আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ إِنَّا لاَ نُضِيعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلاً- ‘যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম সমূহ সম্পাদন করে (আমরা তাদের পুরস্কৃত করি)। নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি সৎকর্ম করে, আমরা তার পুরস্কার বিনষ্ট করি না’ (কাহ্ফ-মাক্কী ১৮/৩০)।
প্রত্যেক মুমিন জান্নাত চায়। অধিকাংশ মুমিন এটিকে খুব কঠিন বলে মনে করেন। অথচ অল্প মেহনতেই জান্নাত পাওয়া সম্ভব। বস্ত্ততঃ জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের আকাংখা ব্যতীত সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আখেরাতে জওয়াবদিহিতার অনুভূতি এবং জান্নাত লাভের আকুতি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণেই মানুষ সৎকর্মের বদলে অসৎকর্মের দিকে ধাবিত হচ্ছে বেশী। ইসলাম মানুষকে সর্বদা ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধের আহবান জানায়। মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ ‘শ্রেষ্ঠ জাতি’ হিসাবে অভিহিত করার মূল কারণ এটাই (আলে ইমরান-মাদানী ৩/১১০)।
দরসে বর্ণিত আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ মুমিনের ছোট-বড় সকল সৎকর্মের পুরস্কার দিয়ে থাকেন এবং কোন সৎকর্মের পুরস্কার বিনষ্ট করেন না। ৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধ থেকে ফিরে মদীনার উপকণ্ঠে পৌঁছে তিনি বলেন,لَقَدْ تَرَكْتُمْ بِالْمَدِينَةِ أَقْوَامًا مَا سِرْتُمْ مَسِيرًا، وَلاَ أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَفَقَةٍ، وَلاَ قَطَعْتُمْ مِنْ وَادٍ، إِلاَّ وَهُمْ مَعَكُمْ فِيهِ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ يَكُونُونَ مَعَنَا، وَهُمْ بِالْمَدِينَةِ؟ فَقَالَ : حَبَسَهُمُ الْعُذْرُ- ‘মদীনায় তোমরা এমন একদল সাথীকে ছেড়ে এসেছিল, যারা তোমাদের সাথে তাবূকের সফরে, জিহাদে সম্পদ ব্যয়ে এবং (মদীনা থেকে তাবূক যাতায়াতের) দীর্ঘ সফরে তোমাদের সাথী ছিল। সাথীরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তারা মদীনায় থেকে কিভাবে আমাদের সাথে থাকল? জবাবে তিনি বললেন, সঙ্গত ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছিল’।[1] এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,مَا كَانَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ وَمَنْ حَوْلَهُمْ مِنَ الْأَعْرَابِ أَنْ يَّتَخَلَّفُوا عَنْ رَّسُولِ اللهِ وَلاَ يَرْغَبُوا بِأَنْفُسِهِمْ عَنْ نَفْسِهِ، ذَالِكَ بِأَنَّهُمْ لاَ يُصِيبُهُمْ ظَمَأٌ وَّلاَ نَصَبٌ وَّلاَ مَخْمَصَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَلاَ يَطَئُونَ مَوْطِئًا يَّغِيظُ الْكُفَّارَ وَلاَ يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلاً إِلاَّ كُتِبَ لَهُمْ بِهِ عَمَلٌ صَالِحٌ، إِنَّ اللهَ لاَ يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ- وَلاَ يُنْفِقُونَ نَفَقَةً صَغِيرَةً وَّلاَ كَبِيرَةً وَّلاَ يَقْطَعُونَ وَادِيًا إِلاَّ كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللهُ أَحْسَنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘মদীনাবাসী ও পার্শ্ববর্তী পল্লীবাসী বেদুঈনদের উচিত ছিল না আল্লাহর রাসূল থেকে পিছিয়ে থাকা এবং তাঁর জীবন থেকে নিজেদের জীবনকে অধিক প্রিয় মনে করা। কারণ আল্লাহর পথে তাদের যে তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও ক্ষুধা স্পর্শ করে এবং তাদের যেসব পদক্ষেপ কাফেরদের ক্রোধান্বিত করে ও শত্রুদের পক্ষ হ’তে যেসব কষ্ট তারা প্রাপ্ত হয়, তার বিনিময়ে তাদের জন্য সেটি সৎকর্ম হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের পুরস্কার বিনষ্ট করেন না’ (১২০)। ‘আর (আল্লাহর পথে) ক্ষুদ্র-বৃহৎ যাই-ই তারা ব্যয় করে এবং যত প্রান্তর তারা অতিক্রম করে, সবকিছু তাদের জন্য লিপিবদ্ধ হয়, যাতে আল্লাহ তাদের কৃতকর্ম সমূহের উত্তম বিনিময় দান করতে পারেন’ (তওবা-মাদানী ৯/১২০-২১)।
পরস্পরে হিংসা-হানাহানি, যিদ-হঠকারিতা ও মনুষ্যত্বহীনতার জাহেলিয়াতে ডুবে থাকা আরব জাতিকে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়েছিলেন। যা তাদের জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছিল। সেই সমাজে আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, হামযা, আববাস, ত্বালহা, যুবায়ের প্রমুখ বিশ্বসেরা মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের ও তাদের পরবর্তীদের নেতৃত্বে্ মুসলিম উম্মাহ বিশ্বনেতার আসনে সমাসীন হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিভাবে মরু বেদুঈনদের আক্বীদায় বিপ্লব এনেছিলেন, সে বিষয়ে কিছু হাদীছ ও ঘটনা আমরা নিম্নে তুলে ধরার প্রয়াস পাব।-
কিছু ঘটনা : (১) ওবায়দাহ আল-হুজায়মী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলেন, আমি বেদুঈনদের লোক। আপনি আমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে উপকৃত করেন। তিনি বললেন, اتَّقِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَلاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئاً وَلَوْ أَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِى إِنَاءِ الْمُسْتَسْقِى،... ‘আল্লাহকে ভয় করো। আর তোমরা অতি সামান্য সৎকর্মকেও তুচ্ছ মনে করো না। যদিও সেটি তোমার পানপাত্রের নীচের অবশিষ্ট পানি অপরকে পান করিয়েও হয়’।[2] মরু বেদুঈনরা ছিল অস্বচ্ছল ও অভাবী। তাই তাদেরকে তিনি এমন উপদেশ দিলেন, যেজন্য কোন অর্থ ব্যয় করতে হয় না।
(২) কৃষ্ণকায় হাবশী ক্রীতদাস বেলালকে একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,يَا بِلاَلُ حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَه فِي الْإِسْلاَم فَإِنِّي سَمِعت دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَىَّ الْجَنَّةِ، قَالَ : مَا عَمِلْتُ عَمَلاً أَرْجَى عِنْدِي أَنِّي لم أَتَطَهَّر طُهُورًا مِّنْ سَاعَةٍ مِّنْ لَيْلٍ وَلاَ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّيَ- ‘হে বেলাল, তুমি ইসলাম গ্রহণের পর এমন কি আমল কর যে, আমি তোমাকে জান্নাতে আমার আগে আগে জুতার আওয়ায শুনতে পেলাম? বেলাল বললেন, আমি যখনই ওযূ করি, তখনই তাহিইয়াতুল ওযূ দু’রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করি যতটুকু আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দেন’।[3]
(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِى بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطَّرِيقِ فَأَخَّرَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ- ‘জনৈক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাওয়ালা একটি ডাল দেখতে পেয়ে সেটিকে সরিয়ে দিল। এতে আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন’।[4]
(৪) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,غُفِرَ لِامْرَأَةٍ مِّومِسَةٍ مَرَّتْ بِكَلْبٍ عَلَى رَأْسِ رَكِيٍّ يَلْهَثُ كَادَ يَقْتُلُهُ الْعَطَشُ فَنَزَعَتْ خُفَّهَا فَأَوْثَقَتْهُ بِخِمَارِهَا فَنَزَعَتْ لَهُ مِنَ الْمَاءِ فَغُفِرَ لَهَا بِذَلِكَ- ‘একদিন বনু ইস্রাঈলের এক বেশ্যা নারী দেখল যে একটি কুকুর পিপাসায় হাসফাঁস করছে ও তার মৃত্যুর উপক্রম হয়েছে। তখন সে তার ওড়নার মাথায় চামড়ার মোযা বেঁধে কূয়ায় ফেলে পানি ভরে উঠিয়ে আনল এবং কুকুরকে পান করালো। তাতে কুকুরটি বেঁচে গেল। এতে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন’। বলা হ’ল আমাদের চতুস্পদ পশু সমূহ আছে। তাদের সেবা করায় কি আমরা কোন নেকী পাব? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, فِى كُلِّ ذَاتِ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أَجْرٌ- ‘প্রত্যেক তাজা কলিজার বিনিময়ে নেকী রয়েছে’।[5] পক্ষান্তরে জনৈকা মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখে খেতে না দেওয়ায় বা ছেড়ে না দেওয়ায় মারা গেলে সে জাহান্নামে শাস্তি প্রাপ্ত হয়’।[6] এতে প্রমাণিত হয় যে, তুচ্ছ কারণে মানুষ জাহান্নামে যায়।
