‘তাহাজ্জুদ’ (التّهَجُّدُ) শব্দটির মূলধাতু (هُجُوْدٌ)। তাহাজ্জুদ এমন শ্রেণীভুক্ত শব্দ, যার অর্থ ঘুমানোও হয়, আবার ঘুম থেকে ওঠা বা রাত্রি জাগরণও হয়। এখানে দ্বিতীয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।[1] পারিভাষিক অর্থে :ما يصلى من نافلة الليل بعد الاستيقاظ من النوم، ‘ঘুম থেকে উঠে রাতের নফল ছালাত আদায় করা’।[2] মু‘জামুল ওয়াসীত্বে বলা হয়েছে- ‘ছালাত বা অন্যান্য নফল ইবাদতের জন্য রাত্রি জাগরণ করা’।[3]

কুরতুবী (রহঃ) বলেন, التَّهَجُّدُ الْقِيَامُ إِلَى الصَّلَاةِ مِنَ النَّوْمِ ‘রাতে ঘুম থেকে উঠে ছালাতে দাঁড়ানোকে তাহাজ্জুদ বলা হয়’।[4] মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে বলেন,وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَكَعَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا ‘আর রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদের ছালাত আদায় করবে। এটি তোমার জন্য অতিরিক্ত। নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উঠাবেন’ (ইসরা ১৭/৭৯)

তবে তাহাজ্জুদ, তারাবীহ, ক্বিয়ামুল লাইল, ক্বিয়ামু রামাযান সবকিছুকে এক কথায় ‘ছালাতুল লাইল’ বা ‘রাত্রির (নফল) ছালাত’ বলা হয়।

তাহাজ্জুদের ফযীলত :

ফরয ছালাতের পর সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ ছালাত হ’ল তাহাজ্জুদের ছালাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَفْضَلُ الصَّلَاةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلَاةُ اللَّيْلِ ‘ফরয ছালাতের পর সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ ছালাত হ’ল রাত্রির (নফল) ছালাত’।[5] প্রতি ফরয ছালাতের ওয়াক্তে মুওয়াযযিন মসজিদের মিনার থেকে মানুষকে ছালাতের দিকে আহবান করে। কিন্তু রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ ছালাতের সময় স্বয়ং আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে এসে তাঁর বান্দাদেরকে দরদভরা কণ্ঠে আহবান করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ.

‘মহান আল্লাহ প্রতি রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন- কে এমন আছে, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা প্রদান করব। কে আছে এমন, আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করব’।[6] আর যারা প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে অলসতার চাদর ছুড়ে ফেলে ইবাদতে রত হয়, তারাই আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দাদের কাফেলায় শামিল হ’তে পারে। নবী করীম (ছাঃ)-এর কণ্ঠে সেই সুসংবাদ বিধৃত হয়েছে, তিনি বলেন,

عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ، فَإِنَّهُ دَأَبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ لِلْإِثْمِ.

‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল বান্দাদের অভ্যাস। আর এটা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপের প্রতিবন্ধক’।[7] উপরন্তু তাহাজ্জুদগুযার বান্দাদের জন্য আল্লাহ জান্নাত প্রস্ত্তত করে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِنَّ فِي الجَنَّةِ غُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا، فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: لِمَنْ أَطَابَ الكَلَامَ، وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَدَامَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ .

‘নিশ্চয়ই জান্নাতের মধ্যে এমন কতিপয় সুন্দর প্রাসাদ রয়েছে, যার বাইরের দৃশ্যগুলো ভিতর থেকে দেখা যায় এবং ভিতরের দৃশ্যগুলো বাহির থেকে দেখা যায়। এক বেদুইন দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই প্রাসাদগুলো কার জন্য?’ তিনি বললেন, যার কথা নরম। ক্ষুধার্তকে খাদ্য প্রদান করে। নিয়মিত নফল ছিয়াম পালন করে এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন সে ছালাত আদায় করে’।[8]

জান্নাতের নে‘মত সম্পর্কে মহান আল্লাহ হাদীছে কুদসীতে বলেছেন,

أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ.

