যদি কোন কলহপ্রিয় ব্যক্তি বলে যে, কুরআনের উপরে আমল করার অর্থই হ’ল আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নের শামিল। তবে তার জবাবে বলা হবে যে, মুমিনদের উপর অনুগ্রহের কথা বলতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ তোমাদের নিকট কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) সহ এসেছেন।لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ ‘বিশ্বাসীদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াত সমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত (কুরআন ও সুন্নাহ) শিক্ষা দেন’ (আলে ইমরান ৩/১৬৪)।
এখানে كتاب-এর উপরে حكمة-এর عطف দ্বারা عطف بيان বুঝানো হয়নি। কেননা অলংকার শাস্ত্রবিদগণ জানেন যে, এটি عطف بيان-এর স্থানই নয়। কারণ এখানে আল্লাহর ইহসান ও তাঁর রাসূলের বিভিন্ন গুণাবলী বর্ণনা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। যদি কিতাব ও হিকমত দ্বারা একই বস্ত্ত বুঝানো হয়, তাহ’লে রাসূলের গুণাবলীর মধ্যে একটির অভাব পরিলক্ষিত হবে। আর যদি হিকমত দ্বারা আল্লাহর কিতাব ছাড়া অন্য কিছু বুঝানো হয়, তবে রাসূল (ছাঃ)-এর কথা ও কর্ম ব্যতীত অন্য কি বস্ত্ত হ’তে পারে? অন্যত্র বলা হয়েছে, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের’ (নিসা ৪/৫৯)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের জন্য পৃথক পৃথকভাবে أَطِيعُوا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তুأُولِي الْأَمْرِ-এর জন্য পৃথকভাবে أَطِيعُوا শব্দ ব্যবহৃত হয়নি। বরং তাকে রাসূলের উপরে عطف করা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ রহস্য নিহিত রয়েছে। এখানে একটি أَطِيعُوا শব্দ ব্যবহার করে রাসূল ও উলিল আমরকে তার উপরে عطف করা যেত। অথবা প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক তিনটি أَطِيعُوا ব্যবহার করা যেত। তা না করে আল্লাহ ও রাসূলের জন্য পৃথক দু’টি أَطِيعُوا বলার উদ্দেশ্য হ’ল দু’টি আইন সমষ্টির দিকে ইঙ্গিত করা। যার একটি আল্লাহর সাথে সরাসরি সম্পর্কিত হয়ে ‘কিতাবুল্লাহ’ এবং অপরটি রাসূলের সাথে সম্পর্কিত হয়ে ‘সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ’। আর যেহেতু উলুল আমরের জন্য পৃথক কোন আইন সমষ্টি নেই, বরং তারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যশীল, সেহেতু তাদের জন্য পৃথকভাবে أَطِيعُوا শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য দলীল মাত্র দু’টি : কুরআন ও সুন্নাহ।
যদি বলা হয় রাসূলের হুকুম মূলতঃ আল্লাহর হুকুম, তাহ’লে প্রশ্ন থেকে যায় যে, আল্লাহর সাথে রাসূলের উল্লেখের কারণ কি? দেখুন অন্যত্র কেবল রাসূলের আনুগত্য এবং তার নির্দেশাবলী প্রতিপালনের কঠোর নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয়ে তোমাকে ফায়ছালা দানকারী হিসাবে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালার ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনরূপ দ্বিধা-সংকোচ না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)। এ আয়াতে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, রাসূলের নির্দেশাবলীর উপর আমল করা ঠিক অনুরূপ অপরিহার্য, যেরূপ কুরআনের উপর আমল করা অপরিহার্য। পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, কুরআন অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্রে আমাদের নিকটে পৌঁছেছে। এদিক থেকে কুরআন চূড়ান্ত দলীল হিসাবে স্বীকৃত। কিন্তু হাদীছের মর্যাদা অনুরূপ নয়। কারণ অনেক কম সংখ্যক হাদীছ এমন আছে যা মুতাওয়াতির বলে পরিগণিত। এ পার্থক্য কেবল সবল ও দুর্বল বর্ণনার প্রেক্ষিতে পরিদৃষ্ট হয়। অন্যথায় কোন হাদীছ যদি ছহীহ প্রমাণিত হয়, তবে তা অবশ্য পালনীয় হওয়ার ব্যাপারে উক্ত হাদীছ ও কুরআনের আয়াতের মধ্যে কোন পার্থক্য হবে না। কেননা হাদীছ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে,وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى- إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُوحَى ‘রাসূল কোন মনগড়া কথা বলেন না, যা বলেন তা অহী ব্যতীত নয়’ (নাজম ৫৩/৩-৪)। আর একারণেই আল্লাহ বলেন,مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল’ (নিসা ৪/৮০)।
যে সকল মুজাদ্দিদ (?) যেমন মাওলানা মওদূদী- হাদীছকে কেবল ঐতিহাসিক মর্যাদা প্রদান করে থাকেন, তাদের জন্য নিম্নে বর্ণিত আয়াতগুলি পুনঃ পুনঃ পাঠ করা উচিত।لاَ تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ- ‘রাসূলের আহবানকে তোমরা পরস্পরের প্রতি আহবানের ন্যায় গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন যারা তোমাদের মধ্য থেকে চুপিসারে চলে যায়। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সাবধান হৌক যে, ফিৎনা তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের উপর আপতিত হবে’ (নূর ২৪/৬৩)।وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا ‘রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও’ (হাশর ৫৯/৭)। وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ‘আর আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যেন তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল ১৬/৪৪)। শেষোক্ত আয়াতে اتاكم ونهاكم দু’টি ক্রিয়ারই কর্তা হলেন ‘রাসূল’ এবং তাঁর প্রতি সম্বন্ধ اسناد مجازى নয় বরং اسناد حقيقى। যদি তা না হ’ত, তাহ’লে কর্তা হিসাবে রাসূল না বলে আল্লাহ বলা হ’ত। আর আল্লাহর হুকুম সর্বাবস্থায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে আল্লাহকে কর্তা করা হয়নি। এতে বুঝা যায় যে, আল্লাহর রাসূল নিজের তরফ থেকে তোমাদের যা কিছু প্রদান করেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও।
কুরআনের আয়াত সমূহের সঠিক অর্থ সুন্নাহ ব্যতিরেকে নির্ধারিত হ’তে পারে না। যেমন কুরআন বলেছে,أَقِيمُوا الصَّلاَةَ এর অর্থ ‘তোমরা ছালাত কায়েম কর’ (বাক্বারাহ ২/৪৩)। যদি সুন্নাহ থেকে না নেয়া হয়, তাহ’লে উক্ত হুকুম প্রতিপালনে এক অদ্ভূত রকমের বিশৃংখলা দেখা দেবে। অনুরূপভাবে وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ (এবং তোমরা রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’ (ঐ)-এর অর্থ ও উদ্দেশ্য একেবারে অজানা থেকে যাবে। এমনিভাবে ছালাত, যাকাত, সূদ-জুয়া কোনকিছুরই সঠিক অর্থ অনুধাবন করা সম্ভব হবে না এবং গোটা কুরআন পাঠের পরও ইবাদত ও লেনদেনের কোন পূর্ণ নকশা তৈরী হবে না।
হযরত ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) একবার কিছু লোকের সম্মুখে শাফা‘আত সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করেন। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, হে আবু জুনায়েদ! আপনি আমাদের নিকট এমনসব হাদীছ বলছেন, যার মূল আমরা কুরআনে পাই না। ইমরান (রাঃ) একথা শুনে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন এবং বলেন, তোমরা কি কুরআন পাঠ করোনি? তোমরা কি কুরআনের কোথাও ছালাত সমূহের রাক‘আত সংখ্যার বিবরণ পেয়েছ? তোমরা কি শ্রবণ করোনি যে, কুরআন স্বয়ং ঘোষণা করেছে, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ ‘রাসূল যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর’ (হাশর ৫৯/৭)।
সুন্নাত ও অভিধান :
ছাহাবায়ে কেরাম ভাষাবিদ ও অলংকার শাস্ত্রে পন্ডিত হওয়া সত্ত্বেও কোন কোন আয়াতের অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর শরণাপন্ন হ’তেন। যেমন হজ্জ ফরযের আয়াত وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ করা ঐ ব্যক্তির উপর ফরয করা হ’ল, যার এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/৯৭) নাযিল হ’লে ছাহাবী আক্বরা‘ বিন হাবেস (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি এ বছরের জন্য, না প্রতি বছরের জন্য? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, একজন মুমিনের জীবনে মাত্র একবার ফরয’।[1] (২) তায়াম্মুমের আয়াত فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا ‘অতঃপর যদি পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর’ (মায়েদাহ ৫/৬) নাযিল হ’লে ছাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারেন নি যে, এটা কেবল ওযূর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না ফরয গোসলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ফলে সফর অবস্থায় ‘আম্মার বিন ইয়াসের ও ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) উভয়ের ফরয গোসলের হাজত হ’লে পানি না পেয়ে ওমর গোসল করতে না পারায় ছালাত আদায় করেন নি। কিন্তু ‘আম্মার স্বীয় ইজতিহাদের ভিত্তিতে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে তায়াম্মুম করেন। ঘটনা জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুমের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন এবং বললেন, তায়াম্মুম হ’ল ওযূর বিকল্প এবং ওযূ ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে একই নিয়মে প্রযোজ্য।[2] যদি রাসূল (ছাঃ) এখানে তায়াম্মুমের সঠিক অর্থ নির্ধারণ না করে দিতেন, তাহ’লে ছাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ভীষণ মতানৈক্যের সৃষ্টি হ’ত এবং উক্ত বিষয়াদির চূড়ান্ত কোন ফায়ছালা কখনোই সম্ভব হ’ত না।
কখনো কালামের অর্থ সম্বোধনকৃত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ নির্ধারণ করতে সক্ষম হন না। যেমন অসুস্থ বন্ধুকে কুশল জিজ্ঞেস করলে যদি তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘ভাল আছি’ তবে তার অর্থ হয় ‘ভাল নেই’। এমনিভাবে দৈনন্দিন জীবনে কোন কোন বাক্যের অর্থ ও উদ্দেশ্য যদি সম্বোধনকৃত ব্যক্তির সাহায্য ব্যতিরেকে আমরা বুঝতে না পারি, তাহ’লে সুন্নাতের সাহায্য ছাড়া আমরা কিভাবে কুরআন অনুধাবনে সক্ষম হব?
