عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- قَالَ : قَالَ اللهُ أَنْفِقْ يَا ابْنَ آدَمَ أُنْفِقْ عَلَيْكَ-
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি দান কর। আমি তোমাকে দান করব’।[1]
৩. শাব্দিক ব্যাখ্যা : (১) ক্বা-ল্লা-ল্লা-হু তা‘আলা (قَالَ اللهُ تَعَالَى) : ‘মহান আল্লাহ বলেন’। হাদীছের মধ্যে যখন ‘আল্লাহ বলেন’ বলে বক্তব্য শুরু হয়, তখন সে হাদীছটি ‘হাদীছে কুদসী’ হয়ে যায়। যার ভাব ও ভাষা সবই আল্লাহর হয়। হাদীছে কুদসী খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
(২) আনফিক্ব (اَنْفِقْ) : ‘তুমি খরচ কর’। মাদ্দাহ النفقة অর্থ ব্যয়, খরচ, দান ইত্যাদি। সেখান থেকে বাবে ইফ‘আল (باب إفعال)-এর মাছদার ‘আল ইনফা-কু’ (الإنفاق) ‘খরচ করা, দান করা। উক্ত বাব হ’তে আদেশ সূচক ক্রিয়া বা امر حاضر معروف একবচনে ‘আনফিক্ব’ অর্থ ‘তুমি খরচ কর বা দান কর’।
(৩) ইয়া ইবনা আ-দামা (يَا ابْنَ آدَمَ) : ‘হে আদম সন্তান’! বাক্যাংশটি ‘মুনাদা মুযাফ’ (المنادى المضاف) হয়েছে। ‘ইয়া’ সম্বোধন সূচক অব্যয় বা ‘হরফে নিদা’ ইবনা আ-দামা-সম্বন্ধ সূচক যৌগিক বাক্যাংশের প্রথমটি ‘মুযাফ’ ও দ্বিতীয়টি ‘মুযাফ এলাইহে’। সম্বন্ধ সূচক যৌগিক বাক্যাংশের প্রথমে সম্বোধন সূচক কোন অব্যয় আসলে প্রথমাংশ অর্থাৎ মুযাফ-এর শেষ অক্ষরে ‘যবর’ হয়। যেমন ‘ইয়া রাসূলাল্লা-হি’। একই কারণে এখানে ‘ইয়া ইবনা’ পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয়াংশ ‘মুযাফ ইলাইহে’র শেষ অক্ষরে সাধারণতঃ ‘যের’ হয়ে থাকে। কিন্তু যখন সে শব্দটি ‘গায়ের মুনছারাফ’ হয়, তখন সেখানে ‘যের’-এর বদলে ‘যবর’ হয়। আলোচ্য বাক্যে ‘আ’দামা’ শব্দটি গায়ের মুনছারাফ হওয়ার কারণে শেষ অক্ষরে ‘যের’ না হয়ে ‘যবর’ হয়েছে।
(৪) ‘উনফিক্ব ‘আলায়কা’ (أُنْفِقْ عَلَيْكَ) : ‘আমি খরচ করব তোমার উপরে’ অর্থাৎ তোমার উপরে রহমত বর্ষণ করব বা তোমাকে দান করব। মুনাদা মুযাফ-এর পরবর্তী পুরা বাক্যটি শর্ত বাচক বাক্য বা جمله شرطيه। এখানে দু’টি ক্রিয়াবাচক বাক্য (جمله فعليه) দ্বারা অত্র শর্তবাচক বাক্য (جمله شرطيه)-টি গঠিত হয়েছে। প্রথমটিকে ‘শর্ত’ (شرط) ও শেষেরটিকে ‘জাযা’ (جزاء) বলা হয়। এখানে প্রথম বাক্য ‘আনফিক্ব’ অর্থঃ ‘ইন তুন্ফিক্ব’- যদি তুমি খরচ কর বা দান কর। জওয়াবে বলা হচ্ছে ‘উনফিক্ব ‘আলায়কা’ আমি তোমাকে দান করব। প্রথম শর্ত পূরণ করতে পারলে শেষের জাযা বা বদলা অবশ্যই আল্লাহ দান করবেন, এটাই বুঝানো হচ্ছে। শর্তবাচক বাক্য বা جمله شرطيه-এর নিয়ম হ’ল ‘শর্ত’ এবং ‘জাযা’ উভয়টি ফেলে মুযারে’ হ’লে উভয়ের শেষ অক্ষরে ‘জযম’ হবে। অত্র বাক্যে ‘জাযা’ ফে’ল মুযারে’ হয়েছে। সেকারণ ‘উনফিকু’ না হয়ে ‘উনফিক্ব’ হয়েছে।
