আল-কুরআনের আলোকে ক্বিয়ামত

রফীক আহমাদ*

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

ক্বিয়ামত দিবসের প্রতিকূল পরিবেশে অপরাধীদের বাস্তব অবস্থার বর্ণনা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ أَنَّ لِلَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيْعاً وَمِثْلَهُ مَعَهُ لاَفْتَدَوْا بِهِ مِنْ سُوْءِ الْعَذَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَبَدَا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مَا لَمْ يَكُوْنُوْا يَحْتَسِبُوْنَ، وَبَدَا لَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا كَسَبُوْا وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوْا بِهِ يَسْتَهْزِئُوْن-

‘যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তবে অবশ্যই তারা ক্বিয়ামতের দিন সে সবকিছুই নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য মুক্তিপণ হিসাবে দিয়ে দিবে। অথচ তারা দেখতে পাবে; আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন শাস্তি, যা তারা কল্পনাও করত না। আর দেখবে তাদের দুষ্কর্ম সমূহ এবং যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত। তা তাদেরকে ঘিরে নিবে’ (যুমার ৪৭-৪৮)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কম আযাবপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলবেন, যদি গোটা পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ থাকত তবে কি তুমি সে সমুদয়ের বিনিময়ে এ আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে? সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, আদমের ঔরসে থাকাকালে এর চেয়েও সহজ বিষয়ের হুকুম করেছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। কিন্তু তুমি তা অমান্য করেছ এবং আমার সাথে শরীক করেছ’ (বুখারী)

পবিত্র কুরআনে ক্বিয়ামতের বর্ণনা নানাভাবে নানা পর্যায়ে উল্লিখিত হয়েছে। তবে এসব বর্ণনার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হ’ল ক্বিয়ামতের প্রতি বিদ্যমান অবিশ্বাস হ’তে মানব জাতিকে ফিরিয়ে আনা। কুরআন আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী, রহমত, ছওয়াব, গযব ও আযাবের অদ্বিতীয় স্মারক। এজন্য ক্বিয়ামতের মহা নিনাদ, ভয়ঙ্কর গর্জন, ভীতিকর পরিবেশ ইত্যাদির মাঝে হিসাব-নিকাশ এবং প্রতিদান ও শাস্তির যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। অতঃপর বাস্তবায়ন মুহূর্তের কতিপয় অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, অপরাধীরা তাদের দীর্ঘজীবনের অপকর্মের সময়কে খুবই সল্প সময় হিসাবে ব্যক্ত করে স্বস্তি লাভের চেষ্টা করবে। এক পর্যায়ে গোনাহগাররা পৃথিবীর সব ধন-সম্পদের বিনিময়েও আল্লাহর কঠোর আযাব হ’তে রক্ষা লাভের জন্য প্রলাপ করবে। এসব বিষয় উপরের আয়াতে সংক্ষেপে উপস্থাপিত হয়েছে। এই পাপী কাফেরদের জন্য রয়েছে শিকল, বেড়ি ও জাহান্নাম।

* শিক্ষক (অবঃ), বিরামপুর, দিনাজপুর।

আর মুমিন ও ইবাদতকারীদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত নে‘মত, যা তারা কল্পনা করতে পারবে না। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِناً كَمَنْ كَانَ فَاسِقاً لَّا يَسْتَوُوْنَ، أَمَّا الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلاً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، وَأَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَا أَرَادُوْا أَنْ يَخْرُجُوْا مِنْهَا أُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنتُمْ بِهِ تُكَذِّبُوْنَ-

‘কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়ন প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়ন স্বরূপ বসবাসের জান্নাত। পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা জাহান্নাম’ (সাজদাহ ১৭-২০)

মানব জাতির জন্য আল্লাহপাক বিশ্বজগতের যাবতীয় বস্ত্ত অতি সুন্দর ও নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে মানবের শ্রেষ্ঠত্ব বিকাশের জন্য এক বিশাল ও বিপুলায়তনের অন্তর্জগতও সৃষ্টি করেছেন নিখুঁত ও নিরঙ্কুশভাবে। এই অন্তর্জগতই হ’ল মানুষের সম্মান, খ্যাতি ও যশের একমাত্র লীলাভূমি। আবার কলংক, অধঃপন ও অমর্যাদার অতল তলে তলিয়ে যাওয়ারও পথ। সমগ্র বিশ্বজগতের অসীম অনন্ত ও অবাধ্য পরিবেশের চেয়ে, ব্যক্তিগত অন্তর্জগতের সীমাবদ্ধ ও বাধ্যগত পরিবেশের নিয়ন্ত্রণ তুলনামূলক অনেক সহজ। এজন্য মহাজ্ঞানী আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সার্বক্ষণিকভাবে স্মরণ করার জন্য মানুষকে বার বার আহবান জানিয়েছেন। অতঃপর যারা আল্লাহকে স্মরণ করে তারা, তাঁর সন্তুষ্টি লাভে সমর্থ হয় এবং সৎপথ প্রাপ্ত হয়। অপরদিকে যারা শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর স্মরণ ভুলে যায় বা অগ্রাহ্য করে, আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। ফলে তারা জাহান্নামের আমল করে নিজেদের ধ্বংস করে।

ক্বিয়ামতে আল্লাহ অবিশ্বাসীদেরকে অন্ধ করে উঠাবেন। মহান আল্লাহ বলেন,

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِيْ فَإِنَّ لَهُ مَعِيْشَةً ضَنْكاً وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَى، قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِيْ أَعْمَى وَقَدْ كُنْتُ بَصِيْراً، قَالَ كَذَلِكَ أَتَتْكَ آيَاتُنَا فَنَسِيْتَهَا وَكَذَلِكَ الْيَوْمَ تُنْسَى-

‘যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। অতএব তোমাকে আজ ভুলে যাব’ (ত্বোয়া-হা ১২৪-১২৬)

একইভাবে অন্যত্র বলা হয়েছে যে,

يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيْهِمْ وَأَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيْهِمُ اللهُ دِيْنَهُمُ الْحَقَّ وَيَعْلَمُوْنَ أَنَّ اللهَ هُوَ الْحَقُّ الْمُبِيْنُ-

‘যেদিন প্রকাশ করে দিবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা যা কিছু তারা করত। সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দিবেন এবং তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই সত্য স্পষ্ট ব্যক্তকারী’ (নূর ২৪-২৫)

আলোচ্য বিষয়ে অধিক সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়াসে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় প্রত্যাদেশ করেন,

وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءَ اللهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوْزَعُوْنَ، حَتَّى إِذَا مَا جَاؤُوْهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُوْدُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، وَقَالُوْا لِجُلُوْدِهِمْ لِمَ شَهِدتُّمْ عَلَيْنَا قَالُوْا أَنْطَقَنَا اللهُ الَّذِيْ أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ، وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ أَنْ يَشْهَدَ عَلَيْكُمْ سَمْعُكُمْ وَلاَ أَبْصَارُكُمْ وَلاَ جُلُوْدُكُمْ وَلَكِنْ ظَنَنتُمْ أَنَّ اللهَ لاَ يَعْلَمُ كَثِيْراً مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ-

‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবে এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সবকিছুর বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমাদের কান, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের ত্বক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে না, এ ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে না। তবে তোমাদের ধারণা ছিল যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না’ (হা-মীম-সাজদাহ ১৯-২২)

ক্বিয়ামত হবে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম (আঃ) হ’তে শুরু করে শেষ দিবসের শেষ মানুষ পর্যন্ত পৃথিবীতে আগত সমস্ত মানুষের মিলন কেন্দ্র, পরীক্ষা কেন্দ্র তথা বিচার কেন্দ্র। সেখানে যা ঘটবে তার একটি ছোট্ট নমুনা। যা উপরের আয়াতে সকল মানবের অবগতির জন্য বর্ণিত হয়েছে। মানুষের হাত, পা, কান, চোখ, ত্বক ইত্যাদি তার নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে, এটা অবশ্যই বিস্ময়কর। ঐ দিন সকল মানুষ ক্বিয়ামতের ময়দানে সমবেত হবে, কেউ অনুপস্থিত থাকতে পারবে না এবং সকলকে একাকী অবস্থায় আল্লাহর দরবারে হাযির হ’তে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