ইবনু আবী হাতেম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদের একটি উক্তি নকল করেন। তিনি বলেন, এমন কোন বস্ত্ত নেই যার উল্লেখ কুরআনে নেই। কিন্তু আমাদের অনুভূতি তা অনুধাবনে অক্ষম। সেকারণ তা ব্যাখ্যাদানের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সম্বোধন করে বলেন,وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ ‘আর আমরা তোমার নিকটে নাযিল করেছি কুরআন, যাতে তুমি মানুষকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে’ (নাহল ১৬/৪৪)। ইমাম শাফেঈ বলেন, ছহীহ সুন্নাহ কখনোই কুরআনের পরিপন্থী নয়। বরং তার পরিপূরক। কেননা কোন ব্যক্তিই রাসূলের ন্যায় কুরআন বুঝতে সক্ষম নয়’। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-এর একটি বৃহৎ গ্রন্থ রয়েছে যার নামই হ’লموافقه صحيح المنقول لصريح المعقول (‘বিশুদ্ধ হাদীছ সর্বদা বিশুদ্ধ জ্ঞানের অনুকূল হওয়া’)। যা বৈরূত ছাপায় (১৯৮৫) দুই খন্ডে ৪৪৬+৪৮৭=৯৩৩ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত। মাকহূল বলেন,الْقُرْآنُ أَحْوَجُ إِلَى السُّنَّةِ مِنَ السُّنَّةِ إِلَى الْقُرْآنِ- ‘সুন্নাহর জন্য কুরআনের প্রয়োজনীয়তার চাইতে কুরআনের জন্য সুন্নাহর প্রয়োজনীয়তা অধিক’। ইয়াহইয়া ইবনে কাছীর বলেন, السُّنَّةُ قَاضِيَةٌ عَلَى الْكِتَابِ، وَلَيْسَ الْكِتَابُ بِقَاضٍ عَلَى السُّنَّةِ- ‘সুন্নাহ কুরআনের উপর ফায়ছালাকারী, কিন্তু কুরআন সুন্নাহর উপর ফায়ছালাকারী নয়’। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,مَا أَجْسُرُ عَلَى هَذَا أَنْ أَقُولَهُ، وَلَكِنِّي أَقُولُ: إِنَّ السُّنَّةَ تُفَسِّرُ الْكِتَابَ وَتُبَيِّنُهُ- ‘আমি এটা বলতে দুঃসাহস করি না। তবে আমি বলব যে, সুন্নাহ কিতাবকে ব্যাখ্যা করে ও তার মর্মকে স্পষ্ট করে’ (কুরতুবী)। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, এর দ্বারা তাঁদের উদ্দেশ্য হ’ল, সুন্নাহ আল্লাহর কিতাবের জন্য ব্যাখ্যা স্বরূপ।
ইমাম আওযাঈ (মৃ. ১৫৭ হি.) জ্যেষ্ঠ তাবেঈ হাসসান বিন ‘আত্বিয়াহ (মৃ. ১২০ হি.) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেছেন, كَانَ الْوَحْيُ يَنْزِلُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَيَحْضُرُهُ جِبْرِيلُ بِالسُّنَّةِ الَّتِي تُفَسِّرُ ذَلِكَ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে (কুরআনের) অহি নাযিল হ’ত এবং তাঁর নিকটে জিব্রীল সুন্নাহ নিয়ে হাযির হ’তেন, যা সেটিকে ব্যাখ্যা করে দিত’ (কুরতুবী)।
এক্ষণে যারা সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে ইবাদতের সময় ও পদ্ধতি সমূহ কেবলমাত্র কুরআন থেকে নেওয়ার চেষ্টা করেন, তারা এক হাস্যকর তাবীলের আশ্রয় নিবেন।
উদাহরণ স্বরূপ : إِذَا نُودِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ‘জুম‘আর দিন ছালাতের জন্য আযান দেওয়া হ’লে আল্লাহর যিকরের দিকে দ্রুত ধাবিত হও’ (জুম‘আ ৬২/৯)। সুন্নাহকে বাদ দিলে এ আয়াতের অর্থ নির্ধারণে সমস্যা দেখা দিবে। যেমন (১) এ নির্দেশ জুম‘আর দিনের কোন্ ছালাতের জন্য? (২) যদি সেটা পৃথক ছালাত হয়, তবে তা কখন অনুষ্ঠিত হবে? মুনকিরে হাদীছ পন্ডিত বলবেন, এক্ষেত্রে সুন্নাহর প্রয়োজন নেই। কেননা وَذَرُوا الْبَيْعَ এবং وَابْتَغُوا مِنْ فَضْلِ اللهِ আয়াতের এই দুই অংশ একথার প্রমাণ বহন করে যে, জুম‘আর ছালাত যোহরের সময় অনুষ্ঠিত হবে। কেননা বেচা-কেনা এবং রিযিক অনুসন্ধান দুপুরের সময়েই হয়ে থাকে। অথচ এই ব্যাখ্যা কতই না দুর্বল। কেননা দুপুরের খরতাপে মূলতঃ বিশ্রামের সময়। আর বেচা-কেনা ও রিযিক অনুসন্ধান সকালে ও সন্ধ্যায় হয়ে থাকে। অতএব যদি এক্ষেত্রে সুন্নাহ আমাদেরকে নির্দেশনা না দিত, তাহ’লে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ে যেতাম।
এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে ঘোষণা করে গেছেন, تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ- ‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি বস্ত্ত রেখে যাচ্ছি। যতদিন তোমরা তা মযবুতভাবে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাহ’ (মুওয়াত্ত্বা হা/৩৩৩৮)। আর একারণেই ছাহাবায়ে কেরাম কোন মাসআলা সম্পর্কে রায় প্রদান করার পর রাসূলের কোন হাদীছ অবগত হ’লে সঙ্গে সঙ্গে নিজের রায় পরিত্যগ করতেন। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা জানার জন্য ইবনু আব্দিল বার্র-এর مفةاج الجنة, খাওলীর مفةاح السنة, সৈয়ূতীর مفتاح الجنة فى الاحةجاج بالسنة এবং ফুল্লানীরإيقاظ همم أولي الأبصار للاقتداء بسيد المهاجرين والأنصار প্রভৃতি কিতাব দ্রষ্টব্য।[3]
