হাদীছ থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ امْرَأَةً فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَّنْظُرَ إِلَيْهَا إِذَا كَانَ إِنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا لِخِطْبَتِهِ وَإِنْ كَانَتْ لاَ تَعْلَمُ-
‘যখন তোমাদের কেউ কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে, তখন তাকে দেখাতে কোন গুনাহ হবে না। তবে কেবল বিয়ে করার উদ্দেশ্যেই দেখতে হবে, যদিও মেয়ে জানতে না পারে’।[1]
অত্র হাদীছে দলীল গ্রহণের দিক হ’ল নবী করীম (ছাঃ) বিশেষভাবে বিয়ের প্রস্তাব দানকারীর জন্য প্রস্তাবিত মেয়ের প্রতি তাকানোকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করেননি। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিয়ের প্রস্তাবকারী ব্যতীত অন্য কেউ কোন অপরিচিতার দিকে তাকালে সর্বাবস্থায় পাপী হবে। অনুরূপভাবে প্রস্তাবকারী বিয়ের প্রস্তাব ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তাকালে যেমন আনন্দ ও মজা পাওয়া বা অনুরূপ কোন কারণে তাকালে পাপী হিসাবে গণ্য হবে। যদি কেউ বলে কোন্ অঙ্গের প্রতি তাকাবে এটা তো হাদীছে বর্ণিত হয়নি। সুতরাং এর দ্বারা মেয়ের গ্রীবা ও বক্ষদেশের প্রতি তাকানো অর্থ হ’তে পারে? উত্তরে বলব, এ কথা সকলে জানে যে প্রস্তাবকারীর মূল উদ্দেশ্য মেয়ের সৌন্দর্য দেখা। আর সেটা হ’ল চেহারার সৌন্দর্য। এছাড়া তার অনুগামী অন্যান্য অঙ্গগুলির প্রতি অধিকাংশ সময় লক্ষ্য করা হয় না। প্রস্তাবকারী কেবল চেহারার দিকে তাকায়; কারণ সৌন্দর্য পিয়াসীর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্দেহাতীতভাবে সেটাই। (অতএব মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্গত)।
২য় দলীল :
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ قَالَتْ أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ نُخْرِجَهُنَّ فِىْ يَوْمِ الْفِطْرِ وَالنَّحْرِ. قَالَ قَالَتْ أُمُّ عَطِيَّةَ فَقُلْنَا أَرَأَيْتَ إِحْدَاهُنَّ لاَ يَكُوْنُ لَهَا جِلْبَابٌ قَالَ فَلْتُلْبِسْهَا أُخْتُهَا مِنْ جِلْبَابِهَا-
উম্মে আতিয়া (রাঃ) বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ) নারীদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার ছালাতে বের হওয়ার নির্দেশ দিলেন। উম্মু সালমা বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! যদি আমাদের মধ্যে কারো চাদর না থাকে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার বোন তাকে চাদর পরাবে’।[2]
অত্র হাদীছ প্রমাণ বহন করে যে, মহিলা ছাহাবীদের অভ্যাস ছিল যে, তাঁরা বড় চাদর না পরে বাইরে বের হ’তেন না। চাদর না থাকলে বের হওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভবও হ’ত না। আর এজন্য তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট তাঁদের প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করলেন, যখন তাদের ঈদের ছালাতে বের হ’তে বলা হ’ল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অন্য মুসলিম বোনের চাদর পরে ঈদগাহে গমন করতে বলে এ প্রশ্নের সমাধান দিলেন। কিন্তু তাঁদেরকে চাদর ছাড়া বের হওয়ার অনুমতি দেননি, যদিও ঈদগাহে ছালাত আদায়ের জন্য বের হওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য শরী‘আত সম্মত।
অতএব যখন নারীদের চাদর পরিধান ব্যতীত শরী‘আত সম্মত স্থানে যাবার অনুমতি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দিলেন না, তখন চাদর পরিধান ছাড়া শরী‘আত অননুমোদিত স্থানে যাওয়ার অনুমতি তিনি কি করে দিতে পারেন, যেখানে যেতে তারা বাধ্য নয়? বরং তা হ’ল কেবল বাজারে ঘুরা-ফিরা, পুরুষদের সাথে মিলা-মিশা ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করা, যাতে কোন উপকারিতা নেই। আর চাদর পরার নির্দেশই মুখমন্ডল পর্দা করার প্রমাণ বহন করে। আল্লাহই অধিক অবগত।
৩য় দলীল :
