গত
১৫ই আগস্ট আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল এবং দেশটিকে ‘ইসলামিক আমিরাত’
ঘোষণা করার পর এবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালেবান। গত ৭ই
সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ঘোষিত এই নতুন সরকারে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান করা
হয়েছে তালেবানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মাদ হাসান আখুন্দকে।
তার উপ-প্রধান হিসাবে কাজ করবেন তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনী
বারাদার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে কাজ করবেন তালেবানের সামরিক কমিশনের
প্রধান মোল্লা ইয়াকূব। যিনি মোল্লা ওমরের পুত্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে
দায়িত্ব পালন করবেন হাক্কানী নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ও সোভিয়েত বিরোধী
লড়াইয়ের মুজাহিদ নেতা জালালুদ্দীন হাক্কানীর পুত্র নেটওয়ার্কটির বর্তমান
প্রধান সিরাজুদ্দীন হাক্কানী। এছাড়া ‘আমর বিল মা‘রূফ ওয়া নাহী আনিল মুনকার
(ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায় থেকে নিষেধ)’ বিষয়ক একজন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে
তালেবান। যাঁর নাম মোল্লা মুহাম্মাদ খালিদ। রাজধানী কাবুলে এক সংবাদ
সম্মেলনে তালেবান মুখপাত্র যবীহুল্লাহ মুজাহিদ নতুন সরকারের মন্ত্রীদের নাম
ঘোষণা করেছেন।
তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দযাদা এরই মধ্যে নতুন সরকারকে ইসলামিক নিয়মনীতি এবং শরী‘আ আইন সমুন্নত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। সাথে সাথে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে যারা আছেন, তাদেরকে দেশের স্বার্থ সর্বতোভাবে সুরক্ষিত রাখা এবং দেশে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন। এছাড়া আরেক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখন থেকে আফগানিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সব বিষয় ও সিদ্ধান্ত ইসলামী শরী‘আ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে। উল্লেখ্য, তালেবান বাহিনীতে আখুন্দযাদা ‘আমীরুল মুমিনীন’ হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক, সামরিক, ধর্মীয় যে কোনও বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তার অধীনেই নতুন সরকার পরিচালিত হবে।
হায়বাতুল্লাহ আখুন্দযাদা সামরিক কমান্ডারের তুলনায় একজন ধর্মীয় নেতা হিসাবেই বেশি পরিচিত। আশির দশকে তিনি সোভিয়েত দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন এবং নববইয়ের দশকে শরী‘আহ আদালতের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কান্দাহারের বাসিন্দা মোল্লা হাসান সাবেক তালেবান সরকারেও (১৯৯৬-২০০১) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও সামরিক নেতা হিসাবে নয় বরং ধর্মীয় নেতা হিসাবে বেশি পরিচিত এবং তিনি তালেবানের আধ্যাত্মিক নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দযাদার অতি ঘনিষ্ঠজন বলে জানা যায়।
মোল্লা আব্দুল গনী বারাদার কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের চেয়ারম্যান। সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই বারাদারের লড়াইয়ের হাতেখড়ি। ২০১০ সাল থেকে তিনি পাকিস্তানে কারান্তরীণ ছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে আলোচনা গতিশীল করতে ওয়াশিংটনের চাওয়ায় তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২০২০ সালে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের দোহা চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তিনি।
প্রতিরক্ষান্ত্রী মোল্লা ইয়াকূব তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে। মোল্লা হায়বাতুল্লাহর ছাত্রও ছিলেন তিনি। তিনি তালেবানের সামরিক কমিশনের প্রধান হিসাবে ইয়াকূবকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যুদ্ধের কৌশল ঠিক করা ও অভিযান পরিচালনা করা তার কাজের অন্যতম অংশ। বাহিনীতে তিনি শ্রদ্ধার পাত্র অনেকটা তাঁর প্রয়াত পিতার কারণে। যে কারণে দলে বিভেদ কিংবা কোন্দলের সময় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ান তিনি।
তালেবানের নতুন সরকার ঘোষণায় মন্ত্রীসভায় এখনো পর্যন্ত কোন নারীমুখ দেখা যায়নি। যদিও তালেবান নেতারা বলেছেন, আফগান সমাজে নারীদের বিশেষ ভূমিকা থাকবে। তারা শিক্ষাও নিতে পারবে। তবে তাদের ঘরে থাকা উচিৎ। তবে দলটির আরেক মূখপাত্র সাঈদ জাফরুল্লাহ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নারীরা মন্ত্রী হ’তে পারবে না। আফগান নারী তারাই, যারা সন্তান জন্ম দিবে এবং তাদেরকে শারঈ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে।