
প্রশ্ন (১৯/২৫৯) :মসজিদ ছাড়া অন্যত্র একাকী ছালাত আদায়কারী মুছল্লী নিজে তাঁর সামনে সুৎরা রেখে ছালাত আদায় করতে পারবেন কি? মসজিদ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এরূপ বানিয়ে রাখা যাবে কি? অন্য কেউ সুৎরা ছাড়া ছালাত শুরু করলে সম্মুখে থাকা কেউ তার সামনে সুৎরা দিয়ে তাকে অতিক্রম করতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী : মাহবূব আলম, পল্লবী, ঢাকা।
উত্তর : একাকী ছালাত আদায়কালেও মুছল্লী সূৎরা ব্যবহার করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কিছু দিয়ে লোকেদের আড়াল করে ছালাত আদায় করে; এমতাবস্থায় যদি কেউ তার সামনে দিয়ে অতিক্রম করতে চায় সে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। যদি সে বিরত হ’তে অস্বীকার করে তবে সে (ছালাত আদায়কারী) যেন তার বিরুদ্ধে লড়াই করে তথা তাকে প্রতিহত করে। কেননা সে একটা শয়তান’ (মুসলিম হা/৫০৫; মিশকাত হা/৭৭৭ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ)। মসজিদ কর্তৃপক্ষ সুৎরা বানিয়ে রাখতে পারে। এতে মুছল্লীদের উপকার হবে। এছাড়া পিছনে ছালাতরত ব্যক্তির সামনে সিজদার স্থানের সমান নির্ধারিত দূরত্বে সুৎরা রেখে চলে যাওয়া যেতে পারে। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম কোন মুছল্লীর সামনে লোকের অতিক্রমের আশঙ্কা করলে তার সামনে সুৎরা হয়ে বসে পড়তেন (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/১৭৬; বাহূতী, কাশশাফুল কেনা‘ ১/৩৭৬)।
প্রশ্ন (২০/২৬০) :মসজিদের ইমাম যদি না জেনে বড় কুফরী বা শিরকী কথা বলে ফেলেন। অতঃপর সতর্ক করার পর ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এক্ষণে এটাই তার তওবার জন্য যথেষ্ট হবে নাকি তওবার দো‘আ পাঠ করে, কালেমা পড়ে গোসল করা আবশ্যক হবে?
প্রশ্নকারী : ওয়াসিফ, ভারত।
উত্তর : অজ্ঞতার কারণে কেউ কোন শিরক করে থাকলে তার ভুল স্বীকার করা এবং অনুতপ্ত হওয়া এবং সে পাপ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করাই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা কোন ভুল করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (আহযাব ৩৩/০৫)। তিনি বান্দার ভাষায় বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য আমাদের পাকড়াও করোনা’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন আমার উম্মতের ভুলে যাওয়া ও ভুলক্রমে করে ফেলা পাপ এবং যে বিষয়ে তাকে জোর-জবরদস্তি করা হয় (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৮৪)।
প্রশ্ন (২১/২৬১) :আমার ভাই আমার কাছে কিছু টাকা আমানত হিসাবে জমা রেখেছে। আমি ঐ টাকা কোন হালাল ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলে তা আমানতের খেয়ানত হবে কি?
প্রশ্নকারী : ফাহমিদা, ঢাকা।
উত্তর : কেউ কোন অর্থ-সম্পদ কারো নিকট আমানত রাখলে তা মালিকের অনুমতি ব্যতীত বিনিয়োগ করা বা ব্যবসা করা বা খরচ করা জায়েয নয়। অতএব ভাই প্রদত্ত অর্থ আমানত হিসাবে জমা রাখতে হবে। আর ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করতে চাইলে ভাইয়ের অনুমতি নিতে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/৩২৯; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/৪১১)।
প্রশ্ন (২২/২৬২) :আমি জমি কেনার জন্য কিছু টাকা কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করেছি। সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করতে আরো ২/৩ বছর সময় লাগবে। সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধের পর জমি আমার মালিকানায় আসবে। এক্ষেত্রে আমার যাকাতের বিধান কি? পরিশোধিত টাকার যাকাত আমাকে দিতে হবে কি? এছাড়া সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য কিছু টাকা ঋণ করেছি। এক্ষেত্রে যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই ঋণের টাকা বাদ যাবে কি?
