মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। ইহকালে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি নিজেই করেছেন। দুনিয়াতে চলার জন্য মানুষকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এই দিক-নির্দেশনা বা হেদায়াত মেনে চললে পরকালে মানুষ পুরস্কার হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সুতরাং যে আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করেছেন সেই আল্লাহর সাথে মানুষের কি ধরনের শিষ্টাচার বা আদব বজায় রাখা উচিত সেগুলো জানা আবশ্যক। আল্লাহর সাথে আদব সম্পর্কে আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা করা হ’ল।-

১. গায়েবের বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ যে সকল খবর দিয়েছেন সেগুলো বিশ্বাস করা :

আল্লাহ গায়েব বা অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে মানুষকে যা অবহিত করেছেন, তা সত্য বলে বিশ্বাস করা মানুষের জন্য ওয়াজিব। যেমন বারযাখী বা কবরের অবস্থা, হাশরে বিচার-ফায়ছালা, পুলছিরাত, জান্নাতের নে‘মত ও জাহান্নামের শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে আল্লাহ যে সংবাদ দিয়েছেন, মানুষকে তা একনিষ্ঠভাবে বিশ্বাস করতে হবে। কেননা আল্লাহর বাণী অভ্রান্ত সত্য। আল্লাহ বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللهِ حَدِيْثًا، ‘আর আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী কে আছে’? (নিসা ৪/৮৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللهِ قِيْلاً، ‘আল্লাহর চাইতে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে’? (নিসা ৪/১২২)

২. আল্লাহর আদেশ-নিষেধের ব্যাপারে মানুষের আচরণ সুন্দর হওয়া :

আল্লাহর সাথে তথা আল্লাহর আদেশ মেনে নিয়ে তা আমলে রূপায়িত করলে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয়গুলি পরিহার করলে আল্লাহর সাথে উত্তম আচরণ করা হয়। পক্ষান্তরে তাঁর আদেশ-নিষেধ না মেনে ইচ্ছামত চললে তাঁর অবাধ্যতা হয় এবং তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করা হয়; তাঁর সাথে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়। মূলতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ-নিষেধের বিরুদ্ধাচরণ করার কোন অধিকার মানুষের নেই। আল্লাহ বলেন,فَلاَ وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ حَتَّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوْا فِيْ أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا، ‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)। তিনি আরো বলেন, وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلاَ مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً مُبِيْنًا، ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে, সে ব্যক্তি স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হবে’ (আহযাব ৩৩/৩৬)। তিনি আরো বলেন,فَاتَّقُوْا اللهَ وَأَصْلِحُوْا ذَاتَ بَيْنِكُمْ وَأَطِيْعُوْا اللهَ وَرَسُوْلَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، ‘অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং পরস্পরে আপোষ মীমাংসা করে নাও। আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক’ (আনফাল ৮/১)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللهِ نُوْرٌ وَكِتَابٌ مُبِيْنٌ، يَهْدِيْ بِهِ اللهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ بِإِذْنِهِ وَيَهْدِيْهِمْ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيْمٍ، ‘বস্ত্ততঃ তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হ’তে এসেছে একটি জ্যোতি ও আলোকময় কিতাব। তা দ্বারা (অর্থাৎ কুরআন দ্বারা) আল্লাহ ঐসব লোকদের শান্তির পথ সমূহ প্রদর্শন করেন, যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে এবং তিনি তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে (কুফরীর) অন্ধকার হ’তে (ঈমানের) আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তিনি তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন’ (মায়েদাহ ৫/১৫-১৬)

৩. আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাক্বদীরের উপরে সন্তুষ্ট থাকা :

