নওদাপাড়া, রাজশাহী ৮ই ডিসেম্বর, শুক্রবার : অদ্য সকাল ১০-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর কুল্লিয়া তথা দাওরায়ে হাদীছ ৯ম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী দরস অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম পার্শ্বস্থ মারকাযী জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত উক্ত জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে দরস দেন মারকাযের প্রতিষ্ঠাতা, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। প্রধান অতিথি চিরাচরিত রীতি ছহীহুল বুখারীর শেষ হাদীছের পরিবর্তে ১ম হাদীছের উপর জ্ঞানগর্ভ দরস পেশ করেন।

৩১ মিনিটের উক্ত দরসে তিনি সমবেত ছাত্র-শিক্ষক, আন্দোলনের মজলিসে আমেলা ও শূরা সদস্যবৃন্দ এবং সুধীমন্ডলীর উদ্দেশ্যে বলেন, দাওরা ফারেগ বিদায়ী ছাত্রদের শিক্ষা সমাপনী ক্লাসে অন্যান্য মাদ্রাসার ন্যায় বুখারী শরীফের শেষ হাদীছের পরিবর্তে আমি বেছে নিয়েছি বুখারী শরীফের ১ম হাদীছ, যেখানে নিয়তের হাদীছটি এসেছে। ওলামায়ে কেরাম যারা দাওরা ফারেগ হন বলা যায়, তাদের মাধ্যমে এদেশে ইসলাম টিকে আছে। সুতরাং আলেমদের নিয়তে যদি বিশুদ্ধতা না থাকে, তাহ’লে পুরো ইসলামই মানুষের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়। যে সমস্যায় ভুগছে আজ পুরা ইসলামী বিশ্ব। আল্লাহপাক আলেম উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। আর আলেম যদি বিশুদ্ধ আক্বীদাসম্পন্ন না হন এবং তার নিয়তের মধ্যে যদি ইখলাছ না থাকে, তাহ’লে তার এই ইলম তার কোন উপকারে আসবে না। ইখলাছবিহীন ইলম বালির বস্তার মতো। যা কেবল ভারী হয়, কিন্তু বহনকারীর কোন কাজে আসে না। এজন্য ইমাম বুখারী (রহঃ) বুখারী শরীফের প্রথমে নিয়তের হাদীছটা এনেছেন এবং ছাহেবে মিশকাতও এই হাদীছটি প্রথমে এনেছেন। ওমর ফারূক (রাঃ) যেহেতু মসজিদে নববীর মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবায় এ হাদীছটি বলেছিলেন, তাই তাঁর অনুকরণে ইমাম বুখারীও তাঁর অতুলনীয় গ্রন্থের খুৎবা বা শুরুতে এই হাদীছটি এনেছেন। যে গ্রন্থটি পবিত্র কুরআনের পরে সর্বাধিক বিশুদ্ধ গ্রন্থ হিসাবে বিদ্বানগণের নিকট স্বীকৃত।

নিয়তের হাদীছের মাধ্যমে বাবের শিরোনাম নির্ধারণে ইমাম বুখারীর গভীর দূরদৃষ্টি প্রমাণিত হয়েছে। তিনি এই একই হাদীছটিকে ৪১নং বাবে ৫৪নং হাদীছে নিয়ে এসে তার শিরোনাম নির্ধারণ করেছেন,باب مَا جَاءَ أَنَّ الأَعْمَالَ بِالنِّيَّةِ وَالْحِسْبَةِ وَلِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، এখানে নিয়তের সাথে ‘হিসবাহ’ তথা ছওয়াব লাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা দাওরা ফারেগ আলেমদের নিয়তের সঙ্গে যদি ছওয়াব লাভের উদ্দেশ্য না থাকে, তাহ’লে এই নিয়ত ব্যর্থ হবে। আলেমরা যদি ছওয়াবের নিয়তে কথা বলেন বা কাজ করেন, তাহ’লে তার ঐ নিয়ত ফলপ্রসূ হবে। অন্যথায় নয়। ইমাম বুখারী الحسبة শব্দ উল্লেখ করে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। অতএব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হ’লেও কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বাণী মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

তিনি সৎনিয়ত ও ছওয়াব অর্জনের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে নিজেদের সার্বিক জীবন পরিচালনার জন্য ফারেগ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি নছীহত করেন। তিনি বলেন, আমাদের পবিত্র রূহ যেন পবিত্র দেহ থেকে সৎকর্মের ডালি নিয়ে আমাদের প্রতিপালকের নিকট হাযির হ’তে পারে, আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন!

উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সালের ১০ই জুলাই বৃহস্পতিবার বাদ আছর আমীরে জামা‘আত ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব কর্তৃক ইবনু মাজাহ-এর প্রথম ৫টি হাদীছের দরস প্রদানের মাধ্যমে মারকাযে কুল্লিয়া তথা দাওরায়ে হাদীছের ক্লাস শুরু হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী আমীরে জামা‘আত সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গ্রেফতার হওয়ার কারণে প্রায় তিন বছর এটি বন্ধ থাকার পর ২০০৭ সালের ১৯শে আগস্ট পুনরায় দাওরায়ে হাদীছের ক্লাস শুরু হয়। অতঃপর ২০১৫ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর দাওরায়ে হাদীছের ১ম ব্যাচের ক্লাস শুরু উপলক্ষে আমীরে জামা‘আত ফাৎহুল বারী থেকে বুখারী শরীফের ১ম হাদীছের উপর এক ঘণ্টাব্যাপী দরস প্রদান করেছিলেন। ২০১৫ সালের পর এটি ছিল তাঁর ২য় দরস।

মারকায পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মারকাযের সেক্রেটারী মাওলানা দুররুল হুদা, ভাইস প্রিন্সিপ্যাল ড. নূরুল ইসলাম, শিক্ষক মাওলানা রুস্তম আলী ও মাওলানা আফতাবুদ্দীন। অনুষ্ঠানে ১৪ জন ফারেগ ছাত্র ও ৬ জন ছাত্রীকে মারকাযের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এতদ্ব্যতীত মারকাযের হিফয বিভাগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৫ মাসে হিফয সম্পন্নকারী মুহাম্মাদ হুযায়ফা (পাবনা) সহ ৭ জন ছাত্রকে পুরস্কৃত করা হয়। মারকাযের শিক্ষক মাওলানা ফয়ছাল মাহমূদ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন।







আরও
আরও
.