হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যার মাধ্যমে বান্দা নিষ্পাপ হয়ে যায় এবং কবুল হজ্জ সম্পাদনের মাধ্যমে বান্দার জন্য পরকালীন জীবনে জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। কিন্তু হজ্জ সমাপনের পরে হজ্জ পালনকারীর জন্য করণীয় কি হবে, এ বিষয়েই আলোচ্য নিবন্ধে আলোচনা করা হ’ল।-
১. আল্লাহর ইবাদত ও যিকরে মশগূল থাকা :
হজ্জের মৌসুমে এবং হজ্জ পরবর্তী সময়ে বেশী বেশী আল্লাহর যিকর ও ইবাদতে মশগূল থাকা কর্তব্য। যেমন আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قَضَيْتُمْ مَنَاسِكَكُمْ فَاذْكُرُوا اللهَ كَذِكْرِكُمْ آبَاءَكُمْ أَوْ أَشَدَّ ذِكْرًا فَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ، أُولَئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِمَّا كَسَبُوا وَاللهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ، ‘অতঃপর যখন তোমরা হজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করবে, তখন তোমরা আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ কর যেভাবে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের স্মরণ কর, বরং তার চাইতেও বেশী স্মরণ। অতঃপর লোকদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে (কেবল) ইহকালে কল্যাণ দাও। তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। আর তাদের মধ্যে যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও ও পরকালে কল্যাণ দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও! ঐসব লোকদের জন্য তাতে পূর্ণ অংশ রয়েছে, যা তারা উপার্জন করেছে। আর আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী’ (বাক্বারাহ ২/২০০-২০২)।
আর ইবাদতের জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় ও নির্ধারিত স্থান নেই। বরং মুসলিম যেখানেই থাকুক সর্বদা সর্বাবস্থায় আল্লাহর ইবাদত করবে। যেমন আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ، ‘আর তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর, যতক্ষণ না মৃত্যু তোমার নিকটে উপস্থিত হয়’ (হিজর ১৫/৯৯)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنْ قَامَتْ عَلَى أَحَدِكُمُ الْقِيَامَةُ وَفِى يَدِهِ فَسِيلَةٌ فَلْيَغْرِسْهَا، ‘যদি তোমাদের কারো নিকটে ক্বিয়ামত এসে যায় এ অবস্থায় যে, তার হাতে একটি চারাগাছ রয়েছে, তাহ’লে সে যেন সেটা রোপণ করে দেয়’।[1] সুতরাং আমল ও ইবাদত জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত করার চেষ্টা করতে হবে। মুসলিম নারী-পুরুষ তার প্রতিটি সেকেন্ড ও মিনিট আল্লাহর আনুগত্যে তথা তাঁর ইবাদতে ব্যয় করবে। পক্ষান্তরে কিছু সময় ইবাদত ও নেক আমল করে থেমে যাবে না। আল্লাহ বলেন, وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِنْ بَعْدِ قُوَّةٍ أَنْكَاثًا، ‘আর তোমরা সেই নারীর মত হয়ো না, যে তার সুতা মযবূতভাবে পাকাবার পর তা খুলে ছিন্নভিন্ন করে দেয়’ (নাহল ১৬/৯২)।
২. নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা :
হজ্জ একটি বড় নে‘মত, যা সবাই লাভ করতে পারে না। সুতরাং যারা এই বড় নে‘মত পেয়ে ধন্য হয়, তার জন্য আবশ্যিক হয়ে যায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ বলেন,وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ، ‘আর যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তাহ’লে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে বেশী বেশী করে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তাহ’লে (মনে রেখ) নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)। আল্লাহ একটি নিরাপদ জনবসতির উদাহরণ পেশ করেন, যারা তাদের প্রতি নে‘মতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনি, ফলে তাদের নিকট থেকে সে নে‘মতকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। আল্লাহ বলেন,وَضَرَبَ اللهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللهِ فَأَذَاقَهَا اللهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ، ‘আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। যেখানে প্রত্যেক স্থান থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নে‘মত সমূহের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ ক্ষুধা ও ভীতির মালিণ্যের স্বাদ আস্বাদন করালেন’ (নাহল ১৬/১১২)।
