বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায়

বর্তমানে প্রায়শঃ যত্রতত্র বজ্রপাতে জীবনহানির ঘটনা ঘটছে। আকাশে বিজলী চমকালেই প্রাণনাশের ভয়ে মানুষ অত্যন্ত বিচলিত হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটাছুটি করছে। এটা যে শুধু মানুষের উপরই পড়ছে তা নয়, গরু, মহিষ, গাছপালা প্রভৃতির উপর পতিত হয়ে ঝলশে দিচ্ছে। অতীতে বিভীষিকাময় এই বজ্রপাতের ঘটনা খুব কমই শুনা যেত। বর্তমানে এর মাত্রা ক্রমশঃ বেড়েই চলছে এবং নিমিষেই ঘটছে প্রাণহানী। রেডিও, টেলিভিশনের খবর চালু করলেই এবং পত্রিকার পাতা খুললেই বজ্রপাতে হতাহতদের ভয়ংকর ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে।

আবহাওয়াবিদ ও বিজ্ঞানীরা এর কারণ হিসাবে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা, বিভিন্ন কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাসকে দায়ী করছেন। কেউ কেউ বনজঙ্গল, বড় বড় গাছপালা নিধন ও তাল গাছের স্বল্পতাকে দায়ী করেছেন। আবহাওয়াবিদগণ বলছেন, মূলতঃ বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এসব ঘটে থাকে।

বজ্রপাত কি?

বজ্রপাত হ’ল আকাশে আলোর ঝলকানী বিশেষ। এ সময় বজ্রপাত সংঘটিত এলাকায় মাসে কয়েক লাখ ভোল্টের কারেন্ট উৎপন্ন করে যার তাপ ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার সমপরিমাণ। এখানে বুঝার সুবিধার জন্য বলা যেতে পারে ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা যা সূর্যের পাঁচগুণ বেশী। এ সময় বাতাসের প্রসারণ এবং সংকোচনের ফলে বিকট শব্দ সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক আধানের নির্গমন দু’টি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও সংঘটিত হ’তে পারে। বজ্রপাতের সময় সেখানে ডিসি কারেন্ট উৎপন্ন হয়।

কিভাবে বজ্রপাত সৃষ্টি হয়?

বছরের বিভিন্ন সময় পত্র-প্রত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে মৃত্যুর কথা শোনা যায়। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আমাদের দেশে বজ্রপাতে মারা যায়। এবার আমরা জানার চেষ্টা করব, কেন ও কিভাবে বজ্রপাত সৃষ্টি হয়। বায়ুমন্ডলের উপরের অংশের তাপমাত্রা নীচের অংশের তুলনায় কম থাকে। এই কারণে অনেক সময় দেখা যায়, নীচের দিক থেকে তুলনামূলক হালকা মেঘ উপরের দিকে প্রবাহিত হয়। উপরের দিকে উঠতে থাকা এ ধরনের মেঘকে থান্ডার ক্লাউড (Thunder Clouds) বলা হয়।

অন্যান্য মেঘের মত এ মেঘেও ছোট ছোট পানির কণা বা অতি ক্ষুদ্র জলীয়বাষ্প থাকে। এভাবে উপরে উঠতে উঠতে পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। অর্থাৎ এ ধরনের মেঘে পানির ঘনত্ব বাড়তে থাকে। এভাবে বৃদ্ধি পেতে পেতে পানির পরিমাণ এক সময় ৫ মিঃমিঃ এর বেশী হয়, তখন পানির অণুগুলো আর পারস্পরিক বন্ধন ধরে রাখতে পারে না। তখন এরা আলাদা-Disintegrate হয়ে যায়, ফলে সেখানে বৈদ্যুতিক আধানের বা চার্জ (Electric Charge) সৃষ্টি হয়। আর এভাবে সৃষ্ট আধানের মান নীচের অংশের চেয়ে উপরে বেশী হয়। অর্থাৎ বিভব পার্থক্যের (Potential difference) সৃষ্টি হয়। এই কারণেই উপর হ’তে নীচের দিকে বৈদ্যুতিক আধানের বা চার্জের নির্গমন (Transmission) হয়। বৈদ্যুতিক আধানের বা চার্জের আকস্মিক স্থানান্তরের কারণে এ সময় আমরা আলোর ঝলকানি (Lightning) দেখতে পাই। আর ঘটনার সময় উক্ত এলাকায় বাতাসের প্রসারণ (Expansion) এবং সংকোচন (Contraction) ঘটে। ফলে আমরা বিকট শব্দ শুনতে পাই। এ ধরনের বৈদ্যুতিক আধানের স্থানান্তর দু’টি মেঘের মধ্যে অথবা একটি মেঘ এবং ভূমির মধ্যেও হ’তে পারে।