(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহ কবয করতে গিয়ে ফেরেশতারা তাকে বলল, أَعَمِلْتَ مِنَ الْخَيْرِ شَيْئًا؟ قَالَ لاَ، قَالُوا : تَذَكَّرْ، قَالَ : كُنْتُ أُدَايِنُ النَّاسَ فَآمُرُ فِتْيَانِي أَنْ يُنْظِرُوا الْمُعْسِرَ، وَيَتَجَوَّزُوا عَنِ الْمُوسِرِ، قَالَ : قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ : تَجَوَّزُوا عَنْهُ- ‘তুমি কি কোন সৎকর্ম করেছ? সে বলল, না। তারা বলল, মনে করে দেখ। তখন সে বলল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম এবং আমার ছেলেদের বলতাম, যেন তারা ঋণ পরিশোধে অসমর্থ ব্যক্তিদের অবকাশ দেয় এবং সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে’। এতে আল্লাহ খুশী হয়ে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন’।[7]
(৬) কৃষ্ণকায় নিগ্রো হাবশী মহিলা উম্মে মেহজান আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে মসজিদ ঝাড়ু দিত ও সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখত। এক রাতে মহিলাটি মারা গেল। তখন লোকেরা রাতেই দ্রুত তার কাফন-দাফন সম্পন্ন করল। কয়েকদিন পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসে জিজ্ঞেস করলেন, ঐ মহিলাটি কোথায়? লোকেরা বলল, সে মারা গেছে। তিনি বললেন, কেন তোমরা আমাকে জানাওনি? লোকেরা বিষয়টিকে ছোট মনে করেছিল। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে তার কবর দেখিয়ে দাও! অতঃপর তিনি সেখানে গেলেন। তার জানাযা করলেন ও তার জন্য দো‘আ করলেন। অতঃপর বললেন,إِنَّ هَذِهِ الْقُبُورَ مَمْلُوءَةٌ ظُلْمَةً عَلَى أَهْلِهَا وَإِنَّ اللهَ يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِي عَلَيْهِمْ- ‘এখানকার কবরগুলি অন্ধকারে পূর্ণ ছিল। আমার ছালাতের কারণে আল্লাহ সেগুলিকে আলোকিত করে দিয়েছেন’।[8]
(৭) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল!
إِنَّ فُلاَنَةً تُذْكَرُ مِنْ كَثْرَةِ صَلاَتِهَا وَصِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا غَيْرَ أَنَّهَا تُؤْذِي جِيرَانَهَا بِلِسَانِهَا، قَالَ : هِيَ فِي النَّارِ، قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ فَإِنَّ فُلاَنَةً تُذْكَرُ قِلَّةَ صِيَامِهَا وَصَدَقَتِهَا وَصَلاَتِهَا وَإِنَّهَا تَصَدَّقُ بِالْأَثْوَارِ مِنَ الْأَقِطِ وَلاَ تؤذي جِيرَانَهَا، قَالَ : هِيَ فِي الْجَنَّةِ- ‘অমুক মহিলা ছালাত ও ছিয়াম আদায়ে এবং ছাদাক্বা দানের জন্য প্রসিদ্ধ। কিন্তু সে তার যবান দিয়ে প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ মহিলা জাহান্নামী। তখন ঐ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! অমুক মহিলা ছিয়াম, ছালাত ও ছাদাক্বা দানে কম প্রসিদ্ধ। সে শুধু কয়েক টুকরা পনির আল্লাহর রাস্তায় দান করে। কিন্তু সে তার প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়না। রাসূল (ছাঃ) বললেন, সে জান্নাতী’।[9] অত্র হাদীছে প্রমাণিত হয় যে, অল্পতেই জাহান্নাম ও অল্পতেই জান্নাত।
(৮) একদিন জনৈক আনছার ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এলে তিনি বললেন, লোকটি জান্নাতী। ব্যক্তিটি পরপর তিন দিন এল এবং রাসূল (ছাঃ) তিন দিন তার সম্পর্কে একই কথা বললেন। তখন তরুণ ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর তার পিছু নিলেন। অতঃপর তার বাড়ীতে পৌঁছে বললেন, আমি তিনদিন আপনার বাড়ীতে মেহমান থাকব। তিনি থাকলেন এবং ঐ ব্যক্তির সকল কাজ-কর্ম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। বিদায়ের দিন তিনি বললেন, হে ভাই! আমি আপনার মধ্যে বিশেষ কোন সৎকর্ম দেখলাম না, যেজন্য রাসূল (ছাঃ) আপনাকে তিনদিনই ‘জান্নাতী’ বললেন। লোকটি বলল,مَا هُوَ إِلاَّ مَا رَأَيْتَ غَيْرَ أَنِّى لاَ أَجِدُ فِى نَفْسِى لأَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ غِشًّا وَلاَ أَحْسُدُ أَحَداً عَلَى خَيْرٍ أَعْطَاهُ اللهُ إِيَّاهُ، فَقَالَ عَبْدُ اللهِ : هَذِهِ الَّتِى بَلَغَتْ بِكَ وَهِىَ الَّتِى لاَ نُطِيقُ- ‘আমি অন্যদের মতোই সাধারণ সৎকর্ম করে থাকি। তবে আমি কারুর উপর আল্লাহর বিশেষ কোন নে‘মত দেখলে সেজন্য তার প্রতি কোন হিংসা পোষণ করিনা’। তখন আব্দুল্লাহ বললেন, সম্ভবতঃ একারণেই আপনি এই সুসংবাদ পেয়েছেন। যা আমরা পারিনা’ (আহমাদ হা/১২৭২০, সনদ ছহীহ)।
