সম্প্রতি দেশে ছিদ্দীক্বী ও চৌধুরীদের বকওয়াস ও উল্লম্ফন দেখে এবং সেই সাথে আদর্শহীন ও দেশপ্রেমহীন নেতাদের চানক্যনীতি দেখে দূর অতীতের জগৎশেঠ, উমিচাঁদ ও মীরজাফরদের চেহারা মনের আয়নায় ভেসে উঠছে। মীর মদন ও মোহনলাল হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও তরুণ মুসলিম নবাব সিরাজুদ্দৌলাকে সমর্থন দিয়ে তারা পলাশীর যুদ্ধে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। নেতার প্রতি অটুট আনুগত্য ও নিখাদ দেশপ্রেমের নীতিতে তারা অটল ছিলেন। সেকারণ ইতিহাসে তারা সম্মানিত হয়েছেন। পক্ষান্তরে নবাবের নিকটাত্মীয় ও প্রধান সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও ইংরেজদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে মীরজাফর ও তার সঙ্গীরা ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসাবে ইতিহাসে কলংকিত হয়েছেন। তাদের সেদিনের পদস্খলনের ফলে উপমহাদেশ থেকে মুসলিম শাসন চির বিদায় নেয় এবং আরও পরে অখন্ড ভারতবর্ষ ভেঙ্গে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, আফগানিস্তান ৫টি খন্ডিত রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়। যদি সেদিন নবাবের মন্ত্রীরা ও প্রধান সেনাপতি ঘরের ও বাইরের পাতানো ফাঁদে পা না দিতেন, তাহ’লে উপমহাদেশে মর্মান্তিক রাজনৈতিক ট্রাজেডী সৃষ্টি হ’ত না। আজকে আমাদের দেশের রাজনীতিক ও ধনিকশ্রেণী যদি বিদেশী স্বার্থের ক্রীড়নক হন ও তাদের চালান করা কুফরী মতবাদ সমূহের অনুসারী হন, তাহ’লে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। ১৯৯৪ সালে কুরআন পরিবর্তনের দাবীদার তাসলীমা নাসরীন ও তার দোসররা যেভাবে মাথা চাড়া দিয়েছিল, বর্তমানে তেমনি ব্লগার, গণজাগরণী, ছিদ্দীক্বী ও চৌধুরীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সে সময় ক্ষমতায় ছিলেন খালেদা জিয়া। আর এখন ক্ষমতায় আছেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতার বদল হ’লেও নীতির বদল হয়নি। তখন সরকারের দ্বিমুখী নীতির বিরুদ্ধে ‘সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ’ ঢাকার মানিক মিয়াঁ এভেনিউয়ে সে বছর ২৯শে জুলাই ২০ লক্ষাধিক মানুষের বিশাল প্রতিবাদ সম্মেলন করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এখন তা করা সম্ভব নয়। কারণ সবার জানা। দমননীতি দ্বারা সাময়িক ফল পাওয়া গেলেও তা যে ভবিষ্যতে কুফল ডেকে আনে, তা কে না জানে? দূরদর্শী ও দেশ প্রেমিক নেতাগণ নিজেদের জীবনের চাইতে নিজেদের আদর্শ, দেশ ও জাতিকে ভালবাসেন। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতায় সেটি দৃশ্যমান নয়। মানুষকে কথা বলতে দিলে ও তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিলে তাকে সহজে চেনা যায় ও জানা যায়। কিন্তু বাধা দিলে সে চুপ থাকে এবং চোরা পথ তালাশ করে। আর চাপ দিলে সে মিথ্যা বলে। অতএব ভদ্র ও সংযতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত না করাতেই কল্যাণ বেশী। এগুলি রাজনৈতিক বিষয়ে হ’তে পারে। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে? বিশেষ করে যদি সেটা আল্লাহ, রাসূল, আল্লাহ্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম ও তার কোন ফরয বিধান সম্পর্কে হয়? তাহ’লে কি তাকে এসবের বিরুদ্ধে কথা বলার স্বাধীনতা দেওয়া যাবে? গরু-ছাগলকে বিকট শব্দ করার সুযোগ দেওয়া গেলেও মনুষ্যবেশী এইসব অমানুষকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া যাবেনা। হাদীছের ভাষায় ‘এরা মানুষের দেহধারী শয়তান’ (মুসলিম হা/১৮৪৭)। কেননা তারা সৃষ্টি হয়ে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও তার বিধানের বিরুদ্ধে কথা বলছে। সন্তান যদি পিতাকে অস্বীকার করে ও তার বিরুদ্ধে কুট মন্তব্য করে, সে যেমন মাফ পায় না। আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মন্তব্যকারী ব্যক্তি তেমনি মাফ পাবে না। ইসলামের বিধানে তার একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদন্ড’। তাসলীমা ও ব্লগাররা এবং সম্প্রতি ছিদ্দীক্বী ও চৌধুরীরা সে কাজটিই করছে। সরকারের উচিৎ ছিল এদের যথাযোগ্য শাস্তি বিধান করা। কিন্তু তার বিপরীতটাই প্রকট।
