আল্লাহ বলেন, يَآ أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلاً سَدِيدًا- يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল’। ‘তাহ’লে তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দিবেন ও তোমাদের পাপ সমূহ ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে মহা সাফল্য অর্জন করে’ (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)।
‘সঠিক কথা’ হ’ল, যা বলার সময় আল্লাহকে ভয় করা হয় এবং যাতে কোনরূপ কপটতার আশ্রয় নেওয়া হয় না। ‘তাহ’লে তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে সংশোধন করে দিবেন’ অর্থ ভুল হ’লেও সেটি ক্ষমা করা হবে এবং কর্ম সংশোধিত হবে। ‘সে ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে’ অর্থ দুনিয়া ও আখেরাতে সে ব্যক্তি মহা সাফল্য অর্জন করে। তবে আখেরাতের সফলতা সুনিশ্চিত এবং সেটিই বড় সফলতা। আর দুনিয়াবী সফলতা ক্ষণিকের। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাফের-মুনাফিকরাই পেয়ে থাকে। যেমন নমরূদ-ফেরাঊন ও যুগে যুগে তাদের দোসররা পেয়েছে ও পেয়ে চলেছে। কিন্তু আখেরাতের সফলতা চিরস্থায়ী এবং দুনিয়াতে এর সম্মান ও মর্যাদাও চিরস্থায়ী। যেমন নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও সকল যুগে নবীগণের সনিষ্ঠ অনুসারীদের সফলতা। এমনকি দুনিয়ায় তাদের বাহ্যিক কোন ব্যর্থতাও চূড়ান্ত বিচারে সফলতার সোপান হিসাবে বিবেচিত হয়। যেমন বহু নবী-রাসূল তাদের বিরোধীদের হাতে নিহত হয়েছেন এবং তাদের যথার্থ অনুসারীগণ নির্যাতিত হয়েছেন। কিন্তু মানুষ যুগে যুগে তাদেরই অনুসরণ করেছে এবং তাঁরাই সকল যুগে সম্মানিত ও বরিত হয়েছেন। অতএব আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও আখেরাতের সফলতাই হ’ল প্রকৃত সফলতা (ছফ ৬১/১১; তওবা ৯/৭২)।
বাক স্বাধীনতার অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে স্বাধীনভাবে নিজের বক্তব্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বুঝায়। যা অন্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করেনা। শয়তানের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে কোন কাজ করলে বা কোন কথা বললে সেটি বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হিসাবে গণ্য হবেনা, বরং সেটি স্বেচ্ছাচারিতা ও পশুত্বের স্বাধীনতা হবে। যা মানুষের সমাজে কাম্য নয়।
বাক স্বাধীনতার গুরুত্ব : মানুষকে আল্লাহ সেরা সৃষ্টির মর্যাদায় ভূষিত করেছেন (বনু ইস্রাঈল ১৭/৭০)। আর আল্লাহ একমাত্র মানুষকেই কথা বলার ক্ষমতা দান করেছেন (রহমান ৫৫/২)। অন্য কোন সৃষ্টিকে আল্লাহ এই ক্ষমতা দেননি। মানুষকে এই বাক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে আল্লাহর দেখানো পথে নিজের জীবন ও সমাজ পরিচালনার জন্য। প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহ পৃথক পৃথক মেধা, রুচি, শক্তি ও জ্ঞান দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যার মাধ্যমে একে অপর থেকে কাজ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে সমাজ পরিচালনা করতে পারে (যুখরুফ ৪৩/৩২)। সেকারণ প্রত্যেককে স্ব স্ব মেধা ও রুচির বিকাশ ঘটানোর স্বাধীনতা তিনি দিয়েছেন। এটি স্বভাবগত। পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব মানব সন্তানের উক্ত স্বভাবগত মেধার বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ সৃষ্টি করা ও তার পিছনে পূর্ণ সহযোগিতা করা। মানব সন্তান স্বাধীন হিসাবে জন্ম লাভ করে। শৈশবেই তার রুচি ও মেধার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। সে কোন অন্যায় করলেও তা ধর্তব্য হয়না। সাবালক হওয়ার পর থেকে সেগুলি ধর্তব্য হয়। এই সময় তাকে সঠিক-বেঠিক চিন্তা করে কাজ করতে হয়। ফলে তার বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত হ’তে থাকে। এখানে গিয়েই কুরআন তাকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়। যার বিপরীত করলে সে পথভ্রষ্ট হয়। তাই ইসলামে বাক স্বাধীনতা অর্থ সত্য ও সঠিক কথার স্বাধীনতা।
