‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে দু’দিনব্যাপী ২৯তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। ১ম দিন বাদ আছর বিকাল সোয়া ৪-টায় তাবলীগী ইজতেমা’১৯-এর সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান :

প্রথমে অর্থসহ পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান। অতঃপর স্বাগত ভাষণ পেশ করেন তাবলীগী ইজতেমা ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ। অতঃপর উদ্বোধনী ভাষণ পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

তিনি বলেন, গত ৫ দিনব্যাপী দেশ জুড়ে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আজকে আছর থেকে হঠাৎ ইজতেমা ময়দান সহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টি মুক্ত আবহাওয়ার সূত্রপাত হওয়ায় এবং চিকচিকে রোদের মিষ্ট আবহ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা সর্বাগ্রে আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করছি। সাথে সাথে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই অন্যবারের ন্যায় ইজতেমা ময়দান ভরে যাওয়ায় আমরা আপনাদের সকলের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। অতঃপর তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী। সে হিসাবে এবার সংগঠন ৪১ বছর পূর্ণ হয়ে ৪২-এ পদার্পণ করল। সমাজ সংস্কারের যে লক্ষ্য নিয়ে সংগঠন শুরু হয়েছিল, সেটি অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। মানুষ ক্রমেই এ আন্দোলনকে আপন করে নিচ্ছে। নিঃসন্দেহে বিশ্বের বুকে একমাত্র বিশুদ্ধ ইসলামী আন্দোলন হ’ল আহলেহাদীছ আন্দোলন। আমাদের এই ইজতেমা মূলতঃ সমাজ সংস্কারের ইজতেমা। যারা নিজেকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে সংস্কার করতে চান, তারাই এখানে এসে থাকেন। তিনি সকলকে শৃংখলা ও সহমর্মিতার সাথে ইজতেমার ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় রেখে এখানে দু’দিন অবস্থানের আহবান জানান। অতঃপর তিনি আল্লাহর নামে দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

নির্ধারিত বক্তৃতা পর্ব :

উদ্বোধনী ভাষণের পর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর ১ম দিন রাত দেড়টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন যথাক্রমে (১) ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (মারকায), (২) ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য জামীলুর রহমান (কুমিল্লা), (৩) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রূীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), (৪) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার (নওগাঁ), (৫) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম (মারকায), (৬) বাহরাইন প্রবাসী মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম (রাজশাহী), (৭) নরসিংদী যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা ইকবাল কবীর, (৮) সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল মান্নান  (৯) নির্ধারিত বক্তার অনুপস্থিতিতে অপেক্ষমাণ হিসাবে বক্তব্য রাখেন, মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ যেলা সভাপতি), (১০) ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব।

আমীরে জামা‘আতের ১ম রাতের ভাষণ :

এ দিন বাদ এশা প্রদত্ত সোয়া ১-ঘণ্টার ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা তাগাবুনের ২ আয়াতের আলোকে সুচিন্তিত ও সারগর্ভ আলোচনা পেশ করেন। তিনি বলেন, ঈমান ও কুফরের দ্বন্দ্বে বিভক্ত সমাজে শান্তি ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ হ’ল আল্লাহ প্রেরিত অহি-র বিধান অনুসরণ করা। কুফরের উপরে আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করাই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত হেদায়াত অনুযায়ী সর্বোত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানকারী। তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বের পতিত মানবতাকে উদ্ধার করতে হ’লে কুরআনের সঠিক জ্ঞানের কোন বিকল্প নেই। আর কুরআনের তাফসীর বুঝতে হবে হাদীছ দিয়ে। মূলতঃ কুরআন ও হাদীছের সঠিক জ্ঞানের অভাবেই মানুষ শিরক ও বিদ‘আতের পাপে হরহামেশা লিপ্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, কেবলমাত্র বিশুদ্ধ আক্বীদাই পারে মানুষকে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন নাজাত দিতে। অতএব আমাদেরকে অবশ্যই সার্বিক জীবনে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর হেদায়াত অনুসরণ করতে হবে। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ সেই হেদায়াত সমূহের প্রচার, অনুশীলন ও বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। আমরা আমাদের আন্দোলনের সফলতার জন্য আল্লাহ পাকের রহমত ও সাহায্য কামনা করি।

দ্বিতীয় দিন :

