(৮) মোহরানা নির্ধারণ : বিবাহের আগে মোহরানা নির্ধারণ করা এবং বিবাহের পর তা স্ত্রীকে দিয়ে দেওয়া ফরয। আল্লাহ বলেন, وَآتُوا النَّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, فَآتُوْهُنَّ أُجُوْرَهُنَّ فَرِيْضَةً ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَحَقُّ الشُّرُوْطِ أَنْ تُوْفُوْا بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوْجَ ‘(বিবাহে) সবচেয়ে বড় শর্ত যেটা তোমরা পূর্ণ করবে, সেটা হ’ল যা দ্বারা তোমরা লজ্জাস্থানকে হালাল কর’।[1] অর্থাৎ মোহর।
সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নবী করীম (ছাঃ) তার দিকে তাকালেন এবং তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল নবী করীম (ছাঃ) তার সম্পর্কে কোন ফায়ছালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নবী করীম (ছাঃ)-এর ছাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যদি আপনার বিবাহের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিবাহ দিয়ে দিন। রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কী? সে উত্তর দিল, না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কি-না। তারপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার চলে গেল। ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোহার আংটিও পেলাম না। কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। সাহল (রাঃ) বলেন, তার কাছে কোন চাদর ছিল না। লোকটি লুঙ্গির অর্ধেক মহিলাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কি করবে? যদি তুমি পরিধান কর, তাহ’লে তার কোন কাজে আসবে না। আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। এরপর বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর সে উঠে দাঁড়াল ও নবী করীম (ছাঃ) তাকে যেতে দেখে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নবী করীম (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কী তোমার মুখস্থ আছে। সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে তোমার কাছে এ মহিলাকে তোমার অধীনস্থ করে দিলাম’।[2]
স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী স্ত্রীকে মোহরানা দিতে হবে। যখন আলী (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি ফাতিমাকে (মোহরানা স্বরূপ) কিছু দাও। আলী (রাঃ) বললেন, আমার নিকট কিছু নেই। নবী করীম (ছাঃ) তাকে বললেন, তোমার হুতামী বর্মটি কোথায়’?[3] অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে বললেন, تَزَوَّجْ وَلَوْ بِخَاتَمٍ مِنْ حَدِيْدٍ ‘তুমি বিবাহ কর, একটি লোহার আংটির বিনিময়ে হ’লেও’।[4]
উল্লেখ্য যে, কারণবশতঃ মোহর বাকী রাখা যায়। তবে সেটা ঋণের অন্তর্ভুক্ত। তাই যত দ্রুত সম্ভব তা পরিশোধ করা কর্তব্য। মোহর বাকী থাকলে সন্তান অবৈধ হবে একথা ঠিক নয়। কেননা বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মোহর পরিশোধ করা শর্ত নয়। রাসূল (ছাঃ) একজন ব্যক্তিকে বললেন, অমুক মহিলার সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, অমুক ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিবাহ দিব তুমি কি রাযী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। তিনি তাদের বিবাহ দিলেন। কিন্তু কোন মোহর নির্ধারণ করলেন না এবং মহিলাকে কিছু দিলেন না। ঐ ব্যক্তি হোদায়বিয়ার ছাহাবী ছিলেন। পরে তিনি খায়বরের গণীমতের অংশ পান। এ সময় তাঁর মৃত্যু উপস্থিত হ’লে তিনি বলেন, স্ত্রীর জন্য আমার কোন মোহর নির্ধারিত ছিল না। এক্ষণে আমি আমার খায়বরের প্রাপ্ত অংশ তাকে মোহর হিসাবে দান করলাম। যার মূল্য ছিল এক লক্ষ দিরহাম’।[5] নবী করীম (ছাঃ) একদা মোহর বাকী রেখে এক ব্যক্তির বিবাহ দেন এবং কুরআন শিক্ষাদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে তা আদায় করতে বলেন।[6] তবে সমাজে মৃত্যুর সময় স্ত্রীর নিকট থেকে মোহর মাফ করিয়ে নেওয়ার যে প্রচলন রয়েছে, তা চরম অন্যায় ও প্রতারণাপূর্ণ। এ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে এবং হাতে অর্থ এলেই সর্বাগ্রে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করতে হবে।