অন্যদের বাক স্বাধীনতা : ইসলামের বাইরে অন্যদের বাক স্বাধীনতা মূলতঃ নিয়ন্ত্রণহীন। ধর্ম ও সমাজের নামে নিজেদের মনগড়া বিধান সমূহ রচিত হ’লেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মনেতা, সমাজনেতা ও ধনিক শ্রেণীর স্বার্থে ব্যবহৃত হয় এবং দুর্বল শ্রেণী বঞ্চিত হয়। এই সমাজে বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা কার্যত স্বেচ্ছাচার মূলক। এদের নিকট ন্যায়-অন্যায়ের কোন অভ্রান্ত ও চূড়ান্ত মানদন্ড নেই।
উদাহরণ স্বরূপ ইসলাম-পূর্ব যুগে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র দাস-দাসী রূপে মানুষের ক্রয়-বিক্রয় হ’ত। নারীদের কোন বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিলনা। বিবাহে তাদের মতামতের কোন গুরুত্ব ছিলনা। তারা বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারী ছিলনা। তারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেতনা। বিধবা বিবাহ ছিলনা। এমনকি হিন্দু সমাজে বিধবা নারীদের মৃত স্বামীর সঙ্গে জ্বলন্ত চিতায় একই সাথে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হ’ত। ‘সতীদাহ’ বলে যা ধর্মীয় বিধান হিসাবে চালু ছিল। যাতে নারীরা ও তাদের অভিভাবকরা স্বর্গসুখ লাভের উদ্দেশ্যে খুশী মনে এই অমানবিক ও নিষ্ঠুর কাজে রাযী হয়ে যায়। কন্যা সন্তানকে জঞ্জাল মনে করা হ’ত। আর সেজন্য তাকে জন্মের পরপরই গর্তে পুঁতে বা অন্যভাবে মেরে ফেলা হ’ত। বর্তমানে ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে ভ্রুণ হত্যা, গর্ভপাত, গর্ভনিরোধ ও গর্ভভাড়া প্রভৃতি অমানবিক কাজ আইনের নামে সিদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, পূর্বকালে যেমন কোন দেশে ভাল-মন্দ আইনের কোন চূড়ান্ত মানদন্ড ছিলনা, আজও সেটা নেই। বরং সেখানে বেনামীতে স্বেচ্ছাচারিতাই চূড়ান্ত মানদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্বকালের বাক স্বাধীনতা : পূর্বকালে ধর্ম ও সমাজনেতাদের রচিত বিধান সমূহকেই মানুষের জন্য চূড়ান্ত বিধান হিসাবে গৃহীত হ’ত এবং তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করা যেত না। ক্ষমতাধর শ্রেণী দুর্বল শ্রেণীর প্রতি যথেচ্ছ ব্যবহার করত। তাদেররকে নিজেদের দাসত্বের নিগড়ে আবদ্ধ রাখত। বাক স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে সেখানে কিছুই ছিলনা।
প্রাচীন গ্রীসের City state বা নগর রাষ্ট্রগুলিকেই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ পৃথিবীর আদি রাষ্ট্র বলে ধারণা করেন। কারণ ঐগুলি ছিল দু’তিন হাযার জনগোষ্ঠীর একেকটি গ্রামের মত। যারা পরস্পরে প্রত্যক্ষ আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে শাসনকার্য চালাতেন। একে আদি গণতন্ত্র বলা হচ্ছে। কিন্তু এই প্রত্যক্ষ শাসননীতিই ছিল কথিত নগররাষ্ট্রের সবচেয়ে দুর্বল দিক। কথায় বলে ‘অধিক সন্ন্যাসী গাজন নষ্ট’। এথেন্সের নগররাষ্ট্রের অনধিক ৫২৫ জনের জুরি বোর্ডের অধিকাংশ যখন সেদেশের জ্ঞানীকুল শিরোমণি সক্রেটিসকে নিজ হাতে বিষপানে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিলেন, তখন তাঁর শিষ্য প্লেটো (খৃ. পূ. ৪২৮-৩৪৮) এই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারালেন। তবে ‘জ্ঞানই পূণ্য’ এ মৌলিক বিষয়ে দু’জনে ছিলেন এক ও অভিন্ন। কারণ তাদের কাছে অহি-র জ্ঞান ছিল না।
