তুষ পদ্ধতিতে মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন
রাজবাড়ী যেলার বালিয়াকান্দি উপযেলার অন্তর্গত সদর ইউনিয়নের পশ্চিম বালিয়াকান্দি গ্রামের শাহীদা বেগম চীনা তুষ পদ্ধতির মিনি হ্যাচারির মাধ্যমে মানসম্মত মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করছেন। জানা যায়, শাহীদা বেগম প্রায় ১৫ বছর আগে যশোরের কোটচাঁদপুর থেকে চীনা তুষ পদ্ধতিতে হ্যাচারি গড়া ও পরিচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। উপযেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় তিনি তুষ পদ্ধতিতে সামান্য কাঠখুঁটি, স্বল্প উপকরণ ও স্বল্প জায়গায় সামান্য খরচে হাস-মুরগির ডিম ফোটানোর জন্য মিনি হ্যাচারি শুরু করেন। শাহীদার স্বামী হানীফ ফরিদপুর, পাবনা, গোয়ালন্দ, যশোর, মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে মুরগির উর্বর ডিম সংগ্রহ করেন। শাহীদা সাংসারিক কাজের ফাঁকে যত্ন দিয়ে ডিম থেকে বের করছেন উন্নত জাতের ফাওমি ও সোনালী জাতের মুরগির বাচ্চা। প্রাকৃতিক নিয়মে এখানে ২১ দিনে ফুটে যায় মুরগির ফুটফুটে বাচ্চা। এই মিনি হ্যাচারির মুরগির বাচ্চা ক্রয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খামারীরাও ভিড় জমাচ্ছেন। তাদের অধিকাংশেরই মন্তব্য, হ্যাচারির মত বাচ্চা ক্রয়ে এখানে বিড়ম্বনার শিকার হ’তে হয় না, এখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগী নেই। তুষ পদ্ধতিতে উৎপাদিত কক ও লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম কম। ১ দিনের প্রতিটি মুরগির বাচ্চা ২০ টাকায় কেনা যায়। তাছাড়া দেশের বর্তমান আবহাওয়ায় মুরগির বাচ্চা সহনশীল বেশী হওয়ায় মৃত্যুর হার কম। শাহীদা বেগম জানায়, সরকারী-বেসরকারী সহযোগিতা পেলে মিনি হ্যাচারিতে অধিক পরিমাণে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করবেন। এতে বেকার যুবকরা উদ্যোগী হ’লে বদলে যাবে পোল্ট্রি শিল্প। অসংখ্য কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর হবে। পাশাপাশি বাজারে পোল্ট্রি মুরগি ও ডিমের মূল্যের ভারসাম্য ফিরে আসবে।
মুরগীর খামার করে স্বাবলম্বী
মাত্র ১০ হাযার টাকা দিয়ে ৩শ’ মুরগীর বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করে বর্তমানে ৮ হাযার মুরগীর পালন করছে চট্টগ্রামের পটিয়ার পশ্চিম হাইদগাঁয়ের আযাদ হাসান রিপন। তার খামারের নাম বায়তুশ শরফ পোল্ট্রি ফার্ম। রিপন ১৯৯৬ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করে কয়েক বছর বেকার থাকার পর ১৯৯৯ সালে বয়লার মুরগী খামার শুরু করে সে এখন স্বাবলম্বী।
রিপন জানায়, এপ্রিল মাসে তার খামারে ৩ হাযার মুরগী উৎপাদন হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ৪৪৫ বর্গফুটের শেড নিয়ে খামার শুরু করলেও বর্তমানে ১০ হাযার ৬৬৫ বর্গফুটের শেড রয়েছে। এখানে প্রায় ৮ হাযার মুরগী পালন করা যায়। বর্তমানে তিনি খামারে লেয়ার মুরগীর পালনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। তার খামারে মুরগীর পরিচর্যায় রোগ বালাইয়েল জন্য ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না। প্রায় ১২ বছর খামার করে তিনি বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। মুরগির রোগ বালাইয়ের মধ্যে রাণিক্ষেত, গাব্রু, সর্দি অন্যতম। রিপন জানায়, খামারীরা সঠিক সময়ে মুরগীর রোগ চিহ্নিত করতে পারলে এ ব্যবসায় অনেকাংশে সফল হওয়া সম্ভব। ২০০৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ১ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ নেন রিপন। এ খামার বর্ধিতকরণের জন্য ২০০৭ সালে একটি বেসরকারী সংস্থা থেকে ৭০ হাযার টাকা ঋণ নেন। তার মতে, খামারীদের প্রশিক্ষণ ও বিনা সূদে সরকারী ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে পোল্ট্রি শিল্পে অমানিশার মেঘ কেটে যাবে।