মানুষের তাক্বদীর বা ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। যা অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ বলেন, وَكَانَ أَمْرُ اللهِ قَدَرًا مَقْدُوْرًا، ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত’ (আহযাব ৩৩/৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,مِنْ نُطْفَةٍ خَلَقَهُ فَقَدَّرَهُ، ‘শুক্রবিন্দু হ’তে তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার তাক্বদীর নির্ধারণ করেছেন’ (আবাসা ৮০/১৯)। মানুষের ভাগ্যের ছোট-বড় সবকিছুই লিখিত আছে। আল্লাহ বলেন,وَكُلُّ شَيْءٍ فَعَلُوْهُ فِيْ الزُّبُرِ، وَكُلُّ صَغِيْرٍ وَكَبِيْرٍ مُسْتَطَرٌ، ‘তারা যা কিছু করেছে, সবকিছুই আমলনামায় লিপিবদ্ধ আছে। ছোট ও বড় সবই লিপিবদ্ধ’ (ক্বামার ৫৪/৫২-৫৩)

সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,كَتَبَ اللهُ مَقَادِيرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِيْنَ أَلْفَ سَنَةٍ، قَالَ وَعَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টির তাক্বদীর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বৎসর পূর্বে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, সে সময় আল্লাহর আরশ পানির উপরে ছিল’।[1]

রাসূল (ছাঃ)-কে ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ، ‘তুমি আল্লাহর উপর, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, পরকাল ও তাক্বদীরের ভালো-মন্দের উপর বিশ্বাস করবে’।[2] অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন,كَانَ اللهُ وَلَمْ يَكُنْ شَىْءٌ غَيْرُهُ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ، ثُمَّ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، وَكَتَبَ فِى الذِّكْرِ كُلَّ شَىْءٍ، ‘আল্লাহ তখন ছিলেন, তিনি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। তাঁর আরশ তখন পানির ওপর ছিল। অতঃপর তিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করলেন এবং লাওহে মাহফূযে সব বস্ত্ত সম্পর্কে লিখে রাখলেন’।[3]

তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাসী না হ’লে কোন মানুষ মুমিন হয় না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ حَتَّى يَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ وَأَنَّ مَا أَخْطَأَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيْبَهُ، ‘কোন বান্দাই মুমিন হ’তে পারবে না যতক্ষণ না সে তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে। এমনকি তার নিশ্চিত বিশ্বাস থাকতে হবে যে, যা কিছু ঘটেছে তা কিছুতেই অঘটিত থাকত না এবং যা কিছু ঘটেনি তা কখনোও তাকে স্পর্শ করবে না’।[4]

তিনি আরো বলেন,لاَ يُؤْمِنُ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْمِنَ بِأَرْبَعٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنِّى مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللهِ بَعَثَنِى بِالْحَقِّ وَيُؤْمِنُ بِالْمَوْتِ وَبِالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ وَيُؤْمِنُ بِالْقَدَرِ، ‘কোন বান্দাই ঈমানদার হ’তে পারবে না যতক্ষণ না সে চারটি বিষয়ের উপর ঈমান আনবে- (১) সে এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রভু নেই এবং আমি মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। তিনি আমাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন; (২) মৃত্যুর উপর ঈমান আনবে; (৩) মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে ঈমান আনবে এবং (৪) তাক্বদীরের উপর ঈমান আনবে’।[5]

তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনলে বান্দার আমল আল্লাহ কবুল করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لَوْ أَنَّ اللهَ عَذَّبَ أَهْلَ سَمَوَاتِهِ وَأَهْلَ أَرْضِهِ عَذَّبَهُمْ وَهُوَ غَيْرُ ظَالِمٍ لَهُمْ وَلَوْ رَحِمَهُمْ كَانَتْ رَحْمَتُهُ خَيْرًا لَهُمْ مِنْ أَعْمَالِهِمْ وَلَوْ أَنْفَقْتَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا فِى سَبِيلِ اللهِ مَا قَبِلَهُ اللهُ مِنْكَ حَتَّى تُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ وَتَعْلَمَ أَنَّ مَا أَصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ وَأَنَّ مَا أَخْطَأَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَكَ وَلَوْ مُتَّ عَلَى غَيْرِ هَذَا لَدَخَلْتَ النَّارَ. ‘আল্লাহ যদি তাঁর আসমান ও পৃথিবীবাসী সকলকে শাস্তি দেন। তারপরও তিনি তাদের প্রতি যুলুমকারী সাব্যস্ত হবেন না। পক্ষান্তরে তিনি যদি তাদের সকলকে দয়া করেন তাহ’লে তাঁর এ দয়া তাদের জন্য তাদের নেক আমল থেকে উত্তম হবে। সুতরাং যদি তুমি ওহোদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে দান কর, তবে তা আল্লাহ কবুল করবেন না, যতক্ষণ না তুমি তাক্বদীরে বিশ্বাস করবে এবং জানবে যে, যা তোমার প্রতি আপতিত হয়েছে তা ভুলেও তোমাকে এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। আর যা এড়িয়ে গেছে তা তোমার প্রতি আপতিত হবে না। এ বিশ্বাস ছাড়া তুমি মারা গেলে জাহান্নামে যাবে’।[6]

আল্লাহ বান্দাকে বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পরীক্ষায় যারা ধৈর্য ধারণ করে, তাদের জন্য রয়েছে অশেষ ছওয়াব। আললাহ বলেন,وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوْعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ، ‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন ও প্রাণের ক্ষতি দ্বারা এবং ফল-শস্যাদি বিনষ্টের মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও’ (বাক্বারাহ ২/১৫৫)। আর এসব বিষয় পূর্ব থেকেই নির্ধারিত আছে। যেমন আল্লাহ বলেন,مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِيْ أَنْفُسِكُمْ إِلَّا فِيْ كِتَابٍ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَبْرَأَهَا إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ، ‘পৃথিবীতে বা তোমাদের জীবনে এমন কোন বিপদ আসে না, যা তা সৃষ্টির পূর্বে আমরা কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখিনি। নিশ্চয়ই এটা আল্ল­াহর জন্য সহজ’ (হাদীদ ৫৭/২২)। তিনি আরো বলেন,قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْن، ‘তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরেই মুমিনদের ভরসা করা উচিত’ (তওবা ৯/৫১)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِ اللهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُوْلُوْا هَذِهِ مِنْ عِنْدِكَ قُلْ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ اللهِ فَمَالِ هَؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُوْنَ يَفْقَهُوْنَ حَدِيْثًا، ‘ঐসব লোকদের কোন কল্যাণ হ’লে তারা বলে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। আর কোন অকল্যাণ হ’লে বলে এটি আপনার (অনুসারী হওয়ার) কারণে হয়েছে। তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। অতএব ঐ লোকদের কি হ’ল যে, ওরা যেন কোন কথাই বুঝতে চায় না’? (নিসা ৪/৭৮)

সুতরাং আল্লাহ স্বীয় বান্দার জন্য যা বণ্টন করেছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَارْضَ بِمَا قَسَمَ اللهُ لَكَ تَكُنْ أَغْنَى النَّاسِ، ‘তোমার ভাগ্যে আল্লাহ তা‘আলা যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তাতে খুশি থাকলে লোকদের মধ্যে তুমি সর্বাপেক্ষা ধনী বলে গণ্য হবে’।[7]

মহান আল্লাহ বান্দাকে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। এসব পরীক্ষায় বান্দাকে রাযী-খুশি থাকতে হয়। এতে আল্লাহ খুশি হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاَهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ. ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান’।[8]

সুতরাং ধৈর্য ও সন্তুষ্টির সাথে মুমিন আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তাক্বদীরকে মেনে নেবে, এটা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিষ্টাচারের বহিঃপ্রকাশ ও ঈমানের পরিচায়ক। সেই সাথে সে এ বিশ্বাসও রাখবে যে, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন তাতে হেকমত আছে এবং এতে বান্দার জন্য কল্যাণ রয়েছে।