বর্তমান কালের বাক স্বাধীনতা : বর্তমান যুগের দলীয় গণতন্ত্র বাক স্বাধীনতা হরণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে। যেখানে শাসক দলের মতি-মর্যিই সব ব্যাপারে চূড়ান্ত হিসাবে গণ্য হয়। বিরোধী কোন মতই তারা সহ্য করেন না। কারণ প্রাচীন কালের ন্যায় তাদের কাছে চূড়ান্ত সত্য কোন মানদন্ড নেই। বর্তমান গণতন্ত্রে দলনেতা সকল কৈফিয়তের ঊর্ধ্বে। এমনকি সেখানে নিজ দলীয় এমপি-মন্ত্রীদেরও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ ধারাটি এমপিদের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। সেখানে (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, ‘সংসদে (যদি কেউ) দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে’। ১৭ই এপ্রিল ২০১৭ সালে অনুচ্ছেদটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালত তা খারিজ করে দেয়।[1] ফলে গণতন্ত্রের স্বরূপ একেক দেশে একেক রকম। আমেরিকার গণতন্ত্রে মূলতঃ ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভিত্তিক। সেখানে পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়না। ইংল্যান্ড ও জাপানে সংসদীয় রাজতন্ত্র চলমান। চীনের গণতন্ত্র একদলীয় কমিউনিস্ট পার্টির হাতেগণা কয়েকশ’ প্রতিনিধির মতামত ভিত্তিক। চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া সব প্রেসিডেন্ট শাসিত দেশ। অথচ সবই গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে পরিচিত। যদিও ঐসব দেশে বাস্তবে জনমতের কোন মূল্য নেই। বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ বলে পরিচিত ভারতের অবস্থা সবচাইতে শোচনীয়। সেখানে এমনকি কৃষকদের দাবী আদায়ের জন্য রাজধানীতে গিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়। অথচ গণতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রীর টনক নড়ে না। বাংলাদেশেও একইভাবে গণতন্ত্র রাস্তায় লুটায়।
বাংলাদেশে বিগত সরকার সমূহের ৫৭ ধারা, ১৪৪ ধারা, ১৫৭ ধারা; অতঃপর বর্তমান সরকারের আইসিটি-আইন-২০১৩, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, ডিজিটাল নিরাপত্তা বিধিমালা-২০২০ প্রভৃতি বিধান সমূহ জনগণের বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। কেউ কারু বই পড়ে বা বক্তব্য শুনে কোন অন্যায় করলে লেখক বা বক্তাকে উদ্বুদ্ধকারী হিসাবে দায়ী করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। ফলে মানুষ এখন হক কথা বলতে ভয় পাচ্ছে এবং সর্বদা আতংকে দিন কাটাচ্ছে। অথচ ব্যক্তি যতক্ষণ নিজে অপরাধ না করে, ততক্ষণ তাকে অপরাধী বলা যায়না বা তাকে শাস্তিও দেওয়া যায়না। দুনিয়ার সকল আইনে সর্বদা এটাই রয়েছে। বাংলাদেশেও রাঘব-বোয়ালদের না ধরে চুনোপুঁটিদের ধরার বা মিথ্যা বন্দুকযুদ্ধের নামে হিরোইন ও ইয়াবা বাহকদের এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিনা বিচারে গুম-খুন ও অপহরণ করা হয়। বাস্তবে উক্ত আইনটি রাজনৈতিক বিরোধীদের কন্ঠ রোধ করার জন্য প্রয়োগ করা হয়। ফলে বাক স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এক্ষণে ইসলামে বাক স্বাধীনতা লক্ষ্য করুন।-