বজ্রপাতের শক্তি :

ভূমি থেকে ৩ মাইল দূরত্বের বজ্রপাত ১ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন জুল শক্তি উৎপন্ন করে। বৈদ্যুতিক শক্তি পরিমাপক একক ‘কিলোওয়াট/আওয়ার’। এ হিসাবে এ শক্তি ২৭,৮৪০ কিলোওয়াট/আওয়ার। বাংলাদেশে একটি পরিবার গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ১০০-১৫০ ইউনিট (কিলোওয়াট-আওয়ার) বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। অর্থাৎ একটি বজ্রপাতের বিদ্যুৎ শক্তি জমা করতে পারলে একটি পরিবার ১৮৫ মাস বা প্রায় ১৫ বছর বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে।

ইসলামী দৃষ্টিকোণে বজ্রপাত :

বজ্রপাতের মূল রহস্য মহান আল্লাহ তা‘আলার হাতে। এর কল্যাণ ও অকল্যাণ সম্পর্কে আল্লাহ আল-কুরআনুল কারীমে বর্ণনা করেছেন। বজ্র হচ্ছে তাঁরই সৃষ্টি। তিনি আকাশে মেঘমালার সৃষ্টি করেন এবং সেখান থেকে বারী বর্ষণ করেন এবং বজ্রপাতও ঘটিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন,وَاللهُ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَى بَلَدٍ مَيِّتٍ فَأَحْيَيْنَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا كَذَلِكَ النُّشُورُ ‘আর তিনিই আল্লাহ, যিনি বায়ুরাশি প্রেরণ করেন। অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। তখন আমরা তাকে মৃত ভূখন্ডের দিকে পরিচালিত করি। আর তা দিয়ে ঐ ভূখন্ডকে জীবিত করি তার মৃত্যুর পর। বস্ত্ততঃ এভাবেই হবে (তোমাদের) পুনরুত্থান’ (ফাতির ৩৫/৯)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللهَ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ ثَمَرَاتٍ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهَا، ‘তুমি কি দেখ না আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন? অতঃপর তার মাধ্যমে আমরা নানা বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি’ (ফাতির ৩৫/২৭)

মহান আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, পালনকর্তা। তিনি আকাশের বায়ুমন্ডল থেকে মেঘের সৃষ্টি করেন। অতঃপর সেখান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে জমিকে উর্বর করে দেন। ঐ মাটিতে উৎপাদিত গাছপালা, ফলমূল, শস্যাদি মানবকুল, পশু-পাখি ভক্ষণ করে থাকে। আবার সেই মেঘেই বিজলীর সৃষ্টি করেন, যাতে মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণ নিহিত আছে। আল্লাহ এরশাদ করেন,هُوَ الَّذِيْ يُرِيْكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنْشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ، ‘তিনিই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ দেখান ভয় ও আকাঙ্ক্ষার সাথে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ঘন মেঘমালা’ (রা‘দ ১৩/১২)

তিনি আরো বলেন,وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَنْ يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ، ‘আর তাঁর ভয়ে পবিত্রতা বর্ণনা করে বজ্র ও ফেরেশতামন্ডলী এবং তিনি বজ্র প্রেরণ করেন ও যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন। আর ওরা আল্লাহ সম্পর্কে বিতন্ডা করে। অথচ তিনি কঠিন শাস্তিদাতা’ (রা‘দ ১৩/১৩)

আল্লাহ মানুষকে খবর দিচ্ছেন যে, বিজলী তাঁরই নির্দেশনাধীন। পথিক ওটা দেখে কষ্ট ও বিপদের ভয়ে বিচলিত হয়ে পড়ে। আর বাসা-বাড়ীতে অবস্থানকারী ব্যক্তি বরকত ও উপকার লাভের আশায় জীবিকার আধিক্যের লোভ করে।

