উত্তর : মানব চক্ষু দ্বারা দুনিয়ায় আল্লাহকে দর্শন করা অসম্ভব। তবে মুমিনগণ পরকালে জান্নাতে আল্লাহ দেখতে পাবেন। দুনিয়াতেই আল্লাহ্কে দর্শন করা বিদ‘আতী ও বাতিলপন্থীদের ভ্রান্ত দাবী। যার পক্ষে কোন দলীল নেই। এটি আল্লাহর শানের খেলাফ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ২/৩৮১-৮২)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মৃত্যুর পূর্বে কখনো তোমাদের রবকে দেখতে পাবে না (হাকেম হা/৮৬২০; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩১২)। এক্ষণে উবাই বিন কা‘বের আল্লাহকে দেখা সংক্রান্ত হাদীছটির অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। হাদীছাংশটুকুর অর্থ হ’ল-উবাই বিন কা‘ব বলেন, দু’জন ছাহাবী দুই ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করলে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট অভিযোগ করা হ’ল। তিনি উভয়ের ক্বিরাআতকে সঠিক বললেন। এ কথা শুনে আমার মনে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি এমন এক সন্দেহের জন্ম দিল, যা জাহেলিয়াতের সময়েও আমার মধ্যে ছিল না। সন্দেহের ছায়া আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে লক্ষ্য করে তিনি আমার সিনার উপর হাত রাখলেন। এতে আমি ঘামে ভিজে গেলাম। আর আমি এতই ভীত হ’লাম, যেন আমি আল্লাহকে দেখছি (মুসলিম হা/৮২০; মিশকাত হা/২২১৩)। এর ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, ভয়ে আমার এমন অবস্থা হয়েছিল যেন আমি আমার কৃত অপরাধের বিচারের জন্য আল্লাহর সামনে উপস্থিত হয়েছি (মিরক্বাত ৪/১৫১১)। ত্বীবী বলেন, উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) ছিলেন উঁচু দরের ছাহাবী ও দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত। আসলে তাদের দু’জনের ভিন্ন ক্বিরাআতকে শুদ্ধ বলায় উবাই-এর অন্তরে শয়তানের খটকা সৃষ্টি হয়েছিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর হাত মারার বরকতে তার ভয়-ভীতি ঘামের সাথে বের হয়ে গেল। তিনি দৃঢ় বিশ্বাসী হ’লেন। এ সময় তিনি যেন শয়তানী কুমন্ত্রণার কারণে লজ্জিত হয়ে ভয়ে আল্লাহর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন (মিরক্বাত ৪/১৫১১)। হাদীছে উল্লিখিত كَأَنَّ শব্দটি দু’টি অর্থ প্রদান করে। প্রথমতঃ এটি সন্দেহ ও ধারণার ফায়েদা দেয়। কারণ উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) থেকে সন্দেহ দূর হয় এবং তাঁর ঈমান মযবূত হয়। তাতে তিনি বলে ফেলেন যে, আমি যেন আল্লাহকে দেখছি। দ্বিতীয়তঃ এটি নৈকট্যের ফায়েদা দেয়। অর্থাৎ তাঁর সন্দেহ এমনভাবে দূর হয়েছিল যে, তিনি যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছেন। সুতরাং অত্র হাদীছ থেকে ভ্রান্ত ছূফীদের দুনিয়াতে আল্লাহকে দেখার পক্ষে কোন দলীল নেই। বরং তারা শয়তানকে দেখে। আর তাকেই আল্লাহ মনে করে বিভ্রান্ত হয়।
প্রশ্নকারী : খাদেমুল ইসলাম, উড়িরচর, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম।