দেশের স্বাধীনতার উপরে হামলা হয়েছে। গত ১৮ই এপ্রিল’০১ কুড়িগ্রাম রৌমারী সীমান্তে এ হামলা চালিয়েছে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত। এযাবতকালের এই ভয়াবহ সংঘর্ষে হানাদার পক্ষ স্বাভাবিকভাবেই চরম মার খেয়েছে। ৩জন বিডিআর ও ৪০জন বিএসএফ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬টি লাশ ফেলে তারা পালিয়ে গেছে। ১১ জন বিডিআর-এর কাছে ব্লাকক্যাট সহ ৩০০ জন বিএসএফ-এর হেরে যাওয়া ও পালিয়ে যাওয়ার লজ্জায় তারা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাই চরম প্রতিশোধ ও সর্বাত্মক হামলা আসন্ন, একথা ধরে নেওয়া যায়।

গত ৩০ বছর ধরেই ভারত নিয়মিতভাবে সীমান্ত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তাতে সবসময় মরেছে ও মার খেয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যগণ ও সীমান্তে বসবাসকারী জনগণ। দখল করে রেখেছে তারা সিলেটের পাদুয়া-প্রতাপপুর গ্রাম ও মুহুরীর চর সহ ১০ হাযার একরের ঊর্ধ্বে বাংলাদেশী ভূমি। ৫১টি ছিট মহলের চার লক্ষাধিক বাংলাদেশী তাদের হাতে কার্যতঃ বন্দী জীবন যাপন করছে। ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি মোতাবেক বেরুবাড়ী তারা ঠিকই নিয়েছে। কিন্তু বিনিময়ে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা পুরোপুরি আজও আমাদের দেয়নি। আমাদের সাগর সীমানার মধ্যে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ তারা জবরদখল করে রেখেছে। গত সোয়া চার বছরে ৩০০০ বার তারা সীমান্ত লংঘন করেছে। ৩০০ বার গুলী বর্ষণ করেছে। হত্যা করেছে ৪৭ জন বিডিআর সহ ১৪৭ জন গ্রামবাসীকে। আহত করেছে কতজনকে তার হিসাব নেই। কত গ্রাম ও বাড়ী-ঘর জ্বালিয়েছে, গরু-বাছুর ও সহায়-সম্পদ লুট করেছে তার ইয়ত্তা নেই। এছাড়াও ফারাক্কা সহ ৫৪টি অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে তারা বাংলাদেশকে শুকিয়ে মারতে চেয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মওসুমে তাদের সঞ্চিত পানি বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে তারা ডুবিয়ে মেরেছে। চোরাচালানীর মাধ্যমে ও অসম বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের সম্পদ ও শিল্প-বাণিজ্য নিঃশেষ করে দিচ্ছে। দেশের অর্থকরী ফসল পাট, মাছ ও বস্ত্র খাত তাদের দখলে নিয়েছে। দেশের মাটির নীচের লুক্কায়িত বিপুল সম্ভাবনার উৎস তৈল ও গ্যাস সম্পদ সহ দেশের সম্ভাবনাময় সকল সেক্টরে তাদের পরোক্ষ দখলদারিত্ব স্পষ্ট। ইলেকশন মৌসুমে দেদারসে অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন করার অপতৎপরতা মোটেই গোপন নয়। তারা জানে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনচেতা মানুষ ও সশস্ত্র বাহিনী এক মুহূর্তের জন্যও ভারতের গোলামী মেনে নেবে না। তাই বিকল্প পথ হিসাবে এদেশে সব সময় তাদের বশংবদ একটি পুতুল সরকারকে তারা দেখতে চায়। যাদের হাত দিয়ে তাদের আগ্রাসী থাবা বিস্তারের কাজ সহজে সম্পন্ন করা যায়। অতঃপর সুযোগ-সুবিধামত সিকিমের ন্যায় একদিন পুরা দেশটাকেই হযম করা সম্ভব হবে। সেই টার্গেট নিয়েই তারা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে এবার সীমান্ত হামলা চালিয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল ধারণা করছেন। এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চেয়েছিল যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার মোটেই ভারতপন্থী নয়। বরং নিঃসন্দেহে ভারত বিরোধী। তা না হ’লে এই বন্ধু সরকারের আমলে ভারত কেন সীমান্তে হামলা চালাতে যাবে? এজন্য অজুহাত হিসাবে তারা বিডিআর কর্তৃক সিলেটের জাফলং-এর নিকটবর্তী বাংলাদেশী গ্রাম পাদুয়া ভারতীয় দখলমুক্ত করার ১৫ই এপ্রিলের অভিযানকে সামনে এনেছে। বাংলাদেশী ভূখন্ডে রাস্তা বানিয়ে তারা বিডিআরকে অভিযান পরিচালনায় বাধ্য করেছে। অতএব হে ভারত বিরোধী জনগণ! তোমরা আগামী ইলেকশনে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি (?) এই ভারত বিরোধী দলটিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাও। তাদের হিসাব ঠিকই ছিল। কিন্তু আল্লাহর হিসাব ছিল আলাদা। তাই মারটা একটু বেশীই হয়ে গেল। ফলে ভারতের এখন মুখরক্ষার পালা।

আমাদের সরকারের পক্ষ হ’তে এই ভারতীয় হামলার বিরুদ্ধে কোনরূপ প্রতিবাদ হ’ল না। এমনকি জাতীয় সংসদের যরূরী বৈঠক ডেকে এর বিরুদ্ধে একটা নিন্দা প্রস্তাবও নেওয়া হ’ল না। যেখানে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারতেরই ক্ষমা চাওয়ার কথা। সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পর প্রধানমন্ত্রীকে ৩০ মিনিট ধরে টেলিফোনে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করতে হ’ল, তদন্তের আশ্বাস দিতে হ’ল। বিডিআরগণ কেন পাল্টা হামলা চালালো এজন্য তাদের কোর্ট মার্শালে বিচার করার দাবীও নাকি উঠানো হয়েছে। সরকার নাকি কিছুই জানেন না। এটা নাকি বিডিআরের নিজস্ব হঠকারিতা...। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ‘দুঃখ প্রকাশে’র ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শাসক বিজেপির মিত্র দলগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের সংকল্প ব্যক্ত করেছে। সেদেশের পার্লামেন্টে গত ২৩শে এপ্রিল সোমবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ এবং ঢাকায় বিডিআর-এর হেড কোয়ার্টার বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া, নিহত ১৬ জন বিএসএফ-এর বদলে ৩২ জন বিডিআর সদস্য হত্যার সুফারিশ করা হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী যশোবন্ত সিং রৌমারীর ঘটনাকে বিডিআরের ‘ক্রিমিনাল এডভেঞ্চারিজম’ বা দুর্বৃত্তসুলভ হঠকারিতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সিলেট সীমান্তের বিএসএফ সদস্যগণ তাদের নিহত প্রতি একজন বিএসএফ-এর বদলে ৪০ হাযার বাংলাদেশী হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে পত্রিকান্তরে প্রকাশ। আমাদের সীমান্তের প্রায় ৫০০ মিটার ভিতরে ঢুকে তারা অতর্কিত হামলা করল। আমাদের মাটিতেই তাদের লাশ পাওয়া গেল। তারা আমাদের তিনজন বিডিআরকে হত্যা করল। ৪০টি গ্রামে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করল। এরপরেও তারা নির্দোষ।

আমাদের বিডিআর নির্ভীকচিত্তে তাদের উপরে অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই এবং আল্লাহর নিকটে তাদের ঈমানী চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করি। কিন্তু হায়! দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যাদেরকে জাতীয় বীরের সম্মানে ভূষিত করা উচিত ছিল, তারাই এখন জাতীয় ‘দুর্বৃত্তে’ পরিণত হ’ল। ৩০ বছর পরে পুনর্দখলকৃত পাদুয়া গ্রামের ২৩০ একর ভূমি থেকে ১৯শে এপ্রিল তারিখে সরকারী হুকুমে তাদেরকে নীরবে মাথা নীচু করে চলে আসতে হ’ল।

এমতাবস্থায় দেশবাসীর করণীয় কি হবে? যখন আমাদের কেউ থাকবে না, তখন আল্লাহ ছাড়া আমাদের প্রকৃত বন্ধু কেউ নেই। আর আল্লাহর সাহায্য পেতে গেলে চাই দৃঢ় ঈমান। ইবরাহীমী ঈমানের তেজে নমরূদী হুতাশন যেমন ফুলবাগে পরিণত হয়েছিল, আমাদের ঈমানী শক্তির সম্মুখে তেমনি হানাদারদের গুলী ও বোমার আগুন নিভে যেতে পারে। বদরের ময়দানে যদি ফেরেশতা নামতে পারে, তাহ’লে বাংলাদেশের মাটিতে পুনরায় ফেরেশতা নেমে আসতে পারে, আল্লাহর হুকুম হ’লে। তাই আসুন! নতুন করে স্বাধীনতা রক্ষার শপথ নিন। ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হৌন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!






বর্ণবাদী আমেরিকার মুক্তির পথ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নেতৃত্ব দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নিরসনে আমাদের প্রস্তাব - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
অহি-র বিধান বনাম মানব রচিত বিধান - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কারের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যৎ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ঈদুল আযহা সমাগত - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মুছল্লী না সন্ত্রাসী? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আন্তঃধর্ম শান্তি সম্মেলন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মানবাধিকার ও ইসলাম
মিসকীন ওবামা, ভিকটিম ওসামা, সাবধান বাংলাদেশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উন্মত্ত হিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.