উত্তর :
ইমাম আবু হামেদ মুহাম্মাদ আল-গাযালী তূসী (৪৫০-৫০৫ হিঃ) প্রণীত
গ্রন্থসমূহে বিশেষ করে তাঁর ‘এহইয়াউ ‘উলূমিদ্দীন’ ‘কিমিয়ায়ে সা‘আদাত’
প্রভৃতি গ্রন্থে অনেক শিক্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ সমূহ রয়েছে। কিন্তু
সেগুলি এবং তাঁর অধিকাংশ গ্রন্থ ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা এবং অসংখ্য জাল ও
যঈফ হাদীছে পরিপূর্ণ। সেকারণ কাযী আয়ায, মুহাম্মাদ ফিহরী আন্দালুসী,
ত্বারতূসী, মুহাম্মাদ ইবনু আলী মাযেরী, শামসুদ্দীন যাহাবী (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১৯/৩২৭-৪০), ইবনুল জাওযী (তালবীসু ইবলীস ১৪৯ পৃঃ), ইবনু কাছীর (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১২/১৭৪), শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৭১, ১০/৫৫) প্রমুখ বিদ্বানগণ তাঁর প্রণীত কিতাব সমূহ পড়ার ব্যাপারে সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, তীক্ষ্ণ প্রতিভাধর ইমাম গাযালীর সংক্ষিপ্ত জীবনে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। যেমন (১) তিনি জীবনের শুরুতে ‘ফালসাফা’ তথা দর্শন শাস্ত্রের প্রতি অনুরক্ত হন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে আসেন এবং এর তীব্র বিরোধিতা করেন। অতঃপর (২) তিনি ইলমুল কালাম তথা তর্কশাস্ত্রের দিকে মনোযোগী হন এবং এর উছূল তথা মূলনীতি বিষয়ে বুৎপত্তি অর্জন করেন। এসময় তিনি দার্শনিকদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ও ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ উপাধিতে ভূষিত হন। এরপর (৩) তিনি ইলমুল কালাম থেকে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাতেনী মাযহাব গ্রহণ করেন। অতঃপর (৪) তিনি বাতেনী মাযহাব ছেড়ে তাছাউওফের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সব মাযহাবেই তিনি দক্ষতা অর্জন করেন এবং সব মাযহাবের বিরুদ্ধেই তিনি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অবশেষে তিনি তিনি হাদীছের প্রতি ঝুঁকে পড়েন এবং আহলেহাদীছ হন এবং এর উপরেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম আহমাদ ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন, ‘তিনি শেষ জীবনে আহলেহাদীছের তরীকায় ফিরে আসেন এবং ইলজামুল ‘আওয়াম আন ইলমিল কালাম’ বইটি রচনা করেন’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৭২)। এর মাধ্যমে তিনি মুসলিম জাতিকে কিতাব ও সুন্নাতের দিকে ফিরে আসার আহবান জানান। কিন্তু তাঁর ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ তাঁর পূর্বেকার লেখনীর মধ্যেই থেকে যায়। যার মাধ্যমে বহু মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন।
অতএব যারা ইসলামের সঠিক আক্বীদা ও হাদীছ শাস্ত্র সম্পর্কে সমধিক অবগত নন, তাদের জন্য গাযালীর গ্রন্থ সমূহ পাঠ করা হ’তে বিরত থাকা আবশ্যক। যদিও সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন সাপেক্ষে তাঁর মূল্যবান উপদেশ সমূহ গ্রহণ করায় কোন আপত্তি নেই।