প্রশ্নকারী : ছাববীর আহমাদ, বগুড়া।
উত্তর : প্রথমত বসবাস বা ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে জমির মালিকের নিকট জমাকৃত টাকা জমির বিনিময় হিসাবে প্রদান করায় উক্ত পরিশোধিত টাকা যাকাতের হিসাবের মধ্যে গণ্য হবে না। বরং বর্তমানে নিজ মালিকানায় থাকা টাকা নিছাব পরিমাণ হ’লে এবং এক বছর অতিক্রান্ত হ’লে তাতে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়ত যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে এই ঋণের টাকা বাদ যাবে না। বরং সম্পূর্ণ অর্থের উপর যাকাত দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, নিছাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে সর্বাগ্রে ঋণ পরিশোধ করবে। এরপর উদ্বৃত্ত অর্থ থাকলে এবং তা নিছাব পরিমাণ হ’লে যাকাত দিতে হবে অন্যথায় যাকাত দিতে হবে না (আবুদাউদ হা/১৫৬২, সনদ যঈফ; ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৫/৪৫; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/১৫৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৯/৩০৮)।
প্রশ্ন (২৩/২৬৩) :স্বামীর নিয়ত ছিল ১ তালাক দিয়ে স্ত্রীকে রেখে দিবে যাতে তারা দু’জনই নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। কিন্তু তালাক দেয়ার সময় কাযী অফিস থেকে তাকে তিন তালাক দিতে বাধ্য করা হয়। এমতাবস্থায় তিন তালাক হবে কি?
প্রশ্নকারী : মোরশেদ, ঢাকা।
উত্তর : এক বৈঠকে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হয় (মুসলিম হা/১৪৭২)। কাজেই কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তিন তালাক দিলে সে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারে। ইদ্দতের (তিন তোহরের) মধ্যে হ’লে স্বামী সরাসরি স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবে। ইদ্দত পার হয়ে গেলে উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফেরত নিবে (বাক্বারাহ ২/২৩২)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আবু রুকানা তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি বললেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, আমি জানি ওটা এক তালাকই হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও। অতঃপর তিনি সূরা তালাকের ১ম আয়াতটি পাঠ করে শুনান (আবুদাঊদ হা/২১৯৬, সনদ হাসান)। অতএব কাযী অফিস থেকে তিন তালাক দিতে বাধ্য করা হ’লেও একত্রে প্রদত্ত তিন তালাক এক তালাক হিসাবেই গণ্য হবে।
প্রশ্নে উল্লিখিত বিবরণ অনুযায়ী এক তালাক গণ্য হবে (বাক্বারাহ ২/২২৯)। এমতাবস্থায় ইদ্দতের মধ্যে হ’লে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিবে। আর ইদ্দতকাল অতিক্রম করলে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে ঘর-সংসার করতে পারে (বাক্বারাহ ২/২৩২; তালাক ১; বুখারী হা/৫১৩০; বিস্তারিত দ্র. মুহাম্মাদ আসাদু্ল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘তালাক ও তাহলীল’ পৃ. ৩৪-৪০)।
প্রশ্ন (২৪/২৬৪) :পিতা-মাতা জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে শিরক-বিদ‘আতে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মারা গেছেন। এক্ষণে সন্তান হিসাবে আমার করণীয় কি? পিতা-মাতার জন্য দান করলে ছওয়াব কার হবে? আমিও ছওয়াব পাবো কি?