(৯) খুৎবা পড়া ও কবুল বলানো : আমাদের সমাজে কবুল বলানোর জন্য কাযী বা যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বরের অনুমতি নিয়ে দু’জন সাক্ষীসহ কনের নিকট চলে যান। কাযী গিয়ে বরের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে কবুল বলতে বলেন। কবুল বলার পর কাযী ছাহেব বরের নিকট ফিরে আসেন এবং মেয়ের ঠিকানা ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করে মেয়েকে গ্রহণ করার জন্য কবুল বলতে বলেন। তিন বার কবুল বলার পর বিবাহ সম্পন্ন হয়। এভাবে বিবাহ পড়ানো শারঈ পদ্ধতি নয়। ইসলামের নিয়ম হ’ল বিবাহের পূর্বে একজন বিবাহের খুৎবা পাঠ করবেন।[7] এরপর মেয়ের পিতা বা অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখপূর্বক বিবাহের প্রস্তাব করবেন। এসময় দু’জন সাক্ষীও উপস্থিত থাকবেন। তখন বর সরবে ‘কবুল’ অথবা ‘আমি গ্রহণ করলাম’ বলবেন। এরূপ তিনবার বলা উত্তম।[8] শুধু বরকেই কবুল বলাতে হবে। কনের নিকট থেকে কনের অভিভাবক শুধু অনুমতি নিবেন। বর বোবা হ’লে সাক্ষীদ্বয়ের উপস্থিতিতে পরিচিতিমূলক ইশারা বা লেখার মাধ্যমেও বিবাহ হ’তে পারে।[9] বিবাহের খুৎবা নিম্নরূপ-
إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ وَنَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شُرُورِ أَنْفُسِنَا وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلاَ هَادِىَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ- يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوْتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُم مُّسْلِمُوْنَ (ال عمران 102)- يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيراً وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللهَ الَّذِيْ تَسَاءلُوْنَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيْباً (النساء 1)- يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْداً، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزاً عَظِيْماً (الأحزاب 70-71)- [10]
অতঃপর বিবাহ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কথা বলবেন।
(১০) বিবাহ শেষে দো‘আ পাঠ : বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত সকলে বর-কনের জন্য নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বে-
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِى خَيْرٍ ‘আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার প্রতি বরকত নাযিল করুন এবং তোমাদের উভয়কে কল্যাণে মিলিত করুন’।[11]
(১১) বাসর ঘর ও কনে সাজানো : বিয়ের পর বর-কনেকে একত্রে থাকার জন্য বাসর ঘরের ব্যবস্থা করা ও কনেকে সাজিয়ে সুন্দর করে বরের সামনে উপস্থিত করা সুন্নাত।[12]
(১২) বিবাহের ঘোষণা দেওয়া : বিবাহ হচ্ছে একটি প্রকাশ্য সামাজিক অনুষ্ঠান। তাই বিয়ের অনুষ্ঠান সকলকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা বিবাহের অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার কর’।[13] এজন্য বিবাহের সময় ইসলামে দফ বা একমুখা ঢোল বাজানোকে জায়েয বলা হয়েছে। রুবাই বিনত মুআবিবয ইবনু আফরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নবী করীম (ছাঃ) এলেন এবং আমার বিছানার ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার বিছানার ওপর বসে আছ। সে সময় আমাদের ছোট মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাতপ্রাপ্ত আমাদের বাপ-চাচাদের শোকগাঁথা গাচ্ছিল’।[14]
বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য :
(১) স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগে হাত রেখে দো‘আ করা : নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোন মহিলাকে বিবাহ করবে অথবা চাকর ক্রয় করবে, সে যেন তার কপালে হাত রেখে বিসমিল্লাহ পড়ে বলে, اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তার মঙ্গল ও যে মঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা প্রার্থনা করছি। আর তার অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের উপর তাকে সৃষ্টি করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি’।[15]