عَائِشَةَ قَالَتْ لَقَدْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى الْفَجْرَ، فَيَشْهَدُ مَعَهُ نِسَاءٌ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ مُتَلَفِّعَاتٍ فِىْ مُرُوْطِهِنَّ ثُمَّ يَرْجِعْنَ إِلَى بُيُوْتِهِنَّ مَا يَعْرِفُهُنَّ أَحَدٌ-
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ফজরের ছালাত পড়াতেন। আর মুমিন মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাথে ফজরের ছালাতে উপস্থিত হ’তেন। অতঃপর ছালাত শেষ করে তারা যার যার বাড়িতে ফিরে যেতেন, আধারের কারণে তাদেরকে চেনা যেত না।[3] আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা এখন নারীদের যে অবস্থায় দেখছি, যদি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ অবস্থায় তাদের দেখতেন, তাহ’লে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন, যেভাবে বনু ইসরাঈলের নারীদের নিষেধ করা হয়েছিল।[4] ইবনে মাসঊদ (রাঃ) থেকেও এরূপ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীছ দ্বারা দু’ভাবে দলীল গ্রহণ করা যায়-
(ক) পর্দা করা মহিলা ছাহাবীদের অভ্যাস ছিল, যাঁরা ছিলেন উত্তম যুগের, আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানী, শিষ্টাচারী, সৎচরিত্রবান, পূর্ণ ঈমানদার ও সৎআমলকারিণী। তাঁরা সৎ ও শ্রেষ্ঠ ছিলেন, যাঁদের প্রতি ও তাঁদের উত্তম অনুসারীদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَالسَّابِقُوْنَ الأَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهَاجِرِيْنَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ تَحْتَهَا الأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا أَبَداً ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ-
‘মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা নিষ্ঠার সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি প্রসন্ন এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্ত্তত করেছেন জান্নাত, যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, এটা মহা সাফল্য’ (তওবাহ ১০০)।
মহিলা ছাহাবীদের পথ চলা যদি এমনটি হয়, তাহ’লে আমাদের জন্য কী করে সমীচীন হবে উক্ত পথ থেকে বিচ্যুত হওয়া? যে পথের পথিক ও তাদের একনিষ্ঠ অনুসারীদের জন্য আল্লাহর সন্তোষ রয়েছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيْراً- ‘কারো নিকট সৎ পথ প্রকাশ হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যে দিকে সে ফিরে যায় সে দিকেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব, আর তা কত মন্দ আবাস’ (নিসা ১১৫)।
(খ) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) যাঁরা ইলম ও ফিক্বহে ছিলেন দক্ষ, ধর্মীয় জ্ঞানে ছিলেন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং আল্লাহর বান্দাদের ব্যাপারে ছিলেন নছীহতকারী। তাঁরা বলছেন যে, বর্তমান নারীদের অবস্থা দেখলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে মসজিদে ছালাত আদায় করতে যেতে অবশ্যই নিষেধ করতেন।[5] অথচ সেটা ছিল উত্তম যুগ, সে যুগেও নবী করীম (ছাঃ)-এর যামানায় যে অবস্থা ছিল তা পরিবর্তিত হয়ে মাহিলাদের মসজিদে গমন নিষিদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তাহ’লে ১৩ শতাব্দী পরে এসে আমাদের যুগের অবস্থা কেমন হয়েছে? এযুগে সবকিছুর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, লজ্জাশীলতা কমে গেছে এবং অধিকাংশ মানুষের অন্তরে ধর্মীয় অনুভূতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর আয়েশা ও ইবনে মাসঊদ (রাঃ) উভয়ে শরী‘আতের দলীল যে বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছে তা পূর্ণাঙ্গরূপে বুঝেছিলেন যে, প্রত্যেক কাজ যা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে তা নিষিদ্ধ।
৪র্থ দলীল :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ فَكَيْفَ يَصْنَعْنَ النِّسَاءُ بِذُيُوْلِهِنَّ قَالَ يُرْخِيْنَ شِبْرًا. فَقَالَتْ إِذًا تَنْكَشِفَ أَقْدَامُهُنَّ. قَالَ فَيُرْخِيْنَهُ ذِرَاعًا لاَ يَزِدْنَ عَلَيْهِ-
ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গর্বভরে তার কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তার দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না’। উম্মে সালমা বললেন, তাহ’লে মহিলারা তাদের অাঁচল কী করবে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘এক বিঘত ঝুলিয়ে পরবে’। উম্মে সালমা বললেন, তবে তো তাদের পা প্রকাশ হয়ে পড়বে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘এক হাত ঝুলিয়ে দিবে, তার থেকে বেশি করবে না’।[6]
এ হাদীছ মহিলাদের পা ঢেকে রাখা ওয়াজিব হওয়ার দলীল। আর এটা মহিলা ছাহাবীদের নিকট খুবই পরিচিত ও জানা ছিল। নিঃসন্দেহে দু’পায়ের গোড়ালী খোলা রাখার ফিতনা, মুখমন্ডল ও দু’কব্জি খোলা রাখার তুলনায় নগণ্যতর। সুতরাং নগণ্য ফিতনার ক্ষেত্রে হুঁশিয়ার করার মাধ্যমে বড় ফিতনা ও হুকুমের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতর বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আর শরী‘আতের হেকমত হচ্ছে ছোট বা হালকা ফিতনায় বিধান হালকা করা এবং গুরুতর ফিতনার ক্ষেত্রে কঠিন করা। এর বিপরীত করলে সেটি হবে আল্লাহর হেকমত ও শরী‘আতের মধ্যে দন্দ্ব সৃষ্টি করা।
৫ম দলীল :
قَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ لإِحْدَاكُنَّ مُكَاتَبٌ وَكَانَ عِنْدَهُ مَا يُؤَدِّى فَلْتَحْتَجِبْ مِنْهُ-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি কোন নারীর নিকট চুক্তিবদ্ধ দাস থাকে আর তার চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধের সামর্থ্য থাকে, তাহ’লে সে নারী তার থেকে পর্দা করবে’।[7] এ হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণের দিক হ’ল, মনিব নারী তার দাসের সামনে ততক্ষণ মুখ খোলা রাখতে পারবে, যতক্ষণ সে তার মালিকানাধীন থাকবে। যখন তার মালিকানার বাইরে চলে যাবে, তখন তার থেকে পর্দা করা ওয়াজিব হবে। কারণ সে তখন পরপুরুষে পরিণত হয়ে গেল। অতএব পরপুরুষ থেকে নারীর পর্দা করা আবশ্যক সাবস্ত হ’ল।
৬ষ্ঠ দলীল :
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّوْنَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا عَلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُوْنَا كَشَفْنَاهُ-
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে আরোহী অতিক্রম করছিল, আর আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মুহরিম ছিলাম। যখন আরোহী আমাদের বরাবর হ’ত, তখন আমাদের প্রত্যেকে স্ব স্ব চাদর মাথার দিক দিয়ে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিত। অতঃপর যখন তারা আমাদের অতিক্রম করত, তখন আমরা চাদর সরিয়ে ফেলতাম।[8]
আয়েশা (রাঃ)-এর উক্তি ‘আরোহীরা যখন আমাদের বরাবর হ’ত তখন আমাদের প্রত্যেকে মুখমন্ডলের উপর তার চাদর ঝুলিয়ে দিত’। এটি চেহারা ঢাকা আবশ্যক হওয়ার বড় দলীল। কেননা ইহরাম অবস্থায় চেহারা খুলে রাখা শরী‘আত সম্মত। যদি মুখ খুলে রাখার ব্যাপারে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞা না থাকত, তাহ’লে চেহারা খুলে রাখা ওয়াজিব হ’ত আরোহীদের সামনেও।
উপরোক্ত আলোচনা সুস্পষ্ট। অধিকাংশ আলেমের নিকটে ইহরাম অবস্থায় নারীর চেহারা খুলে রাখা ওয়াজিব। আর ওয়াজিব বিষয়ই কেবল অন্য ওয়াজিব বিষয়ের মুকাবেলা করতে পারে। সুতরাং যদি পরপুরুষের নিকট নারীর পর্দা করা ও চেহারা ঢাকা ওয়াজিব না হ’ত, তাহ’লে ইহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলার মতো ওয়াজিব কাজ ত্যাগ করার অনুমোদন দেওয়া হ’ত না।
বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে আছে, إِنَّ الْمَرْأَةَ المُحْرِمَةَ تُنْهَى عَنْ النِّقَاب وَالْقُفَّازَيْنِ ‘মুহরিম নারীগণকে হাতমোযা ও নিকাব পরা থেকে নিষেধ করা হয়েছে’। শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহঃ) বলেন, এটা প্রমাণ করে যে, নিকাব ও হাতমোযার ব্যবহার মহিলাদের মধ্যে খুবই প্রসিদ্ধ ছিল, যারা মুহরিম ছিলেন না। এর দ্বারা তাদের চেহারা ও হাতসমূহ ঢেকে রাখার যৌক্তিকতা প্রমাণ করে।[9] হাদীছের উল্লিখিত এ ছয়টি দলীল মহিলাদের পর্দা করা ও পরপুরুষ থেকে মুখমন্ডল ঢাকা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ। এর সাথে আমি কুরআনের চারটি দলীল সংযুক্ত করেছি। যাতে কিতাব ও সুন্নাতের দশটি দলীল হ’ল।
