ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া (রহঃ) বলেন, ‘একদিন আমি সুফিয়ান ইবনে উয়ায়না (রহঃ)-এর কাছে ছিলাম। এমন সময় এক লোক এসে তাকে নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে বলল, ‘হে আবূ মুহাম্মাদ! ঐ নারীর ব্যাপারে আমার অভিযোগ আছে। আমি যেন তার কাছে সবচেয়ে লাঞ্ছিত ও সবচেয়ে তুচ্ছ। তার কথা শুনে সুফিয়ান (রহঃ) কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে থাকলেন। এরপর মাথা তুলে বললেন, ‘হয়ত তুমি তাকে এ আশায় বিবাহ করেছ যে, তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে? লোকটি বলল, জি, আবূ মুহাম্মাদ! সুফিয়ান বললেন,مَنْ ذَهَبَ إِلَى الْعِزِّ ابْتُلِيَ بِالذُّلِّ، وَمَنْ ذَهَبَ إِلَى الْمَالِ ابْتُلِيَ بِالْفَقْرِ، وَمَنْ ذَهَبَ إِلَى الدِّيْنِ يَجْمَعُ اللهُ لَهُ الْعِزَّ وَالْمَالَ مَعَ الدِّينِ، ‘যে মর্যাদা বাড়াতে চায়, সে লাঞ্ছনা দ্বারা পরীক্ষিত হয়। আর যে সম্পদ অর্জন করতে চায়, সে দারিদ্র্য দ্বারা পরীক্ষিত হয়। আর যে দ্বীন অনুযায়ী চলতে চায়, আল্লাহ তাকে দ্বীনদারীর সাথে মর্যাদা ও সম্পদ উভয়টা দান করেন।
এরপর সুফিয়ান ঘটনা বলতে শুরু করলেন, আমরা ছিলাম চার ভাই। মুহাম্মাদ, ইমরান, ইব্রাহীম ও আমি। মুহাম্মাদ সবার বড়। ইমরান সবার ছোট। আমি ছিলাম মেজ। মুহাম্মাদ যখন বিয়ে করতে চাইলেন, তিনি বংশ মর্যাদাসম্পন্ন মেয়ে খুঁজলেন। এরপর নিজের চেয়ে বেশী বংশ মর্যাদাসম্পন্ন একজনকে বিয়ে করলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে লাঞ্ছনা দ্বারা পরীক্ষা করলেন। ইমরান বিয়ের ক্ষেত্রে সম্পদের প্রতি আগ্রহী হ’ল। তাই সে নিজের চেয়ে বেশী ধন-সম্পদশালী মেয়েকে বিয়ে করল। আল্লাহ তা‘আলা ইমরানকে দারিদ্র্য দ্বারা পরীক্ষা করলেন। সবাই তার কাছ থেকে নিল, কিন্তু তাকে কিছুই দিল না। অবশেষে নারীর কার্যাদী পরিচালনার জন্য আমিই বাকী থাকলাম।
একবার আমাদের বাসায় মা‘মার ইবনে রাশীদ (রহঃ) আসলেন। আমি তার সাথে বিয়ের ব্যাপারে পরামর্শ করলাম। তার কাছে আমার ভাইদের ঘটনা খুলে বললাম। তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দু’টি হাদীছ শুনিয়ে দিলেন। যেখানে তিনি বলেছেন,تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ: لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ، ‘নারীদের বিয়ে করা হয় চারটি জিনিস দেখে- তার ধন-সম্পদ, বংশ-মর্যাদা, রূপ-সৌন্দর্য এবং দ্বীনদারী। তুমি দ্বীনদার নারীকে বিয়ে করে সফল হও, অন্যথা তোমার উভয় হাত ধূলি ধূসরিত হোক’ (বুখারী হা/৫০৯০; মুসলিম হা/১৪৬৬)। অন্যত্র আয়েশা (রাঃ)-এর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَعْظَمُ النِّسَاءِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُنَّ مَئُونَةً ‘যে নারীর ভরণপোষণ যত সহজ, সে নারী তত বরকতময়’ (আহমাদ হা/২৫১১৯, সনদ যঈফ)।
এরপর আমি নিজের বিয়ের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে পাত্রী বাছাইয়ের মাপকাঠি নির্ধারণ করলাম। দ্বীনদার ও ভরণপোষণ সহজ হয় এমন নারীতে বিয়ে করলাম। অবশেষে আল্লাহ আমাকে দ্বীনের সাথে সাথে সম্মান ও সম্পদ উভয়টাই দান করলেন (আবূ নু‘আইম, হিলইয়াতুল আওলিয়া ৭/২৮৯)।
শিক্ষা :