রাসূল (ছাঃ) স্বীয় ছাহাবীগণকে নে‘মতের অধিক শুকরিয়া আদায় করার এবং আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনার উপদেশ দিতেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّ رَسُولَ صَلَّى عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: يَا مُعَاذُ، وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ، فَقَالَ: أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُولُ: اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ،
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছা.) তার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে অছিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক ছালাতের পর এ দো‘আটি কখনো পরিহার করবে না- ‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবাদাতিকা’ (অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন)’।[2]
৩. বেশী বেশী তওবা করার চেষ্টা করা :
যে ব্যক্তি অহী নাযিলের স্থান ও নিরাপদ শহর প্রত্যক্ষ করে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করে, আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনে আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তাঁর নিদর্শনসমূহ অবলোকন করে, ইসলামের শে‘আরসমূহ সরাসরি দেখে সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন ও তওবা করার প্রতি সত্বর প্রবৃত্ত হবে। এক্ষেত্রে কোন কিছুই তাকে অক্ষম বা অপারগ করতে পারবে না। তাছাড়া বান্দা যখন দেখবে হক ও বাতিল, ভাল ও মন্দ পার্থক্য করতে জ্ঞান-বিবেক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত এবং যুবক-বৃদ্ধ সব ধরনের মানুষের হঠাৎ মৃত্যু বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন সে তওবা করার জন্য দ্রুত অগ্রসর হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتُوبُوا إِلَى اللهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (নূর ২৪/৩১)। যারা তওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ، ‘যারা এ থেকে তওবা করে না, তারা সীমালংঘনকারী’ (হুজুরাত ৪৯/১১)।
পক্ষান্তরে হাদীছে সত্বর তওবা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيْلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا، ‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে নিজের হাত প্রসারিত করেন, যাতে দিনের বেলায় গুনাহকারীর তওবা কবুল করতে পারেন। আবার দিনের বেলায় হাত প্রসারিত করেন, যাতে রাতের বেলায় গুনাহকারীর তওবা কবুল করতে পারেন। এভাবে তিনি হাত প্রসারিত করতে থাকবেন যতদিন না সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে’।[3] তিনি আরো বলেন,إِذَا مَضَى شَطْرُ اللَّيْلِ، أَوْ ثُلُثَاهُ، يَنْزِلُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: هَلْ مِنْ سَائِلٍ يُعْطَى؟ هَلْ مِنْ دَاعٍ يُسْتَجَابُ لَهُ؟ هَلْ مِنْ مُسْتَغْفِرٍ يُغْفَرُ لَهُ؟ حَتَّى يَنْفَجِرَ الصُّبْحُ، ‘রাতের অর্ধেক অথবা দু’-তৃতীয়াংশ অতিক্রম হ’লে মহান ও বরকতময় আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে দেয়া হবে? কোন আহবানকারী আছে কি যার আহবানে সাড়া দেয়া হবে? কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হবে? আল্লাহ তা‘আলা ভোর প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এরূপ বলতে থাকেন’।[4]
অন্যত্র তিনি আরো বলেন,كُلُّ بَنِي آدَمَ خَطَّاءٌ، وَخَيْرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُونَ، ‘প্রত্যেক আদম সন্তানই ভুলকারী। আর উত্তম ভুলকারী তারাই, যারা অধিক তওবা করে’।[5] হাসান বছরী (রহ.) বলেন,أَكْثِرُوا مِنَ الِاسْتِغْفَارِ فِيْ بُيُوْتِكُمْ، وَعَلَى مَوَائِدِكُمْ، وَفِيْ طُرُقِكُمْ، وَفِيْ أَسْوَاقِكُمْ، وَفِيْ مَجَالِسِكُمْ أَيْنَمَا كُنْتُمْ، فَإِنَّكُمْ مَا تَدْرُوْنَ مَتَى تَنْزِلُ الْمَغْفِرَةُ، ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন বেশী বেশী ক্ষমাপ্রার্থনা কর; তোমাদের বাড়ি-ঘরসমূহে, পথ-প্রান্তরসমূহে, বাজারসমূহে এবং বৈঠকগুলোতে। কারণ তোমরা তো জানো না কখন ক্ষমা অবতীর্ণ হবে’।[6]
৪. মানবিক গুণাবলী অর্জন করা :
ইসলামের প্রতিটি ইবাদত মুসলিমকে উত্তম নৈতিকতা অবলম্বনে সহায়তা করে। মুমিনের জীবনব্যাপী ইবাদতসমূহ তাকে উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবলম্বনের পথে চালিত করে। যেমন ছালাত অশ্লীল ও নিন্দনীয় কাজ থেকে বিরত রাখে; ছিয়াম আল্লাহভীরুতা বৃদ্ধি করে; যাকাত আত্মাকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা, ব্যয়কুণ্ঠতা ইত্যাদি থেকে। আর হজ্জ ইসলামের বড় ইবাদত ও মহান নিদর্শন, যা মুসলিমকে পারস্পরিক সৌহার্দ, সহমর্মিতা ও উত্তম আচরণ শিক্ষা দেয়। আল্লাহ বলেন,الْحَجُّ أَشْهُرٌ مَعْلُومَاتٌ فَمَنْ فَرَضَ فِيهِنَّ الْحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ يَعْلَمْهُ اللهُ وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى وَاتَّقُونِ يَاأُولِي الْأَلْبَابِ ‘হজ্জের মাসগুলি নির্ধারিত। অতএব যে ব্যক্তি এই মাসসমূহে হজ্জ-এর সংকল্প করবে (অর্থাৎ ইহরাম বাঁধবে), তার জন্য হজ্জের সময় স্ত্রী মিলন, দুষ্কর্ম ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। তোমরা যেসব সৎকর্ম কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন, আর তোমরা পাথেয় সঞ্চয় করো। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় হ’ল আল্লাহভীতি। অতএব হে জ্ঞানীগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৭)। সুতরাং হজ্জ পরবর্তী সময়েও অশ্লীল কথা-কাজ পরিহার করা, কর্কষ ভাষা ও রূঢ় আচরণ ত্যাগ করা, কোন মানুষকে কষ্ট না দেওয়া, প্রতিবেশী ও অন্যদের সাথে সদাচরণ করা, পরোপকার ও জনসেবা করার চেষ্টা করা ইত্যাদি সৎকাজ অধিক হারে করতে হবে।
৫. আমলে ছালেহ বেশী বেশী করার চেষ্টা করা :
হজ্জ একটি গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। এই আমলের পরে অন্যান্য সৎকাজ অধিক হারে করতে হবে। আল্লাহ বলেন, اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٌ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ، ‘তোমরা জেনে রাখ যে, পার্থিব জীবন খেল-তামাশা, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা, ধন-সম্পদ ও সন্তান- সন্ততির প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া কিছু নয়। যার উপমা বৃষ্টির ন্যায়। যার উৎপাদন কৃষককে চমৎকৃত করে। অতঃপর তা শুকিয়ে যায়। যাকে তুমি হলুদ দেখতে পাও। অতঃপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর পরকালে রয়েছে (কাফেরদের জন্য) কঠিন শাস্তি এবং (মুমিনদের জন্য) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। বস্ত্ততঃ পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়’ (হাদীদ ৫৭/২০)। এজন্য রাসূল (ছা.) বলেন,بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سِتًّا: الدَّجَّالَ، وَالدُّخَانَ، وَدَابَّةَ الْأَرْضِ، وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا، وَأَمْرَ الْعَامَّةِ، وَخُوَيْصَّةَ أَحَدِكُمْ، ‘ছয়টি লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার পূর্বে নেক আমল সম্পাদনে তৎপর হও। ১. ধোঁয়া, ২. দাজ্জাল, ৩. দাববাতুল আরয (মৃত্তিকাগর্ভ হ’তে বহির্ভূত জন্তু), ৪, পশ্চিমাকাশ হ’তে সূর্য উদিত হওয়া, ৫. সর্বগ্রাসী ফিতনা ও ৬. তোমাদের ব্যক্তিবিশেষের ওপর আরোপিত ফিতনা’।[7]
ছাহাবায়ে কেরাম আমলে ছালেহ সম্পাদনে সাধ্যমত চেষ্টা করতেন। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, أنها كانت تصلي الضحى ثماني ركعات ثم تقول : لو نشر لي أبواي ما تركتها. ‘তিনি চাশ্তের আট রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমার জন্যে যদি আমার মাতা-পিতাকেও জীবিত করে দেয়া হয় তবুও আমি এ ছালাত ছাড়ব না’।[8] আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ مِنَ النَّاسِ مَفَاتِيحَ لِلْخَيْرِ، مَغَالِيقَ لِلشَّرِّ، وَإِنَّ مِنَ النَّاسِ مَفَاتِيحَ لِلشَّرِّ مَغَالِيقَ لِلْخَيْرِ، فَطُوبَى لِمَنْ جَعَلَ اللهُ مَفَاتِيحَ الْخَيْرِ عَلَى يَدَيْهِ، وَوَيْلٌ لِمَنْ جَعَلَ اللهُ مَفَاتِيحَ الشَّرِّ عَلَى يَدَيْهِ
‘নিশ্চয়ই কিছু লোক আছে, যারা কল্যাণের চাবিকাঠি এবং অকল্যাণের দ্বার রুদ্ধকারী। পক্ষান্তরে এমন কিছু লোক আছে যারা অকল্যাণের দ্বার উন্মোচনকারী এবং কল্যাণের পথ রুদ্ধকারী। সেই লোকের জন্য সুসংবাদ যার দু’হাতে আল্লাহ কল্যাণের চাবি রেখেছেন এবং সেই লোকের জন্য ধ্বংস যার দু’হাতে আল্লাহ অকল্যাণের চাবি রেখেছেন’।[9]
৬. আমলকে তুচ্ছ মনে করা এবং গর্ব-অহংকার না করা :
মানুষ যেসব আমল করে, তার সারা জীবনের সমস্ত আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নে‘মতের শুকরিয়া আদায় হবে না। যেমন তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা চোখ-কান, হাত-পা, জিহবা, ত্বক ইত্যাদি। এছাড়া আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা, দৈহিক শক্তি, আর্থিক সচ্ছলতা, সৃষ্টিজীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব ইত্যাদি নে‘মতের কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে শেষ করা যাবে না। অতএব এসবের তুলনায় মানুষের কৃত আমল যারপর নেই নগণ্য। সুতরাং মানুষ তার কৃত আমলের জন্য গর্ব-অহংকার করবে না। বরং সে তার আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে, তাহ’লে সে আরো অধিক আমলে প্রবৃত্ত হ’তে পারবে। অনুরূপভাবে হজ্জ করেও নিজেকে বড় আমলকারী, ইবাদতগুযার ভাববে না বরং সে আরো বেশী আমলের জন্য চেষ্টা করবে।
৭. আমল প্রত্যাখ্যাত হওয়ার শংকায় থাকা :
মুমিন হৃদয়ে ভয় ও আশা দু’টিই থাকবে। হাসান বছরী (রহ.) বলেন, المؤمن يحسن ويخاف، والمنافق يسيء ويأمن، ‘মুমিন ব্যক্তি নেক আমল করে তা কবুল না হওয়ার ভয় করে, আর মুনাফিক পাপ করেও নিজেকে নিরাপদ ভাবে’।[10]
মুমিন ইবাদত করার পরে তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে যেমন আশান্বিত থাকবে, তদ্রূপ তা কবুল না হওয়ারও আশংকায় থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَالَّذِيْنَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوْبُهُمْ وَجِلَةٌ، ‘আর তাদেরকে যা (রিযিক) দেওয়া হয়েছে তা থেকে তারা দান করে, তখন তাদের হৃদয় ভীত-কম্পিত থাকে’ (মুমিনূন ২৩/৬০)। মা আয়েশা (রা.) বলেন, আমি এই আয়াতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললাম,يَا رَسُولَ اللهِ! أَهُوَ الَّذِي يَزْنِي، وَيَسْرِقُ، وَيَشْرَبُ الْخَمْرَ؟ ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! এর দ্বারা কি এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে ব্যভিচার করে, চুরি করে এবং মদপান করে? তিনি বলেন, لَا، يَا بِنْتَ أَبِي بَكْرٍ أَوْ يَا بِنْتَ الصِّدِّيقِ وَلَكِنَّهُ الرَّجُلُ يَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُ، وَيُصَلِّي، وَهُوَ يَخَافُ أَنْ لَا يُتَقَبَّلَ مِنْهُ، ‘না, হে আবুবকরের কন্যা অথবা হে ছিদ্দীকের কন্যা! বরং উক্ত আয়াতে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে ছিয়াম পালন করে, যাকাত দেয়, দান-খয়রাত করে, ছালাত আদায় করে আর আশংকা করে যে, তার এসব ইবাদত কবুল হ’ল কি-না’?[11]