বিভিন্ন দেশে পাশ্চাত্যের বরকন্দাজ সরকারগুলি তাদের নিজ দেশের মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার অহরহ লংঘন করছে। বোরকা-হিজাব নিয়ে বিদ্রুপ করছে। কোথাও কোথাও নিষিদ্ধ করছে। অফিসে ও কর্মস্থলে ছালাত আদায়ে বাধা দিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পর্দানশীন মেয়েদের অপমান করা হচ্ছে। সামরিক বিভাগে দাড়ি রাখতে ও লম্বা প্যান্ট পরতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। দাড়িওয়ালা দ্বীনদার সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। অন্যেরা বস্কে খুশী করে কাজে ফাঁকি দিচ্ছে। কিন্তু আল্লাহ্র ভয়ে তাদের অন্যায় দাবী পূরণ না করায় দ্বীনদার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা অপদস্থ, অন্যায় স্থানান্তর এমনকি চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন। সরকারী দলের লোকদের অত্যাচারে এবং পুলিশী নির্যাতনে ও মিথ্যা মামলায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিনিয়ত ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, তখন সেই দল দু’হাতে লুটপাট ও দুর্নীতি করে। তাদের টিকিটি স্পর্শ করার ক্ষমতা কারু থাকে না। এমতাবস্থায় কাটা ঘায়ে নূনের ছিটার মত যদি মুমিনের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ইসলামের ফরয বিধান নিয়ে কেউ তাচ্ছিল্য করে এবং সরকার তাকে পরোক্ষ সমর্থন দেয়, তাহ’লে কি মানুষ ঐ সরকারের প্রতি সুধারণা পোষণ করবে, না তার জন্য বদ দো‘আ করবে? ভদ্রলোকের কাছে ভদ্র প্রতিবাদই যথেষ্ট হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারগুলি মিছিল, হরতাল ও জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতিতে অভ্যস্ত বিধায় তারা মার-কাট ও ভাংচুর ছাড়া নড়ে না। ফলে দেশে অশান্তি ও বিশৃংখলা বাড়ছে। দলীয় সরকার কেবল দলীয় লোকদের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে। ফলে তার মন্দ প্রতিক্রিয়া হবেই। আর এই বিভক্তি ও অসন্তুষ্টির সুযোগ নিচ্ছে শত্রুরা। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই সৃষ্টি হচ্ছে মুসলিম দেশগুলিতে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদী তৎপরতা। জিহাদের অপব্যাখ্যা করে তারা স্ব স্ব দেশের সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। অন্যদিকে জঙ্গীবাদ প্রতিরোধের নামে সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্দোষ লোকদের মারছে। এভাবে মারছে মুসলমান ও মরছে মুসলমান। দূর থেকে ক্রুর হাসি হাসছে দেশ ও জাতির শত্রুরা। পাকিস্তান আমলে ধনী ও গরীবের বৈষম্য দূর করার নামে কথিত শ্রেণী সংগ্রামের মাধ্যমে বামপন্থীরা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করত। এখন জিহাদের নামে দ্বীনদার তরুণদের দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানো হচ্ছে। ফলে নিজের ভাইয়ের রক্তপাত ঘটিয়ে সে জান্নাত কামনা করছে। এরপরেও এইসব জিহাদীদের রয়েছে অসংখ্য দল। তারাও একে অপরকে মারছে। অর্থ ও অস্ত্র কারা দিচ্ছে? রাতারাতি আই,এস পরাশক্তি হয়ে গেল। হ্যাঁ, এভাবেই সফল হচ্ছে শত্রুদের চক্রান্ত। অতএব সরকারকে যেমন ইসলামের পক্ষে কাজ করতে হবে, তেমনি ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে। কথিত জিহাদীদেরকেও নিজ দায়িত্বে ইসলামী দাওয়াতের সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে। নইলে ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারাতে হবে। নেতাদের বলব, আপনারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিন মাস ধরে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে পুড়িয়ে মেরেছেন। হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে তাদের কাতরানোর মর্মন্তুদ দৃশ্য দেখেছেন। এখন একবার মনের আয়নায় জাহান্নামের আগুনে জীবন্ত অবস্থায় পুড়ন্ত মানুষের যন্ত্রণাদায়ক দৃশ্য অবলোকন করুন। আল্লাহ সেদিন কাউকে ছাড়বেন না। অতএব সাবধান হৌন!
পরিশেষে আমরা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী যেকোন ব্যক্তি ও সংস্থাকে কঠোর হস্তে দমন করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন -আমীন! (স.স.)।