বর্তমান বিশ্ব চরম আবহাওয়া বিপর্যয়ের সম্মুখীন। পরাশক্তিগুলির অধিক শিল্পায়নের কার্বন নিঃসরণের ফলে আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল সহ বাংলাদেশ এখন ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, খরা-দাবানল, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস, পাহাড় ধস, সমুদ্র সৈকতে খাদ সৃষ্টি, নদীভাঙন, কৃষিজমিতে লবণাক্ততার আগ্রাসন প্রভৃতি অসংখ্য দুর্যোগের মুখোমুখি এখন আমাদের এই সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ। সেই সাথে সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন মৃদু ভূমিকম্প ভবিষ্যৎ বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশ চিরায়ত ষড়ঋতুর একটি চমৎকার আবহাওয়ার দেশ। অথচ তার এই আদি চরিত্র পাল্টে যাচ্ছে। এখন বর্ষায় বৃষ্টি ঝরে কম। ‘শ্রাবণীধারা’ শব্দটি বইয়ে আছে, বাস্তবে নেই। অথচ প্রাক-বর্ষা ও বর্ষা-উত্তর অকাল বর্ষণে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বর্ষাকাল। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য থাকায় গ্রীষ্মের খরতাপ অসহনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এর বিপরীতে শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাচ্ছে। শরৎ, হেমন্ত ও বসন্তকাল পঞ্জিকায় থাকলেও তা আলাদা করে চেনা যায় না বা জনজীবনে তেমন কোন অনুভূতি সৃষ্টি করেনা। এর ফলে হ্রাস পাচ্ছে মানুষের সৃজনশীলতা ও কমে যাচ্ছে ভূমির উৎপাদনশীলতা। মানুষের স্বাস্থ্যের উপরে পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ম্যাজমেজে ভাব ও অলসতা জেঁকে বসছে সর্বত্র। উদ্যমী, বিচক্ষণ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

প্রতিবছর নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিন্তু স্থায়ীভাবে টেকসই কোন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ২০০৯ সালে ‘আয়লা’ দুর্গত খুলনার কয়রা ও সাতক্ষীরার আশাশুনি অঞ্চল আজও স্থায়ী বাঁধের মুখ দেখেনি। এবার ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’-এর প্রভাবে এইসব এলাকা পুনরায় বিধ্বস্ত হয়েছে। সেখানে বঙ্গোপসাগরের লবণাক্ত পানি উঠে এসে ভূমির উর্বরাশক্তি নষ্ট করছে। সাথে সাথে সুপেয় পানির অভাবে জীবন-মৃত্যুর মধ্যে বসবাস করছে অসহায় মানুষ। 
১৯৬১-৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গবর্ণর জেনারেল মুহাম্মদ আযম খান (১৯৬০-১৯৬২) কক্সবাজার যেলার কুতুবদিয়া দ্বীপে ৬০ কি.মি. দীর্ঘ মযবুত বেড়িবাঁধ এবং ২৫ কি.মি. দীর্ঘ উঁচু সড়ক নির্মাণ করেন ও উদ্বোধন করেন। যা কুতুবদিয়ার প্রধান অবকাঠামো। আজও মানুষের মুখে তাঁর অবদানের কথা শোনা যায়। দ্বীপে ‘আযম খান কলোনী’ তাঁর স্মৃতি বহন করছে। ইতিমধ্যে উক্ত বেড়িবাঁধের অনেকটা ভেঙ্গে গেছে এবং বহু মানুষ বাস্ত্তচ্যুত হয়েছে। বলা হচ্ছে, ১০ বছর পরের কুতুবদিয়া হবে শিল্পায়ন ও জ্বালানী সম্পদের কুতুবদিয়া। অথচ ২১৫ বর্গ কিলোমিটারের এই ছোট্ট দ্বীপে ২০১১ সালের হিসাবে ১ লক্ষ ৩৩ হাযার ৮৮৮ জন বসবাস করেন। যার জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬২০ জন। অথচ প্রতিবেশী ভারতের ২১,০৮৭ বর্গ কি.মি. আয়তনের মিজোরাম প্রদেশে প্রতি বর্গ কি.মিটারে জনঘনত্ব মাত্র ৫২ জন। শিল্পায়ন ও বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হ’লে দ্বীপের এই বিপুল সংখ্যক বসবাসকারী যাবে কোথায়? কিভাবে তাদের কর্মসংস্থান হবে? সবাই কি শিল্পকারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী হবে? যুগ যুগ ধরে পৈত্রিক পেশায় অভ্যস্ত লবণচাষী, মৎস্যজীবী ও কৃষিজীবীদের অবস্থা কি হবে? সর্বোপরি অধিক শিল্পায়নে কার্বন নিঃসরণের ফলে বায়ুমন্ডল দূষিত হবে। যা জাতীয় দুর্যোগ ডেকে আনবে। তাই বিষয়টি সরকারের এখনই ভেবে দেখা উচিৎ। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস প্রবণ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা এবং সর্ব দক্ষিণ-পূর্বের কুতুবদিয়ার বর্তমান অবস্থা এই। বাকীগুলির অবস্থা সহজে অনুমেয়। বরং দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের ন্যায় দ্বীপের চতুষ্পার্শ্বের উন্মুক্ত সাগরে সৌর প্যানেল বসানোর প্রকল্প গ্রহণ করা উচিৎ। যাতে সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতে কুতুবদিয়াকে আলোকিত করা যায় এবং বায়ুদূষণ শূন্যে নেমে আসে। একইভাবে অন্যান্য সমুদ্র বন্দরকেও আলোকিত করা যায়।