৪. সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা : অত্র হাদীছটিকে ইসলামী অর্থনীতির রূহ হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক দুনিয়া পরিচালনার স্বার্থেই মানুষের মধ্যে অর্থ সঞ্চয়ের প্রবণতা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ঐ প্রবণতা অধিক হয়ে যখন কৃপণতার পর্যায়ে চলে যায়, তখন সেটা নিন্দনীয় হয়। সঞ্চয়ের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে খরচের প্রবণতাও দান করা হয়েছে। মানুষ যেমন সঞ্চয় করে আনন্দ পায়, তেমনি খরচ করেও তৃপ্তি পায়। এই সঞ্চয় ও ব্যয় যখন সঠিক ও সৎ পথে হয়, তখন তা ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তির কারণ হয়। মানুষ সাধারণতঃ দু’ভাবে ব্যয় করে থাকে। (১) দুনিয়াবী স্বার্থে ও আনন্দ উপাচারে। (২) পরকালীন মুক্তির স্বার্থে আল্লাহর ওয়াস্তে। প্রথমোক্ত ব্যয়ের প্রতিই মানুষের সহজাত আগ্রহ সর্বদা সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ পাক মানুষকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দানের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষা করতে চেয়েছেন সে জান্নাত পাওয়ার যোগ্য হবে কি-না। ধন-সম্পদ যার যত বেশী তার পরীক্ষা তত বেশী ও তত কঠিন। দুনিয়া ও আখেরাতে তার হিসাবও তত বেশী ও কঠিন।
দেহের রক্তের সাথে দেশের অর্থব্যবস্থাকে তুলনা করা যায়। দেহের জন্য সচল রক্ত যেমন যরূরী, সসম্মানে বেঁচে থাকার জন্য সচল অর্থনীতি তেমনি যরূরী। দেহের কোন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে যেমন মানুষের মৃত্যু অনিবার্য। দেশের অর্থ চলাচল তেমনি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে জমাট বেঁধে গেলে সে দেশের অর্থব্যবস্থার ধ্বংস অনিবার্য। সূদ, ঘুষ, মওজুদদারী, জুয়া, লটারী, মুনাফাখোরী দেশের অর্থনীতির চলমান স্রোতকে কিছু সংখ্যক লোভী ও অর্থগৃধু লোকের নিকটে যিম্মী করে রাখে। ফলে অর্থব্যবস্থার স্রোতধারা জমাট বেঁধে যায়। জোঁকের মত কিছু লোক ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বাকী অধিকাংশ লোক রক্তহীন ফ্যাকাশে হয়ে এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মানব সমাজের এই চিরন্তন দুঃখময় ধারাকে একটি সমন্বিত ও ন্যায়নিষ্ঠ ধারায় পরিবর্তন করার জন্য ইসলাম প্রথমেই মানুষের আক্বীদায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছে। মানুষ নিজের উপার্জনকে ও নিজের অর্জিত সম্পদকে সর্বদা নিজের বলেই মনে করে থাকে। কিন্তু ইসলাম মানুষের এই চিরকালীন ধারণাকে পাল্টে দিয়ে ঘোষণা করেছে যে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ হ’লেন রূযীদাতা এবং তিনিই মহাশক্তিশালী’ (যারিয়াত ৫১/৫৮)। তিনি যাকে ইচ্ছা রূযী কম-বেশী করে থাকেন (আনকাবূত ২৯/৬২)।
এইভাবে মানুষের জন্য সৃষ্ট যাবতীয় সম্পদকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ নিজস্ব মালিকানায় নেওয়ার পরে তার আয়-ব্যয় কোন কিছুতেই বান্দার নিজস্ব ইচ্ছা আর থাকে না। এখানে গিয়ে আল্লাহ স্বীয় বান্দাকে হালাল পথে রূযী উপার্জনের সকল পথ বন্ধ ঘোষণা করেছেন (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অর্থনীতির চাকা সর্বদা সচল রাখার জন্য ফরয ও নফল দু’ধরণের ব্যয় নির্ধারিত করে দিয়েছেন (বাক্বারাহ ২/৩)। এক্ষণে একজন মুমিনের আক্বীদা হবে এই যে, তার নিকটে যে সম্পদ রয়েছে, তার মূল মালিকানা আল্লাহর। সে আল্লাহর মালের আমানতদার মাত্র। এই মাল যিনি দান করেছেন, তাঁর নির্দেশিত পথেই ঐ মাল বিনিয়োগ ও ব্যয় করতে হবে। অন্যভাবে করলে নির্ঘাত ধরা পড়তে হবে ও জাহান্নামী হ’তে হবে।
