পর্ব ১ । পর্ব ২ ।

দাড়ি রাখা সুন্নাত বলার পক্ষে দলীলসমূহ ও তার জওয়াব :

‘ইসলামে হালাল ও হারামের বিধান’ গ্রন্থ প্রণেতা ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহ কারযাভীসহ কতিপয় শৈথিল্যবাদী বিদ্বান মনে করেন দাড়ি মুন্ডন করা মাকরূহ। এমনকি কেউ কেউ মনে করেন এটি জায়েয। যারা মাকরূহ বলেছেন, তারা পূর্ববর্তী বিদ্বানগণের ব্যবহৃত পরিভাষা অনুধাবন করতে পারেননি। আর যারা জায়েয বা মুবাহ বলার চেষ্টা করেছেন তাদের পক্ষে শরী‘আতের কোন দলীল নেই। আবার অনেকে দাড়ি রাখাকে সুন্নাত বলেছেন। যারা দাড়ি রাখাকে সাধারণ সুন্নাত বলেছেন তাদের পক্ষে পেশকৃত দলীলগুলোর জওয়াব :

দাড়ি রাখা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত বলার পক্ষে তারা দলীল হিসাবে ফিৎরাত সংক্রান্ত হাদীছটি পেশ করে থাকেন। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন, عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ، ‘দশটি কাজ ফিৎরাতের অন্তর্ভুক্ত- গোঁফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা এবং আঙগুলের গিরাসমূহ ধোয়া, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নাভির নীচের পশম কাটা এবং পানি দ্বারা ইসতিনজা করা। হাদীছের রাবী মুছ‘আব বলেন, দশম কাজটির কথা আমি ভুলে গেছি। সম্ভবত সেটি হবে কুলি করা’।[1] উক্ত হাদীছে মেসওয়াক করা বা কুলি করার সাথে দাড়ি রাখার বিষয়টিকে মিলিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ওযূতে যেমন কুলি বা মেসওয়াক করা সাধারণ সুন্নাত তেমনি দাড়ি লম্বা করাও সাধারণ সুন্নাত।

জওয়াব : প্রথমতঃ উপরোক্ত হাদীছে দাড়ি লম্বা করাকে সাধারণ সুন্নাত হিসাবে উল্লেখ করা হ’লেও এটি সাধারণ সুন্নাত ছিল না। বরং এটি পূর্ববর্তী সকল নবী-রাসূলের সুন্নাত ছিল, যা তাঁরা প্রত্যেকে পালন করেছেন। তাছাড়া এটি অন্য হাদীছ দ্বারা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়েছে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ فِطْرَةَ الْإِسْلَامِ الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالِاسْتِنَانُ، وَأَخْذُ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحَى، فَإِنَّ الْمَجُوْسَ تُعْفِي شَوَارِبَهَا، وَتُحْفِي لِحَاهَا، فَخَالِفُوْهُمْ، خُذُوْا شَوَارِبَكُمْ، وَاعْفُوْا لِحَاكُمْ، ‘ইসলামের ফিৎরাত হ’ল জুম‘আর দিনে গোসল করা, মেসওয়াক করা, গোঁফ ছেঁটে ফেলা ও দাড়ি লম্বা করা। কেননা অগ্নিপূজকরা গোঁফ লম্বা করে ও দাড়ি ছেঁটে ফেলে। অতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা কর। গোঁফ মুন্ডন কর এবং দাড়িকে লম্বা কর’।[2] সুতরাং এটিকে কেবল ফিৎরাতের সাথে খাছ করা সঠিক নয়। কারণ দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে আরো বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত : এটি এমন সুন্নাত, যা আঁকড়ে ধরা আবশ্যক। রাসূল (ছাঃ) বলেন,তোমাদের উপরে অপরিহার্য হ’ল, আমার সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে মাঢ়ীর দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরা’।[3] আর দাড়ি রাখা যেমন নবীর সুন্নাত ছিল তেমনি খোলাফায়ে রাশেদীনেরও সুন্নাত ছিল।

উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন,الفطرة هِيَ السُّنَّةُ الْقَدِيْمَةُ الَّتِيْ اخْتَارَهَا الْأَنْبِيَاءُ وَاتَّفَقَتْ عَلَيْهَا الشَّرَائِعُ وَكَأَنَّهَا أَمْرٌ جِبِلِّيٌّ فُطِرُوْا عَلَيْهَا، ‘ফিৎরাত হ’ল এমন সুন্নাত যা নবীগণ নিজেদের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এবং সকল নবীর শরী‘আত এর উপর ঐক্য হয়েছে। যেন এটি স্বভাবজাত বিষয়, যার উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে’।[4]

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, কোন কোন হাদীছে ফিৎরাতের স্থানে সুন্নাহ শব্দ এসেছে, যার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তরীকা বা পথ যা ওয়াজিবের বিপরীত নয়। সেজন্য শায়খ আবু হামেদ গাযালী, মাওয়ারদী ও অন্যরা বলেন, এই হাদীছের বিধানটি ঐ হাদীছের মত যেখানে বলা হয়েছে,عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِيْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ তোমাদের উপরে অপরিহার্য হ’ল, আমার সুন্নাত ও খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে অাঁকড়ে ধরা’।[5] সেজন্য ইবনুল আরাবী মালেকী (রহঃ) সকল ফিৎরাত পালন করাকে ওয়াজিব বলেছেন। কারণ সেগুলো পালন না করলে মানুষের মূল আকৃতি থাকে না। যদিও বিশেষিত না হওয়ার কারণে সবগুলো ওয়াজিব নয়।[6]

ইমাম খাত্ত্বাবী উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, এই বৈশিষ্ট্যগুলো নবীগণের সুন্নাত যাদের অনুসরণ করতে আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘এরাই হ’ল ঐসব মানুষ যাদেরকে আল্লাহ্ হেদায়াত দান করেছেন। অতএব তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর’ (আন‘আম ৬/৯০)। আর এই নির্দেশ প্রথম ইবরাহীম (আঃ)-কে দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন ইবরাহীমকে তার প্রতিপালক কতগুলি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ করল’। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তাঁকে দশটি বিষয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যখন তিনি সেগুলো পালন করলেন ‘তখন তার প্রতিপালক বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাব’ (বাকারাহ ২/১২৪)। যাতে করে তারা তোমার আনুগত্য করতে ও তোমার সুন্নাতে নিজেকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করতে পারে। আর এই উম্মতকে বিশেষভাবে ইবরাহীমের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমরা তোমার প্রতি অহী করেছি যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের দ্বীনের অনুসারী হও’ (নাহল ১৬/১২৩)। ইবরাহীম (আঃ) উক্ত বিধান ওয়াজিব মনে করেই তা পালন করেছিলেন।[7] অতএব উক্ত হাদীছ দাড়ি মুন্ডন করা মাকরূহ হওয়ার দলীল নয়। বরং হারাম হওয়ার দলীল।