৪. দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহমুখী হওয়া :

দো‘আ বিনয়-নম্রতার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এজন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ বা প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُوْنَ، ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে ডাকে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)। তিনি আরো বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِيْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ، ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে, তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (মুমিন ৪০/৬০)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الدُّعَاءَ هُوَ الْعِبَادَةُ. ثُمَّ قَرَأَ (وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِى أَسْتَجِبْ لَكُمْ). ‘দো‘আই হ’ল ইবাদত। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তাতে সাড়া দেব’ (মুমিন ৪০/৬০)[9] অন্যত্র তিনি বলেন,أَفْضَلُ الْعِبَادَةِ الدُّعَاءُ ‘উত্তম ইবাদত হ’ল দো‘আ’।[10] তিনি আরো বলেন,لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللهِ سُبْحَانَهُ مِنَ الدُّعَاءِ، ‘মহান আল্লাহর নিকটে দো‘আর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন জিনিস নেই’।[11]

রাসূল (ছাঃ) ইবনু আববাস (রাঃ)-কে বলেন,إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللهِ، ‘তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হ’লে আল্লাহ তা‘আলার নিকটে চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হ’লে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই কর’।[12]

নবী করীম (ছাঃ) তাঁর বরকতময় ও সুমহান রবের নিকট হ’তে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ বলেছেন, হে আমার বান্দাগণ! আমি যুলুমকে আমার জন্য হারাম করে দিয়েছি, আর তা তোমাদের মধ্যেও হারাম করে দিয়েছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে হেদায়াত দিয়েছি সে ছাড়া তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট। সুতরাং আমার কাছে হেদায়াত চাও, আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব। হে আমার বান্দাগণ! আমি যাকে অন্ন দান করেছি, সে ছাড়া তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমরা আমার নিকটে খাদ্য চাও, আমি তোমাদের খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সবাই বিবস্ত্র, সে ব্যতীত যাকে আমি কাপড় পরিয়েছি। সুতরাং আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত-দিন গোনাহ করছ, আর আমি তোমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দেই। সুতরাং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা কখনোই আমার ক্ষতি করার সামর্থ রাখ না যে আমার ক্ষতি করবে আর তোমরা কখনোই আমার ভালো করার ক্ষমতা রাখ না যে আমার ভালো করবে।

হে আমার বান্দাগণ! তোমরা পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোত্তাকী ও পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই বৃদ্ধি করবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বাপর সকল মানুষ ও জিন যদি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তবে তা আমার রাজত্বে কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের পূর্বের ও তোমাদের পরের সকলে, তোমাদের সমস্ত মানুষ ও তোমাদের সমস্ত জিন যদি সবাই একই ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার কাছে চায় এবং আমি সকলের চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার নিকট যা আছে তাতে সমুদ্রে এক সুঁই রাখলে যতটা কম হয়ে যায় তা ব্যতীত আর কিছু কম হ’তে পারে না। হে আমার বান্দাগণ! আমি তোমাদের আমলকে (কাজকে) তোমাদের জন্য গণনা করে রাখি, আর আমি তার পুরোপুরি প্রতিফল দিয়ে দেব। সুতরাং যে ব্যক্তি উত্তম প্রতিফল পাবে তার আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত, আর যে তার বিপরীত পাবে তার শুধু নিজেকেই ধিক্কার দেয়া উচিত’।[13]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, বরকতময় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হ’তে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহের পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পেঁŠছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকটে আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহ’লে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব’।[14]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মানুষকে আল্লাহর নিকটে দো‘আ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন ও উৎসাহিত করেছেন। আর এ দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করা যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহর কাছে দো‘আ না করলে তিনি রাগান্বিত হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার উপর ক্রুদ্ধ হন’।[15] যেমন মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الْإِنْسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ فَذُو دُعَاءٍ عَرِيْضٍ، ‘যখন আমরা মানুষের উপর অনুগ্রহ করি, তখন সে এড়িয়ে যায় ও দূরে সরে যায়। আর যদি তাকে মন্দ স্পর্শ করে, তখন সে দীর্ঘ প্রার্থনায় রত হয়’ (হা-মীম-সাজদাহ ৪১/৫১)

৫. ছালাত আদায়ের সময়ে উত্তম পোষাকে আল্লাহর সামনে হাযির হওয়া :

বান্দা যখন ছালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রব আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হয়। সুতরাং আল্লাহর সামনে সুন্দর পোষাকে সজ্জিত হয়ে দাঁড়ানোই কর্তব্য। ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, জনৈক সালাফী ব্যক্তির একটি বহু মূল্যবান পোষাক ছিল। যা তিনি ছালাতের সময় পরিধান করতেন। আর তিনি বলতেন, আমার রবের সামনে আমি যখন ছালাতে দাঁড়াই তখন তাঁর জন্য সুসজ্জিত হওয়া আমার প্রভুর হক।[16]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, জানা আবশ্যক যে, আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মতের নিদর্শন আল্লাহ তার বান্দার মধ্যে দেখতে পসন্দ করেন। বিশেষত বান্দা যখন তার রবের সামনে দন্ডায়মান হয়।[17] রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ يُحِبَّ أَنْ يُرَى أَثَرُ نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর নে‘মতের প্রকাশ স্বীয় বান্দার মধ্যে দেখতে পসন্দ করেন’।[18]

ছালাতে বান্দা মহান আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হয়। এ সময় তাকে যেমন বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করতে হয়। তেমনি সুন্দর পোষাকে সুসজ্জিত হওয়াও বাঞ্ছনীয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,يَابَنِيْ آدَمَ خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ، ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)

৬. ছালাতে বিনয়-নম্রতা ও একাগ্রতা বজায় রাখা :

ছালাতে একাগ্রতা বজায় রাখা আল্লাহর সাথে পালনীয় অন্যতম আদব। সুতরাং বান্দার জন্য আবশ্যক হ’ল পৃথিবীর সকল দিক ও বিভাগ থেকে মুক্ত হয়ে কেবল ছালাতে মনোনিবেশ করা। এতে মানুষ ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ ও সফলতা লাভ করবে। আল্লাহ বলেন,قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ فِيْ صَلَاتِهِمْ خَاشِعُوْنَ، ‘নিশ্চয়ই সফলকাম হবে মুমিনগণ। যারা তাদের ছালাতে তন্ময়-তদ্গত’ (মুমিনূন ২৩/১-২)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ছালাতে আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার আদব হ’ল দাঁড়ানো অবস্থায় ক্বিরাআত পাঠের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখা। মুওয়াত্ত্বা মালিকে সাহল বিন সা‘দ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এটা হচ্ছে সুন্নাত, যে ব্যাপারে মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, বাদশাহ ও ক্ষমতাধর ব্যক্তির সম্মুখে দন্ডায়মান হওয়ার এটা হচ্ছে আদব। সুতরাং সকল ক্ষমতাশালীদের উর্ধ্বে সর্বময় ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি মহান আল্লাহ এ বিষয়ে অধিক হকদার।[19]

৭. প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণকালে ক্বিবলার দিকে সম্মুখ বা পিছন ফিরে না বসা :

ক্বিবলা তথা বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে মুসলমানগণ ছালাত আদায় করে। সুতরাং ক্বিবলার দিকে মুখ করে কিংবা পিছন ফিরে প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করা নিষেধ। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلاَ تَسْتَدْبِرُوْهَا، وَلَكِنْ شَرِّقُوْا أَوْ غَرِّبُوْا. ‘যখন তোমরা পায়খানা করতে যাও, তখন ক্বিবলার দিকে মুখ করবে না কিংবা পিঠও দিবে না, বরং তোমরা পূর্ব দিকে অথবা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে’।[20]

