ভূমিকা :

মানুষ মাত্রই তার সম্পদ বৃদ্ধি করতে চায়। সম্পদ বাড়ানোর জন্য কৃষি, চাকুরী, চিকিৎসা সহ মানুষ বিভিন্ন কাজ করে। এজন্যে তারা পরিবার ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ও এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সরকার, মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা দিয়ে থাকে। এ পরিকল্পনা সমূহের মৌলিক দর্শন হ’ল কাজ করা। কাজ করলেই সম্পদ বাড়বে। ইসলাম এ দর্শনকে অস্বীকার করে না। তবে ইসলাম এর সাথে আরো কিছু অভ্যন্তরীণ উপায় সংযুক্ত করে। যথা- ১. তাক্বওয়া অবলম্বন করা ২. আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া ৩. তওবা করা ৪. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা করা ৫. যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করা ৬. করযে হাসানা প্রদান করা ৭. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা ৮. দান করা ৯. আল্লাহর জন্যে হিজরত করা ১০. বিবাহ করা ১২. সম্পদ বৃদ্ধির দো‘আ করা ১৩. হজ্জ ও ওমরা সম্পাদন করা ১৪. দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা প্রভৃতি। এগুলো অভ্যন্তরীণ এজন্য যে, এগুলো দ্বারা সরাসরি সম্পদ বাড়ে না। এসব সম্পদ বৃদ্ধির সহায়ক কার্যকরণ। এসবের উপর ভিত্তি করে আল্লাহ ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে সমৃদ্ধি দিয়ে থাকেন। পক্ষান্তরে এ সবের অভাবে আল্লাহ সম্পদ কমিয়ে দেন এবং কখনো শাস্তি প্রদান করেন। আর কাজের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির বিধান ইসলামে লাগামহীন নয়। বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে আল্লাহর বৈধ সীমায় থেকে কাজ করলে আল্লাহ সম্পদ বৃদ্ধি করবেন। বৈধ পন্থায় নবী ও রাসূলগণ কাজ করতেন। ব্যক্তি, পরিবার ও জাতীয় জীবনে সমৃদ্ধির জন্য হালাল পন্থায় কাজ করার কোন বিকল্প নেই।

সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে :

সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি মানুষের হাতে নয়; বরং তা আল্লাহর হাতে। এজন্য দেখা যায় প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও অনেকে সাবলম্বী হ’তে পারে না। পক্ষান্তরে স্বল্প পরিশ্রমে আল্লাহর অনুগ্রহে অনেকেই অল্প সময়ে সচ্ছল হয়, স্বাবলম্বী হয়।

আল্লাহ বলেন,

أَهُمْ يَقْسِمُوْنَ رَحْمَةَ رَبِّكَ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُمْ مَّعِيْشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضاً سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ-

‘এরা কি তোমাদের প্রতিপালকের করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে জীবিকা বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে এবং তারা যা জমা করে তা হ’তে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উৎকৃষ্টতর’ (যুখরুফ ৪৩/৩২)

আল্লাহ আরো বলেন,

وَاللّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِي الْرِّزْقِ فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُواْ بِرَآدِّيْ رِزْقِهِمْ عَلَى مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَاءٌ أَفَبِنِعْمَةِ اللّهِ يَجْحَدُوْنَ-

‘আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন; যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্ত দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হ’তে এমন কিছু দেয় না, যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে’ (নাহল ১৬/৭১)

তিনি আরো বলেন,

تُوْلِجُ اللَّيْلَ فِي الْنَّهَارِ وَتُوْلِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الَمَيَّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَنْ تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ-

‘তুমি রাত্রিকে দিবসে পরিণত কর এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত কর এবং মৃত হ’তে জীবিতকে নির্গত কর এবং জীবিত হ’তে মৃতকে বহির্গত কর এবং তুমি যাকে ইচ্ছা অপরিমিত জীবিকা দান করে থাক’ (আলে ইমরান ৩/২৭)

সম্পদ বৃদ্ধির মৌলিক পথ :

ইসলামে সম্পদ বৃদ্ধির মৌলিক পথ ১টি। আর তাহ’ল- হালাল পথ। আল্লাহ বলেন,

قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِيْنَةَ اللّهِ الَّتِيْ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالْطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ قُلْ هِيَ لِلَّذِيْنَ آمَنُواْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ-

‘হে মুহাম্মাদ! তুমি জিজ্ঞেস কর যে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব শোভনীয় বস্ত্ত ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, তা কে নিষিদ্ধ করেছে? তুমি ঘোষণা করে দাও এসব বস্ত্ত পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে ক্বিয়ামতের দিনে ঐসব লোকের জন্য যারা মুমিন হবে, এমনিভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নির্দশনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করে থাকি’ (আ‘রাফ ৭/৩২)

আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِيْ آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُمْ مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيْرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيْلاً- ‘আমি তো আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদের উত্তম জীবনোপকরণ দান করেছি এবং যাদের আমি সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৭০)

আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ كُلُواْ مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُواْ لِلّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُوْنَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যা জীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর যদি তোমরা তাঁরই উপাসনা করে থাক’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)

সম্পদ বৃদ্ধির কতিপয় উপায় :

হালাল পথে সম্পদ বৃদ্ধির বহু উপায় ইসলামে রয়েছে। নিম্নে কতিপয় উপায় প্রদত্ত হ’ল :

১. তাক্বওয়া অবলম্বন করা :

তাক্বওয়া ইসলামী শরী‘আতের একটি পরিচিত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বেঁচে থাকা, ভয় করা।[1] ইসলামী শরী‘আতের পরিভাষায় তাক্বওয়া অর্থ হ’ল আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে নিষিদ্ধ বস্ত্ত সমূহ হ’তে দূরে থেকে ইসলাম নির্ধারিত পথে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা। অথবা যে কাজ করার কারণে মানুষকে আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে, তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হচ্ছে তাক্বওয়া। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত করুণা, ভালবাসা, দয়া ও অনুগ্রহ হারানোর ভয় অন্তরে সদা জাগ্রত থাকার নাম তাক্বওয়া।[2]

ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একবার উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-কে বললেন, আপনি তাক্বওয়া সম্পর্কে আমাকে বলুন। জবাবে তিনি বললেন, আপনি কি কখনো কণ্টকাকীর্ণ পথ দিয়ে চলেছেন? ওমর (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ। কা‘ব (রাঃ) বললেন, সেখানে আপনি কিভাবে চলেছেন? ওমর (রাঃ) বললেন, কাপড়-চোপড় গুটিয়ে অত্যন্ত সাবধানে চলেছি। কা‘ব (রাঃ) বললেন, ওটাই তো তাক্বওয়া।[3]

ইসলামের সার্বভৌম অধিকার সংরক্ষণের নিমিত্তে যাবতীয় হারাম কার্যাবলী থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রেখে হালাল পন্থায় যে জীবিকা নির্বাহ করতে ইসলাম নির্দেশ দেয় এমন তাক্বওয়ার দীপ্ত সজীবতায় বদ্ধমূল মানবগোষ্ঠীকে আল্লাহ স্বীয় মহিমায় সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন।

আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَّتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجاً- وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَّتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْراً- ‘যে কেউ আল্লাহ্কে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হ’তে রিযক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই, আল্লাহ সবকিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা’ (তালাক্ব ৬৫/২-৩)

আল্লামা কাযী আবু মুহাম্মাদ আব্দুল হক আন্দালুসী (মৃঃ ৫৪৬) এ বিষয়ে বলেন, আল্লাহ তাক্বওয়া অবলম্বনকারীর দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ সমূহ দূরীভূত করেন।[4] এতে কোন সন্দেহ নেই যে, অভাব দুনিয়ার অন্যতম বিপদ, যা আল্লাহ তাক্বওয়ার মাধ্যমে মোচন করেন। আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَـكِنْ كَذَّبُواْ فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُواْ يَكْسِبُوْنَ-

‘জনপদের অধিবাসীগণ যদি ঈমান আনত এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্যে আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দ্বার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা নবী রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ফলে তাদের কৃতকর্মের জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম’ (আ‘রাফ ৭/৯৬)

২. ক্ষমা চাওয়া :

আল্লাহ বলেন, فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّاراً- يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَاراً- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَل لَّكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَل لَّكُمْ أَنْهَاراً- ‘আমি চললাম, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা’ (নূহ ৭১/১০-১২)

৩. তওবা করা :

তওবার অর্থ হচ্ছে পাপকে ঘৃণিত কর্ম জ্ঞান করে বর্জন করা। নিজ ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া, ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং পুনরায় যথাসম্ভব নেক কার্যাবলীর মাধ্যমে পূর্বের ক্ষতিপূরণ করে নেয়া।

ইমাম নববী (রহঃ) এ বিষয়ে উল্লেখ করেন, আলেমগণ বলেন, যাবতীয় পাপ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। পাপ যদি আল্লাহ ও তাঁর বান্দার সাথে সম্পৃক্ত হয় এবং কোন মানুষের সাথে সম্পৃক্ত না হয়, যেমন কোন মানুষের হক মারা ইত্যাদি। তাহ’লে এর তিনটি শর্ত রয়েছে। যথা- (১) পাপ বর্জন করা (২) পাপের জন্য লজ্জিত হওয়া (৩) পুনরায় পাপে লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে কোন একটি বাদ পড়ে গেলে তওবা সঠিক হবে না।

আর পাপ যদি মানুষের (হক্বের) মধ্যে সম্পৃক্ত হয় তাহ’লে তার চারটি শর্ত রয়েছে। উল্লেখিত তিনটি শর্তের সঙ্গে চতুর্থ শর্ত হচ্ছে যে, হক্বদারের হক্ব আদায় করা। তা যদি সম্পদ হয় অথবা এরূপ কোন বস্ত্ত হয় তাহ’লে মালিকের কাছে তা ফিরিয়ে দেওয়া। যদি শরী‘আতের দৃষ্টিতে শাস্তিযোগ্য এমন কিছু বলে থাকে তাহ’লে যাকে কথার দ্বারা আঘাত দেওয়া হয়েছে তাকে এমন সুযোগ দেওয়া যাতে সে শাস্তি দিতে পারে। অথবা সে তার কাছে ক্ষমার আবেদন করবে। যদি তা গীবত হয় তাহ’লে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে।[5]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَاراً وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَى قُوَّتِكُمْ وَلاَ تَتَوَلَّوْاْ مُجْرِمِيْنَ- ‘হে আমার কওম! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই দিকে নিবিষ্ট হও। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তিকে বর্ধিত করে দিবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (হূদ ১১/৫২)

আল্লাহ আদ জাতির উপর পাপের কারণে তাদের তিন বছর বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করেছিলেন। তারপর তাদেরকে ক্ষমার মাধ্যমে বৃষ্টি ও রিযকের জন্যে দো‘আ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।[6]

আল্লাহ বলেন,

وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَّتَاعاً حَسَناً إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِيْ فَضْلٍ فَضْلَهُ وَإِنْ تَوَلَّوْاْ فَإِنِّيْ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيْرٍ-

‘আর এই উদ্দেশ্যে যে, তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, তৎপর তাঁর প্রতি নিবিষ্ট থাক, তিনি তোমাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দান করবেন নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত এবং প্রত্যেক অধিক আমলকারীকে অধিক ছওয়াব দিবেন। আর যদি তোমরা মুখ ফিরাতেই থাক, তবে আমি তোমাদের জন্য কঠিন দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি’ (হূদ ১১/৩)

৪. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসা :

কেবল আল্লাহর উপর আন্তরিক নির্ভরতার নাম ভরসা। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَوْ أَنَّكُمْ تَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزِقْتُمْ كَمَا تُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوْ خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا ‘তোমরা যদি আল্লাহর উপর যথাযথ ভরসা কর তাহ’লে তোমাদের জীবিকা দেওয়া হবে ঐভাবে যেভাবে পাখি রিযক প্রাপ্ত হয়। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং পেট পূরণ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে’।[7] ইমাম আহমাদ আরো বলেন, وكان الصحابة يتجرون ويعملون فى نخيلهم والقدوة فيهم- ‘ছাহাবাগণ ব্যবসা করতেন এবং নিজ খেজুরের বাগানে কাজ করতেন। তাদের মধ্যে রয়েছে আমাদের জন্য উত্তম নমুনা’।[8]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِيْ لاَ يَمُوْتُ وَسَبِّحْ بِحَمْدِهِ وَكَفَى بِهِ بِذُنُوْبِ عِبَادِهِ خَبِيْراً- ‘তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত’ (ফুরক্বান ২৫/৫৮)

আল্লাহ পাক বলেন, ‘আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হ’তে দান করবেন রিযক। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই, আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা’ (তালাক্ব ৬৫/৩)

আল্লাহ বলেন, وَلَوْ أَنَّهُمْ رَضُوْاْ مَا آتَاهُمُ اللّهُ وَرَسُوْلُهُ وَقَالُواْ حَسْبُنَا اللّهُ سَيُؤْتِيْنَا اللّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُوْلُهُ إِنَّا إِلَى اللّهِ رَاغِبُوْنَ- ‘কতই না ভাল হ’ত, যদি তারা সন্তুষ্ট হ’ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর এবং বলত, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট। আল্লাহ আমাদের দিবেন নিজ করুণায় এবং তাঁর রাসূলও। আমরা শুধু আল্লাহকেই কামনা করি’ (তওবা ৯/৫৯)

৫. যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করা :

আল্লাহ বলেন,

وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوْا التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيْلَ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ مِّنْ رَّبِّهِمْ لَأَكَلُواْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَمِنْ تَحْتِ أَرْجُلِهِمْ مِّنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ وَكَثِيْرٌ مِّنْهُمْ سَاءَ مَا يَعْمَلُوْنَ-

