উত্তর :
শারঈ ওযরের কারণে জুম‘আর পরিবর্তে বাড়িতে জামা‘আতে যোহরের ছালাত আদায় করা
যায়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনেছে এবং কোন ওযর বা
অসুবিধা তাকে তার অনুসরণ করতে বাধা দেয়নি, তার আদায়কৃত ছালাত আল্লাহ কবুল
করবেন না (আবূদাঊদ হা/৫৫১; মিশকাত হা/১০৭৭; ছহীহুত তারগীব হা/৪২৬)।
আর ভয়-ভীতি বা অসুস্থতা ও মহামারী ছড়িয়ে পড়া একটি বড় ওযর। সেজন্য বাড়িতে
ছালাত আদায় করবে। রাসূল (ছাঃ) প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে জুম‘আ রহিত করে বাড়িতে
যোহরের ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৯০১; মুসলিম হা/৬৯৯)।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে জুম‘আ কায়েম করার ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। একদল বিদ্বানের মতে, জুম‘আর ছালাতের জন্য কেবল জামা‘আত শর্ত। এজন্য মসজিদ বা নির্ধারিত সংখ্যক মুছল্লী শর্ত নয় (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/২৪৬-৪৮; ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/২৫০; শাওকানী, আস-সায়লুল জার্রার ১৮২ পৃ.)। সুতরাং বিশেষ ওযরবশত কমপক্ষে দু’জন মুছল্লী থাকলে একজন খুৎবা পাঠের মাধ্যমে বাড়িতে জুম‘আ কায়েম করা যাবে। যেমন বাহরায়েনবাসীর প্রতি এক লিখিত ফরমানে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাক, জুম‘আ আদায় কর’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, আলবানী, ইরওয়া হা/৫৯৯, ফাৎহুল বারী হা/৮৯২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ছালাতুর রাসূল ১৯০-৯২ পৃ.)। এছাড়া একটি গ্রামে বা মহল্লায় সর্বনিমণ তিনজন ব্যক্তি থাকলেই জুম‘আ কায়েম করা যাবে। তবে শর্ত হ’ল খুৎবা এবং জামা‘আত হ’তে হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাত ২/৮৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৮/২১০, ২৬৩; উছায়মীন, নূরুন ‘আলাদ দারব ১৮৮/৩৯)। তবে সমকালীন অধিকাংশ বিদ্বানের মতে, এমতাবস্থায় বাড়িতে বাড়িতে সাময়িক জুম‘আ কায়েম করা সিদ্ধ হবে না। কেননা জুম‘আ সাধারণ জামা‘আতের মত নয়। এতে জুম‘আর মূল তাৎপর্য ব্যাহত হবে এবং এর বিশেষত্ব নষ্ট হবে। এজন্য রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিন বৃষ্টির কারণে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছিলেন, জুম‘আর নির্দেশ দেননি। সুতরাং মহামারীর কারণে মসজিদে যেতে না পারলে বাড়িতে যোহরের ছালাত আদায় করবে এবং এতেই সে জুম‘আর ছওয়াব পেয়ে যাবে (বুখারী হা/২৯৯৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৮/১৯৬)। এই মতটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য। তবে কেউ বাড়িতে জুম‘আ পড়লে তা আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, ‘যে ব্যক্তি অলসতা করে (বিনা কারণে) পরপর তিনটি জুম‘আ ত্যাগ করে, মহান আল্লাহ তার অন্তরে মোহর মেরে দেন’ (আবূদাউদ হা/১০৫২; তিরমিযী হা/৫০০; ইবনু মাজাহ হা/১১২৬) মর্মে বর্ণিত হাদীছটি বর্তমান অবস্থায় প্রযোজ্য নয়। কেননা বর্তমানে শারঈ ওযর বিদ্যমান।