আল্লাহই বজ্রপাত সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন। এজন্যই শেষ যুগে খুব বেশী বিজলী পতিত হবে। বেশী বেশী বজ্রপাত হওয়া মানুষের জন্য একটি ভয়াবহ বিপদ সংকেত। হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: تَكْثُرُ الصَّوَاعِقُ عِنْدَ اقْتِرَابِ السَّاعَةِ، حَتَّى يَأْتِيَ الرَّجُلُ الْقَوْمَ، فَيَقُولَ: مَنْ صَعِقَ قِبَلَكُمْ الْغَدَاةَ؟ فَيَقُولُونَ: صَعِقَ فُلَانٌ وَفُلَانٌ،

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সময় খুব বেশী বজ্রপাত হবে। এমনকি কোন কোন লোক তাদের কওমের কাছে এসে জিজ্ঞেস করবে, সকালে কার উপর বিজলী পড়েছে? তারা উত্তরে বলবে, অমুকের উপর এবং অমুকের উপর’।[1]

বজ্রপাতের সময় দো‘আ :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন বজ্রধ্বনি শুনতেন তখন নিম্নবর্ণিত দো‘আটি পাঠ করতেন,

سُبْحَانَ الَّذِيْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ

(সুবহানাল্লাযী ইউসাবিবহুর রা‘দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খীফাতিহি)। ‘আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সে সত্তার যাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে মেঘের গর্জন, তাঁর প্রশংসাসহ ফেরেশতাগণও তাঁর ভয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করেন’।[2]

বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসা :

বজ্রপাতে আক্রান্তদের অধিকাংশই তাৎক্ষণিকভাবে মারা যায়। সৌভাগ্যবশত অল্প সংখ্যক আহত হয়ে বেঁচে যান। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাত সম্পর্কে বিভিন্ন সতর্কতা জারী করেছে। মন্ত্রণালয় হুঁশিয়ারী দিয়েছিল যে, বজ্রপাতের ঘটনায় কেউ আহত হ’লে তাদের বিদ্যুতের শকে আহতদের মতো আচরণ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। খুব দ্রুত কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হ’লে আহত ব্যক্তির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকে। যদি দেরী হয়ে যায়, তাহ’লে মারা যেতে পারে।

বজ্রপাতে আহতদের চিকিৎসার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নেওয়া দরকার, তবে হয়তো কাউকে বাঁচানো যেতে পারে। কারণ অধিকাংশ মানুষ হার্ট অ্যাটাকের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মারা যায়। কিছু মানুষের হৃদয় একটু থেমে আবার শুরু হ’তে পারে। চিকিৎসকরা বলেছেন, আহত ব্যক্তির হার্ট সক্রিয় থাকলে তাকে অবিলম্বে সিপিআর দিতে হবে। তাই সিপিআর সম্পর্কে জ্ঞান থাকা যরূরী। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ করার পর আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

বজ্রপাত কমাতে করণীয় :

বজ্রপাতের ভয়াবহতা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া ও গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাস্তার পার্শ্বে বা যত্রতত্র তালগাছ লাগাতে হবে। কেউ কেউ বলছেন, বজ্র হচ্ছে বিদ্যুৎ, তাই আশে পাশে বৈদ্যুতিক তার থাকলে কোন সমস্যা নেই, ঐ তারই ঐ বিদ্যুৎকে টেনে নিবে। যেহেতু তার হচ্ছে ধাতব পদার্থ, তাই দালান কোঠা বা বাড়ীর সন্নিকটে লোহার শিক দিয়ে আর্থিং করতে হবে।

বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় :

বজ্রপাতের সময় আমরা যদি সচেতন থাকি তাহ’লে আমরা এর হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে পারি-

* বজ্রপাতের সম্ভাবনা দেখা দিলে খোলা বা উঁচু জমিতে না থাকা। কোন ভবনের নিচে আশ্রয় নেওয়া ভাল হবে।

* উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তাই বজ্রঝড়ের সময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। এমনকি খালি তাঁবু বা বড় গাছগুলোতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। তাই সেখানে আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

* বাড়িতে থাকাবস্থায় জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া যাবে না। আবহাওয়া অধিদফতর এই সময় জানালা বন্ধ রাখার এবং ঘরের মধ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছে।

