نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ نَبَأَهُمْ بِالْحَقِّ إِنَّهُمْ فِتْيَةٌ آمَنُوا بِرَبِّهِمْ وَزِدْنَاهُمْ هُدًى (13) وَرَبَطْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ إِذْ قَامُوا فَقَالُوا رَبُّنَا رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَنْ نَدْعُوَ مِنْ دُونِهِ إِلَهًا لَقَدْ قُلْنَا إِذًا شَطَطًا (14) هَؤُلَاءِ قَوْمُنَا اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ آلِهَةً لَوْلَا يَأْتُونَ عَلَيْهِمْ بِسُلْطَانٍ بَيِّنٍ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا (15)  وَإِذِ اعْتَزَلْتُمُوهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ فَأْوُوا إِلَى الْكَهْفِ يَنْشُرْ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيُهَيِّئْ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ مِرْفَقًا (الكهف 13-16)-

‘আমরা তোমার কাছে তাদের সঠিক বৃত্তান্ত বর্ণনা করব। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। যারা তাদের প্রতিপালকের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমরা তাদের হেদায়াত (অর্থাৎ আল্লাহর পথে দৃঢ় থাকার শক্তি) বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম’ (১৩)। ‘আর আমরা তাদেরকে দৃঢ়চিত্ত করেছিলাম, যখন তারা (কওমের পূজার অনুষ্ঠান থেকে) উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর (একে একে একস্থানে জমা হয়ে) বলল, আমাদের প্রভু হলেন তিনি, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের পালনকর্তা। আমরা কখনোই তাঁকে ছেড়ে অন্যকে উপাস্য হিসাবে আহবান করব না। যদি তা করি, তবে সেটা হবে একেবারেই অনর্থক কাজ’ (১৪)। ‘(তারা আরও বলল,) ওরা আমাদের স্বজাতি। আল্লাহকে ছেড়ে ওরা অন্যকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করেছে। তাহ’লে কেন তারা তাদের এসব মা‘বূদ সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ উপস্থিত করে না? অতএব তার চেয়ে বড় যালেম আর কে আছে যে ব্যক্তি আল্লাহর উপরে মিথ্যারোপ করে? (১৫)। ‘অতএব যখন তোমরা পৃথক হলে তাদের থেকে ও যাদেরকে তারা উপাসনা করে আল্লাহকে ছেড়ে তাদের থেকে, তখন তোমরা আশ্রয় গ্রহণ কর গিরিগুহায়, যেখানে তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তার অনুগ্রহ প্রসারিত করবেন এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবে’ (কাহফ ১৩-১৬)

সূরা কাহফ ৯-২২ এবং ২৫-২৬ মোট ১৬টি আয়াতে আছহাবে কাহফের কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে। ‘কাহফ’ (الكهف) অর্থ ‘গিরিগুহা’। এতে সবাই একমত। কিন্তু ‘রাক্বীম’ (الرقيم)-এর অর্থে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, الجبل الذى فيه الكهف ‘ঐ পাহাড় যাতে ঐ গুহাটি ছিল’ (ইবনু কাছীর)। কেউ বলেছেন, ওটা তাদের কুকুরের নাম (ক্বাসেমী)। ঐ পাহাড়ের অবস্থান কোথায় ছিল, সে বিষয়ে ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সেটা ছিল লোহিত সাগরের তীরবর্তী শাম সীমান্তে আইলাহ (أيلة) উপত্যকার নিকটবর্তী।[1]

বর্ণিত ৯ম আয়াতে আছহাবে কাহফের ঘটনাকে আল্লাহর একটি বিষ্ময়কর নিদর্শন হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ১০ম আয়াতে জাহেলী সমাজ থেকে কয়েকজন দ্বীনদার যুবককে আল্লাহর আশ্রয় ও অনুগ্রহ ভিক্ষা করার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, কোন সমাজে দ্বীন পালন অসম্ভব হ’লে সেখান থেকে হিজরত করতে হবে। ১১শ আয়াতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে গিরিগুহায় নিজ আশ্রয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় বহু বছর অক্ষত রেখেছিলেন। ১২ আয়াতে তাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে তাদের অবস্থানকালের মেয়াদ নিয়ে মতভেদের কথা বলা হয়েছে। যার জওয়াবে ২৫ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয় যে, এর মেয়াদ ছিল ৩০০ বছর। চান্দ্রবর্ষের হিসাবে যা ৩০৯ বছর।

