হজ্জকে কবুলযোগ্য করার উপায়

ভূমিকা : ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে হজ্জ হচ্ছে দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত। যার মাধ্যমে মুমিন যেমন পার্থিব জীবনে কল্যাণ লাভে সক্ষম হয়, তেমনি পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভ করে ধন্য হয়। মানুষের মাঝে পরকালীন চিন্তা প্রবল হয়, হাশরের পূর্বেই একই পোষাক পরে একই উদ্দেশ্যে সমবেত হয়। অযুত কণ্ঠে একই বাক্য উচ্চারিত হয়। ছোট-বড়, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ভুলে সকলে একই স্থানে পাশাপাশি অবস্থান করে। আধ্যাত্বিক ও নৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবতার প্রতি মূল্যবোধ নিয়ে হজ্জ পালনকারী স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে। নৈতিকতার উচ্চমার্গে পেঁŠছে যায় মানুষ। এসব তখনই হবে যখন তার হজ্জ কবুল হবে। এ নিবন্ধে কবুল হজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল।-

কবুল হজ্জের পরিচয় : হজ্জে মাবরূর বলতে কবুল হজ্জ বুঝায়। ফৎহুল বারী গ্রন্থে বলা হয়েছে,الْحَجُّ الْمَبْرُورُ هُوَ: الْحَجُّ الْمَقْبُول الَّذِي لاَ يُخَالِطُهُ إِثْمٌ وَلاَ رِيَاءٌ. ‘হজ্জে মাবরূর হ’ল কবুল হজ্জ যাতে কোন গোনাহ বা লৌকিকতা মিশ্রিত হয় না’।[1] কেউ কেউ বলেন, ‘হজ্জে মাবরূর’ বা কবুল হজ্জ বলতে ঐ হজ্জকে বুঝায়, (ক) যে হজ্জে কোন গোনাহ করা হয়নি এবং যে হজ্জের আরকান-আহকাম সবকিছু (ছহীহ সুন্নাহ মোতাবেক) পরিপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছে। (খ) হজ্জ থেকে ফিরে আসার পর পূর্বের চাইতে ভালো হওয়া এবং পূর্বের গোনাহে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া’।[2]

কবুল হজ্জের ফযীলত :

ইবাদতের মধ্যে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হ’ল হজ্জ সম্পাদন করা। এর মাধ্যমে পূর্বের পাপ যেমন মোচন হয়, তেমনি জান্নাত অবধারিত হয়। হজ্জের ফযীলতের আরো কতিপয় দিক নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. গুনাহ থেকে মুক্তি লাভ : হজ্জের মাধ্যমে বান্দা সদ্যপ্রসূত নবজাতকের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ حَجَّ لِلَّهِ، فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ্জ হ’তে ঐরূপ (নিষ্পাপ অবস্থায়) প্রত্যাবর্তন করে যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন’।[3] অর্থাৎ সে নবজাতক শিশুর ন্যায় যাবতীয় কাবীরা-ছাগীরা, প্রকাশ্য-গোপনীয় গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসে।[4] তিনি আরো বলেন, أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهَدَّمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا، وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ- ‘ইসলাম’ তার পূর্বেকার সকল পাপ বিদূরিত করে দেয় এবং ‘হিজরত’ তার পূর্বেকার সকল কিছুকে বিনাশ করে দেয়। একইভাবে ‘হজ্জ’ তার পূর্বের সবকিছুকে বিনষ্ট করে দেয়’?[5]

২. হজ্জ পালনকারীর সাথে পৃথিবীর সবকিছুই তালবিয়া পাঠ করে : হজ্জ ও ওমরা পালনকারীরা আল্লাহর মেহমান। তাই তাদের সম্মানে গাছ, পাথর মাটি সবকিছুই তাদের সাথে তালবিয়া পাঠ করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُلَبِّى إِلاَّ لَبَّى مَنْ عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ مِنْ حَجَرٍ أَوْ شَجَرٍ أَوْ مَدَرٍ حَتَّى تَنْقَطِعَ الأَرْضُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا- ‘যখন কোন মুসলিম তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডান ও বামে পাথর, বৃক্ষরাজি, মাটি সবকিছুই তার সাথে তালবিয়া পাঠ করে। এমনকি পৃথিবীর এ প্রান্ত হ’তে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত (তালবিয়া পাঠকারীদের দ্বারা) পূর্ণ হয়ে যায়’।[6]

৩. হজ্জ দারিদ্র্য দূর করে : বর্তমানে হজ্জ ও ওমরা পালন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে অনেকে খরচের ভয়ে এই ইবাদত পালন থেকে দূরে থাকে। কেউবা দারিদ্রে্যর ভয় করে। অথচ হজ্জ ও ওমরা অসচ্ছলতা দূর করে সচ্ছলতা আনয়ন করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةُু ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরাহর মধ্যে ধারাবাহিকতা বজায় রাখো (অর্থাৎ সাথে সাথে কর)। কেননা এ দু’টি মুমিনের দরিদ্রতা ও গোনাহ সমূহ দূর করে দেয়, যেমন (কামারের) হাপর লোহা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের মরীচিকা দূর করে দেয়। আর কবুল হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ব্যতীত কিছুই নয়’।[7]

