পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ ।
১৪. ব্যাপক হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়া : ক্বিয়ামতের
একটি আলামত হ’ল হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাওয়া। হত্যাযজ্ঞ এত বেড়ে যাবে যে, পিতা
ছেলেকে, ছেলে তার পিতাকে, চাচাকে ও প্রতিবেশীকে হত্যা করবে। এমনকি
হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি জানবে না হত্যাকান্ডের কারণ কি? রাসূল (ছাঃ)
বলেন,وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ لاَ
يَدْرِى الْقَاتِلُ فِىْ أَىِّ شَىْءٍ قَتَلَ وَلاَ يَدْرِى الْمَقْتُولُ
عَلَى أَىِّ شَىْءٍ قُتِلَ ‘ঐ সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! মানুষের
নিকট এমন এক সময় আসবে, যখন হত্যাকারী জানবে না যে, কি অপরাধে সে হত্যা
করেছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কি অপরাধে সে নিহত হয়েছে’।[1] তিনি আরো বলেন,
لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الْفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ وَهْوَ الْقَتْلُ الْقَتْلُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضُ-
‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্ম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বা হত্যাকান্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। হারজ অর্থ খুনখারাবী। তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে’।[2] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হারজ হবে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ‘হারজ’ কী? তিনি বলেন, ব্যাপক গণহত্যা। কতক মুসলমান বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এখন এই এক বছরে এত মুশরিককে হত্যা করেছি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, তা মুশরিকদের হত্যা করা নয়, বরং তোমরা পরস্পরকে হত্যা করবে। এমনকি কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে, চাচাকে, চাচাতো ভাইকে এবং নিকটাত্মীয়কে পর্যন্ত হত্যা করবে। তারা বলল, সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তখন কি আমাদের বিবেক-বুদ্ধি লোপ পাবে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, না। তবে সে সময়ের অধিকাংশ লোকের জ্ঞান লোপ পাবে। তাদের কেউ কেউ মনে করবে সে একটি বিষয়ের উপর আছে অথচ সে থাকবে অন্য বিষয়ের উপর। এরপর তিনি বললেন, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর শপথ! আমি আশঙ্কা করছি যে, সে অবস্থা আমাকে পেয়ে বসবে। আর তোমরা অবশ্যই উক্ত বিষয়গুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করবে। (আবু মূসা আশ‘আরী বলেন,) হয়তো এ যুগ তোমাদেরকে ও আমাকে পেত, তাহ’লে তা থেকে আমার ও তোমাদের বের হয়ে আসা মুশকিল হয়ে যেত, যেমন নবী করীম (ছাঃ) আমাদের জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, আমরা ঐ অনাচারে যত সহজে জড়িয়ে পড়ব তা থেকে বের হয়ে আসা ততোধিক দুষ্কর হবে’।[3] তিনি আরো বলেন, لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتُلَ الرَّجُلُ جَارَهُ وَأَخَاهُ وَأَبَاهُ، ‘কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশী, তার ভাই এবং তার পিতাকে হত্যা না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না’।[4] বর্তমানে দুনিয়াবী স্বার্থে নিরপরাধ মানুষকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে, তেমনি গুম করে হত্যা করা হচ্ছে। অনেক নিহত ব্যক্তির পরিবার জানতেই পারে না যে, কি কারণে তার পিতা, স্বামী বা ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের কাজ ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। যে ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বহু পূর্বেই সতর্ক করে গেছেন।
১৫. প্রাসাদে বিভিন্ন কারুকার্য করা : প্রাসাদে নকশা অংকন ক্বিয়ামতের আলামত। বর্তমানে ব্যাপকভাবে এটা চলছে। প্রতিটি প্রাসাদ নির্মাণের সময় প্রতিযোগিতা করা হয়, কার বাড়ি কত নকশাদার হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,لَا تَقومُ الساعةُ حَتى يَبنىَ النَّاسُ بُيوتاً يُشبِّهُونَها بالمَراجِل، ‘লোকেরা নকশি কাঁথার মত কারুকার্যখচিত বাড়িঘর নির্মাণ না করা পর্যন্ত ক্বিয়ামত হবে না’।[5] অর্থাৎ বাড়ির প্রাচীরে ও নির্মাণ শৈলীতে বিভিন্ন প্রাণী বা প্রকৃতির ছবি সংযোজন করবে। যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
১৬. ভূমিকম্প বৃদ্ধি : ক্বিয়ামতের
অন্যতম আলামত হ’ল ভূমিকম্পের ব্যাপকতা। এমন এক সময় আসবে যখন ঘন ঘন
ভূমিকম্প হবে। তখন বুঝতে হবে যে, ক্বিয়ামত ঘনিয়ে এসেছে। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ، وَتَكْثُرَ
الزَّلاَزِلُ، ‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্ম উঠিয়ে নেওয়া হবে
এবং অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে’।[6]
সালমান
বিন নুফাইল আস-সাকুনী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকটে বসা ছিলাম, তখন একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)!
