ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ-
অনুবাদ: ‘স্থলে ও জলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের কৃতকর্মের দরুন। এর দ্বারা আল্লাহ তাদের কিছু কিছু কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (সরল পথে) ফিরে আসে’ (রূম ৩০/৪১)।
সূরা রূম মাক্কী সূরা। আলোচ্য আয়াতটিও মক্কাতে নাযিল হয়েছে। বর্ণনাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন ঐ সময়েই কেবল সারা পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছিল। যেজন্য কুরআন নাযিল করে মানুষকে ছিরাতে মুস্তাক্বীমের দিকে আহবান জানানো হয়েছে। বিষয়টি মূলতঃ তা নয়। বরং এর দ্বারা মানব চরিত্রের একটা স্থায়ী প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, মানুষ স্বভাবত: ফাসাদ প্রবণ। আবার সে আনুগত্য প্রবণ। সুযোগ পেলে তার অপরাধ প্রবণতা মাথাচাড়া দেয় ও ফাসাদ সৃষ্টি করে। আবার চাপের মুখে সে শান্ত ও অনুগত হয়। এই চাপ দু’ধরনের হয়। এক- নৈতিক ও ধর্মীয় চাপ। যা তাকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দেয়। দুই- সামাজিক ও বৈষয়িক চাপ, যা তাকে বাহ্যিকভাবে অনুগত করে। ইসলামী শরী‘আত তার অনুসারীদেরকে ভিতর ও বাহির উভয় দিকে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে সমাজ বিপর্যয়মুক্ত থাকে।
আলোচ্য আয়াতে ফাসাদকেই আল্লাহ্র গযব হিসাবে বুঝানো হয়েছে এবং এর কারণ হিসাবে মানুষের কৃতকর্মকে দায়ী করা হয়েছে। এর মধ্যে এলাহী গযব নাযিলের একটা সাধারণ বিধি বেরিয়ে এসেছে। আর তা হ’ল ‘মানুষের কৃতকর্ম’। আবুল ‘আলিয়াহ বলেন, পৃথিবীতে যে কেউ আল্লাহ্র অবাধ্যতা করে, সে বিশ্বে ফাসাদ সৃষ্টি করে। কেননা আকাশ ও পৃথিবীর কল্যাণ নির্ভর করে আল্লাহ্র আনুগত্যের উপর (ইবনু কাছীর)। এজন্যেই হাদীছে এসেছে, إِقَامَةُ حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ خَيْرٌ مِنْ مَطَرِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً فِي بِلَادِ اللَّهِ، ‘পৃথিবীতে আললাহ্র একটি দন্ডবিধি বাস্তবায়িত হওয়া চল্লিশ রাত্রি বৃষ্টি হওয়ার চাইতে উত্তম’।[1] এর কারণ এই যে, দন্ডবিধি বাস্তবায়িত হ’লে দুষ্টুদের অধিকাংশ বা অনেকাংশ পাপাচার থেকে বিরত হয়ে যায়। তাতে আসমান ও যমীনে বরকত বৃদ্ধি পায়। অনেকের ধারণা পৃথিবীতে পাপ করলে কেবল পৃথিবীতেই প্রভাব পড়ে, আকাশে নয়। একথা যে ঠিক নয়, তার বাস্তব প্রমাণ হ’ল সাম্প্রতিক ‘বার্ড ফ্লু’ (পাখির জ্বর), ‘সোয়াইন ফ্লু’ (শূকর জ্বর), ‘এইড্স’ মহামারি (সমকামিতার দন্ড), অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, আবহাওয়ার তারতম্য, বিভিন্ন ভাইরাস জনিত জ্বর ও পীড়া- সবকিছুই মূলতঃ পৃথিবীতে মানুষের কৃতকর্মের ফল, যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় আমাদের অলক্ষ্যে। আজকাল ব্যক্তি দুর্নীতির চাইতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বেশী হচ্ছে। ফলে তার প্রতিক্রিয়াও হচ্ছে ব্যাপক। ১৯৪৫ সালে জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমাতে আমেরিকার আণবিক বোমা হামলার খেসারত আজও মানবজাতিকে দিতে হচ্ছে। এইসব রাষ্ট্রগুলি সেদিনের চাইতে বহুগুণ শক্তিশালী আণবিক ও হাইড্রোজেন বোমার ভান্ডার নিয়ে তাক করে আছে তাদের কল্পিত প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে, যা পরিণামে সারা পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ হবে।
ক্বিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদীর আগমন ও ঈসা (আঃ)-এর অবতরণের পর সারা পৃথিবীতে বরকত নেমে আসবে বলে ছহীহ হাদীছ সমূহে বর্ণিত হয়েছে। তার কারণ তো একটাই যে, তাঁরা ইসলামী শরী‘আত জারি করবেন। শিরক ও বিদ‘আত উৎখাত করবেন। দাজ্জাল ও ইয়াজূজ-মাজূজ খতম করবেন, সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন সারা পৃথিবীতে শান্তির আবহ সৃষ্টি হবে। এ কারণেই হাদীছে এসেছে, العبدُ الفاجرُ اذا مات يَستريح منه العبادُ والبلادُ و الشجرُ والدوابُّ. ‘যখন একজন পাপাচারী মারা যায়, তখন মানুষ, জনপদ, গাছ-পালা ও পশু-পক্ষী সবাই স্বস্তিলাভ করে’।[2]
Every action has a reaction. ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া আছে’। পৃথিবীতে মানুষ যখন কোন সুন্দর কথা বলে বা সুন্দর কাজ করে, তার যেমন সুন্দর প্রতিক্রিয়া হয়। তেমনি কোন মন্দ কথা বললে বা মন্দ কাজ করলে তার মন্দ প্রতিক্রিয়া হয়। তবে এগুলির বাস্তবায়ন ও স্থায়ীত্বের জন্য আল্লাহ্র হুকুম প্রয়োজন হয়। পিতা-মাতার সামনে সন্তান কোন অন্যায় করলে পিতা-মাতা দুঃখিত হন। কিন্তু প্রতিশোধ নেন না। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে তারা মাঝে-মধ্যে কঠোর হন। এমনকি নিজ মাদকাসক্ত সন্তানকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। অনুরূপভাবে বান্দা কোন অন্যায় করলে আল্লাহ নাখোশ হন। কিন্তু অধিকাংশ সময় ক্ষমা করে দেন ও প্রতিশোধ নেন না। কিন্তু অবাধ্যতা সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকলে তিনি মাঝে-মধ্যে শাস্তি নামিয়ে দেন, যাকে আমরা ‘আল্লাহ্র গযব’ বলে থাকি। আল্লাহ্র সেই গযব হয় অতীব কঠোর, যাকে ঠেকানোর ক্ষমতা বান্দার থাকে না। বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী সর্বত্র নানাবিধ গযব ঘন ঘন নাযিল হচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে পৃথিবী চূড়ান্ত ধ্বংসের পূর্ব লক্ষণ বা ক্বিয়ামতের পূর্ব নিদর্শন সমূহের অংশ বিশেষ।
বিধি সমূহ :