১৩ আয়াতে ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধির দলীল রয়েছে। যা মুরজিয়াদের ভ্রান্ত আক্বীদার বিপরীত। ১৪ ও ১৫ আয়াতে বলা হয়েছে যে, শিরকের পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। সেকারণ বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে শিরকী কর্মকান্ড এবং শরী‘আত বিরোধী কাজ করার প্রতি কঠোর নিন্দা জানানো হয়েছে। ১৬ আয়াতে তাদের প্রতি গুহায় আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ ছিল আল্লাহর ‘ইলহাম’। যা তিনি স্বীয় নেককার বান্দাদের অন্তরে নিক্ষেপ করে থাকেন। যেমন তিনি করেছিলেন মূসার মায়ের প্রতি (ত্বোয়াহা ২০/৩৮)। এখানে তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু কওম থেকে নিরাপদ রাখবেন এবং অবশেষে তোমাদেরকে সফলকাম করবেন। মক্কায় এই সূরা নাযিলের মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কুরায়েশ শত্রুদের হাত থেকে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে (ছওর) গিরিগুহায় আশ্রয় দিয়ে নিরাপদ করবেন। অবশেষে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তাকে চূড়ান্ত সফলতা দান করবেন।

আছহাবে কাহফের কাহিনী :

বিগত যুগে কোন এক বড় শহরে সম্ভ্রান্ত ঘরের সাতজন যুবক তাওহীদবাদী দ্বীন কবুল করে এবং বাপ-দাদাদের শিরকী দ্বীন পরিত্যাগ করে। তারা এক আল্লাহর ইবাদত করত এবং নিজ মূর্তিপূজারী কওমের হেদায়াতের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করত। তাদের এ বিষয়টি কুচক্রীরা মন্দভাবে সেদেশের সম্রাটের কানে দেয়। তখন সম্রাটের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য তারা একটি গুহায় আশ্রয় নেয় এবং আল্লাহর নিকট পানাহ চায়। এ সময় তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরটি তাদের সাথে ছিল। আল্লাহ তাদের রক্ষা করেন এবং পিছু ধাওয়াকারী সম্রাট বাহিনী তাদের খুঁজে না পেয়ে চলে যায়। আল্লাহ তাদেরকে গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে দেন। আর কুকুরটা ছিল গুহামুখে সামনের দু’পা বিছিয়ে মাথা উঁচু করে। যাতে তাকে দেখলে যে কেউ ভয়ে পিছিয়ে যায়। গুহাটি ছিল উত্তরমুখী এবং ভিতরটা ছিল অতি প্রশস্ত। যেখানে বাতাস নিয়মিত বইত এবং সূর্য ডাইন ও বাম দিক দিয়ে চলে যেত। ফলে তাদের দেহে সরাসরি রৌদ্রের খরতাপ লাগতো না। তারা এভাবেই থাকে। অবশেষে চান্দ্রবর্ষ হিসাবে ৩০৯ বছর পরে আল্লাহ তাদেরকে সুস্থহালে স্বাভাবিকভাবে জাগিয়ে তোলেন। তারা পরস্পরে বলাবলি করে যে, তারা একদিন বা দিনের কিছু অংশ ঘুমিয়ে ছিল। অতঃপর তাদের একজন বিচক্ষণ যুবককে বাজারে পাঠানো হয় খাদ্য-সামগ্রী ক্রয়ের জন্য। তখন তারা লোকদের কাছে ধরা পড়ে যায় এবং এভাবেই আল্লাহ তাদের বিষয়টি প্রকাশ করে দেন। এর পরের অবস্থা কি হয়েছিল সে বিষয়ে কুরআন-হাদীছ নীরব রয়েছে। তবে এ ধরনের অন্যান্য অলৌকিক ঘটনার আলোকে ধারণা করা যায় যে, ঐ যুবকটি গুহায় ফিরে আসে এবং সকলেই আল্লাহর হুকুমে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে। কুরআন বলেছে যে, অতঃপর লোকেরা তাদের ব্যাপারে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। অনেকে বলে গুহা মুখে প্রাচীর দিয়ে ওটাকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হৌক। তবে তাদের মধ্যে প্রবল মত ছিল এটাই যে, সেখানে একটি উপাসনাগৃহ নির্মাণ করা হৌক। যেভাবে ইয়াহূদ-নাছারারা তাদের বিগত নবী ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কবর সমূহকে উপাসনার স্থল বানিয়ে থাকে। যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে কঠোরভাবে সাবধান করে গেছেন।[2]