‘আমি আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য এমনসব বস্ত্ত প্রস্ত্তত করে রেখেছি, যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শোনেনি এবং মানুষের হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি। যদি তোমরা চাও তবে পাঠ কর, فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ. ‘কেউ জানে না তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ চক্ষু শীতলকারী কত বস্ত্ত তাদের জন্য লুক্কায়িত আছে’ (সাজদাহ ৩২/১৭)[9]

তাহাজ্জুদের মত ফযীলতপূর্ণ কতিপয় আমল :

জান্নাত পিয়াসীদের জন্য এখানে খুশির সংবাদ হ’ল- ইসলামী শরী‘আতে আল্লাহ এমন কতিপয় আমল বিধিবদ্ধ করেছেন, যা তাহাজ্জুদ ছালাতের মত মর্যাদাপূর্ণ। যাতে করে দুর্বল ঈমানদারগণ সহজে সেই আমলগুলো সম্পাদন করে তাহাজ্জুদের নেকী লাভ করতে পারে এবং নিজের আমলের যিন্দেগীকে বরকত লাভ করতে পারে। এক্ষণে তাহাজ্জুদের মত ফযীলতপূর্ণ কতিপয় আমলের বর্ণনা পেশ করা হলো।

১. এশা ও ফজর ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা :

কোন ব্যক্তি যদি এশা ও ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করে তাহ’লে তার আমলনামায় সারা রাত নফল ছালাত আদায়ের নেকী লিখা হবে। ওছমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি,

مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ، وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ.

‘যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত যাবত (নফল) ছালাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি এশা ও ফযর উভয় ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল, সে যেন সারা রাত ব্যাপী ছালাত আদায় করল (অর্থাৎ, তাহাজ্জুদ ছালাত আদায় করল)’।[10] সুতরাং মুমিনের একান্তকর্তব্য হ’ল এশা ও ফযর ছালাত মসজিদে গিয়ে জামা‘আতের সাথে আদায় করা, যাতে নেকীর এই মহান সুযোগ হাতছাড়া না হয়ে যায়।

২. যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করা :

তাহাজ্জুদের মত ফযীলতপূর্ণ আরেকটি ছালাত হ’ল যোহরের ফরয ছালাতের পূর্বের চার রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেন,أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ يَعْدِلْنَ بِصَلاَةِ السَّحَرِ ‘যোহরের পূর্বের চার রাক‘আত ছালাত শেষ রাতের (তাহাজ্জুদ) ছালাতের মত মর্যাদাপূর্ণ’।[11] রাসূল (ছাঃ) এই চার রাক‘আতকে এতই গুরুত্ব দিতেন যে, মা আয়েশা (রাঃ) বলেন,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا لَمْ يُصَلِّ أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ صَلَّاهُنَّ بَعْدَهَا ‘নবী কারীম (ছাঃ) যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতে না পারলে, যোহরের পরে পড়ে নিতেন’।[12] আর যারা যোহরের পূর্বে চার এবং পরে চার রাক‘আত ছালাতের ব্যাপারে যত্নশীল হয়, তাদের উপর আল্লাহ জাহান্নামকে হারাম করে দেন’।[13]

৩. ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীহর ছালাত আদায় করা :

রামাযান মাসের তারাবীহ ছালাত রাতের ছালাতের অন্তর্ভুক্ত। তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ একই ছালাত। কিন্তু সময়ের ভিন্নতার কারণে নাম পৃথক। কোন তাহাজ্জুদগুযার ব্যক্তি রামাযানে তারাবীহ ছালাত আদায় করলে, তাকে আর তাহাজ্জুদ আদায় করতে হয় না। তারাবীহর ছালাত একাকী আদায় করার চেয়ে জামা‘আতে আদায় করাই উত্তম। কেউ যদি ইমামের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করে, তাহ’লে সে সারা রাত নফল ছালাত (তাহাজ্জুদ) আদায়ের নেকী পাবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا صَلَّى مَعَ الْإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ حُسِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَة ‘কোন ব্যক্তি যদি ইমাম ছালাত শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে তার জন্য পূরা রাতটাই ছালাত আদায় করা হিসাবে গণ্য হবে। (পূরা রাত ছালাত আদায় করার নেকী তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে)’।[14]