إِنْ كُلُّ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آتِيَ الرَّحْمَنِ عَبْداً، لَقَدْ أَحْصَاهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدّاً، وَكُلُّهُمْ آتِيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْداً-

‘নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না। তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন। ক্বিয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে’ (মারিয়াম ৯৩-৯৫)

অতঃপর ঐদিন আল্লাহ তা‘আলা সুদীর্ঘ সময়ের বিপুল সংখ্যক মানুষের খতিয়ান বহিঃপ্রকাশ করে দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। মহিমাময় পরওয়ারদেগার তাঁর অলৌকিক শক্তিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করবেন। মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাদেরকে পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত করা হবে। অতঃপর তাদের কর্মফল অনুযায়ী তাদের কারো ডান হাতে ও কারো বাম হাতে আমলনামা দেওয়া হবে। ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্তরা হবে সৌভাগ্যবান এবং বাম হাতে আমলনামাপ্রাপ্তরা হবে দুর্ভাগ্যবান। এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ প্রত্যাদেশ করেন,

فَأَمَّا مَنْ أُوْتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ، فَسَوْفَ يُحَاسَبُ حِسَاباً يَسِيراً، وَيَنْقَلِبُ إِلَى أَهْلِهِ مَسْرُوْراً، وَأَمَّا مَنْ أُوْتِيَ كِتَابَهُ وَرَاءَ ظَهْرِهِ، فَسَوْفَ يَدْعُوْ ثُبُوْراً، وَيَصْلَى سَعِيْراً-

‘যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে, তার হিসাব-নিকাশ সহজ হয়ে যাবে এবং সে তার পরিবার-পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে। আর যাকে তার আমলনামা পিছনদিক থেকে দেয়া হবে, সে মৃত্যুকে আহবান করবে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (ইনশিক্বাক্ব ৭-১২)

ক্বিয়ামত দিবস অবিশ্বাসী ও কাফেরদের জন্য হবে মারাত্মক, তারা প্রত্যেকেই তার কাজকর্ম স্বচক্ষে দেখতে পাবে; হয় আমলনামা হাতে আসার পরে দেখবে, না হয় কাজকর্ম সব স্বশরীরী হয়ে সামনে এসে যাবে। ফলে ক্বিয়ামতের অলৌকিক দৃশ্য কাফেরদের সামনে হাযার বছরের সমতুল্য মনে হবে। পক্ষান্তরে সৎকর্মপরায়ণদের সামনে এর কোন প্রভাবই পড়বে না। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন,

يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مِنَ السَّمَاءِ إِلَى الْأَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ أَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ، ذَلِكَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ-

‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন। অতঃপর তা তাঁর কাছে পেঁŠছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাযার বছরের সমান। তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু’ (সাজদাহ ৫-৬)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوْحُ إِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ ‘ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা‘আলার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাযার বছর’ (মা‘আরিজ ৪)

ক্বিয়ামতে সীমালংঘনকারীরাই সর্বাধিক আতংক, উৎকণ্ঠা ও হতাশার মধ্যে নিমজ্জিত হবে। কাফের, মুনাফিক ও অবিশ্বাসীরাও আতংকগ্রস্ত থাকবে এবং অপরাধের পরিমাণ অনুযায়ী ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। অতীত জীবনের স্থায়িত্ব কালকে খুবই সামান্য সময় হিসাবে ব্যক্ত করবে। তাদের সেই উক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বান্দার অবগতির জন্য বাণী অবতীর্ণ করেন,

كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوْا إِلاَّ عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا ‘যেদিন তারা (কাফেররা) একে (ক্বিয়ামত) দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে’ (নাযি‘আত ৪৬)