২য় দিন বাদ ফজর মারকাযী জামে মসজিদে দরসে কুরআন পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। একই সময় ইজতেমা প্যান্ডেলে দরসে হাদীছ পেশ করেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার। অতঃপর সেখানে বেলা ১১-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আলোচনা পেশ করেন যথাক্রমে (১) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), (২) সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুররুল হুদা (রাজশাহী), (৩) সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), (৪) ঢাকা তা‘মীরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সাঈদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), (৫) সিঙ্গাপুর ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মু‘আযযম হোসাইন (বগুড়া)। এরপর  শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মাসিক ‘আত-তাহরীক’-এর সহকারী সম্পাদক (৬) ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম ও (৭) শরীফুল ইসলাম (বাহরাইন)।

মহিলা সমাবেশ : 

ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার সকাল ৯-টা হ’তে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী কমপ্লেক্স-এর বালিকা শাখা ‘মহিলা সালাফিইয়াহ মাদ্রাসা’ ময়দানে মহিলাদের সুবৃহৎ প্যান্ডেলে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’র কেন্দ্রীয় কমিটির তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে সকাল সাড়ে ১০-টায় দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত পর্দার অন্তরালে সমবেত মা-বোনদের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে কষ্ট স্বীকার করে ইজতেমায় আসার জন্য ও এখানে ধৈর্য্যের সাথে দু’দিন অবস্থানের জন্য আল্লাহর নিকট উত্তম জাযা কামনা করেন। অতঃপর তিনি সকলকে ‘আন্দোলন’-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্ব স্ব স্থানে যথাযথভাবে ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

যুব সমাবেশ :

২য় দিন সকাল ৯-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘যুবসমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা আলে ইমরান ১৩৩ আয়াতের আলোকে বলেন, আজকে আমি তোমাদেরকে নছীহতস্বরূপ বলব যে, তোমরা জান্নাত লাভের জন্য প্রতিযোগিতা কর এবং নিজেদের ঘোষিত লক্ষ্যে অবিচল থাকো। তিনি বলেন, তোমাদেরকে লক্ষ্যচ্যুত করার জন্য অতীতেও ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তোমাদের সামনে লোভনীয় প্রস্তাব আসবে। তিনি বলেন, সংগঠন চালাতে গেলে প্রথম বাধা আসে নিজের ঘর থেকে। এরপর ধীরে ধীরে বাধা বাড়তে থাকে। যে লক্ষ্যে ৪০ বছর পূর্বে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ গঠিত হয়েছিল তা সামনে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে চল। দুনিয়াবী কোন লোভের বশবর্তী হয়ে লক্ষচ্যুত হওয়া যাবে না। তোমাদের মধ্যে যেন জোশ ও উৎসাহ আরও বৃদ্ধি পায়, আমরা সর্বান্তঃকরণে আল্লাহর নিকট সেই দো‘আ করি। আজ তরুণদের মধ্যে অনেকেই জঙ্গীবাদে ঝুঁকে পড়ছে। তারা আমাদেরই সন্তান। তারা তোমাদেরই ভাই। তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো তোমাদের অন্যতম দায়িত্ব।

‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন (১) ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, (২) যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আমীনুল ইসলাম, (৩) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক্বীম আহমাদ, (৪) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল হাই, (৫) ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার ও (৬) সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জালালুদ্দীন।

অতঃপর যেলা দায়িত্বশীলদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন (১) ‘যুবসংঘ’ সাতক্ষীরা যেলার সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুর রহমান, (২) কুমিল্লা যেলা সভাপতি আহমাদুল্লাহ, (৩) ঠাকুরগাঁও যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ রাজীবুল ইসলাম, (৪) রংপুর যেলা সভাপতি আব্দুন নূর, (৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি আব্দুর রঊফ, (৬) রাজশাহী সদর সাংগঠনিক যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ নাজীদুল্লাহ, (৭) বগুড়া যেলা সভাপতি আল-আমীন ও (৮) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি আসাদুল্লাহ আল-গালিব। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক আবুল কালাম। সমাবেশে ‘যুবসংঘে’র বিভিন্ন স্তরের বিপুল সংখ্যক কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

জুম‘আর খুৎবা :

ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এবং মারকায জামে মসজিদে সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম জুম‘আর খুৎবা প্রদান করেন। এ সময় মূল প্যান্ডেল ছাড়াও প্যান্ডেলের বাইরে ও মহাসড়কে খোলা স্থানে বসে মুছল্লীগণ খুৎবা শ্রবণ করেন। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, মানুষের দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশার ও প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ভিন্ন কিছুই নয়। বিচক্ষণ মুমিন তিনি, যিনি নিজের মৃত্যুকে সর্বদা স্মরণ করেন এবং স্বীয় জীবদ্দশায় পরকালীন মুক্তির জন্য সর্বাধিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। তিনি সবাইকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে স্ব স্ব জীবনকে আলোকিত করার আহবান জানান।

উল্লেখ্য যে, অন্যান্য বারের ন্যায় এবারও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম. খায়রুজ্জামান লিটন জুম‘আর খুৎবায় যোগদান করেন। ছালাত শেষে দাঁড়িয়ে তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে নিজের গতবারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ইজতেমা ময়দানের জন্য সরকারী খাস জমি বরাদ্দের আশ্বাস দেন।

২য় দিন বাদ আছর থেকে ফজর পর্যন্ত :

এদিন বাদ আছর হ’তে পুনরায় ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়ে ফজরের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এদিন নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন (১) ‘আন্দোলন’-এর শূরা সদস্য মাওলানা দুররুল হুদা (রাজশাহী)। (২) শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, আত-তাহরীক পাঠক ফোরাম রিয়াদ শাখার সাবেক সহ-সভাপতি জুনায়েদ মুনীর (ঢাকা) ও (৩) ‘আন্দোলন’-এর ঢাকা যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ আহসান (ঢাকা)। অতঃপর বক্তব্য রাখেন, (৪) জামালপুর-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক ক্বামারুযযামান বিন আব্দুল বারী, (৫) কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), (৬) ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব (মারকায), (৭) ‘আন্দোলন’-এর দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (মারকায), (৮) ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল হাই (রাজশাহী)। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, (৯) মাওলানা আব্দুল আউয়াল, প্রতিষ্ঠাতা মুনীরিয়া বাহারুল উলূম আলিম মাদ্রাসা, কুরুষকুল (কক্সবাজার)। অতঃপর নির্ধারিত বক্তা (১০) ঢাকার নর্দ্দা সরকারবাড়ী জামে মসজিদের খতীব ড. ইমাম হোসাইন (ঢাকা), (১১) খুলনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), (১২) মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ), (১৩) মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী)। এরপর অনির্ধারিতভাবে আলোচনা করেন, (১৪) মাওলানা বদরুয্যামান (সাতক্ষীরা)। অতঃপর ফজরের আগ পর্যন্ত শেষ বক্তা ছিলেন (১৫) হাফেয শামসুর রহমান (ঢাকা)।

আমীরে জামা‘আতের ২য় রাতের ভাষণ :

এ রাতে বাদ এশা মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সূরা শূরা ১৩ আয়াতের আলোকে ভাষণ পেশ করেন। তিনি বলেন, সমস্ত নবী-রাসূলদের দাওয়াত ছিল ইক্বামতে দ্বীন। যার অর্থ ‘ইক্বামতে তাওহীদ’। এ ব্যাপারে সকলে একমত। এখন ইক্বামতে দ্বীন সম্পর্কে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। সকল মুফাসসির একদিকে। আর আধুনিক কিছু মুফাসসির আরেকদিকে। তারা বলেন, ইক্বামতে দ্বীন অর্থ ইক্বামতে হুকুমত। তিনি বলেন, যদি তাই হয়ে থাকে তাহ’লে আদম (আঃ) হ’তে শুরু করে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত সকলেই কি রাষ্ট্র কায়েমের জন্য এসেছিলেন? ইব্রাহীম (আঃ) তো রাষ্ট্রনেতা হ’তে পারেননি। যে সকল নবী-রাসূল রাষ্ট্র কায়েম করতে পারেননি তারা কি সবাই ব্যর্থ? নীলনদে ফেরাঊনের সদলবলে ডুবে মরার পর মূসা (আঃ) চাইলে আবার ফিরে গিয়ে ফেরাঊনের শূন্য সিংহাসনে বসতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। কারণ এতে আল্লাহর নির্দেশ ছিল না। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন করা বেশী যরূরী নাকি সিংহাসন পরিবর্তন করা বেশী যরূরী? অবশ্যই মানুষ পরিবর্তন সর্বাধিক যরূরী। প্রত্যেক নবী-রাসূল সে কাজই করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ দলমত নির্বিশেষে সকল আদম সন্তানকে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির জন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ার আহবান জানায়।

