عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم- بَدَأَ الإِسْلاَمُ غَرِيبًا وَسَيَعُودُ كَمَا بَدَأَ غَرِيبًا فَطُوبَى لِلْغُرَبَاءِ- وفى رواية للترمذى الَّذِينَ يُصْلِحُونَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِى مِنْ سُنَّتِى-
অনুবাদ : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ইসলাম শুরু হয়েছে অল্প সংখ্যক লোকের মাধ্যমে এবং অতি সত্ত্বর সে তার শুরুর অবস্থায় ফিরে আসবে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্প সংখ্যক লোকদের জন্য’।[1] তিরমিযীর রেওয়ায়াতে এসেছে যে, ‘ঐ অল্প সংখ্যক লোক হ’ল তারাই যারা আমার মৃত্যুর পরে লোকেদের দ্বারা বিনষ্ট সুন্নাতগুলির সংষ্কার করবে’।[2]
ব্যাখ্যা : উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘গরীব’ অর্থ আগন্তুক বা মুসাফির, যাকে কেউ চিনে না। অর্থাৎ ইসলাম প্রথমাবস্থায় গুটি কতক লোকের মধ্যে ছিল, যা অন্যদের নিকটে অজানা অচেনা ছিল। অতঃপর বিস্তৃতি লাভ করে। ইসলাম পুনরায় প্রথম অবস্থায় ফিরে আসবে। কেননা মুসলমানদের মধ্যে ফিৎনা-ফাসাদ, শিরক-বিদ‘আত-এর বৃদ্ধি, সুন্নাতের অবলুপ্তি, ফারায়েয-ওয়াজিবাতের প্রতি অনীহা-অবহেলা ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। ফলে অল্প সংখ্যক লোকের মধ্যে ছহীহ দ্বীন কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়বে। অতএব সুসংবাদ হ’ল সেই অল্পসংখ্যক প্রকৃত দ্বীনদার মুমিনের জন্য’।[3]
এক্ষণে ঐ অল্পসংখ্যক লোক কারা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, الَّذِينَ يُصْلِحُونَ مَا أَفْسَدَ النَّاسُ مِنْ بَعْدِى مِنْ سُنَّتِى ‘যারা আমার পরে লোকদের দ্বারা বিনষ্ট সুন্নাত সমূহের ‘ইছলাহ’ বা সংষ্কার করে’।[4] এখানে সংষ্কার অর্থ পুনর্জাগরণ। কেননা সুন্নাত অটুট থাকে, তার কোন সংষ্কার বা পরিমার্জ হয় না। বিদ‘আতের উত্থানের ফলে সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটে। অতঃপর বিদ‘আতের উৎখাতের ফলে পুনরায় সুন্নাতের পুনর্জাগরণ হয়। শিরক ও বিদ‘আতকে উৎখাত করে তাওহীদ ও সুন্নাতের প্রচলন ঘটানোকেই প্রচলিত অর্থে সংষ্কার বলা হয়। যা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কেননা শিরক ও বিদ‘আত মূলতঃ ধর্মের নামেই চালু হয়। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলি চালু করেন ধর্ম নেতারাই।
কুরআন বা ছহীহ হাদীছের মানদন্ডে বিচার করার ক্ষমতা সাধারণ জনগণের অনেকেরই থাকে না। আবার কারো যোগ্যতা থাকলেও অলসতা অবহেলায় কিংবা জনরোষের ভয়ে অনেকে পিছিয়ে যান। তাই সংষ্কারের কাজ সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজের দায়িত্ব দিয়েই আল্লাহ পাক নবীদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। ফলে শিরক ও বিদ‘আতের বিরোধিতা করায় ধর্ম ও সমাজ নেতারাই তাদের প্রধান শত্রু হয়েছিল। যেমন নূহের কওমের নেতারা বলেছিল لاَ تَذَرُنَّ آلِهَتَكُمْ ‘তোমরা তোমাদের উপাস্যদের ত্যাগ করো না’ (নূহ ৭১/২৩)। তারা নূহের আন্দোলনের মধ্যে নেতৃত্বের অভিলাষ আবিষ্কার করে বলেছিল, وَانْطَلَقَ الْمَلَأُ مِنْهُمْ أَنِ امْشُوا وَاصْبِرُوا عَلَى آلِهَتِكُمْ إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ يُرَادُ- مَا سَمِعْنَا بِهَذَا فِي الْمِلَّةِ الْآخِرَةِ إِنْ هَذَا إِلاَّ اخْتِلاَقٌ- ‘তাদের প্রধানরা চলে যায় এবং বলে যে, চলো