* যখন বজ্রঝড় বা ঝড় হয়, তখন বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা ঠিক নয়। এমনকি ল্যান্ড ফোন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ যখন তার বজ্রপাতের সংস্পর্শে আসে, তখন অনেকগুলিই স্পৃষ্ট হ’তে পারে।

* এই সময়ে সব ধরনের বৈদ্যুতিকভাবে সংযুক্ত যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ থাকলেও তাদের স্পর্শ করা ঠিক হবে না। আর বজ্রপাতের ক্ষেত্রে সুইচ বা প্লাগ আগে থেকেই খোলা রাখতে হবে।

* কেউ বজ্রঝড়ের সময় রাস্তায় গাড়িতে থাকলে আবহাওয়াবিদের মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফেরার চেষ্টা করতে হবে। তারপর যদি প্রবল বজ্রপাত এবং বৃষ্টি হয়, তাহ’লে গাড়িটি কোন পাকা ভবনের নীচে রাখা যেতে পারে। সেই সময় গাড়ির কাচ স্পর্শ করাও বিপদের কারণ হ’তে পারে।

* ভারী বৃষ্টির কারণে রাস্তায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হ’তে পারে এবং অনেক সময় বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুটি ভেঙে তার পানিতে পড়ে যেতে পারে, যা দুর্ঘটনার কারণ। আবার কাছাকাছি কোথাও বজ্রপাত হ’লেও, সেই পানি বৈদ্যুতিক শক হওয়ার অন্যতম কারণ হ’তে পারে।


* ভেজা চামড়ার জুতা বা খালি পা খুব বিপজ্জনক, বিশেষ করে বজ্রপাতের সময়। এ সময় একা বাইরে যেতে হ’লে পা-ঢাকা জুতা ব্যবহার করা ভাল এবং রাবার গাম্বুট এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে।

* স্বেচ্ছাসেবকদের উচিত আহতদের চিকিৎসার জন্য খুব তাড়াতাড়ি তাদের হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করা। খালি হাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া কাউকে স্পর্শ করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই খালি হাতে স্পর্শ করা উচিত নয়, তবে কিছু সময় পর স্পর্শ করা যাবে।

* নদী, পুকুর বা হরদে মাছ ধরা বা নৌকা ভ্রমণ যে কোন উপায়ে এড়ানো উচিত। যদি একসাথে অনেক লোক থাকে তবে সেগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উচিত। বজ্রপাতের সময় কংক্রিটের উপর ঝুঁকে যাওয়া বা দেয়ালের সাথে ঝুঁকে যাওয়া এড়ানো উচিত।

* সমতল খোলা মাঠে প্রয়োজনে উচ্চতা এড়ানো উচিত। শক্ত কাঠামো ইস্পাত বা লোহার কাঠামোর কাছে দাঁড়ানো যাবে না। বিশেষ করে, যে কোন বড় বিচ্ছিন্ন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকা উচিত। খোলা মাঠে আশ্রয় নিলেও সেখানে শুয়ে থাকা ঠিক হবে না।

পরিশেষে বলব, মহান আল্লাহ কোন কিছুই অকারণে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহদ্রোহী ও ইসলাম বিরোধীদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দুনিয়াবী গযব থেকে রক্ষা করতঃ তাঁর প্রদর্শিত পথে অটল থাকার ও পরিচালিত হওয়ার তাওফীক দান করুন-আমীন!

ডা. মুহাম্মাদ এনামুল হক

ডি,এইচ,এম,এস (ঢাকা); কলেজ বাজার, বিরামপুর, দিনাজপুর।



[1]. আহমাদ হা/১১৬৩৮; হাকেম হা/৮৩৭৩, সনদ ছহীহ।

[2]. মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/৩৬৪১; মিশকাত হা/১৫২২; আল-আদাবুল মুফারাদ হা/৭২৩।






বিষয়সমূহ: বিবিধ
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (৯ম কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
পবিত্র কুরআনের ১৩৭০ বছর আগের কয়েকটি পৃষ্ঠা উদ্ধার
শায়খ আলবানীর তাৎপর্যপূর্ণ কিছু মন্তব্য (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
মুনাফিকী - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (২য় কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
ছালাতের আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আদর্শ পরিবার গঠনে করণীয় (শেষ কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
নেতৃত্বের মোহ - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.