উপরের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, পৃথিবীতে এলাহী গযব নাযিলের বিধি হ’ল প্রধানতঃ দু’টি। এক- বান্দার অন্যায় কৃতকর্মের ফলাফল প্রদান। দুই- প্রতিটি অন্যায় কর্মের সাথে সাথে প্রতিশোধ না নিয়ে বান্দাকে তওবা করার অবকাশ দান ও তওবা না করলে শাস্তি প্রদান। যেমন আল্লাহ বলেন, وَمَا أَصَابَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَن كَثِيرٍ- ‘তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলি তোমাদের কৃতকর্মের ফল। তবে অনেক পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে থাকেন’ (শূরা ৪২/৩০)।
এছাড়াও আরেকটি বিধি রয়েছে, সেটি হ’ল প্রথমে ছোট ছোট আযাব পাঠিয়ে বান্দাকে হুঁশিয়ার করা। অতঃপর বড় শাস্তি নাযিল করা। যেমন আল্লাহ বলেন, وَلَنُذِيقَنَّهُمْ مِنَ الْعَذَابِ الْأَدْنَى دُونَ الْعَذَابِ الْأَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ- ‘গুরু দন্ডের পূর্বে অবশ্যই আমরা তাদেরকে লঘুদন্ডের আস্বাদন ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সাজদাহ ৩২/২১)। যেমন মূসার দাওয়াত কবুল না করায় হঠকারী ফেরাঊনের কওমের উপর বিশ বছরে পরপর ৭-এর অধিক গযব নাযিল হয়। কিন্তু ফেরাঊন ও তার সভাসদ মন্ডলী এগুলিকে স্রেফ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে উড়িয়ে দেয়। অতঃপর বিরাট জনসমাবেশ ডেকে ফেরাঊন বলে,وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلاَّ سَبِيلَ الرَّشَادِ- ‘আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথ ভিন্ন অন্য পথ দেখাই না’ (মুমিন ৪০/২৯)। আর ‘আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ পালনকর্তা’ (أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى) (নাযে‘আত ৭৯/২৪)। ফেরাঊন নিজেকে মানুষের সৃষ্টিকর্তা দাবী করেনি। বরং ‘পালনকর্তা’ বলেছিল। কারণ সে রাজা হিসাবে জনগণের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করত ও তাদের লালন-পালন করত। তার উপরেও যে কোন পালনকর্তা আছেন, যিনি আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে, পানি দিয়ে, শস্য ও ফলাদি দিয়ে সৃষ্টিকে লালন করছেন, সে অদৃশ্য জ্ঞান ফেরাঊনের ছিল না। মূসার দেওয়া সে অহি-র জ্ঞান ও বিধান সে গ্রহণ করেনি। কেননা তাতে তার স্বেচ্ছাচারিতা ব্যাহত হয়। ফলে সে অহংকার দেখায় ও তাতেই আল্লাহ্র গযব ত্বরান্বিত হয়। তার চূড়ান্ত অহংকারের শাস্তি আল্লাহ চূড়ান্তভাবেই দেন এবং তাকে তার সৈন্য-সামন্তসহ সদলবলে সাগরে ডুবিয়ে মারেন। (ইউনুস ১০/৯০)। মযলূম মূসা ও হাযার হাযার নির্যাতিত বনু ইস্রাঈল নিজেরা নাজাত পায় ও যালেম ফেরাঊনের এই করুন মৃত্যুর দৃশ্য স্বচক্ষে অবলোকন করে (বাক্বারাহ ২/৫০)। এই মহামুক্তির শুকরিয়া স্বরূপ মূসা ও তার কওম সেদিন ১০ই মুহাররম থেকে প্রতি বছর আশূরার নফল ছিয়াম শুরু করেন, যা আজও চালু আছে। তবে নিঃসন্দেহে জাহান্নামের শাস্তিই হ’ল সবচেয়ে বড় শাস্তি। যার কোন তুলনা নেই। কাফির-মুনাফিকদের চূড়ান্ত আবাসস্থল হ’ল সেটাই (নিসা ৪/১৪০)।
উদ্দেশ্য :
উপরে বর্ণিত তিনটি বিধির প্রত্যেকটিরই মহৎ উদ্দেশ্য হ’ল অবাধ্য মানুষকে বাধ্যতায় ফিরিয়ে আনা এবং পৃথিবীতে শান্তি কায়েম করা। গযব নাযিলের পূর্বেই কি আমরা অবাধ্যতা পরিত্যাগ করতে পারি না?
সৎ লোকদের উপর বিপদাপদ :
প্রশ্ন হ’তে পারে যে, পৃথিবীতে নবী-রাসূল ও সৎ লোকদের উপর যেসব বালা-মুছীবত আসে, সেগুলি কি আল্লাহ্র গযব হিসাবে গণ্য হবে? যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়,
أىُّ الناسِ أشدُّ بلاءً ؟ قال: الأنبياءُ ثمَّ الأمثلُ فالأمثلُ، يُبتلَى الرَّجلُ على حسب دينيه فإن كانَ صُلباً في دينيه اشتدَّ بلاءُه، وإن كانَ فى دينيه رِقَّةٌ هُوِّنَ عليه، فمازال كذلك حتى يمشىَ على الأرضِ ما لَهُ ذنبٌ رواه الترمذي وفى رواية ابن ماجه: وماعليه من خطيئة-
‘মানব সমাজে সবচেয়ে বেশী বিপদগ্রস্ত কারা? জবাবে তিনি বলেন, নবীগণ। অতঃপর তাঁদের নিকটবর্তী নেককার ব্যক্তিগণ। অতঃপর তাদের নিকটবর্তীগণ। মানুষ তার দ্বীন অনুযায়ী বিপদগ্রস্ত হয়। যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শক্ত হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ কঠিন হয়। আর যদি সে দ্বীনের ব্যাপারে শিথিল হয়, তাহ’লে তার বিপদাপদ সহজ হয়। এভাবেই চলতে থাকে। এক সময় সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে, তার কোন গোনাহ থাকে না’।[3]
বাহ্যতঃ হাদীছটিকে কুরআনের বিপরীত মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কেননা সৎ লোকের বিপদাপদ দেওয়ার কারণ তাদের গোনাহ নয়, বরং উদ্দেশ্য হ’ল তাদের পরীক্ষা করা এবং পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে আল্লাহ কঠিন পরীক্ষা সমূহ নিয়েছেন। অবশেষে সফলভাবে উত্তীর্ণ হওয়ায় তাঁকে আল্লাহ বিশ্বনেতার মর্যাদায় ভূষিত করেন। ইহুদী-নাছারা-মুসলমান সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ‘পিতা’ হিসাবে তিনি সারা পৃথিবীতে বরিত ও নন্দিত। অথচ তাঁকে নির্যাতনকারী রাজা নমরূদ সর্বত্র ধিকৃত ও নিন্দিত। এমনকি নমরূদ বা ফেরাঊন বা আবু জাহলের নামে সন্তানের নাম রাখতেও কোন পিতা-মাতা রাযী হবেন কি-না সন্দেহ। তাই ব্যক্তিগত পর্যায়ে মুমিনগণের উপরে মুছীবত প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের জন্য রহমত স্বরূপ। এর দ্বারা তাদের গোনাহের কাফফারা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ ولا وَصَبٍ ولا هَمٍّ ولا حَزَنٍ ولا أذًى ولا غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةُ يُشَاكُهَا إلا كفَّرَ اللهُ بها من خَطَايَاهُ- ‘মুসলিম বান্দার কোন ক্লান্তি, রোগ, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, কষ্ট ও অস্থিরতা এমনকি কোন কাঁটা বিধলেও (যদি সে ছবর করে ও আল্লাহ্র উপরে খুশী থাকে), তাহ’লে তার কারণে আল্লাহ তার গোনাহ সমূহ মাফ করে দেন’।[4] অন্য হাদীছে তিনি বলেন, مَن يُّرِدِ اللهُ به خَيْرًا يُصِبْ منه- ‘আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ চান, তাকে বিপদে ফেলেন’। =(বুখারী, রিয়ায হা/৩৯)। অন্য হাদীছে তিনি বলেন, لا يزال البلاء بالمؤمن أو المؤمنة فى نفسه و ماله و ولده حتى يلقىَ الله تعالى وما عليه من خطيئة- ‘মুমিন পুরুষ বা নারীর জীবন, সন্তান ও মালের উপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহ্র সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার (আমলনামায়) কোন পাপ থাকে না’।[5] অর্থাৎ ব্যক্তিগত বিপদাপদে ধৈর্য ধারণের ফলে মুমিন বান্দা পাপমুক্ত অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে যান এবং আল্লাহ্র কাছে মহা পুরষ্কার লাভে ধন্য হন।
