মানব ইতিহাসে এই প্রথম কোন কৃষ্ণগহবর বা ব্ল্যাক হোলের ছবি তুললেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে সাড়ে ৫ কোটি আলোকবর্ষ বা প্রায় ৫০ কোটি মিলিয়ন ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে এম৮৭ নামের একটি ছায়াপথে এই কৃষ্ণগহবরের অবস্থান।

নেদারল্যান্ডসের র‌্যাডবাউন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইনো ফালকে প্রথম কৃষ্ণগহবরের ছবি তোলাসংক্রান্ত গবেষণাটির প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি তখন পিএইচডির ছাত্র। অথচ তখন কেউই বিশ্বাস করেনি, এটা আদৌ কখনো সম্ভব হবে। অবশেষে সেটাই সত্যি করে দেখালেন এই বিজ্ঞানী। গত ১০ই এপ্রিল বুধবার কৃষ্ণগহবরের প্রথম ছবিসংক্রান্ত বিস্তারিত গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সাময়িকী দ্য অ্যাষ্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে প্রকাশিত হয়েছে। ২০০ বিজ্ঞানীর একটি দল এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন। ১০ দিন ধরে কৃষ্ণগহবরটির ছবি তুলতে তাঁরা কাজ করেন। একক কোন দূরবীক্ষণযন্ত্রের কৃষ্ণগহবরের ছবি তোলার ক্ষমতা নেই। এজন্য আটটি দূরবীক্ষণযন্ত্র একত্রে ব্যবহার করা হয়।

যে কৃষ্ণগহবরটির ছবি তোলা হয়েছে, সেটি আকারে পৃথিবীর চেয়ে ৩০ লাখ গুণ বড়। বিজ্ঞানীরা একে ‘দানব’ বলে অভিহিত করেছেন। হেইনো ফালকে বলেন, ‘আমরা ছবিতে যে কৃষ্ণগহবরটি দেখছি, সেটি আমাদের পুরো সৌরজগতের চেয়ে আকারে বড়। সূর্যের ভরের সাড়ে ৬ বিলিয়ন গুণ বেশী এর ভর। আমাদের ধারণায় এত দিন যত কৃষ্ণগহবর ছিল, এটি তাদের সবার চেয়ে ভারী।

ছবিতে কৃষ্ণগহবরটিকে দেখতে ভীষণ আলোকোজ্জ্বল একটি ‘আগুনের আংটি’র মতো। এর চারপাশে নিখুঁত একটি বৃত্তাকার কালো গহবর রয়েছে। এর উজ্জ্বলতা ঐ ছায়াপথের সব নক্ষত্রের মিলিত উজ্জ্বলতার চেয়ে বেশী। মূলতঃ এ জন্যই পৃথিবী থেকেও একে দেখা সম্ভব হয়েছে।

কৃষ্ণগহবরের অন্ধকারাচ্ছন্ন বৃত্তের কেন্দ্রে মহাকর্ষীয় বল এতটা শক্তিশালী যে আলোক কণাও এর ভেতর থেকে বের হ’তে পারে না। নামে গহবর বলা হ’লেও এটি পুরো খালি কোন গর্ত নয়। ছোট একটি এলাকার মধ্যে এর সব ভর সঞ্চিত। কৃষ্ণগহবরের একটি অঞ্চলকে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ বলা হয়। তত্ত্বীয়ভাবে সেখানে গেলে কোন কিছুই আর ফেরত আসে না।

এই রহস্যময় মহাজাগতিক বস্ত্ত নিয়ে জানার আরও সুযোগ বেড়ে গেল গবেষকদের। পদার্থ বিজ্ঞানের যেসব সূত্র এখনো কৃষ্ণগহবরের ক্ষেত্রে খাটছে না, সেসব প্রশ্নের উত্তরও হয়তো মিলবে। এখনো কেউই জানে না অন্ধকার বৃত্তের চারদিকে উজ্জ্বল আংটি কিভাবে সৃষ্টি হ’ল। সবচেয়ে কৌতুহলের বিষয়, কৃষ্ণগহবরের বুকে কোন বস্ত্ত পড়লে তার পরিণতি কি হবে।

[আমরা এতে মোটেই বিস্মিত হইনা। কারণ আল্লাহ বহু পূর্বেই বলে দিয়েছেন, তিনি ‘রাববুল ‘আলামীন’ তথা জগতসমূহের প্রতিপালক। দিনে দিনে অজানা জগত সমূহ আবিষ্কার হবে। তাতে আমাদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন ও যাকে ইচ্ছা সুপথ প্রদর্শন করেন। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালকের সেনাবাহিনী সম্পর্কে কেউ জানে না তিনি ব্যতীত’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৩১)। অতএব আমাদের কর্তব্য আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতার উপর বিশ্বাস রেখে তাঁর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা (স.স.)।] 






আরও
আরও
.