বর্তমান আধুনিক যুগে অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় বস্ত্ত হিসাবে বিবেচিত বিদ্যুৎ। কিন্তু আবহাওয়া পরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাবের ফলে এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েছেন বিজ্ঞানীরা। ঠিক এমন সময় দূষণহীন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ তৈরির অভাবনীয় এক পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই আবিষ্কার পরিবেশসম্মতভাবে জ্বালানি উৎপাদনে বিপ্লব আনতে পারে।

২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়া থেকে সংগ্রহ করা উপাদান বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শুষে নিতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণাটি আগের সেই গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই এগিয়েছে।

গবেষণা নিবন্ধের জ্যেষ্ঠ লেখক এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জুন ইয়াও বলেন, ‘আমরা যা আবিষ্কার করেছি, তাকে সামনে ছোটখাট মানব-নির্মিত মেঘ হিসাবেও কল্পনা করতে পারেন। খুব সহজে এটা সবাই ব্যবহার করতে পারবে। মিলবে সার্বক্ষণিক পরিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ। একবার ভাবুন, এটি নিয়ে যেখানেই যান না কেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন অনায়াসে’। পাহাড়, বাগান, মরুভূমি বা প্রত্যন্ত গ্রাম অথবা চলতি পথ; বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানী পোড়ানো বা নির্দিষ্ট স্থানে অবকাঠামো নির্মাণের দরকার হবে না আর। অনেকটা ভ্রাম্যমাণ জেনারেটরের কাজই করবে এই আবিষ্কার। এজন্য এর নামও দেওয়া হয়েছে ‘এয়ার-জেন’ বা বায়ু জেনারেটর।

এয়ার-জেন-এর বড় সুবিধা হচ্ছে, মোটামুটি সব পরিবেশেই থাকে জলীয়বাষ্প। আর সেই বাষ্প থেকেই উৎপন্ন করে বিদ্যুৎ। সব পরিবেশে কাজ করলেও, কিছু পরিবেশে বেশী সক্ষম হবে এয়ার-জেন। যেমন শুষ্ক বাতাবরণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সীমিত, আবার উষ্ণ জঙ্গলের আবহাওয়ায় বিপুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। 

সবচেয়ে আশ্চর্য হ’ল, এয়ার-জেন এর আকার একটি চুলের চেয়েও পাতলা; যার গায়ে আছে খালি চোখে দেখা সম্ভব নয় এমন অজস্র ছিদ্র। এসব ছিদ্র প্রস্থে ১০০ ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট, যা দিয়ে জলীয়বাষ্প প্রবেশ করতে পারে। আর প্রবেশ করা মাত্রই ডিভাইসটির উপরের অংশের সাথে নিচের অংশের এক ধরনের বৈদ্যুতিক চার্জের ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয়। ফলে ধণাত্মক ও ঋণাত্মক দুই মেরু তৈরী হয়ে এটি কার্যত একটি ব্যাটারী হয়ে ওঠে। 

ইয়াও এর হিসাব মতে ১০০ কোটি এয়ার-জেনকে একের পর এক রাখলে, তার উচ্চতা হবে একটি রেফ্রিজেরেটরের সমান। উৎপাদন করতে পারবে এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ, যা সাধারণ অবস্থায় একটি বাড়ির আংশিক বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারবে।






আরও
আরও
.