গযবের এলাহী বিবরণ ও প্রতিকার :
আলোচ্য আয়াতে সর্বত্র ফাসাদ ও গযব নাযিলের যে বক্তব্য এসেছে, তার একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আল্লাহ অন্য আয়াতে দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ-
‘আর আমরা তোমাদের পরীক্ষা নেব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ হ’ল ধৈর্যশীলদের জন্য’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫)। অত্র আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিষয় হ’ল গযবের কয়েকটি দিক। এছাড়াও বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধরনের গযব আসতে পারে। যেমন সুনামি, জলোচ্ছ্বাস, বিশ্বমন্দা, খাদ্যে ও ফসলে বরকত নষ্ট হওয়া, ভূগর্ভে পানি দূষিত হওয়া, আকাশে বায়ু দূষণ হওয়া, নানাবিধ অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটা ইত্যাদি। আর এইসব ব্যাপকভিত্তিক গযবের প্রধান কারণ হ’ল মানুষের পাপাচার ও কৃতকর্ম। আর এগুলো থেকে বাঁচার পথ হ’ল মানুষকে অন্যায় প্রতিরোধে এগিয়ে আসা। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إن الناسَ اذا رأوا منكرًا فلم يُغَيِّروه يوشِكُ أن يَّعُمَّهم اللهُ بعقايه- ‘মানুষ যখন কোন অন্যায় হ’তে দেখে, অতঃপর তারা তা প্রতিরোধ করেনা, তখন সত্বর আল্লাহ তাদেরকে ব্যাপক গযবের দ্বারা পাকড়াও করেন’।[6] কিন্তু মুশকিল হ’ল এই যে, ব্যাপক ভিত্তিক অন্যায় ও সামাজিক অনাচার প্রধানতঃ সমাজের নেতাদের পক্ষ থেকে হয়। যাদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকে না। আর সেজন্য নেমে আসে ব্যাপক বিধ্বংসী এলাহী গযব সমূহ। ফলে হতাহত হয় সকল ধরনের মানুষ। তাই সকলের উপদেশ গ্রহণের জন্য আমরা এখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত কয়েকটি জাতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরব।
ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত জাতিসমূহ
মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, নেতৃবৃন্দ এবং ধনিক শ্রেণী যখন শক্তি মদমত্ত হয়ে অহংকারে চুর হয়েছে, দুনিয়ায় ফাসাদ ও বিশৃংখলা সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়েছে, তখনই যুগে যুগে আল্লাহ্র গযব নেমে এসেছে এবং বড় বড় শক্তিশালী জাতি চোখের পলকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পৃথিবীতে মানুষের আগমনকাল থেকে এযাবত আল্লাহ্র গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত ছয়টি জাতির কথা কুরআনের মাধ্যমে জগদ্বাসী জানতে পেরেছে। তারা হ’ল কওমে নূহ, ‘আদ, ছামূদ, লূত্ব, আহলে মাদইয়ান ও কওমে ফেরাঊন। অবশ্য কুরআনে এ তালিকায় কওমে ইবরাহীমের কথাও এসেছে (তওবাহ ৯/৭০)। যদিও তারা একত্রে ধ্বংস হয়নি। তবে ইবরাহীমের ভাতিজা লূত্ব-এর কওম একত্রে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়েছিল।
উপরোক্ত ছয়টি জাতির ধ্বংসের কারণ ও ধরণগুলি ছিল নিম্নরূপঃ
(১) কওমে নূহ : এদের ধ্বংসের কারণ ছিল ‘শিরক’। তারাই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা করে। ওয়াদ, সুআ‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব ও নাছর নামক পাঁচজন নেককার মৃত মানুষের অসীলায় এরা আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করত। এতদ্ব্যতীত তারা নানাবিধ অন্যায়-অত্যাচারে নিমজ্জিত হয়েছিল। এদের হেদায়াতের জন্য নূহ (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়। তিনি দীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর জীবন পেয়েছিলেন এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়ে ব্যর্থ হন ও তাদের সমাজ নেতাদের নিগ্রহের শিকার হন। অবশেষে তাঁর বদদো‘আয় পুরা কওম দীর্ঘস্থায়ী প্লাবণে ডুবে ধ্বংস হয়। কেবল ৪০+৪০=৮০ জন ঈমানদার নারী ও পুরুষ আল্লাহ্র হুকুমে তাঁর কিশতীতে ঠাঁই পায়। বর্তমান পৃথিবীর সকল মানুষ তাদেরই উত্তরসুরী। প্লাবনের পর ইরাকের ‘মূছেল’ নামক স্থানে তারা বসতি স্থাপন করেন।
(২) কওমে ‘আদ : এরা ছিল নূহের পঞ্চম অথবা অষ্টম অধঃস্তন পুরুষ এবং নূহ-পুত্র সামের বংশধর। জর্ডন থেকে হাযারামাউত ও ইয়ামন পর্যন্ত এদের বসবাস ছিল। এরা ছিল বিশালদেহী ও দারুন শক্তিশালী ও দুর্ধষ জাতি। আল্লাহ তাদের প্রতি অনুগ্রহের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা অবশেষে উদ্ধত ও হঠকারী হয়ে যায় এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। ফলে তাদের কাছে তাদের মধ্য হ’তে হূদ-কে নবী করে পাঠানো হয়। তিনি তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন ও শিরক পরিত্যাগ করে আল্লাহ্র পথে ফিরে আসার আহবান জানান। তিনি তাদেরকে আল্লাহ্র শাস্তির ভয় দেখান। তাতে তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলে, مَنْ أَشَدُّ مِنَّا قُوَّةً ؟ ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কে আছে’? (ফুছছিলাত/হামীম সাজদাহ ৪১/১৫)। শিরক ছাড়াও তাদের মধ্যে প্রধান তিনটি পাপের কথা কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে।- (১) তারা অযথা উঁচু স্থান সমূহে সুউচ্চ টাওয়ার ও নিদর্শন সমূহ নির্মাণ করত (শো‘আরা ২৬/১২৮)। যা স্রেফ অপচয় ব্যতীত কিছুই ছিল না। (২) তারা অহেতুক মযবূত প্রাসাদ সমূহ তৈরী করত আর ভাবত যেন তারা সেখানে চিরকাল বসবাস করবে (ঐ, ১২৯)। (৩) তারা দুর্বলদের উপর নিষ্ঠুরভাবে আঘাত হানতো এবং মানুষের উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করত (ঐ, ১৩০)।