অতএব যদি কেবলমাত্র কুরআনকেই শরী‘আতের উৎস ধরা হয় এবং হাদীছ প্রদত্ত ব্যাখ্যাকে উপেক্ষা করা হয়, তাহ’লে ইসলামের পূর্ণতার যে ঘোষণা,الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩) শুনানো হয়েছে, তা মূল্যহীন হয়ে যাবে।
(১) এ কারণেই ওমর (রাঃ) বলতেন, সত্ত্বর তোমাদের নিকট এমন লোকদের আগমন ঘটবে, যারা কুরআনের অস্পষ্ট আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা নিয়ে তোমাদের সাথে কলহে লিপ্ত হবে। তোমরা সুন্নাহ দ্বারা তার মুকাবিলা করবে। কেননা আহলুল হাদীছগণ আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত হয়ে থাকেন’।[4]
(২) খারেজীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইবনে আববাসকে পাঠানোর সময় হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে উপদেশ দেন, যেন তিনি হাদীছ দিয়ে তাদের মুকাবিলা করেন। ইবনু আববাস বললেন, আমি তো সুন্নাহর তুলনায় কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞান রাখি। কেননা কুরআন তো আমাদের ঘরেই নাযিল হয়েছে। আলী বললেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তুالقرآن جمال ذو وجوه ‘কুরআনে (সংক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে) বিভিন্ন অর্থ গ্রহণের সুযোগ থাকতে পারে’। ফলে তাতে ফায়ছালা কিছুই হবে না। অতএব তুমি সুন্নাহ দ্বারা দলীল পেশ করবে। তাহ’লে তারা বাঁচার পথ পাবে না’। অতঃপর ইবনু আববাস (রাঃ) খারেজীদের সঙ্গে সুন্নাহ দ্বারা বিতর্কে অবতীর্ণ হন ও তারা লা-জওয়াব হয়ে যায়।[5]
(৩) তাওয়াফরত অবস্থায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বছরার বিখ্যাত ফক্বীহ জাবের ইবনে যায়েদকে বলেন, সাবধান! কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ব্যতিরেকে অন্য কিছু দ্বারা ফৎওয়া দিবে না। যদি তুমি এ নীতি লংঘন কর, তাহ’লে নিজে ধ্বংস হবে এবং অন্যকেও ধ্বংস করবে’।[6]
(৪) সাঈদ ইবনু জুবায়ের বলতেন, কোন কথা আমল ব্যতিরেকে এবং কোন কথা বা আমল নিয়ত ব্যতিরেকে কবুল হয় না। এমনিভাবে কোন কথা, আমল ও নিয়ত অতক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় না, যতক্ষণ না তা সুন্নাহ মোতাবেক হয়’।[7]
হাদীছের শারঈ মর্যাদা ও তার উদ্দেশ্য :
এ সত্য ভুললে চলবে না যে, শারঈ ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীছের ওযন এক নয়। কেননা কুরআন قطعى الثبوت এবং হাদীছ ظنى বলে পরিগণিত। এ কারণে যদি কোন হাদীছ কুরআন মজীদের কোন চূড়ান্ত হুকুমের পরিপন্থী হয়, তবে তা গ্রহণ করা যাবে না। এক্ষণে সুন্নাহ শরী‘আতের উৎস হওয়ার উদ্দেশ্য হ’ল-
(১) যদি কোন ছহীহ সুন্নাহ দ্বারা এমন হুকুম পাওয়া যায় যে সম্পর্কে কুরআন নীরব রয়েছে (২) কিংবা তাতে উক্ত হুকুমের কেবল একটি দিক বর্ণিত হয়েছে (৩) অথবা উক্ত বর্ণনায় কোন অস্পষ্টতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর সমন্বয়ে একটি বিস্তারিত হুকুম বের করতে হবে। নিম্নের উদাহরণ সমূহ দ্রষ্টব্য।-
উদাহরণ (১) কুরআনে কেবল ছালাতের হুকুম রয়েছে। কিন্তু তার পদ্ধতি বর্ণিত হয়নি। সুন্নাহ তা বর্ণনা করেছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বললেন, صَلُّوْا كَمَا رَأَيْتُمُوْنِىْ أُصَلِّىْ ‘তোমরা ছালাত আদায় কর সেভাবে, যেভাবে আমাকে ছালাত আদায় করতে দেখছ’...।[8] (২) কুরআন কেবল বিবাহ হালাল ও যেনা হারাম বলেছে। কিন্তু বিবাহের পদ্ধতি বলেনি। সুন্নাহ তা বলে দিয়েছে। তাছাড়া স্ত্রীর ফুফু ও খালাকে বিবাহ করা হারাম করে দিয়েছে। (৩) কুরআনে কেবল যাকাত ফরয করা হয়েছে। কিন্তু যাকাতের নিছাব, তা আদায়ের সময়কাল এবং কি কি মালের যাকাত দিতে হবে, সবকিছু সুন্নাহ বলে দিয়েছে। (৪) কুরআনে কেবল সূদ হারামের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সূদ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে এবং উক্ত নিষিদ্ধ করণের ভিত্তিই বা কিসের উপর তা জানা যায়নি। হাদীছ এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছে- সমান ওযনে একই প্রকারের জিনিস নগদে বিক্রয় করা যাবে। অতিরিক্ত লেনদেন সূদ হবে’।