একই বিষয়ে অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

فَاصْبِرْ كَمَا صَبَرَ أُوْلُوا الْعَزْمِ مِنَ الرُّسُلِ وَلاَ تَسْتَعْجِل لَّهُمْ كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَ مَا يُوْعَدُوْنَ لَمْ يَلْبَثُوْا إِلاَّ سَاعَةً مِّن نَّهَارٍ بَلاَغٌ فَهَلْ يُهْلَكُ إِلاَّ الْقَوْمُ الْفَاسِقُوْنَ-

‘ওদেরকে (কাফেরদের) সে বিষয়ে ওয়াদা দেয়া হ’ত, তা সেদিন তারা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা দিনের এক মুহূর্তেরও বেশী পৃথিবীতে অবস্থান করেনি। এটা সুস্পষ্ট অবগতি। এখন তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, যারা পাপাচারী সম্প্রদায়’ (আহক্বাফ ৩৫)

এ বিষয়ে মুমিনদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মহান আল্লাহ বলেন,

إِنِّيْ جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوْا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُوْنَ، قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِيْنَ، قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْماً أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلْ الْعَادِّيْنَ-

‘আজ আমি তাদেরকে তাদের ছবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম। আল্লাহ বলবেন, তোমরা পৃথিবীতে কতদিন অবস্থান করলে বছরের গণনায়? তারা বলবে, আমরা একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি। অতএব আপনি গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করুন’ (মুমিনূন ১১১-১১৩)

ক্বিয়ামত দিবসের সর্বশেষ অবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করে বিশ্বনবী (ছাঃ)-এর একটি হাদীছের উদ্ধৃতি দেয়া হ’ল। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! ক্বিয়ামতের দিন কি আমরা আমাদের রবকে দেখতে পাব? তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে তোমরা সূর্য দেখতে কি কষ্ট পাও? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখতে তোমাদের যতটুকু কষ্ট হয়, তোমাদের রবকে দেখতেও তোমাদের ততটুকু কষ্ট হবে মাত্র। তারপর তিনি বললেন, সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) একজন ঘোষক ঘোষণা করে বলবে যে, যারা যে জিনিসের  ইবাদত করতে, তারা সেই জিনিসের সাথে হয়ে যাও। সুতরাং ক্রুশধারীরা ক্রুশের সাথে চলে যাবে, মূর্তিপূজকরা মূর্তির সাথে হয়ে যাবে। এভাবে প্রতি মা‘বূদের অনুসারীরা তাদের উপাস্যের কাছে যাবে। তারপর যারা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করত, তারাই শুধু অবশিষ্ট থাকবে। তারা গোনাহগার বা নেককার যাই হোক না কেন। সাথে সাথে আহলে কিতাবদের অবশিষ্ট কিছু লোকও থাকবে। এরপর জাহান্নামকে সামনে আনা হবে। তা মরীচিকার মত মনে হবে। তখন ইহুদীদের বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে আমরা আল্লাহর বেটা উযায়েরের ইবাদত করতাম। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা মিথ্যা কথা বলছ। আল্লাহর তো কোন স্ত্রী বা সন্তান ছিল না। (তাদেরকে পুনরায় বলা হবে) তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আপনি আমাদের পানি পান করতে দিন। বলা হবে ঠিক আছে, পানি পান করে নাও। তারপর তারা জাহান্নামের মধ্যে পড়ে যাবে। এরপর নাছারা (খৃষ্টান)-দেরকে বলা হবে, তোমরা কিসের ইবাদত করতে? তারা বলবে, আমরা আল্লাহর বেটা (ঈসা) মসীহের ইবাদত করতাম। তাদের বলা হবে, তোমরা মিথ্যা কথা বললে। আল্লাহর তো স্ত্রী বা সন্তান ছিল না। (তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে) তোমরা এখন কি চাও? তারা বলবে, আমরা চাই আপনি আমাদেরকে পানি পান করতে দিন। তাদেরকে বলা হবে, ঠিক আছে পান করে নাও। তারপর তারা জাহান্নামের মধ্যে পড়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতকারীরা। তাদের মধ্যে নেককারও থাকবে, গোনাহগারও থাকবে। তাদের বলা হবে, সব লোক তো চলে গেছে, কিন্তু তোমাদেরকে কিসে বসিয়ে রেখেছে? তারা বলবে, আমরা তো তখনই তাদেরকে বর্জন করেছিলাম, যখন আজকের চাইতে তাদের বেশী প্রয়োজন ছিল। আমরা এমর্মে একজন ঘোষকের ঘোষণা শুনেছি যে, যে কওম যার জিনিসের ইবাদত করত, সেই কওম তার সাথে হয়ে যাও। আমরা (সেই ঘোষণা অনুসারে) আমাদের রবের জন্য অপেক্ষা করছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এরপর মহাপ্রতাপশালী আল্লাহ তাদের কাছে আসবেন। কিন্তু প্রথমবার ঈমানদারগণ যে আকৃতিতে তাঁকে দেখেছিলেন তিনি সেই আকৃতিতে আসবেন না। তিনি (এসে) বলবেন, আমি তোমাদের রব! সবাই বলবে, হ্যাঁ, আপনিই আমাদের রব। (সে সময়) নবীগণ ছাড়া আর কেউ তাঁর সাথে কথা বলবেন না। তোমরা কি তাঁর কোন চিহ্ন জান? তারা বলবে, সাক বা পায়ের নলার তাজাল্লী। সেই সময় সাক খুলে দেয়া হবে। তখন সব ঈমানদারই সিজদায় পড়ে যাবে। তবে যারা প্রদর্শনীর জন্য আল্লাহকে সিজদা করতো তারা থেকে যাবে। তার সেই সময় সিজদা করতে চাইলে, তাদের মেরুদন্ডের হাড় শক্ত হয়ে একটি তক্তার ন্যায় হয়ে যাবে। (তাই তারা সিজদা করতে পারবে না)।