প্রশ্নকারী : হযরত আলী, শিবগঞ্জ, বগুড়া।
উত্তর : প্রথমত পিতা অজ্ঞাতসারে কোন পাপে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মারা গেলে তার নাজাতের আশা করা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তোমরা কোন ভুল করলে তাতে তোমাদের কোন অপরাধ নেই। কিন্তু তোমাদের অন্তরে দৃঢ় সংকল্প থাকলে অপরাধ হবে। বস্ত্তত আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু (আহযাব ৩৩/০৫)। তিনি বান্দার ভাষায় বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই বা অজ্ঞতাবশে ভুল করি, সেজন্য আমাদের পাকড়াও করো না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন আমার উম্মতের ভুলে যাওয়া ও ভুল ক্রমে করে ফেলা বিষয়ের পাপ এবং যে বিষয়ে তাকে জোর-জবরদস্তি করা হয়’ (ইবনু মাজাহ হা/২০৪৩; মিশকাত হা/৬২৮৪)।
দ্বিতীয়ত সন্তান পিতার জন্য বা অন্য কারো জন্য দান করলে এর ছওয়াব দাতাও পাবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলল, আমার মা হঠাৎ মারা গেছেন। তার ব্যাপারে আমি ধারণা করি, তিনি যদি কথা বলতে পারতেন তবে ছাদাকা করতেন। আমি যদি তার পক্ষে ছাদাকা করি, তবে কি আমার এ কাজের কোন ছওয়াব হবে? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ (মুসলিম হা/১০০৪)।
প্রশ্ন (২৫/২৬৫) :আমি ছোট বেলায় আমার চাচার পকেট থেকে না বলে ২৫০০ টাকা নিয়েছিলাম। এজন্য আমি গোনাহগার হব কি? তার অজান্তে ব্যাংক বা বিকাশের মাধ্যমে বা অন্য কোন মাধ্যমে তা পরিশোধ করা যাবে কি?
প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
উত্তর : কারো পকেট বা অন্য কোন স্থান থেকে অজ্ঞাতসারে টাকা নেওয়া গুনাহের কাজ এবং চুরি হিসাবে গণ্য হবে। এক্ষণে অনুতপ্ত হয়ে সরাসরি টাকাগুলো ফেরত দিতে পারলে ভালো হয়। আর সরাসরি ফেরত দেওয়া সম্ভব না হ’লে অনুতপ্ত হৃদয়ে যেকোন মাধ্যমে টাকাগুলো তার নিকট পৌঁছে দিলেই দায়মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ (ওছায়মীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়া ৪/১৬২-৬৫)।
প্রশ্ন (২৬/২৬৬) :আমি রসায়নে অনার্স করে এ বিষয়ে দক্ষ শিক্ষক ও গবেষক হ’তে চাই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে যে আমি এই পড়াশুনা করে ধর্মীয় দিক দিয়ে পিছিয়ে যাব। এক্ষণে জেনারেল পড়াশুনা করেও দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য আমার করণীয় কি?
প্রশ্নকারী : আব্দুর রহমান, সদরপুর, ফরিদপুর।
উত্তর : এজাতীয় বিষয়ে পড়াশুনা করা ইসলামী শিক্ষার বিপরীত নয়, যদি তা দ্বীনের পক্ষে বা মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হয়। তবে সেক্ষেত্রে দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য কিছু কর্তব্য রয়েছে। যেমন- (১) ধর্মীয় বিধিবিধান যথাযথভাবে পালন করা। (২) ইবাদতগুলো সময়মত আদায় করা। (৩) পাঠ্যবস্ত্ত যেন দ্বীনের কোন মৌলিক সত্যের বিরোধী না হয়, সেদিকে সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখা। (৪) দ্বীনী অনুষ্ঠানে বা মজলিসে উপস্থিত হওয়া। (৫) দ্বীনী সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা, সৎ লোকদের সাথে উঠাবসা করা এবং মন্দ লোকদের সঙ্গ পরিহার করা। (৬) নবীদের জীবনী, সীরাতুর রাসূল ও ছাহাবায়ে কেরাম এবং সালাফদের জীবনী পাঠ করা। এতে আশা করা যায় যে, দ্বীনের উপর টিকে থাকা সহজ হবে।
প্রশ্ন (২৭/২৬৭) :বিবাহের কেবল আকদ সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু অলীমা হয়নি। এরূপ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে নির্জনবাস জায়েয হবে কি?