গযবের বিবরণ : পরপর তিন বছর বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকে। ফলে তাদের বাগ-বাগিচা ও ফসলাদি সব জ্বলে-পুড়ে শেষ হয়ে যায়। অবশেষে তারা আল্লাহ্র কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে। ফলে মেঘ আসে। কিন্তু তা ছিল গযবের কালো মেঘ। হঠাৎ বিকট গর্জন ও বজ্রাঘাতে ও প্রবল ঘুর্ণিঝড়ে তারা সব ধ্বংস হয়ে যায়। শক্তিশালী ঐসব অহংকারী মানুষগুলিকে ঝড়ে উপরে উঠিয়ে সজোরে মাটিতে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলা হয়। এইভাবে আট দিন ও সাত রাত্রি ব্যাপী ধ্বংসলীলা চালিয়ে (ক্বামার ৫৪/২০; হা-ক্কাহ ৬৯/৬-৮) শক্তিশালী ‘আদ জাতিকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়।
(৩) কওমে ছামূদ : ‘আদ জাতির ধ্বংসের অন্যূন পাঁচশত বছর পরে তাদেরই অন্যতম শাখা ছামূদ জাতির উপর গযব নেমে আসে। এদের প্রধান শহরের নাম ছিল হিজ্র, যা শাম বা সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এরাও ‘আদ জাতির ন্যায় শক্তিশালী ছিল ও বৈষয়িক উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছিল। পার্থিব বৈভব ও ধনৈশ্বর্যের অহংকারে মত্ত হয়ে তারা ‘আদ জাতির মত আচরণ শুরু করে দেয়। শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয়। পথভ্রষ্ট এই জাতিকে হেদায়াতের জন্য তাদের ভাই ছালেহ (আঃ)-কে তাদের কাছে নবী করে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা তার প্রতি উদ্ধত আচরণ করে। তারা আল্লাহ প্রেরিত উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং আল্লাহ্র গযবকে চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি তারা তাদের নবী ছালেহ (আঃ)-কে রাতের বেলা সপরিবারে হত্যার চক্রান্ত করে এবং এ ব্যাপারে নয়টি দলের নয়জন নেতা নেতৃত্ব দেয় (নমল ২৭/৪৮-৪৯)। অবশেষে নবী তার ঈমানদার সাথীদের নিয়ে আল্লাহ্র হুকুমে এলাকা ত্যাগ করেন এবং যথারীতি গযব নেমে আসে।
গযবের বিবরণ : আল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাদের প্রতি একটি মাত্র নিনাদ পাঠিয়েছিলাম। তাতেই তারা শুকনো খড়কুটোর মত হয়ে গেল’ (ক্বামার ৫৪/৩১)। ‘ভীষণ একটি ভূমিকম্পে এবং বিকট এক গর্জনে সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হ’ল (আ‘রাফ ৭/৭৮) এবং এমনভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হ’ল যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি’ (হূদ ১১/৬৭-৬৮)। মূলতঃ উদ্ধত ও পথভ্রষ্ট নয় জন নেতার কারণেই এই কওম আল্লাহ্র গযবের শিকার হয়।
(৪) কওমে লূত্ব : চাচা ইবরাহীমের সাথে লূত্ব জন্মভূমি ইরাকের বাবেল শহর থেকে হিজরত করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অদূরে কেন‘আনে চলে আসেন। অতঃপর সেখান থেকে অনতিদূরে জর্ডন ও ফিলিস্তীনের মধ্যবর্তী ‘সাদূম’ অঞ্চলের অধিবাসীদের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ পাক লূত্ব (আঃ)-কে সেখানে নবী করে পাঠান। সাদূম সহ সেখানে সমৃদ্ধ পাঁচটি শহর ছিল। কুরআনে এগুলিকে একত্রে ‘মু’তাফিকাত’ বা উল্টানো জনপদসমূহ বলে অভিহিত করা হয়েছে (তওবাহ ৯/৭০; হাক্বক্বাহ ৬৯/৯)। দুনিয়াবী উন্নতির চরম শিখরে উঠে এরা আল্লাহকে ভুলে যায় এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। রাহাজানি সহ নানাবিধ দুষ্কর্ম এদের মজ্জাগত হয়ে পড়ে। এমনকি এরা প্রকাশ্য মজলিসে পুংমৈথুন বা সমকামিতার মত নোংরামিতে লিপ্ত হয়। যা ইতিপূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত কোন জাতির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়নি। লূত্ব (আঃ) তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে ব্যর্থ হলেন। অবশেষে তারা আল্লাহ্র গযবের শিকার হয়।
গযবের বিবরণ : আল্লাহ্র হুকুমে লূত্ব (আঃ) স্বীয় ঈমানদার সাথীদের নিয়ে কিছু রাত থাকতেই গৃহত্যাগ করেন। অতঃপর ছুবহে ছাদিকের সময় একটি প্রচন্ড নিনাদের মাধ্যমে গযব কার্যকর হয়। যা তাদের শহরগুলিকে সোজা উপরে উঠিয়ে উপুড় করে ফেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে প্রবল ঘূর্ণিবায়ুর সাথে প্রস্তর বর্ষণ শুরু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছল, তখন আমরা উক্ত জনপদের উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপরে স্তরে স্তরে কংকর-প্রস্তর বর্ষণ করলাম’। ‘যার প্রতিটি তোমার প্রভুর নিকটে চিহ্নিত ছিল। আর ঐ ধ্বংস স্থলটি (বর্তমান আরবীয়) যালেমদের থেকে বেশী দূরে নয়’ (হূদ ১১/৮২-৮৩)।
উক্ত ধ্বংস স্থলটি বাহরে মাইয়েত বা বাহরে লূত্ব অর্থাৎ মৃত সাগর বা লূত্ব সাগর নামে খ্যাত। যা ফিলিস্তীন ও জর্ডন নদীর মধ্যবর্তী বিশাল অঞ্চল জুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে। এতে কোন মাছ, ব্যাঙ এমনকি কোন জলজ প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। সর্বশেষ হিসাব মতে যার আয়তন দৈর্ঘ্যে ৭৭ কিঃমিঃ (প্রায় ৫০ মাইল), প্রস্থে ১২ কিঃমিঃ (প্রায় ৯ মাইল) এবং গভীরতায় ৪০০ মিটার (প্রায় সিকি মাইল)। বর্তমানে এইড্স আক্রান্ত বিশ্বের নাফরমান রাষ্ট্রনেতা, সমাজনেতা ও বিলাসী ধনিক শ্রেণী এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবেন কী?