(৯) আবু যার গিফারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ- ‘সামান্য নেকীর কাজকেও তুমি ছোট মনে করো না। এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে হ’লেও’।[10]
(১০) আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন,يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ- ‘হে মুমিন নারীগণ! তোমরা প্রতিবেশীকে বকরীর পায়ের দুই ক্ষুরের মধ্যেকার সামান্য গোশত দিয়ে সাহায্য করাকেও তুচ্ছ মনে করো না’।[11] উম্মে বুজাইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেন,رُدُّوا السَّائِلَ وَلَوْ بِظِلْفٍ مُحْرَقٍ- ‘পোড়ানো ক্ষুর হ’লেও সায়েলকে দাও’।[12]
(১১) আদী বিন হাতেম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَن يَّسْتَتِرَ مِنَ النَّارِ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَلْيَفْعَلْ- ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একটা খেজুরের টুকরা দিয়েও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে, তবে সে যেন তা করে’।[13]
(১২) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলতেন,يَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ وَمُحَقِّرَاتِ الذُّنُوبِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِباً- ‘হে আয়েশা! তুচ্ছ গোনাহ হ’তেও বেঁচে থাকো। কেননা উক্ত বিষয়েও আললাহর পক্ষ হ’তে কৈফিয়ত তলব করা হবে’।[14]
(১৩) হযরত জাবের ও হুযায়ফা (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, كُلُّ مَعْرُوْفٍ صَدَقَةٌ- ‘প্রত্যেক সৎকর্মই ছাদাক্বা’।[15]
(১৪) হযরত মালেক ইবনুল হুওয়াইরিছ (রাঃ) বলেন,صَعِدَ رَسُولُ اللهِ -صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- الْمِنْبَرَ فَلَمَّا رَقِيَ عَتَبَةً قَالَ آمِينَ ثُمَّ رَقِيَ عَتَبَةً أُخْرَى فقَالَ آمِينَ ثُمَّ رَقِيَ عَتَبَةً ثَالِثَةً فقَالَ آمِينَ ثُمَّ قَالَ أَتَانِي جِبْرِيلُ فقَالَ يَا مُحَمَّدُ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْتُ آمِينَ قَالَ وَمَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فَدَخَلَ النَّارَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْتُ آمِينَ فقَالَ وَمَنْ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ قُلْ آمِينَ فَقُلْتُ آمِينَ-
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর ১ম ধাপে পা দিয়ে বললেন, আমীন! ২য় ধাপে পা দিয়ে বললেন, আমীন! এরপর ৩য় ধাপে পা দিয়ে বললেন, আমীন! লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে তিন ধাপে তিন বার ‘আমীন’ বলতে শুনলাম। তিনি বললেন, আমি যখন ১ম ধাপে উঠলাম, তখন জিব্রীল আমাকে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল। অতঃপর মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হ’ল না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আমীন’! ২য় ধাপে উঠলে জিব্রীল বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে পেল। অথচ সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করল না, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আমীন! অতঃপর ৩য় ধাপে পা দিলে তিনি বললেন, যার নিকটে তোমার কথা বলা হ’ল, অথচ সে তোমার উপরে দরূদ পাঠ করল না। অতঃপর সে মারা গেল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। আমি বললাম, আমীন’![16] দেখার বিষয় যে, প্রথম দুই ধাপে ‘আমীন’ বললেও ৩য় ধাপে রাসূল (ছাঃ) ‘আমীন’ বলেননি। জিব্রীল বলতে বললে তিনি ‘আমীন’ বলেন। কারণ এটি ছিল তাঁর নিজের উপর দরূদ পড়ার বিষয়।
