বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা নতুন এক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন, যা ব্যবহার করে কাগজে কোন জীবাণুর আক্রমণ ও  বিস্তার ঠেকানো যাবে। জীবাণু-প্রতিরোধী এই কাগজ খাদ্য বা পণ্যের মোড়ক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। গুরুত্বপূর্ণ নথি ও বই প্রকাশের ক্ষেত্রেও এই কাগজের ব্যবহার হ’তে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক ও বিজ্ঞানী শফিউল আযমের নেতৃত্বে জীবাণু-প্রতিরোধী এই কাগজ উদ্ভাবিত হয়েছে। কাগজের সঙ্গে সিলভার ন্যানো কণা স্প্রে করে মিশিয়ে দেওয়ার এই প্রযুক্তির ফলাফল গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক সমিতির জার্নাল এসিএস সাসটেইনেবল কেমিস্ট্রি অ্যান্ড টেকনোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। কাগজ ও কাগজের তৈরি প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে এক দেশ থেকে বিরল প্রজাতির কোন জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য দেশে। বিশেষ এই কাগজ উদ্ভাবনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার একটি ও চীনের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা করছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে মনে করা হচ্ছে। শফিউল আযম বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এ ধরনের কাগজ উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছিল। আমরা সফল হয়েছি। এটি একটি মৌলিক উদ্ভাবন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ঐ গবেষণা হয়। গবেষণার বেশির ভাগ কাজ বুয়েটে হয়। তবে বেশ কিছু রাসায়নিক পরীক্ষা কানাডার সায়েন্স অ্যান্ড একাডেমিক রিসার্চ কাউন্সিলের ল্যাবরেটরিতে হয়েছে।

কিভাবে সম্ভব হল : প্রযুক্তিটি উদ্ভাবনের সঙ্গে জড়িত বিজ্ঞানীরা বলছেন, জীবাণু-প্রতিরোধী কাগজ উদ্ভাবনের জন্য তাঁরা সামুদ্রিক ঝিনুক ও শামুকের একটি বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করেছেন। ঝিনুক ও শামুকের মধ্যে পলিডোপামিন নামক একটি বিশেষ যৌগের উপস্থিতি থাকে, যে কারণে এরা সমুদ্রের প্রবল ঢেউ উপেক্ষা করেও পাথর ও সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে নিজেদের আটকে রাখতে পারে। একইভাবে এই গবেষণায় কাগজের মধ্যে প্রথমে পলিডোপামিন সংযোজন করা হয়েছে, যা পরে প্রতিকূল পরিবেশেও সিলভার ন্যানো কণাদের কাগজের সঙ্গে শক্তভাবে আটকে রাখতে সক্ষম হয়, যা দীর্ঘদিন এই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী অক্ষুণ্ণ রাখবে। বিজ্ঞানীরা আরও জানিয়েছেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে, বিভিন্ন মাছ ও চিংড়িতে সংক্রমিত হয়, এ ধরনের প্রায় সব জীবাণুর বিস্তার ঐ কাগজ প্রতিহত করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও এই কাগজ বেশ কিছু ছত্রাকের আক্রমণ সমানভাবে প্রতিরোধ করতে পারে বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে। এই কাগজের তৈরি প্যাকেজিংয়ে মূল্যবান পণ্য, ওষুধ, খাদ্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে। গবেষণাটিতে সহায়তা করেছে বুয়েট, বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞানীদের বৈশ্বিক সংগঠন দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স এবং কানাডার সায়েন্স অ্যান্ড একাডেমিক রিসার্চ কাউন্সিল।

[আমরা বিজ্ঞানীদের প্রতি অভিনন্দন জানাই এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। যিনি মানবজাতির কল্যাণের জন্য বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে এই আবিষ্কার পৌঁছে দিলেন (স.স.)]






আরও
আরও
.