উল্লেখ্য, মদীনা থেকে কা‘বা বা ক্বিবলা হচ্ছে দক্ষিণ দিকে। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরে বসতে বললেন। তবে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমে ক্বিবলা হওয়ায় সেদিকে সম্মুখ বা পিছন ফিরে বসা যাবে না।

৮. আল্লাহর নামের সম্মান করা :

আল্লাহর নাম বলা ও লেখার সময় সম্মানের সাথে বলা ও লেখা উচিত। অনুরূপভাবে নাপাক স্থানে কিংবা উপযুক্ত পরিবেশ ব্যতীত আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করা। কেননা আল্লাহ অতীব মহান ও অত্যন্ত সম্মান-মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ বলেন,تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنْشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا، ‘এতে যেন আকাশ সমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পতিত হবে’ (মারিয়াম ১৯/৯০)। অর্থাৎ আসমান সমূহ বিদীর্ণ হবে আল্লাহর বড়ত্বের কারণে। আল্লাহ আরো বলেন,مَا لَكُمْ لَا تَرْجُونَ لِلَّهِ وَقَارًا، ‘তোমাদের কি হ’ল যে তোমরা আল্লাহর বড়ত্বকে ভয় পাচ্ছ না’? (নূহ ৭১/১৩)

এ আয়াতের অর্থ সম্পর্কে ইবনু আববাস (রাঃ) ও মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, لا ترجون لله عظمة، ‘তোমরা আল্লাহর বড়ত্বকে ভয় পাচ্ছ না’। সাঈদ বিন জুবায়ের (রহঃ) বলেন, ما لكم لا تعظمون الله حق عظمته، ‘তোমাদের কি হ’ল যে, তোমরা আল্লাহর যথার্থ বড়ত্ব প্রকাশ করছ না’?

৯. আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা :

পৃথিবীতে সব ধরনের নে‘মত দিয়ে আল্লাহ মানুষের জীবন-যাপন সহজ ও সাবলীল করে দিয়েছেন। না চাইতে আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনীয় সব কিছুই দিয়েছেন। এসব নে‘মত অসংখ্য-অগণিত। যার হিসাব করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَةَ اللهِ لَا تُحْصُوْهَا إِنَّ اللهَ لَغَفُوْرٌ رَحِيْمٌ، ‘যদি তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা কর, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (নাহল ১৬/১৮)। তিনি আরো বলেন,وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللهِ، ‘তোমাদের কাছে যেসব নে‘মত আছে, তা সবই আল্লাহর পক্ষ হ’তে’ (নাহল ১৬/৫৩)

আল্লাহ প্রদত্ত এই অগণিত নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা মানুষের জন্য আবশ্যিক। আল্লাহ বলেন,وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ، ‘অতঃপর তুমি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহের কথা বর্ণনা কর’ (যোহা ৯৩/১১)। আর নে‘মতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলে আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন। আর নে‘মত পেয়েও কৃতঘ্ন হ’লে আল্লাহ শাস্তি দিবেন। আল্লাহ বলেন,وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ، ‘আর যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)

আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করলে তিনি খুশী হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا، ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সে বান্দাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন, যে এক গ্রাস খাদ্য খেয়ে তার প্রশংসা করে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তার শুকরিয়া আদায় করে’।[21]

সুতরাং আল্লাহর অগণিত নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা এবং তাঁর অনুগ্রহের জন্য যথাযোগ্য প্রশংসা করা মুসলমানদের উপরে ওয়াজিব। তাঁর শুকরিয়া হচ্ছে অন্তরে বিনীতভাবে স্বীকার করা, মুখে গুণগান ও স্ত্ততির মাধ্যমে প্রকাশ করা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বাস্তবায়ন করা।

১০. আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করা :

রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা। আল্লাহ বলেন,مَنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيْظًا، ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের উপর আমরা তোমাকে রক্ষক হিসাবে প্রেরণ করিনি’ (নিসা ৪/৮০)