(১৫) হযরত আনাস বিন মালেক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,إِنَّكُمْ لَتَعْمَلُونَ أَعْمَالاً هِىَ أَدَقُّ فِى أَعْيُنِكُمْ مِنَ الشَّعَرِ، إِنْ كُنَّا نَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُوبِقَاتِ- ‘তোমরা এমন সব কাজ করে থাক, যা তোমাদের চোখে চুল থেকেও সূক্ষ্ম মনে হয়। কিন্তু নবী (ছাঃ)-এর যামানায় আমরা এগুলোকে ধ্বংসকর মনে করতাম’।[17]
(১৬) হযরত আদী বিন হাতেম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَا مِنْكُم أَحَدٍ إِلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ وَلاَ حِجَابٌ يَحْجُبُهُ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلَا يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ مِنْ عَمَلِهِ وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إِلاَّ مَا قَدَّمَ وَيَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلاَ يَرَى إِلاَّ النَّارَ تِلْقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ- ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক অতিসত্বর বাক্যালাপ করবেন। তার ও আল্লাহর মাঝখানে কোন দোভাষী থাকবে না এবং কোন পর্দা থাকবে না। এরপর সে তাকাবে ডান দিকে, তখন তার অতীত কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। অতঃপর তাকাবে বাম দিকে, তখনো তার কৃতকর্ম ছাড়া আর কিছুই দেখবে না। তখন সে সামনে তাকাবে, কিন্তু সেখানে সে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো একটা খেজুরের টুকরা দিয়ে হ’লেও’। বর্ধিত বর্ণনায় এসেছে, ‘নির্দোষ কথা দ্বারা হ’লেও’।[18]
(১৭) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إنّ الصَّدَقَةَ لَتُطفِئُ عن أهْلِها حَرَّ القُبورِ، وإنّما يَستَظِلُّ المؤمنُ يومَ القيامةِ في ظِلِّ صَدَقَتِه-
‘নিশ্চয় ছাদাক্বা কবরের উত্তাপ নিভিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার ছাদাক্বার ছায়াতলে আশ্রয় পাবে’ (ত্বাবারাণী কাবীর হা/৭৮৮; ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)। অতএব মৃত্যুর পূর্বেই যাকে আল্লাহ যে রিযিক দান করেছেন, তা থেকে যথাসম্ভব ব্যয় করুন ও নিজের কবরের উত্তাপ নিভানোর চেষ্টা করুন!
(১৭) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, একদিন জনৈক বেদুঈন এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বলল,
دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ، قَالَ : تَعْبُدُ اللهَ وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ، قَالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُ، فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَّنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِّنْ أَهْلِ الْجنَّة فَلْينْظر إِلَى هَذَا- وفى رواية : أَفْلح الرجلُ إِن صَدَقَ-
‘আপনি আমাকে এমন আমলের সন্ধান দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। ফরয ছালাত আদায় কর। ফরয যাকাত আদায় কর ও রামাযানের ছিয়াম পালন কর’। একথা শুনে বেদুঈন বলল, যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর চেয়ে কিছু বেশীও করব না, কিছু কমও করব না’। (রাবী আবু হুরায়রা বলেন) অতঃপর যখন লোকটি চলে গেল, তখন রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যদি কেউ কোন জান্নাতী ব্যক্তিকে দেখে খুশী হ’তে চায়, তবে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, লোকটি সফলকাম হবে, যদি সে সত্য বলে থাকে’।[19] হাদীছটির কোন কোন বর্ণনায় হজ্জ বা ছিয়ামের উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারীদের সেটি বর্ণনা করা বা না করার ভিত্তিতে (মিরক্বাত)। যুগে যুগে জান্নাতী বান্দাদের প্রকৃত লক্ষণ হবে এটাই যে, তারা বলবে আমি কুরআন-হাদীছে যা আছে তার চাইতে বাড়াবোও না, কমাবোও না। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন!