আলী (রা.) বলেন,كونوا لقبول العمل أشد اهتماماً منكم بالعمل. ألم تسمعوا الله عز وجل يقول: (إنما يتقبل الله من المتقين). ‘তোমরা আমল অপেক্ষা তা কবুল হওয়ার ব্যাপারে অধিক গুরুত্ব প্রদানকারী হও। তোমরা কি আল্লাহকে বলতে শোননি, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কেবল মুত্তাক্বীদের আমলই কবুল করে থাকেন’ (মায়েদাহ ৫/২৭)।[12]
খ্যাতনামা তাবেঈ মালেক ইবনু দীনার (রহ.) বলেন, الخوف على العمل ألا يُتقبل أشد من العمل، ‘আমল কবুল হবে কি-না সেই ভয়ে ভীত হওয়া আমল করা অপেক্ষা কঠিন বিষয়’।[13]
আব্দুল আযীয ইবনু আবূ রাওয়াদ (রহ.) তাবেঈদের সম্পর্কে বলেন,أدركتهم يجتهدون في العمل الصالح، فإذا فعلوه وقع عليهم الهم أي قبل منهم أم لا، ‘আমি তাদেরকে পেয়েছি যে, তারা সৎকাজে সচেষ্ট হ’তেন। অতঃপর যখন তারা আমল সম্পাদন করতেন, তখন চিন্তায় পড়ে যেতেন যে, তাদের আমল কবুল হবে কি-না’।[14]
৮. বেশী বেশী দো‘আ করা :
বান্দার জন্য কর্তব্য আল্লাহর কাছে বেশী বেশী দো‘আ করা। আল্লাহ বলেন,وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে। তারা সত্বর জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত অবস্থায়’ (গাফের/মুমিন ৪০/৬০)। তিনি আরো বলেন, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيبُوا لِي وَلْيُؤْمِنُوا بِي لَعَلَّهُمْ يَرْشُدُونَ ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে, (তখন তাদের বল যে,) আমি অতীব নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই যখন সে আমাকে আহবান করে। অতএব তারা যেন আমাকে আহবান করে এবং আমার উপরে নিশ্চিন্ত বিশ্বাস রাখে। যাতে তারা সুপথপ্রাপ্ত হয়’ (বাক্বারাহ ২/১৮৬)।
রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ، ‘দো‘আ হচ্ছে ইবাদত’।[15] তাই তিনি বেশী বেশী দো‘আ করার জন্য বলেছেন। তিনি বলেন, إِذَا تَمَنَّى أَحَدُكُمْ فَلْيُكْثِرْ، فَإِنَّمَا يَسْأَلُ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ ‘তোমাদের কেউ যখন কামনা করবে বা প্রার্থনা করবে তখন বেশী করে চাইবে। কারণ সে তো তার মালিকের কাছে চাচ্ছে’।[16] তিনি অন্যত্র বলেন,لِيَسْأَلْ أَحَدُكُمْ رَبَّهُ حَاجَتَهُ كُلَّهَا حَتَّى يَسْأَلَهُ شِسْعَ نَعْلِهِ إِذَا انْقَطَعَ وَحَتَّى يَسْأَلَهُ الملح، ‘তোমরা তোমাদের সকল প্রয়োজন আল্লাহর কাছে চাইবে, এমনকি যদি জুতার ফিতা ছিড়ে যায় তাহ’লে তাও তাঁর কাছেই চাইবে। এমনকি লবণও তাঁর কাছেই চাইবে’।[17]
হাদীছে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي، وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا، فَلَا تَظَالَمُوا، يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلَّا مَنْ هَدَيْتُهُ، فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ، يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ، إِلَّا مَنْ أَطْعَمْتُهُ، فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ، يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارٍ، إِلَّا مَنْ كَسَوْتُهُ، فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ، يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا، فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ، يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي، فَتَنْفَعُونِي، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ، مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا، يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ، مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلَّا كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ،