ইসলামে বাক স্বাধীনতা : ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা তার জন্মগত অধিকার ও স্বভাবগত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে সে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির স্বার্থে ব্যয় করবে। যা কখনোই গোপন করবে না। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَآ أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْم بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللاَّعِنُونَ- إِلاَّ الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ- ‘আমরা কিতাবের মধ্যে মানব জাতির জন্য স্পষ্ট বিধান ও পথনির্দেশ সমূহ বিবৃত করে নাযিল করার পর যারা সেগুলিকে গোপন করে, তাদেরকে লা‘নত করেন আল্লাহ ও সকল লা‘নতকারীগণ’। ‘তবে যারা তওবা করে ও সংশোধন করে নেয় এবং সত্য প্রকাশ করে দেয়, আমি তাদের তওবা কবুল করি। বস্ত্ততঃ আমি সর্বাধিক তওবা কবুলকারী ও দয়ালু’ (বাক্বারাহ ২/১৫৯-৬০)।
আয়াতটি আহলে কিতাবদের সম্পর্কে নাযিল হয়। যারা তাওরাত-ইনজীলে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ গোপন করত (আ‘রাফ ১৫৭, ইবনু কাছীর)। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন,وَلَوْلاَ آيَتَانِ فِى كِتَابِ اللهِ مَا حَدَّثْتُ حَدِيثًا، যদি আল্লাহর কিতাবে দু’টি আয়াত না থাকত, তাহ’লে আমি কোন হাদীছ বর্ণনা করতাম না। অতঃপর তিনি উপরোক্ত আয়াত দু’টি পাঠ করেন।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে দুই পাত্র ইলম মুখস্থ করেছি। যার মধ্যে এক পাত্র আমি তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। অপর পাত্রটি যদি ছড়িয়ে দেই, তাহ’লে এ হলকুম অর্থাৎ গলা কাটা যাবে’।[3] এর দ্বারা তিনি হিজরী ষাটের দশকের শুরুর দিকের অত্যাচারী শাসকদের প্রতি ইঙ্গিত করতেন। বাস্তবে দেখা গেল ষাটের দশকের শুরুতে ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া ক্ষমতায় (৬০-৬৪ হি.) আসার এক বছর পূর্বেই ৫৯ হিজরীতে আবু হুরায়রা (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন (মিরক্বাত, মির‘আত)। তিনি বলতেন রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سُئِلَ عَنْ عِلْمٍ عَلِمَهُ ثُمَّ كَتَمَهُ أُلْجِمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِّنْ نَارٍ- ‘যে ব্যক্তি তার জানা কোন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়, অতঃপর তা গোপন করে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেওয়া হবে’।[4] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ) বলেন, أَفْضَلَ الْجِهَادِ كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائِرٍ- ‘সর্বোত্তম জিহাদ হ’ল যালেম শাসকের নিকট হক কথা বলা’।[5] এটি খুবই ঝুঁকির বিষয়। তবুও যেসব আলেম সর্বদা হক কথা বলেন, তাদের পুরস্কার সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِنَّ الْعَالِمَ يَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ وَالْحِيتَانُ فِي جَوْفِ الْمَاءِ، وَإِنَّ فَضْلَ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ، وَإِنَّ الْعُلَمَاءَ وَرَثَةُ الْأَنْبِيَاءِ، ‘নিশ্চয়ই আলেমের জন্য আসমানে ও যমীনে যারা আছে সবাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মধ্যেকার মাছ সমূহ। আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর যেমন পূর্ণচন্দ্রের মর্যাদা তারকারাজির উপর। আর আলেমগণ হচ্ছেন নবীগণের ওয়ারিছ’।[6]