দ্বিতীয় দলীল : দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশসূচক হাদীছের সাথে দাড়িতে মেহেদী ব্যবহার করাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। দাড়ি রাখাকে ওয়াজিব বললেও মেহেদী ব্যবহারকে ওয়াজিব বলা হচ্ছে না। সুতরাং দাড়ি রাখা ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নাত।

জওয়াব : প্রথমতঃ একটি হাদীছে দাড়ি রাখার বিষয়ের সাথে মেহেদী ব্যবহার করাকে সংযুক্ত করা হ’লেও দাড়ি রাখার ব্যাপারে সাধারণ নির্দেশসূচক বহু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো প্রমাণ করে যে দাড়ি রাখা ওয়াজিব। যেমন ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, وَقَدْ حَصَلَ مِنْ مَجْمُوْعِ الْأَحَادِيْثِ خَمْسُ رِوَايَاتٍ أَعْفُوْا وَأَوْفُوْا وَأَرْخُوْا وَأَرْجُوْا وَوَفِّرُوْا، وَمَعْنَاهَا كُلُّهَا تَرْكُهَا عَلَى حَالِهَا. ‘দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে নির্দেশসূচক পাঁচটি শব্দ... ব্যবহার করা হয়েছে যার সবগুলোর অর্থ হ’ল দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া’।[8]

দ্বিতীয়তঃ একই হাদীছে দু’টি বিষয়ের নির্দেশ থাকলেও একটিকে ওয়াজিব ও অপরটিকে আলাদা দলীলের কারণে সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করা জায়েয। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা এমন পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, كُلُواْ مِن ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُواْ حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ، ‘তোমরা এগুলির ফল খাও যখন তা ফলবন্ত হয় এবং এগুলির হক আদায় কর ফসল কাটার দিন (আন‘আম ৬/১৪১)। উক্ত আয়াতে ফসল পাকার সময় খেতে ও ওশর আদায় করতে বলা হয়েছে। অথচ ফসলের ওশর দেওয়া ফরয হ’লেও ফল খাওয়া ফরয নয়।[9]

তারা আরো বলেন যে, রাসূল (ছাঃ) জুতা পরে ছালাত আদায়, চুল ও দাড়িতে মেহেদী লাগানো ও সাহারী খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ কোন ছাহাবী এই কাজগুলোকে ওয়াজিব মনে করেননি।

জওয়াব : উপরোক্ত নির্দেশগুলো ওয়াজিব নয়। কারণ এই বিষয়গুলোর নির্দেশ রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের আমল দ্বারা ওয়াজিব থেকে মাকরূহ-এর স্তরে নেমে এসেছে। যেমন ইমাম শাওকানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেনمِنْ الْوُجُوْبِ إلَى النَّدْبِ، ‘ওয়াজিব থেকে জায়েযের পর্যায়ে নেমে গেছে’।[10] কিন্তু দাড়ি রাখার নির্দেশের বিষয়টি ওয়াজিব মাকরূহ-এর স্তরে নামার কোন দলীল বর্ণিত হয়নি। অতএব দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি সঠিক।[11]

তারা আরো বলেন, দাড়ি রাখার বিষয়টি আরবদের ভৌগলিক অভ্যাস। তারা ইসলামের আগেও দাড়ি রাখত, পরেও রাখত।

জওয়াব : প্রথমতঃ ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে দাড়ি রাখতেন বলেই এর বিপরীত কোন আমল বা নির্দেশনা নেই। আদাত বা অভ্যাস হ’লে কেউ না কেউ মুন্ডন করতেন। কিন্তু এর কোন নযীর নেই।

দ্বিতীয়তঃ ছাহাবীগণ আরবদের অভ্যাস থেকে দাড়ি রাখতেন, রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নয়, এটি তাদের প্রতি বড় অপবাদ, যা থেকে ছাহাবীগণ মুক্ত ছিলেন।[12]

তারা আরো বলেন, বর্তমানে ইহুদী-খৃষ্টান, অগ্নিপূজকরাও দাড়ি রাখে। আর রাসূল (ছাঃ) তাদের বিরোধিতা করতে বলেছেন। বর্তমানে দাড়ি রাখার বিষয়টি খেল-তামাশায় পরিণত হয়েছে।

জওয়াব : এই ধরনের মন্তব্য করা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। কারণ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অন্য কেউ পালন করলে তা মুসলমানদের জন্য মাকরূহ হয়ে যায় না। বরং স্বঅবস্থানেই থাকে। অতএব দাড়ি রাখার বিষয়টি যেমন মানুষের ফিৎরাত তেমনি রাসূল (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।[13]

বিদ্বানগণের মধ্যে কেউ দাড়ি মুন্ডন করাকে জায়েয বলেননি। বরং কাযী ইয়াযসহ কিছু বিদ্বান দাড়ি মুন্ডন করাকে মাকরূহ বলেছেন। যেমন কাযী ইয়ায বলেন,يُكْرَهُ حَلْقُهَا وَقَصُّهَا وَتَحْرِيقُهَا ‘দাড়ি মুন্ডন করা, ছোট করা ও পরিবর্তন করা মাকরূহ।[14]

প্রথমতঃ ইমাম নববী (রহঃ) তৎকালীন সময়ে এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, فَحَصَلَ خَمْسُ رِوَايَاتٍ أَعْفُوْا وَأَوْفُوْا وَأَرْخُوْا وَأَرْجُوْا وَوَفِّرُوْا وَمَعْنَاهَا كُلُّهَا تَرْكُهَا عَلَى حَالِهَا هَذَا هُوَ الظَّاهِرُ مِنَ الْحَدِيْثِ الَّذِيْ تَقْتَضِيهِ أَلْفَاظُهُ وَهُوَ الَّذِيْ قَالَهُ جَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِنَا وَغَيْرُهُمْ مِنَ الْعُلَمَاءِ، ‘দাড়ি রাখার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে নির্দেশসূচক পাঁচটি রেওয়াত এসেছে... যার সবগুলোর অর্থ হ’ল দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। এটাই হ’ল শব্দগুলোর দাবী অনুযায়ী স্পষ্ট অর্থ। আর আমাদের একদল সাথী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ এর অর্থ এমনটাই বলেছেন’।[15]