এক্ষণে উক্ত ঘটনা কোথায় ঘটেছিল, কবে ঘটেছিল, কোন সম্রাটের আমলে ঘটেছিল, সে বিষয়ে কুরআন বা হাদীছে কিছুই বলা হয়নি। মুফাসসিরগণ বিভিন্ন বর্ণনা ও যুক্তির নিরিখে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। যেমন ইবনু কাছীর এটাকে খৃষ্টপূর্বের এবং রোম সম্রাটদের সময়কার ঘটনা বলেছেন।[3] ক্বাসেমী এটাকে ঈসা (আঃ)-এর অনেক পরের ঘটনা বলেছেন।[4] ইবনু কাছীর ঘটনার স্থান হিসাবে বিভিন্ন মুফাসসিরের বর্ণনা হিসাবে আইলার (ফিলিস্তীন) নিকটবর্তী, নীনাওয়া (ইউনুস নবীর এলাকা), রোমকদের কোন এলাকা অথবা বালক্বা (শাম) প্রভৃতি সম্ভাব্য এলাকার নাম উল্লেখ করার পর বলেছেন, আল্লাহই সর্বাধিক অবগত কোন শহরে ঘটনাটি ঘটেছিল। যদি এর মধ্যে আমাদের জন্য কোন ধর্মীয় কল্যাণ থাকতো, তাহ’লে নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে সেদিকে পথপ্রদর্শন করতেন। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমি এমন কিছু তোমাদের বলতে ছাড়িনি যা তোমাদেরকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে নেয়। আমি সে সব বিষয়ে তোমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি’।[5] অত্র ঘটনায় আল্লাহ আমাদেরকে তাদের বিবরণ জানিয়েছেন, কিন্তু ঘটনার স্থান জানাননি। কেননা এতে কোন ফায়েদা নেই। বরং আল্লাহ আমাদের নিকট উক্ত ঘটনায় শিক্ষণীয় বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা কামনা করেন’।[6] তিনি উক্ত সম্রাটের নাম ‘দাক্বিয়ানূস’ (دقيانوس) এবং সাতজন যুবককে রোমক সম্রাট ও নেতাদের সন্তান বলেছেন।[7] তিনি শহরটির নাম বলেছেন, ‘দাফসূস’ (دفسوس)।[8] ক্বাসেমী উক্ত ঘটনার ব্যাপারে খ্রিষ্টানদের ইতিহাস (تواريخ المسيحيين) থেকে বহু কিছু বিষ্ময়কর তথ্য উপস্থাপন করেছেন। তিনি শহরটির নাম বলেছেন ‘আফসুস’ (أفسس) এবং সম্রাটের নাম বলেছেন দাকিয়ূস (داكيوس)। যিনি গ্রীক সম্রাটদের অন্যতম (من امراء اليونانيين) ছিলেন। ঐ যুবকেরা গ্রীকদের মূর্তিপূজা ছেড়ে ঈসায়ী তাওহীদবাদী ধর্মে প্রবেশ করেছিল বলেই তাদের উপর নির্যাতন নেমে এসেছিল। তাদের নামগুলিও সেখানে বলা হয়েছে। তবে ইবনু কাছীরের উদ্ধৃত নামগুলির সাথে এগুলির মিল নেই।