প্রশ্নকারী : জাবেদ হোসাইন, অক্সিজেন মোড়, চট্টগ্রাম।
উত্তর : আক্দ তথা ঈজাব ও কবূল সম্পন্ন হ’লেই স্ত্রীর সাথে নির্জনবাস জায়েয। কারণ খুৎবার পরে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে অলীর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বর কবুল বললেই বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যায় (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৯/২৭১)।
প্রশ্ন (২৮/২৬৮) :হাফ প্যান্ট বা সতর খোলা অবস্থায় ওযূ করলে বা ওযূ করার পর সতর উন্মুক্ত হ’লে ওযূ ভঙ্গ হবে কি?
প্রশ্নকারী : শাকিল আহমাদ, শ্যামলী, ঢাকা।
উত্তর : সতর উন্মুক্ত হওয়া বা সতরের কিছু অংশ খোলা অবস্থায় ওযূ করা ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। অতএব এমতবস্থায় ওযূ করলে ওযূ হয়ে যাবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/২৭০, ২৮৩)।
প্রশ্ন (২৯/২৬৯) :মসজিদের উপর তলায় মহিলা এবং নীচতলায় পুরুষরা ছালাত আদায় করছেন। এভাবে ছালাত আদায়ে শারঈ কোন বাধা আছে কি?
প্রশ্নকারী : আব্দুল আউয়াল সুমন, বাগাতিপাড়া, নাটোর।
উত্তর : এভাবে ছালাত আদায়ে কোন বাধা নেই (মারদাভী, আল-ইনছাফ ২/২৯৩; ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/২০০)।
প্রশ্ন (৩০/২৭০) :স্ত্রী মারা গেলে স্বামী তাকে গোসল দেয়া ও কবরে শুইয়ে দিতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী : ইকরাম হোসাইন সরকার, দড়িনবীপুর, নরসিংদী।
উত্তর : মৃত স্ত্রীকে গোসল দেয়া এবং কবরস্থ করা উভয়টি স্বামীর জন্য জায়েয। ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার দায়িত্ব সাধারণত নিকটাত্মীয়দের (যেমন, ছেলে, মেয়ে, পিতা, মাতা, ভাই) উপর। স্বামী তার স্ত্রীর মৃতদেহ গোসল দিতে পারেন, তবে তা শরী‘আতের বিধান অনুযায়ী হ’তে হবে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৫/১১৪ ও ১২২; বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৩/১০৯)। রাসূল (ছাঃ) স্বীয় স্ত্রী আয়েশা (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘যদি আমার পূর্বে তুমি মারা যাও, তাহ’লে আমি তোমাকে গোসল দেব, কাফন পরাব, জানাযা পড়াব ও দাফন করব’ (আহমাদ হা/২৫৯৫০; ইবনু মাজাহ হা/১৪৬৫; মিশকাত হা/৫৯৭১)। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি যদি আগে বুঝতে পারতাম যা পরে বুঝতে পেরেছি তাহ’লে তাঁর (রাসূলের) স্ত্রীরাই তাঁর গোসল দিত’ (আবুদাউদ হা/৩১৪১; আলবানী, আহকামুল জানায়েয ১/৪৯)। ইসলামের প্রথম খলীফা আবুবকর (রাঃ)-কে তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) এবং ফাতেমা (রাঃ)-কে তার স্বামী আলী (রাঃ) গোসল দিয়েছিলেন’ (বায়াহাক্বী ৩/৩৯৭, দারাকুৎনী হা/১৮৩৩, সনদ হাসান। দ্র. ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ১২০-২১)।
প্রশ্ন (৩১/২৭১) :ছিয়াম অবস্থায় জন্মনিয়ন্ত্রণের ইনজেকশন দেওয়া যাবে কি? এর ফলে ছিয়ামের কোন ক্ষতি হবে কি?