আল্লাহ নির্ধারিত বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে, সৎভাবে ব্যবসা করা ও অন্যান্য হালাল পথে অর্থ উপার্জন করা। আল্লাহর নিষেধকৃত হারাম উপার্জনের মধ্যে রয়েছে সূদ, ঘুষ, জুয়া, লটারী, মুনাফাখোরী, মওজুদদারী, প্রতারণা, সন্ত্রাস ইত্যাদি যুলমের মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ-সম্পদ। অতঃপর হালালভাবে অর্জিত সম্পদের যে অংশটি ব্যয় করা আল্লাহ পাক ফরয করে দিয়েছেন, সেটি হ’ল : যাকাত, ওশর, ফিৎরা, মীরাছ বণ্টন ইত্যাদি। একজন মুমিন ব্যক্তি হালাল পথে যত বড় ধনীই হৌন না কেন, তার মৃত্যুর সাথে সাথে তার অর্জিত সকল সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে আল্লাহ নির্ধারিত অংশ মতে বণ্টিত হওয়ার মাধ্যমে ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হয়ে যায়। তাছাড়া তাকে তার সঞ্চিত নেছাব পরিমাণ সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে ফরয যাকাত হকদারগণের মধ্যে বণ্টন করতে হয়। নেছাব পরিমাণ খাদ্যশস্যের ১০ বা ২০ ভাগের এক ভাগ ওশর হিসাবে দান করতে হয়। ঈদুল ফিৎরের পূর্বেই তাকে মাথা প্রতি এক ছা‘ পরিমাণ খাদ্যশস্য (প্রায় আড়াই কেজি চাউল) ফিৎরা হিসাবে দিতে হয়। এ সকল ব্যয় হ’ল ফরয বা অপরিহার্য। যা কোন অবস্থায় মাফ নেই। এভাবে একদিকে হারামের পথ বন্ধ থাকার ফলে মুমিনের ঘরে অন্যায় পুঁজি সঞ্চিত হ’তে পারে না। অন্যদিকে হালালের পথ মুক্ত থাকলেও ফরয ব্যয় সমূহের কারণে পুঁজি সম্ভাব্য সীমা অতিক্রম করতে পারে না। একারণেই আল্লাহ বলেন, يَمْحَقُ اللهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ‘আল্লাহ সূদকে নিঃশেষ করেন ও ছাদাক্বায় প্রবৃদ্ধি দান করেন’ (বাক্বারাহ ২/২৭৬)। অথচ বাহ্যতঃ দেখা যায় যে, সূদখোর বা হারামখোরের সম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। মূলতঃ তা হয় না। কেননা হারামখোরেরা যখন ছলে-বলে-কৌশলে জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করে, তখন জনগণের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। ফলে বাজারে পণ্য ক্রয় করার মত ক্রেতার অভাব ঘটতে থাকে। এক সময় শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে সব দেউলিয়ার খাতায় নাম লেখায়। এভাবে দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়ে। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে যেমন রোগী মারা পড়ে, অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে যাওয়ার ফলে তেমনি দেশে দুর্ভিক্ষ ও আকাল দেখা দেয়। অথচ যদি হারামের পথ রুদ্ধ ও হালালের পথ উন্মুক্ত করার মাধ্যমে এবং সাথে সাথে ফরয ও নফল দান সমূহের মাধ্যমে অর্থ চলাচল অবারিত রাখা হয়, তাহ’লে পুঁজি জমাট না বেঁধে বরং সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সকলের ক্রয় ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে ও ক্রমে বর্ধিত হয়। সমাজ দেহে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে। সর্বত্র শান্তি ও সমৃদ্ধি বিরাজমান থাকে।
ইসলামী সমাজের উপরোক্ত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভর করে উক্ত সমাজের সদস্য হিসাবে প্রত্যেক মুমিনের আক্বীদা এই রূপ হওয়া যে, তার রূযীদাতা হ’লেন আল্লাহ। তিনিই কারু জন্যে রূযী বৃদ্ধি করেন, কারু জন্য সংকুচিত করেন (রা‘দ ১৩/২৬)। সবকিছুর মালিকানা তাঁর হাতে। অতএব তাঁকে খুশী করাই বান্দার প্রধান কাজ। এক্ষণে কিসে তিনি খুশী হবেন সে বিষয়টিই মূলনীতি আকারে অত্র হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে। সেটি হ’ল আল্লাহর পথে ব্যয় করা। যদি সে আল্লাহকে দান করে, আল্লাহ তাকে দান করবেন। আল্লাহর পথে ব্যয় করা তাই ব্যয় নয় বরং সঞ্চয়। এই সঞ্চয় যেমন দুনিয়াতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সমৃদ্ধি আনে, পরকালে তেমনি তা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়ে নেকীর ভান্ডারে পরিণত হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা আসমান থেকে অবতীর্ণ হন ও আল্লাহর পথে ব্যয়কারী দানশীল মুমিনের জন্য প্রাণ খুলে দো‘আ করে বলেন, اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا ‘হে আল্লাহ! আপনি দানশীলকে তার পূর্ণ প্রতিদান দিন’! অপরজন কৃপণদের জন্য বদ দো‘আ করে বলেন, اللَّهُمَّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا ‘হে আল্লাহ! আপনি কৃপণকে ধ্বংস করুন’।[2] আসমা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,أَنْفِقِى وَلاَ تُحْصِى فَيُحْصِىَ اللهُ عَلَيْكِ، وَلاَ تُوعِى فَيُوعِىَ اللهُ عَلَيْكِ، ارْضَخِى مَا اسْتَطَعْتِ- ‘তোমরা আল্লাহর পথে খরচ কর, গণনা কর না, তাহ’লে আল্লাহ (তাঁর রহমত) গণনা করবেন। (অতিরিক্তগুলি) সঞ্চয় কর না, তাহ’লে আল্লাহ (স্বীয় রহমত) সঞ্চিত রাখবেন। তোমার সাধ্যমত দান কর যত কমই হৌক’।[3]
উল্লেখ্য যে, পরবর্তীকালে সৃষ্ট মাযহাবী ফৎওয়ার দোহাই দিয়ে আমরা অনেক ফরয ও ওয়াজিব ছাদাক্বা হ’তে বিরত থাকি। যেমন-
(১) বলা হয়ে থাকে, ‘যে জমিতে খাজনা আছে সে জমিতে ওশর নেই’।[4] এই ফৎওয়ার ফলে বাংলাদেশের মোট উৎপন্ন প্রধান ফসলের ১/১০ বা ১/২০ ভাগ ওশর[5] হ’তে গরীব মাহরূম হচ্ছে। যদিও এর দ্বারা বড় লোকের গোলা ভর্তি হয়েছে। অথচ ওশর হ’ল ফসলের যাকাত। নেছাব পরিমাণ অর্থাৎ ফসল কাটার পর ২০ মণের কাছাকাছি হ’লে তবে তাতে ওশর দিতে হয়, নইলে নয় এবং খারাজ হ’ল জমির খাজনা বা ভূমিকর। জমি থাকলে তাতে খাজনা দিতে হবে, ফসল হেŠক বা না হৌক। বর্তমানে সরকারকে নামমাত্র খাজনা দিয়ে জমির মালিক বিরাট পরিমাণ ফসলের ওশর গরীবকে না দিয়েই তা ঘরে তুলছেন উক্ত ফৎওয়ার কারণে। উক্ত ফৎওয়ার পক্ষে ‘একই জমিতে ওশর ও খাজনা একত্রিত হবে না’ বলে যে হাদীছ, لاَ يَجْتَمِعُ عَلَى الْمُسْلِمِ خَرَاجٌ وَعُشْرٌ، فَهَذَا حَدِيثٌ بَاطِلٌ وَصَلُهُ وَرَفْعُهُ وَيَحْيَى بْنُ عَنْبَسَةَ مُتَّهَمٌ بِالْوَضْعِ- বর্ণনা করা হয়ে থাকে, সেটি বাতিল ও এর বর্ণনাকারী ইয়াহ্ইয়া হাদীছ জাল করার দায়ে অপবাদগ্রস্থ।[6] হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রাঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,الْخَرَاجُ عَلَى الأَرْضِ وَفِى الْحَبِّ الزَّكَاةُ- ‘খাজনা হ’ল জমির উপরে এবং যাকাত (ওশর) হ’ল ফসলের উপরে’।[7]
অতএব যদি সরকারী বায়তুল মালে কেবল ওশর জমা নেওয়া হয়, তবে সম্ভবতঃ ওশরের তহবিল থেকেই বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচন সম্ভব।
(২) অমনিভাবে দেশের প্রধান খাদ্য দ্বারা ধনী-গরীব সকলের পক্ষ হ’তে মাথা প্রতি এক ছা‘ করে (আড়াই কেজি চাউল) ‘যাকাতুল ফিৎর’ আদায় করার নির্দেশ[8] থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কেবল যাকাত দেওয়ার মত নেছাবের অধিকারী অর্থাৎ বৎসর শেষে ৭.৫০ তোলা স্বর্ণ বা ৫২.৫০ তোলা রৌপ্যের সমান (আনুমানিক ৫০,০০০/=) টাকার মালিককেই ফিৎরা আদায়ের কথা বলা হচ্ছে। তাও আবার অর্ধ ছা‘ গম অথবা তার মূল্য। কে না জানে যে, বস্ত্ত ও বস্ত্তর মান কখনো এক নয় এবং বাজার দরও সর্বত্র সমান নয়। আল্লাহ বান্দাকে যে খাদ্য দ্বারা বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেই খাদ্য থেকেই বান্দা আল্লাহকে অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাকে ফিৎরা দিবে। এর মধ্যে যে অন্তর্নিহিত ভালবাসা ও ত্যাগের অনুপ্রেরণা রয়েছে, তা কি মূল্য প্রদানের মধ্যে থাকতে পারে? নিজের নিকটাত্মীয়কে কি কেউ খাদ্যের বদলে টাকা দিয়ে বিদায় করেন? তাহ’লে আল্লাহকে দেওয়ার সময় কেন আমার নিজস্ব খাদ্য থেকে দিব না? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের যুগেও মুদ্রার প্রচলন ছিল। কিন্তু তাঁরা কখনো ফিৎরার মূল্য প্রদান করেননি। আজও সঊদী আরবের সর্বত্র তাদের প্রধান খাদ্য গম দিয়েই ফিৎরা আদায় করা হয়, মূল্য দিয়ে নয়।
প্রচলিত নিয়মে ফিৎরা আদায়ের ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, নেছাবের মালিক ফিৎরা দাতার সংখ্যা অধিকাংশ স্থানেই পাওয়া যায় না। অতঃপর যারা দেন, তারা অর্ধ ছা‘ গমের মূল্য দেন, যা গরীবকে এক প্রকার মাহরূম করার শামিল। এর পরেও তা ব্যক্তি উদ্যোগে দেওয়া হয়, জামা‘আতী উদ্যোগে সুশৃংখল ভাবে নয়। ফলে যে গরীব হেঁটে আসতে পারে, সে পায়। যে দুর্বল অসহায় গরীব আসতে পারে না, সে পায় না। এইভাবে ফিৎরার সুফল হ’তে গরীব বঞ্চিত হচ্ছে।
(৩) কুরবানী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ছাদাক্বা। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এক গরুতে কুরবানী ও আক্বীকা দু’টিই চলবে’।[9] এদেশে সাত ভাগা কুরবানী চালু আছে। অথচ প্রতি পরিবারের পক্ষে একটি করে পশু কুরবানীর নির্দেশ রয়েছে।[10] আল্লাহর রাস্তায় হযরত ইবরাহীম (আঃ) স্বীয় পুত্র ইসমাঈলকে কুরবানী দিয়েছিলেন। সেই সুন্নাত অনুসরণে ইসমাঈলের বংশে জন্মগ্রহণকারী সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা একটি বা দু’টি করে খাসী নিজের পরিবার ও উম্মতের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিয়েছেন।[11] তাঁর তরীকার অনুসরণে উম্মতে মুহাম্মাদীকেও মুক্বীম অবস্থায় নিজ পরিবারের পক্ষ হ’তে একটি খাসী বা গরু তথা একটি জীবন কুরবানী করা উচিত ও সেটাই ছিল সুন্নাত সম্মত ইবাদত। কিন্তু আমরা সফরের হালতে সাতজনে একটি গরু কুরবানী করার বিষয়টিকে মুক্বীম অবস্থায় নিয়ে একটি গরুকে সাত ভাগীতে সাত পরিবারের পক্ষ হ’তে কুরবানী দিচ্ছি। কেউবা একাধিক ভাগ নিচ্ছি। তার সঙ্গে আবার কলিজার টুকরা সন্তানের আক্বীকাও যোগ করছি। ফলে নীট হিসাবে দেখা যাবে- সাত পরিবারের ৭টি গরু বা খাসী এবং নবাগত পুত্রের আক্বীকার ২টি খাসী- সবকিছুর বদলে ১টি ছোট বকনা বাছুর দিয়েই সেরে দিচ্ছি। অন্যভাবে হিসাব করলে ছয় ছেলের আক্বীকা বাবদ ১২টি খাসী ও ১টি কুরবানী বাবদ ১টি খাসী মোট ১৩টি খাসীর বদলে একটি গরু দিয়েই কাজ মিটে যাচ্ছে। এতে বড়লোকের আর্থিক আশ্রয় হচ্ছে বটে, কিন্তু গরীব মাহরূম হচ্ছে। এইভাবে কল্যাণময় ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবে ধনীদের স্বার্থে পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থার সহায়ক হিসাবে পর্যবসিত হয়েছে। এগুলি যত দ্রুত সম্ভব বর্জনীয় এবং ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী অর্থনৈতিক ইবাদত পালন বাঞ্ছনীয়।
(৪) আমরা যে সম্পদ রেখে মৃত্যুবরণ করি, তা সাধারণতঃ আমাদের ছেলেদের মধ্যেই বণ্টিত হয়। তাও আবার কৃপণ স্বভাবের বড় ভাই থাকলে ছোট ভাইয়েরা বঞ্চিত হয়। বড় ভাইয়ের নিকট থেকে পিতৃ সম্পত্তির অংশ বের করতে ছোট ভাইদের গলদ ঘর্ম হ’তে হয়। অনেক স্থানে মারামারি ও খুন-খারাবী হয়। বোনেদের অবস্থা আরও করুণ। বর্তমান সমাজে তারা কিছুই পায়না বললেও চলে। বোন-ভাগিনাকে বোঝা মনে করা হয়। কথা রটিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ‘ভাইদের নিকট থেকে পিতৃ সম্পত্তির অংশ নিলে ভাই-বোনের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়’। আরও রটানো হয়েছে, ‘জম-জামাই-ভাগনা, তিন নয় আপনা’। উদ্দেশ্য, যাতে বোন-ভাগিনারা তাদের প্রাপ্য অংশ না নেয়। অথচ কুরআনে সূরা নিসা-র ১১ ও ১২ আয়াতে মীরাছ বণ্টনের নির্দেশ দানের পরে আল্লাহ বলেন, এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রাসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন। যেগুলোর তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয় (১৩)। অতঃপর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করল ও তার সীমারেখা অতিক্রম করল, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের প্রবেশ করাবেন স্থায়ীভাবে এবং তার জন্য রয়েছে মর্মান্তিক আযাব’ (নিসা ৪/১৩-১৪)। এইভাবে জাহেলী যুগের ফেলে আসা আর্থিকভাবে নারী নির্যাতন পুনরায় মুসলমানের দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। ফলে সম্পদ বিকেন্দ্রীকরণ না হয়ে বরং এক স্থানে জমাট বেঁধে থাকছে ও অশান্তি বাড়ছে।
(৫) এরপরে আমরা যেসব সাধারণ ছাদাক্বা বা দান করছি, সেগুলি কোথায় করছি? আল্লাহর পথে আল্লাহর জন্য পূর্ণ খুলূছিয়াতের সাথে ছওয়াবের নিয়তে হালাল মাল দান করলেই তবে সে দান কবুল হয়। দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের দান হয় হারাম মাল থেকে, দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের স্বার্থে, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অথবা ধর্মের নামে শিরক ও বিদ‘আতী কাজে বা তার প্রচার ও প্রসারে। আমরা যখন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করি, তখন কি নিঃস্বার্থে করি? যখন বন্যাদূর্গতদের সাহায্য করি, তখন ক্যামেরার দিকেই নযর থাকে বেশী। ধর্মের নামে অর্থ ব্যয় করছি মীলাদে, শবে মে‘রাজে, শবেবরাতে, ওরসে, কুলকানিতে, ঈছালে