তারপর পুলছিরাত এনে জাহান্নামের উপরে পাতা হবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! পুল বা পুলছিরাত কি? তিনি বললেন, পিচ্ছিল জায়গা, যার উপর লোহার হূক এবং চওড়া ও বাঁকা কাঁটা থাকবে যা নজদের সা‘দান গাছের কাঁটার মতো। মুমিনগণ এ পুলছিরাতের উপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে এবং কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ ছহীহ-সালামতে বেঁচে যাবে, আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ জাহান্নামের আগুনে ঝলসে যাবে। এমনকি সর্বশেষ ব্যক্তি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে কোন রকমে অতিক্রম করবে। আজ তোমরা হকের দাবীতে আমার তুলনায় ততখানি কঠোর নও, যতখানি কঠোর সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) ঈমানদারগণ প্রতাপশালী আল্লাহর কাছে হবে।

(আর তোমরা যে হকের দাবীতে আমার চাইতে বেশী কঠোর নও তা তো) তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যখন তারা (ঈমানদারগণ) দেখবে যে, তাদের ভাইদের মধ্যে তারাই শুধু নাজাত পেয়েছে, তখন তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের সেই সব ভাইয়েরা কোথায়, যারা আমাদের সাথে ছালাত পড়ত, ছিয়াম পালন করত ও নেক আমল করত? আল্লাহ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান পাবে, তাদের (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত করে আনো। আল্লাহ তাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তাদের কারো দু’পা ও পায়ের নলা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুনে ডুবে থাকবে। তারা (ঈমানদারগণ) যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে (জাহান্নাম থেকে) বের করে আনবে। তারপর ফিরে আসলে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, যাও যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান দেখতে পাবে তাদেরকেও বের করে আন। সুতরাং তারা যাদেরকে চিনতে পারবে তাদেরকে মুক্ত করবে এবং তারপর ফিরে আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বলবেন, যাও যাদের হৃদয়ে একবিন্দু পরিমাণ ঈমান পাবে তাদেরকে বের করে আনো। সুতরাং (এবারও) তারা যাদেরকে চিনবে তাদেরকে মুক্ত করে আনবে। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, তোমরা যদি আমাকে বিশ্বাস না করো তাহ’লে ইচ্ছা করলে কুরআন মজীদের এ আয়াতটি পাঠ করো (তাতে একথার সত্যতার সমর্থন পাবে)। আল্লাহ (কারো প্রতি) একবিন্দু পরিমাণ যুলুমও করেন না। বরং কোন নেকীর কাজ হ’লে তিনি তা দ্বিগুণ করে দেন। এভাবে নবী, ফেরেশতা এবং ঈমানদারগণ শাফা‘আত বা সুপারিশ করবেন।