এক জমিতে একাধিক সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপযেলার শোভনকর্দী গ্রামের কৃষক মুহাম্মাদ আযীমুদ্দীন (২৮) সবজি চাষ করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করছেন। বেকার ও অভিশপ্ত জীবন থেকে সরে এসে শাকসবজির চাষ করে যে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়, আযীমুদ্দীন তার বাস্তব উদাহরণ। তিনি আজ শাকসবজী চাষ করে স্বাবলম্বী। মাত্র ১ একর ১২ শতক জমিতে চিচিংগা (কইডা) চাষ করে বছরে লাখ টাকা আয় করেন তিনি। সুষ্ঠু পরিকল্পনায় একই জমিতে একসঙ্গে একাধিক ফসল চাষ করে যে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব আযীমুদ্দীন তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। সংসার খরচ চালিয়ে তিনি বছরে প্রায় লাখ টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন। তিনি জানান, সবজী চাষে অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়া যায়। উপযেলা কৃষি অফিসের দিক নির্দেশনা পাওয়ায় আজ সল্প খরচে অধিক লাভবান হচ্ছেন তিনি।
ছোট গাছে বড় ফল স্বাদে অতুলনীয়
যশোর শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে শহরতলী ঘুরুলিয়া গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী প্রথমে বিল এলাকায় জমি ক্রয় করে সেখানে পুকুর কেটে মাছ চাষ শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি পুকুরের মাছ চাষের পাশাপাশি শুরু করেন সবজির আবাদ। তিনি সবজির সাথে পেঁপের আবাদ চালাতে থাকেন। বিভিন্ন বীজ থেকে পেঁপে উৎপাদন করে আশানুরূপ ফলন না পেয়ে তিনি পেঁপে বীজ উদ্ভাবনের কাজে হাত দেন। সফল হন তিনি। নিজস্ব উদ্ভাবিত বীজের নাম দেয়া হয় ‘যশোরী পেঁপে বীজ’। ঐ বীজের পেঁপের ফলন এতটা বেশী যে তার অনুকরণ ও অনুসরণ করতে আশপাশের অনেক পেঁপে চাষী প্রায় প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছে ইউসুফের সবজি বাগানে। ইউসুফ আলীর সবজি বাগানে সবজির জন্য আলাদা কোন জমি নেই। বড় বড় মোট ৯টি পুকুর রয়েছে ৭০ বিঘা জমির উপর। পুকুরপাড়ে অন্যান্য সবজির আবাদের পাশাপাশি পেঁপে আবাদ করছেন তিনি। পেঁপে গাছের ডালপালা মাড়িয়ে পুকুরের পাড় ধরে হাঁটলে যে কারো হৃদয় মন দুলে উঠবে আনন্দে। ছোট ছোট পেঁপে গাছে বড় বড় পেঁপে ঝুলে আছে। পেঁপের ভারে গাছ নুইয়ে পড়ছে। দেখলে মনে হবে হাইব্রিড পেঁপে। কিন্তু আসলে তা নয়। কৃষক ইউসুফের উদ্ভাবিত নিজস্ব জাতের পেঁপে। আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে এই পেঁপে উৎপাদন হয়। বছরে প্রতিটি পেঁপে গাছ থেকে কমপক্ষে ২ মণ পেঁপে পাওয়া যায়। মাত্র সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে কয়েক বছর ধরে প্রতিবছরে ২ লক্ষাধিক টাকা আয় করে থাকেন তিনি। যশোরী জাতের পেঁপের স্বাদ অন্যান্য পেঁপের চেয়ে অনেক ভিন্ন। তাই এ পেঁপে বীজের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন।
\ সংকলিত \