দ্বিতীয়তঃ পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ ‘কারাহাত’কে হারাম অর্থে ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ তারা হারাম ও মাকরূহের মধ্যে পার্থক্য করতেন না। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ‘ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন’ গ্রন্থে لَفْظُ الْكَرَاهَةِ يُطْلَقُ عَلَى الْمُحَرَّمِ ‘কারাহাত শব্দ হারাম অ©র্থ ব্যবহার’ শীর্ষক অধ্যায় রচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, পূর্ববর্তী বিদ্বানগণ ‘কারাহাত’ দ্বারা যা উদ্দেশ্য নিয়েছেন তা ছিল হারাম। কিন্তু পরবর্তীতে শৈথিল্যবাদীরা একে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করেছেন, যা চরম ভুল। এরপর তিনি অনেক হাদীছ ও বিদ্বানগণের উক্তি উল্লেখ করেন যা হারাম অর্থে ছিল। অতঃপর বলেন, فَالسَّلَفُ كَانُوا يَسْتَعْمِلُونَ الْكَرَاهَةَ فِي مَعْنَاهَا الَّذِي اُسْتُعْمِلَتْ فِيهِ فِي كَلَامِ اللهِ وَرَسُولِهِ، وَلَكِنْ الْمُتَأَخِّرُونَ اصْطَلَحُوا عَلَى تَخْصِيصِ الْكَرَاهَةِ بِمَا لَيْسَ بِمُحَرَّمٍ، ‘বিদ্বানগণ ‘কারাহাত’ শব্দকে ঐ অর্থে ব্যবহার করেছেন যে অর্থে ব্যবহৃত হয়েছিল আল্লাহর কালাম ও রাসূলের বাণীতে। কিন্তু পরবর্তী ইমামের অনুসারীরা কারাহাতকে খাছ করে পরিভাষা তৈরি করে নিল যে তা হারাম নয়।[16] সুতরাং কাযী ইয়ায বা অন্য কোন বিদ্বান দাড়ি মুন্ডন করাকে যে মাকরূহ বলেছেন, তা হারাম অর্থেই ছিল। সেজন্য শাফেঈ বিদ্বান আবু শামাহ মাকদেসী (৫৯৯-৬৬৫ হি.) আফসোস করে বলেন, وَقَدْ حَدَّثَ قَوْمٌ يَحْلِقُوْنَ لِحَاهُمْ وَهُوَ أَشَدُّ مِمَّا نُقِلَ عَنِ الْمَجُوْسِ أَنَّهُمْ كَانُوْا يَقُصُّوْنَهَا، ‘কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা তাদের দাড়ি মুন্ডন করে সেটা অগ্নিপূজকদের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে তা থেকে মারাত্মক। কারণ তারা দাড়ি কর্তন করে’।[17] অতএব দাড়ি রাখা সুন্নাত বলে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বরং এটি ওয়াজিব সুন্নাত।

দাড়ি ছোট করার বিধান :

একদল বিদ্বান কিছু যঈফ হাদীছের উপর ভিত্তি করে দাড়ি-কাট-ছাঁট করাকে জায়েয মনে করেন। অথচ সে বর্ণনাগুলো দুর্বল হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন তারা নিম্নের হাদীছগুলো দ্বারা দলীল পেশ করে থাকেন,

(1) عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مِنْ عَرْضِهَا وَطُولِهَا-

(১) আমর ইবনু শু‘আয়েব তার পিতা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ছাঃ) তাঁর দাড়ির প্রস্থ ও দৈর্ঘ্য থেকে (অসমান অংশ) ছাঁটতেন।[18]

উক্ত হাদীছের সনদে ওমর বিন হারূন নামে মিথ্যাবাদী রাবী থাকায় মুহাক্কিকগণ এর সনদকে জাল বলেছেন।[19] সুতরাং উক্ত হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যাবে না।

(2) عَن جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : رَأىَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وسَلَّمَ رَجُلاً مُجَفَّلَ الرَّأْسِ واللِّحْيَةِ وَأشَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهَ وسَلَّمَ إلَى لِحْيَتِهِ وَرَأْسِهِ يَقُوْلُ خُذْ مِنْ لِحْيَتِكَ ورَأْسِكَ.

(২) জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) জনৈক লোককে চুল ও দাড়ির কারণে ভয়ংকর অবস্থায় দেখলেন। তিনি তার মাথা ও দাড়ির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, তুমি চুল ও দাড়ি ছোট কর’।[20]

উক্ত হাদীছের সনদে আবু মালেক আন-নাখঈ নামে একজন নিতান্ত যঈফ রাবী থাকায় হাদীছটি প্রত্যাখ্যাত। শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন,واعلم أنه لم يثبت في حديث صحيح عن النبي صلى الله عليه وسلم الأخذ من اللحية، لا قولا كهذا، ولا فعلا، ‘জেনে রাখুন, দাড়ি কাট-ছাঁট করার ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) থেকে ছহীহ সনদে যেমন কাওলী হাদীছ সাব্যস্ত হয়নি তেমনি ফে‘লী হাদীছও সাব্যস্ত হয়নি’।[21]

তবে ইবনু ওমর থেকে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাট-ছাঁট করার বর্ণনা রয়েছে। যা বিশেষ সময়ের জন্য তার ব্যক্তিগত আমল ছিল। যেমন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ ، وَفِّرُوا اللِّحَى ، وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ . وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا حَجَّ أَوِ اعْتَمَرَ قَبَضَ عَلَى لِحْيَتِهِ ، فَمَا فَضَلَ أَخَذَهُ-

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর। তোমরা গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ি ছেড়ে দাও। আর ইবনু ওমর (রাঃ) যখন হজ্জ বা ওমরায় যেতেন তখন তিনি দাড়ি থেকে এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন’।[22]

মারওয়ান বিন সালেম আল-মুকাফ্ফা‘ বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি তিনি দাড়ি ধরতেন অতঃপর এক মুষ্টির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন।[23]