(৫) আহলে মাদইয়ান : মাদইয়ান হ’ল লূত্ব সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডনের সামুদ্রিক বন্দর মো‘আন-এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। শিরক ও কুফরী ছাড়াও এখানকার অধিবাসীরা ওযন ও মাপে কম দিত। রাহাজানি ও লুটপাট করত। তারা অন্যায়ভাবে জনগণের মাল ভক্ষণ করত। কওমে লূত্ব-এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে হযরত শো‘আয়েব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হন। পরে ইনি হযরত মূসার শ্বশুর হন। শু‘আয়েব (আঃ)-এর দাওয়াতের জবাবে কওমের নেতারা বলল, ‘আপনার ছালাত কি আপনাকে একথা শিখায় যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা যুগ যুগ ধরে যেসবের পূজা করে আসছে আমরা আমাদের ঐসব উপাস্যের পূজা ছেড়ে দিই? আর আমাদের ধন-সম্পদে আমরা ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা পরিত্যাগ করি? (হূদ ১১/৮৭)।
এভাবে তারা ইবাদাত ও মু‘আমালাতকে পরষ্পরের প্রভাবমুক্ত ভেবেছিল। আর এজন্য তারা আর্থিক বিষয়ে হালাল-হারামের বিধান মানতে রাযী ছিল না। তারা তাদের যিদ ও হঠকারিতায় অনড় রইল এবং আল্লাহ্র গযব প্রত্যক্ষ করার হুমকি দিল। অবশেষে তাদের উপর গযব ত্বরান্বিত হ’ল।
গযবের বিবরণ : ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আহলে মাদইয়ানের উপর প্রথম সাতদিন প্রচন্ড গরম চাপিয়ে দেওয়া হয়, যাতে অতিষ্ঠ হয়ে তারা ভূগর্ভস্থ কক্ষসমূহে আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেখানে তিষ্টাতে না পেরে তারা জঙ্গলের দিকে যায়। আল্লাহ সেখানে একটি ঘন কালো মেঘ পাঠিয়ে দেন, যার নীচ দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয়। লোকেরা ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে সেখানে গিয়ে জমা হয়। অতঃপর হঠাৎ আকাশ থেকে ভীষণ নিনাদ আসে এবং নীচের দিকে ভূমিকম্প শুরু হয়। ওদিকে মেঘমালা থেকে শুরু হয় অগ্নিবৃষ্টি। অতঃপর আল্লাহদ্রোহীরা সব একত্রে ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন আমাদের আদেশ এসে গেল, তখন আমরা শো‘আয়েব ও তার ঈমানদার সাথীদের নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করি। আর বিকট নিনাদ এসে যালেমদের পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাদের জনপদে উপুড় হয়ে পড়ে রইল’। ‘যেন তারা সেখানে কখনোই ইতিপূর্বে বসবাস করেনি...’ (হূদ ১১/৯৪-৯৫)।
(৬) কওমে ফেরাঊন : ফেরাঊন ছিল তৎকালীন মিসরের রাজাদের উপাধি। হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অনেক পরে এরা ক্ষমতায় আসে এবং শিরক ও কুফরীতে লিপ্ত হয়। ইউসুফ-এর সময় কেন‘আন থেকে মিসরে হিজরতকারী সম্মানিত বনু ইস্রাঈলগণকে এরা সেবক ও দাস শ্রেণীতে পরিণত করে। ফেরাঊন সংখ্যাগরিষ্ট ক্বিবতীদের হাতে রেখে সংখ্যালঘিষ্ট বনু ইসরাঈলদের উপর যুলুমের চূড়ান্ত করে। মযলূম স্বজাতি বনু ইস্রাঈলদের উদ্ধার এবং ফেরাঊন ও তার কওমের হেদায়াতের জন্য মূসাকে আল্লাহ সেখানে নবী করে পাঠান। ফেরাঊন ও তার উদ্ধত মন্ত্রীরা মূসা ও হারূণের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে। অবশেষে ফেরাঊনের জাদুকরদের সাথে শক্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ইস্রাঈলী বর্ণনা অনুযায়ী মূসা বিশ বছর মিসরে অতিবাহিত করেন এবং মিসরবাসীকে আল্লাহ্র পথে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু ফেরাঊনের ঔদ্ধত্য ও অহংকারে কোনরূপ ব্যত্যয় না ঘটায় তার কওমের উপর নানাবিধ এলাহী গযব একে একে আসতে থাকে। যেমন, (১) দুর্ভিক্ষ (২) প্লাবণ (৩) পঙ্গপাল (৪) উকুন (৫) ব্যাঙ (৬) রক্ত (৭) প্লেগ মহামারি ইত্যাদি। প্রতিটি গযব আসার পরে ফেরাঊনের লোকজন মূসার কাছে গিয়ে ক্ষমা চায় ও দো‘আ করতে বলে। পরে গযব উঠে গেলে দু’এক বছরের মধ্যে আবার অবাধ্যতা শুরু করে। ফলে আবার গযব আসে। ফেরাঊন ও তার মন্ত্রীরা গযব সমূহকে মূসার জাদু কিংবা স্রেফ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে মনে করত। তাই এগুলোকে তারা কোনরূপ তোয়াক্কা করত না। ফলে তাদের যুলুম অব্যাহত থাকে। অবশেষে নেমে আসে চূড়ান্ত শাস্তি এবং ফেরাঊন ও তার সৈন্যদল একসাথে সাগরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়।
উপরে বর্ণিত বিগত যুগের ধ্বংসপ্রাপ্ত ছয়টি জাতির প্রত্যেকটির মধ্যে একটি মৌলিক পাপ ছিল শিরক ও কুফরী। আরেকটি ছিল প্রাচুর্য ও হঠকারিতা। বাকী পাপগুলি ছিল বিভিন্ন ধরনের। শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর দো‘আ অনুযায়ী তাঁর উম্মত একসাথে আল্লাহ্র গযবে ডুবে ধ্বংস হবে না বা একসাথে সবাই দুর্ভিক্ষে মরবে না।[7] তাঁর আগমনের পর ইসলাম কবুল করুক বা না করুক পৃথিবীর সকল মানুষ, জিন ও সৃষ্টিজগত তাঁর উম্মত।[8] অতএব তাঁর দো‘আর বরকতে পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষ এইরূপ ব্যাপক গযব থেকে বেঁচে থাকবে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে গযব আসবে। যাতে অন্যেরা হুঁশিয়ার হয় এবং আল্লাহ্র পথে ফিরে আসে। যদিও শাসক শ্রেণীর অধিকাংশ ফেরাঊনী চরিত্রের অধিকারী হয়। আর সেকারণে বিশ্বে একটার পর একটা এলাহী গযব আসতেই থাকে। বর্তমান পৃথিবীতে যালেম শক্তিগুলির রাষ্ট্রীয় যুলুম সারা বিশ্বে ব্যাপ্ত হওয়ায় আল্লাহ্র গযবও চারিদিকে ব্যাপ্তি লাভ করেছে। এক্ষণে আমরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে এলাহী গযবসমূহ নাযিলের প্রধান প্রধান কারণ সমূহ ব্যাখ্যা করব। যাতে মানুষ সেগুলো থেকে বিরত হয়।-
গযব নাযিলের প্রধান কারণ সমূহ
১. শিরক ও কুফরী :
এটিই হ’ল প্রধানতম কারণ। পৃথিবীর শাসক কুল এখন জনগণের নামে নিজেদেরকে সার্বভৌমত্বের মালিক বলে দাবী করছে এবং শাসন, বিচার ও আইন বিভাগের সর্বত্র আল্লাহ্র মালিকানায় নিজেদেরকে শরীক বানাচ্ছে। এভাবে তারা স্বাধীন মানুষকে নিজেদের গোলামে পরিণত করেছে। নিজেদের মনগড়া আইনের মাধ্যমে তারা আল্লাহকৃত হারামকে হালাল করছে। বস্ত্ততঃ ‘আল্লাহ মানুষের সব গুনাহ মাফ করেন। কিন্তু শিরকের গুনাহ মাফ করেন না’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। এমনকি ‘আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন’ (মায়েদাহ ৫/৭২)। প্রধানতঃ এইসব দুষ্টমতি রাষ্ট্র নেতাদের কারণেই পৃথিবীতে সর্বব্যাপী গযব ত্বরান্বিত হচ্ছে।
২. বিদ‘আত সৃষ্টি করা :
ইহুদী-নাছারা আলেম ও দরবেশগণ তাদের ধর্মে বিদ‘আত সৃষ্টি করার কারণেই আল্লাহ্র নিকটে ‘অভিশপ্ত’ ও ‘পথভ্রষ্ট’ বলে অভিহিত হয়েছে।[9] এমনকি এদের একটি দল আল্লাহ্র নিষেধাজ্ঞাকে হীলা-বাহানা করে সিদ্ধ করায় আল্লাহ্র হুকুমে তারা বানর-শূকরে পরিণত হয় (বাক্বারাহ ২/৬৫)। আরেকটি দল সংসার ত্যাগের (‘রাহবানিয়াত’) বিদ‘আত সৃষ্টি করে (হাদীদ ৫৭/২৭)। যা আজও তাদের মধ্যে আছে। যেকারণ তাদের পোপ-পাদ্রীরা চিরকুমার থাকেন। তাদের ন্যায় মুসলিম ধর্মনেতাদের অনেকে ইসলামকে খেল-তামাশার বস্ত্ত বানিয়েছেন। তারা নিজেদের বানোয়াট ধর্মীয় প্রথাসমূহ সমাজে চালু করেছেন এবং ‘বিদ‘আতে হাসানাহ’ নাম দিয়ে হীলা-বাহানা করে চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মের নামে হঠকারি এইসব লোকগুলির উপরে আল্লাহ দারুন নাখোশ হন এবং এদের তওবার দরজা বন্ধ করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إنَّ اللهَ احْتَجَزَ التوبةَ عن صاحبِ كلِّ بدعةٍ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিদ‘আতীর তওবা রোধ করে থাকেন’।[10] এজন্যেই দেখা যায়, চোর-গুন্ডারা তওবা করলেও কোন বিদ‘আতী তওবা করে না। কারণ সে ধারণা করে যে, সে নেকীর কাজ করছে। বস্ত্ততঃ এদের কারণেই দুনিয়াতে আল্লাহ্র গযব দ্রুত নেমে আসে।