৪. হজ্জ অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিহাদ : জিহাদের মাধ্যমে শাহাদত লাভ করা যায়। শহীদদের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়, কবরের আযাব মাফ হয় এবং কবরের ফিৎনা থেকে মুক্তি মেলে। কিন্তু সবার পক্ষে জিহাদে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। যেমন নারীদের জন্য জিহাদে গমনের সুযোগ হয় না। তাই তারা হজ্জের মাধ্যমে জিহাদের মর্যাদা লাভ করতে পারে। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম,يَا رَسُولَ اللهِ! أَلاَ نَغْزُوْا وَنُجَاهِدُ مَعَكُمْ؟ فَقَالَ : لَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ الْحَجُّ، حَجٌّ مَبْرُوْرٌ. فَقَالَتْ عَائِشَةُ فَلاَ أَدَعُ الْحَجَّ بَعْدَ إِذْ سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم- ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ ও জিহাদে অংশগ্রহণ করব না? তিনি বললেন, তোমাদের জন্য উত্তম ও উৎকৃষ্ট জিহাদ হ’ল হজ্জ, কবুল হজ্জ। আয়েশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হ’তে এ কথা শোনার পর আমি আর কখনো হজ্জ ছাড়িনি’।[8] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আয়েশা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মহিলাদের উপরে ‘জিহাদ’ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। তবে সেখানে যুদ্ধ নেই। সেটি হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’।[9]

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন,جِهَادُ الْكَبِيْرِ وَالصَّغِيْرِ وَالضَّعِيْفِ وَالْمَرْأَةِ الْحَجُّ وَالْعُمْرَةُ، ‘বড়, ছোট, দুর্বল ও মহিলা সকলের জন্য জিহাদ হ’ল হজ্জ ও ওমরাহ’।[10] অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! إِنِّي جَبَانٌ، وَإِنِّيْ ضَعِيفٌ، فَقَالَ: هَلُمَّ إِلَى جِهَادٍ لَا شَوْكَةَ فِيْهِ: الْحَجِّ ‘আমি তো ভীতু এবং দুর্বল (আমার উপর কি জিহাদ ফরয)। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ছুটে এসো এমন এক জিহাদের দিকে যেখানে কোন কষ্ট নেই। আর তা হ’ল হজ্জ’।[11]

৫. হজ্জ অন্যতমশ্রেষ্ঠ ইবাদত : ইসলামের ইবাদতগুলির মধ্যে হজ্জ অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। ঈমান ও জিহাদের পরেই যার স্থান। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল,أَىُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ : إِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ: جِهَادٌ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ. قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ : حَجٌّ مَبْرُوْرٌ- ‘কোন আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপরে ঈমান আনা। বলা হ’ল, তারপর কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হ’ল, তারপর কি? তিনি বললেন, কবুল হজ্জ’।[12]

৬. হাজীগণ আল্লাহর মেহমান : হজ্জ পালনকারীগণ আল্লাহর সম্মানিত মেহমান। আল্লাহ তাদের দো‘আ কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ) এরশাদ করেন, وَفْدُ اللهِ ثَلَاثَةٌ: الْغَازِيْ، وَالْحَاجُّ، وَالْمُعْتَمِرُ- ‘আল্লাহর মেহমান হ’ল তিনটি দল- আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী, হজ্জকারী ও ওমরাহ্কারী’।[13] অন্যত্র তিনি বলেন,الْحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ، ‘হজ্জ ও ওমরাহ পালনকারীগণ আল্লাহর মেহমান। তারা দো‘আ করলে তিনি কবুল করেন। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন’।[14] অপর বর্ণনায় রয়েছে, ‘তারা কোন কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন’।[15]

৭. আল্লাহ কর্তৃক হাজীদের প্রশংসা : মহান আল্লাহ ফেরেশতাগণের সম্মুখে হজ্জ পালনকারীদের উচ্চ প্রশংসা করেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يَعْتِقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيْهِ عَبْدًا أَوْ أَمَةً مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِىْ بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ وَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ؟ ‘আরাফার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন আল্লাহ এত অধিক পরিমাণ বান্দা-বান্দীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করেন না। ঐদিন আল্লাহ নিকটবর্তী হন। অতঃপর আরাফাহ ময়দানের হাজীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন ও বলেন, দেখ ঐ লোকেরা কি চায়’?[16] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘ওরা আল্লাহর মেহমান। আল্লাহ ওদের ডেকেছেন তাই ওরা এসেছে। এখন ওরা চাইবে আর আল্লাহ তা দিয়ে দিবেন’।[17]

