নববই ভাগ মুসলমানের দেশে ২০১৩ সাল থেকে ডারউইনের নাস্তিক্যবাদী বিবর্তনবাদকে সিলেবাস ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ দেশের হয়তোবা লাখে একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে নিজেকে ‘বানরের বংশধর’ বলে মনে করে। সকল মহল থেকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠলেও কথিত গণতান্ত্রিক সরকারের টনক নড়েনি। নবম শ্রেণী থেকে উচ্চ স্তর সমূহে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে শিক্ষার্থীদেরকে এই মিথ্যা শিখানো হচ্ছে যে, মানুষকে কেউ সৃষ্টি করেনি। সে বিবর্তনবাদের নিয়ম অনুযায়ী বানর জাতীয় পশু হ’তে ক্রমে ক্রমে লেজখসা মানুষে পরিণত হয়েছে। এমনকি ইসলামী শিক্ষার পীঠস্থান মাদ্রাসা শিক্ষার সিলেবাসেও এটিকে ২০১৪ সাল থেকে বিষয়ভুক্ত করা হয়েছে। আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষকদের কথিত অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল মোদাররেছীন’ এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। দেওবন্দী ঘরানার কওমী মাদ্রাসাগুলির সংগঠন ‘বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ’ তাদের সর্বোচ্চ শ্রেণীকে ২০১৮ সালে সরকার মাস্টার্স-এর মান দেওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে তাদের কোন কথা শোনা যায় না। এর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে মাওলানা নূর হোসাইন ক্বাসেমী (১৯৪৫-২০২০)-এর বক্তব্য মাঝে-মধ্যে পত্রিকায় আসত। বামপন্থী ও এ যাবৎকালের ব্যর্থতম শিক্ষামন্ত্রীর স্থায়ী পাপের নিদর্শন হিসাবে দেশে গত ৯ বছর ধরে এই সিলেবাস চলছে। মুসলমানদের ভোট নিয়ে মুসলমান এম.পি-রা একদলীয়ভাবে আয়েশের সাথে দেশ চালাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশ ছালাত-ছিয়ামে অভ্যস্ত। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ন্যায় শিক্ষামন্ত্রণালয়েরও একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে। এর উপর রয়েছে মন্ত্রী পরিষদ। অতএব এককভাবে প্রধানমন্ত্রী এজন্য দায়ী নন। যদিও ইতিহাস চিরকাল তাঁকেই দায়ী করবে। কারণ তিনিই সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল এবং তাঁর মনোনয়ন নিয়েই সবাই এম.পি-মন্ত্রী-উপদেষ্টা হয়েছেন। তাঁর একটি বিষয় বারবার পত্রিকায় আসে যে, ‘বাচ্চাদের সিলেবাসের বোঝা কমান’। কিন্তু তাঁর এই আবেদন কোনই কাজে আসেনি। বরং সিলেবাসে অপ্রয়োজনীয় বিষয় সমূহ দিন দিন বেড়েছে।    

প্রশ্ন হ’ল, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত এক যুগ ধরে শিক্ষা সিলেবাসের যে ‘হযবরল’ অবস্থা এবং কচি বাচ্চাদের রাতারাতি সবজান্তা বানানোর যে অপকৌশল চলেছে, সর্বোপরি ২০১৩ সাল থেকে মুসলিম সন্তানদের যে বানরবাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তাতে কিশোর গ্যাংদের পাপের বোঝা কে বহন করবে? ভুক্তভোগী অভিভাবকদের বদদো‘আ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপরেই আপতিত হচ্ছে। কেননা খুব কম সংখ্যক লোকই শিক্ষামন্ত্রীর নাম জানে। কে গেল কে এল, এ নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। সবাই চেনে একজন ব্যক্তিকেই। অতএব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আবেদন, চলতি ২০২১ সাল থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার সকল স্তর থেকে ‘বিবর্তনবাদ’-কে ছাঁটাই করুন! সাথে সাথে নবম ও দশম শ্রেণী পর্যন্ত অযৌক্তিক পাঠ্য বিষয়গুলি বাদ দিন! সিলেবাসের বোঝার কারণে এবং বিষয়ভিত্তিক টিউশনীর কারণে বাচ্চাদের খেলা-ধুলা ও স্বাভাবিক মেধা বিকাশের সুযোগ ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ক্রমেই গরীব শ্রেণীর আওতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা এর অবসান চাই।