(২) স্বামী-স্ত্রী জামা‘আতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা : শাকীক (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি আগমন করল, তাকে আবু হারীয বলে ডাকা হ’ত। তারপর তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি একজন যুবতী কুমারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। আর আমি ভয় করছি যে, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করবে। তারপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বলেন, নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব-ভালবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং রাগ-অসন্তুষ্টি শয়তানের পক্ষ থেকে। শয়তান ইচ্ছা করছে যে, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বৈধ করেছেন তা সে তোমাদের নিকট ঘৃণা সৃষ্টি করবে। সুতরাং সে (তোমার স্ত্রী) যখন তোমার কাছে আসবে তখন তাকে জামা‘আত সহকারে তোমার পিছনে দু’রাক‘আত ছালাত পড়তে নির্দেশ দিবে।[16]
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পিছনে দাঁড়াবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করবে এবং বলবে, اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِى أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ- اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍو فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ- ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিযিক দিন আর আমার থেকে তাদেরকেও রিযিক দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দিলে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান’।[17]
(৩) সহবাসকালে দো‘আ পাঠ : রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ স্ত্রীর কাছে আসলে সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লা-হি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শায়তা-না ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা’। অর্থ: ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যে সন্তান দান করবেন তাদের শয়তানের প্রভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখুন’।[18]
(৪) সহবাসের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময় ও জায়গা থেকে বিরত থাকা : বিবাহের পর মহিলা ঋতুবতী হ’লে সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং মহিলাদের পিছন দ্বারে সহবাস করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِى دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ ‘যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সঙ্গে কিংবা স্ত্রীর পিছনপথে সঙ্গম করে অথবা গণকের কাছে যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করল’।[19]
(৫) স্ত্রী সহবাসের পর ঘুমানোর পূর্বে ওযূ করা : সহবাসের পরে ঘুমাতে ও পানাহার করতে চাইলে কিংবা পুনরায় মিলিত হ’তে চাইলে মাঝে ওযূ করে নেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,ثَلاَثَةٌ لاَ تَقْرَبُهُمُ الْمَلاَئِكَةُ جِيْفَةُ الْكَافِرِ وَالْمُتَضَمِّخُ بِالْخَلُوْقِ وَالْجُنُبُ إِلاَّ أَنْ يَتَوَضَّأَ ‘তিন ব্যক্তির কাছে ফেরেশতা আসে না; কাফের ব্যক্তির লাশ, জাফরান ব্যবহারকারী এবং অপবিত্র ব্যক্তি যতক্ষণ না সে ওযূ করে’।[20]
(৬) ওয়ালীমা করা : বিবাহের পরে বরের অন্যতম কর্তব্য হ’ল ওয়ালীমা করা। আললামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) একে ওয়াজিব বলেছেন।[21] আলী (রাঃ) যখন ফাতিমা (রাঃ)-কে বিবাহের পয়গাম পাঠালেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘অবশ্যই নববধুর জন্য ওয়ালীমা হ’তে হবে’।[22] ওয়ালীমার মাধ্যমে বিবাহের কথা সকলের মাঝে প্রচার হয়। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন,مَا أَوْلَمَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى شَىْءٍ مِنْ نِسَائِهِ، مَا أَوْلَمَ عَلَى زَيْنَبَ أَوْلَمَ بِشَاةٍ ‘রাসূল (ছাঃ) স্বীয় বিবি যয়নাবের বিবাহে যত বড় ওয়ালীমা করেছিলেন, তত বড় ওয়ালীমা তিনি পরবর্তী কোন স্ত্রীর বিবাহে করেননি। তাতে তিনি একটি বকরী দিয়ে ওয়ালীমা করেছেন’।