তোমরা তোমাদের উপাস্যদের উপর অবিচল থাক। নিশ্চয় (তাওহীদের) এই দাওয়াতের মধ্যে কোন দূরভিসন্ধি আছে’। ‘আমরা তো এ বিষয়ে আমাদের পূর্বের (বাপ-দাদাদের) ধর্মে কিছুই শুনিনি। অতএব এগুলি মনগড়া উক্তি ছাড়া কিছুই নয়’ (ছোয়াদ ৩৮/৬-৭)। সাড়ে নয় শত বছরের দিন-রাত একটানা দাওয়াতে তেমন কোন ফল লাভ না হওয়ায় বরং উল্টা মিথ্যা তোহমতে অধৈর্য হয়ে তিনি নিজ কওমের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকটে বদ দো‘আ করেন এই বলে যে, رَبِّ لاَ تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا ‘হে আমার পালনকর্তা! ভূপৃষ্ঠে কাফির বাস করে এমন একটি বাড়ীও আপনি ছাড়বেন না’ (নূহ ৭১/২৬)। তাঁর দো‘আ কবুল হ’ল ইব্রাহীম (আঃ) সর্বপ্রথম নিজ পিতা ও বংশের বিরোধিতার সম্মুখীন হ’লেন। অতঃপর শাসক নমরূদের কোপানলে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হ’লেন। মূসা (আঃ) প্রথমতঃ গোষ্ঠীগত হিংসার শিকার হ’লেন ও পরে ফেরাঊনের ভয়ে দেশ ছাড়লেন। ঈসা (আঃ) নিজ গৃহেও রেহাই পেলেন না। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিলেন।
প্রশ্ন হ’ল সমাজ সংষ্কারের এই কঠিন ঝুঁকি নেওয়ার পরিনাম যখন এতই মর্মান্তিক, তখন এই ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন কি? উত্তর হ’ল এই যে, ঝুঁকি নেওয়ার মধ্যেই সমাজের জীবন নিহিত। যেমন ক্বিছাছের মধ্যে মানুষের হায়াত নিহিত। কিছু লোকের এই দায়িত্ব পালন করার ফলে নিজের ছেলে-মেয়ে ও ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা সমগ্র সমাজ নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়। কেননা ধর্মহীন সমাজ পশুর সমাজ বৈ কিছুই নয়। আর সেই সমাজে কোন ভাল সন্তানও ভাল থাকতে পারে না। সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতি নির্ভর করে সত্যিকার অর্থে ধার্মিক তথা নৈতিকতা সম্পন্ন লোকদের উপরেই। সে কারণ মানুষকে এলাহী ধর্মে উদ্বুদ্ধ ও সে পথে পরিচালনা করা মানুষের নিজ স্বার্থেই অপরিহার্য।
শেষনবী (ছাঃ)-এর আগমনের পরে আর কোন নবী আসবেন না। সমাজ সংষ্কারের এই গুরু দায়িত্ব এখন মুমিন সমাজের উপরে। শুধু নিজ আয়ত্বাধীন এলাকা নয়। বরং বিশ্ব সংস্কারের দায়িত্ব তাদের উপরে বর্তিয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ- ‘তোমরাই হ’লে শ্রেষ্ঠ জাতি। যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)। এই দায়িত্ব সার্বিকভাবে সকল মুমিনের উপরে থাকলেও সকলে ঐ দায়িত্ব পালন করে না বা করার যোগ্যতা রাখে না। সেজন্য আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন,وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ- ‘আর তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা চাই, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহবান করবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১০৪)। এখানে ‘খায়ের’ বা কল্যাণের দিকে অর্থ কুরআন-হাদীছের দিকে। এই দলকে অবশ্যই দ্বীনী ইলমে পারদর্শী হ’তে হবে। যারা সর্বদা স্বীয় জাতিকে জান্নাতের পথে দাওয়াত দিবে ও জাহান্নাম হ’তে হুঁশিয়ার করবে এবং এভাবে জাতিকে সর্বদা কল্যাণের পথে ধরে রাখবে। যেমন আল্লাহ বলেন,فَلَوْلاَ نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ- ‘অতএব তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে (আল্লাহর নাফরমানী হ’তে) ভয় প্রদর্শন করে যাতে তারা সাবধান হয়’ (তওবা ৯/১২২)। অতএব সমাজ সংস্কারকের জন্য কুরআন ও হাদীছের ইলমে পারদর্শী হওয়া যরূরী। এটা ফরযে কেফায়া। প্রত্যেক এলাকার কিছু বিদ্বান যদি এ দায়িত্ব পালন করেন, তাহ’লে অন্যদের জন্য এই ফরযে কেফায়া আদায় হবে। নইলে সকলের উপর দায়িত্ব বর্তাবে জানাযার ছালাতের ন্যায়। এই দায়িত্ব যদি কেউ পালন না করেন, তবে ঐ ফরয তরক করার গোনাহ সকলের উপরে বর্তাবে।