প্রশ্নকারী : মাহমূদ, ঢাকা।
উত্তর : ছিয়াম অবস্থায় মাংসপেশীতে যেকোন ইঞ্জেকশন গ্রহণ করা যাবে। কারণ এগুলো সাধারণত পাকস্থলীতে পৌঁছে না (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৯/১৯৬, ১৯৯)। উল্লেখ্য যে, স্ত্রী ও সন্তানের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় সাময়িক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় (বুঃ মুঃ মিশকাত হা/৩১৮৪)। কিন্তু সংসারকে সচ্ছল করার নিয়তে তথা দারিদ্রে্যর ভয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ নিষিদ্ধ। কেননা রূযীর মালিক আল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘দারিদ্রে্যর ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানকে হত্যা কর না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই খাদ্য প্রদান করে থাকি’ (ইসরা ১৭/৩১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা প্রেমময়ী ও অধিক সন্তান দায়িনী নারীকে বিবাহ কর। কারণ আমার উম্মতের সংখ্যা বেশী হওয়া আমার গৌরবের কারণ’ (আবূদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩০৯১)। তবে কোন অবস্থাতেই স্থায়ীভাবে জন্মনিরোধ অর্থাৎ লাইগেশন, ভ্যাসেকটমী ইত্যাদি পদ্ধতি গ্রহণ করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) পুরুষকে খাসী হ’তে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৪৭৮৬-৮৭; মিশকাত হা/৩০৮১)।
প্রশ্ন (৩২/২৭২) :বিয়েতে ছেলে মেয়ে উভয়েই রাযী এবং উভয়ের মায়েরাও রাযী। কিন্তু মেয়ের পিতা রাযী নন। এমতাবস্থায় বিবাহ করলে তা বৈধ হবে কি?
প্রশ্নকারী : ছিয়াম, বরিশাল।
উত্তর : উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হবে না। কারণ মেয়ের অভিভাবক পিতা জীবিত আছেন এবং তিনি উক্ত বিবাহে রাযী নন। তবে দুনিয়াবী কারণে পিতা মেয়ের বিবাহ দিতে টালবাহানা করলে এবং তা সুস্পষ্ট হ’লে মেয়ে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার সৎ নিয়তে পরবর্তী অভিভাবক তথা দাদা, ভাই বা চাচার অভিভাবকত্বে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হ’তে পারে। কিন্তু কোনভাবেই নিজের অসৎ মনস্কামনা পূরণার্থে পিতাকে পাশ কাটিয়ে অন্যকে অলী বানিয়ে বিবাহ করা যাবে না (ইবনু কুদামাহ, মুগনী ৭/৭-৮; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৮/১৪৭)।
প্রশ্ন (৩৩/২৭৩) :ঈদগাহ নির্মাণ কাজে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে কি?
প্রশ্নকারী : ফাতেমা, মিরপুর, ঢাকা।
উত্তর : ঈদগাহ নির্মাণ কাজে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। কারণ যাকাত বণ্টনের খাত নির্ধারিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যাকাতসমূহ কেবল (আট শ্রেণীর) লোকের জন্য। ফকীর, অভাবগ্রস্ত, যাকাত আদায়ের কর্মচারী, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর রাস্তায় এবং (দুস্থ) মুসাফিরদের জন্য। এটি আল্লাহর পক্ষ হ’তে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (তওবা ৯/৬০)। আর এটি ‘ফী সাবিলিল্লাহ’ খাতেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা তা নির্মাণে জনগণ দায়িত্বপ্রাপ্ত। সুতরাং ঈদগাহ নির্মাণে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না (বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/২৯৪; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৩/৩২৯; ওছায়মীন, আশ-শারহুল মুমতে‘ ৬/২৪১)।
প্রশ্ন (৩৪/২৭৪) :রাজমিস্ত্রীর কাজে লেবারদের কাছ থেকে হেড মিস্ত্রি যে কমিশন নেন সেটা কি হালাল হবে? উল্লেখ্য যে, কাজ করার সকল যন্ত্রপাতি হেড মিস্ত্রির থাকে এবং কাজ পাওয়ার সকল ভূমিকা তারই থাকে।
প্রশ্নকারী : কবীরুল ফরাজী, গোপালগঞ্জ।
উত্তর : মধ্যস্থতাকারী হিসাবে রাজমিস্ত্রী লেবারদের নিকট থেকে কমিশন নিতে পারে। কারণ এটা তার কর্মের বিনিময় হিসাবে গণ্য হবে। তবে তা হ’তে হবে নির্ধারিত এবং ইনছাফ ভিত্তিক (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১৩/১৩১; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়া ২৬/৬০)।
প্রশ্ন (৩৫/২৭৫) :দুধ মায়ের সম্পদের ভাগ কি দুধ সন্তান পাবে?