৩. ফাসেক রাষ্ট্রনেতা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন অযোগ্য লোকের হাতে নেতৃত্ব সমর্পণ করা হবে, তখন তোমরা ক্বিয়ামতের অপেক্ষায় থাক’ (বুখারী)। তিনি বলেন, আল্লাহ যাদেরকে জনগণের উপরে নেতৃত্ব দান করেছেন, অতঃপর সে তাদের কল্যাণে যত্নবান হয় না, সে জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, খেয়ানতকারী নেতার জন্য আল্লাহ জান্নাতকে হারাম করে দেন (বুখারী, মুসলিম)। তিনি বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হ’ল প্রজাসাধারণের উপর যুলুমকারী শাসক’।[11] বস্ত্ততঃ রাষ্ট্রনেতাদের যুলুমের কারণেই সারা পৃথিবী আজ আল্লাহ্র গযবে পতিত হয়েছে। যদিও তারা ফেরাঊনের মত মুখে সর্বদা জনগণকে বলে যে, ‘আমরা কেবলই তোমাদেরকে মঙ্গলের পথ দেখাই’ (গাফের/মুমিন ৪০/২৯)।
৪. বিলাসী ধনিক শ্রেণী :
আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমরা কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি, তখন সেখানকার বিলাসী ধনিক শ্রেণীকে প্ররোচিত করি। ফলে তারা পাপাচারে মেতে ওঠে। তখন সে জনপদের উপর আমাদের আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমরা উক্ত জনপদকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেই’ (বনী ইসরাঈল ১৭/১৬)। অর্থাৎ ধনিক শ্রেণীর অধঃপতন সমাজের অধঃপতন ডেকে আনে।
৫. শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘আমার পরে তোমরা বহু শাসককে দেখবে তারা অপসন্দনীয় কাজ করবে। এমতাবস্থায় তোমরা তাদের হক বুঝে দিয়ো এবং তোমাদের হক আল্লাহ্র কাছে চেয়ে নিয়ো (বুখারী, মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, এমতাবস্থায় তোমরা ধৈর্য ধারণ কর (বুখারী, মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে তাদের অন্যায় কাজকে ইনকার করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হবে। যে তাদের কাজকে অপসন্দ করবে, সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে খুশী হবে ও তার অনুসারী হবে, ছাহাবীগণ বললেন, আমরা কি ঐ শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করব না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, না। যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে। না, যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে’ (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, তাদের অন্যায় কাজকে তুমি অপসন্দ করো। কিন্তু আনুগত্যের হাত ছিনিয়ে নিয়ো না’।[12]
বস্ত্ততঃ বর্তমান পৃথিবীতে অধিকাংশ রাষ্ট্র একেকটি অগ্নিগর্ভ জনপদে পরিণত হয়েছে। সরকারী ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক সমাজ ব্যবস্থা বিষময় ফল হিসাবে এইসব দেশের জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাটাকেই বড় বীরত্ব মনে করে। ফলে আনুগত্যের বরকত সমাজ থেকে উঠে যায়। এতে সমাজে কেবল বিশৃংখলাই অবশিষ্ট থাকে। যাতে আল্লাহ ক্রুদ্ধ হন ও গযব ত্বরান্বিত হয়।
৬. সূদ ও পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা :
‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন ও সূদকে হারাম করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৫)। তিনি বলেন, সূদকে আল্লাহ সংকুচিত করেন ও ছাদাক্বাকে প্রবৃদ্ধি দান করেন (ঐ, ২৭৬)। অর্থাৎ সূদী মাল-সম্পদকে আল্লাহ ধ্বংস করেন ও তাতে বরকত নষ্ট করে দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূদের অর্থ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তার পরিনাম হ’ল নিঃস্বতা’।[13] বর্তমানে আমেরিকা সহ পুঁুজিবাদের বিশ্বমন্দা এর বাস্তব প্রমাণ নয় কি? আল্লাহ বলেন, ‘যারা সোনা-রূপা জমা করে ও তা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করে না, তাদেরকে তুমি মর্মান্তিক আযাবের সুসংবাদ দাও’। ‘যেদিন জাহান্নামের আগুনে তাদের মালসমূহ উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের ললাট, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে ও বলা হবে- এগুলো তাই যা তোমরা (দুনিয়াতে) নিজেদের জন্য সঞ্চয় করেছিলে। এক্ষণে তোমরা তোমাদের সঞ্চয়কৃত মালের স্বাদ আস্বাদন কর’ (তওবাহ ৯/৩৪-৩৫)।
বস্ত্ততঃ লাগামহীন ব্যক্তি মালিকানার ফলে সমাজের কিছু লোকের হাতে সম্পদ স্ত্তপীকৃত হয় ও বাকীরা নিঃস্ব হয়। যাকে বর্তমানে পুঁজিবাদী অর্থনীতি বলা হয়। তার বিপরীতে ব্যক্তি মালিকানাহীন রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ফলে রাষ্ট্রের কাছে সকল সম্পদ জমা হয় ও পুরা সমাজ নিঃস্ব হয়। যাকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বলা হয়। দু’টিই মানুষের স্বভাববিরোধী ও চরমপন্থী অর্থনীতি হওয়ায় বিশ্ববাসী কোনটাই মেনে নিতে পারেনি। পক্ষান্তরে ইসলাম সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার কায়েম করতে চায়। আর তা হ’ল মানুষের নিজস্ব মেধা, সততা ও যোগ্যতার তারতম্যের কারণে অর্থনীতিতেও স্তরভেদ থাকবে। সম্পদে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত হবে। কিন্তু তা লাগামহীন হবে না। ইসলামের বিধান দ্বারা তা নিয়ন্ত্রিত হবে। এর ফলে সমাজের সর্বত্র অর্থের প্রবাহ থাকবে। দেহের সর্বত্র রক্ত চলাচল করবে। ওমরের সময় মাত্র ১০ বছরে আরব ভূখন্ড থেকে দারিদ্র্য বিদায় নিয়েছিল এই অর্থনীতির বরকতে। আজও তা সম্ভব। কিন্তু তা না থাকায় এবং আল্লাহ্র বিধান পরিত্যক্ত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী আল্লাহ্র গযব একটার পর একটা ক্রমাগত ভাবে নাযিল হচ্ছে।
৭. অন্যায় বিচার ব্যবস্থা :
আল্লাহ বলেন, وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَآ أُولِيْ الأَلْبَابِ ‘যুলুমের সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণের মধ্যেই তোমাদের জীবন নিহিত, হে জ্ঞানীগণ!’ (বাক্বারাহ ২/১৭৯)। তিনি বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى،
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্য দানে অবিচল থাক। কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে পাপী না করে এ ব্যাপারে যে, তোমরা ন্যায় বিচার না কর। তোমরা ন্যায়বিচার কর। এটাই আল্লাহ ভীরুতার নিকটবর্তী ... (মায়েদাহ ৫/৮)।
বস্ত্ততঃ নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা, দলীয় আনুগত্য ও অন্যের প্রতি বিদ্বেষ মানুষকে দুর্বল করে ফেলে। অথচ বিচারককে যাবতীয় অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। যা একমাত্র আল্লাহভীতি ব্যতীত সম্ভব নয়। দ্বিতীয়তঃ মানবীয় আইনে ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। যা অনেক সময় সমাজে অপরাধ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। অথচ বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থায় আল্লাহ প্রদত্ত দন্ডবিধান সমূহ পরিত্যক্ত হয়েছে। ফলে আল্লাহ্র গযব সমূহ ত্বরান্বিত হয়েছে।
