আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার
পর জান্নাত থেকে নামিয়ে দেওয়ার সময় তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যখন আমার নিকট
থেকে তোমাদের কাছে কোন হেদায়াত পৌঁছবে, তখন যারা আমার হেদায়াতের অনুসরণ
করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না’। ‘পক্ষান্তরে যারা
অবিশ্বাস করবে এবং আমাদের আয়াত সমূহে মিথ্যারোপ করবে, তারা হবে জাহান্নামের
অধিবাসী এবং তারা সেখানে চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ৩৮-৩৯)। অতঃপর আল্লাহ পাক যুগে যুগে এক লক্ষ চবিবশ হাযার নবী ও রাসূল প্রেরণ করেন (আহমাদ হা/২২৩৪২; মিশকাত হা/৫৭৩৭; ছহীহাহ হা/২৬৬৮-এর আলোচনা)। অতঃপর সর্বশেষ নবী হিসাবে প্রেরণ করেন আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-কে (আহযাব ৪০)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, নবীদের সিলসিলা একটি সুন্দর ইমারতের ন্যায়। যার একটি
ইটের স্থান খালি ছিল। আমি সেই স্থানটি পূর্ণ করেছি। আমিই সেই ইট (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৭৪৫)। অন্যান্য নবীগণ ছিলেন স্ব স্ব গোত্রের নবী (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৫৭৪৭)। কিন্তু শেষনবী ছিলেন বিশ্বনবী (সাবা ২৮)। তিনি কেবল জিন-ইনসানের নবী নন, সকল সৃষ্টিজগতের নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন (মুঃ মিশকাত হা/৫৭৪৮)।
বর্তমান বিশ্বে বসবাস রত সকল মানুষ তাঁর উম্মত। যারা ইসলামে বিশ্বাসী, তারা ‘উম্মতে ইজাবাহ’। আর যারা ইসলামে অবিশ্বাসী, তারা ‘উম্মতে দা‘ওয়াহ’। তাঁর আনীত কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ ইলাহী গ্রন্থ এবং ইসলাম বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম (মায়েদাহ ৩)। ইহূদী হৌক নাছারা হৌক যেকোন ব্যক্তি তাঁর আগমনের খবর শুনেছে, অথচ তাঁর আনীত ইসলামের উপর ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী হবে (মুঃ মিশকাত হা/১০)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ন্যায় ছালাত আদায় করে, আমাদের ক্বিবলাকে ক্বিবলা মানে এবং আমাদের যবেহ করা পশুর গোশত খায়, সে ব্যক্তি ‘মুসলিম’। তার প্রতি (জান-মাল ও ইযযত রক্ষার জন্য) আল্লাহ ও তার রাসূলের দায়িত্ব রয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহর দায়িত্বে হস্তক্ষেপ করোনা’ (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১২)। এতে বুঝা যায় যে, একই ক্বিবলার অনুসারী বিশ্বের সকল প্রান্তের মুসলমান একই উম্মত ভুক্ত। আর মুসলিম-অমুসলিম সকলের এবং সৃষ্টিজগতের একমাত্র নবী হওয়ায় মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুঅত হ’ল সার্বজনীন।
মুহাম্মাদ (ছাঃ) হ’লেন মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী মানদন্ড (বুঃ মিশকাত হা/১৪৪)। তাঁকে শেষনবী মানলে সে মুসলমান, না মানলে সে কাফের। দল মত নির্বিশেষে সকল মুসলমান এক, তাদের নবী এক, ক্বিবলা এক, কুরআন এক, হাদীছ এক, সকলেরই লক্ষ্য এক- পরকালে জান্নাত লাভ। মুসলমান যেকোন সময়ে কেবল উক্ত লক্ষ্যেই ঐক্যবদ্ধ হ’তে পারে। ১৯০ বছরের বৃটিশ গোলামীর বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল কেবল উক্ত ঐক্যবদ্ধ লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করার জন্য এবং মুসলমানদের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য চতুর ইংরেজ শাসক সম্প্রদায় পূর্ব পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর যেলার কাদিয়ান শহরের জনৈক গোলাম আহমাদ (১৮৩৫-১৯০৮ খৃ.)-কে তাদের হীন স্বার্থে কাজে লাগায়। যার ফলশ্রুতিতে তিনি প্রথমে ইমাম মাহদী, অতঃপর মসীহ ঈসা এবং সবশেষে নবুঅতের দাবী করেন। যার বিরুদ্ধে পুরা মুসলিম উম্মাহ গর্জে ওঠে। ‘ফাতেহে কাদিয়ান’ বা কাদিয়ানী বিজয়ী বলে খ্যাত অল ইন্ডিয়া আহলেহাদীছ কনফারেন্সের সেক্রেটারী মাও: ছানাউল্লাহ অমৃতসরীর সাথে ‘মুবাহালা’র পরিণতিতে কঠিন কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ১৯০৮ সালের ২৬শে মে এই ভন্ডনবী লাহোরে নিজ কক্ষের টয়লেটে নাক-মুখ দিয়ে পায়খানা বের হওয়া অবস্থায় ন্যক্কারজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। পরে এরা কাদিয়ানী ও লাহোরী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়। কাদিয়ানীরা গোলাম আহমদকে ‘নবী’ মানে এবং লাহোরীরা ‘মুজাদ্দিদ’ মানে।
