নওদাপাড়া, রাজশাহী ১৩ই নভেম্বর শুক্রবার : অদ্য সকাল ৯-টায় রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর পূর্ব পার্শ্বস্থ ময়দানে ‘সোনামণি কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২০’ অনুষ্ঠিত হয়। ‘সোনামণি’ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পৃষ্ঠপোষক ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকার লুজিয়ানা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সাবেক প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া (ঢাকা)। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আজ অধিকাংশ অভিভাবকরা সোনামণিদেরকে নিয়ে শুধু দুনিয়াবী শিক্ষার পিছনে ছুটছে। ফলে তারা দুনিয়ায় কিছু পেলেও দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এজন্য তারা আখেরাতে ক্ষতির দ্বার প্রান্তে উপনীত হচ্ছে। সোনামণি সংগঠন শিশু-কিশোরদের দুনিয়াবী শিক্ষার সাথে সঠিক দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে। তাই যারা ‘সোনামণি’ সংগঠনের সাথে যুক্ত হতে পেরেছে তারা সৌভাগ্যবান। তিনি বলেন, সোনামণিদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে হবে। তাহলে তারা তাদের মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। শুধু নিজের চিন্তায় বিভোর থাকলে চলবে না, বরং অন্যের জন্য কিছু করার চিন্তা করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে প্রকৃত ইসলামী চরিত্র নিয়ে আসতে হবে। তাহলে মানুষ ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি পাবে। ‘সোনামণি’ সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাই তিনি এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকগণকে ধন্যবাদ জানান।

সম্মেলনে স্বাগত ভাষণ পেশ করেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় পরিচালক মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর (অব.) ড. হারূণুর রশীদ, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষা বোর্ড’-এর চেয়ারম্যান, ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ‘সোনামণি’র পৃষ্ঠপোষক ড. আহমাদ আব্দুল্ল­াহ ছাকিব এবং আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী। অতিথিগণ স্ব স্ব ভাষণে সম্মেলনকে স্বাগত জানান ও সোনামণি বালক-বালিকাদের রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তোলার এই সুন্দর প্রচেষ্টার জন্য পরিচালকদের ধন্যবাদ জানান।

সভাপতির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, কচি-কাঁচা সোনামণিরা পিতা-মাতার সবচেয়ে আদর ও স্নেহের পাত্র। কোন বাপ-মা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে না। তেমনিভাবে সবচেয়ে প্রিয় সৃষ্টি মানুষকে আল্লাহ চান না যে তারা জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হৌক। তাই তিনি বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (তাহরীম ৬৬/৬)

তিনি বলেন, আমরা সোনামণিদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানের জন্যই ‘সোনামণি’ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। যাতে তারা তাওহীদ ও সুন্নাতের পথ ধরে জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে জান্নাতের অধিকারী হতে পারে। আজকাল অধিকাংশ মানুষ সুখের আশায় শুধু অর্থের পিছনে ছুটছে। অথচ আল্লাহকে চেনা ও তাঁর বিধান মানার মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত রয়েছে।

তিনি বলেন, সোনামণিদেরকে ছোট থেকেই হক-এর পথে দাওয়াত দেওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এখন থেকে প্রশিক্ষণ না নিলে বড় হয়েও সে মানুষের সামনে কথা বলতে পারবে না। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে আলাদা আলাদা মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। দুনিয়ায় আল্লাহর দেওয়া যোগ্যতা অনুযায়ী কেউ হাফেয হবে, কেউ আলেম হবে, কেউ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবে। সেই মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের। তাহলেই তারা বড় হয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে যথার্থ অবদান রাখতে পারবে। সেই সাথে আমরা যদি তাদের আক্বীদার ভিত্তি ঠিক করে দিতে পারি, তাহলে তারা ভবিষ্যতে পথভ্রষ্ট হবে না বলে আশা করা যায়। সেই ভিত্তি তৈরীর পথ হল সংগঠন। একটি বাড়ীতে ছোটরা থাকবে ‘সোনামণি’, যুবকরা থাকবে ‘যুবসংঘ’, বয়স্করা ‘আন্দোলন’ ও মা-বোনরা থাকবে ‘মহিলা সংস্থা’র আওতাভুক্ত। তাহলে সে বাড়ী জান্নাতী বাড়ীতে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। সেই জান্নাতী বাড়ী তৈরীর প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য যেসকল অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের এই সংগঠনে দিয়েছেন ও যারা আজকের প্রোগ্রামে এসেছে তাদেরকে তিনি আন্তরিক মুবারকবাদ জানান। সবশেষে তিনি অতিথিবৃন্দ, ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’, ‘সোনামণি’ ও আল-‘আওনের সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল, অভিভাবক ও সোনামণিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, রাজশাহী-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলা ‘সোনামণি’র পরিচালক মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান, রাজশাহী মহানগরীর সোনামণি পরিচালক আবু রায়হান প্রমুখ। সম্মেলনে ‘আন্দোলন’, ‘যুবসংঘ’, ‘সোনামণি’ ও ‘আল-‘আওন’-এর কেন্দ্রীয় ও যেলা দায়িত্বশীলগণ এবং ১৮টি যেলার বিপুল সংখ্যক সোনামণি অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে কুরআন তেলাওয়াত করে সোনামণি মুহাম্মাদ আব্দুল্ল­াহ আনছারী ও জাগরণী পরিবেশন করে ওবায়দুর রহমান। সম্মেলনে সঞ্চালক ছিলেন ‘সোনামণি’র কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক রবীউল ইসলাম, আবু হানীফ ও রাজশাহী মহানগর ‘সোনামণি’র পরিচালক আবু রায়হান। সম্মেলনে ‘সোনামণি; সদস্যরা ‘মানবিক মূল্যবোধ’ বিষয়ে মনোজ্ঞ ‘সংলাপ’ পরিবেশন করে। অতঃপর ‘কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২০’-এ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সভাপতি ও অতিথিবৃন্দ। উল্লেখ্য যে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় ১৫৮ জন বালক ও ৯৭ জন বালিকা সহ মোট ২৫৫ জন সোনামণি অংশগ্রহণ করে। তন্মধ্যে ৩৯ জন বিজয়ীকে বিশেষ পুরস্কার ও অন্যদের উৎসাহ পুরস্কার দেওয়া হয়। নিমেণ প্রতিযোগিতার বিষয় ও বিজয়ীদের নাম সমূহ উল্লেখ করা হ’ল :