৮. ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ বন্ধ হওয়া :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘যার হাতে আমার জীবন তার কসম করে বলছি, তোমরা অবশ্যই ন্যায়ের আদেশ করবে ও অন্যায়ের নিষেধ করবে। নইলে সত্বর আল্লাহ তোমাদের উপর নিজের পক্ষ হ’তে আযাব প্রেরণ করবেন। অতঃপর তোমরা তা থেকে মুক্তির জন্য দো‘আ করবে। কিন্তু তা কবুল করা হবে না’।[14] তিনি বলেন, মানুষ যখন কোন অন্যায় হ’তে দেখবে, অথচ তা প্রতিরোধের চেষ্টা করবে না, সত্বর তাদের উপর ব্যাপকভাবে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে প্রতিশোধ নেমে আসবে’।[15]
বস্ত্ততঃ মুসলমানের উত্থান ঘটানো হয়েছে উক্ত কাজের জন্য এবং এ কারণেই আল্লাহ তাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি (خير امة) বলেছেন (আলে ইমরান ৩/১১০)। কিন্তু মুসলমান আজকাল তাদের এ দায়িত্ব যেন ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহ্র গযব ব্যাপকতা লাভ করছে।
৯. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘রাহেম’ (রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা) ‘রহমান’ হ’তে নিঃসৃত (বুখারী)। ‘উহা আল্লাহ্র আরশের সাথে ঝুলন্ত। সে বলে, যে আমাকে নিজের সাথে মিলাবে, আল্লাহও তাকে নিজের সাথে মিলাবেন। আর যে আমাকে ছিন্ন করবে, আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ)। তিনি বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[16] তিনি বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আল্লাহ, আমি রহমান। রেহেমকে আমিই সৃষ্টি করেছি। আমি তাকে আমার নাম হ’তে নিঃসৃত করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত করবে, আমি তার সাথে আমার রহমতের সম্পর্ক যুক্ত করব। আর যে ব্যক্তি তা ছিন্ন করবে, আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব’ (আবুদাঊদ)। তিনি বলেন, বিদ্রোহ করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা অপেক্ষা কোন পাপই এত জঘন্য নয় যে, দ্রুত আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে শাস্তি দেন এবং আখেরাতেও তার জন্য শাস্তি জমা রাখেন’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ)। তিনি বলেন, সবচেয়ে নিকটবর্তী হ’লেন মা, অতঃপর পিতা, অতঃপর তুলনামূলকভাবে অন্যেরা (তিরমিযী, আবুদাঊদ)। তিনি বলেন, পিতার সন্তুষ্টি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি এবং তাঁর অসন্তুষ্টি আল্লাহ্র অসন্তুষ্টি’ (তিরমিযী, হাকেম)।
দুর্ভাগ্য, বস্ত্তবাদী চিন্তা-চেতনা আজকাল আমাদের পারিবারিক জীবনকে ভঙ্গুর করে ফেলেছে। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন ও অন্যান্য আত্মীয়তার সম্পর্ক এখন স্বার্থদুষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে সমাজে দ্রুত আল্লাহ্র ক্রোধ নেমে এসেছে।
১০. বিভিন্ন বদ স্বভাবের কারণে আল্লাহ্র গযব নেমে আসা:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত বিষয়গুলি যখন কোন সমাজে ব্যাপকতা লাভ করে, তখন সেখানে আল্লাহ্র গযব নাযিল হয়। যেমন (১) যেনা-ব্যভিচার ও বেহায়াপনা বৃদ্ধি পেলে সেখানে মহামারি ও মৃত্যু হার বৃদ্ধি পায় (২) মাপ ও ওযনে কম দিলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় এবং সে সমাজে কঠিন দারিদ্র্য ও সরকারি যুলুম ব্যাপক হয় (৩) যাকাত দেওয়া বন্ধ করলে আসমান থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়। পশু-পক্ষী না থাকলে মোটেই বৃষ্টিপাত হতো না (৪) যারা আল্লাহ্র সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং রাসূলের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদের উপর তাদের শত্রুদের চাপিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে যায় (৫) যখন নেতারা আল্লাহ্র কিতাব অনুযায়ী শাসন করে না এবং আল্লাহ্র নাযিলকৃত বিধান সমূহ গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের মধ্যে পরষ্পরে লড়াই লাগিয়ে দেন’।[17] (৬) ‘যখন কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে খিয়ানত বা আত্মসাতের ব্যাধি ব্যাপক হয়, আল্লাহ তখন তাদের অন্তরে শত্রুর ভয় ঢেলে দেন’।[18]
১১. পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংসের প্রধান আলামত সমূহ নিম্নরূপ:
(১) ইল্ম উঠে যাবে (২) মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে (৩) যেনা-ব্যভিচার বেড়ে যাবে (৪) নামে ও বেনামীতে মদ্যপান ব্যাপক হবে (৫) পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে ও নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার জন্য একজন পুরুষ অভিভাবক হবে (যুদ্ধ-বিগ্রহে পুরুষের ব্যাপক হারে নিহত হওয়ার কারণে স্বামীহারা, পিতৃহারা, পুত্রহারা, মা-বোন, খালা-ফুফু, দাদী-নানী প্রমুখ মহিলারা এভাবে জমা হবেন)।[19] (৬) আমানত ধ্বংস হবে (৭) সর্বত্র অযোগ্য ব্যক্তির হাতে নেতৃত্ব (ও দায়িত্ব) অর্পণ করা হবে (বুখারী)। (৮) ধন-সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, যাকাত নেওয়ার মত লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না’ (মুসলিম)। ‘পৃথিবী তার গর্ভস্থ সকল খনিজ সম্পদ উগরে দেবে এবং মালামালের সয়লাব বয়ে যাবে, তখন টাকার জন্য মানুষ খুনকারী এবং চোর ও আত্মীয়তা ছিন্নকারী লোকেরা এসে দুঃখ করে বলবে, হায় এই টাকার জন্য আমরা এত অন্যায় করেছি? অতঃপর তারা ঐ মাল-সম্পদ পরিত্যাগ করে চলে যাবে’ (মুসলিম)। (৯) দুনিয়ায় ফিৎনা-ফাসাদ ও বিপদ-মুছীবত এত বৃদ্ধি পাবে যে, মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে কবরে গড়াগড়ি দিয়ে বলবে, হায়! এই স্থানে যদি আমি হ’তাম! (মুসলিম)। (১০) আরব ভূমি চারণভূমি ও নদ-নদীতে পরিবর্তিত হবে। মদীনার ইমারত সমূহ শহরের সীমানা পেরিয়ে যাবে (যার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে)। (১১) ফোরাত (ইউফ্রেটিস) নদীর তলদেশ হ’তে স্বর্ণের পাহাড় বেড়িয়ে আসবে (অর্থাৎ আরব ভূমির তলদেশ থেকে পেট্রোল ইত্যাদি তরল সোনা বের হবে। যা ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে)। অতঃপর তা ভোগ করার জন্য লোকেরা খুনাখুনি করবে। যাতে শতকরা নিরানববই জন লোক নিহত হবে (অর্থাৎ অগণিত মানুষ হতাহত হবে)। প্রত্যেকে ভাববে আমি বেঁচে যাব (ও সকল সম্পদ একাই ভোগ করব। বর্তমানে আমেরিকা ইরাকে সে কাজই করে যাচ্ছে।[20]
এতদ্ব্যতীত তিরমিযী বর্ণিত হাদীছে ১৫টি মন্দ স্বভাবের কথা এসেছে, যার কারণে আল্লাহ্র গযব সমূহ একটার পর একটা আসতে থাকবে সূতা ছেঁড়া তাসবীহ দানার ন্যায়। তবে হাদীছটি যঈফ।[21] অবশ্য উপরে বর্ণিত ছহীহ হাদীছগুলিতে উক্ত ১৫টি স্বভাবের প্রায় সবগুলি সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে এসে গেছে।