[23] আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যেদিন যয়নাব (রাঃ)-এর সাথে বাসররাত উদযাপন করলেন, সেদিন ওয়ালীমার ব্যবস্থা করলেন এবং মুসলিমদেরকে তৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত খাওয়ালেন। অতঃপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন এবং তাদের প্রতি সালাম করে তাদের জন্য দো‘আ করলেন। আর তারাও তাঁকে সালাম করলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। রাসূল (ছাঃ) তাঁর বাসর রাতের সকালে এরূপ করতেন’।[24]
কয়দিন ওয়ালীমা করা যাবে :
ওয়ালীমার নামে আমাদের সমাজে বড় লোকদের মিলন মেলা বসে, যেখানে ছেলে বা মেয়ের অভিভাবকদের দৃষ্টি থাকে উপহারের দিকে। ফলে দরিদ্র লোকজন এসব অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ ওয়ালীমার দাওয়াতে উপহার দেওয়া বা নেওয়া রাসূলের সুন্নাত নয়, সুন্নাত হ’ল সৎ ব্যক্তিগণকে দাওয়াত দেওয়া। তারা দাওয়াত গ্রহণ করে ওয়ালীমাতে আসবেন ও নবদম্পতির ভবিষ্যত মঙ্গলের জন্য দো‘আ করবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ تُصَاحِبْ إِلاَّ مُؤْمِنًا وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلاَّ تَقِىٌّ ‘তুমি শুধুমাত্র মুমিনের সাথী হবে, আর কেবল আল্লাহভীরু ব্যক্তিই তোমার খাদ্য খাবে’।[25] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيْمَةِ يُدْعَى لَهَا الأَغْنِيَاءُ، وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ، وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ ‘খাদ্যের মধ্যে নিকৃষ্ট খাবার ঐ ওয়ালীমার খাবার যাতে শুধু ধনীদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় এবং দরিদ্রদেরকে ত্যাগ করা হয়। আর ওয়ালীমার দাওয়াত যে কবুল করল না, সে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতা করল’।[26]
কোন মুসলিম ভাই ওয়ালীমার দাওয়াত দিলে দাওয়াত কবুল করা ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِذَا دُعِىَ أَحَدُكُمْ إِلَى الْوَلِيْمَةِ فَلْيَأْتِهَا- ‘তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দাওয়াত করা হ’লে সে যেন তাতে অংশগ্রহণ করে’।[27]
বিবাহে প্রচলিত প্রথা, যা ত্যাগ করা প্রয়োজন :
(১) বিবাহের তারিখ নির্ধারণ : বছরের কোন মাস বা দিনকে বিবাহের জন্য নির্ধারণ করা অথবা বিরত থাকা শরী‘আত বিরোধী। নির্দিষ্ট কোন দিনে, কারো মৃত্যু বা জন্মদিনে বিবাহ করা যাবে না মনে করা গুনাহের কাজ। আল্লাহর কাছে বছরের প্রতিটি দিনই সমান। মানুষ তার সুবিধা অনুযায়ী যে কোন দিন নির্ধারণ করতে পারবে।
(২) যৌতুক : বর্তমানে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের বিবাহে যৌতুক একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবাহের সময় কনের পক্ষ থেকে বরকে বা বরপক্ষকে কিছু দিতে হবে, এটা ইসলাম সমর্থন করে না; বরং ছেলে বা ছেলেপক্ষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মেয়েকে মোহর প্রদান করবে। আল্লাহ বলেন, وَآتُوْا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা খুশী মনে প্রদান কর’ (নিসা ৪/৩)। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর’ (নিসা ৪/২৪)। হিন্দু ধর্মের ‘পণ’ প্রথা থেকে মুসলিম সমাজে ‘যৌতুক’ প্রথার প্রচলন হয়। এ প্রথা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
(৩) মোহরকে বংশীয় মর্যাদার প্রতীক বা নারীর নিরাপত্তার গ্যারান্টি হিসাবে মনে করা : বিবাহে মোহরের মত ফরয কাজকে আজকাল বংশ-মর্যাদা বা তালাক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নারীর হাতিয়ার হিসাবে অনেকে মনে করেন। এজন্য ছেলের সামর্থ্যের দিকে লক্ষ্য না করে মেয়েপক্ষ তাদের বংশমর্যাদা অনুযায়ী লক্ষ লক্ষ টাকা মোহর নির্ধারণ করেন। আবার অনেকে মনে করেন বিবাহে মোহর বেশী ধার্য করা থাকলে ছেলেপক্ষ মেয়েকে তালাক দিতে পারবে না বা তালাক দিতে চাইলে প্রচুর টাকা দিতে হবে। এই উভয় ধারণাই ইসলাম বিরোধী। রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় লোকেরা এক মুষ্টি খাদ্যের বিনিময়েও বিবাহ করতেন।[28] এছাড়া কিছু না থাকায় কেবল কুরআন শিক্ষাদানের বিনিময়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) জনৈক ব্যক্তির বিবাহ দিয়েছেন।[29] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,