জওয়াব : ইবনু ওমর (রাঃ) থেকে দাড়ি কাট-ছাঁট করার ব্যাপারে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলোর সনদ ছহীহ বা হাসান হ’লেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি ছিল আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-এর হজ্জকালীন ইজতিহাদ। আর ইজতিহাদে ছাহাবায়ে কেরামেরও ভুল হ’তে পারে। যদিও তিনি ইজতিহাদ করার কারণে ছওয়াব পেয়ে যাবেন। আল্লাহর বাণী,لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِنْ شَاءَ اللهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ ‘আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তোমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে নির্ভয়ে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় অথবা কেশ কর্তিত অবস্থায় (ফাৎহ ৪৮/২৭)। অত্র আয়াতের মাথা মুন্ডন ও চুল কর্তন উভয় বিধানের উপর ইবনু ওমর (রাঃ) আমল করতে চেয়েছিলেন। প্রথমে তিনি মাথা মুন্ডন করেন এবং দ্বিতীয় শব্দের উপর আমল করার জন্য তিনি ইজতিহাদের ভিত্তিতে দাড়ি থেকে অল্প ছাঁটতেন। কিন্তু এটি ইসলামের বিধান ছিল না। সেজন্য ইমাম মালেক (রহঃ) ইবনু ওমরের বর্ণনা উল্লেখ করার পর বলেন, لَيْسَ ذَلِكَ عَلَى النَّاسِ، ‘এটি লোকদের জন্য ছিল না’।[24] তথা لَيْسَ الأخْذُ مِنَ اللِّحْيَةِ عَلَيْهِ الصَّحَابَةُ، ‘ছাহাবাগণ দাড়ি ছাঁটতেন না। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) ইবনু ওমরের আমল বর্ণনা করার পর বলেন, যাদের মাথায় চুল নেই তারা কেবল দাড়ি ও গোঁফ থেকে কিছু অংশ ছাঁটতে পারে। তিনি আরো বলেন,وَإِنْ لَّمْ يَفْعَلْ فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ؛ لِأَنَّ النُّسُكَ إنَّمَا هُوَ فِي الرَّأْسِ لَا فِي اللِّحْيَةِ، ‘আর যদি দাড়ি-গোঁফ থেকে কিছুই না ছাঁটে তাহ’লে এতে কোন দোষ নেই। কারণ হজ্জের বিষয়টি মাথার সাথে সংশ্লিষ্ট দাড়ির সাথে নয়’।[25] স্মর্তব্য যে, সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াত রাসূল (ছাঃ)-এর উপর নাযিল হয়েছে। কিন্তু তিনি দাড়ি ছাঁটার কথা বলেননি।

ইমাম শাওকানী (রহঃ) ইবনু ওমরের আমল বর্ণনা করার পর বলেন, وَالرِّوَايَاتُ الْمَرْفُوْعَةُ تَرُدُّهُ ‘রাসূল (ছাঃ) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হাদীছগুলো ইবনু ওমরের আমলকে প্রত্যাখ্যান করে’।[26]

ইবনু ওমরের হাদীছের ব্যাখ্যায় আল্লামা কিরমানী (রহঃ) বলেন,لَعَلَّ ابْنُ عُمَرَ أرَادَ الجَمْعَ بَيْنَ الحَلْقِ والتَّقْصِيْرِ فِي النُّسُكِ فَحَلَقَ رَأسَهُ كُلَّهُ وقَصَّرَ مِن لِحْيَتِهِ لِيَدْخُلَ فِيْ عُمُومِ قَوْلِه تَعَالَى مُحَلِّقِيْنَ رُءُوْسَكُمْ وَمُقَصِّرِيْنَ وخَصَّ ذلِكَ مِنْ عُمُوْمِ قَوْلهِ (وَفِّرُوْا اللِّحَى) فَحَمَلَهُ عَلَى حَالِهِ غَيْرَ حَالَةِ النُّسُكِ، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) হয়ত হজ্জে মাথা মুন্ডন ও চুল কর্তনের মধ্যে সমন্বয় করতে চেয়েছিলেন। ফলে তিনি পুরো মাথা মুন্ডন করেন অতঃপর দাড়ি ছেঁটে আল্লাহর বাণী ‘মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় অথবা কেশ কর্তিত অবস্থায়’-এর সাধারণ নির্দেশনায় প্রবেশ করে উভয়টির নেকী পেতে চেয়েছিলেন। আর এটাকে তিনি দাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সাধারণ নির্দেশ থেকে হজ্জ ও ওমরার জন্য খাছ ভেবে করেছিলেন’।[27] ইবনুত তীন ইবনু ওমরের এক মুষ্টি দাড়ি কাটার কথার প্রতিবাদ করে বলেন, لَيْسَ الْمُرَاد أَنَّهُ كَانَ يَقْتَصِر عَلَى قَدْر الْقَبْضَة مِنْ لِحْيَته، بَلْ كَانَ يُمْسِكُ عَلَيْهَا فَيُزِيل مَا شَذَّ مِنْهَا، ‘এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ইবনু ওমর (রাঃ) ছাঁটতেন উক্ত হাদীছ দ্বারা এই উদ্দেশ্য নয় বরং তিনি এলোমেলো বা অধিক লম্বা দাড়ি ছেঁটে গোছালো করতেন’।[28]

ইবনুল মুফলেহ (রহঃ) ইবনু ওমরের আমলের বিরোধিতা করে বলেন, لَكِنْ إنَّمَا فَعَلَهُ يَعْنِي ابْنِ عُمَرَ إذا حَجَّ أوِ اعْتَمَرَ ‘ইবনু ওমর কেবল হজ্জে বা ওমরায় এটা করেছেন (আল-ফুরূ‘ ১/৯২)

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন, যারা ইবনু ওমরের আমল দ্বারা এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটার পক্ষে দলীল গ্রহণ করে থাকে, তাতে তাদের পক্ষে কোন দলীল নেই। কারণلأنه اجتهاد من ابن عمر رضي الله عنهما، والحجة في روايته لا في اجتهاده. وقد صرح العلماء رحمهم الله: أن رواية الراوي من الصحابة ومن بعدهم الثابتة عن النبي صلى الله عليه وسلم هي الحجة، وهي مقدمة على رأيه إذا خالف السنة. ‘এটি ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ইজতিহাদ ছিল। আর দলীল রয়েছে তার বর্ণিত হাদীছে, তার ইজতিহাদে নয়। সেজন্য বিদ্বানগণ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাসূল (ছাঃ), ছাহাবী ও তৎপরবর্তী বর্ণনাকারীকর্তৃক বর্ণিত হাদীছ দলীল। আর এটিই অগ্রাধিকার পাবে যখন তার মতামত সুন্নাতের বিপরীত হবে’।[29] তিনি আরো বলেন, والصَّوابُ وُجُوبُ إعْفَاءِ اللِّحْيَةِ وإرْخَائُهَا وتَحْرِيمُ أخْذ شَيْءٌ مِنْهَا وَلَوْ زَادَ عَلَى القَبْضَةِ سَوَاءَ كَانَ ذلِكَ فِي حَجٍّ أوْ عُمْرَةٍ أوْ غَيْر ذلِكَ، لأنَّ الأحَادِيث الصَّحِيحَةِ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ دَالَّةٌ عَلَى ذلِكَ، ‘সঠিক হ’ল, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব এবং তা থেকে কাট-ছাঁট করা হারাম, যদিও তা এক মুষ্টির অতিরিক্ত হয়। সেটা হজ্জ ও ওমরাকালীন হৌক বা অন্য সময় হৌক। কেননা রাসূল (ছাঃ) থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হাদীছগুলো এটাই প্রমাণ করে’।[30]