গত ৪ঠা আগস্ট বুধবার দুপুরে  চাঁপাই নবাবগঞ্জে পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে বজ্রপাতে ১৭ জনের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১২ জন। সম্ভবতঃ এটাই দেশে বজ্রপাতে এযাবৎকালের সর্বাধিক একত্রিত মৃত্যুর ঘটনা। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য বর্তমান বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। স্যাটেলাইট ও উন্নত প্রযুক্তির থান্ডারস্টর্ম ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিয়ে প্রাণহানি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমান সরকারের আমলে প্রথমে ১০ লাখ ও পরে ১ কোটি তালগাছ লাগানো হয়েছে। অথচ রাস্তার ধারে তার নমুনা পাওয়া যায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বজ্রপাতপ্রবণ দেশগুলিতে বজ্রপাত সতর্কীকরণ অ্যাপ চালু হয়েছে। বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার আধাঘন্টা বা একঘন্টা আগেই অ্যাপের মাধ্যমে সতর্ক সংকেত পাচ্ছে মানুষ। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৩টি নদী বন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাতের সংকেত ও সংখ্যা নিরূপণের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এই ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালু হ’লে ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন যেলায় বজ্রপাত হ’তে পারে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে আবহাওয়া দফতর। এমনকি ১০ মিনিট থেকে আধা ঘণ্টা আগে বজ্রপাতের সংকেত দেওয়া যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে এই সেন্সর বসানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালী সহ মোট ৮টি স্থানে। একেকটি সেন্সরের সীমা ২৫০ কি.মি.। প্রতিটি সেন্সর থেকে ১০০০ কি.মি. পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে। আবহাওয়া দফতরের দাবী অনুযায়ী, তাতে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। তাছাড়া বিমান বাহিনীর রাডার ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এসব সেন্সর যন্ত্রের যথাযথ মনিটরিং এবং সতর্কবার্তা সাধারণ মানুষের কাছে সময়মত পৌঁছে দেওয়ার কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

দেশের সর্বাধিক বজ্রপাত প্রবণ এলাকা হ’ল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুনামগঞ্জ যেলার হাওর এলাকা সহ বৃহত্তর সিলেট, ময়মনসিংহ ও মধ্যাঞ্চলের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল। তবে অন্যান্য এলাকাও মুক্ত নয়। অতএব সর্বত্র বজ্রপাত সতর্কতা ও পূর্বাভাস ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি বজ্রপাত নিরোধ ব্যবস্থা ও আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা আবশ্যক। এজন্য দেশের মোবাইল ফোন টাওয়ারগুলিতে আর্থিং পদ্ধতি যুক্ত করা যায়। সেই সাথে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলিতে ‘লাইটেনিং অ্যারেস্টার’ বসানো এবং কংক্রিটের তৈরী বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা যরূরী। সর্বোপরি নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে দেশে ঈমানী পরিবেশ গড়ে তোলা কর্তব্য। নইলে আল্লাহর রহমত নাযিল হবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: সাময়িক প্রসঙ্গ
আহলেহাদীছের বৈশিষ্ট্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তির ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উন্মত্ত হিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কৃতি দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দর্শনীয় স্থানগুলি শিক্ষণীয় স্থান রূপে গড়ে তুলুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল্লাহদ্রোহীদের আস্ফালন ও মুসলমানদের সরকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
তাওহীদ দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে কটূক্তি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পশুত্বের পতন হৌক! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শাসন ও অনুশাসন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
যুলুমের পরিণাম ভয়াবহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মাননীয় সিইসি সমীপে
আরও
আরও
.