اَلاَ لاَ تُغَالُوْا صَدُقَةَ النِّسَاءِ فَإِنَّهَا لَوْ كَانَتْ مَكْرُمَةً فِي الدُّنْيَا أَوْ تَقْوَى عِنْدَ اللهِ لَكَانَ أَوْلَاكُمْ بِهَا نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا عَلِمْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَكَحَ شَيْئًا مِنْ نِسَائِهِ وَلَا أَنْكَحَ شَيْئًا مِنْ بَنَاتِهِ عَلَى أَكْثَرَ مِنْ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوْقِيَّةً-
‘সাবধান! তোমরা নারীদের মোহরের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কর না। কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের এবং আখেরাতে আল্লাহর নিকট তাক্বওয়ার বিষয় হ’ত, তবে তোমাদের চেয়ে এ ব্যাপারে নবী করীম (ছাঃ)-ই অধিক উপযুক্ত ছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বার উকিয়ার বেশী দিয়ে তাঁর কোন স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন অথবা তাঁর কোন কন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই’।[30] নবী করীম (ছাঃ) বলেন, خَيْرُ الصِّدَاقِ أَيْسَرُهُ ‘উত্তম মোহর হচ্ছে, যা দেয়া সহজ হয়’।[31]
(৪) থুবড়া প্রথা : বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে বর ও কনেকে বিবাহের দু’তিন দিন পূর্বে নিজ নিজ বাড়ীতে নির্দিষ্ট আসনে বসিয়ে রাতের প্রথমাংশে মাহরাম, গায়রে মাহরাম পুরুষ-নারী, যুবক-যুবতী সকলে মিষ্টি, ফল-মূল ও পিঠা-পায়েস ইত্যাদি মুখে তুলে খাওয়ায়। সেই সাথে নব যুবতীরা গীত গেয়ে পয়সা আদায় করে। এসব রীতি ইসলাম সমর্থন করে না। বরং এর মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা অবাধ মেলামেশার সুযোগ পায় এবং পর্দাহীনতা ও যেনার দিকে ধাবিত হয়।
(৫) আংটি পরানো : আজকাল মুসলমানদের অধিকাংশ বিবাহে আংটি বদলের রীতি চালু রয়েছে। আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) যাকে কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ বলে উল্লেখ করেছেন।[32]
(৬) গায়ে হলুদ : গায়ে হলুদের নামে আমাদের সমাজে বিবাহের দু’একদিন পূর্বে বর ও কনের সর্বাঙ্গে বর-কনের ভাবী, চাচাতো বোন, ফুফাতো বোন, মামাতো বোন, খালাতো বোনেরা মিলে হলুদ মাখার যে অনুষ্ঠান করে, তা ইসলামী বিধানের সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া নিজে অথবা মাহরাম ব্যক্তি কর্তৃক বর-কনেকে হলুদ মাখানো যায়। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ قَالَ مَا هَذَا؟ قَالَ إِنِّى تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ، أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ.
‘নবী করীম (ছাঃ) আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ)-এর গায়ে হলুদ রঙের আলামত দেখে বললেন, এটা কিসের রঙ? তিনি বললেন, আমি একটি মেয়েকে খেজুরের আuঁট পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার এ বিয়েতে বরকত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হ’লেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর’।[33]
(৭) বিবাহ অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য বাজানো : আমাদের সমাজের বিবাহ অনুষ্ঠানের অন্যতম ব্যঞ্জন হ’ল বাংলা, হিন্দী, ইংরেজী বিভিন্ন অশ্লীল গান-বাদ্যের আয়োজন করা। বিবাহের ২/৩ দিন আগে থেকেই এই নাচ-গানের আসর চলে, শেষ হয় বিবাহের কয়েকদিন পর। অথচ ইসলামে এই অশ্লীল গান-বাদ্যকে হারাম করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِىْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ ‘আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে’।[34] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَىَّ أَوْ حُرِّمَ الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْكُوبَةُ ‘আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন অথবা হারাম করা হয়েছে মদ, জুয়া ও তবলা’।[35] রাসূল (ছাঃ)-এর যুগে বিবাহসহ বিভিন্ন সময় দফ বাজানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। বিবাহের ঘোষণা করার জন্য দফ বা একমুখা ঢোল বাজানো বৈধ।[36]