ইজতেমায় গৃহীত প্রস্তাব সমূহ :

আমীরে জামা‘আতের ভাষণের পর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম সরকারের নিকট নিম্নোক্ত প্রস্তাব ও দাবী সমূহ পেশ করেন এবং উপস্থিত সকলে হাত তুলে সমস্বরে সেগুলির প্রতি জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেন।-

(১) পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

(২) মানুষের রক্তচোষা সূদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বাতিল করে অনতিবিলম্বে ইসলামী অর্থনীতি চালু করতে হবে এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সূদী এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ী মহাজনী সূদী প্রথা এবং সেই সাথে অফিস-আদালত থেকে ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

(৩) হিংসা ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করে দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

(৪) আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে বিষোদগার বন্ধ করতে হবে এবং জঙ্গীবাদের মিথ্যা অপবাদ ও মামলা দিয়ে নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানী করা এবং ইসলামী বই-পুস্তককে ‘জিহাদী বই’ বলে আখ্যায়িত করার অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

(৫) জঙ্গীবাদের বিশ্বাসগত ত্রুটিসমূহ দূর করার জন্য এবং সামাজিক অনাচার সমূহ প্রতিরোধের জন্য শিক্ষার সর্বস্তরে বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

(৬) এ সম্মেলন দলনিরপেক্ষভাবে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে মেধাবী, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের নিযুক্ত করার আহবান জানাচ্ছে।

(৭) যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে মাদকের অব্যাহত সয়লাব ও ইন্টারনেটের অশ্ল­ীল কনটেন্ট সমূহ বন্ধ করতে হবে।

(৮) পিস টিভি বাংলার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য এ সম্মেলন সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

(৯) চকবাযারের চুড়িহাট্টায় ও মীরপুরের বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে হতাহতদের পরিবারের প্রতি এ সম্মেলন গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে এবং নিহতদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছে। সেই সাথে আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো দ্রুত স্থানান্তরের জোর দাবী জানাচ্ছে।

(১০) ভারতের নিষ্ঠুর পানি কূটনীতির কারণে বাংলাদেশের নদীসমূহ ক্রমশঃ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। দেশের সেফগার্ড হিসাবে খ্যাত ‘সুন্দরবন’ ক্রমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য এ সম্মেলন সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।

(১১) আরাকানে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার এবং মিয়ানমারে তাদের নাগরিকত্ব পুনর্বহাল করে সেখানে সসম্মানে তাদেরকে পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য এ সম্মেলন জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।

(১২) সিরিয়া, কাশ্মীর, ইয়েমেন ও চীনের উইঘুর মুসলমানসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নিরীহ-নির্দোষ মানুষ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে এই অন্যায় যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞ বন্ধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ওআইসি ও জাতিসংঘের প্রতি দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য  আহবান জানাচ্ছে।

(১৩) এ সম্মেলন বিভিন্ন সরকারী অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের হিজাব ও নিকাব পরিধান ও ছালাত আদায়ের বিরুদ্ধে এবং তাদের নিকট ইসলামী বই খোঁজার নামে যেসব দমননীতি চলছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

(১৪) এ সম্মেলন অনতিবিলম্বে কাদিয়ানীদের ‘অমুসলিম’ ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।

বিদায়ী ভাষণ ও দো‘আ :

ইজতেমার ৩য় দিন শনিবার ইজতেমার মূল প্যান্ডেলে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত-এর ইমামতিতে ফজরের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। ছালাত শেষে তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ পেশ করেন এবং সকলে ছহীহ-সালামতে স্ব স্ব গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন। অতঃপর সভাপতি হিসাবে তিনি সবাইকে পুনরায় ধন্যবাদ জানিয়ে মজলিস ভঙ্গের দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দু’দিনব্যাপী ২৯তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

ইজতেমার অন্যান্য রিপোর্ট

১. সঞ্চালক বৃন্দ : দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে (১) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম, (২) ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক কাযী হারূণুর রশীদ, (৩) ‘যুবসংঘ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, (৪) ‘আন্দোলন’-এর সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার, (৫) বৃহত্তর কুমিল্লা সাংগঠনিক যেলার অন্তর্গত চাঁদপুর সদর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ হেমায়েত হোসাইন।

২. অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত : তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত করেন (১) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান (বগুড়া), (২) ঢাকা-দক্ষিণ যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), (৩) ‘আল-‘আওন’-এর সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (রাজশাহী), (৪) মারকাযের মক্তব বিভাগের শিক্ষক ক্বারী আব্দুল আউয়াল (রাজশাহী), (৫) হাফেয শাহরিয়ার (রাজশাহী), (৬) হাফেয ইরতিযা আবরার (খুলনা) ও (৭) আল-আমীন (গাযীপুর)।

৩. জাগরণী : ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন (১) আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), (২) মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), (৩) আব্দুল্লাহ আল-মামূন (সাতক্ষীরা), (৪) রোকনুয্যামান (সাতক্ষীরা), (৫) ইয়াকূব (মেহেরপুর), (৬) আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ছাত্র আসাদুল্লাহ আল-গালিব (রাজশাহী), (৭) ফরীদুল ইসলাম (নাটোর), (৮) আলে ইমরান (রাজশাহী), (৯) রামাযান আলী (রাজশাহী), (১০) আব্দুল্লাহ শাকিল (নাটোর), (১১) রেযওয়ান (রাজশাহী) ও (১২) মুসলিমু্দ্দীন (দিনাজপুর)।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও তাবলীগী ইজতেমায় উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। ট্রাক টার্মিনাল ময়দানের পাশাপাশি এ বছর মারকাযের পশ্চিম ও পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানেও প্যান্ডেল করা হয় এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে ট্রাক টার্মিনাল থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তাছাড়া মহিলা মাদরাসায় বৃহদাকার দু’টি প্যান্ডেল এবং ট্রাক টার্মিনালের দক্ষিণ পার্শ্বে স্থানীয় মহিলাদের জন্য পৃথক প্যান্ডেল ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়। পুরুষ, মহিলা মিলে মোট ৭টি প্যান্ডেল ও প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়।

অন্যান্য বারের ন্যায় এবারেও ইজতেমায় দেশের প্রায় সকল যেলা থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সঊদী আরব, সিঙ্গাপুর ও বাহরাইন সহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদ্য দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী কর্মী ও সুধী ইজতেমায় যোগদান করেন। তাছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের হাযার হাযার শ্রোতা ইজতেমার সরাসরি লাইভ প্রোগ্রাম দেখেন।

৪. এজেন্ট সম্মেলন’১৯ :

ইজতেমার ২য় দিন বিকাল সাড়ে ৪-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে মাসিক আত-তাহরীক-এর এজেন্ট সম্মেলন’১৯ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে আত-তাহরীক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক মন্ডলীর মাননীয় সভাপতি মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব সমবেত এজেন্টদের উদ্দেশ্যে সূরা মায়েদার ৬৭ আয়াতের আলোকে বলেন, দুনিয়াতে মানুষ যে সকল পুরস্কার অর্জন করে সেগুলি সে বাড়ীর শোকেসে অথবা বৈঠকখানায় রেখে কবরে চলে যায়। কিন্ত আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃত দাওয়াতী কাজের পুরস্কার মানুষ সাথে কবরে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, এজেন্ট ভাইয়েরা! আপনাদের নেকীর পাল্লায় কত যে নেকী জমা হয়েছে তা স্রেফ আল্লাহ্ই জানেন। অনেকেই আপনাদেরকে হকার বলেন। হ্যাঁ! আপনিই আল্লাহর হকার। হকাররা স্রেফ টাকার জন্য হকারী করে। আর আপনারা করেন নেকীর জন্য। আপনারা করেন দ্বীনের দাওয়াত চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে। তাই অন্যান্যদের সাথে আপনাদের আসমান-যমীনের পার্থক্য। আমাদেরই এক ভাই প্রথমে মাত্র ২০ কপি তাহরীক দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ১২০ কপি তাহরীক বিক্রি করেন। আমরা দো‘আ করি, যারা এভাবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আল্লাহ পাক তাদেরকে যেন সর্বোত্তম জাযা দান করেন। আমরা এজেন্ট ভাইদের জন্য খাছ করে দো‘আ করি- তারা যেন আরও বেশী তৎপর হ’তে পারেন এবং তাহরীকের প্রচার ও প্রসারে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারেন। সেই সাথে তাহরীকের সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, গবেষণা বিভাগের পরিচালক, সিনিয়র ও জুনিয়র গবেষকদের জন্যও দো‘আ করি। আল্লাহ তাদের মেধাকে আরও বাড়িয়ে দিন!

