ভারতের
বৃহত্তম রাজ্য উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে অবস্থিত প্রাচীন ‘জ্ঞানবাপী
মসজিদটি’ শিব মন্দির ভেঙ্গে করা হয়েছে বলে কিছুদিন পূর্বে মিথ্যা গুজব
সৃষ্টি করা হয়। অতঃপর এর উপরে ‘টাইম্স নাউ’ টেলিভিশন চ্যানেল আয়োজিত একটি
টকশোতে অংশ নিয়ে গত ২৬শে মে ২০২২ বৃহস্পতিবার ভারতের শাসক দল বিজেপির
রাষ্ট্রীয় মুখপাত্রী নূপুর শর্মা (জন্ম ১৯৮৫) ও বিজেপির দিল্লী শাখার
মিডিয়া ইনচার্জ নবীন কুমার জিন্দাল (জন্ম ১৯৭০) শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও
তাঁর স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি ও কুরুচিকর
মন্তব্য করে। তাতে মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ওআইসি এই ঘটনার নিন্দা জানায়। সঊদী আরব, কুয়েত, জর্ডান, লিবিয়া, ওমান,
কাতার, বাহরাইন, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া সহ
বহু মুসলিম দেশ ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায় এবং
ভারতকে অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানায়। সেইসাথে তারা ভারতীয় পণ্য
বয়কটের ঘোষণা দেয়। অতঃপর প্রচন্ড চাপ ও ব্যবসায়িক ক্ষতির বিষয় চিন্তা করে
ভারত গত ৫ই জুন নূপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার
করে। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক ৬ই জুন বলেন, আমরা
দৃঢ়ভাবে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতাকে উৎসাহিত করি’। ঘটনার ২০ দিন
পর গত ১৬ই জুন রাতে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ঐ দু’জনকে
বরখাস্ত করায় ভারতকে ধন্যবাদ জানায়। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে হতাহতের ঘটনা
ঘটেছে এবং এখনো উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। সবচাইতে মর্মান্তিক হ’ল, সহিংসতা
দমনের নামে উত্তর প্রদেশে বেছে বেছে মুসলমানদের বাড়ীঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে হিন্দু জাতীয়তাবাদী
সন্ত্রাসীরা উৎসাহিত হয়ে মুসলিম নিধনে ও মুসলিম বিতাড়নে মত্ত হয়ে উঠেছে।
ফলে ভারতের প্রসিদ্ধ হিন্দু লেখিকা অরুন্ধতি রায় বলতে বাধ্য হয়েছেন যে,
আমরা এখন হিন্দু ধর্মাবলম্বী গুন্ডাদের দ্বারা শাসিত বলে মনে হচ্ছে এবং
ভারত একটি হিন্দু ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে (দৈনিক ইনকিলাব ১৯.০৬.২০২২)। যদিও বাংলাদেশ ২০শে জুন’২২ পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এটা দুঃখজনক।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, দুনিয়া যখন এই ঘটনার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত, তখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ষাটোর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ আইনজীবী সাইফুর রেজা (সদস্য নং ৬৫১০) তার ফেসবুক পেজে রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিয়েছেন। এতে বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তার চেম্বারের চেয়ার-টেবিল-ডেস্ক ভাঙচুর করা হয়। অতঃপর ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি’ যরূরী সভা ডেকে উক্ত আইনজীবীর সদস্যপদ স্থগিত করে। একইভাবে ‘খুলনা আযম খান কমার্স কলেজে’র এম.এ ক্লাসের ছাত্র ডুমুরিয়া উপযেলার কিঙ্কর কুন্ডু (২৩) ফেসবুকে কটূক্তিমূলক পোস্ট দিয়েছে। ফলে শত শত গ্রামবাসী ১৬ই জুন বৃহস্পতিবার রাতে এর বিরুদ্ধে মিছিল করে এবং কুন্ডুদের বাড়ীর বিচালী ও জ্বালানী রাখার ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। তার পরিবার আগেই বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামী দল এই নিন্দনীয় ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং অনেকে ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করেছে এবং এখনো করছে।