৮. নিয়তের কারণে হজ্জ না করেও হজ্জের নেকী লাভ : হজ্জের খালেছ নিয়তের কারণে কেউ যদি হজ্জ করতে নাও পারে তথাপি সে হজ্জের পূর্ণ ছওয়াব লাভ করবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, مَنْ خَرَجَ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا أَوْ غَازِيًا ثُمَّ مَاتَ فِيْ طَرِيْقِهِ كَتَبَ اللهُ لَهُ أَجْرَ الْغَازِيْ وَالْحَاجِّ وَالْمُعْتَمِرِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ- ‘যে ব্যক্তি হজ্জ, ওমরাহ কিংবা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হ’ল এবং রাস্তায় মৃত্যুবরণ করল, আল্লাহ তার জন্য ক্বিয়ামত অবধি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, হজ্জ ও ওমরাহকারীর পূর্ণ নেকী লিখে দিবেন’।[18]

৯. হজ্জে মৃত ব্যক্তিরা ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠবে : হজ্জের সফরে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠবে। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে আরাফাতে অবস্থানকালে অকস্মাৎ তার সওয়ারী হ’তে পড়ে যায়। এতে তাঁর ঘাড় মটকে গেল অথবা রাবী বলেন, ঘাড় মটকে দিল। (যাতে তিনি মারা গেলেন)। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বললেন, তাঁকে বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও এবং দু’কাপড়ে তাঁকে কাফন দাও; তাঁকে সুগন্ধি লাগাবে না এবং তার মাথা আবৃত করবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাঁকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উত্থিত করবেন’।[19]

১০. হজ্জের একমাত্র বিনিময় জান্নাত : মুমিনের পার্থিব জীবনের সকল কর্মকান্ডের মূল লক্ষ্য হ’ল জান্নাত লাভ করা। আর কবুল হজ্জের মাধ্যমে তা লাভ করা যায়। কেননা কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হ’ল জান্নাত। রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الْجَنَّةُ- ‘এক ওমরাহ অপর ওমরাহ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের (ছগীরা গুনাহের) কাফফারা স্বরূপ। আর জান্নাতই হ’ল কবুল হজ্জের একমাত্র প্রতিদান’।[20]

হজ্জকে কবুলযোগ্য করার উপায় :

যে কোন আমল আল্লাহর নিকটে কবুলযোগ্য করার জন্য কিছু নিয়ম ও শর্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে হজ্জ কবুল হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত রয়েছে। সেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. বিশুদ্ধ নিয়ত : প্রতিটি কাজের শুরুতেই নিয়ত খালেছ করে নেওয়া যরূরী। আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে সকল কাজে ইখলাছ অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, وَمَا أُمِرُوْا إِلاَّ لِيَعْبُدُوْا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَاءَ- ‘অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে’ (বাইয়েনাহ ৯৮/৫)

নবী করীম (ছাঃ)-কেও আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন ইখলাছের সাথে ইবাদত করার জন্য। তিনি বলেন,قُلِ اللهَ أَعْبُدُ مُخْلِصًا لَهُ دِيْنِيْ، ‘বল, আমি আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর জন্য আমার আনুগত্যকে একনিষ্ঠ করার মাধ্যমে’ (যুমার ৩৯/১৪)

মুমিনের সব কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে হওয়া আবশ্যক। যেমন আল্লাহ বলেন, قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ- ‘বল, আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য। তঁার কোন শরীক নেই। আর এ ব্যাপারেই (অর্থাৎ শরীক না করার ব্যাপারে) আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম’ (আন‘আম ৬/১৬২-১৬৩)

আর আমলের প্রতিদান প্রাপ্তি নির্ভর করে নিয়তের উপরে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، ‘নিশ্চয়ই কর্মের প্রতিফল নিয়ত অনুযায়ী হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে’।[21] এজন্য ইবনু বাত্ত্বাল (রহ.) বলেন,أن الأعمال الصالحة لا تزكو ولا تتقبل إلا مع الاحتساب وصدق النيات، ‘বিশুদ্ধ নিয়ত ও নেকী লাভের প্রত্যাশা ছাড়া নেক আমল পরিশুদ্ধ হয় না এবং কবুল হয় না’।[22]

২. রাসূল (ছাঃ)-এর যথাযথ অনুসরণ : হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য তা সুন্নাত মোতাবেক সম্পাদিত হওয়া যরূরী। অন্যথা তা কবুল হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهْوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করলো যাতে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[23] তিনি অন্যত্র বলেন, مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনী বিষয়ে এমন কিছু উদ্ভাবন করে যা তাতে নেই, তা পরিত্যাজ্য’।[24]