অতএব দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলীগের মূল দায়িত্ব আলেমদের উপরে। তাই বলে অন্যেরা দায়িত্ব মুক্ত নন। তাঁরা আলেমদের সাথী ও সহযোগী হবেন। যেমন ফেরাঊনের নিকটে দাওয়াত দিতে যাওয়ার সময় মূসা (আঃ)-এর সাথী হিসাবে ভাই হারূণকে আল্লাহ পাক অনুমতি দিয়েছিলেন (ত্বোয়াহা ২০/২৯-৩১)। আমাদের রাসূল (ছাঃ)-এর সাথী হিসাবে আল্লাহ পাক খাদীজা, আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী (রাঃ) প্রমুখ সেরা ব্যক্তিবর্গকে নির্বাচন করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় প্রণিধান যোগ্য যে, রাসূলগণ ছিলেন মা‘ছূম বা অভ্রান্ত। কিন্তু আলেমগণ অভ্রান্ত নন। সুতরাং রাসূল (ছাঃ)-এর সাথীগণ রাসূলের প্রতি আনুগত্য করবেন নিঃশর্তভাবে। কিন্তু আলেমদের সাথীগণ আলেমদের ভুল সিদ্ধান্তগুলিকে ভুল হিসাবেই গণ্য করবেন ও তা বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন এবং নিঃশর্তভাবে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করবেন। তাঁরা আলেমগণকে ছহীহ ও বিশুদ্ধ পথে জানমাল দিয়ে সহযোগিতা করবেন। হযরত ওমর ফারূক (রাঃ) জনৈক আসামীকে কঠোর দন্ড দিতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তেহামার জনৈক সাধারণ ব্যক্তি হামাল বিন মালিক তাঁকে উক্ত বিষয়ে হাদীছ শুনিয়ে দিলে তিনি ফিরে আসেন ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।[5]
ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০ হি.) স্বীয় প্রধান শিষ্য আবু ইউসুফকে ধমকের সুরে বলেন,ويحك يا يَعْقُوب، لا تكتب كل ما تسمع مني، فإني قد أرى الرأي اليوم فأتركه غدا، وأرى الرأي غدا وأتركه بعد غد رواه الخطيب باسناد متصل ‘হে ইয়াকুব তোমার ধ্বংস হৌক! তুমি আমার সব কথা লিখে নিয়ো না। কেননা আমি আজকে যে ফৎওয়া দেই, কালকে তা পরিত্যাগ করি, কালকে যে ফৎওয়া দেই পরশু তা পরিত্যাগ করি’।[6] ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪ হি.) স্বীয় প্রধান শিষ্য মুযানীকে বলেন,يَا إِبْرَاهِيم لاَ تقلدني فِي كل مَا أَقُول وَانْظُر فِي ذَلِك لنَفسك فَإِنَّهُ دين- ‘হে ইবরাহীম! আমি যাই বলি তাই মেনে নিয়ো না। বরং তুমিও চিন্তা কর। কেননা এটা দ্বীন’ (ইকদুল জীদ ৩২ পৃ.)।
বুঝা গেল যে, বিদ্বানদের অনুসরণের সময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে এবং তাদের ছহীহ দলীল ভিত্তিক কথাগুলিই কেবল গ্রহণ করতে হবে।
সমাজ সংষ্কারের জন্য আলেমদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি দায়িত্ব রয়েছে ইসলামী সংগঠনের নেতা ও মুসলিম সমাজনেতা ও শাসন কর্তৃপক্ষের উপরে। কারণ মানুষ তাদের অনুসরণ করে থাকে। তারা ইচ্ছা করলে সমাজকে অনেক সহজে দ্বীনের পথে নিয়ে আসতে পারেন। কুসংষ্কার থেকে মুক্ত করতে পারেন। অন্যায় পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের নীচে যে সাত শ্রেণীর মুমিন ছায়া পাবেন, তাদের প্রথম পাবেন ন্যায় পরায়ণ নেতা বা শাসক।[7] এক্ষণে যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হন, আর নিজেদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব সামলাতেই ব্যস্ত থাকেন, তাহ’লে তাদের জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,مَا مِنْ وَالٍ يَلِى رَعِيَّةً مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهْوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ- ‘আল্লাহ যখন তার কোন বান্দাকে কিছু লোকের অভিভাবক নিয়োগ করেন, অতঃপর সে খেয়ানত কারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন’।[8]
সংষ্কারকের গুণাবলী :
সমাজ সংষ্কারক নেতৃবৃন্দের জন্য পবিত্র কুরআনের প্রধানত চারটি গুণ বর্ণিত হয়েছে। যেমন তাকে ইলমে শরী‘আতে অভিজ্ঞ হ’তে হবে। (২) সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হ’তে হবে (৩) ক্ষমতাশালী হ’তে হবে (৪) আমানতদার বা সত্যনিষ্ঠ হ’তে হবে’।[9]
আমাদেরকে উপরোক্ত গুণাবলী যেমন অর্জন করতে হবে তেমনি সমাজের বুকে ক্ষমতাশালী হয়ে টিকে থাকতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, الْمُؤْمِنُ الْقَوِىُّ خَيْرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ الْمُؤْمِنِ الضَّعِيفِ ‘শক্তিশালী মুমিন উত্তম এবং আল্লাহর নিকটে দুর্বল মুমিন অপেক্ষা অধিক প্রিয়’।[10] সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার হিসাবে আল্লাহর সর্বশেষ অহি পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতর ব্যক্তিগণ নেতৃত্ব দিবেন। অন্যরা জান দিয়ে, মাল দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবেন। হকপন্থী ওলামায়ে কেরাম, সমাজনেতা ও শাসন কর্তৃত্বের অধিকারী ভাইদেরকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে হকপন্থীদেরকে জামা‘আতবদ্ধ হ’তে হবে ও শক্তি অর্জনের মাধ্যমে ওদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। ধর্মের নামে রাজনীতির নামে, অর্থনীতির নামে, সংস্কৃতির নামে এক কথায় ধর্মীয় ও বৈষয়িক ক্ষেত্রের বিভিন্ন স্তরে যেসব জাহেলিয়াত জমাট বেঁধে আছে, এগুলিকে প্রথমে নিজ জীবন ও পরিবার থেকে হটাতে হবে ও ক্রমে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে অপসারণ করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে সার্বিক সমাজ সংস্কারে নামতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন! আমীন!
[1]. মুসলিম হা/১৪৫; মিশকাত হা/১৫৯ ‘কিতাব ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরা’ অনুচ্ছেদ।
[2]. তিরমিযী হা/২৬৩০; মিশকাত হা/১৭০; যঈফুল জামে‘ হা/১৪৪১।
[3]. মির‘আত হা/১৫৯-এর ব্যাখ্যা ১/২৫৫।
[4]. তিরমিযী হা/২৬৩০; আহমাদ হা/১৬৭৩৬; মিশকাত হা/১৭০; যঈফুল জামে‘ হা/১৪৪১।
[5]. আহমাদ হা/১৫৭৮৪; আবুদাঊদ হা/২৯২৭; ইবনু মাজাহ হা/২৬৪২; মিশকাত হা/৩০৬৩; শাফেঈ, আর-রিসালাহ ৪২৭-২৮ পৃ.।
[6]. আবুবকর আহমাদ খত্বীব আল-বাগদাদী, তারীখু বাগদাদ (বৈরূত : দারুল গারব আল-ইসলামী, ১ম সংস্করণ (১৪২২ হি./২০০২ খৃ.) ১৫/৫৪৪ পৃ.।
[7]. বুখারী হা/৬৮০৬; মুসলিম হা/১০৩১; মিশকাত হা/৭০১ ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[8]. বুখারী হা/৭১৫১, ৭১৫০; মুসলিম হা/১৪২; মিশকাত হা/৩৬৮৬, ৩৬৮৭ ‘ইমারত’ অধ্যায়।
[9]. বাক্বারাহ ২/২৪৭; নমল ২৭/৩৯; ক্বাছাছ ২৮/২৬।
[10]. মুসলিম হা/২৬৬৪; মিশকাত হা/৫২৯৮ ‘তাওয়াক্কুল ও ছবর’ অনুচ্ছেদ।