‘ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের উপর যুলুমকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ছিলে পথহারা, তবে আমি যাকে সুপথ দেখিয়েছি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে হেদায়াত প্রার্থনা কর আমি তোমাদের হেদায়াত দান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই ক্ষুধার্ত, তবে আমি যাকে খাদ্য দান করি সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে আহার্য চাও, আমি তোমাদের আহার করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই বস্ত্রহীন, কিন্তু আমি যাকে পরিধান করাই সে ব্যতীত। তোমরা আমার কাছে পরিধেয় চাও, আমি তোমাদের পরিধান করাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা রাতদিন অপরাধ করে থাকো। আর আমিই সব অপরাধ ক্ষমা করি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে মাগফিরাত প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অনিষ্ট করতে পারবে না, যাতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হই এবং তোমরা কখনো আমার উপকার করতে পারবে না, যাতে আমি উপকৃত হই। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত, তোমাদের মানুষ ও জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর আমাকে সবচাইতে বেশী ভয় পায়, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাতে আমার রাজত্ব এতটুকুও বৃদ্ধি পাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত, তোমাদের সকল মানুষ ও সকল জিন জাতির মধ্যে যার অন্তর সবচাইতে পাপিষ্ঠ, তোমরা সবাই যদি তার মতো হয়ে যাও তাহ’লে আমার রাজত্ব কিছুমাত্র হ্রাস পাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সকল মানুষ ও জিন যদি কোন বিশাল মাঠে দাঁড়িয়ে সবাই আমার কাছে আবদার করে আর আমি প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণ করি তাহ’লে আমার কাছে যা আছে তাতে এর চাইতে বেশী হ্রাস পাবে না, যেমন কেউ সমুদ্রে একটি সূচ ডুবিয়ে দিলে যতটুকু তা থেকে হ্রাস পায়’।[18]
এমনকি রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ لَمْ يَدْعُ اللهَ سُبْحَانَهُ، غَضِبَ عَلَيْهِ ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর নিকট দো‘আ করে না, আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন’।[19] মোল্লা আলী ক্বারী এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন,لِأَنَّ تَرْكَ السُّؤَالِ تَكَبُّرٌ وَاسْتِغْنَاءٌ، وَهَذَا لَا يَجُوزُ لِلْعَبْدِ. ‘কেননা প্রার্থনা পরিহার করা অহংকার ও অমুখাপেক্ষী হওয়া, যা বৈধ নয়। আল্লামা ত্বীবী বলেন,وَذَلِكَ لِأَنَّ اللهَ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ مِنْ فَضْلِهِ، فَمَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللهَ يَبْغَضُهُ، وَالْمَبْغُوضُ مَغْضُوبٌ عَلَيْهِ لَا مَحَالَةَ، ‘আর এটা এজন্য যে, আল্লাহ তাঁর করুনা প্রার্থনা করা পসন্দ করেন। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করে না, তাকে তিনি অপসন্দ করেন। আর অপসন্দনীয় ব্যক্তি অবধারিতভাবে গযবের শিকার হয়’।[20]
আয়েশা (রাঃ) বলেন,سَلُوا اللهَ كُلَّ شَيْءٍ حَتَّى الشِّسْعَ، فَإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِنْ لَمْ يُيَسِّرْهُ لَمْ يَتَيَسَّرْ، ‘তোমরা সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইবে। এমনকি জুতার ফিতাও (চাও)। কারণ আল্লাহ তা সহজ না করলে তা (পাওয়া) সহজ হবে না’।[21] তাই আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাইতে হবে।
পরিশেষে হজ্জ একটি অতি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। কবুল হজ্জের বিনিময় জান্নাত।[22] সুতরাং জান্নাত প্রাপ্তির লক্ষ্যে হজ্জ পরবর্তী করণীয়গুলো যথাযথভাবে সম্পাদনের চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন!