এযাবৎ ৪৮-এর অধিক মুসলিম দেশ এবং রাবেতা আলমে ইসলামী ও ওআইসি এই ভন্ডনবীর অনুসারী কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে। এমনকি ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের অতিরিক্ত বিচারপতি শ্রী নামভাট যোশী ১৯৬৯ সালের ২৮৮ নম্বর মামলার রায়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি মির্যা গোলাম আহমদকে মান্য করে তাকে কখনো মুসলমান বলা যায় না’। অথচ দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। আপামর মুসলিম জনসাধারণের কলিজায় আঘাত করে কথিত জনগণের সরকারগুলি এযাবৎ এদেরকে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করেনি। বর্তমানে তাদের দৌরাত্ম্য প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি ২২, ২৩ ও ২৪শে ফেব্রুয়ারী পঞ্চগড় সদর উপযেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের আহমদ নগর এলাকায় তাদের ৩ দিন ব্যাপী কথিত বার্ষিক ‘জলসা সালানা’-র খবর শুনে দেশবাসী স্তম্ভিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরীব-দুখী ও সরলমনা মানুষকে অর্থ-সম্পদের লোভ দেখিয়ে কাদিয়ানীরা তাদের ঈমান হরণ করছে। সে হিসেবে তারা পঞ্চগড়কে সবচেয়ে উপযুক্ত এলাকা মনে করে তাদের প্রোপাগান্ডা চালানোর লক্ষ্যে কয়েকটি এলাকা ক্রয় করেছে ও তাদের নবীর নামে ‘আহমদ নগর’ নাম রেখেছে। কিন্তু তাতে কুলাতে পারেনি। ক্ষুব্ধ জনগণের প্রতিবাদের মুখে প্রশাসন সেটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে। অথচ মুসলমানদের ইসলামী সম্মেলন করতে গেলে প্রশাসনের কাছ থেকে হাযারো বাধা-নিষেধের সম্মুখীন হ’তে হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের সংখ্যা কয়েক হাযারের বেশী ছিলনা। ঢাকার বখশী বাযার অফিস ছিল তাদের প্রচার-প্রোপাগান্ডার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু বর্তমানে তাদের প্রকাশিত পাক্ষিক আহমদী পত্রিকার রিপোর্ট মতে সারাদেশে তাদের ৯৩টি কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞদের মতে এর সংখ্যা ৫০০-এর অধিক। পঞ্চগড় ছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় তাদের একটি বিরাট এলাকা গড়ে উঠেছে। আরবী নাম দিয়ে ৫টি সংগঠন তাদের প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। যেমন (১) মজলিসে আনছারুল্লাহ : এরা ৪০-ঊর্ধ্ব বয়সের সরকারী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকদের মধ্যে এবং শিক্ষিত লোকদের ও অন্যান্যদের মধ্যে প্রচারণা চালায়। (২) মজলিসে খোদ্দামে আহমাদিয়া : এর মধ্যে রয়েছে ১৫ থেকে ৪০-এর নীচের বয়সের লোকেরা। (৩) মজলিসে আতফালুল আহমাদিয়া : এর মধ্যে রয়েছে ১৫ বছর বা তার কম বয়সের কিশোররা। (৪) লাজনা এমাইল্লাহ : এরা ১৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী মহিলাদের মধ্যে প্রচারকার্য চালিয়ে থাকে। (৫) নাছেরাত : এরা ১৫ বছরের কম বয়সী কিশোরীদের মধ্যে প্রচারকার্য চালিয়ে থাকে। এরা কোন হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান বা অন্যদের কাদিয়ানী বানাচ্ছে না, বরং মুসলমানদের ‘মুরতাদ’ বানাচ্ছে। সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে এরা ‘মুসলিম’ পরিচয় দিয়ে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করছে।
আমরা সরকারের নিকট দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দাবী করছি, কাল বিলম্ব না করে এদেরকে ‘অমুসলিম’ ঘোষণা করুন! অন্যান্য অমুসলিমদের ন্যায় তারাও এদেশে বসবাস করুক। কিন্তু ‘আহমাদিয়া মুসলিম জামাত’ নাম দিয়ে মুসলিমদের পথভ্রষ্ট করুক, এটা কেউ বরদাশত করবে না। এজন্য সরকারকেই জনগণের নিকট এবং আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ মুসলমানদের ঈমানের হেফাযত করুন- আমীন! (স. স.)।