(৮) মহিলা বরযাত্রী : মহিলাদের যে কোন সময়ই বেপর্দা হয়ে সাজসজ্জা করে বের হওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বিবাহের সময় মহিলারা সাজগোজ করে পাতলা কাপড় পরিধান করে পর্দাহীনভাবে বরের সাথে কনের বাড়ীতে যায়। এটা ইসলামে বৈধ নয়। যদি মহিলাদেরকে একান্তই যেতে হয় তাহ’লে পর্দার সাথে শালীন হয়ে যেতে হবে।
(৯) সাজগোজ করা : বর্তমানে বিবাহের অনুষ্ঠানে পাত্র-পাত্রীকে বিভিন্নভাবে সাজানোর প্রথা চালু আছে। বিউটি পারলার এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। অনেকে সাজ নষ্টের আশংকায় ছালাত পরিত্যাগ করে। এসব সাজসজ্জা নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি। তবে স্বাভাবিক সাজসজ্জা দোষণীয় নয়। আবার বিবাহে বরকে স্বর্ণের আংটি উপহার দেওয়া হয়। যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ। কেননা পুরুষদের সোনা ব্যবহার হারাম।[37] এতদ্ব্যতীত নেইল পালিশ ব্যবহার, কপালে টিপ দেওয়া, নখ বড় রাখা ইত্যাদি সবই বিধর্মীদের আচরণ। এগুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি কোন জাতির অনুকরণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে’।[38]
(১০) অপচয় করা : আজকাল অধিকাংশ বিবাহে অপচয় করতে দেখা যায়। অনেকে আবার অপচয় করতে গিয়ে ঋণী হয়ে পড়ে। যেমন বিবাহের দাওয়াতের জন্য দামী কার্ড ছাপানো, শুধু বিবাহে ব্যবহারের জন্য বাহারী দামী পোশাক ক্রয় করা, পটকা-আতশবাজি ফুটান, অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা, রঙ ছিটাছিটি করা ইত্যাদি। ইসলামে এসব অপচয় হারাম। কুরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْراً ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৭)।
(১১) অনৈসলামী রীতি : বিবাহের অনুষ্ঠানে বাঁশের কুলায় চন্দন, মেহেদি, হলুদ, কিছু ধান-দূর্বা ঘাস, কিছু কলা, সিঁদুর ও মাটির চাটি নিয়ে মাটির চাটিতে তৈল দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। তারপর বর-কনের কপালে তিনবার হলুদ মাখায়। এমনকি মূর্তিপূজার ন্যায় কুলাতে রাখা আগুন জ্বালানো, বর-কনের মুখে আগুনের ধোঁয়া ও কুলা হেলিয়ে-দুলিয়ে বাতাস দেওয়া হয়। কোন কোন এলাকায় বর-কনেকে গোসল করতে নিয়ে যাওয়ার সময় মাথার উপরে বড় চাদরের চার কোণা চারজন ধরে নিয়ে যায়। বিবাহ করতে যাওয়ার সময় বরকে পিঁড়িতে বসিয়ে বা সিল-পাটায় দাঁড় করিয়ে দুধ-ভাত খাওয়ানো হয়। সম্মানের নামে বর-কনে মুরববীদের কদমবুসি করে। এছাড়া বিবাহের পর বর দাঁড়িয়ে সবাইকে সালাম করে। এসব প্রথা ইসলামে নেই। এতদ্ব্যতীত আজকাল মহিলারা তাদের চোখের ভুরু উঠায়, মাথায় কৃত্রিম চুল লাগায়, দাঁতের মাঝে কেটে ফাঁকা করে, হাত-পায়ের নখ বড় রাখে, যা শরী‘আত সমর্থিত নয়।
(১২) বিবাহের বয়স নির্ধারণ : আমাদের দেশে ছেলে-মেয়ের বিবাহের জন্য বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত বয়সের পূর্বে কেউ বিবাহ করতে পারবে না, করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটা শরী‘আতবিরোধী আইন। ইসলাম প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক সামর্থ্যবান নারী-পুরুষকে চরিত্র সংরক্ষণের জন্য বিবাহের নির্দেশ ও অনুমতি দিয়েছে।[39] যখন নবী করীম (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর এবং যখন বাসর করেন তখন তার বয়স ছিল ৯ বছর এবং তিনি ৯ বছর নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে জীবন কাটান।[40]
পরিশেষে বলা যায়, বিবাহ একটি সামাজিক অনুষ্ঠান, যা ইসলামী শরী‘আত কর্তৃক নির্দেশিত। এতে পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। কিন্তু তা পূর্ণ ইখলাছ সহকারে শরী‘আতসিদ্ধ পন্থায় সম্পন্ন হ’তে হবে। অন্যথা তা ইহকালে যেমন কল্যাণ বয়ে আনবে না; পরকালেও কোন ছওয়াব বা বিনিময় পাওয়া যাবে না। তাই এ বিষয়ে সকলকে সজাগ ও সচেতন হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!