৩. হজ্জের পূর্বে দৈহিক ও মানসিক প্রস্ত্ততি : বিশুদ্ধভাবে হজ্জ সম্পাদনের জন্য হজ্জের বিধি-বিধান অবগত হওয়া যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজ উটের পিঠে বসে কংকর মারার সময় বলেন, لِتَأْخُذُوا مَنَاسِكَكُمْ فَإِنِّى لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَحُجُّ بَعْدَ حَجَّتِى هَذِهِ. ‘তোমরা আমার কাছ থেকে হজ্জের নিয়ম-কানূন শিখে নাও। কেননা আমি জানি না, আমার এ হজ্জের পরে আমি আর হজ্জ করতে পারব কি-না’।[25] তিনি আরো বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، خُذُوا مَنَاسِكَكُمْ، فَإِنِّي لَا أَدْرِي لَعَلِّي لَا أَحُجُّ بَعْدَ عَامِي هَذَا، ‘হে মানবমন্ডলী! আমার নিকট থেকে তোমরা হজ্জের নিয়ম-নীতি শিখে নাও। কারণ আমি জানি না এই হজ্জের পর আমি আর হজ্জ করতে পারব কি-না’।[26] অতএব হজ্জের প্রতিটি অনুষ্ঠান সঠিকভাবে খুবই সম্মান ও নিবেদিতপ্রাণ হয়ে সম্পাদন করা কর্তব্য। সেই সাথে দৈহিক ও আর্থিক বিষয়ে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা। কেননা শরীর সুস্থ না থাকলে তওয়াফ-সাঈ ইত্যাদি পালন করা কষ্টসাধ্য হবে। আবার আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও হজ্জ সম্পাদন সম্ভব নয়। তাই সার্বিক প্রস্ত্ততি সম্পন্ন করতে হবে হজ্জের পূর্বেই।

৪. হালাল পাথেয়র ব্যবস্থা করা : হজ্জ সফরে গমনের পূর্বে পরিবারের জন্য ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সফরের জন্য হালাল পাথেয়-এর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। হালাল রূযী ছাড়া কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করেন না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ وَلاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا... ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ ‘আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিস ব্যতীত কবুল করেন না। ...অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফরে বের হয় এবং তার চুলগুলো এলামেলো ও কাপড় ধুলোমলিন। অতঃপর সে তার দু’হাত আকাশের দিকে তুলে বলে, হে রব! হে রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম, সে হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় কেমন করে তার দো‘আ কবুল হ’তে পারে’?[27]

৫. সদাচরণ, উত্তম চরিত্র ও সৎকাজে সময় ব্যয় : কবুল হজ্জের মাধ্যমে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। সেজন্য তাকে ভদ্র-শালীন হওয়া দরকার। সেই সাথে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,صِبْغَةَ اللهِ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللهِ صِبْغَةً وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ، ‘তোমরা আল্লাহর রঙ (আল্লাহর দ্বীন) কবুল করো। আর আল্লাহর রঙের চাইতে উত্তম রঙ কার হ’তে পারে’? (বাক্বারাহ ২/১৩৮)

রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّمَا بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ صَالِحَ الأَخْلاَقِ ‘নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[28] তিনি আরো বলেন,بُعِثْتُ لأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الأَخْلاقِ، ‘আমি উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দানের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[29]

চরিত্রবান ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট প্রিয়। তিনি বলেন, إِنَّ مِنْ أَحَبِّكُمْ إِلَيَّ أَحْسَنَكُمْ أَخْلَاقًا- ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আমার কাছে অধিক প্রিয় যার চরিত্র উত্তম’।[30] সুতরাং হজ্জ পালনকারীকে উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য হাজীদের সাথে সদাচরণের পাশাপাশি তাদের জন্য সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।

৬. হজ্জের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করা : হজ্জ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা সমগ্র জীবনে কেবল একবার ফরয। এটা ইসলামের একটি বড় শে‘আর বা নিদর্শন। আল্লাহ বলেন,ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ، ‘উপরেরগুলি এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশসমূহকে সম্মান করে, নিশ্চয়ই সেটি হৃদয় নিঃসৃত আললাহভীতির প্রকাশ’ (হজ্জ ২২/৩২)। সুতরাং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারলে সঠিকভাবে হজ্জ পালন করা সহজসাধ্য হবে।

৭. আল্লাহকে অধিক স্মরণ করা : হজ্জের মৌসুমে ও হজ্জ পরবর্তী সময়ে বেশী বেশী আল্লাহর যিকর করা কর্তব্য। যেমন আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا، ‘অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে, তখন তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ কর যেভাবে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ কর, বরং তার চাইতেও বেশী স্মরণ’ (বাক্বারাহ ২/২০০)। তিনি আরো বলেন, فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ، ‘আর যখন তোমরা আরাফা থেকে (মিনায়) ফিরবে, তখন (মুযদালিফায়) মাশ‘আরুল হারামে পেঁŠছে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তোমরা তঁাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৮)

৮. পরকালের কথা অধিক স্মরণ করা :

হজ্জ বান্দাকে পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কেননা সে হজ্জের জন্য নিজ দেশ ও শহর থেকে বের হয়ে যায় এবং পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হজ্জ পালনকারী সব শোভা-সৌন্দর্য বর্জন করে সেলাইবিহীন কেবল দু’টি সাদা কাপড় পরিধান করে। যা তাকে মৃত্যু পরবর্তী কাফন পরিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আরাফা ও মুযদালিফায় অবস্থান তাকে হাশরের ময়দানে বস্ত্রহীন ও নগ্নপদে সমবেত হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এসবের মধ্য দিয়ে সে পরকালীন অবস্থা স্মরণ করে। এভাবে আখেরাতের কথা অধিক স্মরণ করা তাকে অধিক ইবাদত পালনে উদ্বুদ্ধ করে। যা তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হ’তে সহায়তা করে। 