[9] হাদীছে সূদ-এর ব্যাখ্যা পাওয়া গেল। কিন্তু সূদ নিষিদ্ধ করণের উদ্দেশ্য ও অন্যান্য বিষয় বিস্তারিত জানা গেল না। সেকারণ ওমর ফারূক (রাঃ) বলেছিলেন, রাসূল (ছাঃ) চলে গেলেন। কিন্তু সূদের রহস্য আমাদের নিকটে পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি’।[10] ফলে মুজতাহিদ বিদ্বানগণ স্ব স্ব ইজতিহাদের আলোকে সূদ হারাম হওয়ার কারণ নির্দিষ্ট করেছেন। এক্ষণে যদি এ হাদীছটি না পাওয়া যেত, তাহ’লে কিসের ভিত্তিতে ইজতিহাদ করা হতো? অতএব সূদের বিষয়ে কুরআন মূল এবং হাদীছকে তার ব্যাখ্যা গণ্য করেই হুকুম বের করতে হবে।
(৫) কুরআনে একই সাথে দুই বোনকে বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে (নিসা ৪/২৩)। কারণ তাতে দুই বোনের মধ্যকার রক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়বে। যা আল্লাহর নিকটে অত্যন্ত অপসন্দনীয় কাজ। আয়াতের উদ্দেশ্য উপলব্ধি করে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ভাগিনেয়ী ও খালা এবং ভাইঝি ও ফুফুকে একত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ করলেন। কেননা সেক্ষেত্রেও রক্ত সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া অপরিহার্য হবে।
(৬) কুরআনে হজ্জ ফরয করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ম বলা হয়নি। তাই রাসূল (ছাঃ) বললেন,خُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُمْ ‘হে জনগণ! তোমরা আমার নিকট থেকে হজ্জ ও কুরবানীর নিয়ম-কানূন শিখে নাও’..।[11]
উপরের উদাহরণগুলি থেকে স্পষ্ট হয়েছে যে, কুরআন ও হাদীছ উভয়ের সমন্বয়ে মাসআলা সমূহ বের করতে হবে। এমন নয় যে, সুন্নাহর পৃথক শারঈ মর্যাদা রয়েছে এবং কুরআন থেকে সম্পূর্ণরূপে দৃষ্টি সরিয়ে কেবল সুন্নাহ দ্বারা হুকুম বের করা যেতে পারে। আবু ইসহাক শাত্বেবী (মৃ. ৭৯০ হি.) স্বীয় ‘মুওয়াফিক্বাত’ গ্রন্থে সুন্নাহকে আল্লাহর কিতাবের সাথে সমন্বয় সাধনের বিভিন্ন পন্থার উপর আলোকপাত করে বলেন, সুন্নাহতে যেসব আহকাম পাওয়া যায়, তা সবই কুরআনে বিদ্যমান। কিন্তু সে সম্পর্কে কেবল তারাই অবগত হ’তে পারেন, যারা কুরআন সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন এবং সে সম্পর্কে গবেষণা করেন’।[12]
দিরায়াত বা বুদ্ধিলব্ধ জ্ঞানের মূলনীতি :
হাদীছের যাচাই ও বর্ণনানীতি যেমন কুরআন হ’তে গৃহীত। অনুরূপভাবে বুদ্ধিলব্ধ জ্ঞানের নীতিও কুরআন হ’তে গৃহীত। যেমন হযরত আয়েশা (রাঃ) সম্পর্কে কিছু মুনাফিক মিথ্যা অপবাদ আরোপ ও তা ব্যাপকভাবে প্রচার করলে কিছু মুমিন তাতে সন্দিহান হয়ে পড়েন। এ সময় আল্লাহ নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন,وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُمْ مَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَتَكَلَّمَ بِهَذَا سُبْحَانَكَ هَذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ ‘আর যখন তোমরা এ অপবাদ শুনেছিলে তখন কেন তোমরা একথা বলোনি যে, এ বিষয়ে আমাদের কিছুই বলা উচিৎ নয়। আল্লাহ পবিত্র। নিশ্চয়ই এটি গুরুতর অপবাদ’ (নূর ২৪/১৬)। অত্র আয়াতে একথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এই ভিত্তিহীন সংবাদ শ্রবণের পর এর আলোচনা করাই তোমাদের জন্য উচিত ছিল না। কেননা তা একেবারেই অবিবেচিত হওয়ার দরুণ বুদ্ধিলব্ধ জ্ঞানের দিক দিয়ে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
কুরআন অনুধাবনের উপায় সমূহ :
(১) আরবী ভাষায় পান্ডিত্য অর্জন করা।
আল্লাহ বলেন, إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ‘আমরা উক্ত কিতাব নাযিল করেছি আরবী কুরআন হিসাবে, যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (ইউসুফ ১২/২)। কুরআন সাধারণভাবে সকলের বোধগম্য হিসাবে নাযিল হয়েছে। যাতে এ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা সহজ হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ- ‘আমরা কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, উপদেশের জন্য। অতএব আছ কি কোন উপদেশ গ্রহণকারী?’ (ক্বামার ৫৪/১৭)। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, কুরআনের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ ও গভীর মর্ম সকলের জন্য সহজ বোধ্য। এজন্য আল্লাহ বলেছেন,فَلَوْلاَ نَفَرَ مِنْ كُلِّ فِرْقَةٍ مِنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنْذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ ‘অতএব তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং ফিরে এসে নিজ কওমকে (আল্লাহর নাফরমানী হ’তে) ভয় প্রদর্শন করে, যাতে তারা সাবধান হয়’ (তওবা ৯/১২২)। এজন্য একদল মুমিনকে অবশ্যই কুরআনে পান্ডিত্য অর্জন করতে হয়। যাতে মানুষ কুরআন থেকেই যুগ-জিজ্ঞাসার জওয়াব পেতে পারে। কুরআন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ছাড়াই তরজমা ও তাফসীরে দুঃসাহস করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ বলেন,وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولاً- ‘যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার পিছে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও হৃদয় প্রত্যেকটির বিষয়ে তোমরা (ক্বিয়ামতের দিন) জিজ্ঞাসিত হবে’ (ইসরা ১৭/৩৬)।
(২) ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী অনুধাবন করা।
প্রথম শতাব্দী হিজরীতে রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন ফিৎনার উদ্ভব ঘটলে এবং নওমুসলিমদের আধিক্য ঘটলে আক্বীদাগত বিষয়ে মতভেদ দেখা দেয়। সে সময় একদল লোক তাক্বদীর নিয়ে কুরআন-হাদীছের অপব্যাখ্যা শুরু করে। এ সময় জনৈক ব্যক্তি খলীফা ওমর বিন আব্দুল আযীয (৯৯-১০১ হি.)-এর নিকট বিষয়টির সমাধান জানতে চান। তখন তিনি বলেন, তোমাদের পেশকৃত আয়াত সমূহ ছাহাবীগণও পড়েছেন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা জানতেন, যা তোমরা জানো না। আর এর সঠিক ব্যাখ্যা বুঝেই তাঁরা তাক্বদীরে বিশ্বাসী ছিলেন। মানুষ নিজেই নিজের ভাল-মন্দের মালিক নয়, এটা জেনেও তাঁরা সৎকর্ম করতেন এবং অন্যায় কাজ থেকে ভীত হ’তেন।[13]
(৩) আল্লাহভীরু ও হাদীছপন্থী ওস্তাদের নিকট কুরআন শিক্ষা করা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন এবং তিনি কুরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে মানুষকে পরিশুদ্ধ করেন (আলে ইমরান ৩/১৬৪)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি আমাদেরকে কুরআনের একেকটি সূরা শিখাতেন’ (মুসলিম হা/৪০৩)। একবার তিনি চারজন ছাহাবীর নাম করে বললেন, তোমরা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ, সালেম, মু‘আয বিন জাবাল ও উবাই বিন কা‘ব-এর নিকট থেকে কুরআন গ্রহণ কর’ (বুখারী হা/৪৯৯৯)। সালেম ছিলেন ছাহাবী আবু হুযায়ফার গোলাম (ঐ, ফাৎহুল বারী)। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী বনু সুলায়েম গোত্রের রে‘ল ও যাকওয়ান শাখার আমন্ত্রণে তাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ শিখানোর জন্য রাসূল (ছাঃ) আনছারদের মধ্য হ’তে ৭০ জন শ্রেষ্ঠ ক্বারী ছাহাবীকে প্রেরণ করেন। যাদেরকে তারা বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে হত্যা করে (মুসলিম হা/৬৭৭ (১৪৭)। যা বি’রে মা‘ঊনার ঘটনা হিসাবে প্রসিদ্ধ। যাদের বিরুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) ফজর ছালাতে মাসব্যাপী কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেন (বুখারী হা/৪০৮৮)।
ছাহাবী আবুদ্দারদা (রাঃ) বলেন, তুমি কখনোই আলেম হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি ছাত্র হবে। আর তুমি কখনোই আলেম হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি ইলম অনুযায়ী আমল করবে’ (দারেমী হা/২৯৩, সনদ হাসান)। জ্যেষ্ঠ তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (৩৩-১১০ হি.) বলেন, নিশ্চয়ই কুরআন-হাদীছের ইলম হ’ল দ্বীন। অতএব তোমরা দেখ, কার নিকট থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ’ (মুক্বাদ্দামা মুসলিম)।
(৪) দুনিয়াদার আলেম ও মুফাসসির হ’তে সাবধান থাকা।
মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন, তোমাদের পরে এমন একটা দিন আসছে, যখন মানুষের সম্পদ বেড়ে যাবে। সকলের সামনে কুরআন খোলা থাকবে। মুমিন-মুনাফিক, পুরুষ-নারী, ছোট-বড়, গোলাম-মনিব সবাই কুরআন পড়বে। আশংকা হয়, সে সময় কেউ বলে উঠবে, কি ব্যাপার! আমি কুরআন পড়ি, অথচ কেউ তো আমাকে অনুসরণ করে না। তখন সে বলবে, লোকেরা আমার অনুসরণ করবে না, যতক্ষণ না আমি তাদের জন্য নতুন কিছু উদ্ভাবন করব। অতএব তোমরা ঐ ব্যক্তি থেকে এবং তার উদ্ভাবিত বিষয় থেকে দূরে থাক। আর আমি তোমাদেরকে জ্ঞানী ব্যক্তির পদস্খলন থেকে সাবধান করছি। কেননা শয়তান কখনো জ্ঞানী ব্যক্তির যবান দিয়ে ভ্রান্ত কথা বলিয়ে দেয়। আবার কখনো মুনাফিক ব্যক্তি সঠিক কথা বলে। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে মু‘আয আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন! আমরা সেটা কিভাবে বুঝব? তিনি বললেন, তোমরা জ্ঞানী ব্যক্তির অস্পষ্ট বক্তব্য সমূহ হ’তে দূরে থাক। তবে জ্ঞানী ব্যক্তির সামান্য পদস্খলন যেন তোমাকে তার থেকে একেবারে দূরে সরিয়ে না দেয়। হ’তে পারে তিনি ফিরে আসবেন ও হক জানতে পারলে তিনি তা গ্রহণ করবেন। কেননা হকের একটি বিশেষ জ্যোতি আছে’।[14]
(৫) শব্দের সূক্ষ্ম তত্ত্ব অনুযায়ী মর্মার্থ পেশ করা।
কুরআন কুরায়েশদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। যা অন্যান্য আরবী উপভাষা সমূহ থেকে অনেক স্থানে পৃথক ভাব প্রকাশ করে। অতএব একই আরবীর দু’টি অর্থ হ’লে সেখানে কুরায়শী পাঠ অগ্রাধিকার পাবে। অনুরূপভাবে শব্দগুলির রূপক অর্থ ব্যবহারের আগে তার প্রকৃত অর্থ জানা আবশ্যক। যার মাধ্যমে অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বেরিয়ে আসতে পারে। যা বান্দার প্রভূত কল্যাণ সাধন করে। যেমন (ক) আল্লাহ বলেন, وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ- ‘আর চন্দ্র। তার জন্য আমরা মনযিল সমূহ নির্ধারণ করেছি। অবশেষে তা পুরাতন খেজুর কাঁদির ডাটার রূপ ধারণ করে’ (ইয়াসীন ৩৬/৩৯)। কারণ যখন এই ডাটা পুরাতন হয়, তখন তা সরু, বাঁকা ও ফেকাসে হয়। এর মাধ্যমে চাঁদের শুরু, পূর্ণ ও শেষ তিনটি অবস্থা বুঝানো হয়েছে। যার মধ্যে পৃথিবীর আহ্নিক গতি এবং চন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য নিহিত রয়েছে। এর অর্থ যদি ‘পুরাতন খেজুর শাখার আকার ধারণ করে’ (মুজীবুর রহমান, মুহিউদ্দীন খান ও ই.ফা.বা.) বলা হয়, তবে সেটা ভুল হবে। কেননা তার ডাল-পালা থাকতে হবে। অথচ চন্দ্রের ডাল-পালা থাকে না। বড় কথা চন্দ্রের তিনটি বৈজ্ঞানিক তথ্য থেকে মানুষ বঞ্চিত হবে।
(খ) একইভাবে কুরআনে যে সমস্ত আয়াতে ইহূদী-নাছারাদের বিষয়ে আলোচনা এসেছে, সেখানে মর্ম উদ্ধারের জন্য তাদের আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। যেমন আল্লাহ বলেন, وَقَالُوا اتَّخَذَ اللهُ وَلَدًا ‘আর তারা বলে আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’ (বাক্বারাহ ২/১১৬)। অন্যত্র এসেছে, وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللهِ ‘এবং নাছারারা বলে মসীহ ঈসা আল্লাহর পুত্র’ (তওবা ৯/৩০)। অন্য স্থানে বলা হয়েছে, إِنَّ اللهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ‘যারা বলে যে, মসীহ ঈসা হ’ল আল্লাহ’ (মায়েদাহ ৫/৭২)। আরেক স্থানে এসেছে, قَالُوا إِنَّ اللهَ ثَالِثُ ثَلاَثَةٍ ‘যারা বলে আল্লাহ তিন উপাস্যের একজন’ (মায়েদাহ ৫/৭৩)।
উপরোক্ত চারটি আয়াতের মর্ম এক নয়। বরং এর মধ্যে খ্রিষ্টানদের চারটি উপদলের ভুল বিশ্বাসের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। প্রথম দলের বিশ্বাস ছিল, ঈসা আল্লাহর পুত্র। দ্বিতীয় দলের বিশ্বাস ছিল, ঈসা সরাসরি আল্লাহর পুত্র নন। তবে তিনি তাকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। এই গ্রুপটি ‘এডপশনিস্ট’ (Adoptionist) বলে পরিচিত। তৃতীয় দলের বিশ্বাস ছিল, ঈসা নিজেই আল্লাহ। আর চতুর্থ দলের বিশ্বাস হ’ল, ঈসা তিন উপাস্যের একজন। অর্থাৎ আল্লাহ, মারিয়াম ও পাক রূহ মসীহ ঈসা। এদেরকে ত্রিত্ববাদী বলা হয়। বর্তমান খ্রিষ্টানদের অধিকাংশ এতেই বিশ্বাসী। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর দলগুলি নিজেদের মধ্যে মতভেদ করল। অতএব অবিশ্বাসীদের জন্য দুর্ভোগ সেই ভয়ংকর দিবস (ক্বিয়ামত) আগমনের দিন’ (মারিয়াম ১৯/৩৭)।