আব্দুল ওয়াদূদ
সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, খিলগাঁও, ঢাকা।
[1]. বুখারী হা/৫১৫১, মুসলিম হা/১৪১৮, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৩১৪৩।
[2]. বুখারী হা/৫০৮৭, ৫১২১, ৫১২৬, মুসলিম হা/১৪২৫, বুলূগুল মারাম হা/৯৭৯।
[3]. আবু দাউদ হা/২১২৫, নাসাঈ হা/৩৩৭৫, বুলূগুল মারাম হা/১০২৯।
[4]. বুখারী হা/৫১৫০ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।
[5]. আবূদাঊদ হা/২১১৭।
[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২।
[7]. সাইয়েদ সাবেক, ফিকহুস সুন্নাহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ২য় প্রকাশ ১৯৯৮খ্রিঃ), ২/১৫৩।
[8]. বুখারী হা/৯৫, মিশকাত হা/২০৮।
[9]. শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১২/৪৪ পৃঃ।
[10]. আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আবুদাউদ, মিশকাত হা/৩১৪৯।
[11]. আবুদাউদ হা/২১৩০, তিরমিযী হা/১০৯১, ইবনে মাজাহ হা/১৯০৫, মিশকাত হা/২৩৩২।
[12]. বুখারী, ইবনু মাজাহ হা/১৮৭৬, ইরওয়া হা/১৮৩১।
[13]. ইবনু হিববান, ত্বাবারানী, ইরওয়া হা/১৯৯৩।
[14]. বুখারী হা/৫১৪৭ ‘বিয়ে ও ওয়ালীমায় দফ বাজানো’ অনুচ্ছেদ।
[15]. আবুদাউদ হা/২১৬০, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৪৬।
[16]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ; আলবানী, আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ৩।
[17]. তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, হা/৮৯০০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭; সিলসিলা আছার আছ-ছহীহাহ হা/৩৬১।
[18]. বুখারী হা/১৪১, ৩২৭১, ৫১৬৫; মুসলিম হা/১৪৩৪; আহমাদ হা/১৯০৮, বুলূগুল মারাম হা/১০২০।
[19]. ইবনু মাজাহ হা/৬৩৯; তিরমিযী হা/১৩৫; মিশকাত হা/৫৫১, হাদীছ ছহীহ।
[20]. আবুদাউদ হা/৪১৮০; ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৩, সনদ হাসান।
[21]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলাহ নং ২৪।
[22]. মুসনাদে ইমাম আহমাদ, আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ২৪।
[23]. বুখারী হা/৫১৬৮, মুসলিম হা/২৫৬৯, মিশকাত হা/৩২১১।
[24]. বুখারী হা/৫১৫৪।
[25]. আবুদাউদ, তিরমিযী, দারেমী, মিশকাত হা/৫০১৮।
[26]. বুখারী হা/৫১৭৭, মুসলিম হা/১৪৩২।
[27]. বুখারী হা/৫১৭৩, মুসলিম হা/১৪২৯।
[28]. ছহীহ আবু দাউদ হা/১৮৫৫।
[29]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৩২০২, ‘মোহর’ অনুচ্ছেদ।
[30]. তিরমিযী হা/১১১৪, ইবনু মাজাহ হা/১৮৮৭, মিশকাত হা/৩২০৪ ‘মোহরানা’ অনুচ্ছেদ, হাদীছ ছহীহ।
[31]. আবুদাউদ হা/২১১৭, বুলূগুল মারাম হা/১০৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৩২৭৯।
[32]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলা নং ৩৮।
[33]. বুখারী ৫০৭২, মুসলিম হা/১৪২৭, মিশকাত হা/৩২১০।
[34]. বুখারী হা/৫৫৯০, মিশকাত হা/৫৩৪৩।
[35]. আবু দাউদ হা/৩৬৯৬, মিশকাত হা/৪৫০৩, হাদীছ ছহীহ।
[36]. আদাবুয যিফাফ, মাসআলাহ নং-৩৭।
[37]. নাসাঈ হা/৪০৫৭; আবু দাঊদ হা/৪০৪৯; ইবনু মাজাহ হা/৩৫৯৫, সনদ ছহীহ।
[38]. আহমাদ, আবুদাউদ হা/৪০৩১, মিশকাত হা/৪৩৪৭।
[39]. বুখারী/৫০৬৫, মুসলিম/১৪০০, মিশকাত/৩০৮০ ‘নিকাহ’ অধ্যায়, বুলূগুল মারাম হা/৯৬৮।
[40]. বুখারী হা/৫১৫৮ ‘বিবাহ’ অধ্যায়।