৯. আল্লাহর জন্য বিনীত হওয়া : হজ্জে বান্দা আল্লাহর জন্য সর্বাধিক বিনীত হয়। সেলাইবিহীন দু’টুকরা সাদা কাপড় পরিধান করে বের হওয়া, তওয়াফ, সাঈ, আরাফায় দিনে অবস্থান ও মুযদালিফায় রাত্রি কাটানো, জামরায় পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী করা, মাথা মুন্ডন বা চুল ছোট করা প্রভৃতি কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে বান্দা স্বীয় রবের নিকটে চূড়ান্ত বিনয় প্রকাশ করে। যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর মহববত ও রেযামন্দী অন্বেষণ করে। এই বিনয়-নম্রতা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বজায় রাখা কর্তব্য। কেননা এর মাধ্যমে মর্যাদার স্তর উন্নীত হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَوَاضَعَ للهِ رَفَعَهُ اللهُ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনীত হয়, আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন’।[31]

১০.আল্লাহর কাছে দো‘আ করা : বান্দার জন্য কর্তব্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। আল্লাহ বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (গাফের/মুমিন ৪০/৬০)। তদ্রূপ হজ্জ কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ করতে হবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) (উটের পিঠে) একটি পুরাতন জিন ও পালানে উপবিষ্ট অবস্থায় হজ্জ করেন। তাঁর পরিধানে ছিল একটি চাদর, যার মূল্য চার দিরহাম বা তারও কম। অতঃপর তিনি বলেন,اللَّهُمَّ حَجَّةٌ لَا رِيَاءَ فِيهَا، وَلَا سُمْعَةَ ‘হে আল্লাহ! এ এমন হজ্জ, যাতে কোন লৌকিকতা বা প্রদর্শনেচ্ছা নেই’।[32]

জীবন-জীবিকার প্রয়োজনীয় সবকিছু আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করার জন্য রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়ে বলেন,لِيَسْأَلْ أَحَدُكُمْ رَبَّهُ حَاجَتَهُ كُلَّهَا حَتَّى يَسْأَلَهُ شِسْعَ نَعْلِهِ إِذَا انْقَطَعَ وَحَتَّى يَسْأَلَهُ المِلْحَ ‘তোমরা তোমাদের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাইবে, এমনকি যদি জুতার ফিতা ছিড়ে যায় তাহ’লে তাও তাঁর কাছেই চাইবে। এমনকি লবণও তাঁর কাছেই চাইবে’।[33] অন্যত্র এসেছে, আয়েশা (রাঃ) বলেন,سَلُوا اللهَ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى الشِّسْعَ، فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ لَمْ يُيَسِّرْهُ لَمْ يَتَيَسَّرْ، ‘তোমরা সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইবে। এমনকি জুতার ফিতাও (চাও)। কারণ আল্লাহ তা সহজ না করলে তা (পাওয়া) সহজ হবে না’।[34] তাই আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে যেন তিনি মানব জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্জ কবুল করেন।

১১. সকল প্রকার অশ্লীলতা পরিহার করা : ইসলামের প্রতিটি ইবাদত মুসলিমকে উত্তম নৈতিকতা অর্জনে সহায়তা করে। মুমিনের জীবনব্যাপী ইবাদতসমূহ তাকে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট করে। যেমন ছালাত অশ্লীল ও নিন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে; ছিয়াম আল্লাহভীরুতা বৃদ্ধি করে; যাকাত আত্মাকে হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা, কৃপণতা ইত্যাদি থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে। আর হজ্জ ইসলামের বড় ইবাদত ও মহান নিদর্শন, যা মুসলিমকে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও উত্তম আচরণ শিক্ষা দেয়। আল্লাহ বলেন,الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَاأُولِي الْأَلْبَابِ ‘হজ্জের মাসগুলি নির্ধারিত। অতএব যে ব্যক্তি এই মাসসমূহে হজ্জ-এর সংকল্প করবে (অর্থাৎ ইহরাম বঁাধবে), তার জন্য হজ্জের সময় স্ত্রী মিলন, দুষ্কর্ম ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। তোমরা যেসব সৎকর্ম কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন, আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করো। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হ’ল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। সুতরাং হজ্জ পরবর্তী সময়েও অশ্লীল কথা-কাজ পরিহার করা, কর্কষ ভাষা ও রূঢ় আচরণ ত্যাগ করা, কোন মানুষকে কষ্ট না দেওয়া, প্রতিবেশী ও অন্যদের সাথে সদাচরণ করা, পরোপকার ও জনসেবা করার চেষ্টা করা ইত্যাদি সৎকাজ অধিক হারে করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ حَجَّ للهِ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمٍ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করেছে। যার মধ্যে সে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কার্য করেনি, সে হজ্জ হতে ফিরবে সে দিনের ন্যায় (নিষ্পাপ অবস্থায়) যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিলেন’।[35] হজ্জে ইবাদতের উদ্দেশ্যে গমন করে খাওয়া-থাকা নিয়ে মুআল্লেমের সাথে ঝগড়া করা; তওয়াফ, সাঈ ও পাথর নিক্ষেপের সময় ঠেলাঠেলি করা; মক্কা থেকে আরাফা, মুযদালিফা ও মিনায় গমনকালে যানবাহনে হুড়াহুড়ি ও অন্যদের সাথে বসচায় লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি অবশ্যই বর্জনীয়।