তাছাড়া ইবনু ওমর (রাঃ) যে লম্বা দাড়ি রাখতেন, সে ব্যাপারে তাঁর আমল বর্ণিত হয়েছে-كَانَ ابْنُ عُمَرَ يَبِلُّ أصُولَ شَعْرِ لِحْيَتِهِ، ويُغَلْغِلُ بِيَدِهِ فِي أصُولِ شَعْرِهَا حَتَّى تَكْثُرَ القَطَرَاتِ مِنْهَا، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) ওযূর সময় দাড়ির চুলের মূলে পানি পৌঁছাতেন এবং হাত দ্বারা দাড়ির গোড়া খেলাল করতেন। এমনকি তাঁর দাড়ি থেকে অনবরত পানি ঝরে পড়ত’।[31] এই বর্ণনাও প্রমাণ করে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) হজ্জে কেবল এলোমেলো দাড়ি ছাঁটতেন। অন্য সময় করতেন না। নাফে‘ বলেন,كَانَ ابْنُ عُمَرَ يُعْفِي لِحْيَتَهُ إلاَّ فِيْ حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ، ‘ইবনু ওমর (রাঃ) দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দিতেন। তবে হজ্জ ও ওমরার সময় ব্যতীত’।[32]

এতদ্ব্যতীত এটি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত আমল। অন্য কোন ছাহাবী থেকে এরূপ করার কোন বিশুদ্ধ দলীল পাওয়া যায় না। আর তিনি কাউকে করার জন্য নির্দেশও দেননি। দ্বিতীয়তঃ তিনি শুধু হজ্জ ও ওমরার সময় করেছেন, অন্য সময় নয়। তৃতীয়তঃ এটি ব্যাখ্যাগত বিষয়, যা স্পষ্ট দলীলের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য নয়।

দাড়ি ছাঁটা সম্পর্কে আরো কিছু আছার ও সেগুলোর জওয়াব :

দাড়ি ছাঁটার ব্যাপারে কতিপয় বিদ্বান আরো কিছু আছার দলীল হিসাবে উপস্থাপন করে থাকেন। যেগুলো রাসূল (ছাঃ)-এর আমল বিরোধী হওয়ায় তা পরিত্যাজ্য। যেমন,

1- عَنْ أَبِيْ زُرْعَةَ قَالَ :كَانَ أبُو هُرَيْرَةَ يَقْبِضُ عَلَى لِحْيَتِهِ ثُمَّ يَأخُذُ مَا فَضُلَ عَلَى القَبْضَةِ-

(১) আবু যুর‘আ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) হাত দিয়ে দাড়ি ধরতেন অতঃপর এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছেঁটে ফেলতেন’।[33] উক্ত হাদীছের সনদে ওমর বিন আইয়ূব নামে একজন কূফী রাবী রয়েছেন, যার বর্ণিত হাদীছ দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।[34]

2- عَنْ جَابِرٍ قَالَ كُنَّا نُعْفِى السِّبَالَ إِلاَّ فِى حَجٍّ أَوْ عُمْرَةٍ،

(২) জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা হজ্জ ও ওমরা ব্যতীত সব সময় দাঁড়ি লম্বা রাখতাম’।[35]

উক্ত আছারটির সনদে আবুয যুহায়ের নামক মুদাল্লিস রাবী এবং আব্দুল মালেক বিন আবী সুলায়মান নামক যঈফ রাবী থাকায় বর্ণনাটি যঈফ।[36] মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাতে এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে, যার সনদে আবু হেলাল নামে একজন দুর্বল রাবী থাকায় সেটিও যঈফ।[37] তাছাড়া বিষয়গুলো হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট।

৩- عَنْ سِمَاكِ بْنِ يَزِيْدَ، قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ يَأْخُذُ مِنْ لِحْيَتِهِ مِمَّا يَلِي وَجْهَهُ-

(৩) সেমাক বিন ইয়াযীদ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী (রাঃ) মুখের আশ-পাশের দাড়ি ছাঁটতেন।[38]

উপরোক্ত আছারটির সনদে যাম‘আ বিন ছালেহ আল-জুনদী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। ফলে আছারটি আমল যোগ্য নয়।[39]

4- عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: التَّفَثُ الرَّمْيُ، وَالذَّبْحُ، وَالْحَلْقُ، وَالتَّقْصِيرُ، وَالْأَخْذُ مِنَ الشَّارِبِ وَالْأَظْفَارِ وَاللِّحْيَةِ-

(৪) ইবনু আববাস (রাঃ) আত-তাফাছ-এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘সেটি হ’ল পাথর নিক্ষেপ, পশু যবহ, মাথা মুন্ডন, চুল ছোট করা এবং দাড়ি, গোঁফ ও নখ ছোট করা’।[40]

উক্ত আছারটি যঈফ। কারণ প্রথমতঃ এর সনদে আব্দুল মালেক নামে একজন মুদাল্লিস রাবী আছেন। দ্বিতীয়তঃ এর মতনে ইযতিরাব রয়েছে।[41] তাছাড়া এটি হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট।

এই ধরনের তাফসীর আতা বিন রাবাহ ও মুজাহিদ (রহঃ) সহ অন্যান্য তাবেঈ থেকেও বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো থেকে বুঝা যায় যে, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাটা জায়েয। কিন্তু ঐ বর্ণনাগুলির প্রত্যেকটি দু’টি কারণে ত্রুটিযুক্ত। একটি হ’ল সনদ যঈফ। আর দ্বিতীয়তঃ ইযতিরাব। আর বর্ণনাগুলো ছহীহ সনদে এসেছে, সেগুলোর একটিতেও দাড়ি কাট-ছাঁট করার কথা নেই। অতএব যঈফ সনদে বর্ণিত আছার দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বিরোধী সাব্যস্ত হয় না।[42]

5- عَنِ الحَسَنِ قَالَ : كَانُوا يُرَخِّصُّونَ فِيمَا زَادَ عَلَى القَبْضَةِ مِنَ اللِّحْيَةِ أنْ يُؤْخَذَ مِنْهَا–

(৫) হাসান বছরী (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ছাহাবীগণ এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি ছাঁটার ব্যাপারে ছাড় দিতেন’।[43]

উপরোক্ত আছারের সনদে আশ‘আছ বিন সাওয়ার আল-কিন্দী সকল বিদ্বানের নিকটে যঈফ।[44]

6- عَنْ إِبْرَاهِيْمَ قَالَ: كَانُوْا يَأْخُذُوْنَ مِنْ جَوَانِبِهَا وَيُنَظِّفُوْنَهَا يَعْنِي اللِّحْيَةَ –

(৬) ইবরাহীম নাখঈ (রহঃ) বলেন, ছাহাবীগণ দাড়ির পার্শ্ব থেকে কাট-ছাঁট করে তা পরিপাটি করে রাখতেন।[45]

উক্ত আছারের সনদে কূফার বিদ্বান ইয়া‘লা বিন ওবায়েদ থাকায় বর্ণনাটি যঈফ। কারণ ইয়া‘লা বিন ওবায়েদ যখন সুফিয়ান ছাওরী থেকে বর্ণনা করেন তখন তার বর্ণনা মুহাদ্দিছগণের নিকটে অগ্রহণযোগ্য।[46]