১. হিফযুল কুরআন তাজবীদসহ (২৯ ও ৩০ তম পারা) : বালক গ্রুপ : ১ম : মুহাম্মাদ আব্দুল্ল­াহ আনছারী (বগুড়া), ২য় : ফরীদুয্যামান (নওগাঁ), ৩য় : ওমায়ের রহমান (যশোর)।

বালিকা গ্রুপ : ১ম : জান্নাতী খাতূন (বগুড়া), ২য় : নুজহাত নাহিয়ান শিফা (রাজশাহী), ৩য় : ফাহমীদা (নাটোর)।

২. অর্থসহ হিফযুল কুরআন ও অর্থসহ হিফযুল হাদীছ (সূরা আন‘আম ৭৪-৭৯ আয়াত এবং ১০টি হাদীছ)। বালক গ্রুপ : ১ম : নিয়ায মাহমূদ (নাটোর), ২য় : রোকনুয্যামান (রাজশাহী), ৩য় : হাবীবুল্ল­াহ (সাতক্ষীরা)। বালিকা গ্রুপ : ১ম : মাহফূযা সীমা (রাজশাহী), ২য় : রোকাইয়া খাতূন (রাজশাহী), ৩য় : মাঈশা খাতূন (বগুড়া)

৩. দো‘আ : বালক গ্রুপ : ১ম : মুহাম্মাদ মাহীন (টাঙ্গাইল), ২য় : আল-আমীন (বগুড়া), ৩য় : নাহীদ হাসান (গাইবান্ধা)। বালিকা গ্রুপ : ১ম : মরিয়ম (রাজশাহী), ২য় : ইশরাত জাহান (বগুড়া), ৩য় : মারজানা (নওগাঁ)।

. সাধারণ জ্ঞান : বালক গ্রুপ : ১ম : তাসনীম আহমাদ (দিনাজপুর), ২য় : শরীফুল ইসলাম (কুমিল্লা), ৩য় : আব্দুল্ল­াহ আল-যুবায়ের (দিনাজপুর)। বালিকা গ্রুপ : ১ম : আকলিমা আখতার (রংপুর), ২য় : আয়েশা  খাতূন (সাতক্ষীরা), ৩য় : সা‘দিয়াহ ইসলাম (রাজশাহী)।

৫. জাগরণী : বালক গ্রুপ : ১ম : ওবায়দুর রহমান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ), ২য় : ওবায়দুল্ল­াহ (গাইবান্ধা), ৩য় : শাহাদাত হোসাইন (সিরাজগঞ্জ)। বালিকা গ্রুপ : ১ম : রাশীদা আখতার (রাজশাহী), ২য় : মিছবাহ কবীর (রাজশাহী), ৩য় : সুমাইয়া আখতার (পাবনা)।

৬. আযান : বালক গ্রুপ : ১ম : নাফীস ইকবাল (কুষ্টিয়া), ২য় : মুশফিকুর রহমান (বগুড়া), ৩য় : আরযুল ইসলাম (রাজশাহী), ৩য় : ওবায়দুর রহমান (চাঁপাই নবাবগঞ্জ)।

৭. হস্তাক্ষর : আয়াতুল কুরসী (বাক্বারাহ ২৫৫ আয়াত) আরবী ও বাংলা। বালক গ্রুপ : ১ম : জাহিদ হাসান (রাজশাহী), ২য় : আব্দুর রহমান (সাতক্ষীরা), ৩য় : কাওছার হাবীব (রাজশাহী) বালিকা গ্রুপ : ১ম : মা‘রূফা খাতূন (রাজশাহী), ২য় : রোকাইয়া খাতূন (রাজশাহী), ৩য় : নাবীলা আখতার সাবীনা (ঝিনাইদহ)।

৮. গঠনতন্ত্র ও সোনামণি প্রতিভা : (পরিচালকদের জন্য) : ১ম : নাজমুন নাঈম (সাতক্ষীরা), ২য় : আতীকুর রহমান যাকারিয়া নওগাঁ), ৩য় : আব্দুল হাসীব (খুলনা)।






আরও
আরও
.