দীর্ঘ ইতিহাস বর্ণনা শেষে ক্বাসেমী বলেন, এগুলির অধিকাংশ ইস্রাঈলী বর্ণনা। অতএব কুরআনের বর্ণনাই যথেষ্ট অন্য সব বর্ণনার চাইতে’।[9]

শিক্ষণীয় বিষয় :

(১) আছহাবে কাহফের ঘটনা মানুষের নিকটে বিষ্ময়কর মনে হ’লেও নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টির তুলনায় তা অতীব নগণ্য। এর মধ্যে রয়েছে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন। (২) যেকোন বিপদে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা ঈমানদার মানুষের অন্যতম নিদর্শন। (৩) আল্লাহ তাঁর  সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে থাকেন। (৪) দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য সবকিছু ছেড়ে অন্যত্র হিজরত করা ও আল্লাহর আশ্রয় ভিক্ষা করা আবশ্যক। উক্ববা বিন আমের (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বলেন, مَا النَّجَاةُ؟ ‘ফিৎনার সময় বাঁচার উপায় কি? জবাবে তিনি বলেন, أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ ‘তুমি যবান বন্ধ রাখ। নিজেকে বাড়ীতে আবদ্ধ রাখ এবং তোমার পাপের জন্য ক্রন্দন কর’।[10] (৫) দাওয়াতকে অবশ্যই লোকদের নিকট প্রচার করে দিতে হবে। যাতে সেটি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে গণ্য হয়। যেমন আছহাবে কাহফের যুবকরা লোকদের সামনে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিল’ (কাহফ ১৪)। (৬) আল্লাহ যদি রক্ষা করেন, তাহ’লে রাজা-বাদশা কারু কোন ক্ষমতা থাকে না আল্লাহওয়ালা দ্বীনদার বান্দার কোন ক্ষতি করার’ (কাহফ ১৬)। (৭) তিনি শত্রুদের মনোযোগ অন্যদিকে ফিরিয়ে দেন ও তাদের দৃষ্টি ব্যর্থ করে দেন। যেমন আছহাবে কাহফের যুবকদের ধরতে গিয়ে তাদের দেখতে ব্যর্থ হয়েছিল অত্যাচারী সম্রাটের লোকেরা’ (কাহফ ১৭-১৮)। একইভাবে ব্যর্থ হয়েছিল মক্কার কুরায়েশ নেতারা ছওর গিরিগুহায় আশ্রয় গ্রহণকারী শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর সাথী আবুবকরকে দেখতে (তওবা ৯/৪০)। বরং এঘটনাই ছিল সর্বাধিক ভয়ংকর ও শিহরণমূলক আছহাবে কাহফের ঘটনার চাইতে। (৮) সাধারণভাবে রাষ্ট্র ও সমাজনেতারা হকপন্থী কোন দাওয়াতকে বরদাশত করে না। তরুণ সমাজ এটাকে সহজভাবে নেয় এবং তা কবুল করে ও তার জন্য জানমালের কুরবানী দেয়’ (কাহফ ১৩)। অবশেষে হকপন্থীরা আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হয় এবং অত্যাচারীদের উপর বিজয়ী হয়। তারাই সর্বযুগে সম্মানিত হয় এবং অত্যাচারীরা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। (৯) তিনি যাকে হেদায়াত দান করেন, সেই মাত্র হেদায়াত পায়। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তাকে সুপথ দেখানোর কেউ নেই (কাহফ ১৭)। অতএব সর্বাবস্থায় আল্লাহর নিকটেই হেদায়াত প্রার্থনা করতে হবে। (১০) কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি কাহিনীই সত্য। তাতে কোনই সন্দেহ নেই। যা বিশ্বাসীদের ঈমান বৃদ্ধি করে’ (কাহফ ১৩)। যদিও ড. ত্বোয়াহা হোসাইন প্রমুখ অতি যুক্তিবাদীরা এসব কাহিনীকে সত্য মনে করেন না। বরং স্রেফ ‘উপদেশ’ বলে থাকেন। (১১) ক্বিয়ামত যে অবশ্যই সংঘটিত হবে তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ রয়েছে আছহাবে কাহফের ঘটনায়। (১২) কুরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলিতে গভীর চিন্তা ও গবেষণা করা আবশ্যক। কারণ এর মধ্যে রয়েছে মুমিনের আত্মশক্তির উৎস ও সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। 