উল্লেখ্য যে, অতীতের বড় একদল বিদ্বানসহ আধুনিক যুগের বিদ্বানদের একটি অংশ রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত যঈফ হাদীছসমূহ, ইবনু ওমর বর্ণিত ছহীহ আছার ও আবু হুরায়রা, আলী, জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত যঈফ আছার এবং তাবেঈ ও কতিপয় সালাফের এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাট-ছাঁট করার আমল থাকার কারণে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাট-ছাঁট করা জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ফৎওয়া প্রদান করেছেন।[47]

কাযী ইয়ায, ইবনু নাযীমসহ হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ বিদ্বান ও ইমাম কুরতুবী মনে করেন, এমন অতিরিক্ত দাড়ি রাখা যাবে না যা দেখতে অসুন্দর বা ব্যক্তির জন্য অস্বস্তিকর কিংবা জট বাঁধলে অতিরিক্ত অংশ কাটা জায়েয।[48]

উপরোক্ত বিদ্বানগণ যে দলীলগুলোর ভিত্তিতে দাড়ি কাট-ছাঁট করা জায়েয বলেছেন, তা যদি গ্রহণযোগ্যও হয়, তবুও তা নিঃসন্দেহে উত্তমের বিপরীত। কারণ রাসূল (ছাঃ) হজ্জ বা হজ্জের বাইরে কোন সময় দাড়ি কাট-ছাঁট করেননি। সেজন্য একদল বিদ্বান দাড়িকে কোন রকম কাট-ছাঁট না করে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াকে ওয়াজিবী সুন্নাত বলেছেন।

ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (রহঃ) বলেন,ذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى ظَاهِرِ الْحَدِيثِ فَكَرِهُوْا تَنَاوَلَ شَيْءٍ مِنَ اللِّحْيَةِ مِنْ طُولِهَا وَمِنْ عَرْضِهَا، ‘একদল বিদ্বান হাদীছের প্রকাশ্য অর্থ নিয়েছেন। ফলে তারা দাড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ থেকে কোন কিছু কাট-ছাঁট করাকে মাকরূহ মনে করেন।[49] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,والصحيح كراهة الاخذ منها مطلقا بل يتركها على حالها كيف كانت للحديث الصحيح واعفوا اللحي، ‘বিশুদ্ধ হ’ল সাধারণ অবস্থায় দাড়ি কাট-ছাঁট করা মাকরূহ এবং হাদীছের ভিত্তিতে দাড়িকে কাট-ছাঁট না করে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া’।[50] তিনি আরো বলেন,وَالْمُخْتَارُ تَرْكُ اللِّحْيَةِ عَلَى حَالِهَا وَأَلَّا يَتَعَرَّضَ لها بتقصير شئ أَصْلًا، ‘উত্তম হ’ল দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া এবং কোনভাবে কাট-ছাঁট করে হস্তক্ষেপ না করা’।[51]

শায়খ বিন বায (রহঃ) বলেন,الواجب إعفاء اللحية وتوفيرها وإرخاؤها وعدم التعرض لها بشيء، ‘দাড়িকে কোনভাবে হস্তক্ষেপ না করে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব।[52] শায়খ উছায়মীন (রহঃ)ও অনুরূপ বলেছেন।[53]

সঊদী আরবের সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ বলেন,معنى إعفاء اللحية تركها لا تقص حتى تعفو أي تكثر. هذا هديه في القول أما هديه في الفعل فإنه لم يثبت عنه صلى الله عليه وسلم أنه أخذ من لحيته، ‘ই‘ফাউল লিহ্ইয়া অর্থ দাড়িকে ছেড়ে দেওয়া, কাট-ছাঁট না করা যাতে তা লম্বা হয়ে যায়। এটিও হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর বাণীতে নির্দেশনা। আর তার কর্মের আদর্শ হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর আমল থেকে দাড়ি কাট-ছাঁট করা সাব্যস্ত না হওয়া’।[54]

তারা আরো বলেছেন,ما يفعله بعض الناس من حلق اللحية أو أخذ شيء من طولها وعرضها فإنه لا يجوز؛ لمخالفة ذلك لهدي الرسول صلى الله عليه وسلم وأمره بإعفائها، ‘কিছু মানুষ দাড়ি মুন্ডন করে বা দাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হ’তে কিছু কাট-ছাঁট করে যা জায়েয নয়। কেননা এটা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ ও দাড়ি রাখার ব্যাপারে তার নির্দেশনা বিরোধী কাজ’।[55]

শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রহঃ) বলেন, القص من اللحية خلاف ما أمر به النبي صلى الله عليه وسلم في قوله: (وفروا اللحى) ، (أعفوا اللحى) ، (أرخوا اللحى) فمن أراد اتباع أمر الرسول صلى الله عليه وسلم، واتباع هديه صلى الله عليه وسلم، فلا يأخذن منها شيئاً، فإن هدي الرسول، عليه الصلاة والسلام، أن لا يأخذ من لحيته شيئاً، وكذلك كان هدي الأنبياء قبله. ‘দাড়ি ছোট করা রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ বিরোধী কাজ...। সুতরাং যারা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশের অনুসরণ করতে চায় এবং তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শ হ’ল দাড়ির কোনকিছু কাট-ছাঁট না করা এবং এটাই ছিল তাঁর পূর্বের সকল নবী-রাসূলের আদর্শ।[56]

অবশ্য যারা দাড়ি কাট-ছাঁট করাকে জায়েয বলেছেন, তারাও দাড়িকে নিজে অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া উত্তম বলেছেন। যেমন হাফেয ইরাকী (রহঃ) বলেন, وَاسْتَدَلَّ بِهِ الْجُمْهُورُ عَلَى أَنَّ الْأَوْلَى تَرْكُ اللِّحْيَةِ عَلَى حَالِهَا وَأَنْ لَا يُقْطَعَ مِنْهَا شَيْءٌ، وَهُوَ قَوْلُ الشَّافِعِيِّ وَأَصْحَابِهِ، ‘এই হাদীছ দ্বারা জমহূর বিদ্বানগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া এবং তা থেকে কোনকিছু কাট-ছাঁট না করা উত্তম। আর এটাই ইমাম শাফেঈ ও তাঁর অনুসারীদের অভিমত’।[57]

