পিতা কিম
জং ইল (১৯৪১-২০১১ খৃ.)-এর মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ পুত্র কিম জং উন ২০১১
সালের ২৮শে ডিসেম্বর ৩৬ বছর বয়সে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসেন। অতঃপর গত ১০ই
মার্চ রবিবার দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দলে দলে ভোট কেন্দ্রে যায়। এই
নির্বাচনের সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হ’ল, এতে ভোটাররা প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগ
পায় না। কেননা ব্যালটে কেবল একজন প্রার্থীর নামই থাকে। সেই ব্যালট হাতে
নিয়ে প্রকাশ্যে ব্যালট বাক্সে ভরতে হয় ভোটারকে। বুথের ভিতর গিয়ে গোপনে
ব্যালট ভরলে সেই ভোটারের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ তৈরী হ’তে পারে। তাতে
নিশ্চিতভাবেই সরকারের গোপন পুলিশ তার সম্পর্কে খোঁজ-খবর শুরু করবে। এধরনের
কাজ যারা করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে পাগল আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ভোট দান শেষে ভোট কেন্দ্রের সামনে গিয়ে ভোট দিতে পারার আনন্দে নেচে-গেয়ে
উল্লাস করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলেই বিপত্তি।
১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর ‘ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া’ তথা ‘গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিম ইল-সাং প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তখন থেকেই কিম পরিবার উত্তর কোরিয়া শাসন করে আসছে। উত্তর কোরিয়ার সব নাগরিককে কিম পরিবারের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করতে হয়। উত্তর কোরিয়ায় নামকা ওয়াস্তে তিনটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। একটি কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ‘ওয়ার্কার্স পার্টি’। পার্লামেন্টে এই দলটিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাকী কয়েকটি আসন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও কনডোইস্ট চঙ্গু পার্টির দখলে থাকে। দল তিনটি হ’লেও এসব দলের কাজের ধরন একই। তার ওপর এই পুতুল পার্লামেন্টের কোন ক্ষমতাই নেই।
উত্তর কোরিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টারটিটস্কি বলেন, ভোট দিতে গেলে আপনাকে একটি ব্যালট পেপার দেওয়া হবে, যেখানে একটাই নাম থাকবে। পূরণ করার বা সিল দেওয়ার মতো কিছু থাকে না সেখানে। আপনি কেবল ব্যালট পেপারটি নেবেন, আর ব্যালট বাক্সে ভরে আসবেন। মিন ইয়ং লি নামে আরেক বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরেই থাকে চিয়ার গ্রুপ, যারা উৎসব উদযাপন করে। ভোটারদেরও ভোট দিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে হয় এবং বিজ্ঞ নেতৃত্বকে ভোট দিতে পারার জন্য উল্লাস প্রকাশ করতে হয়। জনসংখ্যা গণনা এবং কতজন নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, তা জানতে ও তাদের চিহ্নিত করতে এই নির্বাচন উত্তর কোরিয়ার সরকারের জন্য এক মোক্ষম অস্ত্র।
[হ্যাঁ, এরপরেও দেশটির বাহারী নাম ‘গণতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া’। যা দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার দেওয়া নাম। অথচ এর চাইতে স্বৈরতন্ত্রী কোন দেশ আধুনিক পৃথিবীতে আছে কি-না সন্দেহ। যাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে কথিত গণতন্ত্রের কর্ণধার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেখানে দু’হাত মেলে দৌঁড়ে যাচ্ছেন। অথচ এঁরা পরামর্শ ভিত্তিক ও প্রার্থী বিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থাকে মেনে নিতে চান না। যার মধ্যেই রয়েছে নির্বাচকদের মত প্রকাশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি (স.স.)।]