বিশ্বে প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে একটির জন্য দায়ী হ’ল বায়ু, পানি ও মাটির দূষণ। এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ। এখানে দূষণের কারণে প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট গত ১৯শে অক্টোবর’১৭ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বিশ্বে মোট ৯০ লাখ মানুষ মারা গেছে। ঐ বছর এইডস, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গেছে, এই সংখ্যা তার চেয়ে তিন গুণেরও বেশী। এসব মৃত্যুর অধিকাংশই হয়েছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে। ভারতে প্রতিবছর দূষণের কারণে ২৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চীন, সেখানে দূষণজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ লাখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে যে ৯০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৯২ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। শুধু ভারত ও চীনেই মারা গেছে ঐ ৯০ লাখের প্রায় অর্ধেক মানুষ। উন্নত বিশ্বেও দূষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মৃত্যু ও রোগ বাড়ছে।
দূষণের মধ্যে বায়ুদূষণ সবচেয়ে প্রাণঘাতী। দুই-তৃতীয়াংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী এই দূষণ। ২০১৫ সালে বায়ুদূষণে ৪২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশী মৃত্যু হয়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণের পরেই বেশী মৃত্যু হয় পানিদূষণে। ২০১৫ সালে এই দূষণে ১৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ল্যানসেট-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত, পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, মাদাগাস্কার ও কেনিয়ার মতো দ্রুত শিল্পায়নের দেশগুলিতে দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশী। এসব দেশে প্রতি চার মৃত্যুর একটির জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের দূষণ।
জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক কাযী সাইফুদ্দীন বিন নূর রাজধানীতে দূষণের নিত্যনতুন উৎস তৈরী হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, মাটি-পানি ও বায়ুদূষণ ছাড়াও সড়কের ডিজিটাল বিলবোর্ড, যত্রতত্র ফটোকপির দোকান থেকে তৈরী দূষিত কণা রাজধানীর পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে। এভাবে চলতে থাকলে দূষণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
[এই সাথে কথিত রাজনীতিকদের মাধ্যমে যেভাবে সমাজ দূষণ হচ্ছে, সেটা যোগ করলে দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে। অতএব সরকারের উচিৎ প্রতিপক্ষ দমনের চাইতে নিজেদের দূষণ দূর করার দিকে অধিক মনোযোগী হওয়া। নইলে সর্বব্যাপী দূষণের হাত থেকে কেউই রেহাই পাবেন না (স.স.)]