প্রায় ২৫ বছর যাবৎ মহাকাশে নভোচারীদের আবাসস্থল হিসাবে কাজ করছে মনুষ্য নির্মিত বিস্ময়যান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন বা আইএসএস। তখন থেকেই এটি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু তার এখন বিদায় নেবার সময় হয়েছে। তাই আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে এটিকে কক্ষপথ থেকে ছাড়িয়ে পৃথিবীতে নামিয়ে এনে ধ্বংস করে ফেলার পরিকল্পনা করছে ‘নাসা’। এর সাথেই শেষ হবে মানবজাতির মহত্তম প্রকল্পগুলোর অন্যতম মহাকাশ স্টেশনের জীবনকাল।

ফুটবল মাঠের সমান বড় প্রায় সাড়ে ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এই আইএসএস মহাশূন্যে মানুষের তৈরি বৃহত্তম কাঠামো। যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে রাশিয়ার তৈরি জারিয়া মডিউল দিয়ে। বর্তমানে এতে আছে ১৫টি মডিউল। বিশাল ধাতব ফ্রেমের ওপর বসানো রয়েছে অতিকায় সৌরশক্তির প্যানেল। এতে পালা করে নিয়মিত থাকেন সাতজন ক্রু। স্টেশনটিতে প্রথম নভোচারীরা থাকতে আসেন ২০০০ সালে। তার পর থেকে এপর্যন্ত ২০টি দেশের আড়াইশ’রও বেশী নভোচারী এখানে এসে থেকেছেন। এটি ঘন্টায় ১৭,১০০ মাইল বেগে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে। এখান থেকে নভোচারীরা প্রতি ২৪ ঘন্টায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন।

আইএসএসকে পরিত্যক্ত করার চিন্তা আগেও হয়েছে, কিন্তু তারপর আবার বেশ কয়েক দফায় তার জীবনকাল বাড়ানো হয়েছে। তবে এখন অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই একমত যে ২০৩০ সালের পর এটাকে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।

তবে এটা নামিয়ে আনা এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। কারণ ৪০০ টন ওযনের একটা ভারী বস্ত্ত আকাশ থেকে নামিয়ে আনা কোন সহজ ব্যাপার নয়। এটি নামিয়ে আনার জন্য ‘নাসা’ ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি ‘স্পেস টাগ’ মহাকাশযান বানাতে চায়। যা স্পেস স্টেশনটিকে কক্ষপথ থেকে ঠেলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে নিয়ে আসবে। তারপর নিরাপদে সাগরে আছড়ে ফেলবে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে ৫ বছর ধরে।

অবশ্য আইএসএসের এক বিরাট অংশ পৃথিবীর বায়ুমন্ডলেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যতটুকু অবশিষ্ট থাকবে পরিকল্পনা
অনুযায়ী সেগুলো এসে পড়বে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আমেরিকার মাঝখানে অবস্থিত ‘পয়েন্ট নেমো’ নামে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি বিস্তীর্ণ এলাকায়। যা প্রায় ৬,০০০ কি.মি. দীর্ঘ এবং বেশ কয়েক কিলোমিটার প্রশস্ত। এ জায়গাটিকে প্রায়ই মহাকাশযানের ‘কবরখানা’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মানুষের মহাশূন্য অভিযানের এক অসাধারণ কীর্তির নাটকীয় সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে হয়তো এভাবেই।

[আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিবসের আগমন-নির্গমনে জ্ঞানীদের জন্য (আল্লাহর) নিদর্শন সমূহ রয়েছে’ (১৯০)। ‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি এগুলিকে অনর্থক সৃষ্টি করোনি। মহা পবিত্র তুমি। অতএব তুমি আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও! (আলে ইমরান ৩/১৯০-১৯১)। উক্ত আয়াতের গুরুত্ব বিবেচনা করে একবার তাহাজ্জুদের সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল (ছাঃ) এটি পাঠ করেন (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/১১৯৫)। আমরা মহাকাশ বিজ্ঞানীদের প্রতি আহবান জানাবো উক্ত আয়াতদ্বয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করার জন্য এবং ইসলাম কবুল করার জন্য (স.স.)]






আরও
আরও
.