প্রশ্নকারী : নাজমুল, কুমিল্লা।
উত্তর : দুধ পানের মাধ্যমে মিরাছ তথা উত্তরাধিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় না। সুতরাং কোন শিশু কারো দুধ পান করে থাকলে সে দুধ মায়ের কোন সম্পত্তির অধিকারী হবে না (নববী, শরহু মুসলিম ১০/১৯; ফাতাওয়াল ওলামাইল বালাদিল হারাম, পৃ. ৩৩৪; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ১১/১৬)।
প্রশ্ন (৩৬/২৭৬) :মহিলারা একজন পুরুষের ইমামতিতে মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী : আতীকুর রহমান, মান্দা, নওগাঁ।
উত্তর : ঈদের ছালাত নারী-পুরুষ সবার জন্য ঈদের ময়দানে গিয়ে আদায় করাই সুন্নাত (বুখারী হা/৩৫১; মুসলিম হা/৮৯০; মিশকাত হা/১৪৩১)। তবে প্রয়োজনে একজন পুরুষের ইমামতিতে নারীরা মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করতে পারে। যেমন যাকওয়ান (রাঃ)-এর ইমামতিতে আয়েশা (রাঃ) সহ অন্যান্য নারীরা ছালাত আদায় করেছেন (বুখারী ৩/১৬৭)। তবে পুরুষের জামা‘আতে যোগদান করা সম্ভব না হ’লে মহিলারা নিজেদের ইমামতিতে কেবল ঈদের ছালাত আদায় করতে পারে (নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/১৯৯’ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩০/২৭৭)।
প্রশ্ন (৩৭/২৭৭) :আমার ফরয ছালাতে ভুল হয়েছে। সালাম ফিরানোর পরে মনে হ’ল আমার সহো সিজদা করা হয়নি। ততক্ষণে আমার ওযূ নষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষণে আমার করণীয় কী?
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ ছফীরুদ্দীন, মঙ্গলবাড়িয়াম, কিশোরগঞ্জ।
উত্তর : কোন ওয়াজিব কাজ ছুটে যাওয়ার কারণে সহো সিজদা ওয়াজিব হয়ে থাকলে ছালাত শেষে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। এক্ষণে কেউ সহো সিজদা দিতে ভুলে গেলে এবং নিকটবর্তী সময়ের মধ্যে মনে পড়লে সহো সিজদা দিয়ে সালাম ফিরাবে। যদি ওযূ ছুটে যায়, তবে ওযূ করে এসে সহো সিজদা দিবে। আর যদি দেরীতে মনে পড়ে তাহ’লে সহো সিজদা দেওয়া লাগবে না। বরং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইলে ছালাত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য যে, সহো সিজদার জন্য ওযূ শর্ত (ওছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৪/৫০; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/৮)।
প্রশ্ন (৩৮/২৭৮) :জামা‘আত চলাকালে মহিলারা সশব্দে আমীন বলতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী : ওয়াহিদা, সাতক্ষীরা।
উত্তর : সশব্দে নয়, তবে অনুচ্চ স্বরে আমীন বলবে। কেননা ‘যখন ইমাম আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বল’ (বুখারী হা/৭৮০) হাদীছের এই নির্দেশনা নারী-পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য। তবে পুরুষদের শ্রবণের সম্ভাবনা থাকলে নিচু স্বরে আমীন বলবে। ওছায়মীন বলেন, আমীন বলা সুন্নাত এবং তা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। তবে নারীরা যেন উচ্চস্বরে না বলে, বিশেষত যদি তাদের আশেপাশে বেগানা পুরুষ থাকে (শারহুল মুমতে‘ ৩/২৮৭)। আলবানী (রহ.)ও একই মত পোষণ করেছেন (ছহীহাহ হা/৮৭২-এর আলোচনা)।
প্রশ্ন (৩৯/২৭৯) :কোন ব্যক্তির যদি অসুস্থতার কারণে হাত বা পা কেটে ফেলা হয় এবং এরপর যদি তিনি মারা যান, তবে হাশরের মাঠে তিনি বিকলাঙ্গ অবস্থাতেই উত্থিত হবেন কি?