ছওয়াবের মাহফিলে। দান করছি মৃত পীরের কবরে তার অসীলায় মুক্তি পাওয়ার আশায়। এমনকি খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতীর নামে সুদূর আজমীরে টাকা পাঠিয়ে থাকি। ধর্মীয় বই প্রকাশে যখন পয়সা দান করি, তখন একবারও যাচাই করিনা তার মধ্যে কি লেখা আছে। সে বইয়ের মাধ্যমে শিরক ও বিদ‘আতী আক্বীদা ও আমলের প্রচার হবে, না নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাতে নববীর প্রচার হবে- সে বিষয়ে আমরা কয়জনে যাচাই করে দেখি? অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নির্দেশ ছিল, ‘তোমরা জিহাদ কর মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমাদের মাল দ্বারা, জান দ্বারা ও যবান দ্বারা’।[12] আজ আমাদের মাল ধর্মের নামে শিরক ও বিদ‘আতের পিছনে ব্যয় হচ্ছে। অথচ হুকুম ছিল তার উল্টা। আজ আমরা আমাদের দানের মাধ্যমে এদেশের ২,৯,০০০ হাযার পীর (১৯৮১ সালের সরকারী হিসাব মতে) ও তাদের আস্তানা বা সমাধির শ্রীবৃদ্ধি করছি। গুরু ভক্তির চোরাগলি দিয়ে নযর-নেয়াযের নামে এরা ভক্ত মুরীদানের পকেট ছাফ করছে। অন্যায় পথে সম্পদশালী মুরীদান কিংবা সরলসিধা গরীব ভক্ত তার সবকিছু উজাড় করে পীরের দরগায় নিয়ে আসে হুযুর কেবলার অসীলায় পরকালে মুক্তি পাওয়ার আশায়। এই মিথ্যা মায়া মরীচিকার ফাঁদে মানুষকে আটকে শোষণ করে চলেছে মারেফতী পীর-ফকীরের দল। শিরক ও বিদ‘আতের শিখন্ডী এইসব ভন্ডরাই নাকি প্রকৃত ধার্মিক। তাই সরকার ও রাজনীতিক সবাই এদের কাছে কাবু। এদের মুরীদ হয়ে সহজে জান্নাত পাওয়ার আশায় সবাই ব্যাকুল। অথচ এদের পিছনে ব্যয় আল্লাহর পথে ব্যয় নয়, বরং নিঃসন্দেহে ত্বাগূতের পথে ব্যয়। অতএব দানশীল মুমিন ভাইদের সাবধান হওয়া ভাল। আল্লাহর পথে ব্যয়ের নামে যেন শয়তানী ধোঁকায় পতিত না হন। কেননা ক্বিয়ামতের দিন আপনাকে আপনার আয় ও ব্যয় দু’টিরই হিসাব দিতে হবে।[13] পবিত্র কুরআনের সূরা বাক্বারাহর শুরুতেই মুত্তাক্বীদের পরিচয় দান কালে আল্লাহ বলেন, وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ ‘আমরা তাদেরকে যে রূযী দান করেছি, তা থেকে ব্যয় করে’ (বাক্বারাহ ২/৩)। তিনি বলেন,وَمَا آتَيْتُمْ مِنْ زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ- ‘(জান্নাতে) আল্লাহর চেহারা অন্বেষণে তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাক, তারা বহুগুণ লাভ করে থাকে’ (রূম ৩০/৩৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ- ‘বস্ত্ততঃ যারা স্বর্ণ-রৌপ্য সঞ্চিত রাখে, অথচ তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে তুমি মর্মান্তিক আযাবের সুসংবাদ দাও’ (তওবাহ ৯/৩৪)। তিনি আরও বলেন, وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ- ‘আললাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন এটাকে তদের জন্য কল্যাণকর মনে না করে। বরং এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসব মালে তারা কৃপণতা করে, সেগুলিকে ক্বিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী হিসাবে পরানো হবে’ (আলে ইমরান ৩/১৮০)। আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং যা আমরা তোমাদের জন্য জমিতে উৎপন্ন করি, সেখান থেকে উৎকৃষ্ট বস্ত্ত ব্যয় কর’... (বাক্বারাহ ২/২৬৭)। তিনি বলেন, ‘শস্য কর্তন কালে তার হক (ওশর) আদায় কর’ (আন‘আম ৬/১৪১)। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ- ‘যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের ন্যায়। যা থেকে সাতটি শিষ জন্মে। প্রত্যেকটি শিষে একশ’টি দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন বহুগুণ বর্ধিত করে দেন। আর আল্লাহ প্রশস্ত দানশীল ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬১)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّى أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ- ‘যে ব্যক্তি তার পবিত্র উপার্জন থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ দান করবে এবং আল্লাহ পবিত্র বস্ত্ত ভিন্ন কবুল করেন না- আল্লাহ ঐ দান স্বীয় ডান হাত দ্বারা কবুল করেন। অতঃপর তা দাতার জন্য (আমলনামায়) বৃদ্ধি করতে থাকেন, যেমন তোমাদের কেউ বাছুরের বংশ বৃদ্ধি করে থাকে। অবশেষে ঐ ব্যক্তির ঐ বিশুদ্ধ দান পাহাড়ের সমতুল্য হয়ে যায়’।[14]
মূলতঃ আল্লাহর পথে ব্যয়ের মধ্যেই মুসলিম সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করছে। অমুসলিম শক্তিগুলি আজ আর্থিক ক্ষমতার জোরে মুসলিম বিশ্বের উপরে ক্ষমতা গদা ঘুরাচ্ছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলি তাদের নিকটে ভিখারীর হাত পেতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। বিভিন্ন এনজিও-র বেশ ধরে উন্নয়নশীল মুসলিম দেশগুলিতে প্রবেশ করে তারা মুসলমানদেগর ঈমান-আক্বীদা লুটে নিচ্ছে। তাই ইনফাক্ব ফী সাবীলিল্লাহ বা আল্লাহর পথে ব্যয়ের প্রতি সবাইকে সজাগ হ’তে হবে। ধনী হউন, গরীব হউন সবাইকে দানশীল হ’তে হবে। কোন অবস্থাতেই বখীল হয়ে মৃত্যুবরণ করা চলবে না। আমাদের দানের মাধ্যমেই আল্লাহর রহমত নেমে আসবে। সমাজ সমৃদ্ধ হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!
***
[1]. বুখারী হা/৫৩৫২; মুসলিম হা/৯৯৩; মিশকাত হা/১৮৬২ ‘যাকাত’ অধ্যায়, ‘দানের প্রশংসা ও কৃপণতার নিন্দা’ অনুচ্ছেদ।
[2]. বুখারী হা/১৪৪২; মুসলিম হা/১০১০; মিশকাত হা/১৮৬০ ‘যাকাত’ অধ্যায়।
[3]. বুখারী হা/২৫৯১, ১৪৩৪; মুসলিম হা/১০২৯; মিশকাত হা/১৮৬১ ‘যাকাত’ অধ্যায়।
[4]. মিয়াঁ নযীর হোসায়েন দেহলভী, ফাতাওয়া নাযীরিয়াহ (দিল্লী-৬ : ইদারা নূরুল ঈমান, ৪১২১ আজমীরী গেইট, ৩য় সংস্করণ ১৪০৯/১৯৮৮) ২/৮৩-৮৭।
[5]. বুখারী হা/১৪৮৩; মিশকাত হা/১৭৯৭।
[6]. বায়হাক্বী হা/৭২৯০, ৪/১৩২।
[7]. বায়হাক্বী হা/৭২৮৮, ৪/১৩১।
[8]. বুখারী হা/১৫০৩, ১৫০৬; মুসলিম হা/৯৮৪-৯৮৫; মিশকাত হা/১৮১৫-১৬।
[9]. হেদায়া ৪/৪৩৩ পৃ.; বেহেশতী জেওর ৩০০ পৃ.।
[10]. আবুদাঊদ হা/২৭৮৮; মিশকাত হা/১৪৭৮।
[11]. বুখারী হা/৫৫৬৫; মুসলিম হা/১৯৬৬-১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৩-৫৪।
[12]. আবুদাঊদ হা/২৫০৪; দারেমী হা/২৪৩১; নাসাঈ হা/৩০৯৬; মিশকাত হা/৩৮২১ ‘জিহাদ’ অধ্যায়।
[13]. তিরমিযী হা/২৪১৬; মিশকাত হা/৫১৯৭ ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়; ছহীহাহ হা/৯৪৬।
[14]. বুখারী হা/১৪১০; মুসলিম হা/১০১৪; মিশকাত হা/১৮৮৮।