল করার চেষ্টা করা। যাতে পুরুষের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে না যায়। হামাযাহ ইবনু আবূ উসাইদ আল-আনছারী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় দেখেন,

فَاخْتَلَطَ الرِّجَالُ مَعَ النِّسَاءِ فِى الطَّرِيْقِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِلنِّسَاءِ اسْتَأْخِرْنَ فَإِنَّهُ لَيْسَ لَكُنَّ أَنْ تَحْقُقْنَ الطَّرِيْقَ عَلَيْكُنَّ بِحَافَاتِ الطَّرِيْقِ. فَكَانَتِ الْمَرْأَةُ تَلْتَصِقُ بِالْجِدَارِ حَتَّى إِنَّ ثَوْبَهَا لَيَتَعَلَّقُ بِالْجِدَارِ مِنْ لُصُوْقِهَا بِهِ.

‘রাস্তায় পুরুষরা মহিলাদের সঙ্গে মিলে মিশে গিয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মহিলাদের বললেন, তোমরা একটু অপেক্ষা কর। কারণ তোমাদের রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচলের পরিবর্তে পাশ দিয়ে চলাচল করা উচিৎ। সুতরাং মহিলারা দেয়ালের পাশ দিয়ে চলাচল করত, এতে তাদের চাদর দেয়ালের সঙ্গে আটকে যেত’।[39]

১৫. বাহন দ্রুত চালনা না করা :

যানবাহনে মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ বিভিন্ন ধরনের যাত্রী থাকে। ফলে যানবাহন দ্রুত চালালে তাদের কষ্ট হয়। আবার এতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হয়। তাই যানবাহন আস্তে-ধীরে চালাতে হবে। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একবার উম্মু সুলাইম সফরের সামগ্রীবাহী উটে সওয়ার ছিলেন। আর নবী করীম (ছাঃ)-এর গোলাম আন্জাশা উটগুলোকে দ্রুত হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন নবী করীম (ছাঃ) তাকে বললেন, يَا أَنْجَشَ، رُوَيْدَكَ، سَوْقَكَ بِالْقَوَارِيرِ. ‘ওহে আনজাশা! তুমি কাঁচের পাত্র বহনকারী উটগুলো আস্তে আস্তে হাঁকাও’।[40]

১৬. হাঁচিদাতার উত্তর দেওয়া :

হাঁচি দেওয়ার পর হাঁচিদাতা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার উত্তর দেওয়া ইসলামের সাধারণ আদব। এটা রাস্তার আদবও বটে।[41] রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ فَلْيَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ وَلْيَقُلْ لَهُ أَخُوهُ أَوْ صَاحِبُهُ يَرْحَمُكَ اللهُ فَإِذَا قَالَ لَهُ يَرْحَمُكَ اللهُ فَلْيَقُلْ يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ‘তোমাদের কেউ যখন হাঁচি দেয় সে যেন বলে, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আর তার ভাই অথবা সাথী যেন বলে, ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমার উপরে দয়া করুন)। অতঃপর যখন তার জন্য ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে তখন সে (হাঁচিদাতা) যেন বলে, ‘ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়া ইউছলিহু বা-লাকুম’ (আল্লাহ তোমাকে হেদায়াত করুন এবং তোমার অবস্থা সংশোধন করে দিন)’।[42]

পরিশেষে বলব, রাস্তা-ঘাটে চলাচলের ক্ষেত্রে উপরোক্ত আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি পরকালীন জীবনেও অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!


[1]বুখারী হা/২৪৭৩; ছহীহাহ হা/৩৯৬০।

[2]তিরমিযী হা/১৩৫৫; ইবনু মাজাহ হা/২৩৩৮, সনদ ছহীহ।

[3]. বুখারী হা/২৪৬৫, ৬২২৯; ছহীহুল জামে হা/২৬৭৫।

[4]আবূদাঊদ হা/২১৪৯; তিরমিযী হা/২৭৭৭; মিশকাত হা/৩১১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৩।

[5]মুসলিম হা/২১৫৯; আবূদাঊদ হা/২১৪৮; তিরমিযী হা/২৭৭৬; মিশকাত হা/৩১০৪।

[6]. মুসলিম হা/২৬১৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৬৮১; মিশকাত হা/১৯০৬।

[7]. মুসলিম হা/১০০৮; নাসাঈ হা/২৫৩৮।

[8]মুসলিম হা/৩৫; তিরমিযী হা/৫৭; ছহীহাহ হা/১৭৬৯; মিশকাত হা/৫।

[9]. বুখারী হা/৬৫২, ২৪৭২; মুসলিম হা/১৯১৪; তিরমিযী হা/১৯৫৮।

[10]. আবূদাঊদ হা/৫২৪৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৭৫৫।

[11]. মুসলিম হা/১৯১৪; মিশকাত হা/১৯০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৩৪।