  1. ৪. রাতের বেলা একশত আয়াত কুরআন তেলাওয়াত করা :

যারা রাতের বেলা পবিত্র কুরআন থেকে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করে, তাদের আমলনামায় সারা রাত তাহাজ্জুদ আদায়ের নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা একশত আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার জন্য পুরা রাতটাই ইবাদত করা হিসাবে গণ্য হবে’।[15] উপরন্তু কেউ যদি কোন কারণে রাতে তেলাওয়াত করতে না পারে, তাহ’লে পরের দিন সকাল বেলা তেলাওয়াতের মাধ্যমেও এই নেকী হাছিল করা যায়। ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা ওমর ফারূক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ، أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ فِيمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ، وَصَلَاةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْلِ ‘কেউ রাতের কোন করণীয় কাজ না করে ঘুমিয়ে পড়লে, সে যদি ফজর ও যোহর ছালাতের মধ্যবর্তী কোন সময়ে তা আদায় করে নেয়, তাহ’লে তার আমলের নেকী এমনভাবে লেখা হয়, যেন সে রাতের বেলাই সেটা তেলাওয়াত করেছে’।[16]

৫. রাতে সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা :

রাতে সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদের নেকী পাওয়া যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ

‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সূরা বাক্বারাহর শেষের দু্ই আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে’।[17] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,قِيلَ: مَعْنَاهُ كَفَتَاهُ مِنْ قِيَامِ اللَّيْلِ وَقِيلَ:مِنَ الشَّيْطَانِ وَقِيلَ: مِنَ الْآفَاتِ وَيَحْتَمِلُ مِنَ الجميع. ‘এর অর্থ হ’ল (সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত রাতে তেলাওয়াত করা) ক্বিয়ামুল লায়লের নেকী লাভের জন্য যথেষ্ট, শয়তান বা কোন অনিষ্টকারিতা থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ট অথবা এটা সবকিছুর জন্যই যথেষ্ট’।[18] ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, من قرأ خاتمة الْبَقَرَةِ أَجْزَأَتْ عَنْهُ قِيَامَ لَيْلَةٍ ‘যে ব্যক্তি সূরা বাক্বারাহর শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করবে, তাহ’লে ক্বিয়ামুল লায়লের ছওয়াব লাভের জন্য এই দু’টি আয়াতই তার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে’।[19]

৬. উত্তম চরিত্র :

সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিরা তাদের সদাচরণের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ ‘নিশ্চয় আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[20] আর মানুষ উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রাতে ইবাদতকারী (তাহাজ্জুদগুযার) এবং দিবসে নফল ছিয়াম পালনকারীর মর্যাদা লাভ করেন। রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেন, إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِهِ دَرَجَاتِ قَائِمِ اللَّيْلِ صَائِمِ النَّهَارِ ‘নিশ্চয়ই মুমিন বান্দা তার উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে রাতের ক্বিয়ামকারী এবং দিনের ছিয়াম পালনকারীর মর্যাদা লাভ করে থাকে’।[21] শামসুদ্দীন আযীমাবাদী (রহঃ) এই হাদীছের ব্যাখায় বলেন,

وَإِنَّمَا أُعْطِيَ صَاحِب الْخُلُق الْحَسَن هَذَا الْفَضْل الْعَظِيم؛ لِأَنَّ الصَّائِم وَالْمُصَلِّي فِي اللَّيْل يُجَاهِدَانِ أَنْفُسهمَا فِي مُخَالَفَة حَظّهمَا وَأَمَّا مَنْ يُحْسِن خُلُقه مَعَ النَّاس مَعَ تَبَايُن طَبَائِعهمْ وَأَخْلَاقهمْ، فَكَأَنَّهُ يُجَاهِد نُفُوسًا كَثِيرَة، فَأَدْرَكَ مَا أَدْرَكَهُ الصَّائِم الْقَائِم فَاسْةَوَيَا فِي الدَّرَجَة، بَلْ رُبَّمَا زَادَ.

