তাবলীগী ইজতেমা ২০১০ সফলভাবে সমাপ্ত
রাজশাহী ১ ও ২ এপ্রিল বৃহস্পতি ও শুক্রবার: ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর দু’দিন ব্যাপী ২০তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে নওদাপাড়াস্থ ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে গত ১ ও ২ এপ্রিল রোজ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। নানা -প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে প্রথম নির্ধারিত তারিখ ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী মোতাবেক ১৩ ও ১৪ ফাল্গুনের পরিবর্তে ১ ও ২ এপ্রিল মোতাবেক ১৮ ও ১৯ চৈত্র অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ইজতেমা সম্পন্ন হয়। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। দেশব্যাপী চৈত্রের প্রচন্ড খরতাপ এবং রাজশাহীর তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাযার হাযার কর্মী ও সুধীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ইজতেমাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। ইজতেমায় সভাপতিত্ব করেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
বরাবরের ন্যায় এবারও দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে হাযার হাযার কর্মী ও সুধী ট্রেনের রিজার্ভ বগি, রিজার্ভ বাস ও অন্যান্য যানবাহনে করে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। এতদ্ব্যতীত রাজশাহী ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা সমূহ থেকে ভটভটি (শ্যালো চালিত ভ্যান), মটর সাইকেল ও বাইসাইকেল যোগেও বিপুল সংখ্যক শ্রোতা ইজতেমায় যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, স্থানাভাবে এবারের মহিলা প্যান্ডেল ট্রাক টার্মিনাল থেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দূরে নওদাপাড়া মহিলা মাদরাসার সুউচ্চ পাকা দেওয়াল ঘেরা সুপ্রশস্ত প্রাঙ্গনে করা হয়। যা মাইক ও প্রজেক্টর দ্বারা মূল প্যান্ডেলের সাথে সংযুক্ত করা হয়।
১ম দিন বাদ আছর (৪-৩০ মিঃ) মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের মধ্য দিয়ে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী কমপ্লেক্স, নওদাপাড়া, রাজশাহীর হেফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান এবং তেলাওয়াতকৃত আয়াতগুলোর অনুবাদ পেশ করেন হাফেয মুকাররম বিন মুহসিন। অতঃপর স্বাগত ভাষণ পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং তাবলীগী ইজতেমা ২০১০-এর আহবায়ক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ।
উদ্বোধনী ভাষণ:
উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, ১৪৯২ খৃষ্টাব্দে আজকের এ দিনে স্পেনে মুসলমানদের প্রায় ৮শ’ বছরের হুকুমত প্রতারণার মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হয়। খৃষ্টান সাম্রাজ্যবাদ মুসলমানদের উত্থানকে বরদাশত করতে পারেনি। শক্তি দিয়ে যখন তারা ব্যর্থ হয়েছিল, প্রতারণা দিয়ে তখন তারা সফল হয়েছিল। তারা ধোঁকাবাজি করে সহজ-সরল মুসলিম নর-নারীকে মসজিদে ঢুকিয়ে বাহিরে তালা মেরে মসজিদে আগুন ধরিয়ে দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ মুসলিমকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল আজকের এই দিনে। তখন রাণী ইসাবেলা এবং তার স্বামী ফার্ডিনান্ড তাচ্ছিল্য ভরে হাসতে হাসতে বলেছিল How fool the Muslims are! ‘মুসলমানরা কতই না বোকা! যে, তারা আমাদের কথায় বিশ্বাস করল’। সেই Fool আজকে হয়ে গেছে April fool's day অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা দিবস’। ইতিহাস সম্পর্কে বেখবর বাংলাদেশের তরুণ ছেলেরা এদিনে পরস্পরকে ধোঁকা দেয়। তারা জানে না যে, এর মাধ্যমে খৃষ্টান জাতি কিভাবে মুসলিম জাতির সাথে প্রতারণা করেছিল। সেই প্রতারণার জন্য আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়া উচিত ছিল। অথচ আমাদের ছেলেরা নিজেদের মধ্যে ধোঁকা বিনিময় করে আনন্দ উপভোগ করে। কতই না মূর্খ আমরা! ১৪৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এই দীর্ঘ প্রায় ছয়শত বছরেও আমাদের হুঁশ ফেরেনি।
মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আজ পৃথিবীর দিকে দিকে মুসলিম নির্যাতন চলছে। অথচ মিডিয়াগুলো মুসলমানদের বিরুদ্ধেই মিথ্যাচার করছে। জঙ্গী জঙ্গী বলে সর্বত্র ধুঁয়া তুলছে। ইহুদী-খৃষ্টানরা মুসলিম ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তীনের উপর অবিরতভাবে হামলা করে লক্ষ লক্ষ মা-বোন এবং নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করছে। অথচ তাতে তারা জঙ্গী হয় না; কিন্তু মযলূম মানুষ একটা ঢিল ছুঁড়ে মারলেও তারা জঙ্গী হয়ে যায়। তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বত্র দ্বীনদার মূসলমানদের জঙ্গী অপবাদ দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত চলছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানরা জঙ্গী নয়। ভারতে প্রায় প্রতিদিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত সে দেশের পত্রিকার হিসাব মতে সেখানে ১৩,৯০৫টি মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত বিগত ৬২ বছরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু বিরোধী ৬২টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেছে বলে প্রমাণ নেই। কিন্তু জানা উচিত যে, Violence begets violence ‘হিংসা হিংসা ডেকে আনে’।
তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলনের সাথে সন্ত্রাসের কোন সম্পর্ক নেই। অথচ বিগত চারদলীয় জোট সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আমাদের উপর যে যুলুম করেছে এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো আমাদের ব্যাপারে যে পরিকল্পিত মিথ্যাচার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ফরিয়াদ কেবল আল্লাহর কাছে। আমরা সর্বদা ভরসা করি কেবল আল্লাহর উপরে। তিনি বলেন, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর এ তাবলীগী ইজতেমা জনগণের কাছে একটাই দাওয়াত নিয়ে এসেছে যে, হে মানুষ! দুনিয়ার সকল মত ও পথ ছেড়ে ফিরে এসো আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে। তবেই দুনিয়াতে শান্তি ফিরে আসবে। নাযিল হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত রহমত ও বরকত।
মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আমরা মানুষকে মানুষের পূজা করতে বলি না। আমরা মানুষকে আল্লাহর ইবাদত করতে বলি। সারা পৃথিবী জুড়ে দ্বন্দ্ব চলছে একটাই, আল্লাহ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, না মানুষ সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক? এ দ্বন্দ্বের যেদিন ফায়ছালা হবে এবং যেদিন বিশ্বের সর্বত্র তাওহীদে ইবাদত প্রতিষ্ঠা লাভ করবে, সেদিন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ পৃথিবীব্যাপী তার বিজয়ের চেহারা দেখবে ইনশাআল্লাহ। আমরা ততদিন পর্যন্ত ক্ষান্ত হব না যতদিন না দেখব যে, বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতা বিরাজ করছে। আমরা ততদিন পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না, ক্লান্ত হব না, যতদিন না দেখব যে, আমাদের শেষ নবীর রেখে যাওয়া পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সম্মানের সাথে প্রতি ঘরে ঘরে বরিত ও পালিত হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সেটা না হবে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রতিটি কর্মী যেখানেই থাকুক না কেন সর্বত্র একই দাওয়াত দিয়ে যাবে, আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি।