আপনাকে কি আসমান হ’তে খাদ্য প্রদান করা হয়েছে? তিনি জবাবে বলেন, হ্যঁা।
লোকটি বলল, তার থেকে কিছু উদ্বৃত্ত ছিল কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলল,
তা কী করা হয়েছিল? তিনি বললেন, আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর আমার নিকট ওহী
করা হয়েছে যে, আমি তোমাদের মাঝে সামান্য কয়টা দিনই অবস্থান করব। অতঃপর
তোমরা অপেক্ষা করতে থাকবে, যতক্ষণ না তোমরা বলবে, (ক্বিয়ামত) কখন হবে, কখন
হবে? তখন তোমরা দলে দলে আমার নিকট আসবে এবং একে অপরকে হত্যা করতে থাকবে।
ক্বিয়ামতের পূর্বে দু’টি ভীষণ মহামারী দেখা দিবে এবং এরপর আসবে ভূমিকম্পের
বছরসমূহ’।[7] আরেকটি হাদীছে এসেছে, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হাওয়ালা আল-আযদী (রাঃ)
হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের একটি পদাতিক বাহিনীকে
গনীমত লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে প্রেরণ করলেন। আমরা ফিরে এলাম, অথচ কোন গনীমত
পেলাম না। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করলেন। তিনি আমাদের
মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহ! তাদের ক্লান্তি দূর করতে তাদেরকে আমার দিকে
সোপর্দ কর না এবং তাদেরকে তাদের দিকেও সোপর্দ কর না, তাহ’লে লোকেরা তাদের
উপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে। (ইবনু হাওয়ালা বলেন), এরপর তিনি আমার
মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বললেন, হে ইবনু হাওয়ালা! যখন তুমি দেখবে যে,
বায়তুল মাক্বদিসে (সিরিয়ার) ভূমিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে
অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহা দুর্ঘটনা ও পেরেশানী সন্নিকটে। ক্বিয়ামাত
তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার নিকটে রয়েছে।[8]
১৭. ব্যভিচার ও মদ্যপান বৃদ্ধি পাওয়া, ইলম উঠে যাওয়া ও অজ্ঞতা বেড়ে যাওয়া : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল সমাজে যেনা-ব্যভিচার ও মদ্যপান বেড়ে যাওয়া, জ্ঞাণীদের মৃত্যুর মাধ্যমে ইলম কমে যাওয়া ও মূর্খতা বৃদ্ধি পাওয়া। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَثْبُتَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا- ‘ক্বিয়ামাতের কিছু আলামত হ’ল ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতা প্রসার লাভ করবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে এবং যেনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করবে’।[9] অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রাঃ) বলেন,
لأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمُوهُ أَحَدٌ بَعْدِى، سَمِعْتُهُ مِنَ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم سَمِعْتُ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ وَإِمَّا قَالَ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنَّ يُرْفَعَ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ، حَتَّى يَكُونَ لِلْخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ-
‘আমি কি
তোমাদের এমন একটি হাদীছ বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের নিকট আর কেউ বর্ণনা
করবে না। আমি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের কিছু আলামাত
হ’ল ইলম হ্রাস পাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে,
স্ত্রীলোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি প্রতি
পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে পরিচালক’।[10] অন্যত্র
রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ لأَيَّامًا يَنْزِلُ
فِيْهَا الْجَهْلُ، وَيُرْفَعُ فِيهَا الْعِلْمُ، وَيَكْثُرُ فِيهَا
الْهَرْجُ، وَالْهَرْجُ الْقَتْلُ، ‘অবশ্যই ক্বিয়ামতের আগে এমন একটি সময়
আসবে যখন সব জায়গায় মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে এবং ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে। সে সময়
‘হারজ’ বৃদ্ধি পাবে। আর হারজ হ’ল (মানুষ) হত্যা’।[11] তিনি আরো বলেন,يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ وَيَنْقُصُ الْعِلْمُ، ‘যুগ নিকটবর্তী হবে ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে’।[12]
এক্ষণে
ইলম উঠিয়ে নেওয়ার ধরন কেমন হবে সে বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, আল্লাহ তাঁর
বান্দাদের অন্তর থেকে ইলম উঠিয়ে নেন না, বরং দ্বীনের আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার
মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেন। ফলে যখন কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না তখন লোকেরা