‘সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিকে এই মহান প্রতিদান দেওয়া হয় এজন্য যে, ছিয়াম পলনকারী ও রাত্রিকালিন তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারী নিজেদের সুখ-শান্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এবং নিজেদের স্বভাব-প্রকৃতির বিপরীতে মানুষের সাথে সুন্দর আচরণ করে। এতে তারা যেন প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং সচ্চরিত্রবান ব্যক্তি একসাথে ছায়েম ও ক্বিয়ামকারীর মর্যাদা পেয়ে যায়; বরং বেশী মর্যাদা পায়’।[22] শুধু তাই নয় ক্বিয়ামতের দিন মীযানের পাল্লাতে সবচেয়ে ভারী বস্ত্ত হবে উত্তম চরিত্র। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي المِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الخُلُقِ، وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلَاةِ. ‘মীযানের পাল্লাতে যা কিছু রাখা হবে, তন্মধ্যে সবচেয়ে ভারী বস্ত্ত হবে উত্তম চরিত্র। একজন সচ্চরিত্রবান ব্যক্তি তার সচ্চরিত্রের মাধ্যমে (নফল) ছিয়াম পালনকারী ও রাতের (নফল) ছালাত আদায়কারীর মর্যায় উপনীত হয়’।[23] অন্যত্র তিনি বলেন,إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ وَأَقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِسًا يَوْمَ القِيَامَةِ أَحَاسِنَكُمْ أَخْلَاقًا. ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার নিকট সর্বোত্তম, যার চরিত্র সর্বোৎকৃষ্ট এবং ক্বিয়ামতের দিন সে আমার সর্বাধিক নিকটবর্তী থাকবে।[24] তিনি আরো বলেন,

أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ... فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ.

‘যে তার চরিত্রকে সুন্দর করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সুউচ্চ স্তরে একটি ঘরের যিম্মাদার হয়ে গেলম’।[25]

৭. মিসকীন ও বিধবা মহিলাদের সহযোগিতা করা :

সহায়-সম্বলহীন মিসকীন ও স্বামীহারা বিধবা মহিলারদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে একজন মুসলিম ছিয়ামপালনকারী, তাহাজ্জুদগুযার অথবা আল্লাহর পথের মুজাহিদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ كَالمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ كَالَّذِي يَصُومُ النَّهَارَ وَيَقُومُ اللَّيْلَ. ‘বিধবা ও মিসকীনদের ভরণ-পোষণের জন্য চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ অথবা সারাদিন ছিয়াম পালনকারী ও সারারাত (তাহাজ্জুদ) ছালাত আদায়কারীর সমান ছওয়াবের অধিকারী’।[26] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَنْفَعَهُمْ لِلنَّاسِ، وَأَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ سُرُورٍ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ، أَوْ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً، أَوْ تَقْضِي عَنْهُ دِينًا، أَوْ تُطْرَدُ عَنْهُ جُوعًا، وَلِأَنْ أَمْشِيَ مَعَ أَخٍ لِي فِي حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِي هَذَا الْمَسْجِدِ، يَعْنِي مَسْجِدَ الْمَدِينَةِ، شَهْرًا، وَمَنْ كَفَّ غَضَبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ، وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُمْضِيَهُ أَمْضَاهُ، مَلَأَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ قَلْبَهُ أَمْنًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ مَشَى مَعَ أَخِيهِ فِي حَاجَةٍ حَتَّى أَثْبَتَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قَدَمَهُ عَلَى الصِّرَاطِ يَوْمَ تَزِلُّ فِيهِ الْأَقْدَامُ.

