
মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব খালজী (৬৩) দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর গত ১৩ই এপ্রিল’১৮ শুক্রবার বিকাল ৪-টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তিনি প্যারালাইসিসে এবং বছরখানেক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সর্বশেষ ব্রেইন স্ট্রোকের পর তিনি দিল্লীর গুরুগাঁ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মৃত্যুর এক সপ্তাহ পূর্বে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। পতৌদি হাউসে তাঁর প্রথম জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মাওলানা ছালাহুদ্দীন মাকবূল আহমাদ। ১৪ই এপ্রিল সকাল ৮-টায় শীদীপুরায় তাঁর দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন মরহূম-এর পুত্র মুহাম্মাদ খালজী। অতঃপর দিল্লীর শীদীপুরা কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
মাওলানা আব্দুল ওয়াহ্হাব খালজী ১৯৫৬ সালের ৪ঠা জানুয়ারী পাঞ্জাবের মালেরকোটলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জামে‘আ রহমানিয়া, বেনারস এবং মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। মদীনা থেকে ফারেগ হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তিনি মারকাযী জমঈয়তের সহ-সেক্রটারী নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে সেক্রেটারী জেনারেলের স্থলাভিষিক্ত হন এবং ১৯৯০ সালের ২৭শে মে সেক্রেটারী জেনারেল নির্বাচিত হন। তখন আমীর ছিলেন মাওলানা মুখতার আহমাদ নাদভী। ২০০১ সালের ১৩ই অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সেক্রেটারী থাকার সময় ‘হুরমতে হারামাইন শরীফাইন কনভেনশন’ নামে এক জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর সময় থেকেই সমগ্র ভারতে কুরআন ও হাদীছ মুখস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যা অদ্যাবধি জারী আছে। তিনি ১৮ বছর যাবৎ জমঈয়তের মুখপত্র ‘তারজুমান’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এ সময় পত্রিকাটিকে সাপ্তাহিক করার পাশাপাশি হিন্দী ভাষায় ‘ইছলাহে সমাজ’ নামে তিনি একটি মাসিক পত্রিকা বের করেন। যা অনিয়মিতভাবে এখনও প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি মালেরকোটলায় মা‘হাদুল ইমাম ছানাউল্লাহ অমৃতসরী প্রতিষ্ঠা করেন। রাবেতায়ে আলামে ইসলামী, কোর্ট মেম্বার অব আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, জামে‘আ সালাফিইয়াহ, বেনারসের পরিচালনা পরিষদ, বিশ্ব মুসলিম কাউন্সিল লন্ডন, ইসলামী এশিয়ান কাউন্সিল শ্রীলংকা, মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড-এর সদস্য এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম মজলিসে মুশাওয়ারাত-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি অনেক দিন যাবৎ অল ইন্ডিয়া মিল্লী কাউন্সিলের সহ-সেক্রেটারীও ছিলেন। ‘আদ-দারুল ইলমিইয়াহ’ নামে তাঁর নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশিত হয়েছে। দাওয়াত ও তাবলীগের ময়দানে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বিশ্ব পরিমন্ডলে জমঈয়তের পরিচিতি বৃদ্ধিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানিয়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, আমি তাকে একজন উদ্যমী ও কর্মঠ হিসাবে দেখেছি। ১৯৯৭ সালে নওদাপাড়া তাবলীগী ইজতেমায় তার নিরহংকার আচরণ আমাদেরকে মুগ্ধ করে। দু’দিন ব্যাপী ইজতেমার এক পর্যায়ে শহরের হোটেল থেকে বেরিয়ে তিনি ও আব্দুল্লাহ মাদানী (নেপাল) নওদাপাড়া মারকাযে আসেন এবং বর্তমান দারুল ইমারতে পূর্ব পার্শ্বে ৩২টি গরু যবহের পর গোশত কুটা-বাছার কাজে আমাকে না জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর কর্মীদের নিজ হাতে খাদ্য বণ্টন করেন ও তাদের পাশে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন। আমি যেয়ে মৃদু ধমক দিলে উনি বললেন, বড় ভাই আমাকে খিদমতের সুযোগ দিন, সবাই কাজ করছে নেকীর জন্য, আমি কি নেকী কামাই করব না? তিনি বললেন, জীবনে বড় বড় সেমিনারে গিয়েছি। কিন্তু এমন সরলতাপূর্ণ পরিবেশ আমি কোথাও দেখিনি। অতঃপর পশ্চিম পার্শ্বের তৃতীয় তলায় ‘যুবসংঘ’ অফিসে গিয়ে গঠনতন্ত্র, কর্মপদ্ধতি, পরিচিতি, সদস্য ফরম ইত্যাদি নিয়ে খুশীতে উনি বললেন, আমি ফিরে গিয়ে এভাবেই ভারতে সংগঠন গড়ে তুলব। তিনি তখন ছিলেন মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল। তাঁর এই আবেগ সেদিন আমাদের মুগ্ধ করেছিল। আল্লাহ তাঁর সকল গোনাহ-খাতা মাফ করুন এবং তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন-আমীন!