ইমাম গাযালী (রহঃ) দাড়ি কাট-ছাঁট করার ব্যাপারে মতপার্থক্য বর্ণনা করার পর বলেন, وكرهه الحسن وقتادة وقالا : تركها عافية أحب؛ لقوله صلى الله عليه وسلم: أعفوا اللحى- ‘দাড়ি কাট-ছাঁট করাকে হাসান ও ক্বাতাদা (রহঃ) অপসন্দ করতেন। তারা বলতেন, (দাড়িকে রেখে দাও) রাসূল (ছাঃ)-এর বাণীর কারণে দাড়িকে নিজ অবস্থায় রেখে দেওয়া নিরাপদ এবং অধিক পসন্দনীয়’।[58]

উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যারা এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কাট-ছাঁট করাকে জায়েয বলেছেন, তারাও দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াকে উত্তম বলেছেন। অতএব নিরাপদ ও উত্তম হ’ল দাড়িকে নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া।

এক্ষণে কোন বর্ণনাকারী ছাহাবী স্বীয় বর্ণনার বিপরীত আমল করলে বা ফৎওয়া প্রদান করলে উম্মতের করণীয় সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কোন মাসআলা বর্ণনাকারী ছাহাবীর আমল বর্ণিত হাদীছের বিপরীত হ’লে তার বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করতে হবে এবং তার ফৎওয়া পরিহার করতে হবে।

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-এর একটি আমল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আমলের বিপরীত হ’লে করণীয় সম্পর্কে ইবনু ওমরকে প্রশ্ন করা হ’লে তিনি উত্তরে বলেন,أَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ أَبِي نَهَى عَنْهَا وَصَنَعَهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَأَمْرَ أَبِي نَتَّبِعُ؟ أَمْ أَمْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟، فَقَالَ الرَّجُلُ: بَلْ أَمْرَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ‘তুমি কি মনে কর, কোন বিষয় যদি আমার পিতা নিষেধ করেন আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করে থাকেন, তবে সেক্ষেত্রে কি আমার পিতার অনুসরণ করব, না রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অনুসরণ করব? লোকটি বলল, বরং রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশের অনুসরণ করব। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ছাঃ) তা (তামাত্তু) করেছেন’।[59] অন্যত্র এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, أَفَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَحَقُّ أَنْ تَتَّبِعُوا سُنَّتَهُ أَمْ سُنَّةَ عُمَرَ، ‘তোমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য না ওমরের সুন্নাত’?[60]

খত্বীব বাগদাদী (রহঃ) বলেন,إذَا رَوَى الصَّحَابِيُّ عَنْ رَسُولِ اللهَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ رُوِيَ عَن ذَلِكَ الصَّحَابِي خِلافاً لِمَا رَوَى فَإنَّهُ يَنْبَغِي الأخْذُ بِرِوَايِتِهِ، وتَرْكُ مَا رُوِيَ عَنْهُ مِن فِعْلِهِ أوْ فُتْيَاهُ، لأنَّ الوَاجِبَ عَلَيْنَا قَبُولُ نَقْلِهِ وَرِوَايَتِهِ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ قَبُولَ رَأْيِهِ ... ولأنَّ الصَّاحِبَ قَدْ يَنْسَى مَا رَوَى وَقْتَ فُتْيَاهُ ... ولأنَّ الصَّحَابِيَّ قَدْ يَذكُرُ مَا رَوَى، ‘যখন কোন ছাহাবী রাসূল (ছাঃ) থেকে কোন হাদীছ বর্ণনা করেন। অতঃপর উক্ত ছাহাবী থেকে তার বিপরীত কিছু বর্ণিত হয়, তাহ’লে এক্ষেত্রে তার থেকে বর্ণিত হাদীছ গ্রহণ করতে হবে। তার থেকে বর্ণিত তার কর্ম বা ফৎওয়া বর্জন করতে হবে। কেননা আমাদের জন্য আবশ্যক হ’ল তার থেকে বর্ণিত রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ গ্রহণ করা এবং তার (ছাহাবীর) রায় বা মতামত গ্রহণ না করা।... কারণ কখনো কখনো বর্ণনাকারী ফৎওয়া প্রদানের সময় তার বর্ণিত হাদীছের কথা ভুলে যান।... আবার কখনো স্মরণ করতে পারেন’।[61]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,لاَ يُتْرَكُ الحَدِيثُ الصَّحِيحُ المَعْصُومُ لِمُخَالَفَةِ رَاوِيهِ لَهُ، فَإنَّ مُخَالَفَتَهُ لَيْسَتْ مَعْصُومَةٌ، ‘বর্ণনাকারীর বিরোধী আমল বা উক্তির কারণে নিরাপদ ও ছহীহ হাদীছ বর্জন করা যাবে না। কারণ তার বিরোধিতাটা নিরাপদ নয়’।[62]

ইসমাঈল আনছারী (রহঃ) ইবনু ওমর (রাঃ)-এর আমল সম্পর্কিত হাদীছ বর্ণনার পরে বলেন,الحُجَّةُ فِي رِوَايَتِهِ، لاَ فِي رَأيِهِ، وَلاَ شَكَّ أنَّ قَوْلَ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِعْلَهُ أحَقُّ وَأوْلَى بِالاتِّبَاعِ مِن قَوْلِ غَيْرِهِ كَائِناً مَن كَانَ، ‘তার বর্ণিত হাদীছে দলীল রয়েছে, তার মতামতে নয়। নিঃসন্দেহে রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী ও কর্মের আনুগত্য করা অধিক উপযুক্ত ও অন্য যে কারো আনুগত্য থেকে উত্তম। সে যেই হোক না কেন’।[63]

শায়খ আলবানী (রহঃ) এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,الذي نختاره القبضة والمسألة فيها نظر والأحسن اتباع السنة على كل حال ‘আমি যা পসন্দ করি তা হ’ল এক মুষ্টি। তবে উক্ত মাসআলাতে আপত্তি রয়েছে। আর সর্বাধিক উত্তম হ’ল সর্বাবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের অনুসরণ করা’।[64]

রাসূল (ছাঃ) উম্মতের জন্য অনুসরণীয়। আর তিনি যেহেতু কোন দিন দাড়ি কাট-ছাঁট করেননি সেজন্য তাঁর উম্মতের জন্য করণীয় হবে দাড়িকে নিজে অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া। (আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত)

উল্লেখ্য যে, সমাজে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা অনেক ছোট করে দাড়ি রাখে বা ট্রিম করে, যা দাড়ি রাখার নামে স্রেফ প্রতারণা ও অপকৌশল। অতীতে মুশরিক ও অন্যান্য বিধর্মীরা এভাবে দাড়ি ছোট করে রাখত। রাসূল (ছাঃ) তাদের দাড়ির ভয়াবহ অবস্থা দেখে তিনি তার উম্মতকে দাড়ি লম্বা করার নির্দেশ দেন। আবু শামাহ বলেন, وَقَدْ حَدَّثَ قَوْمٌ يَحْلِقُونَ لِحَاهُمْ وَهُوَ أَشَدُّ مِمَّا نُقِلَ عَنِ الْمَجُوسِ أَنَّهُمْ كَانُوا يَقُصُّونَهَا ‘কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা তাদের দাড়ি মুন্ডন করে, যা অগ্নিপূজকদের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে তা থেকেও ভয়াবহ। কারণ তারা দাড়ি সাইজ করে ছোট করে।[65]