‘আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় সেই সব লোকেরা, যারা বেশী বেশী মানুষের উপকার করে। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে কোন মুসলিমকে খুশি করা অথবা কোন মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দূর করা অথবা কোন মুসলিম ভাইয়ের ঋণ পরিশোধ করা অথবা কোন ভাইয়ের ক্ষুধা দূর করা। কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন (অভাব) পূরণের জন্য তার সাথে হাঁটা (সময় দেওয়া) আমার নিকট এক মাস মদীনার মসজিদে (মসজিদে নববী) ই‘তিকাফ করার চাইতেও অধিক প্রিয় কাজ। যে ব্যক্তি রাগ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি রাগ দ্বারা পরিচালিত হয়ে গুনাহের কাজ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তার রাগকে হজম করতে পারবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার অন্তরকে সন্তুষ্টি দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন মিটানোর জন্য এগিয়ে আসবে এবং তার অভাব পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সাথে ব্যস্ত থাকবে (সময় দিবে), ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার পদযুগলকে সুদৃঢ় রাখবেন, যেদিন পাপের কারণে মানুষের পাগুলো পিছলে যাবে’।[27]

আমাদের আশেপাশে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-পড়শীদের এমন অনেক মিসকীন ও বিধবা মহিলা আছে, যাদেকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা মসজিদে নববীতে ই‘তিকাফের ছওয়াব লাভ করতে পারি।

দূর অতীতে আবূবকর ও ওমর (রাঃ) মুসলিম জাহানের খলীফ হওয়া সত্তেও মিসকীন ও বিধবা মহিলাদেরকে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে সহযোগিতা করতেন। তাঁরা রাতের বেলা বিধবাদের সেবা করতেন। একদা ছাহাবী ত্বালহা (রাঃ) ওমর ফারূক (রাঃ)-কে এক মহিলার বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখলেন। এরপর দিনের বেলায় ত্বালহা (রাঃ) ঐ বাড়ীতে প্রবেশ করে এক অন্ধ, পঙ্গু মহিলাকে দেখতে পান। তখন তিনি ঐ মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ লোকটি (ওমর (রাঃ) তোমার এখানে কি করে? মহিলাটা বলল, সে অমুক অমুক দিন থেকে আমার সেবা করে আসছে। আমার যা যা প্রয়োজন তা নিয়ে আসে, আমার কষ্ট হয় এমন সবকিছু দূর করে দেয়। এরপর ত্বালহা (রাঃ) নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করে বললেন, হে ত্বালহা! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক, তুমি ওমরের সামান্য দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছ?’[28]

৮. জুম‘আর দিনের কতিপয় আদব রক্ষা করা :

জুম‘আর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন। জুম‘আর দিনে করণীয় আমলের ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আমাদের যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তন্মধ্যে পাঁচটি আমল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَنْ غَسَّلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَاغْتَسَلَ، ثُمَّ بَكَّرَ وَابْتَكَرَ، وَمَشَى وَلَمْ يَرْكَبْ، وَدَنَا مِنَ الْإِمَامِ فَاسْتَمَعَ وَلَمْ يَلْغُ ؛ كَانَ لَهُ بِكُلِّ خُطْوَةٍ عَمَلُ سَنَةٍ؛ أَجْرُ صِيَامِهَا وَقِيَامِهَا.

‘(১) যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন অন্যকে গোসল করাল এবং নিজে গোসল করল। (২) (মসজিদে) আগে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিল এবং নিজেও আগেভাগে মসজিদে গেল। (৩) পায়ে হেঁটে গেল এবং কোন কিছুতে (যানবাহনে) আরোহন করল না। (৪) অতঃপর ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ সহকারে খুৎবা শ্রবণ করল এবং (৫) কোন অনর্থক কাজ করল না। তাহ’লে তার জন্য প্রতি কদমে এক বছরের (নফল) ছিয়াম ও (রাত্রিকালিন) ক্বিয়ামের নেকী রয়েছে’।[29]

৯. আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া :

আল্লাহর পথে পাহারা দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে ইবাদত সম্পাদনের মাধ্যমে বান্দা অশেষ নেকী হাছিল করার পাশাপাশি তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়ের নেকী পায়। রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেন,

رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، وَإِنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِي كَانَ يَعْمَلُهُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ، وَأَمِنَ الْفُتَّانَ.