রাসূলের আনুগত্যের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا أَطِيْعُوا اللهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)

রাসূলের আনুগত্যের ফযীলত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُوْنَ، ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হ’তে বেঁচে থাকে, তারাই হ’ল কৃতকর্ম’ (নূর ২৪/৫২)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَطَاعَنِى فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِى فَقَدْ عَصَى اللهَ، ‘যে আমার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে আল্লাহরই নাফরমানী করল’।[22]

১১. আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা :

আল্লাহ আমাদের স্রষ্টা, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। তাই সর্বদা তাঁকে স্মরণে রাখতে হবে এবং তাঁর যিকর করতে হবে। আল্লাহ বলেন,فَاذْكُرُوْنِيْ أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ কর আমি তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (বাক্বারাহ ২/১৫২)। তিনি আরো বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا، وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিকহারে স্মরণ কর। এবং সকাল-বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর’ (আহযাব ৩৩/৪১-৪২)। আল্লাহ আরো বলেন,فَاذْكُرُوا اللهَ قِيَامًا وَقُعُوْدًا وَعَلَى جُنُوْبِكُمْ، ‘তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর দাঁড়িয়ে, বসে ও শোয়া অবস্থায়’ (নিসা ৪/১০৩)। অন্যত্র তিনি বলেন,فَسُبْحَانَ اللهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ، وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ- ‘অতএব তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও সকালে এবং অপরাহ্নে ও যোহরে। বস্ত্ততঃ তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে’ (রূম ৩০/১৭-১৮)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, মূসা (আঃ) আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, أَيُّ عِبَادِكَ أَتْقَى؟ قَالَ: الَّذِي يَذْكرُ وَلا يَنْسَى، ‘তোমার কোন বান্দা অধিক আল্লাহভীরু? তিনি বলেন, যে ব্যক্তি (আল্লাহকে) স্মরণ করে এবং (তাঁকে) ভুলে যায় না’।[23]

আল্লাহর যিকর বান্দাকে আল্লাহর নিকটে প্রিয় করে তোলে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ وَأَرْضَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ وَأَرْفَعِهَا فِى دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ إِعْطَاءِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ وَمِنْ أَنْ

تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوْا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوْا أَعْنَاقَكُمْ. قَالُوْا وَمَا ذَاكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ ذِكْرُ اللهِ. وَقَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ مَا عَمِلَ امْرُؤٌ بِعَمَلٍ أَنْجَى لَهُ مِنْ عَذَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ ذِكْرِ اللهِ.

‘আমি কি তোমাদের আমলসমূহের সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করব না, যা তোমাদের প্রভুর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদাকে অধিক উন্নীতকারী, তোমাদের স্বর্ণ-রূপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শক্রুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? ছাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সেটি কী? তিনি বলেন, আল্লাহর যিকর। মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, কোন মানুষের জন্য আল্লাহর যিকরের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে’।[24]

আল্লাহর যিকর বা স্মরণ থেকে গাফেল হওয়া মুমিনের জন্য কর্তব্য নয়। বরং তার অন্তরে সর্বদা আল্লাহর নাম জাগরুক থাকতে হবে। অন্যথা আল্লাহও তাকে ভুলে যাবেন। তিনি বলেন,وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ أُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ، ‘আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে আত্মভোলা করে দিয়েছেন। ওরা হ’ল অবাধ্য’ (হাশর ৫৯/১৯)।

পরিশেষে বলব, সমগ্র জাহানের একমাত্র স্রষ্টা ও নিয়ন্তা মহান আল্লাহ। তাঁর নির্দেশ ব্যতিরেকে কোন কাজ সংঘটিত হয় না। গাছের একটি পাতাও তাঁর অজ্ঞাতে পতিত হয় না। বিশ্ব জাহানের একমাত্র অধিপতি, সমস্ত মাখলূকাতের স্রষ্টা ও পরিচালক মহান আল্লাহর সাথে উপরোক্ত আদব সমূহ আমাদের সকলকে পালন করতে হবে। তাহ’লে ইহকাল ও পরকালে সার্বিক কল্যাণ লাভ করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর সাথে আদব সমূহ যথাযথভাবে পালনের তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!