মূর্খদেরকেই নেতা বানিয়ে নিবে। তাদের জিজ্ঞেস করা হ’লে তারা না জেনেই ফৎওয়া
প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে’।[13]
আর
আলেমদের মৃত্যুর ভয়েই ওমর বিন আব্দুল আযীয গভর্নরদের নিকট পত্র লিখে বলেন,
অনুসন্ধান কর, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর যে হাদীছ পাও তা লিপিবদ্ধ করে নাও।
আমি ধর্মীয় জ্ঞান লোপ পাওয়ার এবং আলেমদের বিদায় নেয়ার ভয় করছি। জেনে রাখ,
নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছ ব্যতীত অন্য কিছুই গ্রহণ করা হবে না এবং
প্রত্যেকের উচিত ধর্মীয় জ্ঞানের প্রচার-প্রসার ঘটানো। আর তারা যেন একসাথে
বসে (ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা করে), যাতে অজ্ঞ ব্যক্তি শিক্ষা গ্রহণ করতে
পারে। কারণ জ্ঞান গোপন না হওয়া পর্যন্ত বিলুপ্ত হবে না’।[14]
আর
যখন ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে ও মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে তখন সমাজের অবস্থা কেমন
হবে সে সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইসলাম পুরাতন হয়ে যাবে, যেমন কাপড়ের
উপরের কারুকার্য পুরাতন হয়ে যায়। শেষে এমন অবস্থা হবে যে, কেউ জানবে না,
ছাওম কি, ছালাত কি, কুরবানী কি, যাকাত কি? এক রাতে পৃথিবী থেকে মহান
আল্লাহর কিতাব বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের
(মুসলমানদের) কতক দল অবশিষ্ট থাকবে। তাদের বৃদ্ধ ও বৃদ্ধারা বলবে, আমরা
আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ
নাই)-এর অনুসারী দেখতে পেয়েছি। সুতরাং আমরাও সেই বাক্য বলতে থাকব। (তাবিঈ)
ছিলা (রহঃ) হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু’ বলায় তাদের
কি উপকার হবে? অথচ তারা জানে না ছালাত কি, ছিয়াম কি, হজ্জ কি, কুরবানী কি
এবং যাকাত কি? ছিলা ইবনে যুফার (রহঃ) তিনবার কথাটির পুনরাবৃত্তি করলে তিনি
প্রতিবার তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেন। তৃতীয়বারের পর তিনি তার দিকে মুখ
ফিরিয়ে বলেন, হে ছিলা! এই কালেমা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবে।
কথাটি তিনি তিনবার বলেন’।[15]
আর এ কারণে
পরকালীন জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারণ রাসূল (ছাঃ) যে জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়ার কথা
বলেছেন তা হ’ল কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক জ্ঞান। যা উঠা শুরু হয়েছে।
এজন্য রাসূল (ছাঃ) দুনিয়ার জ্ঞান অর্জনে অগ্রগামী ব্যক্তিদের সমালোচনা করে
বলেছেন,إنّ الله يَبْغضُ كلَّ جَعْظَرِيَ جوَّاظٍ سَخّابٍ في الأسْواقِ
جِيفَةٍ باللَّيْلِ حِمارٍ بالنَّهارِ عالِمٍ بالدُّنْيا جاهِلٍ
بالآخِرَةِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক কর্কশভাষী অহংকারী, বাযারে
চিৎকারকারী, রাতের বেলায় অলস, দিনের বেলায় কর্মঠ, দুনিয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞ ও
পরকাল বিষয়ে অজ্ঞদের ঘৃণা করেন’।[16]
১৮. আমানত নষ্ট হওয়া ও তা হৃদয় থেকে উঠে যাওয়া : ক্বিয়ামতের আলামত হ’ল আমানতের খিয়ানত করা। আমানত রক্ষা করা দ্বীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ যার আমানতদারী নেই তার দ্বীনই নেই। আমানত রক্ষার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানত সমূহকে তার যথার্থ হকদারগণের নিকট পৌঁছে দাও’ (নিসা ৪/৫৮)। রাসূল (ছাঃ) তার অধিকাংশ খুৎবায় বলতেন, لاَ إِيمَانَ لِمَنْ لاَ أَمَانَةَ لَهُ وَلاَ دِيْنَ لِمَنْ لاَ عَهْدَ لَهُ ‘যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার পালন করে না, তার দ্বীন নেই’।[17] আমানত রক্ষার গুরুত্ব বুঝাতে রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَوَّلُ مَا تَفْقِدُونَ مِنْ دِينِكُمَ الأَمَانَةُ، وَآخِرُ مَا تَفْقِدُونَ مِنْهُ الصَّلاَةُ، ‘তোমরা দ্বীন থেকে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি হারাবে তা হ’ল আমানতদারিতা। আর সর্বশেষ যা হারাবে তা হ’ল ছালাত’।[18] আমানত রক্ষা করতেই রাসূল (ছাঃ) হিজরতের দিন শত বিপদ থাকা সত্ত্বেও আলী (রাঃ)-কে আমানতের সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করেন।[19] আর আমানত রক্ষা না করা মুনাফিকের অন্যতম লক্ষণ।[20] আজকাল অধিকাংশ মানুষ আমানত রক্ষা করে না, যা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ. قَالَ كَيْفَ إِضَاعَتُهَا يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ إِذَا أُسْنِدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ، فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ،
‘যখন আমানত বিনষ্ট হবে তখন ক্বিয়ামতের
অপেক্ষা করবে। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমানত কিভাবে নষ্ট হবে?
তিনি বললেন, যখন অযোগ্য ব্যক্তি দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে, তখনই তুমি ক্বিয়ামতের
অপেক্ষা করবে’।[21] অন্য হাদীছে এসেছে, যায়েদ বিন ওয়াহ্হাব বলেন, হুযায়ফা
(রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদের দু’টি হাদীছ বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি
দেখেছি (সত্যে পরিণত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেন,
‘আমানত মানুষের অন্তর্মূলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা
সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানত বিলুপ্তি সম্পর্কেও বর্ণনা
করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ এক সময় ঘুমাবে। তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে
নেয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর মত চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘুমাবে।
তারপর আবার তুলে নেয়া হবে, তখন ফোসকার মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন
একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোস্কা পড়ে,
তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ
বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানত রক্ষা করবে না। তখন বলা হবে, অমুক
গোত্রে একজন আমানতদার ব্যক্তি আছেন। কোন কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে,
লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে
সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। [এরপর হুযায়ফা (রাঃ) বললেন] আমার উপর দিয়ে
এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সঙ্গে লেনদেন করছি এ
সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতাম না। কেননা সে যদি মুসলিম হয় তাহ’লে তার
দ্বীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খ্রিস্টান
হয়, তাহ’লে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে
বাধ্য করবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুককে ব্যতীত কারো সঙ্গে বেচাকেনা
করি না’।[22]
স্বামীর যাবতীয় কার্যক্রম স্ত্রীর নিকট আমানত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الأَمَانَةِ عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِى إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا ‘সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানতের খিয়ানতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। এরপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়’।[23] এক্ষণে আমানতের ক্ষেত্রগুলো বুঝে তা যথাযথভাবে পালন করা মুমিনের একান্ত কর্তব্য।
১৯. পূর্ববর্তী জাতির রীতি-নীতির অনুকরণ করা : ইহুদী-খৃষ্টান ও মুশরিকদের অনুকরণে জীবন পরিচালনা করা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। তাদের অনুকরণ চলা-ফেরা, আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, সংস্কৃতি, ইবাদত ইত্যাদি ক্ষেত্রে হ’তে পারে। রাসূল (ছাঃ) সকল ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন এবং তাদের বিরোধিতা করতে বলেছেন’।[24] রাসূলের উক্ত নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণই পাপ। এটা ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত, যা বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক প্রসার লাভ করছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِى بِأَخْذِ الْقُرُونِ قَبْلَهَا، شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ. فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ كَفَارِسَ وَالرُّومِ فَقَالَ وَمَنِ النَّاسُ إِلاَّ أُولَئِكَ، ‘ক্বিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মত পূর্বপুরুষদের আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ করবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পারস্য ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেন, তাহ’লে আর কারা’?[25] অন্যত্র তিনি বলেন,
لَتَتْبَعُنَّ سُنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوْا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوْهُمْ، قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ-
‘অবশ্য অবশ্যই তোমরা
তোমাদের আগের লোকেদের নিয়ম-পদ্ধতিকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে।
এমনকি তারা যদি গুঁই সাপের গর্তে ঢুকে, তাহ’লে তোমরাও তাদের অনুকরণ করবে।
আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কি ইহুদী ও নাছারা? তিনি বললেন, তবে আর
কারা’?[26] অন্য বর্ণনায় রয়েছে,وَحَتَّى لَو أَنَّ أَحَدَهُمْ جَامَعَ
أُمَّهُ بِالطَّرِيْقِ لَفَعَلْتُمْ، ‘এমনকি তাদের কেউ যদি রাস্তায় তার
মায়ের সাথে যেনা করে তোমরাও তাই করবে’।[27]
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, তাদের অনুকরণের অর্থ হ’ল পাপাচার ও শরী‘আত বিরোধী কাজে তাদের মত হয়ে যাওয়া। কাফের হয়ে যাওয়া নয়।
২০. দাসী কর্তৃক মনিবকে জন্মদান, নগ্ন পা ওয়ালা, উলঙ্গ ও ছাগলের রাখালদের প্রাসাদ নিয়ে অহংকার করা : ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল দাসী কর্তৃক মুনিবকে জন্মদান করা এবং সমাজের নিম্নস্তরের লোকদের বড় বড় ভবন নির্মাণ নিয়ে অহংকার প্রকাশ করা, যা বর্তমানে চলছে। ক্বিয়ামতের পূর্বে অবস্থা এমন হবে যে, সমাজের গুরুত্বহীনরা হবে সমাজ নেতা। তারা সমাজের নেতৃত্ব দিবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,
إذا رَأيْتَ الأَمَةَ وَلَدَتْ رَبَّتَها وَرَأيْتَ أصْحابَ البُنْيانِ يَتَطاوَلُونَ بالبُنْيانِ وَرَأيْتَ الحُفاةَ الجِياعَ العالَةَ كانُوْا رؤوسَ النَّاسِ فَذَلِكَ مِنْ مَعالِمِ السَّاعَةِ وأشْراطِها-
‘যখন তুমি দেখবে দাসী
তার মনিবকে জন্ম দিচ্ছে, ভবন নির্মাণকারীদের দেখবে তাদের প্রাসাদ নিয়ে
গর্ব করছে, ক্ষুধার্ত নগ্নপদ বিশিষ্ট রাখালেরা লোকদের নেতৃত্ব দিতে দেখবে,
এটিই ক্বিয়ামতের আলামত’।[28] হাদীছে জিব্রীলে এসেছে, জিব্রীল (আঃ) জিজ্ঞেস
করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, এ
ব্যাপারে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, সে অধিক জানে না। তবে
আমি তোমার কাছে এর কতগুলো নিদর্শন বলছি। তা হ’ল, যখন দাসী তার মনিবকে জন্ম
দিবে, এটা তার একটি নিদর্শন। আর যখন নগ্নপদ ও নগ্নদেহ বিশিষ্ট লোকেরা
মানুষের নেতা হবে, এও তার একটি নিদর্শন। এটি ঐ পাঁচটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত,
যা আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানেন না (১) ক্বিয়ামত সম্পর্কিত জ্ঞান কেবল
আল্লাহর নিকটেই রয়েছে। (২) তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, (৩) তিনিই জানেন,
মাতৃগর্ভে কী আছে। এরপরে সে লোকটি চলে গেল। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাঁকে আমার
নিকট ফিরিয়ে আন। ছাহাবীগণ তাঁকে ফিরিয়ে আনতে গেলেন, কিন্তু কিছুই দেখতে
পেলেন না। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তিনি হ’লেন জিব্রীল, লোকেদেরকে শিক্ষা দেয়ার
জন্য এসেছিলেন’।[29]
২১. পাতলা কাপড় পরিহিতা উলঙ্গ নারীদের আত্মপ্রকাশ : মুসলিম নারীদের বেপর্দা হওয়া ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। তারা ইহুদী-খৃষ্টান ও বিধর্মী নারীদের ন্যায় অর্ধনগ্ন হয়ে রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাযারে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলাফেরা করবে। যারা নিজেরা পুরুষদের প্রতি আকৃষ্ট হবে এবং দেহ প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরুষদেরকে আকৃষ্ট করবে। এর ফলে সমাজে ফিৎনা ছড়িয়ে পড়বে। নারীদের ফিৎনার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) সতর্ক করে বলেন,مَا تَرَكْتُ بَعْدِى فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ، ‘পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিৎনা আমি ছেড়ে যাইনি’।[30] তিনি আরো বলেন,إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِى إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِى النِّسَاءِ، ‘অবশ্যই দুনিয়াটা চাকচিক্যময় সুমিষ্ট আকর্ষণীয়। আল্লাহ তা‘আলা সেখানে তোমাদেরকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছেন। তিনি লক্ষ্য করছেন যে, তোমরা কিরূপ আমল করো। তোমরা দুনিয়া ও নারী জাতি থেকে সতর্ক থেক। কেননা বনী ইসরাঈলদের প্রথম
ফিৎনা ছিল নারীকেন্দ্রিক ’।[31] অন্যত্র তিনি বলেন,
سَيَكُونُ فِى آخِرِ أُمَّتِي رِجَالٌ يَرْكَبُونَ عَلَى سُرُوْجٍ، كَأَشْبَاهِ الرِّجَالِ يَنْزِلُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْمَسَاجِدِ نِسَاؤُهُمْ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ، عَلَى رُءُوسِهِمْ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْعِجَافِ، الْعَنُوهُنَّ فَإِنَّهُنَّ مَلْعُونَاتٌ، لَوْ كَانَتْ وَرَاءَكُمْ أُمَّةٌ مِنَ الأُمَمِ لَخَدَمْنَ نِسَاؤُكُمْ نِسَاءَهُمْ، كَمَا يَخْدُمْنَكُمْ نِسَاءُ الأُمَمِ قَبْلَكُمْ-
‘শেষ যামানার আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক হবে, যারা ঘরের মত জিনে (মোটর গাড়ি)-তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় নামবে (গাড়িতে করে ছালাত পড়তে আসবে)। তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্ন, যাদের মাথা (খোঁপা) বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের মত হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ তারা অভিশপ্ত। তোমাদের পরে কোন জাতি যদি থাকে তবে তোমাদের নারীরা তাদের নারীদের খেদমত করবে। যেমন পূর্বের জাতির নারীরা তোমাদের খেদমত করেছিল’।[32] রাসূল (ছাঃ) বলেন,
صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا -
‘জাহান্নামীদের মধ্যে
দু’টি এমন দল হবে যাদেরকে আমি দেখতে পাব না। কিন্তু তাদের একদল লোকের হাতে
গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে। যা দিয়ে তারা লোকেদেরকে মারধর করবে। আর
দ্বিতীয় দলটি হবে ঐ সমস্ত মহিলা, যারা কাপড় পরিধান করেও উলঙ্গ থাকবে। তারা
