বিশুদ্ধ ইসলামের অনুসরণ ব্যতীত জান্নাত লাভ সম্ভব নয়
রাজশাহী ২০শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার : অদ্য সকাল সাড়ে নয়টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর
উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়ায় ‘আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী
কমপ্লেক্স’-এর পশ্চিম পার্শ্বস্থ ময়দানে অনুষ্ঠিত বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে
প্রদত্ত উদ্বোধনী ভাষণে সম্মেলনের সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন
বাংলাদশে’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী- ‘পৃথিবীর বুকে এমন কোন কাঁচা ও পাকা ঘর থাকবে না যেখানে আল্লাহ ইসলামকে প্রবেশ করাবেন না’ (আহমাদ হা/২৩৮৬৫; মিশকাত হা/৪২)
উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এটি নিঃসন্দেহে প্রকৃত ইসলাম, ভেজাল ইসলাম নয়।
কেননা জান্নাতে তারাই যাবে যারা বিশুদ্ধ ইসলামের অনুসারী হবে। অশুদ্ধ
ইসলামের অনুসারীরা প্রথমেই জান্নাতে যেতে পারবে না। আহলেহাদীছ আন্দোলন তাই
বিশুদ্ধ ইসলামের দিকেই মানুষকে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, হজ্জব্রত পালন শেষে আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা আমরা হজ্জে গিয়ে দেখতে পেয়েছি। তিনি বলেন, আমি কোন দাওয়াতী সফরে যাইনি। বরং ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলাম। এরপরও সেখানে যে সম্মান পেয়েছি তাতে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। সেই সাথে আপনারাও নিজেদেরকে সম্মানিত বোধ করবেন। কেননা এটা হ’ল সাংগঠনিক সম্মান।
তিনি কর্মীদেরকে প্রতিটি মুহূর্তে রিয়া বা ছোট শিরক হ’তে বেঁচে থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, নিজের অহংকারকে চূর্ণ করতে হবে। আহলেহাদীছ আন্দোলন এক পা-ও অগ্রসর হবে না যদি আপনার মনে চুল পরিমাণ অহংকার থাকে। তিনি বলেন, ঐ কর্মীর কোন প্রয়োজন নেই, যে শুধু পদ ও চেয়ার খুঁজে বেড়ায়। তাই সর্বাগ্রে নিজেদের নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন।
আমীরে জামা‘আত বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি কাঁচা ঘরে ও উচ্চ ভবনে একদিন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র দাওয়াত প্রবেশ করবে ইনশাআল্লাহ। সেদিন হয়তো আমরা থাকবো না। কিন্তু আমাদের ছেলে-মেয়ে, নাতী-নাতনীরা তা স্বচক্ষে দেখবে। আমাদের দায়িত্ব স্রেফ এখলাছের সাথে দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যাওয়া। এই দাওয়াত যেন কখনো দুনিয়াবী স্বার্থে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা দুনিয়াবী স্বার্থে আন্দোলন করলে তা ধ্বংস ডেকে আনবে।
পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বেঁচে থাকার উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, হক আন্দোলনের জন্য মূর্খরা যতটা না ক্ষতিকর, তার চাইতে বেশী ক্ষতিকর হিংসুক বিদ্বানরা। যেমন একজন সাধারণ ডাকাতের চাইতে একজন ব্যাংক ডাকাত বেশী ক্ষতিকর। রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ وَالدِّرْهَمِ ‘দীনার ও দিরহামের গোলামেরা ধ্বংস হোক’ (বুখারী হা/৬৪৩৫)। তিনি বলেন, আমরা যারা সংস্কার আন্দোলন করছি তাদেরকে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর বুকে ইসলাম একদিন বিজয়ী হবেই। সেই বিজয় নিশ্চয়ই বুলেট-বোমা দিয়ে হবে না। হবে আদর্শ দিয়ে। আর সেই আদর্শের প্রচারক হ’লেন আপনারা। তারা যেমন বিদ‘আতের ক্ষেত্রে কঠোর, তেমনি আমরা ছহীহ হাদীছ মানার ক্ষেত্রে কঠোর। তিনি বলেন, আজকে মাযারপূজারীরা আহলেহাদীছদের মসজিদ ভাঙ্গছে। কই তারা তো মন্দির ভাঙ্গে না, চার্চ ভাঙ্গে না, মদের আড্ডাখানা ভাঙ্গে না। আহলেহাদীছের মসজিদ ভাঙ্গে কেন? কারণ তারা বুঝে গেছে যে, আহলেহাদীছ আন্দোলনের এই গতিকে স্তব্ধ করতে না পারলে একদিন সকল মানুষই এই হক দাওয়াত কবুল করে নিবে। তখন হয়তো তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তারা এই হিংস্র পথ বেছে নিয়েছে। অতএব প্রত্যেক ভাইকে আমরা উদাত্ত আহবান জানাই, আসুন! পরকালে মুক্তির লক্ষ্যে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে আমরা আমাদের সার্বিক জীবন গড়ে তুলি।
সকাল সাড়ে ৯-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমানের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। প্রথমে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন সম্মেলনে আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুল লতীফ।
অতঃপর আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পর বিষয়ভিত্তিক বক্তব্য শুরু হয়। ‘বায়‘এ মুআজ্জাল’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দুররুল হুদা (রাজশাহী), ‘কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), ‘মাল ও মর্যাদার লোভ’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা) এবং ‘সাংগঠনিক জীবনে ইখলাছের গুরুত্ব‘ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আহলেহাদীছ ওলামা ও ইমাম সমিতি’র সহ-সভাপতি মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা)। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর অন্যতম কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধান (গাইবান্ধা)।
অতঃপর বাদ আছর সংগঠনের উন্নতি ও অগ্রগতি বিষয়ে যেলা সভাপতি ও প্রতিনিধিগণের মধ্য হ’তে পরামর্শমূলক বক্তব্য পেশ করেন সোহরাব হোসাইন (পাবনা, সঊদী প্রবাসী), বগুড়া যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, মেহেরপুর যেলা সভাপতি মাওলানা মানছূরুর রহমান, যশোর যেলা সভাপতি ডা. বযলুর রশীদ, নওগাঁ যেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার, খুলনা যেলা সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা যেলা সভাপতি মুহাম্মাদ আহসান, রাজশাহী সদর সাংগঠনিক যেলার উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট জারজিস আহমাদ, বরিশাল-পশ্চিম যেলা সভাপতি ইবরাহীম কাওছার ও কুমিল্লা যেলার প্রশিক্ষণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জামীলুর রহমান প্রমুখ।
অতঃপর বাদ মাগরিব ‘মাসিক আত-তাহরীক : একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়ার ভাইস-প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম (রাজশাহী), ‘সংগঠনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (যশোর), ‘ইসলামী পরিবার গঠনে আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থার ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), ‘কর্মীদের মানোন্নয়নে তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণের গুরুত্ব’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা আলতাফ হোসাইন (সাতক্ষীরা), ‘গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা’ করেন কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম (কুষ্টিয়া) এবং ‘সমাজসেবায় আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর ভূমিকা’ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য কাযী মুহাম্মাদ হারূণুর রশীদ (ঢাকা) প্রমুখ। অতঃপর ১ম দিনের সমাপনী বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম।