উত্তর : ‘হেযবুত তওহীদ’ বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি ভয়ংকর পথভ্রষ্ট ধর্মীয় সংগঠন। ২০০৮ সালে সংগঠনটিকে কালো তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ সরকার (উইকিপিডিয়া)। ১৯৯৫ সালে টাঙ্গাইলের করটিয়ার গ্রামের পন্নী পরিবারের সন্তান মোহাম্মাদ বায়াজিদ খান পন্নী (১৯২৫-২০১২ খ্রি.) দলটির প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ছিলেন রাজনীতিক, শিকারী ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। প্রথম যৌবনে তিনি এনায়াতুল্লাহ মাশরেক্বী (১৮৮৮-১৯৬৩ খ্রি.)-এর বৃটিশবিরোধী ‘খাকসার’ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক সংস্রব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিরিবিলি জীবন-যাপন শুরু করেন। এক সময় তার ধারণা হয় যে, বর্তমান ইসলাম বিকৃত ইসলাম। এজন্য তিনি মানুষকে ‘প্রকৃত ইসলাম’-এর পথ দেখাতে দলটির সূচনা করেন। বর্তমান যুগে একশ’ বিশ কোটি মুসলমানের মধ্যে কেবল তার অনুসারী ‘পাঁচ লক্ষ’ মানুষকে তিনি ‘প্রকৃত মুসলমান’ মনে করেন (এসলামের প্রকৃত রূপরেখা, পৃ. ১১)। তিনি নিজেকে এই যুগের ইমাম বা এমামুয্যামান হিসাবে দাবী করেন। এই দলের অনুসারীদের বিশ্বাস হ’ল, বায়াজিদ খান পন্নীকে আল্লাহ বর্তমান যুগে সমগ্র মানবজাতির ত্রাতা হিসাবে পাঠিয়েছেন (হিজবুত তওহীদের গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৩)

তাদের মতে, রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর একশত বছরের মধ্যেই ইসলাম বিকৃত হয়ে যায়। অতঃপর দীর্ঘ তেরশ’ বছর এই উম্মাহকে (হেযবুত তওহীদের) এই পবিত্র কর্মসূচি থেকে মাহরুম, বঞ্চিত রাখার পর আল্লাহ তাঁর অসীম করুণায় তাঁর দেয়া কর্মসূচির পরিচয় মাননীয় এমামুয্যামানকে বোঝার তাওফীক দিয়েছেন (ঐ, পৃ. ৬৯, ৭১)

তারা অন্য মুসলমানদের সাথে ছালাত আদায় করে না এবং তাদের সাথে কোন ইবাদতেও অংশগ্রহণ করে না। এই দলে যারা যুক্ত হবে তাদের শপথবাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই দলভুক্ত যারা নয় অর্থাৎ বাকি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান পথভ্রষ্ট ও বিকৃত ইসলামের অনুসারী। অতএব তাদের সাথে কোন ইবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে না। কেবল এই আন্দোলনের সাথে যুক্তদের সাথেই এবাদতে অংশগ্রহণ করা যাবে (ঐ, পৃ. ৭৩)। এই দলটি আলেম-ওলামার প্রতি চূড়ান্ত বিদ্বেষ পোষণ করে এবং তারা মনে করে যে, হাদীছ, তাফসীর, ফিকহসহ ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা কেবল অপ্রয়োজনীয়ই নয়; বরং মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির কারণ (ঐ, পৃ. ১৩; আকিদা, পৃ. ২৩)।   

তারা মনে করে যে, আল্লাহ ‘হেযবুত তওহীদ’কেই মানবজাতির উদ্ধারকর্তা হিসাবে মনোনীত করেছেন। কাজেই এই সময়ে যারা মুমিন-মুসলিম হতে চায়, আল্লাহর সঠিক দিক-নির্দেশনা, সত্যপথ লাভ করতে চায় তাদের এমামুযযামানের আনুগত্য করা ছাড়া মুক্তি নেই। ‘হেযবুত তওহীদে’র মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্রকৃত ধর্ম প্রচার হবে। এটা আল্লাহরই নির্দেশ (http://www.hezbuttawheed.org)

পন্নী আল্লাহর পক্ষ থেকে মু‘জেযা প্রাপ্তির দাবী করে প্রকারান্তরে নিজেকে নবী দাবী করেছেন। যেমন তিনি নিজের একটি ১০ মিনিটের ভাষণকে আল্লাহর মু‘জেযা হিসাবে দাবী করেন এবং প্রচার করেন যে, এই মু‘জেযার মাধ্যমে আল্লাহ তাকে এবং হেযবুত তওহীদকে হক হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় রহমত আর কি হতে পারে? যে মো‘জেযা তিনি নবীদের সময় ঘটাতেন একটা একটা করে, এখন তিনি নিজে এক সাথে ৮টা মো‘জেযা ১০ মিনিটের মধ্যে ঘটিয়ে দিলেন’ (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৯)

তাদের গঠনতন্ত্রে লেখা হয়েছে, ‘হেযবুত তওহীদে’র সবচেয়ে বড় মাইলফলক হচ্ছে, ২রা ফেব্রুয়ারী ২০০৮ তারিখে মহান আল্লাহ এক মহান অলৌকিক ঘটনা (মো‘জেযা) সংঘটন করেন যার দ্বারা তিনি তিনটি বিষয় সত্যায়ন করেন। যথা : হেযবুত তওহীদ হক (সত্য), এর ইমাম আল্লাহর মনোনীত হক ইমাম, হেযবুত তওহীদের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে আল্লাহর সত্য দীন প্রতিষ্ঠিত হবে’। শুধু তাই নয় তারা এই ভাষণটিকে কুরআনের মর্যাদা দিয়ে বলে, ‘কোরআন ও ইমামের এই ভাষণটি একই পর্যায়ভুক্ত। যারা বায়াজিদ খান পন্নীর উপর আল্লাহ প্রদত্ত এই মো‘জেযায় বিশ্বাস করবে না এবং এতে সন্দেহ রাখবে, তারা কুরআনকে অবিশ্বাস করার মত অপরাধী এবং তাদের জন্য উভয় জাহানে রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি’ (গঠনতন্ত্র, পৃ. ১৬; আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ১১-১৭, ৩৩, ৯৩; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ২৬-২৭)

তাদের মতে, হাদীছে বর্ণিত দাজ্জাল কোন প্রাণী নয়, বরং দাজ্জাল হ’ল ‘ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতা’। আধুনিক যুগে এমামুয্যামান তথা পন্নী প্রথম এই দাজ্জালকে চিহ্নিত করেছেন এবং তিনি প্রমাণ করেছেন যে, পাশ্চাত্য বস্ত্তবাদী ইহুদী-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতাই হচ্ছে সেই দাজ্জাল, যেই দানব ৪৮১ বছর আগেই জন্ম নিয়ে তার শৈশব-কৈশোর পার হয়ে বর্তমানে যৌবনে উপনীত হয়েছে এবং দোর্দন্ড প্রতাপে সারা পৃথিবীকে পদদলিত করে চলেছে। আজ মুসলিমসহ সমস্ত পৃথিবী অর্থাৎ মানবজাতি তাকে প্রভূ বলে মেনে নিয়ে তার পায়ে সিজদায় পড়ে আছে (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৫; মহাসত্যের আহবান, পৃ. ১৩)। তারা নিজ দলের সদস্যদেরকে শেষ যামানায় দাজ্জালের বিরুদ্ধে যোদ্ধা ভাবে এবং তাদের পুরুষ ও নারী সদস্যদের যথাক্রমে মোজাহিদ ও মোজাহিদা সম্বোধন করে। শুধু তাই নয়, মুজাহিদ হিসাবে শাহাদত লাভের প্রমাণ হিসাবে তাদের কর্মীদের মৃত লাশ অন্যদের মত শক্ত বা শীতল হয় না বলে তারা দাবী করে।         

পন্নীর ভাষ্যমতে, কোন ব্যক্তি ‘হেযবুত তওহীদে’ যোগ দিলেই দুই শহীদের মর্যাদা পাবে, যদি সে শেষ পর্যন্ত থাকে। শুধু তাই নয়, ‘হেযবুত তওহীদে’ যারা সত্যিকারভাবে এসেছে তাদের জন্য জান্নাত নিশ্চিত। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এখন কে কোন জান্নাতে যাবে তা আমলের উপর নির্ভর করবে (আল্লাহ মো’জেজা হিজবুত তওহীদের বিজয় ঘোষণা, পৃ. ৬৫)

এই দলের নিকট প্রকৃত ইসলাম হ’ল তাওহীদ ও জিহাদ। আর ইবাদত হ’ল খেলাফত। অর্থাৎ প্রকৃত ইবাদত হ’ল আল্লাহর দেয়া দীন (জীবন-ব্যবস্থা) মোতাবেক তাঁর পক্ষ হয়ে শাসন করা। ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, যাকাত এগুলো প্রকৃত ইবাদতের কাজ নয় বরং এগুলো জীবন পরিচালনার জন্য কিছু বিধান মাত্র (দাজ্জাল? ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’!, পৃ. ৮৭)। এই ইবাদত তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের আক্বীদা ও ঈমানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হ’ল জিহাদ। এমনকি ঈমানের মূল শর্তই হ’ল জিহাদ (ইসলামের প্রকৃত সালাহ, পৃ. ৪২)। তাই সশস্ত্র জিহাদ ত্যাগ করলে সে আর মুমিন থাকে না, বরং দ্বীন থেকেই সে বহিষ্কৃত হয়ে যায়। ছালাতকে তারা মনে করেন জিহাদের প্রশিক্ষণ। এজন্য তারা সামরিক কুচকাওয়াজের মত সটান ও দ্রুতগতিসম্পন্ন নব্য এক ছালাত রীতি চালু করেছে। তারা মনে করে, উম্মতে মুহাম্মাদী সম্পূর্ণ জাতিটাই সামরিক বাহিনী (ঐ, পৃ. ১৩, ১৯, ৩০-৩১, ৩৫)

হজ্জ সম্পর্কে তাদের ধারণা, এটি কোন ইবাদত নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মুসলমানদের বার্ষিক সম্মেলন। তাদের ভাষায়- ‘হজ্জ কোন তীর্থ যাত্রা নয়, আন্তর্জাতিক কনফারেন্স। এসলামের অন্য সব কাজের মতোই আজ হজ্ব সম্বন্ধেও এই জাতির আকীদা বিকৃত হয়ে গেছে। এই বিকৃত আক্বীদায় হজ্জ আজ সম্পূর্ণরূপে একটি আধ্যাত্মিক ব্যাপার, আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার পথ। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- আল্লাহ সর্বত্র আছেন, সৃষ্টির প্রতি অণু-পরমাণুতে আছেন, তবে তাঁকে ডাকতে, তাঁর সান্নিধ্যের জন্য এত কষ্ট করে দূরে যেতে হবে কেন?’

তারা বলে, দাড়ি-টুপি-বোরকা ইত্যাদি ইসলামের কোন লেবাস নয়। তাদের আক্বীদা হ’ল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কোন ধর্মকেই বাতিল করেননি, বরং সবগুলোকে সংরক্ষণ ও সত্যায়ন করেছেন। তাই সব ধর্মই সত্য। সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা (http://www.hezbuttawheed.org)।  

তারা ইতিমধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পত্রিকা দৈনিক দেশের পত্র ও দৈনিক বজ্রকণ্ঠ প্রভৃতির মাধ্যমে তাদের বিকৃত আক্বীদা ও আমল ব্যাপকভাবে প্রচার করছে এবং বাংলাদেশের বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করে চলেছে। অতএব এদের ব্যাপারে হুঁশিয়ার থাকা একান্ত যরূরী।






প্রশ্ন (৪/৪৪) :কোন নারীকে হূরে ‘আইনদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দো‘আ করা যাবে কি?
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : শীতকালে নাকসহ মুখ ঢেকে এবং ক্বওমার সময়ে চাদরের নীচে হাত বেঁধে ছালাত আদায় করা যাবে কি? - -খাদেমুল ইসলাম, জেদ্দা, সঊদী আরব।
প্রশ্ন (১১/৩৭১) : আমাদের মসজিদের ইমাম আহলেহাদীছ হওয়ায় মুনাজাত করতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি চাকুরীচ্যুত হন। কিন্তু মসজিদের জমিটি ইমামের বড় ভাই ও অন্য একজনের ব্যক্তি মালিকানাধীন। এক্ষণে মসজিদ কমিটি জমিটি মসজিদের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু পরিবারের আশংকা জমি লিখে দিলে তাদেরকে সেখানে আর ছালাতই আদায় করতে দেয়া হবে না। এক্ষণে তাদের করণীয় কি?
প্রশ্ন (১৫/৩৩৫) : সুৎরা কি যেকোন বস্ত্ত দ্বারা দেওয়া যায়? যেমন কলম, মোবাইল, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি। - -মাহফূযা, ঢাকা।
প্রশ্ন (১৬/১৭৬) : মহিলারা কালো চুলে দুলহান তেল ব্যবহার করতে পারবে কি? এছাড়া তারা চুলের মাথা কেটে ছোট করতে পারবে কি?
প্রশ্ন (১৮/৯৮) : ইয়াযীদ বিন মু‘আবিয়া (রাঃ) হোসাইন (রাঃ)- কে হত্যার কারণে ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদকে কোন শাস্তি প্রদান করেছিলেন কি? না করে থাকলে কেন প্রদান করেননি? - -মনোয়ার, পুরানা পল্টন, ঢাকা।
প্রশ্ন (৩৪/১৯৪) : সূরা যিলযাল দু’বার পড়লে কুরআন মাজীদ খতমের নেকী পাওয়া যায় কি?
প্রশ্ন (৭/১৬৭) : কোন মেয়ের নাম যুনায়রাহ রাখা যাবে কী? - -আকলীমা খাতূনকাকনহাট, রাজশাহী।
প্রশ্ন (৫/৮৫) : হাইকোর্টের বিচারপতিগণকে এডভোকেটদের বাধ্যগতভাবে ‘মাই লর্ড’ বলে সম্বোধন করতে হয়। অথচ শব্দটি আল্লাহ ব্যতীত কারো ব্যাপারে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ বলে আমরা জানি। এক্ষণে এটা বলা যাবে কি? - -আবু ইজতিহাদ অহী, কুমিল্লা।
প্রশ্ন (৩/৪৩) : ভ্রূণ নির্গত হ’লে তার জানাযার ছালাত পড়তে হবে কি?
প্রশ্ন (১৬/২১৬) : আমি আমার স্ত্রীকে কিছু জমি লিখে দিতে চাই। এতে কোন বাধা আছে কি? - -মুহাম্মাদ রানু* মিয়া, কুয়েত।*[কেবল ‘মুহাম্মাদ’ নামই যথেষ্ট (স.স.)]
প্রশ্ন (২৮/৩৪৮) : রাতের তিন ভাগের এক ভাগ বাকী থাকে তখন আল্লাহ প্রথম আকাশে নেমে আসেন, অথচ পৃথিবীতে রাত-দিন এক সাথে হয় না। অতএব এর ব্যাখ্যা জানতে চাই।
আরও
আরও
.