উল্লেখ্য যে, খ্রিষ্টানদের চারটি দলের নাম হ’ল, ক্যাথলিক, অর্থোডক্স, প্রোটেস্ট্যান্ট ও রেস্টোরেশনিষ্ট। এছাড়াও রয়েছে ‘এডপশনিস্ট’ সহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু দল। বর্তমান পোপ ফ্রান্সিস ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের নেতা। যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী।
(গ) অন্যত্র বলা হয়েছে, يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِنَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ‘তারা তো পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিকের কিছু কিছু বিষয় অবগত’ (রূম ৩০/৭)। কিন্তু এর অনুবাদ যদি করা হয়, ‘তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্বন্ধে অবগত’ (মুজীবুর রহমান, মুহিউদ্দীন, ই.ফা.বা.) তাহ’লে ভুল হবে। কারণ ظَاهِرًا শব্দটির তানভীন এসেছে تقليل বা স্বল্পতা বুঝানোর জন্য।
নিঃসন্দেহে মানুষ তার বাহ্যিক জীবনের অল্প কিছুই মাত্র জানে। তারা বহু কিছুর খবর রাখে না। আমেরিকার ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের চমকে দেওয়ার মত সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৯৯.৯৯ শতাংশ প্রজাতি এখনো অনাবিষ্কৃত! পৃথিবীতে আরও এক হাযার কোটি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে, যার কথা বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত জানেন না। এ পর্যন্ত যত জীবাণু আবিষ্কৃত হয়েছে, তার এক লাখ গুণ বেশী জীবাণু এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। আরও ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) জীবাণু নিয়ে গবেষণা করতে হবে (আত-তাহরীক, ১৯/৯ সংখ্যা, জুন’১৬)। তাই মহাবিশ্বের বিশালত্ব নিয়ে কল্পনা করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাই ছালাতের শুরুতেই সূরা ফাতিহার মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা করে বলা হয়ে থাকে,الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎ সমূহের প্রতিপালক’। অর্থাৎ পৃথিবী ছাড়াও যে কত জগৎ রয়েছে, তার হিসাব কেবল আল্লাহই জানেন। তাই আমাদের কৃতজ্ঞতা পূর্ণ সকল প্রশংসা কেবল তাঁরই জন্য। যিনি খাদ্য দিয়ে, পানি দিয়ে ও বায়ু দিয়ে এ পৃথিবীকে আমাদের জন্য বসবাস যোগ্য করেছেন। অতএব মানুষ তার বাহ্যিক জীবনের অতীব সামান্য কিছু জানে। সবকিছু জানার প্রশ্নই ওঠে না। অতএব কুরআন অনুধাবনের সময় বা তাফসীর করার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলি অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন- আমীন!
[1]. আবুদাঊদ হা/১৭২১; আহমাদ হা/২৩০৪; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৯৭ আয়াত।
[2]. বুখারী হা/৩৩৮; মুসলিম হা/৩৬৮; মিশকাত হা/৫২৮।
[3]. এ ব্যাপারে জানার জন্য আমাদের ডক্টরেট থিসিস-এর ‘মূলনীতি’ অধ্যায়ের ১ম মূলনীতি (১৩৩-১৫০ পৃ.) পাঠ করুন।- লেখক।
[4]. দারেমী হা/১১৯, আব্দুল্লাহ বিন ছালেহ-এর কারণে যঈফ। কিন্তু বাকী সকল সনদ ছহীহ; তাহকীক : ফাওয়ায আহমদ (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘আরাবী, ১ম সংস্করণ ১৪০৭হি./১৯৮৭ খৃ.)।
[5]. সৈয়ূত্বী, আদ-দুর্রুল মানছূর (বৈরূত : দারুল ফিকর, ১৯৯৩ খৃ.) ১/৪০।
[6]. দারেমী হা/১৬৪, সনদ হাসান।
[7]. সৈয়ূত্বী, মিফতাহুল জান্নাহ (মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ৩য় সংস্করণ ১৪০৯ হি./১৯৮৯ খৃ.) ৬৪ পৃ.।
[8]. বুখারী হা/৬৩১, ৬০০৮, ৭২৪৬; মিশকাত হা/৬৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৬।
[9]. মুসলিম হা/১৫৮৭; মিশকাত হা/২৮০৮।
[10]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ২৭৫ আয়াত।
[11]. আহমাদ হা/১৪৪৫৯, মুসলিম হা/১২৯৭ (৩১০); মিশকাত হা/২৬১৮।
[12]. আবু ইসহাক শাত্বেবী, আল-মুওয়াফিক্বাত ফী উছূলিশ শারী‘আহ (বৈরূত : দারুল মা‘রিফাহ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৪২৫ হি./২০০৪ খৃ.) ‘সুন্নাহ’ অধ্যায় ৪/৩৮৯-৪৬০ পৃ.।
[13]. আবুদাঊদ হা/৪৬১২, সংক্ষেপায়িত; ছহীহ মাক্বতূ‘।
[14]. আবুদাঊদ হা/৪৬১১, ছহীহ মাওকূফ।