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর যদি প্রকৃত বিশ্বাসী হই, তাহ’লে আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের আনুগত্য এবং আমীর ও শাসকের আনুগত্য করতে হবে। এই তিনটি আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে। আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের আনুগত্য এবং আমীর ও দেশের শাসন কর্তৃপক্ষের আনুগত্য আমরা করি। রাসূলের নির্দেশের কারণেই আমরা শাসককে উপদেশ দেই, শাসকের ভুল ধরিয়ে দেই, শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করি। কিন্তু শাসককে উৎখাত করার জন্য কোন চরমপন্থাকে কখনই সমর্থন করি না।
সবশেষে তিনি ইজতেমা ময়দানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রাখা ও ইজতেমার পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং আজকের ন্যায় শেষ বিচারের দিন যেন আল্লাহর অনুগ্রহের ছায়াতলে সকলে সমবেত হ’তে পারি সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আল্লাহর নামে দু’দিন ব্যাপী ২০তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পর দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমায় পূর্বনির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপর দলীলভিত্তিক জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সমূহ পেশ করেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা ও যশোর এম,এম, সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত ভাইস প্রিন্সিপ্যাল প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম (মেহেরপুর), অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়ার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও দারুল ইফতা-র সদস্য মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা মুহাম্মাদ ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (গোপালগঞ্জ), সাবেক সভাপতি ড. এ. এস. এম. আযীযুল্লাহ (সাতক্ষীরা), সাধারণ সম্পাদক মুযাফফর বিন মুহসিন (রাজশাহী), ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক শিহাবুদ্দীন আহমাদ (বগুড়া), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়ার শিক্ষক মাওলানা রুস্তম আলী (রাজশাহী), মাওলানা রফীকুল ইসলাম (রাজশাহী), ডঃ মুহাম্মাদ আলী (নাটোর), মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী) প্রমুখ।
দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমায় বিভিন্ন পর্যায়ে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন (কুমিল্লা), ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক জনাব তাসলীম সরকার ও সাতক্ষীরা যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক সভাপতি মাওলানা আলতাফ হোসাইন। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর প্রধান মুহাম্মাদ শফীকুল ইসলাম (জয়পুরহাট) ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
হাফেযদের সনদ প্রদান :
১ম দিন বাদ এশা আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী হেফয বিভাগ থেকে এবছর ফারেগ হওয়া ৬ জন ছাত্রের হাতে হেফযের সনদ তুলে দেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন হেফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান ও মারকাযের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ। মঞ্চে উপস্থিত দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম ও সুধীবৃন্দ এবং ইজতেমায় উপস্থিত হাযারো মুছল্লী সনদপ্রাপ্ত তরুণ হাফেযদের ভবিষ্যৎ উন্নতির জন্য প্রাণ খোলা দো‘আ করেন। সনদপ্রাপ্ত হাফেযদের নাম:
১. আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (সাতক্ষীরা, আমীরে জামা‘আতের কনিষ্ঠ পুত্র) ২. আসাদুল্লাহ আল-গালিব (নন্দলালপুর, কুমারখালী, কুষ্টিয়া) ৩. ওমর ফারূক (নেয়ামতপুর, নওগাঁ) ৪.আব্দুর রহমান (সরিষাবাড়ী, জামালপুর) ৫. সাইফুল ইসলাম (বিরল, দিনাজপুর) ৬. শাহীন রেযা (চারঘাট, রাজশাহী)।
আমীরে জামা‘আত হাফেযদের উদ্দেশ্যে দো‘আ করে বলেন, আল্লাহ তোমাদেরকে কুরআনের খাদেম হিসাবে কবুল করুন!