তারপর পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এখন একমাত্র আমার শাফা‘আতই অবশিষ্ট আছে। তিনি এক মুষ্টি ভরে জাহান্নাম থেকে একদল লোককে বের করবেন, যাদের গায়ের চামড়া পুড়ে কাল হয়ে গেছে। তারপর তাদেরকে জান্নাতের সম্মুখ ভাগে অবস্থিত ‘হায়াত’ নামক একটি নহরে নামানো হবে। তারা এর দু’তীরে এমনভাবে তরতাজা হয়ে উঠবে, যেমন তোমরা পাথর বা গাছের পাশ দিয়ে প্রবাহিত স্রোতের কিনারে বীজকে দ্রুত অঙ্কুরোদ্গম করতে দেখ। এর মধ্যে যেটা রোদে থাকে সেটা সবুজ হয়, আর যেটা ছায়ায় থাকে সেটা সাদা হয়। তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে। তখন তাদেরকে মোতির দানার মত মনে হবে। তাদের গলায় সীলমোহর লাগান হবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতবাসীরা বলবে, এরা পরম দয়ালু আল্লাহর মুক্ত করা লোক। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত দিয়েছেন, অথচ (এজন্য) তারা কোন আমল বা কল্যাণের কাজ করেনি। (জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে) তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা দেখছো তা তোমাদেরকে দেয়া হ’ল এবং অনুরূপ পরিমাণ আরও দেয়া হ’ল’ (বুখারী)

ক্বিয়ামত সম্পর্কিত আলোচনার শেষ প্রান্তে বর্ণিত হাদীছটি মোটামুটি ভাবে মানবমন্ডলীর সর্বব্যাপক কর্মকান্ডের বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়েছে। মহানবী (ছাঃ) ক্বিয়ামত সম্পর্কিত বিপুলসংখ্যক আয়াতগুলো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেই উপরের সংক্ষিপ্ত হাদীছটির অবতারণা করেন। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ধর্মীয় তত্ত্বের মেরুদন্ডে আঘাত হেনে অসংখ্য মা‘বূদের ইবাদতে আত্মোৎসর্গকারীদের পরিণতির পৃথক পৃথক ইতিহাস হাদীছটিতে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তাছাড়া এক মা‘বূদের ইবাদতকারীদের মধ্যে খাঁটি মুমিন এবং তুলনামূলকভাবে কিছু ত্রুটিযুক্ত মুমিন এবং আরও সামান্য ঈমান ওয়ালা মুমিনের সর্বশেষ অবস্থার বাস্তব চিত্রও হাদীছটিতে বর্ণিত হয়েছে। মোটকথা এখানে পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সঙ্গে উক্ত হাদীছটি পুরোপুরিভাবে সঙ্গতিপূর্ণ এবং উভয়ের মূল্যায়ন এক ও অভিন্ন।

ক্বিয়ামতের উপরোক্ত বিবরণ পড়ে আমাদের উচিত এখনই সাবধান হওয়া। সেই দিনের জন্য যথাসাধ্য প্রস্ত্ততি নেওয়া। যাতে ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে আমরা নাজাত লাভ করতে পারি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

 






তবে কি বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মূল্যবোধের অবক্ষয় ও আসন্ন রামাযান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বড় দিন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যেকোন নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস হৌক যাকাত ও ছাদাক্বা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমরাও আল্লাহকে বলে দেব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কৃতি দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আত-তাহরীক : যাত্রা হ’ল শুরু (১ম সংখ্যা) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দুর্নীতি ও কোটা সংস্কার আন্দোলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কবিতা
আন্তঃধর্ম শান্তি সম্মেলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বাংলাদেশের সংবিধান হৌক ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.