[12]মুসলিম হা/৫৪; মিশকাত হা/৪৬৩১।

[13]বুখারী হা/১২, ২৮, ৬২৩৬; মুসলিম হা/৩৬; মিশকাত হা/৪৬২৯।

[14]বুখারী হা/৬২৩৬; মুসলিম হা/২১৬০; মিশকাত হা/৪৬৩২।

[15]বুখারী হা/৬২৩১; আবূদাঊদ হা/৫১৯৮; তিরমিযী হা/২৭০৪; মিশকাত হা/৪৬৩৩।

[16]. মুসলিম হা/২১৬২; আবূদাঊদ হা/৫০৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৪১।

[17]তিরমিযী হা/২১৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৬৮।

[18]. ইবনু মাজাহ হা/৪০০৫; মিশকাত হা/৫১৪২; ছহীহাহ হা/১৫৬৪।

[19]. আবূদাউদ হা/৪৮১৬; মিশকাত হা/৪৬৪১।

[20]. আহমাদ হা/১৮৬১৩; দারেমী হা/২৬৫৫; ছহীহাহ হা/১৫৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/১৪০৭।

[21]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১১৪৯; ছহীহাহ হা/২৫০১।

[22]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; মিশকাত হা/১৯১১; ছহীহাহ হা/৫৭২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৯০৮।

[23]. তিরমিযী হা/১৯৫৬; মিশকাত হা/১৯১১; ছহীহাহ হা/৫৭২।

[24]তিরমিযী হা/১৯৫৭; মিশকাত হা/১৯১৭, হাদীছ ছহীহ।

[25]আহমাদ হা/২৮১৭; ছহীহাহ হা/৩৪৬২।

[26]. শারহুস্ সুন্নাহ্, মিশকাত হা/৪৬৬১; ছহীহাহ হা/২৫০১।

[27]. বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।

[28]. তাবারাণী, কাবীর হা/৫৫৯২; ছহীহাহ হা/২৫০১।

[29]আবূদাউদ হা/৪৮৫৬; মিশকাত হা/২২৭২; ছহীহাহ হা/৭৮।

[30]বুখারী হা/৬০১৮-১৯; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।

[31]বুখারী হা/২৯৮৯; মুসলিম হা/১০০৯; মিশকাত হা/১৮৯৬।

[32]আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৮১১; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৬১; ছহীহাহ হা/১৯৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৪৯।

[33]বুখারী হা/৬০২৩; মুসলিম হা/১০১৬; মিশকাত হা/৫৮৫৭।

[34]. বুখারী হা/১৪৪৫; মুসলিম হা/১০০৮; ছহীহাহ হা/৫৭৩।

[35]মুসনাদ আহমাদ হা/২১৫২২; ছহীহাহ হা/৫৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৩৮।

[36]বুখারী হা/২৪৪৩-৪৪; মুসলিম হা/২৫৮৪; মিশকাত হা/৪৯৫৭।

[37]. মুসলিম হা/২৫৮৪।

[38]শারহু মুশকিলিল আছার হা/৩১৮৫,২৬৯০; ছহীহ তারগীব ওয়া তারহীব হা/২২৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৭৪

[39]. আবুদাউদ হা/৫২৭২; মিশকাত হা/৪৭২৭; ছহীহাহ হা/৮৫৬; ছহীহুল জামে হা/৯২৯।

[40]বুখারী হা/৬২০২; মুসলিম হা/২৩২৩।

[41]. মুসলিম হা/২১৬২; আবুদাঊদ হা/৫০৩০; ছহীহুল জামে হা/৩২৪১।

[42]. বুখারী হা/৬২২৪; আবূদাঊদ হা/৫০৩৩; ইবনু মাজাহ হা/৩৭১৫।





প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা (২য় কিস্তি) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
আল-কুরআনে বিজ্ঞানের নিদর্শন (৪র্থ কিস্তি) - ইঞ্জিনিয়ার আসীফুল ইসলাম চৌধুরী
ফিরক্বায়ে মাসঊদিয়া ও আহলেহাদীছ (৫ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আদালত পাড়ার সেই দিনগুলি - শামসুল আলম
আল্লাহর উপর ভরসা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মুসলিম উম্মাহর পদস্খলনের কারণ - মীযানুর রহমান মাদানী
তালাক সংঘটিত হওয়ার কারণ ও প্রতিকারের উপায় (ফেব্রুয়ারী’২২ সংখ্যার পর) - মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
আল্লাহর উপর ভরসা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (৫ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
সার্ভকোয়াল মডেলের আলোকে শিক্ষা পরিষেবার গুণমান নির্ণয় - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৭ম কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
আরও
আরও
.