[এতদসঙ্গে হাদীছ থেকে আরো কিছু দলীল অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত হ’ল।
(1) عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ قَالَتْ كُنَّا نُغَطِّيْ وُجُوْهَنَا مِنَ الرِّجَالِ، وَكُنَّا نَمْتَشِطُ قَبْلَ ذَلِكَ فِي الاِحْرَامِ-
(১) আসমা বিনতে আবুবকর (রাঃ) বলেন, আমরা পুরুষদের হ’তে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম এবং ইহরামের পূর্বে চিরুনী করতাম।[10]
(২) عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ رَأَيْتُ عَائِشَةَ طَافَتْ بِالْبَيْتِ وَهِيَ مُنْتِقَبَةٌ-
(২) ছাফিয়্যাহ বিনতে শায়বাহ বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে নিকাব পরিহিত অবস্থায় কা‘বা ঘর তওয়াফ করতে দেখেছি।[11]
(3) عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ لَمَّا اجْتَلَى النَّبِيُ صلى الله عليه وسلم صَفِيَّةَ رَأَى عَائِشَةَ مُنْتَقِبَةً وَسْطَ النَّاسِ فَعَرَفَهَا-
(৩) ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নবী করীম (ছাঃ) ছাফিয়্যাহকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখন তিনি আয়েশা (রাঃ)-কে মানুষের মাঝে নিকাব পরিহিত দেখে চিনতে পারলেন।[12]
(4) عَنْ عَائِشَةَ رضى الله عنها زَوْجِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَتْ .... فَبَيْنَا أَنَا جَالِسَةٌ فِىْ مَنْزِلِىْ غَلَبَتْنِىْ عَيْنِىْ فَنِمْتُ، وَكَانَ صَفْوَانُ بْنُ الْمُعَطَّلِ السُّلَمِىُّ ثُمَّ الذَّكْوَانِىُّ مِنْ وَرَاءِ الْجَيْشِ، فَأَدْلَجَ فَأَصْبَحَ عِنْدَ مَنْزِلِىْ، فَرَأَى سَوَادَ إِنْسَانٍ نَائِمٍ، فَأَتَانِىْ فَعَرَفَنِىْ حِيْنَ رَآنِىْ، وَكَانَ يَرَانِىْ قَبْلَ الْحِجَابِ، فَاسْتَيْقَظْتُ بِاسْتِرْجَاعِهِ حِيْنَ عَرَفَنِىْ فَخَمَّرْتُ وَجْهِىْ بِجِلْبَابِىْ
(৪) আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার তাবুতে ছিলাম, আমার চক্ষু আমার উপর প্রভাবিত হ’ল, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ছাফওয়ান বিন মু‘আত্তাল আস-সুলামী সৈন্যদের পিছনে লক্ষ্য রাখছিল। সৈন্যরা রাত্রের প্রথম প্রহরে চলে আসল। তিনি আমার তাবুর নিকট সকাল করলে দেখতে পেলেন ঘুমন্ত কালো একজন মানুষ। অতঃপর তিনি আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে দেখে চিনতে পারলেন। তিনি আমাকে পর্দার বিধানের পূর্বে দেখেছিলেন। তিনি আমাকে চিনতে পেরে ‘ইন্নালিল্লাহ’ পড়লে আমি জাগ্রত হই। আমি (তাকে দেখে) আমার চাদর দ্বারা মুখমন্ডল আবৃত করলাম। অন্য বর্ণনায় আছে, পর্দা করলাম (দীর্ঘ হাদীছের অংশ)।[13] আলোচ্য হাদীছগুলি প্রমাণ বহন করে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলা ছাহাবীগণ চেহারা ঢেকে পর্দা করতেন।]
(চলবে)
মূল : মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন
অনুবাদ : আব্দুর রহীম বিন আবুল কাশেম
সহকারী শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
[1]. মুসনাদ আহমাদ হা/২৩৬৫০-৫১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭।
[2]. মুসলিম হা/৮৯০; ইবনু মাজাহ হা/১৩০৭।
[3]. বুখারী হা/৩৭২।
[4]. মুসলিম হা/৪৪৫; আহমাদ হা/২৪৬৪৬।
[5]. মুসলিম হা/৪৪৫; আহমাদ হা/২৪৬৪৬।
[6]. তিরমিযী হা/১৮৩৫; নাসাঈ হা/৫৩৩৬।
[7]. ইবনু মাজাহ হা/২৬১৬; আবু দাউদ হা/৩৯২৮।
[8]. আবু দাঊদ হা/১৫৬২; মিশকাত হা/২৬৯০।
[9]. বুখারী ৪/৪২, নাসাঈ ২/৯-১০, বায়হাক্বী ৫/৪৬-৪৭, আহমাদ ৬০০৩।
[10]. হাকিম ১/৪৫৪; ইরওয়া হা/১০২৩; ছহীহ ইবনু খুযাইমা হা/২৬৯০।
[11]. ইবনু সা‘দ ৮/৪৯।
[12]. ইবনে সা‘দ ৮/৯০, ইবনে আসাকির।
[13]. বুখারী হা/৪৭৫০; মুসলিম হা/২৭৭০; ইবনে সাদ ১৮/৬২-৬৬, আহমাদ ৬/১৯৪-১৯৭।