‘আর যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জীলের এবং যে কিতাব (অর্থাৎ কুরআন) তাদের প্রভুর পক্ষ হ’তে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার যথারীতি আমলকারী হ’ত, তবে তারা উপর (অর্থাৎ আকাশ) হ’তে এবং পায়ের নিম্ন (অর্থাৎ যমীন) হ’তে প্রাচুর্যের সাথে ভক্ষণ করত। তাদের একদল তো সরল পথের পথিক; আর তাদের অধিকাংশই এরূপ যে, তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য’ (মায়েদাহ ৫/৬৬)

হাদীছে এসেছে,

عن ابى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: إِنَّ اللهَ تَعَالَى يَقُوْلُ: يَا ابْنَ آدَمَ تَفَرَّغْ لِعِبَادَتِىْ أَمْلَأْ صَدْرَكَ غِنًى وَأسُدُّ فَقْرَكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ مَلَأْتُ صَدْرَكَ شُغْلاً وَلَمْ أَسُدَّ فَقْرَكَ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য আত্মনিয়োগ কর। আমি তোমার অন্তরকে ধনে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য মোচন করে দেব। আর যদি তুমি তা না কর তাহ’লে আমি তোমার অন্তরকে ব্যস্ততায় পূর্ণ করব, তোমার অভাবকে মোচন করব না’।[9]

৬. শুকরিয়া জ্ঞাপন করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ- ‘যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হ’লে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব, আর অকৃতজ্ঞ হ’লে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর’ (ইবরাহীম ১৪/৭)

৭. কর্যে হাসানা প্রদান করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِنَّ الْمُصَّدِّقِيْنَ وَالْمُصَّدِّقَاتِ وَأَقْرَضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً يُضَاعَفُ لَهُمْ وَلَهُمْ أَجْرٌ كَرِيْمٌ- ‘দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেয়া হবে বহুগুণ বেশী এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার’ (হাদীদ ৫৭/১৮)

আল্লাহ আরো বলেন, إِنْ تُقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً يُضَاعِفْهُ لَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ شَكُوْرٌ حَلِيْمٌ- ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তবে তিনি তোমাদের জন্যে এটা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ কৃতজ্ঞ সহনশীল’ (তাগাবুন ৬৪/১৭)

অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضاً حَسَناً فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافاً كَثِيْرَةً وَاللّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ- ‘কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তারই দিকে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৪৫)

আল্লাহ বলেন, مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضاً حَسَناً فَيُضَاعِفَهُ لَهُ وَلَهُ أَجْرٌ كَرِيْمٌ- ‘কে আছে যে আল্লাহকে দিবে উত্তম ঋণ? তাহ’লে তিনি বহুগুণে একে তার জন্য বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার’ (হাদীদ ৫৭/১১)

৮. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা :

আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَثَلُ الَّذِيْنَ يُنْفِقُوْنَ أَمْوَالَهُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيْ كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَاللّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ-

‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন- একটি শস্য বীজ, তা হ’তে উৎপন্ন হ’ল সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে উৎপন্ন হ’ল শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন বর্ধিত করে দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হচ্ছেন বিপুলদাতা, মহাজ্ঞানী’ (বাক্বারাহ ২/২৬১)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَيَقْدِرُ لَهُ وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ- ‘বল, আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযক বর্ধিত করেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’ (সাবা ৩৪/৩৯)

হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য যে বস্ত্ত বৈধ করেছেন ও খরচ করতে আদেশ দিয়েছেন তা তোমরা যখনই খরচ কর না কেন তিনি দুনিয়াতে তার প্রতিফল দিবেন এবং আখেরাতেও প্রতিদান দিবেন। যেমন হাদীছে এসেছে,

عن أبى هريرة رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيْهِ إِلاَّ وَمَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُوْلُ أحَدُهُمْ : أَللَّهُمَّ اَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُوْلُ الْآخَرُ اللَّهُمَّ اَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا،

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘বান্দাগণ যখন প্রভাত করে তখন দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তার মধ্যে একজন বলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে ব্যয় করে তাকে উত্তম প্রতিদান দাও। অপরজন বলেন, কৃপণের মাল ধ্বংস কর’।[10]

৯. দান করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيْمٍ- ‘সূদকে আল্লাহ মিটিয়ে দেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৭৬)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, কোন এক ব্যক্তি বৃক্ষ ও পানি শূন্য প্রান্তরে ছিল। অতঃপর সে মেঘের কাছ থেকে শব্দ শ্রবণ করে যে, অমুকের উদ্যানকে পানি প্রদান কর। মেঘ কালো পাথরের পানে যায় ও পানি বর্ষণ করে। পানির একটি নালায় ঐ বর্ষিত পানি প্রবেশ করে এবং প্রবাহিত হ’তে থাকে। অতঃপর সে পানির পিছনে পিছনে যেতে আরম্ভ করে। সেখানে গিয়ে দেখে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে কোদাল দ্বারা নিজ বাগানে পানি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। অতঃপর সে বাগান মালিককে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার কি নাম? উত্তরে সে বলল, অমুক। এটি সেই নামই ছিল যা সে মেঘের কাছে শ্রবণ করেছিল। বাগানের মালিক তখন আগন্তুক ব্যক্তিকে বলল, যে মেঘ এই পানি বর্ষণ করেছে তার কাছে এই শব্দ শুনেছি অমুকের উদ্যানে পানি বর্ষণ কর, আর সেটি হচ্ছে তোমার নাম। তুমি ঐ বাগানে কি কর? সে বলল, তুমি যখন জিজ্ঞেস করছ তখন বলি, বাগানে যা হয় তা আমি হিসাব করে দেখি এবং তিন ভাগ করি, এক তৃতীয়াংশ দান করি, এক তৃতীয়াংশ নিজে খাই, বাচ্চাদের খাওয়াই, আর এক তৃতীয়াংশ বাগানের জন্য খরচ করি’।[11]

১০. আল্লাহর জন্যে হিজরত করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَمَنْ يُّهَاجِرْ فِيْ سَبِيْلِ اللّهِ يَجِدْ فِيْ الْأَرْضِ مُرَاغَماً كَثِيْراً وَسَعَةً وَمَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِراً إِلَى اللّهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلى اللّهِ وَكَانَ اللّهُ غَفُوْراً رَّحِيْماً-

‘যে কেউ আল্লাহর পথে দেশ ত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশ্যে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার ছওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়’ (নিসা ৪/১০০)

এই আয়াতে আল্লাহ স্বীকার করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করবে সে দু’টি পুরস্কার পাবে। একটি হচ্ছে: ‘মুরাগামান কাছীরান’, দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘সা‘আতান’। ইমাম রাযী মুরাগামানের অর্থ সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বা তাঁর পথে অন্য দেশে হিজরত করবে সে ঐ দেশে কল্যাণ এবং অনুদান পাবে। আর তার নিজ দেশের শত্রুদের জন্য লজ্জা ও অসম্মানের কারণ হবে। কেননা স্বদেশ ত্যাগ করে বিদেশে আগমনকারীর অবস্থা সেখানে যদি সুদৃঢ় হয় এবং ঐ সংবাদ স্বদেশের লোকদের কাছে পেঁŠছে, তাহ’লে তারা তার সঙ্গে পূর্বকৃত দুর্ব্যবহার স্মরণ করে লজ্জিত এবং লাঞ্ছিত হবে। ‘সা‘আতান’-এর অর্থ ইবনে আববাস, রাবী, যাহহাক, আতা এবং জমহূর আলেমগণ জীবিকার সচ্ছলতা বলেছেন। কাতাদাহ ‘সা‘আতান’-এর অর্থ বলেন, গোমরাহী ও সংকীর্ণতার পরিবর্তে হিদায়াতের প্রশস্ততা এবং অভাবের পরিবর্তে সচ্ছলতা।[12]

সারকথা হচ্ছে, মানব জাতিকে যেন বলা হয়েছে বিদেশে দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে, কেবল এই ভয়ে যদি তোমরা দেশ ত্যাগ করতে চাও, তাহ’লে তোমরা ভয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ হিজরতের জন্য তোমাদেরকে বৃহৎ অবদান দিবেন এবং সম্মান প্রদান করবেন, যা তোমাদের শত্রুদের লজ্জা ও তোমাদের জীবিকার সচ্ছলতার কারণ হবে।

১১. বিবাহ করা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِيْنَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُوْنُوْا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ- ‘তোমাদের মধ্যে যারা ‘আইয়িম’ (বিপত্নিক পুরুষ বা বিধবা স্ত্রী) তাদের বিবাহ সম্পাদন কর এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও; তারা অভাবগ্রস্ত হ’লে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (নূর ২৪/৩২)। এই আয়াত প্রমাণ করে আনুগত্যশীল যুবক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিবাহ করলে আল্লাহ তাকে ধনী করবেন।[13] এর তাফসীরে আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, التمسوا الغنى فى النكاح ‘বিবাহর মাধ্যমে সম্পদ অন্বেষণ কর’।[14]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَلاَ تَقْتُلُواْ أَوْلادَكُمْ خَشْيَةَ إِمْلاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ إنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْءاً كَبِيْرًا- ‘তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে হত্যা কর না, তাদেরকে ও তোমাদেরকে আমিই জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি; তাদের হত্যা করা মহাপাপ’ (বানী ইসরাঈল ১৭/৩১)

১২. সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দো‘আ করা :

আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيْمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـَذَا بَلَداً آمِناً وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُمْ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ قَالَ وَمَنْ كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ قَلِيْلاً ثُمَّ أَضْطَرُّهُ إِلَى عَذَابِ النَّارِ وَبِئْسَ الْمَصِيْرُ-

‘যখন ইবরাহীম (আঃ) বলেছেন, হে আমার প্রতিপালক! এ স্থানকে আপনি নিরাপদ শহরে পরিণত করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে জীবিকার জন্য ফল শস্য প্রদান করুন। তিনি বলেন, যারা অবিশ্বাস করে তাদেরকে আমি অল্প দিন শাস্তি দান করব, তৎপরে তাদেরকে অগ্নির শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব, ঐ গন্তব্য স্থান নিকৃষ্টময় (বাক্বারাহ ২/১২৬)

আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেন এভাবে-

رَّبَّنَا إِنِّيْ أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِيْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِيْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيْمُوْا الصَّلاَةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِيْ إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُمْ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ-

‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে নিয়ে বসবাস করলাম অনুর্বর উপত্যকায় আপনার পবিত্র গৃহের নিকটে। হে আমাদের প্রতিপালক! এই জন্য যে, তারা যেন ছালাত কায়েম করে; সুতরাং আপনি কিছু লোকের অন্তর ওদের প্রতি অনুরাগী করে দিন এবং ফলাদি দ্বারা তাদের রিযকের ব্যবস্থা করুন; যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে’ (ইবরাহীম ১৪/৩৭)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন,

قَالَ عِيْسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُوْنُ لَنَا عِيْداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِيْنَ-

‘ঈসা ইবনে মারইয়াম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রভু! আমাদের প্রতি আকাশ হ’তে খাদ্য অবতীর্ণ করুন, যেন ওটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে এবং যারা পরে, সকলের একটা আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ হ’তে এক নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আমাদেরকে খাদ্য প্রদান করুন। বস্ত্ততঃ আপনি তো সর্বোত্তম খাদ্য প্রদানকারী’ (মায়েদাহ ৫/১১৪)

১৩. যাকাত প্রদান করা :

আল্লাহ বলেন,

وَمَا آتَيْتُمْ مِّن رِّباً لِّيَرْبُوَ فِيْ أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُوْ عِنْدَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّنْ زَكَاةٍ تُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُوْنَ-

‘মানুষের ধন বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা সূদের উপর যা দিয়ে থাক, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়ে থাক তাই বৃদ্ধি পায়; তারাই সমৃদ্ধশালী’ (রূম ৩০/৩৯)

১৪. হজ্জ ও ওমরা সম্পাদন করা :

হজ্জ ও ওমরা সম্পাদন করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীছটি প্রণিধানযোগ্য।

عن عبد الله ابن مسعود رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : تَابِعُوْا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوْبَ كَمَا يَنْفِى الْكِيْرُ خَبَثَ الْحَدِيْدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لْلِحَجَّةِ الْمَبْرُوْرَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ الْجَنَّةَ-

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘হজ্জ ও ওমরা পরস্পর আদায় কর। কেননা সে দু’টি অভাব ও পাপকে মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপর সোনা, চাঁদি এবং লোহার জংকে মিটিয়ে দেয়। আর কবুল হজ্জের ছওয়াব হ’ল জান্নাত’।[15] এই হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, হজ্জ ও ওমরা করার ফল হচ্ছে দারিদ্র ও পাপ বিমোচন।

১৫. আত্মীয়তার বন্ধন ঠিক রাখা :

আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সম্পদ বৃদ্ধির উপায়। আত্মীয় হ’ল যাদের আপসে বংশীয় সম্পর্ক আছে, তাতে তারা একে অপরের ওয়ারিছ হোক অথবা না হোক, তাদের আপসে বিবাহ বৈধ হোক না হোক। এ মর্মে হাদীছে এসেছে-

عن أبى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِىْ رِزْقِهِ وَ أَنْ يُنْسَأَ لَهُ فِىْ أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি পসন্দ করে যে তার জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন তার আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে’।[16]

عن أبى هريرت رضى الله عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: تَعَلَّمُوْا مِنْ أَنْسَابِكُمْ مَا تَصِلُوْنَ بِهِ أَرْحَامَكُمْ فَإِنَّ صِلَةَ الرَّحِمِ مَحَبَّةٌ فِى الْأَهْلِ مَثْرَاةٌ فِى الْمَالِ مَنْسَاةٌ فِى الْأَثَرِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের বংশ পরিচয় অর্জন কর যাতে তোমাদের আত্মীয়ের সাথে মায়ার বন্ধন স্থাপন করতে পার। কেননা আত্মীয়তার বন্ধনে পরিবার বা বংশ প্রীতি, সম্পদ এবং আয়ু বৃদ্ধি হয়’।[17]

১৬. দ্বীনী ইলম শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা :

যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষার জন্য আত্মনিয়োগ করে তার জন্যে খরচ করা জীবিকার চাবিকাঠির অন্তর্ভুক্ত। হাদীছে এসেছে :

وعن انس رضى الله عنه قال: كَانَ اَخَوَانِ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ الله صلى الله عليه وسلم فَكَانَ أَحَدُهُمَا يَأْتِى النَّبِىَّ صلى عليه وسلم وَالْآخَرُ يَحْتَرِفُ فَشَكَا الْمُحْتَرِفُ أَخَاهُ إِلى النَّبِىِّ صلى عليه وسلم فَقَالَ: لَعَلَّكَ تُرْزَقُ بِهِ.

আনাস (রাঃ) বর্ণিত হ’তে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে দু’ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন (ইলম শিক্ষার জন্যে) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আসত। অপর ভাই জীবিকার সন্ধানে যেত। জীবিকা সন্ধানকারী ভাই জ্ঞানার্জনকারী ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাসূলের নিকট (জীবিকা সন্ধান না করার) অভিযোগ আনে। উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হ’তে পারে ভাইয়ের কারণে তোমাকে জীবিকা দেয়া হচ্ছে’।[18]

১৭. গরীবদের সহায়তা করা :

গরীবদের সহায়তা করলে রিযক বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ رَأَىَ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُوْنَهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَلْ تُنْصَرُوْنَ وَتُرْزَقُوْنَ إِلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ،

মুছ‘আব বিন সা‘দ হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, সা‘দ মনে করতেন যে, গরীব ও দুর্বলদের উপর তাঁর মর্যাদা আছে। সেজন্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমরা সাহায্য ও রিযক প্রাপ্ত হয়ে থাক তোমাদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের কারণে’।[19]

১৮. কাজ করা :

কাজ করলে সম্পদ বাড়ে। আল্লাহ ছালাত আদায়ের পরই সম্পদ অর্জনের জন্যে অন্বেষণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوْا مِنْ فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيْراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘ছালাত সমাপ্ত হ’লে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (জুম‘আহ ৬২/১০)

কাজ করার বিষয়ে নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার ইসলামে স্বীকৃত। আল্লাহ বলেন,

وَلاَ تَتَمَنَّوْاْ مَا فَضَّلَ اللّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِّلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُواْ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيْبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُواْ اللّهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْماً-

‘আর তোমরা আকাঙ্খা কর না এমন সব বিষয় যাতে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের একের উপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা সর্ব-বিষয়ে জ্ঞাত’ (নিসা ৪/৩২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, رَّبُّكُمُ الَّذِيْ يُزْجِيْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِيْ الْبَحْرِ لِتَبْتَغُواْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيْماً- ‘তোমাদের প্রতিপালক তিনিই যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে জলযান পরিচালিত করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার; তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৬৬)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيْهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُوْنَ- وَلَكُمْ فِيْهَا جَمَالٌ حِيْنَ تُرِيْحُوْنَ وَحِيْنَ تَسْرَحُوْنَ- وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَّمْ تَكُوْنُوْا بَالِغِيْهِ إِلاَّ بِشِقِّ الأَنْفُسِ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ-

‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন; তোমাদের জন্য ওতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকরণ রয়েছে এবং ওটা হ’তে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক। আর যখন তোমরা সন্ধ্যাকালে ওদেরকে চারণভূমি হ’তে গৃহে নিয়ে আস এবং প্রভাতে যখন ওদেরকে চারণভূমিতে নিয়ে যাও, তখন তোমরা ওর সেŠন্দর্য উপভোগ কর। আর ওরা তোমাদের ভারবহণ করে নিয়ে যায় দূর দেশে। যেথায় প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পেঁŠছতে পারতে না; তোমাদের প্রতিপালক অবশ্যই স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (নাহল ১৬/৫-৭)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, هُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُوْلاً فَامْشُوْا فِيْ مَنَاكِبِهَا وَكُلُوْا مِن رِّزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ- ‘তিনি তো তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা ওর দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ হ’তে আহার্য গ্রহণ কর; পুনরুত্থান তো তাঁরই নিকট’ (মুলক্ব ৬৭/১৫)

উপসংহার :

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইসলামে রয়েছে সম্পদ বৃদ্ধির উত্তম উপায় সমূহ। সেই উপায় সমূহ যদি মানুষ অনুশীলন করে তাহ’লে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সমৃদ্ধি নেমে আসবে। অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মানুষ নিষ্কৃতি পাবে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে। অনৈতিকতা ও অসাধু উপায়ে উপার্জনের পথ বন্ধ হবে। মানুষ হবে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে প্রবল শক্তিশালী। বাহ্যিক দিক থেকে হবে বিবিধ কর্মে দক্ষ শিল্পী। আসুন, আমরা ইসলামী উপায়ে নিজেদের উপার্জন বৃদ্ধিতে ব্রতী হই। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!!

মুহাম্মাদ আবু তাহের

 এম. ফিল. গবেষক, আল-হাদীছ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।


[1]. কাযী নাছিরুদ্দীন আল-বায়যাবী, আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাবীল (দেওবন্দ : আল-মাকতাবাতুল আসাফিয়াহ, তা.বি.), পৃঃ ১৬; ইমাম মুহাম্মদ বিন আবু বাকর আর-রাযী, মুখতারুস সিহাহ (বৈরুত : মাকতাবু লিবানন, ১৯৮৯ খৃষ্টাব্দ), পৃঃ ৬৪৭;ড. ইবরাহীম মাদকূর, আল-মু‘জামুল ওয়াসীত (দেওবন্দ: কুতুবখানা হুসাইনিয়াহ, তা.বি.), পৃঃ ১০৫২

[2]. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২শ খন্ড (ঢাকা : ইফাবা ১৯৯২), পৃঃ ১০৭

[3]. আলাউদ্দীন আলী বিন মুহাম্মদ আলী বাগদাদী, লুবাতুত তাবীল ফী মা‘আনিত তানযীল, ১ম খন্ড (বৈরুত : দারুল ফিকর, ১৯৭৯ খৃঃ), পৃঃ ২৮

[4]. ঐ, আল-মুহাররারুল ওয়াজীয ফী তাফসীরিল কিতাবিল আযীয (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৯৯৩), ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩২৪

[5]. ইমাম নববী, বিয়াযুছ ছালেহীন (বৈরুত : দারুল জীল, ১৯৮৭ খৃঃ), পৃঃ ১১

[6]. আলা-মুহাররারুল ওয়াজীয ফী তাফসীরুল কিতাবিল আযীয, ৩য় খন্ড, পৃঃ ১৮০

[7]. তিরমিযী, হা/২৩৪৪ হাদীছ ছহীহ; মুসনাদে আহমদ, হা/২০৫, ৩৭২, ৩৭৫

[8]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী, ১১/৩০৫-৩০৬

[9]. ইবনু মাজাহ, ‘যুহ্দ’ অধ্যায়, হা/৪১০৭, হাদীছ ছহীহ

[10]. ছহীহ বুখারী, ১ম খন্ড (ভারত : মাকতাবুল ইত্তিহাদ, তা.বি.), পৃঃ ৪১১

[11]. ছহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড (ভারত : মাকতাবাতুল ইত্তিহাদ, তা.বি.), পৃঃ ৪১১

[12]. ইমাম কুরতুবী, আল-জামিউ লিআহকামিল কুরআন, ৫ম খন্ড, (বৈরুত: দারুল কিতাবিল আরবী, ২য় সংস্করণ, ১৪২১ হিজরী), পৃঃ ৩৩০-৩৩১

[13]. শায়খ মুহাম্মদ আমীন আশ-শানকীতী, আযওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন বিল কুরআন, ৭ম খন্ড, (বৈরুত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৯৯৬ খৃঃ), পৃঃ ১৪৯

[14]. আবু জাফর আত-তাবারী, জামিউল বায়ান, তাহক্বীক: শায়খ খলীল, ১০ম খন্ড (বৈরুত : দারূল ফিকর, ১ম সংস্করণ, ২০০১ খৃঃ), পৃঃ ১৫১

[15]. তিরমিযী, হা/৮১০, হাদীছ হাসান ছহীহ; নাসাঈ, ‘মানাসিকুল হজ্জ’, হা/২৫৮৪; আহমাদ, হা/৩৪৮৭

[16]. ছহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, পৃঃ ৮৮৫

[17]. তিরমিযী, হা/১৯৭৯, হাদীছ ছহীহ; মুসনাদ আহমদ, হা/৮৬৫১

[18]. তিরমিযী, হা/২৩৪৫; মিশকাত হা/৫৩০৮ সনদ জাইয়িদ

[19]. ছহীহ বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ৪০৫






বিষয়সমূহ: মীরাছ
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা (৫ম কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
নিভে গেল ছাদিকপুরী পরিবারের শেষ দেউটি - ড. নূরুল ইসলাম
হেদায়াত লাভের উপায় - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৪র্থ কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
চিন্তার ইবাদত (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আরব প্রিন্সদের উঁচু ভবন বানানোর প্রতিযোগিতা - রবার্ট ফিস্ক
ঈমানের গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শোকর (প্রথম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৫ম কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইখলাছ - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৫ম কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
আরও
আরও
.