হক কথা বলার মাধ্যমে মুমিন ইহকালে ও পরকালে সম্মান লাভ করে। অন্য পন্থায় সম্মান লাভ করতে চাইলে আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করবেন। যেমন তিনি বলেন,وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لاَ يَعْلَمُونَ- ‘আর সম্মান তো কেবল আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের এবং মুমিনদের জন্য। কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না’ (মুনাফিকূন ৬৩/৮)। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরোক্ত বাণী সমূহের কারণেই ছাহাবায়ে কেরাম ও সত্যনিষ্ঠ মুমিনগণ সর্বদা স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করে গেছেন ও হক কথা বলে গেছেন।
এবারে ইসলামে বাক স্বাধীনতার কিছু নমুনা দ্রষ্টব্য।-
(১) আনাস বিন মালেক (রাঃ) বলেন, ‘একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হাঁটছিলাম। তখন তাঁর গায়ে একখানা গাঢ় পাড়যুক্ত নাজরানী চাদর ছিল। এক বেদুঈন তাঁকে পেয়ে চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আনাস বলেন, আমি নবী করীম (ছাঃ)-এর কাঁধের দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, জোরে টান দেওয়ার কারণে সেখানে চাদরের পাড়ের দাগ বসে গেছে। তারপর বেদুঈনটি বলল, হে মুহাম্মাদ! তোমার কাছে আল্লাহর দেওয়া যে সম্পদ আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার জন্য আদেশ কর। তখন নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন এবং তাকে কিছু দান করার জন্য আদেশ দিলেন’।[7]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ঐ সময় রাসূল (ছাঃ) এক জানাযায় ছিলেন এবং তাঁর সাথে হযরত আবুবকর, ওমর, ওছমান ও আলী (রাঃ) সহ অনেক ছাহাবী ছিলেন। এমতাবস্থায় উক্ত বেদুঈন এসে উপরোক্ত দাবী করে এবং চাদর ধরে হেঁচকা টান মারে। তাতে প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হয়ে ওমর (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর শত্রু! তুমি আল্লাহর রাসূলের সঙ্গে এমন বেআদবী করছ? যদি রাসূল (ছাঃ) এখানে না থাকতেন, তাহ’লে এই তরবারি দিয়ে আমি তোমার গর্দান উড়িয়ে দিতাম! এ সময় রাসূল (ছাঃ) ধীরস্থিরভাবে ওমরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। অতঃপর বলেন, হে ওমর! আমরা তোমার নিকট থেকে আশা করেছিলাম যে, তুমি আমাকে তার দাবীটি সত্বর পূরণের কথা বলবে এবং তাকে ভদ্র ব্যবহার শিক্ষা দিবে। তুমি যাও তার দাবী পূরণ কর এবং তাকে অন্যদের চাইতে ২০ ছা‘ খাদ্যবস্ত্ত বেশী দাও’।[8]
(২) ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির দু’টি বিষয় মুসলিম কাফেলার অন্তরে দারুণভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল, যা তাদের হৃদয়কে দুঃখে ও বেদনায় ভারাক্রান্ত করে ফেলেছিল। যেখানে চারটি ধারার দু’টি ছিল, (ক) মুহাম্মাদ এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই সঙ্গী-সাথীসহ মদীনায় ফিরে যাবেন’ (বুখারী হা/৩১৮৪; ২৭৩১)। (খ) কুরায়েশদের কোন লোক পালিয়ে মুহাম্মাদের দলে যোগ দিলে তাকে ফেরৎ দিতে হবে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের কেউ কুরায়েশদের নিকটে গেলে তাকে ফেরৎ দেওয়া হবে না’।[9]
তখন সকলের মুখপাত্র স্বরূপ ওমর ফারূক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে নিম্নোক্ত বাদানুবাদ করেন। ওমর বলেন, হে আল্লাহর রাসূল!أَلَسْنَا عَلَى الْحَقِّ وَهُم عَلَى الْبَاطِلِ- ‘আমরা কি হক-এর উপরে নই এবং তারা বাতিলের উপরে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। ওমর বললেন, أَلَيْسَ قَتْلاَنَا فِي الْجَنَّةِ وَقَتْلاَهُمْ فِي النَّارِ؟ ‘আমাদের নিহতেরা কি জান্নাতে নয় এবং তাদের নিহতেরা জাহান্নামে? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। ওমর বললেন, তাহ’লে কেন আমরা দ্বীনের ব্যাপারে ছাড় দেব এবং ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ এখনো আমাদের ও তাদের মাঝে কোনরূপ ফায়ছালা করেননি? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন,يَا ابْنَ الْخَطَّابِ، إِنِّى رَسُولُ اللهِ، وَلَنْ يُضَيِّعَنِى اللهُ أَبَدًا- ‘হে ইবনুল খাত্ত্বাব! আমি আল্লাহর রাসূল। কখনোই আল্লাহ আমাকে ধ্বংস করবেন না’।[10] অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেন, إِنِّي رَسُولُ اللهِ، وَلَسْتُ أَعْصِي رَبِّي، وَهُوَ نَاصِرِيْ- ‘আমি আল্লাহর রাসূল। আমি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি না। তিনিই আমার সাহায্যকারী’। তখন ওমর বললেন, أَوَ لَيْسَ كُنْتَ تُحَدِّثُنَا أَنَّا سَنَأْتِي الْبَيْتَ، فَنَطُوفُ بِهِ؟ ‘আপনি কি আমাদের বলেননি যে, সত্বর আমরা আল্লাহর ঘরে গমন করব ও তাওয়াফ করব’? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তবে আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে, আমরা এবছরই সেটা করব’? ওমর বললেন, না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,فَإِنَّكَ تَأْتِيْهِ، فَتَطُوفُ بِهِ- ‘তাহ’লে অবশ্যই তুমি আল্লাহর ঘরে আসবে ও ত্বাওয়াফ করবে’।[11]
অতঃপর ওমরাহ থেকে হালাল হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সবাইকে স্ব স্ব পশু কুরবানী করতে বললেন। তিনি পরপর তিনবার একথা বললেন। কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। তখন রাসূল (ছাঃ) স্ত্রী উম্মে সালামাহর কাছে গিয়ে বিষয়টি বললেন। তিনি পরামর্শ দিলেন যে, আপনি এটা চাইলে সোজা বেরিয়ে যান ও কাউকে কিছু না বলে নিজের উটটি নহর করুন। অতঃপর নাপিত ডেকে নিজের মাথা মুন্ডন করুন’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাই করলেন। তখন সবাই উঠে দাঁড়ালো ও স্ব স্ব কুরবানী সম্পন্ন করল। অতঃপর কেউ মাথা মুন্ডন করল, কেউ চুল ছাঁটলো’ (বুখারী হা/২৭৩২)। স্ত্রী উম্মে সালামাহর দূরদর্শিতাপূর্ণ পরামর্শ হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে খুবই ফলপ্রসু প্রমাণিত হয়।
(৩) একদিন ওমর (রাঃ)-এর স্ত্রী তাকে বললেন, আপনি কি জানেন আপনার কন্যা হাফছা তার স্বামী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে তর্ক-বিতর্ক করেছে? একথা শুনে ওমর (রাঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং চাদর গায়ে দিয়ে সোজা হাফছার গৃহে চলে যান। অতঃপর তাকে বলেন, হে হাফছা! তুমি কি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বিতর্ক করেছ যেজন্য তিনি সারাদিন ক্রুদ্ধ হয়ে আছেন? হাফছা বললেন, আল্লাহর কসম আমরা তাঁর সাথে বিতর্ক করেছি। তখন ওমর বললেন, আমি তোমাকে আল্লাহর প্রতিশোধ ও তাঁর রাসূলের ক্রোধ থেকে সাবধান করছি। অতঃপর তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়া উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামাহর কক্ষে প্রবেশ করলেন ও তাঁকে একই কথা বললেন। জবাবে উম্মে সালামাহ বললেন, আপনি কি আল্লাহর রাসূল ও তাঁর স্ত্রীদের ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করবেন? ওমর বলেন, একথা আমার মনে দারুণভাবে দাগ কাটল। অতঃপর আমি আয়েশার কক্ষে প্রবেশ করলাম ও তাকে বললাম, হে আবুবকরের কন্যা! তোমরা কি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কষ্ট দিয়েছ? জবাবে আয়েশা বললেন, এতে আমার ও আপনার কি সমস্যা হে ইবনুল খাত্তাব! আপনি আপনার মেয়েকে উপদেশ দিন।[12]