(১৮) হযরত আবু উমামাহ বাহেলী (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের ভাষণে আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে তিনি বলেন,اِتَّقُوا اللهَ رَبَّكُمْ وَصَلُّوْا خَمْسَكُمْ وَصُوْمُوْا شَهْرَكُمْ وَأَدُّوْا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ وَأَطِيْعُوْا ذَا أَمْرِكُمْ تَدْخُلُوْا جَنَّةَ رَبِّكُمْ- (১) ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় কর (২) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় কর (৩) রামাযান মাসের ছিয়াম পালন কর (৪) তোমাদের সম্পদের যাকাত প্রদান কর এবং (৫) আমীরের আনুগত্য কর; তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ কর’।[20] অত্র হাদীছে আমীরের আনুগত্যকে ছালাত, ছিয়াম, যাকাত ইত্যাদি ফরয ইবাদতের সাথে যুক্ত করে বলা হয়েছে এবং একে জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
পরিশেষে বলব, সৎকর্ম ছোট হ’লেও তাকে ছোট মনে করা ঠিক নয়। তাই যত ছোটই হোক, সর্বদা সৎকর্মকেই জীবনের বৈশিষ্ট্য ও প্রধান নিদর্শন হিসাবে গ্রহণ করা উচিৎ। আল্লাহ তুমি আমাদের অন্তরে জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের আকুলতা সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও! -আমীন!
[1]. আবুদাঊদ হা/২৫০৮; বুখারী হা/২৮৩৯ রাবী আনাস (রাঃ)।
[2]. আহমাদ হা/২০৬৫২; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫২২; ছহীহাহ হা/৭৭০।
[3]. বুখারী হা/১১৪৯; মুসলিম হা/২৪৫৮; মিশকাত হা/১৩২২।
[4]. বুখারী হা/৬৫২; মুসলিম হা/১৯১৪ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[5]. বুখারী হা/৩৩২১; মুসলিম হা/২২৪৪; মিশকাত হা/১৯০২।
[6]. বুখারী হা/২৩৬৫; মুসলিম হা/২২৪২; মিশকাত হা/১৯০৩।
[7]. বুখারী হা/২০৭৭; মুসলিম হা/১৫৬১; মিশকাত হা/২৭৯১ রাবী হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)।
[8]. বুখারী হা/৪৫৮; মুসলিম হা/৯৫৬; মিশকাত হা/১৬৫৯ রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)।
[9]. আহমাদ হা/৯৬৭৩; মিশকাত হা/৪৯৯২; ছহীহাহ হা/১৯০।
[10]. মুসলিম হা/২৬২৬, তিরমিযী হা/১৮৩৩, মিশকাত হা/১৮৯৪ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ।
[11]. বুখারী হা/২৫৬৬; মুসলিম হা/১০৩০; মিশকাত হা/১৮৯২।
[12]. আহমাদ হা/১৬৬৯৯; নাসাঈ হা/২৫৬৫; মিশকাত হা/১৯৪২।
[13]. মুসলিম হা/১০১৬ ‘যাকাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২০।
[14]. নাসাঈ, ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৩, মিশকাত হা/৫৩৫৬ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, রাবী আয়েশা (রাঃ); ছহীহাহ হা/২৭৩১।
[15]. বুখারী হা/৬০২১, মুসলিম হা/১০০৫, মিশকাত হা/১৮৯৩ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘ছাদাক্বার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৬।
[16]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪০৯, ছহীহ লেগায়রিহী।
[17]. বুখারী হা/৬৪৯২; মিশকাত হা/৫৩৫৫ ‘তাওয়াক্কুল ও ছবর’ অনুচ্ছেদ।
[18]. বুখারী হা/৭৫১২; মুসলিম হা/১০১৬; মিশকাত হা/৫৫৫০।
[19]. বুখারী হা/১৩৯৭, ৪৬; মুসলিম হা/১৪, ১১; মিশকাত হা/১৪, ১৬।
[20]. তিরমিযী হা/৬১৬; আহমাদ হা/২২২১৫; মিশকাত হা/৫৭১; ছহীহাহ হা/৮৬৭।