কবুল হজ্জের আলামত সমূহ :

হজ্জ কবুল হ’ল কি-না তা বোঝার জন্য নানা নিদর্শন রয়েছে। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

১. দ্বীনী কাজে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর অগ্রণী হওয়া : হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের পরে হাজীর মাঝে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যেমন পূর্বের চেয়ে তার চাল-চলন পরিশীলিত হয়, ব্যবহার মার্জিত হয়, ভাষা নম্র হয়। আল্লাহর আনুগত্য, রাসূলের অনুসরণে অগ্রণী হয়, ইবাদতের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়। ভাল কাজের প্রতি আগ্রহ ও মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকা এবং অধিক হারে তওবা করতে থাকে। পবিত্র ও পরিশুদ্ধ জীবন যাপনই হয় তার একমাত্র ব্রত। এসবই কবুল হজ্জের নিদর্শন।[36]

২. দ্বীনে হকের উপরে অবিচল থাকা : কবুল হজ্জের অন্যতম আলামত হচ্ছে হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর দ্বীনে হকের উপরে অবিচল থাকা। অতএব মুসলিম হজ্জ থেকে ফিরে আল্লাহর আনুগত্যে থাকবে, অবাধ্যতা পরিহার করবে। দুনিয়াবিমুখ হবে এবং আখেরাতের চিন্তায় মশগূল থাকবে। হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,وعلامة هذا هو العودة (من الحج) نبذ الدنيا والطموح إلى الآخرة ‘এর (কবুল হজ্জের) নিদর্শন হ’ল, হজ্জ থেকে ফেরার পর দুনিয়াবিমুখ হওয়া এবং আখিরাতের প্রতি আগ্রহী হওয়া’। তিনি আরো বলেন, الحج المبرور: أن يرجع زاهداً في الدنيا، راغباً في الآخرة، ‘হজ্জে মাবরূর হচ্ছে, হজ্জকারী দুনিয়াত্যাগী ও আখেরাতমুখী হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে’। এর সাক্ষ্য দেয় আল্লাহর বাণী,وَالَّذِينَ اهْتَدَوْا زَادَهُمْ هُدًى وَآتَاهُمْ تَقْوَاهُمْ ‘আর যারা সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে, আল্লাহ তাদের হেদায়াত বৃদ্ধি করে দেন এবং তাদেরকে আল্লাহভীরুতা দান করেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/১৭)

৩. যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকা : কবুল হজ্জের মাধ্যমে হজ্জ পালনকারী নিষ্পাপ হয়ে যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَنَّ الْإِسْلَامَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يهدم مَا كَانَ قبله، ‘ইসলাম, হিজরত এবং হজ্জ মুমিনের বিগত দিনের সকল গুনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’।[37] সুতরাং গোনাহ থেকে মুক্ত হওয়ার পর সে তাতে ফিরে যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছিলেন,سَتَلْقَوْنَ رَبَّكُمْ، فَسَيَسْأَلُكُمْ عَنْ أَعْمَالِكُمْ، أَلاَ فَلاَ تَرْجِعُوا بَعْدِى ضُلاَّلاً، ‘সত্বর তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। অতএব সাবধান! তোমরা আজকের দিনের পর যেন পুনরায় পথভ্রষ্ট হয়ো না’।[38]

আর পাপাচার করলে আল্লাহ রাগান্বিত হন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,وَإِيَّاكَ وَالْمَعْصِيَةَ فَإِنَّ بِالْمَعْصِيَةِ حَلَّ سَخَطُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، ‘সর্বদা গোনাহ থেকে দূরে থাকবে। কেননা গোনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়’।[39] সুতরাং পাপাচার থেকে বিরত থাকতে পারা কবুল হজ্জের আলামত।

৪. উত্তম মুসলিম হওয়ার চেষ্টা করা : কবুল হজ্জের আরেকটি নিদর্শন হ’ল হজ্জ পালনকারী আল্লাহর উত্তম বান্দা হওয়ার চেষ্টা করবে। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,أن يكون الحاج بعد رجوعه خيرًا مما كان، فهذا من علامات قبول الحج، وأن يكون خيره مستمرًا فى ازدياد، ‘হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর হাজী পূর্বাপেক্ষা উত্তম হবেন। এটা হচ্ছে কবুল হজ্জের নিদর্শন। আর তার কল্যাণবৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে’। সুতরাং হজ্জের পরে উত্তম মুমিন হ’তে সচেষ্ট থাকা হজ্জ কবুল হওয়ার আলামত।[40]