ওলামা সমাবেশ:
ইজতেমার ২য় দিন সকাল ৯-টায় আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী কমপ্লেক্স, নওদাপাড়ার পূর্ব পার্শ্বস্থ ভবনের ২য় তলায় এক ওলামা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম। প্রধান অতিথির ভাষণে সমবেত আলেমদের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আলেমগণ জাতির দিক নির্দেশক। তাঁরা যদি ইখলাছের সাথে জাতিকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের পথে আহবান জানান, তবে সমাজে দ্রুত সংস্কার সাধন সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, আলেমদের মধ্যে তাক্বওয়া অবশ্যই থাকতে হবে। সেই সাথে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের অনুভূতি সদা জাগরুক থাকতে হবে। তারা যেন সমাজে বিভক্তির কারণ না হন, সে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। তিনি সমবেত ওলামায়ে কেরামকে আহলেহাদীছ আন্দোলনের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দ্বীনে হক্ব-এর এই দাওয়াতী মিশন নিরন্তরভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। শতাধিক আলেমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ।
যুব সমাবেশ :
তাবলীগী ইজতেমার ২য় দিন সকাল সাড়ে ১০-টায় ‘দারুল হাদীছ বিশ্ববিদ্যালয়’ জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর উদ্যোগে এক ‘যুব সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ ও ‘ইসলামী যুবসংঘ’-এর মধ্যে পার্থক্য হ’ল এই যে, ইসলামী যুবসংঘে যে কোন মুসলিম যুবক প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মী হ’তে হ’লে তাকে অবশ্যই কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মানতে হবে এবং শিরক ও বিদ‘আত ছাড়তে হবে। তিনি ‘যুবসংঘ’-এর কর্মীদের উত্তম চরিত্রে ভূষিত হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কর্মীদের তিনটি গুণ অর্জন করতে হবে। ১. তাদেরকে সৎ ও সাহসী হ’তে হবে, ২. আনুগত্যশীল হ’তে হবে এবং ৩. কর্মচঞ্চল হ’তে হবে।
যুবসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মাদ নযরুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনার পাইকগাছা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক ও যুবসংঘের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সাবেক কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড.এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ (সাতক্ষীরা), ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (কুমিল্লা), সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন (কুমিল্লা) প্রমুখ। যেলা সভাপতিদের পক্ষ থেকে বক্তব্য পেশ করেন সাতক্ষীরা যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি অধ্যাপক শাহীদুয্যামান ফারূক।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম।
সোনামণি সমাবেশ :
ইজতেমার ২য় দিন বাদ জুম‘আ ইজতেমা ময়দানে ‘সোনামণি’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক শিহাবুদ্দীন আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ, মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন। উক্ত সমাবেশে সোনামণির উদ্যোগে আয়োজিত কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘সোনামণি’ কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস।
ইজতেমা ময়দানে মাননীয় মেয়র :
তাবলীগী ইজতেমার ২য় দিন শুক্রবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র জনাব খায়রুজ্জামান লিটন প্রচন্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে ইজতেমা ময়দানে এসে মুছল্লীদের সাথে জুম‘আর ছালাত আদায় করেন। অতঃপর ছালাত শেষে তিনি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রচন্ড গরমে মুছল্লীদের সীমাহীন কষ্টের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং আগামীতে নিয়মিতভাবে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে অথবা মার্চের প্রথমে তাবলীগী ইজতেমা করার ব্যাপারে যাবতীয় প্রশাসনিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন ও তাবলীগী ইজতেমার সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
মহিলা সমাবেশ :
ইজতেমার ২য় দিন সকাল ১০-টায় প্রস্তাবিত মহিলা সালাফিয়া মাদরাসা ময়দানে মহিলাদের জন্য নির্মিত পৃথক প্যান্ডেলে ‘আহলেহাদীছ মহিলা সংস্থা’র উদ্যোগে এক মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, আদর্শ জাতি গঠনে মায়েদের ভূমিকা অপরিসীম। তাক্বওয়াশীল আদর্শ নাগরিক তৈরীর জন্য পরিবারে মাতাই হচ্ছেন সর্বপ্রথম শিক্ষিকা। তিনি আরো বলেন, সাপ্তাহিক পারিবারিক তা‘লীম ও নিয়মিত ইসলামী শিক্ষা প্রদানের জন্য মায়েদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে শিখতে হবে ও নিজ সন্তানদের শিখাতে হবে। তাহ’লেই জাতির সূর্যসন্তানরা বেরিয়ে আসবে। যারা দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখবে। এ সময় তাঁর সাথে থেকে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ডঃ মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন।