‘আল্লাহর পথে একদিন বা এক রাত পাহারা দেওয়া একমাস ছিয়াম পালন এবং ইবাদতে রাত জাগার চেয়েও শ্রেষ্ঠ। আর যদি এ অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, তাহ’লে তার সম্পাদিত আমলের ছওয়াব জারী থাকবে, তার (শহীদদের মত) রিযিক অব্যাহত রাখা হবে এবং সে (কবরের) ফেৎনাসমূহ থেকে নিরাপদ থাকবে’।[30] অর্থাৎ একদিন-একরাত পাহারা দেওয়ার মাধ্যমে টানা একমাস তাহাজ্জুদ বা নফল ছিয়াম পালন করার নেকী পাওয়া যায়।

১০. রাতে তাহাজ্জুদের নিয়তে ঘুমিয়ে পড়া :

যারা তাহাজ্জুদের নিয়তে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে তারা তাদের নিয়তের কারণে তাহাজ্জুদের নেকী পাবেন। রাসূল (ছাঃ) ইরশাদ করেন,

مَنْ أَتَى فِرَاشَهُ وَهُوَ يَنْوِي أَنْ يَقُومَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ، فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ حَتَّى أَصْبَحَ كُتِبَ لَهُ مَا نَوَى، وَكَانَ نَوْمُهُ صَدَقَةً عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ عَزَّ وَجَلَّ.

‘যে ব্যক্তি বিছানায় শয়নকালে এই নিয়ত করবে যে, সে ঘুম থেকে জেগে রাতের ছালাত (তাহাজ্জুদ) আদায় করবে, অতঃপর ঘুমের আধিক্যের কারণে যদি সকাল হয়ে যায়, তবুও সে যার নিয়ত করেছে, তার নেকী পেয়ে যাবে। আর আল্লাহর কাছে তার সেই ঘুমটা ছাদাক্বাহ হিসাবে গৃহীত হবে’।[31]

১১. বেশী বেশী যিকির করা :

অক্ষম ব্যক্তিরা যিকিরের মাধ্যমে তাহাজ্জুদের নেকী ও মর্যাদা লাভ করতে পারে। যিকির হ’ল অন্তরের খাদ্য। যিনি যত বেশী আল্লাহকে স্মরণ করেন, তার অন্তর তত প্রশান্ত থাকে। আল্লাহ বলেন, أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ ‘জেনে রাখ! যিকিরের মাধ্যমে হৃদয়সমূহ প্রশান্তিলাভ করে’ (সূরা রা‘দ ১৩/২৮)। রাসূলুল্লাহ (ছঃ) আমাদেরকে যতগুলো যিকিরের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন, তন্মধ্যে অন্যতম হ’ল ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’। এই যিকিরের ফযীলতের ব্যাপারে রাসূল (ছঃ) বলেছেন,

مَنْ فَاتَهُ اللَّيْلُ أَنْ يُكَابِدَهُ، وَبَخِلَ بِمَالِهِ أَنْ يُنْفِقَهُ، وَجَبُنَ عَنِ الْعَدُوِّ أَنْ يُقَاتِلَهُ، فَلْيُكْثِرْ مِنْ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، فَإِنَّهُمَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ جَبَلِ ذَهَبٍ وَفِضَّةٍ أَنْفَقَهُ فِي سَبِيلِ اللهِ.

‘যার কাছ থেকে ইবাদতের কষ্টে কাটানো রাত হাতছাড়া হয়ে যায়, যে সম্পদ দান করতে কার্পণ্য করে এবং যে ব্যক্তি শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে হীনবল হয়ে যায়, সে যেন বেশী বেশী ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করে। কেননা এই দু’টি বাক্যের মাধ্যমে যিকির করা আল্লাহর নিকটে তার পথে পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ-রৌপ্য দান করার চেয়েও প্রিয়তর’।[32] অর্থাৎ যারা অসুস্থতা, বিপদাপদ বা অন্য কোন কারণে রাত্রিকালীন ইবাদতের কষ্টে বা তাহাজ্জুদে নিজেদের নিয়োজিত করতে অপারগ হয়ে যায়, তারা বেশী বেশী যিকিরের মাধ্যমেও সেই আমলের নেকী ও মর্যাদা পেয়ে যাবে। তবে এটা অপারগ ও অক্ষম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সুস্থ ও সবল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নয়। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে একশত বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ পাঠ করবে, তার পাপরাশি ক্ষমা করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমপরিমাণ হয়’।[33] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ، وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ، وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالوَرِقِ، وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ قَالُوا: بَلَى. قَالَ: ذِكْرُ اللهِ تَعَالَى قَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ: مَا شَيْءٌ أَنْجَى مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ ذِكْرِ اللهِ.