১৯৯৯ সাল থেকে প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় এবং বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় গৃহীত প্রস্তাব সমূহের মাধ্যমে আমরা সরকারের নিকট শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোন সরকারই এদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। দেশের নাগরিক হিসাবে আমরা  সরকারকে সুপরামর্শ দানের দায়িত্ব পালন করে এসেছি। আজও একই দায়িত্ববোধ থেকে সরকারের নিকট আবেদন করছি।

ইসলাম মানব কল্যাণে জ্ঞানের চর্চা, গবেষণা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। কিন্তু বির্বতনবাদ শিক্ষা বিজ্ঞান চর্চার নামে ইসলামকে উৎখাতের এক পুঁজিবাদী এজেন্ডা। এতে করে সমাজ ও ব্যক্তিজীবন থেকে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ উঠে যেতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিবাহ উঠে যাবে। বিবাহের সকল দায়বদ্ধতা ছাড়াই নারী-পুরুষ লিভ টুগেদারে আগ্রহী হবে। জারজ সন্তানে দেশ ভরে যাবে। মদ-জুয়ার বিধি-নিষেধ থাকবে না। লূতের কওমের মত সমকামিতা-পায়ুকামিতার মত পাপের ফলে মানুষ আর পশুতে কোন পার্থক্য থাকবে না। ভোগবাদে মানুষ ডুবে যাবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম ও পরকাল নিয়ে কটূক্তি এবং আলেম-ওলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বাধা ও বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান বিবর্তনবাদের কল্পকাহিনীকে ছুঁড়ে ফেলেছে। যে কারণে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে বিবর্তনবাদ শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দৃশ্যতঃ বুঝা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক্যবাদী চক্র এবং পুঁজিবাদীদের চাপ ও প্ররোচনাতেই এদেশের শিক্ষা সিলেবাসে এটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সংবিধান মতে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের ঈমান-আক্বীদা বিরোধী মতবাদ শিক্ষা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

সেকারণ সরকারের কাছে আমাদের দাবী থাকবে, (১) ঈমান-আক্বীদা ও সামাজিক শৃঙ্খলাবিরোধী ‘বিবর্তনবাদ’ বিষয়কে পাঠ্যপুস্তক থেকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করুন। (২) এটিকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িতদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিন। (৩) শিক্ষার সর্বস্তরে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করুন। (৪) সরকারী ও বেসরকারী তথা কিন্ডার গার্টেন, প্রি-ক্যাডেট, ও-লেভেল ইত্যাদি নামে পুঁজিবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে বৈষম্যহীন ও সকলের জন্য সহজলভ্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করুন। (৫) ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শিক্ষা পরিবেশ এবং পৃথক কর্মক্ষেত্র ও কর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণ করুন। (৬) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবতীয় দলাদলি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করুন এবং প্রয়োজনবোধে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বয়স, যোগ্যতা ও মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন করুন। (৭) ইসলামী আক্বীদা বিনষ্টকারী সকল প্রকার সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাতিল করুন এবং তদস্থলে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমল ভিত্তিক ইসলামী সাহিত্য ও সংস্কৃতি চালু করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন! (স.স.)






বিষয়সমূহ: শিক্ষা-সংস্কৃতি
বিশ্বকাপ না বিশ্বনাশ? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সালাফীবাদ নয় সালাফী পথ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বর্ণবাদী আমেরিকার মুক্তির পথ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সিলেবাস থেকে বিবর্তনবাদ ছাঁটাই করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমেরিকার নির্বাচন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পররাষ্ট্র নীতি নিশ্চিত করুন! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ধর্ম দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হজ্জ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শান্তি ও সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের উপায় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দে খাজা! দে দেলা দে! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নীরব ঘাতক মোবাইল টাওয়ার থেকে সাবধান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.