‘আত-তাহরীক’ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ, সঊদী আরব শাখার সহ-সভাপতি হাফেয মুহাম্মাদ আখতার ও বাহরাইন প্রবাসী মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনে ‘আত-তাহরীক’-এর পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশ করেন সহকারী সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। এজেন্টদের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশ করেন ছফিউল্লাহ খান (নারায়ণগঞ্জ) ও আল-আমীন (বগুড়া)। সম্মেলনে সর্বাধিক পত্রিকা বিক্রয়কারী এজেন্ট হিসাবে ১ম স্থান অধিকারী জনাব আনীসুর রহমান (বগুড়া), ২য়- রেযাউল করীম (রংপুর) ও ৩য়- হাবীবুর রহমান (সাতক্ষীরা)-এর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন মাননীয় প্রধান অতিথি।

অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করে আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ছাত্র হাফেয রামাযান আলী এবং ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করে আব্দুল্লাহ আল-মামূন ও আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠী কুমিল্লার সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর গবেষণা সহকারী ড. নূরুল ইসলাম।

৫. জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান :

বিগত বছরের ন্যায় এবারও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে ‘জাতীয় গ্রন্থপাঠ প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচিত গ্রন্থ ছিল ‘রিয়াযুছ ছালেহীন (প্রথমার্ধ) (১-৪৬৭ পৃ.)’। এতে শীর্ষস্থান অধিকারী তিনজন হ’ল যথাক্রমে- (১) মুহাম্মাদ আলে-ইমরান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), (২) মুহাম্মাদ এ এইচ মাহফূয (রাজশাহী) ও (৩) ইরফানুল ইসলাম ফাহীম (কুমিল্লা)। এছাড়া ৫ জনকে বিশেষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তারা হ’ল যথাক্রমে- (১) রায়হানুদ্দীন (দিনাজপুর), (২) শাহীন রেযা (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), (৩) নাজমুল আহসান (সাতক্ষীরা), (৪) আল-সাবাহ (গাইবান্ধা), (৫) রাগিব হাসান রূহান (পাবনা)। ইজতেমার দ্বিতীয় দিন রাতে ইজতেমা মঞ্চে বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত।

৬. নতুন হাফেযদের পুরস্কার প্রদান :

আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগ হ’তে ২০১৮ সালে হিফয সম্পন্নকারী ১১ জন এবং মহিলা শাখার ১ জন হাফেযাকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। হিফয সম্পন্নকারীরা হ’ল, (১) আল-আমীন (গাযীপুর), (২) আব্দুর রহমান (রাঙ্গামাটি), (৩) আনাস (ময়মনসিংহ), (৪) মা‘ছূম বিল্লাহ (নাটোর), (৫) হুযাইফা (যশোর), (৬) আরাফাত (নওগাঁ), (৭) তাওয়াবুর রহমান (রাজশাহী), (৮) ছাদিকুল ইসলাম (রাজশাহী), (৯) ওয়ালিউল্লাহ (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), (১০) ইয়াসীন আলী (নাটোর) ও (১১) আজমাল হক (রাজশাহী)। মহিলা শাখার হিফয সম্পন্নকারী হ’ল, (১) ফাতেমা (রাজশাহী)।

৭. দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ :

তাবলীগী ইজতেমা’১৯ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ মারকায এলাকার পক্ষ থেকে ‘ছওতুল মারকায’ নামে দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যা ইজতেমা প্যান্ডেলের পূর্ব পার্শ্বস্থ বুক স্টলের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় প্রদর্শিত হয়।

৮. ফৎওয়া বুথ :

গতবারের ন্যায় এবারও ফৎওয়া বুথের ব্যবস্থা করা হয়। আত-তাহরীক কার্যালয়ে স্থাপিত ফৎওয়া বুথে বিভিন্ন যেলা থেকে আগত কর্মী ও সুধীবৃন্দের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম ও আহমাদুল্লাহ। ইজতেমার ২য় দিন বিকাল ৪-টা থেকে রাত ১২-টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।






আরও
আরও
.