বৈঠকী দান :
অন্যান্য বারের মত এবারেও উপস্থিত মুছল্লীগণ এই দ্বীনী দাওয়াতে সহযোগিতার জন্য নগদ বৈঠকী দান প্রদান করেন। এমনকি মা-বোনেদের কেউ কেউ স্বর্ণালংকার খুলে দান করেন। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সকলের জন্য প্রাণখোলা দো‘আ করেন।
‘দারুল হাদীছ বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা:
২য় দিনের ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত কুরআন ও হাদীছের উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য ‘দারুল হাদীছ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন এবং এ লক্ষ্য পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য দেশের ধনিকশ্রেণীর প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, পৃথক পরিবেশে ছাত্র ও ছাত্রী উভয়ের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিশুদ্ধতম ইসলামী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি এ মহতী স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন।
প্রস্তাবনা সমূহ :
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর ২০তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা-২০১০-এর ২য় দিন নিম্নোক্ত প্রস্তাব সমূহ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় এবং তা বিবেচনার জন্য দেশের সরকার ও জনগণের নিকটে পেশ করা হয়-
১. দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থাকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
২. শিক্ষার নিম্নস্তর হ’তে উচ্চস্তর পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক ইসলামী অর্থ ও বিচার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে কৃষকদের জন্য সূদমুক্ত কৃষিঋণ ব্যবস্থা অবিলম্বে চালু করতে হবে।
৪. এ সম্মেলন যুবচরিত্র বিধ্বংসী অশ্লীল বই-পত্রিকা ও ছবি সমূহ প্রদর্শনের অনুমোদন আশু বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।
৫. এ সম্মেলন দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছে।
৬. এ সম্মেলন ইঙ্গ-মার্কিন চক্র কর্তৃক আফগানিস্তান ও ইরাক দখল এবং ফিলিস্তিনীদের প্রতি ইস্রাঈলী হামলা ও সেখানে ব্যাপক গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং সেখানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ এবং ওআইসির প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
৭. এ সম্মেলন ‘কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন করা হবে না’ মর্মে মহাজোটের দেওয়া নির্বাচন-পূর্ব ওয়াদা যথাযথভাবে পূরণের দাবী জানাচ্ছে এবং ইসলাম বিরোধী সকল আইন বাতিলের আহবান জানাচ্ছে।
৮. অদ্যকার সম্মেলন ফারাক্কা ও গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গকে মরুভূমিতে পরিণত করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং ১৯৭৪-এর মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সহ অবরুদ্ধ ছিটমহলবাসীদের পুনরুদ্ধারের আহবান জানাচ্ছে। সাথে সাথে সিলেটের বিপরীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের নতুন চক্রান্তের মাধ্যমে সিলেটসহ বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলকে মরুভূমিতে পরিণত করার নীল-নকশার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং দেশের নির্বাচিত সরকারকে এ সকল মৌলিক ও জাতীয় সমস্যা দ্রুত নিরসনের জোর দাবী জানাচ্ছে।
৯. এ সম্মেলন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ও অন্যান্য নেতা-কর্মীদের উপর বিগত চারদলীয় জোট সরকারের অন্যায় নির্যাতনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং তাঁদের উপর আরোপিত মিথ্যা মামলা সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি জোরালো আবেদন জানাচ্ছে।
বিদায়ী ভাষণ ও দো‘আ :
৩য় দিন শনিবার ফজরের জামা‘আতে ইমামতি শেষে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ইজতেমায় আগত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে আবেগঘন সংক্ষিপ্ত বিদায়ী ভাষণ দেন এবং দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার শিক্ষা স্ব স্ব জীবনে বাস্তবায়নের আহবান জানান। অতঃপর সভা ভঙ্গের দো‘আ ও বিদায়কালীন দো‘আ পাঠের মাধ্যমে দু’দিন ব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
[ইজতেমার ভাষণ সমূহ আত-তাহরীকের ওয়েব সাইট থেকে ডাউন লোড করুন। এছাড়া ভাষণ সমূহের সিডি মাসিক আত-তাহরীক অফিস থেকে সংগ্রহ করুন]
ইসলামী সম্মেলন
সবদিক ছেড়ে ফিরে আসুন আল্লাহর অহি-র পথে
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
