নফল ইবাদতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ছালাত হ’ল ‘ছালাতুয যোহা’। এ ছালাত আদায়ের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সময়ে প্রভূত নেকী হাছিল করা যায়। রাসূল (ছাঃ) এই ছালাতকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের ছালাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছালাতকে ইশরাক্বের ছালাতও বলা হয়। সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে ‘ছালাতুল ইশরাক্ব’ এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে ‘ছালাতুয যোহা’ বা চাশতের ছালাত বলা হয়।[1] আসুন নিম্নের হাদীছগুলির মাধ্যমে ছালাতুয যোহার অপরিসীম গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে অনুধাবন করার চেষ্টা করি।

আবু যর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের শরীরের প্রতিটি অস্থি প্রতিদিন নিজের উপর ছাদাক্বা ওয়াজিব করে। কারো সাক্ষাতে তাকে সালাম দেয়া একটি ছাদাক্বা। সৎ কাজের আদেশ দেওয়া একটি ছাদাক্বা, অন্যায় থেকে নিষেধ করা একটি ছাদাক্বা। রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে ফেলা একটি ছাদাক্বা। নিজ স্ত্রীর সাথে সংগত হওয়াও একটি ছাদাক্বা। তবে চাশতের ২ রাক‘আত ছালাত এসব কিছুর পরিপূরক হয়ে যাবে।[2]

* আবু বুরায়দা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে তিনশ’ ষাটটি জোড়া আছে। প্রত্যেক মানুষের উচিত প্রত্যেকটি জোড়ার জন্য ছাদাক্বা করা। ছাহাবীগণ আবেদন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কার সাধ্য আছে এ কাজ করার? তিনি বললেন, মসজিদে পড়ে থাকা থুথু মুছে ফেলাও একটি ছাদাক্বা। পথ থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্ত্ত সরিয়ে দেয়াও একটি ছাদাক্বা। কিন্তু তিনশ’ ষাট জোড়ার ছাদাক্বাহ দেবার মতো কোন কিছু না পেলে তোমরা যোহার দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নিও। সেটাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবে’।[3]

*  আবুদ্দারদা ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তারা বলেন, ‘আমার বন্ধু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে তিনটি কাজের অছিয়ত করেছেন, মৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। তা হ’ল, (১) প্রতি মাসে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (২) ছালাতুয যোহা আদায় করা (৩) বিতর ছালাত আদায় ব্যতীত না শোয়া।[4]

*  রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায়ের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকিরে মশগূল থাকল, অতঃপর (সূর্যোদয়ের পর) দুই রাক‘আত ছালাত (ছালাতুল ইশরাক) আদায় করল, তার জন্য একটি পূর্ণ হজ্জ ও একটি পূর্ণ ওমরাহর নেকী রয়েছে।[5]

*  রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ছালাতুয যোহা এর প্রতি কেবল সেই যত্নবান হ’তে পারে, যে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। সুতরাং এটাই হ’ল ‘ছালাতুল আওয়াবীন’ বা আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের ছালাত’।[6]

*  একবার রাসূল (ছাঃ) একটি সারিয়া (ছোট যুদ্ধাভিযান) প্রেরণ করলেন। তারা দ্রুত বিজয় লাভ করে অনেক গনীমত নিয়ে ফিরে আসলেন। ফলে লোকজন নিকটবর্তী অভিযান, অধিক গনীমত লাভ ও দ্রুত প্রত্যাবর্তনের কথা বলতে লাগল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়েও সংক্ষিপ্ত অভিযান, অধিক গনীমত অর্জন ও দ্রুত ফিরে আসার কথা বলে দিব? তা হ’ল, যে ব্যক্তি ওযূ করে মসজিদে গিয়ে যোহার নফল ছালাত আদায় করবে, সে এর চেয়েও অতি দ্রুত লাভবান হবে, অধিক গনীমত অর্জন করবে ও দ্রুত প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হবে।[7]

*  আবুদ্দারদা ও আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাক‘আত ছালাত আদায় কর, আমি দিনের শেষ পর্যন্ত (যে কোন প্রয়োজনে) তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব’।[8]

*  ছালাতুয যোহা আদায় করা সুন্নাত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসূল (ছাঃ) ছালাতুয যোহা চার রাক‘আত বা কখনো তার চেয়ে বেশী আদায় করতেন।[9] এই ছালাত বাড়ীতে পড়া ‘মুস্তাহাব’। চাশতের ছালাতের সর্বনিম্ন রাক‘আত সংখ্যা দুই এবং সর্বোচ্চ আট পর্যন্ত পাওয়া যায়।[10] এছাড়া এর উপর যত খুশি আদায় করা যায়।[11] তবে নির্দিষ্টভাবে বার রাক‘আত যোহা আদায়ের ফযীলত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ।[12]

আসুন! আমরা উক্ত ছালাত আদায়ের চেষ্টা করি। ফরয ছালাত আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি বা ঘাটতি আমাদের থেকেই যায়। নফল ছালাতগুলো আমাদের সেসব ঘাটতি পূরণ করবে ইনশাআল্লাহ। ক্বিয়ামতের সেই ভয়াবহতম দিনে যখন সর্বপ্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে সেদিন আল্লাহ তা‘আলা ফরয ছালাতের ঘাটতি পুরণার্থে ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ তো আমার বান্দার কোন নফল (ছালাত) আছে কি-না’। যদি তার নফল ছালাত থাকে তিনি বলবেন, ‘আমার বান্দার ফরযের ঘাটতিকে নফল দ্বারা পূর্ণ কর’।[13] আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে অল্প শ্রম কিন্তু অপরিসীম ছওয়াব সমৃদ্ধ এসব ইবাদতগুলোয় অভ্যস্ত হওয়ার তাওফীক দান করুন-আমীন।


[1]. মুহাম্মাদ আসাদু্ল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)’, পৃ. ২৫৪

[2]. মুসলিম হা/৭২০; আবুদাঊদ হা/১২৮৫, সনদ ছহীহ

[3]. আবুদাঊদ হা/৫২৪২; মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১

[4]. বুখারী হা/১১৭৮, মুসলিম হা/৭২২

[5]. তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত হা/৯৭১, সনদ হাসান

[6]. ত্বাবারাণী, ছহীহ ইবনু খুযায়মা, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৭০৩

[7]. আহমাদ, ছহীহুত তারগীব হা/৬৬৮

[8]. তিরমিযী হা/৪৭৫; মিশকাত হা/১৩১৩

[9]. মুসলিম হা/৭১৯

[10]. মুসলিম হা/৩৩৬

[11]. উছায়মীন, আশ-শরহুল মুমতে‘ ৪/৮৫

[12]. তিরমিযী; মিশকাত হা/১৩১৬, সনদ যঈফ

[13]. আবুদাঊদ হা/৮৬৪।






বিষয়সমূহ: ছালাত
আরও
আরও
.