পৃথিবীর ৩য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ এবং শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের এই স্বাধীন বাংলাদেশে বারবার রাসূল (ছাঃ) ও কুরআনের বিরুদ্ধে কটূক্তির ঘটনা ঘটছে। যেমন (১) দাঊদ হায়দার (জন্ম পাবনা ১৯৫২)। সে ১৯৭৪ সাল থেকে কলকাতায় নির্বাসিত। (২) সালমান রুশদী (জন্ম মুম্বাই, ভারত ১৯৪৭) ১৯৮৮ সালে কুরআনের আয়াত সমূহকে ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ অর্থাৎ ‘শয়তানের উক্তি সমূহ’ বলে আখ্যায়িত করে। যার বিরুদ্ধে সারা মুসলিম বিশ্ব উত্তাল হয়ে ওঠে। ইরান ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারী করে। ফলে সে এখন লন্ডনে কার্যতঃ গৃহবন্দী। (৩) আনিসুল হক (জন্ম নীলফামারী ১৯৬৫) ব্যঙ্গ কার্টুন সমূহ রচনা করে (বর্তমানে ‘প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক)। (৪) লেখিকা তসলিমা নাসরিন (জন্ম ময়মনসিংহ ১৯৬২)। সে ১৯৯৪ সালে কুরআন পরিবর্তনের দাবী করে। ফলে একই সালের ২৯শে জুলাই শুক্রবার ঢাকার মানিক মিয়াঁ এভেনিউয়ে ‘সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ আয়োজিত ২০ লক্ষাধিক মানুষের বিশাল সমাবেশে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করা হয়। তখন তৎকালীন বিএনপি সরকার তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে। সে এখন কলকাতায় কার্যতঃ গৃহবন্দী। (৫) ২০১০ সালের মার্চে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপযেলার জনৈক প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মজুমদার ১০ম শ্রেণীতে পড়ানোর সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কুরআন মানুষের তৈরী একটি সাধারণ বই’। তিনি মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করেন। (৬) ২০১৩ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী নাস্তিক ব্লগার রাজীব হায়দার (নিহত ২০১৩ মীরপুর)। (৭) ২০১৩ সালে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন (জন্ম ঢাকা ১৯৮৪) ব্যঙ্গ কার্টুন সমূহ রচনা করে। সে নিজেকে ‘খোদা’ দাবী করে এবং ‘ঢাকা শহরের মসজিদগুলিকে পাবলিক টয়লেট বানানো উচিৎ’ বলে কূট মন্তব্য করে (দ্র. আত-তাহরীক ১৬/৮ সংখ্যা, মে ২০১৩)।
এতদ্ব্যতীত আরজ আলী মাতুববর (বরিশাল ১৯০০-১৯৮৫), ড. আহমদ শরীফ (পটিয়া, চট্টগ্রাম ১৯২১-১৯৯৯ ঢাবি), ড. হুমায়ুন আজাদ (মুন্সীগঞ্জ, ১৯৪৭-২০০৪ ঢাবি), অভিজিৎ রায় (আসাম, ভারত ১৯৭১, নিহত ২০১৫ ঢাকা), ফয়সাল আরেফিন দীপন (নিহত ২০১৫ শাহবাগ, ঢাকা) প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। তাদের অনুসারীরা আজও প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বদা ইসলামের ও ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে যাচ্ছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হ’ল এইসব ইবলীসের শিখন্ডীদের বিরুদ্ধে কোন সরকারই দৃষ্টান্তমূলক কোন শাস্তির ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে মুসলিম জনগণ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষিপ্ত হয় ও তার প্রেক্ষিতে অনেক সময় তিক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অতঃপর তা নিয়ে দেশে-বিদেশে বহু রাজনীতি হয়। অথচ শুরুতেই যদি প্রশাসন এদের শাস্তি দিত, তাহ’লে এ নোংরা কাজে কেউ সাহসী হ’ত না।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী ঐসব কটূক্তিকারীদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড (তওবা ৯/৬৫-৬৬; মায়েদাহ ৫/৩৩; আবুদাঊদ হা/৪৩৬১; নাসাঈ হা/৪০৭০)। যা আদালতের মাধ্যমে সরকার কার্যকর করবে। না করলে সরকার কবীরা গোনাহগার হবে এবং তাদেরকে আখেরাতে আল্লাহর নিকট কঠিন জওয়াবদিহি করতে হবে। আমরা ইসলাম ও ইসলামের নবী এবং তাঁর পরিবারকে কটূক্তিকারী ভারত ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করি এবং এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাই। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)।