নবী জীবনের সাথে সামঞ্জস্য :

আলী, ‘আম্মার, যায়েদ, ইবনু মাসঊদ, সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ, হামযা, ওমর প্রমুখ মক্কার তরুণ ও বীর যুবকেরা যখন একে একে ইসলাম কবুল করতে থাকে এবং হকপন্থীদের দল বৃদ্ধি পেতে থাকে, অন্যদিকে ইয়াছরিবের যুবক আস‘আদ বিন যুরারাহর নেতৃত্বে যখন একদল যুবক ইসলাম কবুল করে ফিরে যায়, তখন মক্কার নেতারা প্রমাদ গণতে থাকে এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।

এমতাবস্থায় অত্র সূরা নাযিল করে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে ইঙ্গিতে জানিয়ে দেন যে, বিগত যুগে আছহাবে কাহফের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। অতঃপর সেটাই হ’ল এবং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হিজরতের রাতে ছওর গিরিগুহায় তিনদিন লুকিয়ে থাকেন আবুবকরকে নিয়ে। কাফিররা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁদের পায়নি। এমনকি গুহামুখে বারবার গিয়েও তাদের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেনি। আছহাবে কাহফের যুবকদের আল্লাহ তিনশ’ বছর পরে জীবিত তাদের শহরে ফিরিয়ে আনেন ও তারা সকলের নিকট সম্মানিত ও প্রশংসিত হয়। শেষনবী (ছাঃ)-কেও আল্লাহ হিজরতের আট বছর পর মক্কায় ফিরিয়ে আনেন বিজয়ী বেশে এবং তিনি সকলের নিকট সমাদৃত ও প্রশংসিত হন। যে ওয়াদা আল্লাহ তার সঙ্গে করেছিলেন হিজরতকালে (ক্বাছাছ ২৮/৮৫; কুরতুবী)। বস্ত্ততঃ নির্যাতিত রাসূলের নিকট আছহাবে কাহফের কাহিনী বর্ণনা ছিল তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে ভবিষ্যদ্বাণী স্বরূপ। যুগে যুগে সকল হকপন্থী ব্যক্তি ও দলের জন্য উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর থাকবে ইনশাআল্লাহ। যদি তারা প্রকৃত মুমিন ও আল্লাহর উপরে ভরসাকারী হয় (আলে ইমরান ৩/১২১, ১৩৯)

 

[1]. ইবনু কাছীর, তাফসীর কাহফ ১৭ আয়াত

[2]. বুখারী হা/১৩৩০; মুসলিম হা/৫৩১

[3]. ঐ, তাফসীর কাহফ ১৮/১৩ আয়াত

[4]. ঐ, তাফসীর কাহফ ১৮/১৩ আয়াত

[5]. সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৮০৩

[6]. ঐ, তাফসীর কাহফ ১৮/১৭ আয়াত

[7]. ঐ, তাফসীর, কাহফ ১৮/১৪ আয়াত

[8]. আল-বিদায়াহ ২/১০৬

[9]. ঐ, তাফসীর কাহফ ২৭ আয়াত

[10]. তিরমিযী হা/২৪০৬






মদ, জুয়া, বেদী, ভাগ্য নির্ধারক শর নিষিদ্ধ বস্ত্ত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সাদৃশ্য অবলম্বন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সমাজ পরিবর্তনে চাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
হাদীছের প্রতি বিদ্রুপকারীদের পরিণতি - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অল্পতেই জান্নাত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুত্তাক্বীদের পরিচয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সমাজ পরিবর্তনের স্থায়ী কর্মসূচী (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানব সৃষ্টির ইতিহাস - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আলোর পথ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আমর বিল মা‘রূফ ও নাহী ‘আনিল মুনকার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
দ্বীনের উপর দৃঢ়তা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.