‘আমি কি তোমাদেরকে সর্বোত্তম কাজ সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের মালিকের নিকটে সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক উঁচু, সোনা ও রূপা দান-খয়রাত করার চেয়ে অধিক উত্তম এবং তোমাদের শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরেকে তোমাদের আঘাত ও তোমাদেরকে তাদের আঘাত অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তাহ’ল আল্লাহর যিকির। মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর যিকিরের চেয়ে অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই’।[34]

১২. অপরকে তাহাজ্জুদের মত ফযীলতপূর্ণ আমল শিক্ষা দেওয়া :

কোন আমলের ডবল নেকী পাওয়ার অন্যতম উপায় হ’ল, অপরকে সেই আমল শিক্ষা দানের মাধ্যমে তাকে অনুপ্রাণিত করা। কোন বান্দার অনুপ্রেরণায় ও দাওয়াতের মাধ্যমে যদি অপর কোন বান্দা ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হয়, দাওয়াত প্রদানকারীর আমলনামায় সেই ছালাতুল লায়ল আদায়কারী ব্যক্তির সমান নেকী লিখে দেওয়া হবে। রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ ‘যে ব্যক্তি অন্য কোন মানুষকে কোন নেক কাজের পথ দেখায় (উৎসাহিত করে), সে ঐ নেক কাজ সম্পাদনকারীর সমান ছওয়াব পাবে’।[35]

পরিশেষে বলা যায়, তাহাজ্জুদ একটি নফল ইবাদত, যা মানুষের হৃদয় জগতকে পরিশুদ্ধ রাখে ও তার রবের নিকটবর্তী করে। মৃত্যুর পর মানুষের প্রকৃত বন্ধু হবে তার সৎ আমল। আখেরাতের কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য এটাই তার মূল পাথেয়। দুনিয়ার ঘরকে সাজানোর জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমরা কত শ্রম ও অর্থ ব্যয় করি। কিন্তু কবরের সাড়ে তিন হাত ঘরকে সাজানোর জন্য আমরা কতটুকু পরিশ্রম করেছি? তাই আসুন! পাপ থেকে তওবাহ করে যাবতীয় নেক আমল সম্পাদনের মাধ্যমে আখেরাতের জন্য উত্তম প্রস্ত্ততি গ্রহণ করি। মহান আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!


[1]. লিসানুল আরব ৩/৪৩২।

[2]. মু‘জামু লুগাতিল ফুক্বাহা ১৪৯, ২৭৫ পৃ.।

[3]. মু‘জামুল ওয়াসীত ২/৯৭২।

[4]. তাফসীরে কুরতুবী ১০/৩০৮।

[5]. মুসলিম হা/১১৬৩; তিরমিযী হা/৪৩৮; নাসাঈ হা/১৬১৩; মিশকাত হা/ ২০৩৯।

[6]. বুখারী হা/১১৪৫; মুসলিম হা/৭৫৮; মিশকাত হা/১২৩।

[7]. তিরমিযী হা/৩৫৪৯; মিশকাত হা/১২২৭; সনদ হাসান।

[8]. তিরমিযী হা/১৯৮৪; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৩০৮৯; ইবনু হিববান হা/৫০৯; মিশকাত হা/১২৩২; সনদ ছহীহ।

[9]. বুখারী হা/৩২৪৪; মুসলিম হা/২৮২৪; মিশকাত: ৫৬১২;