৫. আনুগত্য বা ইবাদত করার তাওফীক লাভ করা : আল্লাহর আনুগত্য তথা ইবাদত অধিকহারে করতে পারার তাওফীক লাভ করা হজ্জ কবুলের অন্যতম নিদর্শন। যেমন হাসান বাছরী (রহ.) বলেন,إن من جزاء الحسنة الحسنة بعدها، ومن عقوبة السيئة السيئةُ بعدها، فإذا قبل الله العبد فإنه يوفقه إلى الطاعة، ويصرفه عن المعصية، ‘নেক আমলের প্রতিদান হ’ল সেই আমলের পরে আরেকটি ভালো আমল করতে পারা। আর পাপের পরিণাম হ’ল সেই পাপের পরে আরেকটি পাপ করে ফেলা। কারণ আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে কবুল করে নেন, তখন তাকে তঁার আনুগত্য করার তাওফীক্ব দেন এবং তাকে পাপ থেকে দূরে রাখেন’।[41]

৬. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাযত করা : কবুল হজ্জের নিদর্শন যেমন উত্তম কাজ ও নেক আমল অধিক হারে করা, তেমনি দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হেফাযত করা। সুতরাং হাত দিয়ে এমন জিনিস ধরবে না এবং পা দিয়ে এমন জায়গায় গমন করবে না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন। জিহবা দ্বারা এমন কথা বলবে না, যা হারাম। যেমন গীবত-তোহমত করা, মিথ্যা বলা প্রভৃতি। মুখ দ্বারা হালাল ব্যতীত কোন খাবার ভক্ষণ করবে না। এভাবে সে নিজের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের হেফাযত করবে।

৭. নেকী অর্জনের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া : হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। এই আমলের পরে অন্যান্য সৎকাজ অধিক হারে করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জেনে রাখ যে, পার্থিব জীবন খেল-তামাশা, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া কিছু নয়। যার উপমা বৃষ্টির ন্যায়। যার উৎপাদন কৃষককে চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়। যাকে তুমি হলুদ দেখতে পাও। অতঃপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর পরকালে রয়েছে (কাফেরদের জন্য) কঠিন শাস্তি এবং (মুমিনদের জন্য) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন ধেঁাকার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ مِنَ النَّاسِ مَفَاتِيحَ لِلْخَيْرِ، مَغَالِيقَ لِلشَّرِّ، وَإِنَّ مِنَ النَّاسِ مَفَاتِيحَ لِلشَّرِّ مَغَالِيقَ لِلْخَيْرِ، فَطُوبَى لِمَنْ جَعَلَ اللهُ مَفَاتِيحَ الْخَيْرِ عَلَى يَدَيْهِ، وَوَيْلٌ لِمَنْ جَعَلَ اللهُ مَفَاتِيحَ الشَّرِّ عَلَى يَدَيْهِ ‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক আছে যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। সেই লোকের জন্য সুসংবাদ যার দু’হাতে আল্লাহ কল্যাণের চাবি রেখেছেন এবং সেই লোকের জন্য ধ্বংস যার দু’হাতে আল্লাহ অকল্যাণের চাবি রেখেছেন’।[42]

আল্লাহ বলেন,أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ ‘এরাই দ্রুত কল্যাণ কাজে ধাবিত হয় এবং তারা তার প্রতি অগ্রগামী হয়’ (মুমিনূন ২৩/৬১)। হযরত বারা বিন আযেব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কবরে নেককার ব্যক্তিকে তার নেক আমল বলবে, আমি তোমার নেক আমল। আল্লাহর কসম! আমি জানতাম, তুমি সৎকর্মে ছিলে অগ্রণী ও অসৎকর্মে পশ্চাৎপদ। অতএব আল্লাহ তোমাকে উত্তম বদলা দিন।[43] অতএব নেকী অর্জনে তৎপর হওয়া হজ্জ কবুল হওয়ার অন্যতম আলামত।

উপসংহার : হজ্জের জন্য নিজ এলাকা ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে মক্কা মু‘আয্যমায় গমন করতে হয়। সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে শ্রমসাধ্য কষ্টকর বিধান সমূহ পালন করতে হয়। আর এর মাধ্যমে পাপমুক্ত জীবন লাভ করা যায়। পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি মেলে এবং জান্নাতে দাখিল হওয়া যায়। সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ এই ইবাদত যাতে আল্লাহর নিকটে কবুল হয় সেজন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে কবুল হজ্জ করার তাওফীক দান করুন-আমীন!