[1]. মুসলিম হা/২৬৫৩; মিশকাত হা/৭৯।

[2]. মুসলিম হা/৮; আবূদাঊদ হা/৪৬৯৫; মিশকাত হা/২।

[3]. বুখারী হা/৭৪১৮; মিশকাত হা/৫৬৯৮।

[4]. তিরমিযী হা/২১৪৪; ছহীহাহ হা/২৪৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৮৫।

[5]. তিরমিযী হা/২১৪৫; ইবনু মাজাহ হা/৮১; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৫৮৪; মিশকাত হা/১০৪।

[6]. আবূদাঊদ হা/৪৬৯৯; মিশকাত হা/১১৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৫২৪৪।

[7]. তিরমিযী হা/২৩০৫; মিশকাত হা/৫১৭১; ছহীহাহ হা/৯৩০; ছহীহুল জামে‘ হা/১০০।

[8]. তিরমিযী হা/২৩৯৬; ইবনু মাজাহ হা/৪০৩১; ছহীহাহ হা/১২২০; মিশকাত হা/১৫৬৫।

[9]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৮; তিরমিযী হা/২৯৬৯; আবূ দাউদ হা/১৪৭৯, মিশকাত হা/২৩৩০, সনদ ছহীহ।

[10]. ছহীহাহ হা/১৫৭৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১১২২।

[11]. ইবনু মাজাহ হা/৩৮২৯; তিরমিযী হা/৩৩৭০; মিশকাত হা/২৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৯২।

[12]. তিরমিযী হা/২৫১৬; মিশকাত হা/৫৩০২; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৭।

[13]. মুসলিম হা/২৫৭৭; মিশকাত হা/২৩২৬।

[14]. তিরমিযী হা/৩৫৪০; মিশকাত হা/২৩৩৬; ছহীহাহ হা/১২৭-২৮।

[15]. তিরমিযী হা/৩৩৭৩; মিশকাত হা/২২৩৮।

[16]. মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৬৪ পৃঃ।

[17]. ঐ, ২/৩৬৩ পৃঃ।

[18]. তিরমিযী হা/২৮১৯; মিশকাত হা/৪৩৫০।

[19]. মাদারিজুস সালেকীন ২/৩৬৪।

[20]. বুখারী হা/৩৯৪; মুসলিম হা/২৯৪; মিশকাত হা/৩৩৪।

[21]. মুসলিম হা/২৭৩৪; তিরমিযী হা/১৮১৬; মিশকাত হা/৪২০০।

[22]. বুখারী হা/৭১৩৭; মুসলিম হা/১৮৩৫; মিশকাত হা/৩৬৬১।

[23]. ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬২১৭; ছহীহাহ হা/৩৩৫০।

[24]. ইবনু মাজাহ হা/৩৭৯০; তিরমিযী হা/৩৩৭৭; মিশকাত হা/২২৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬২৯।






বিষয়সমূহ: শিষ্টাচার
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
রিয়া : পরিচয় ও প্রকারভেদ - ড. নূরুল ইসলাম
তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ ও আহনাফ (৭ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
বালা-মুছীবত থেকে পরিত্রাণের উপায় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
স্মৃতির আয়নায় আত-তাহরীক-এর সূচনা - শামসুল আলম
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
ফৎওয়া : গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও বিকাশ (৫ম কিস্তি) - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
শবেবরাত - আত-তাহরীক ডেস্ক
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা (শেষ কিস্তি) - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর উপর নির্যাতন - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
সমাজ সংস্কারে তাবলীগী ইজতেমা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আরও
আরও
.