প্রশ্নকারী : জান্নাত, চট্টগ্রাম।
উত্তর : কেউ যদি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে হাত পা কেটে ফেলে এবং তাতেই মারা যায় তাহ’লে সে জাহান্নামে যাবে এবং বিকলাঙ্গ অবস্থায় উঠবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আর যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐরূপ ধারালো অস্ত্র দ্বারা স্বীয় হাতে নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে’ (বুখারী হা/১০৭; মিশকাত হা/৩৪৫৩)। তবে তার নেক আমল থাকলে এবং আত্মীয়-স্বজনের অনবরত দো‘আ থাকলে সে যেমন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে তেমনি বিকলাঙ্গতা থেকেও মুক্তি পাবে। জাবের (রাঃ) বলেন, তুফায়েল ইবনু আমর দাওসী (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি চান যে, আপনার জন্য একটি মযবূত দুর্গ ও সেনাবাহিনী হোক? রাবী বলেন, দাওস গোত্রে জাহিলী যুগের একটি দুর্গ ছিল (তিনি এদিকে ইঙ্গিত করেন)। নবী করীম (ছাঃ) তা কবুল করলেন না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আনছারদের জন্য এ সৌভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। যখন নবী করীম (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করলেন, তখন তুফায়েল ইবনু আমর (রাঃ) এবং তার গোত্রের একজন লোকও তার সঙ্গে মদীনায় হিজরত করেন। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হয়নি। তুফায়েল ইবনু আমর (রাঃ)-এর সাথে আগত লোকটি অসুস্থ হয়ে পড়লো। সে রোগ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তীর নিয়ে তার হাতের আঙগুলগুলো কেটে ফেলল। এতে উভয় হাত থেকে রক্ত নির্গত হ’তে থাকে। অবশেষে সে মারা যায়। তুফায়েল ইবনু আমর দাওসী (রাঃ) স্বপ্নে তাকে ভাল অবস্থায় দেখতে পেলেন, কিন্তু তিনি তার উভয় হাত আবৃত দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার রব তোমার সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছে? সে বলল, আল্লাহ তা‘আলা তার নবী করীম (ছাঃ)-এর কাছে হিজরত করার কারণে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তুফায়েল (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হয়েছে যে, আমি তোমার হাত দু’টো আবৃত দেখছি? সে বলল, আমাকে বলা হয়েছে যে, তুমি স্বেচ্ছায় যে অংশ নষ্ট করেছ তা আমরা কখনো ঠিক করব না। তুফায়েল (রাঃ) নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি তার হাত দু’টোকেও ক্ষমা করে দিন’ (মুসলিম হা/১১৬; মিশকাত হা/৩৪৫৬)।
প্রশ্ন (৪০/২৮০) : রাতের বেলা সূরা আলে-ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করার কোন ফযীলত আছে কি?
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ আল-মামূন, রাজশাহী।
উত্তর : সাধারণভাবে শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে এটা পাঠ করার বিষয়টি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/১৮৩, মিশকাত হা/১১৯৫, ১২০৯)। তবে ‘শেষ রাতে সূরা আলে ইমরানের শেষাংশ পাঠ করলে তাহাজ্জুদ ছালাতের নেকী অর্জিত হবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (দারেমী, মিশকাত হা/২১৭১)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রাতে একশত আয়াত তেলাওয়াত করবে, তার জন্য সারারাত ইবাদতের নেকী লেখা হবে (দারেমী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৪৪)।