উল্লেখ্য যে, হাদীছগুলি এসেছে বিশ্বনবীর যবান থেকে বিশ্ব সমাজকে লক্ষ্য করে। কেবল মুসলিমদের জন্য বা মুসলিম এলাকার জন্য নয়। বিশ্বের যে প্রান্তে যারাই উক্ত পাপ সমূহ করবে, তাদেরকেই আল্লাহ্র গযবের শিকার হ’তে হবে। গযবের ধরনের পরিবর্তন হবে, যখন যেটা আল্লাহ ইচ্ছা করেন। যেমন ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রতলের ভূমিকম্প (সুনামি), লন্ডনে ম্যাগকাউ, আমেরিকার হ্যারিকেন কাটরিনা ও ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, মেক্সিকোর ভূমিকম্প, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল, চীনের খনি ধ্বস ও দাবানল, বাংলাদেশে সিডর ও আইলা, বার্মায় নার্গিস, বিশ্বব্যাপী এইড্স মহামারি, সাম্প্রতিক বার্ড ফ্লু ও সোয়াইন ফ্লু, ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিক দূষণ, আকাশে বায়ু দূষণ, নদীতে পানি দূষণ, আরব ভূমিতে বালু দূষণ, ফসলে বরকত নষ্ট হওয়া, মাছ-মাংস ও শস্য-ফলাদির স্বাদ ও ফলন কমে যাওয়া ইত্যাদি নানাবিধ গযব, যেসবের ধরণ পৃথক হ’লেও কারণ একটাই। আর তা হ’ল মানুষের কৃতকর্ম। যে বিষয়ে আল্লাহ পূর্বেই বান্দাকে সাবধান করে দিয়েছেন। যদি বান্দা অন্যায় করতেই থাকে, তাহ’লে গযব আসতেই থাকবে। গুটিকয়েক দুষ্ট মানুষের অপকর্মের জন্য সারা বিশ্বের মানুষ গযবে পতিত হচ্ছে। অতএব সচেতন মানুষের উচিত দুষ্টদের রুখে দাঁড়ানো। নইলে আল্লাহ্র সৃষ্ট সুন্দর ধরণী মানুষের হাতেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
করণীয় :
(১) ছবর করা : কোন জনপদে আল্লাহ্র গযব নাযিল হ’লে প্রথম কর্তব্য হ’ল ছবর করা এবং এটাকে আল্লাহ্র পরীক্ষা মনে করে ধৈর্য ধারণ করা। আল্লাহ বলেন,وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ، الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُواْ إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ- ‘তুমি সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীল বান্দাদের’। ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহ্র জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর নিকটে ফিরে যাব’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫-৫৬)।
(২) বিপদ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা: আল্লাহ বলেন, فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الأَبْصَارِ ‘অতএব হে চক্ষষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর’ (হাশর ৫৯/২)।
(৩) স্ব স্ব পাপকর্ম থেকে তওবা করা: যেমন আল্লাহ বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর তোমরা সকলে (তওবা করে) ফিরে এসো আল্লাহ্র দিকে হে বিশ্বাসীগণ! যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (নূর ২৪/৩১)। তিনি বলেন,
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ-
‘(হে নবী!) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়াবান’ (যুমার ৩৯/৫৩)। এই সময় যাবতীয় পাপচিন্তা থেকেও তওবা করা উচিত। কেননা আল্লাহ গোপন পাপচিন্তারও হিসাব নিবেন’ (বাক্বারাহ ২/২৮৪)। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ মুমিন বান্দাকে ডেকে তার গোপন পাপগুলি সব একে একে স্মরণ করিয়ে দিবেন। কিন্তু তা সকলের সামনে প্রকাশ করবেন না। তাকে মাফ করে দিবেন।[22] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিন বান্দা যদি কোন পাপ করার সংকল্প করে এবং তা বাস্তবে করে, তাহ’লে তার একটি পাপ হয়। কিন্তু যদি সেটা বাস্তবায়ন না করে, তাহ’লে আল্লাহ নিজের কাছে তার জন্য একটি পূর্ণ নেকী লেখেন’।[23]
(৪) বিপদগ্রস্ত ও দুর্গত মানুষের সেবায় এগিয়ে যাওয়া:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে’।[24] তিনি বলেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির উপর রহম করেন না, যে ব্যক্তি মানুষের উপরে রহম করে না’।[25] তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের একটি বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার একটি বিপদ দূর করে দিবেন’।[26] তিনি বলেন, তোমরা যমীনবাসীর উপর রহম কর, আসমান বাসী (আল্লাহ) তোমাদের উপর রহম করবেন’।[27] আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর ক্রোধ থেকে রক্ষা করুন।- আমীন!!
[1]. ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৫৮৮ ‘দন্ডবিধি সমূহ’ অধ্যায়।
[2]. বুখারী ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায় হা/৬৫১২; মুসলিম ‘জানায়েয’ অধ্যায়।
[3]. তিরমিযী, ইবনু মাজাহ দারেমী; মিশকাত হা/১৫৬২ ‘জানায়েয’ অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ।
[4]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, রিয়ায হা/৩৭।
[5]. তিরমিযী, মালেক, মিশকাত হা/১৫৬৭।
[6]. ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫১৪২ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায় ‘ন্যায়ের আদেশ’ অনুচ্ছেদ।
[7]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৫১ ‘নবীকুল শিরোমণির মর্যাদা সমূহ’ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ, মিশকাত হা/৫৭৫৪; আহমাদ হা/১৫৭৪।
[8]. সাবা ৩৪/২৮; মুক্বাদ্দামা দারেমী হা/৪৬; বুখারী ও মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪৭-৪৮ ‘নবীকুল শিরোমণির মর্যাদা সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[9]. তিরমিযী, আহমাদ, সনদ হাসান, কুরতুবী হা/২৪০।
[10]. ত্বাবারাণী, সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৬২০।
[11]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৮৬-৮৮; ‘নেতৃত্ব ও পদমর্যাদা’ অধ্যায়।
[12]. মুসলিম, মিশকাত হা/৩৬৬৮, ৭০-৭২, ‘নেতৃত্ব ও পদ মর্যাদা’ অধ্যায়।
[13]. ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/২৮২৭ ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।
[14]. তিরমিযী, সনদ হাসান, মিশকাত হা/৫১৪০।
[15]. ইবনু মাজাহ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫২৪২।
[16]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯২০-২২; হা/৪৯৩০, ৩২, ২৯, ২৭ ‘সৎকাজ ও সদ্ব্যবহার’ অনুচ্ছেদ।
[17]. হাকেম; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১০৬-১০৭।
[18]. মালেক, মিশকাত হা/৫৩৭০ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায় ৭ অনুচ্ছেদ।
[19]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৪৩৭ ‘ক্বিয়ামতের আলামত’ অনুচ্ছেদ।
[20]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৩৭-৪০; ৫৪৪৪-৪৫।
[21]. তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৪৫০ ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[22]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৫১ ‘হিসাব, ক্বিছাছ ও মীযান’ অনুচ্ছেদ।
[23]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৩৭৪ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫।
[24]. মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪ ‘ইলম’ অধ্যায়।
[25]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯৪৭।
[26]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৯৫৮।
[27]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৯৬৯।