(৪) জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের পর ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে হোনায়েন যুদ্ধের গণীমত বণ্টনের সময় বনু তামীম গোত্রের নওমুসলিম বেদুঈন হুরকূছ বিন যুহায়ের যুল-খুওয়াইছিরাহ নামক জনৈক ন্যাড়ামুন্ড ঘন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি বলে উঠে,يَا مُحَمَّدُ اِعْدِلْ. قَالَ: وَيْلَكَ وَمَنْ يَّعْدِلُ إِذَا لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ؟ لَقَدْ خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَّمْ أَكُنْ أَعْدِلُ- ‘হে মুহাম্মাদ! ন্যায়বিচার করুন! জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার ধ্বংস হৌক! যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তবে কে ন্যায়বিচার করবে? যদি আমি ন্যায় বিচার না করি, তাহ’লে তুমি নিরাশ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। তখন ওমর (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন,دَعْنِى يَا رَسُولَ اللهِ فَأَقْتُلَ هَذَا الْمُنَافِقَ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন, এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দিই। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,مَعَاذَ اللهِ أَنْ يَّتَحَدَّثَ النَّاسُ أَنِّى أَقْتُلُ أَصْحَابِى إِنَّ هَذَا وَأَصْحَابَهُ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ يَمْرُقُونَ مِنْهُ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ- ‘আল্লাহর নিকট পানাহ চাই! লোকেরা বলবে, আমি আমার সাথীদের হত্যা করছি। নিশ্চয় এই ব্যক্তি ও তার সাথীরা কুরআন তেলাওয়াত করে। যা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়, যেমন শিকার হ’তে তীর বেরিয়ে যায়’ (মুসলিম হা/১০৬৩ (১৪২)।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, আক্বরা বিন হাবেস ও অন্যান্য নেতাদের বেশী বেশী উট দেওয়ায় আনছারের জনৈক (মুনাফিক) ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত করে বলে, مَا أَرَادَ بِهَا وَجْهَ اللهِ، ‘এর দ্বারা তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেননি’। একথা জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। যাতে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায়। অতঃপর তিনি বলেন,رَحِمَ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِىَ بِأَكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبَرَ- ‘আল্লাহ মূসার প্রতি রহম করুন! এর চাইতে তাঁকে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরেও তিনি ছবর করেছিলেন’ (বুখারী হা/৪৩৩৬)।
(ক্রমশঃ)
[1]. ঢাকা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১৯শে মার্চ ২০১৮।
[2]. বুখারী হা/১১৮; মুসলিম হা/২৪৯৩।
[3]. বুখারী হা/১২০; মিশকাত হা/২৭১।
[4]. আহমাদ হা/১০৪২৫; তিরমিযী হা/২৬৪৯ প্রভৃতি; মিশকাত হা/২২৩।
[5]. নাসাঈ হা/৪২০৯; তিরমিযী হা/২১৭৪ প্রভৃতি; মিশকাত হা/৩৭০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১১০০।
[6]. আবুদাঊদ হা/৩৬৪১; ইবনু মাজাহ হা/২২৩; মিশকাত হা/২১২।
[7]. বুখারী হা/৩১৪৯; মুসলিম হা/১০৫৭; মিশকাত হা/৫৮০৩।
[8]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৮৮; ত্বাবারাণী কাবীর হা/৫১৪৭; যঈফাহ হা/১৩৪১।
[9]. বুখারী হা/২৭৩১-৩২; আহমাদ হা/১৮৯৩০।
[10]. বুখারী হা/৩১৮২; মুসলিম হা/১৭৮৫ (৯৪)।
[11]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৮৭২, হাদীছ ছহীহ।
[12]. বুখারী হা/৪৯১৩; মুসলিম হা/১৪৭৯ (৩০)।