পুরুষদের আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরা পুরুষদের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার
চুলের খোঁপা বুখতী উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায় হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ
করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ এত এত
দূর হ’তে পাওয়া যাবে’।[33]
২২. সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া : মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়াও ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত। ক্বিয়ামতের পূর্বে এমন সময় আসবে যখন লোকদের অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।[34] এমনকি লোকেরা দান করার জন্য স্বর্ণ-রৌপ্য ও নগদ অর্থ নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে। কিন্তু সে দান গ্রহণ করার মত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার কেউ বলবে, গতকাল দান করলে গ্রহণ করতাম, আজকে আমার কোন অভাব নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَيَأْتِيَنَّ عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ يَطُوفُ الرَّجُلُ فِيهِ بِالصَّدَقَةِ مِنَ الذَّهَبِ ثُمَّ لاَ يَجِدُ أَحَدًا يَأْخُذُهَا مِنْهُ، ‘মানুষের এমন এক সময় আসবে যখন স্বর্ণ ছাদাক্বা করার জন্য লোক ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা নেয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না’।[35] সম্পদের পরিমাণ এত বৃদ্ধি পাবে যে অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনকারী আফসোস করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
تَقِىءُ الأَرْضُ أَفْلاَذَ كَبِدِهَا أَمْثَالَ الأُسْطُوَانِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ فَيَجِىءُ الْقَاتِلُ فَيَقُولُ فِى هَذَا قَتَلْتُ .وَيَجِىءُ الْقَاطِعُ فَيَقُولُ فِى هَذَا قَطَعْتُ رَحِمِى. وَيَجِىءُ السَّارِقُ فَيَقُولُ فِى هَذَا قُطِعَتْ يَدِى ثُمَّ يَدَعُونَهُ فَلاَ يَأْخُذُونَ مِنْهُ شَيْئً-
‘যমীন তার বক্ষস্থিত বস্ত্তসমূহ সোনা ও রূপা স্তম্ভের মত বের করে দিবে। তখন হত্যাকারী ব্যক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য হত্যা করেছি। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছি। চোর এসে বলবে, এরই কারণে আমার হাত কাটা হয়েছে। অতঃপর সকলেই তা ছেড়ে দিবে। এর থেকে তাঁরা কেউ কিছুই গ্রহণ করবে না’।[36] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُهُ مِنْهُ صَدَقَةً وَيُدْعَى إِلَيْهِ الرَّجُلُ فَيَقُولُ لاَ أَرَبَ لِى فِيهِ-
‘ক্বিয়ামত
সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত না তোমাদের মাঝে এত প্রাচুর্য দেখা দিবে যে, তা
উপচে পড়বে। এমনকি সম্পদের মালিক তখন চিন্তা করবে যে, কে তার ছাদাক্বা গ্রহণ
করবে? ছাদাক্বা নেওয়ার জন্য লোকদেরকে আহবান করা হবে। তখন সে বলবে, আমার
প্রয়োজন নেই।[37] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَصَدَّقُوا فَيُوشِكُ
الرَّجُلُ يَمْشِى بِصَدَقَتِهِ فَيَقُولُ الَّذِى أُعْطِيَهَا لَوْ
جِئْتَنَا بِهَا بِالأَمْسِ قَبِلْتُهَا فَأَمَّا الآنَ فَلاَ حَاجَةَ لِى
بِهَا. فَلاَ يَجِدُ مَنْ يَقْبَلُهَا- ‘তোমরা ছাদাক্বা কর, কেননা তোমাদের
ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ নিজের ছাদাক্বা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা
গ্রহণ করার মত কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেয়ার ইচ্ছা করবে সে) লোকটি বলবে,
গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোন প্রয়োজন নেই’।[38]
ইমাম
নববী বলেন, শেষ যামানায় সম্পদের ব্যাপকতা, যমীনের ধন-ভান্ডারের প্রকাশ এবং
পৃথিবীতে অজস্র বরকতের প্রেক্ষিতে দান গ্রহণ করার জন্য কাউকে পাওয়া যাবে
না। আর এটা ঘটবে ক্বিয়ামতের পূর্বক্ষণে ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ)-এর
আবির্ভাবের পর মানুষ যখন ফিৎনায় পতিত হয়ে নিজকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। তখন কেউ
সম্পদের দিকে খেয়াল করবে না। অথবা এটা ঘটবে মাহদী ও ঈসা (আঃ)-এর অবতরণের
পর যখন মানুষ ন্যায় ও নিরাপদে অবস্থান করবে তখন প্রত্যেকের নিকট যে সম্পদ
থাকবে সেটাকেই সে যথেষ্ট মনে করবে।[39]
ইবনুল
মালাক বলেন, সে সময় সকল মানুষই ধনী হয়ে যাবে। কারণ তারা তখন দুনিয়া ত্যাগী
ও পরকালমুখী হয়ে যাবে। আর তারা প্রতিদিনের জীবিকায় সন্তুষ্ট থাকবে। আগামী
দিনের জন্য কোন সম্পদ গচ্ছিত রাখবে না।[40] সেজন্য রাসূল (ছাঃ) অল্প হ’লেও
প্রতিদিন দান করতে উৎসাহিত করেছেন। কারণ প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা
অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান
দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন’।[41]
ওমর
বিন উসায়েদ বলেন,إِنَّمَا وَلِيَ عُمَرُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ
سَنَتَيْنِ وَنِصْفًا : ثَلَاثِينَ شَهْرًا لَا وَاللهِ مَا مَاتَ عُمَرُ
بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ يَأْتِينَا بِالْمَالِ
الْعَظِيمِ فَيَقُولُونَ اجْعَلُوا هَذَا حَيْثُ تَرَوْنَ فِي الْفُقَرَاءِ
فَمَا يَبْرَحُ حَتَّى يَرْجِعَ بِمَالِهِ يَتَذَكَّرُ مَنْ يَضَعُهُ
فِيهِمْ فَلَا يَجِدُهُ فَيَرْجِعُ بِمَالِهِ ‘ওমর বিন আব্দুল আযীয আড়াই
বছর বা ত্রিশ মাস ক্ষমতায় ছিলেন। আল্লাহর কসম ওমর বিন আব্দুল আযীযের
জীবদ্দশায় জনৈক লোক অঢেল সম্পদ নিয়ে আমাদের নিকটে এসে বলত, এই সম্পদগুলো
দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করে দাও। এই অবস্থা চলতে থাকত। আর ক্ষেত্র না পাওয়ার
কারণে তারা সম্পদ নিয়ে ফিরে যেত’।[42] আর এই সম্পদ আরো বৃদ্ধি পাবে যখন
ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ) পৃথিবীতে আগমন করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَخْرُجُ فِي
آخِرِ أُمَّتِي الْمَهْدِيُّ يَسْقِيهِ اللهُ الْغَيْثَ، تُخْرِجُ
الأَرْضُ نَبَاتَهَا، وَيُعْطَى الْمَالُ صِحَاحًا تَنْعَمُ الأُمَّةُ،
وَتكْثُرُ الْمَاشِيَةُ، وَيَعِيْشُ سَبْعَ سِنِيْنَ، أَوْ ثَمَانِ
سِنِيْنَ- ‘আমার উম্মতের শেষ যামানায় মাহদীর আগমন ঘটবে। আল্লাহ তাকে পানি
দ্বারা সিক্ত করবেন। যমীন তার শস্য উৎপাদন করবে। প্রচুর সম্পদ দান করা হবে।
ফলে জাতি নে‘মত প্রাপ্ত হবে। চতুস্পদ জন্তু বৃদ্ধি পাবে। তিনি সাত বা আট
বছর অবস্থান করবেন’।[43] অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আমার উম্মাতের মাঝে মাহদীর
আগমন ঘটবে, সে পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকবে (যায়েদ
সন্দেহে পতিত হয়েছেন যে, ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী কোন সংখ্যাটি বলেছেন)।
বর্ণনাকারী বলেন, আমরা প্রশ্ন করলাম, এই সংখ্যা দ্বারা কি বুঝায়? তিনি
বললেন, বছর। মানুষ তার নিকট এসে বলবে, হে মাহদী! আমাকে কিছু দান করুন,
আমাকে কিছু দান করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তারপর সে তার কাপড় বা থলেতে
যেটুকু পরিমাণ বহন করে নিতে পারবে তিনি তাকে সেটুকু পরিমাণ দান করবেন’।[44]
তিনি আরো বলেন,وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ
فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا مُقْسِطًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ،
وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى
لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ ‘শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অচিরেই
তোমাদের মাঝে ন্যায়বিচারক রূপে মারয়াম তনয় [ঈসা (আঃ)] অবতরণ করবেন। তারপর
তিনি ক্রুশ ভেংগে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন, জিযয়া রহিত করবেন এবং
ধন-সম্পদের এরূপ প্রাচুর্য হবে যে, কেউ তা গ্রহণ করবে না’।[45]
২৩. বিশেষ ব্যক্তিদের সালাম প্রদান, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, ব্যবসায় মহিলাদের অংশগ্রহণ : ক্বিয়ামতের
আরো কিছু আলামত হ’ল ক্ষমতাশীল বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দেখলে সালাম
প্রদান করা, বাড়িতে বাড়িতে দোকান সৃষ্টি হওয়া ও নারীদের ব্যবসায় সম্পৃক্ত
হওয়া। বর্তমান সময়ে উপরোক্ত বিষয়গুলো সমাজে প্রচলিত। রাসূল (ছাঃ)
বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الرَّجُلُ فِي
الْمَسْجِدِ لاَ يُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَأَنْ لاَ يُسَلِّمَ
الرَّجُلُ إِلاَّ عَلَى مَنْ يَعْرِفُ، ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল
লোকেরা মসজিদের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবে অথচ তাতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে
না। আর লোকেরা কেবল পরিচিত ব্যক্তিদের সালাম প্রদান করবে’।[46] অন্যত্র
তিনি বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُسَلِّمَ الرَّجُلُ عَلَى
الرَّجُلِ لاَ يُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِلاَّ لِلْمَعْرِفَةِ ‘ক্বিয়ামতের
অন্যতম আলামত হ’ল কেবল পরিচিতির ভিত্তিতে লোকেরা একে অপরকে সালাম প্রদান
করবে’।[47] তিনি আরো বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ إِذَا كَانَتِ
التَّحِيَّةُ عَلَى الْمَعْرِفَةِ، ‘পরিচয়ের ভিত্তিতে পরস্পরকে অভিবাদন
জানানো ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত’।[48] অথচ সালামের আদান-প্রদান পরিচিত
অপরিচিত সবার জন্য প্রযোজ্য। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,أَىُّ
الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ
عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ‘কোন ইসলাম উত্তম? তিনি বলেন,
ক্ষুধার্তকে আহার করানো এবং তোমার পরিচিত ও অপরিচিতজনকে সালাম দেওয়া’।[49]
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও ব্যবসায় নারীদের সম্পৃক্ত হওয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, بَيْنَ يَدَىِ السَّاعَةِ تَسْلِيمُ الْخَاصَّةِ وَتَفْشُو التِّجَارَةُ حَتَّى تُعِيْنَ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا عَلَى التِّجَارَةِ وَتُقْطَعُ الأَرْحَامُ، وَشَهَادَةَ الزُّورِ وَكِتْمَانَ شَهَادَةِ الْحَقِّ وَظُهُورَ الْقَلَمِ- ‘ক্বিয়ামতের নিকটবর্তী কালে ব্যক্তি বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা
করবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে, সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে’।[50] তিনি আরো বলেন,
مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَفِيضَ الْمَالُ، وَتَفْشُو التِّجَارَةُ، وَيَظْهَرَ الْعِلْمُ أَوِ الْقَلَمُ قَالَ : قَالَ عَمْرٌو : فَإِنْ كَانَ الرَّجُلُ يَبِيعُ الْبَيْعَ، فَيَقُولُ : حَتَّى أَسْتَأْمِرَ تَاجِرَ بَنِي فُلانٍ، وَيَلْتَمِسُ فِي الْجَوِّ الْعَظِيمِ الْكَاتِبَ فَلاَ يُوجَدُ-
‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া,
ব্যবসায়ের প্রসার হওয়া ও ইলম বা কলমের জোর প্রকাশ পাওয়া। আমর বলেন, কোন লোক
যখন কোন কিছু ক্রয় করবে তখন বলবে, আমি অমুক গোত্রের ব্যবসায়ীর সাথে
পরামর্শ করি। আর বিরাট এলাকায় একজন লেখক খোঁজা হবে। কিন্তু পাওয়া যাবে না’।[51]
[চলবে]
[2]. বুখারী হা/১০৩৬; মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪১০।
[3]. হাকেম হা/৮৫৮৭; আহমাদ হা/১৯৬৫৩; বাযযার হা/২৬২৪; ছহীহাহ হা/১৬৮২।
[4]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১১৮; ছহীহাহ হা/৩১৮৫।
[5]. আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৫৯, ৭৭৭; ছহীহাহ হা/২৭৯।
[6]. বুখারী হা/১০৩৬; মুসলিম হা/১৫৭; মিশকাত হা/৫৪১০।
[7]. হাকেম হা/৮৩৮৩; আহমাদ হা/১৭০০৫; ইবনু হিববান হা/৬৭৭৭; সনদ ছহীহ।
[8]. আবূদাউদ হা/২৫৩৫; মিশকাত হা/৫৪৪৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৩৮।
[9]. বুখারী হা/৮০; মুসলিম হা/২৬৭১।
[10]. বুখারী হা/৬৮০৮; মুসলিম হা/২৬৭১; মিশকাত হা/৫৪৩৭।
[11]. বুখারী হা/৭০৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৪০৫১।
[12]. মুসলিম হা/১৫৭।
[13]. বুখারী হা/১০০।
[14]. বুখারী ১/১৮৬।
[15]. হাকেম হা/৮৬৩৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৪৯; ছহীহাহ হা/৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০৭৭।
[16]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭২; ছহীহাহ হা/১৯৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৭৮।
[17]. আহমাদ হা/১২৪০৬; মিশকাত হা/৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১৭৯।
[18]. হাকেম হা/৮৫৩৮; ছহীহাহ হা/১৭৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৭০।
[19]. ইরওয়াউল গালীল হা/১৫৪৬, ৫/৩৮৪ পৃঃ; সনদ হাসান; মা শা-‘আ ৭৭ পৃঃ।
[20]. বুখারী হা/৩৩; মুসলিম হা/১০৭; মিশকাত হা/৫৫।
[21]. বুখারী হা/৬৪৯৬; মিশকাত হা/৫৪৩৯।
[22]. বুখারী হা/৬৪৯৭; মুসলিম হা/১৪৩; মিশকাত হা/৫৩৮১।
[23]. মুসলিম হা/১৪৩৭; আহমাদ হা/১১৬৭৩।
[24]. বুখারী হা/৫৮৯২; মুসলিম হা/২৬০; মিশকাত হা/৭৬৫,৪৪২১।
[25]. বুখারী হা/৭৩১৯; আহমাদ হা/৮২৯১।
[26]. বুখারী হা/৭৩২০; মুসলিম হা/২৬৬৯; আহমাদ হা/১০৬৪৯; মিশকাত হা/৫৩৬১।
[27]. হাকেম হা/৮৪০৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫০৬৭; ছহীহাহ হা/১৩৪৮।
[28]. আহমাদ হা/২৯২৬; ছহীহাহ হা/১৩৪৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৬০।
[29]. বুখারী হা/৪৭৭৭; মুসলিম হা/৯; আহমাদ হা/৯৪৯৭; মিশকাত হা/০২।
[30]. বুখারী হা/৫০৯৬; মিশকাত হা/৩০৮৫।
[31]. মুসলিম হা/২৭৪২; মিশকাত হা/৩০৮৬।
[32]. হাকেম হা/৮৩৪৬; আহমাদ হা/৭০৮৩; ছহীহাহ হা/২৬৮৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২০৪৩, সনদ হাসান।
[33]. মুসলিম হা/২১২৮; মিশকাত হা/৩৫২৪; ছহীহাহ হা/১৩২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৯৯।
[34]. বুখারী হা/৩১৭৬।
[35]. বুখারী হা/১৪১৪; মুসলিম হা/১০১২।
[36]. মুসলিম হা/১০১৩; মিশকাত হা/৫৪৪৪; ছহীহাহ হা/৩৬১৯।
[37]. মুসলিম হা/১৫৭; ইবনু হিববান হা/৬৬৮০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৪৩০।
[38]. বুখারী হা/১৪১১; মুসলিম হা/১০১১; মিশকাত হা/১৮৬৬।
[39]. শারহু মুসলিম, অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[40]. মিরকাত ১৮৬৬ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
[41]. বুখারী হা/১৪৪২; মিশকাত হা/১৮৬০।
[42]. বায়হাকী, দালায়েলুল নবুআত হা/২৮৪৮; ফাৎহুল বারী ৬/৬১৩।
[43]. হাকেম হা/৮৬৭৩; ছহীহাহ হা/৭৭১।
[44]. তিরমিযী হা/২২৩২; ইবনু মাজাহ হা/৪০৮৩; মিশকাত হা/৫৪৫৫, সনদ হাসান।
[45]. বুখারী হা/২২২২; মুসলিম হা/১৫৫; মিশকাত হা/৫৫০৫।
[46]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩২৬; ছহীহাহ হা/৬৪৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৯৬।
[47]. আহমাদ হা/৩৮৪৮; ছহীহাহ হা/৬৪৮।
[48]. আহমাদ হা/৩৬৬৪; ছহীহাহ হা/৬৪৮।
[49]. বুখারী হা/১২; মুসলিম হা/৩৯; মিশকাত হা/৪৬২৯।
[50]. হাকেম হা/৭০৮৩, ৮৩৭৮; আহমাদ হা/৩৮৭০, ৩৯৮২; ছহীহাহ হা/৬৪৭; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/১০৪৯; ছহীহাহ হা/৬৪৭।
[51]. নাসাঈ হা/৪৪৫৬; হাকেম হা/২১৪৭; ছহীহাহ হা/২৭৬৭।