তাহের নগর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ ২৪ মার্চ বুধবার : অদ্য বাদ মাগরিব ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর চাঁপাই নবাবগঞ্জ যেলা সম্মেলন গোমস্তাপুর থানাধীন তাহের নগর আবাসিক এলাকা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের সিনিয়র প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন কোন মতবাদের নাম নয়; এটি একটা পথের নাম। যা ছাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে চলে আসছে। এ আন্দোলন মানুষকে আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ অহি-র আলোকে জীবন গড়ার আহবান জানায়।
উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক ও হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর সচিব অধ্যাপক আব্দুল লতীফ, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়ার শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ ফযলুল করীম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর প্রমুখ।
পরানপুর, মান্দা, নওগাঁ ৭ এপ্রিল বুধবার : অদ্য বাদ আছর মান্দা থানাধীন পরানপুর হাইস্কুল ময়দানে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ পরানপুর এলাকার যৌথ উদ্যোগে এক ইসলামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরানপুর (উত্তর) আহলেহাদীছ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মাদ রেযাউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি জনাব আফযাল হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম। প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন পরানপুর কামিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মাদ এহসানুল্লাহ, মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মতীন (নওগাঁ) ও যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আফযাল হোসাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পরানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্জ মুহাম্মাদ মাযহারুল আনওয়ার।
ছহীহ হাদীছের আলোকে সর্বাগ্রে ধর্মীয় সংস্কার যরূরী
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
ঝিনাইদহ ৯ এপ্রিল শুক্রবার : অদ্য বাদ আছর ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ঝিনাইদহ যেলার যৌথ উদ্যোগে শহরের উজির আলী হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন যে, ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে অহি-র আলোকে জীবন গঠনের মধ্যেই কেবল মানুষের ইহলৌকিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিহিত রয়েছে। তিনি বলেন, সমাজ সংস্কারের সাথে সাথে পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী সর্বাগ্রে আমাদের মধ্যে ধর্মীয় সংস্কার আশু যরূরী।
যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাষ্টার ইয়াকূব হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক বাহারুল ইসলাম, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম ও মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুযাফফর বিন মুহসিন ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ আখতার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মুহাম্মাদ হারূনুর রশীদ।
সুধী সমাবেশ
অবিচ্ছেদ্য সাক্ষী হ’তে সাবধান হৌন ও পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে ব্রতী হউন
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
সাঘাটা, গাইবান্ধা ৫ এপ্রিল সোমবার : অদ্য বাদ আছর যেলার সাঘাটা উপযেলা পাইলট হাইস্কুল ময়দানে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ গাইবান্ধা-পূর্ব সাংগঠনিক যেলার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রদত্ত প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব জনগণের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানান। সমবেত সুধীবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন মূলক নাতিদীর্ঘ ও সারগর্ভ ভাষণ পেশ করেন। তিনি বলেন, মানুষের অন্যায় কর্ম সেদিন তার জন্য বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তার কান, চোখ ও দেহের ত্বক সেদিন সবকিছুর সাক্ষী হবে (হা-মীম সাজদাহ ২০)। আল্লাহ বলবেন, ‘ধর একে গলায় বেড়ী পরাও’। ‘অতঃপর জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ কর’। ‘তারপর শৃংখলিত কর সত্তুর গজ দীর্ঘ শিকলে’ (হা-ক্কাহ ৬৯/৩০-৩২)। আমীরে জামা‘আত বলেন, পরকালের কঠিনতম শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য দুনিয়াতেই পাথেয় সঞ্চয় করতে হবে। আমাদেরকে নির্ভেজাল ইসলামের একনিষ্ঠ অনুসারী হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী নিজেদের সার্বিক জীবন গড়ে তুলতে হবে। আহলেহাদীছ আন্দোলন এ পথেই বিশ্ববাসীকে আহবান জানায়। তিনি বলেন, আহলেহাদীছ কোন মাতবাদের নাম নয়, এটি একটি পথের নাম। এপথ মানবতার মুক্তির পথ। এ পথের শেষ ঠিকানা হ’ল জান্নাত।