[1]. আহমাদ হা/১২৯২৫; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৪৭৯; ছহীহাহ হা/৯; ছহীহুল জামে‘ হা/১৪২৪।
[2]. আবু দাঊদ হা/১৫২২; নাসাঈ হা/১৩০২; ছহীহুত তারগীব হা/১৫৯৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৬৯।
[3]. মুসলিম হা/২৭৫৯; ছহীহাহ হা/৩৫১৩; ছহীহুত তারগীব হা/৩১৩৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৮৭১।
[4]. মুসলিম হা/৭৫৮; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৮০২।
[5]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১; মিশকাত হা/২৩৪১, সনদ হাসান।
[6]. ইবনু রজব হাম্বলী, জামে‘উল ‘উলূম ওয়াল হিকাম ২/৪০৮।
[7]. মুসলিম হা/২৯৪৭; ইবনু মাজাহ হা/৪০৫৬; ছহীহাহ হা/৭৫৯;ছহীহুল জামে‘ হা/৫১২৩; মিশকাত হা/৫৪৬৫।
[8]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৫২০; মিশকাত হা/১৩১৯, সনদ ছহীহ।
[9]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৭; ছহীহাহ হা/১৩৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/২২২৩।
[10]. দুরূস শায়েখ আয়েয আল-ক্বারনী, ২২২/২৫।
[11]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৯৮; মুস্তাদরাকে হাকেম হা/৩৪৮৬।
[12]. ইবনু আবীদ দুনিয়া, আল-ইখলাছ ওয়ান নিয়্যাহ, পৃ. ৩৯; ইসলাম ওয়েব, প্রশ্ন নং ২৮২২৮, তাং ২০/০৭/২০১৫।
[13]. রেযা আহমাদ ছামদী, আল-ক্বাওয়ায়িদুল হাস্সান ফী আস্রারিত্ব ত্বা‘আতি ওয়াল ইসতি‘দাদি লি রামাযান, পৃ. ১৩৬।
[14]. মুহাম্মাদ হুসাইন ইয়াকূব, আসরারুল মুহিবিবন ফী রামাযান, পৃ.৩৪০।
[15]. আবু দাউদ হা/১৪৭৯; তিরমিযী হা/২৯৬৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৪০৭।
[16]. তাবারাণী, আওসাত্ব; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৪০৩, সনদ ছহীহ।
[17]. তিরমিযী হা/৩৯৭৩, ‘কিতাবুত দাওয়াত’; ছহীহ ইবনু হিববান ৩/১৪৮, ৩/১৭৬; তারাজু‘আত আলবানী হা/৭১, সনদ হাসান।
[18]. মুসলিম হা/২৫৭৭।
[19]. তিরমিযী হা/৩৩৭৩; ছহীহাহ হা/২৬৫৪।
[20]. মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ৪/১৫৩০।
[21]. মুসনাদ আবী ইয়া‘লা হা/৪৫৬০; তারাজু‘আত আলবানী হা/৩২, সনদ মওকূফ হাসান; যঈফাহ হা/২১; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৩৭।
[22]. বুখারী হা/১৭৭৩; মুসলিম হা/১৩৪৯; মিশকাত হা/২৫০৮।