[1]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফৎহুল বারী, ১/৭৮।

[2]. ফৎহুল বারী ৩/৪৪৬; হা/১৫১৯-এর ব্যাখ্যা।

[3]. বুখারী হা/১৫২১; মুসলিম হা/১৩৫০; মিশকাত হা/২৫০৭

[4]. ফাৎহুল বারী ৩/৩৮২

[5]. মুসলিম হা/১২১; ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৫১৫; মিশকাত হা/২৮

[6]. তিরমিযী হা/৮২৮; মিশকাত হা/২৫৫০; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৭০

[7]. তিরমিযী হা/৮১০; নাসাঈ হা/২৬৩০; মিশকাত হা/২৫২৪; ছহীহাহ হা/১২০০; ছহীহুত তারগীব হা/১১০৫

[8]. বুখারী হা/১৮৬১; আহমাদ হা/২৫৫৮৪১; মিশকাত হা/২৫৩৪

[9]. ইবনু মাজাহ হা/২৯০১; মিশকাত হা/২৫৩৪; ছহীহুত তারগীব হা/১০৯৯

[10]. নাসাঈ হা/২৬২৬; ছহীহুত তারগীব হা/১১০০

[11]. মু‘জামুল কাবীর হা/২৯১০; ছহীহুল জামে‘ হা/৭০৪৪।

[12]. বুখারী হা/১৫১৯; মুসলিম হা/৮৩; মিশকাত হা/২৫০৬

[13]. নাসাঈ হা/২৬২৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১১২; ছহীহুত তারগীব হা/১১০৯; মিশকাত হা/২৫৩৭

[14]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯২; ছহীহুত তারগীব হা/১১০৯; মিশকাত হা/২৫৩৬।

[15]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; ছহীহাহ হা/১৮২০

[16]. মুসলিম হা/১৩৪৮; মিশকাত হা/২৫৯৪; ছহীহাহ হা/২৫৫১

[17]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯৩; ছহীহাহ হা/১৮২০

[18]. বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান হা/৪১০০; ছহীহুত তারগীব হা/১১১৪; ছহীহাহ হা/২৫৫৩ ; মিশকাত হা/২৫৩৯

[19]. বুখারী হা/১২৬৬; মুসলিম হা/১২০৬; মিশকাত হা/১৬৩৭

[20]. বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮

[21]. বুখারী হা/১; মুসলিম হা/১৯০৭; মিশকাত হা/১।

[22]. ইবনু বাত্ত্বাল, শারহু ছহীহিল বুখারী ৪/২১।

[23]. মুসলিম হা/১৭১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৯৮।

[24]. বুখারী হা/২৬৯৭; মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০।

[25]. মুসলিম হা/১২৯৭; আবুদাঊদ হা/১৯৭০; ইরওয়াউল গালীল হা/১০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২; মিশকাত হা/২৬১৮।

[26]. নাসাঈ হা/৩০৬২; ইরওয়া হা/১০৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৮৮২।

[27]. মুসলিম হা/১০১৫; মিশকাত হা/২৭৬০।

[28]. আহমাদ হা/৮৯৩৯; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩৪৯।

[29]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৭৯৭৮; ছহীহাহ হা/৪৫।

[30]. বুখারী হা/৩৭৫৯; মিশকাত হা/৫০৭৪।

[31]. ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৬২; ছহীহাহ হা/২৩২৮।

[32]. ইবনু মাজাহ হা/২৮৯০; ছহীহাহ হা/২৬১৭।

[33]. তিরমিযী হা/৩৯৭৩; ছহীহ ইবনু হিববান ৩/১৪৮, ৩/১৭৬; তারাজু‘আতুল আলবানী হা/৭১, সনদ হাসান।

[34]. মুসনাদ আবী ইয়া‘লা হা/৪৫৬০; তারাজু‘আতুল আলবানী হা/৩২, সনদ মওকূফ হাসান; যঈফাহ হা/২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৭।

[35]. বুখারী হা/১৫২১; মিশকাত হা/২৫০৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৯৭।

[36]. শায়খ ছালেহ ফাওযান, মাজমূ‘ ফাতাওয়া, ২/৪৯৪-৯৫।

[37]. মুসলিম হা/১৯২; মিশকাত হা/২৮।

[38]. বুখারী হা/৪৪০৬; মিশকাত হা/২৬৫৯।

[39]. আহমাদ হা/২২১২৮, মিশকাত হা/৬১; ইরওয়াউল গালীল হা/২০২৬; ছহীহুত তারগীব হা/৫৭০।

[40]. নববী, আল-ঈযাহ ফীল মানাসিক পৃ. ১৭০।

[41]. ইবনুল ক্বাইয়িম, মিফতাহু দারিস সা‘আদাহ, ১/২৯৯।

[42]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/১৩৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/২২২৩।

[43]. আলবানী, আহকামুল জানায়েয হা/১০৮।






বিষয়সমূহ: হজ্জ ও ওমরাহ
সুন্নাত উপেক্ষার পরিণাম - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
একটি ঐতিহাসিক রায়ের ইতিবৃত্ত - রেযাউল করীম
ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি, ক্রমবিকাশ এবং মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব (৩য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ইলম অন্বেষণও শিক্ষাদানের গুরুত্বও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
মানুষকে কষ্ট দেওয়ার পরিণতি - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
রিয়া : পরিচয় ও প্রকারভেদ - ড. নূরুল ইসলাম
শবেবরাত - আত-তাহরীক ডেস্ক
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
শোকর (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল-কুরআনে বিজ্ঞানের নিদর্শন (৩য় কিস্তি) - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
এক হাতে মুছাফাহা : একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.