ভাষণের শেষ পর্যায়ে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, এই এলাকায় আমরা ১৮টি জামে মসজিদ, ১৬টি ওযু খানা, ৪৫০টির মত টিউবওয়েল, জুমারবাড়ীতে নূরা জাহিম দাতব্য হাসপাতাল ও শিমুলবাড়ীতে দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট বিশালায়তন মাদরাসা, মসজিদ ও ইয়াতীমখানা কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছি। এছাড়াও বন্যার সময় নিয়মিত ত্রাণ সাহায্য দিয়েছি। প্রকল্প সমূহ পরিচালনার জন্য ২৮ বিঘা জমি কিনে দিয়েছি ও ১টি গোডাউন করেছি। এগুলি রক্ষা করার ও পরিচালনা করার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা এগুলি রক্ষা করবেন কি-না, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সকলে তিনবার সমস্বরে সম্মতি জানান। মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, মাদরাসা, হাসপাতাল ও ইয়াতীম খানার এক বিঘত জমি কেউ খরিদ বা নষ্ট করলে তিনি জাহান্নামের আগুন খরিদ করবেন। আমরা এগুলি প্রতিষ্ঠা করেছি আপনাদের কল্যাণের জন্য। আপনারা যদি এগুলো রক্ষা না করেন, তাহ’লে কাল ক্বিয়ামতের মাঠে আপনাদেরকে দাতাদের সামনে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। অতএব আল্লাহর মালগুলি রক্ষার জন্য আল্লাহর বান্দারা এগিয়ে আসুন।
স্থানীয় সুধী মাওলানা আব্দুল জাববার-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ, মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ ও বগুড়া মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক জনাব ডাঃ এস,এম,এ, মামূন প্রমুখ। সমাবেশে যেলা ‘আন্দোলন’-এর আহবায়ক জনাব খলীলুর রহমান, বগুড়া যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, সাঘাটা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জনাব সাঈদুর রহমান, সাবেক উপযেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান সাঘাটা মহিলা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আলতাফ হোসায়েন সরকার, মুক্তিনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রবীণ সমাজ নেতা জনাব শাহ আলী সরদার, অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা জনাব নযীর হোসায়েন সরদার, জনাব আব্দুল জলীল, ৭নং হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জনাব এনামুল হক মন্ডল এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও ওলামায়ে কেরাম সহ যেলা ‘আন্দোলন’-এর বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা আহসান আলী এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মাওলানা ফযলুর রহমান।
মৃত্যু সংবাদ
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর ২০০৯-১১ সেশনের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীনের পিতা কুমিল্লা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অন্যতম সুধী ও শুভাকাঙ্খী জনাব ফযলুল হক (৭৭) গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত ১টা ১৫ মিনিটে কুমিল্লা যেলার বুড়িচং থানাধীন জগৎপুর গ্রামে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৫ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। দীর্ঘ ৩৮ বৎসর তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস-এ কর্মরত ছিলেন। সুবেদার মেজর হিসাবে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
পরেরদিন বেলা ২-টায় জগৎপুর ঈদগাহ ময়দানে তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর ৩য় পুত্র অধ্যাপক মুহাম্মাদ জালালুদ্দীন জানাযার ছালাতে ইমামতি করেন। অতঃপর ছদরুদ্দীন হাজী বাড়ীস্থ পারিবারিক গোরস্থানে পিতা-মাতার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। জানাযার ছালাতে যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক জনাব মুছলেহুদ্দীন, যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মাওলানা সাইফুল ইসলাম সরকার, সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকরাম সহ যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর নেতৃবৃন্দ, জগতপুর এডিএইচ সিনিয়র মাদরাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমন্ডলী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক মুছল্লী অংশগ্রহণ করেন। জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা ছফিউল্লাহ মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের সালাম ও সমবেদনা পৌঁছে দেন এবং সকলের নিকট মাইয়েতের জন্য অন্তরখোলা দো‘আ কামনা করেন।
[আমরা তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার বর্গের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদেŠসে স্থান দান করুন-আমীন! -সম্পাদক]