[10]. মুসলিম হা/৬৫৬; আবূদাঊদ হা/৫৫৫; শব্দাবলী তার। তিরমিযী হা/২২১; মিশকাত হা/৬৩০।

[11]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৯৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪১৩; সনদ হাসান।

[12] . তিরমিযী হা/৪২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৫৯; সনদ হাসান।

[13]. আবূদাঊদ হা/১২৬৯; তিরমিযী হা/৪২৮; মিশকাত হা/১১৬৭; সনদ ছহীহ।

[14]. আবূদাঊদ হা/১৩৭৫; তিরমিযী হা/৮০৬; মিশকাত হা/১২৯৮; সনদ ছহীহ।

[15]. মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৯৫৮; সুনানে দারেমী হা/৩৪৯৩; ছহীহুল জামে‘ হ/৬৪৬৮; সনদ ছহীহ্।

[16]. মুসলিম হা/৭৪৭; আবূদাঊদ হা/১৩১৩; তিরমিযী হা/৫৮১; মিশকাত হা/১২৪৭;

[17]. বুখারী হা/৫০০৯; মুসলিম হা/৮০৭;

[18]. শরহে নববী ‘আলা মুসলিম ৬/৯১-৯২

[19]. ফাৎহুল বারী ৯/৫৬, ১০০৯ নং হাদীছ দ্রষ্টব্য।

[20]. বায়হাক্বী, সুনানুল ক্বুবরা হা/২০৭৮২; আদাবুল মুফরাদ হা/২৭৩; সনদ ছহীহ।

[21]. আবূদাঊদ হা/৪৭৯৮; মিশকাত হা/৫০৮২; সনদ ছহীহ।

[22]. আওনুল মা‘বুদ ১৩/১০৭

[23]. তিরমিযী হা/২০০৩; আবূ দাঊদ হা/৪৭৯৯; সনদ ছহীহ।

[24]. তিরমিযী হা/২০১৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৬৪৯; সনদ ছহীহ।

[25]. আবূদাঊদ হা/৪৮০০; ছহীহু জমে‘ হা/১৪৬৪; সনদ হাসান।

[26]. তিরমিযী হা/১৯৬৯; নাসাঈ হা/২৫৭৭; ইবনু মাজাহ হা/২১৪০; সনদ ছহীহ।

[27]. তাবারাণী, মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৬০২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯০৬; সনদ হাসান।

[28]. জামে‘উল ‘উলুম ওয়াল হিকাম, ২/২৯৫।

[29]. আবূদাঊদ হা/৩৪৫; তিরমিযী হা/৪৯৬; ইবনু মাজাহ হা/১০৮৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪০৫; সনদ ছহীহ।

[30]. বুখারী হা/২৮৯২; মুসলিম হা/১৯১৩

[31]. নাসাঈ হা/১৭৪৭; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৯৪১, সনদ হাসান

[32]. তাবারাণী কাবীর হা/৭৮৭৭; ছহীহ তারগীব হা/১৪৯৬; সনদ ছহীহ।

[33]. বুখারী হা/ ৬৪০৫; মিশকাত হা/২২৯৬

[34]. তিরমিযী হা/৩৩৭৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৯০; মুস্তাদরাক হাকেম হা/১৮২৫; সনদ ছহীহ।

[35]. মুসলিম হা/১৮৯৩;





জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ : একটি পর্যালোচনা (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী সংখ্যার পর) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ফিরক্বায়ে মাসঊদিয়া ও আহলেহাদীছ (৫ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম (৮ম কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
আল্লাহ সর্বশক্তিমান - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ভালবাসা - ইহসান ইলাহী যহীর
সার্ভকোয়াল মডেলের আলোকে শিক্ষা পরিষেবার গুণমান নির্ণয় - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (ফেব্রুয়ারী’১৩ সংখ্যার পর) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৪র্থ কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
নারী-পুরুষের ছালাতের পার্থক্য : বিভ্রান্তি নিরসন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
অভ্যাসকে ইবাদতে পরিণত করার উপায় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
পুনরুত্থান - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আরও
আরও
.