দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম ও মাসিক মদীনা সম্পাদক সুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (৮১) গত ২৫শে জুন শনিবার বিকেল সাড়ে ৬-টায় ইফতারের কিছু পূর্বে তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেঊন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও দুই কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন।
২৬শে জুন বাদ যোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তাঁর প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন নিজ যেলা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপযেলার আনছারনগর গ্রামে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। আল্লাহ রববুল আলামীন তাঁর সকল গুনাহখাতা মাফ করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন- আমীন!
ইসলামী একাডেমী প্রতিষ্ঠা : বিংশ শতাব্দীর ষষ্ঠ দশকের মাঝামাঝিতে মাওলানা মুহিউদ্দীন খান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য ও ডেপুটি স্পীকার এটিএম আব্দুল মতীনের সহযোগিতায় বায়তুল মোকাররম কমপ্লেক্সের ভেতরেই একটা দালানের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নিয়ে ‘দারুল উলূম ইসলামী একাডেমী’ নামে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এ প্রতিষ্ঠান মাত্র এক বছরের মধ্যে অন্যূন দশটি কিতাব অনুবাদ করে প্রকাশ করে। এখান থেকে ১৯৬০ সালে মাওলানা মুহিউদ্দীন খানের সম্পাদনায় ‘মাসিক দিশারী’ নামে একটা গবেষণা পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে প্রতিষ্ঠানটি একটা ভাল অবস্থানে পৌঁছলে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক আইয়ুব খানের আমলে একে সরকারীকরণ করা হয়। মাওলানা মুহিউদ্দীন খানকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তিনি ইচ্ছা করলে এখানে ভাল বেতনে সম্মানজনক চাকুরী করতে পারেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে তিনি সম্মত হননি এ কারণে যে, (তার ধারণা মতে) ইসলামের ছহীহ ব্যাখ্যা দেয়ার উদ্দেশ্যে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন তা সরকারী ইসলামের নানা অপকর্মে ব্যবহৃত হবে। কিছুদিনের মধ্যেই মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম (বাম নেতা বদরুদ্দীন ওমরের পিতা) কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়োগপত্র নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে যোগদান করেন। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এ প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ রাখা হয়।
দেশের রাজনীতি ও সমাজ সচেতন আলেমদের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল শীর্ষে। মুসলিম উম্মাহর প্রতি অকৃত্রিম দরদ এবং কর্তব্যনিষ্ঠা থেকে তিনি পরিণত হয়েছিলেন এদেশের ইসলামী আন্দোলনের একজন যোগ্য অভিভাবকে। সে কর্তব্য পালনে তিনি মাযহাবী বিতর্ক, আভ্যন্তরীণ মতাদর্শভিত্তিক টানাপোড়েনকে তেমন গুরুত্ব দিতেন না। যার বড় প্রমাণ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমীর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের প্রতি তৎকালীন সরকারের যুলুমের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে তাঁর রুখে দাঁড়ানো।