আল্লামা আলাঈ বলেন,إنَّ الْأَخْذَ مِنْ اللِّحْيَةِ وَهِيَ دُونَ الْقَبْضَةِ كَمَا يَفْعَلُهُ بَعْضُ الْمَغَارِبَةِ وَمُخَنَّثَةُ الرِّجَالِ لَمْ يُبِحْهُ أَحَدٌ وَأَخْذُ كُلِّهَا فِعْلُ يَهُودَ وَالْهُنُودِ وَمَجُوسِ الْأَعَاجِمِ ‘এক মুষ্টির নীচে দাড়ির কিছু অংশ কাটা যেমন কিছু পশ্চিমা ও পুরুষ হিজড়ারা করে থাকে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর পুরো দাড়ি মুন্ডন করা ইহূদী, হিন্দু ও অনারব অগ্নিপূজকদের কাজ’।[66]

আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) দাড়ি ছোটকারীদের অপকৌশলের কথা উল্লেখ করে বলেন, والبعض يأخذ القبضة بأصبعه الإبهام والتي تليها، وهذه ليست بقبضة؛ بل هذا حلق؛ لأنه لا يبقى منها شيء، فلا ينبغي الاحتيال ‘কেউ কেউ তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলী দাড়ি ভিতর প্রবেশ করিয়ে অতিরিক্ত পুরো দাড়ি কাট-ছাট করে যা মুষ্টি হিসাবে গণ্য হবেনা। বরং এটা মুন্ডন। কেননা এতে কিছুই থাকেনা। সুতরাং এভাবে অপকৌশল করা সমীচীন নয়’।[67]

দাড়ি রাখার উপকারিতা :

দাড়ি রাখার উপকারিতা হ’ল- (১) এতে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশের আনুগত্য করা হয় (২) মুশরিক এবং অগ্নি পূজকদের বিরোধিতা করা হয় (৩) এতে মহিলাদের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে থাকা যায় (৪) গোঁফ ছাঁটা এবং দাড়ি রাখা মুসলমানদের নিদর্শন (৫) এতে পুরুষদের পৌরুষ ফুটে ওঠে (৬) এতে চেহারা ও চোখের দীপ্তি, যৌনশক্তি এবং দেহের স্নায়ুবিক ব্যবস্থাপনা ঠিক থাকে। পক্ষান্তরে নিয়মিত শেভ করলে এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এলার্জি, একজিমা, যৌন দুর্বলতাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। বার্লিন ইউনিভার্সিটির গবেষক ডাঃ মোর একথা বলেছেন।[68] কোন কোন চিকিৎসক বলেন, যদি পরপর ৮ পুরুষ ধরে কোন বংশের লোক নিয়মিত শেভ করতে অভ্যস্ত হয়, তাহ’লে ঐ বংশের ৮ম পুরুষ দাড়ি শূন্য হয়ে থাকে। যেমন বহু হিজড়াকে দেখা যায়, তাদের পুরুষের ন্যায় সবই আছে। অথচ দাড়ি নেই।[69]

দাড়ি রাখা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ডের এক দল গবেষকের একটি গবেষণা কর্ম প্রকাশিত হয়েছে ‘রেডিয়েশন প্রোটেকশন ডোজিমেট্রি জার্নালে’। এতে জানা যায়, দাড়ি সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি ঠেকায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত এবং স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। যাদের অ্যাজমার সমস্যা আছে, তারাও দাড়ির মাধ্যমে অনেক উপকার পেতে পারেন। দাড়ি বাতাস ঠেকিয়ে চামড়ার আর্দ্রতা বজায় রাখে। নিয়মিত শেভ করলে দাড়ির মূলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটায় এবং ব্রন সৃষ্টি করে।

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, وأمَّا شَعْرُ اللِّحْيَةِ، فِفِيهِ مَنَافِعُ : مِنْهَا الزِّينَةُ والوَقَارُ والهَيْبَةُ. وَلِهَذا لا يُرَى عَلَى الصِّبْيَانِ والنِّسَاءِ مِنَ الهَيْبَةِ والوَقَارِ مَا يُرَى عَلَى ذَوِي اللِّحَى. ‘দাড়ির চুলে প্রভূত কল্যাণ রয়েছে, যেমন সৌন্দর্য, সম্মান-মর্যাদা ও শ্রদ্ধা। সেজন্য দাড়ি ওয়ালাদের প্রতি যেরূপ সম্মান-মর্যাদা ও শ্রদ্ধা দেখানো হয়, তদ্রূপ নারী ও শিশুদের প্রতি দেখানো হয় না’।[70]

উপসংহার : দাড়ি মুসলমানদের অন্যতম নিদর্শন। যার মাধ্যমে মুসলিম পুরুষদের চেনা যায়। ইসলামের প্রতিটি বিধানের দুনিয়াবী এবং পরকালীন কল্যাণ রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর লক্ষ লক্ষ ছাহাবী কেউ কখনো দাড়ি শেভ করেছেন মর্মে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। কারণ তারা রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে মেনে চলতেন। সেজন্য সকল যুগের নির্ভরযোগ্য বিদ্বানগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, দাড়ি রাখা ওয়াজিব ও মুন্ডন করা হারাম। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামের এই অন্যতম শে‘আরস্বরূপ এই বিধানটি সঠিকভাবে সুন্নাত মোতাবেক পালন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম

নিয়ামতপুর, নওগাঁ।

[1]. মুসলিম হা/২৬১; মিশকাত হা/৩৭৯।

[2]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/১২২১; ছহীহাহ হা/৩১২৩।

[3]. আহমাদ, আবূদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫; ছহীহাহ হা/২৭৩৫।

[4]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফৎহুল বারী ১০/৩৩৯; দলীলুল ফালেহীন ৬/৬৫৮; আল-ফাজরুস সাতে‘ ৮/১৩৫।

[5]. আহমাদ, আবূদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫; ছহীহাহ হা/২৭৩৫।

[6]. ফৎহুল বারী ১০/৩৪০।

[7]. মা‘আলিমুস সুনান ১/৩১; ফৎহুল বারী ১০/৩৪২।

[8]. নায়লুল আওত্বার ১/১৩১।

[9]. নববী, শরহু মুসলিম ৩/১৪৮; ফৎহুল বারী ১১/৫৫৭; ছালেহ আল-ফাওযান, আল-বায়ান লিআখতাই বা‘যিল কিতাব ১/৩০৫।

[10]. নায়লুল আওত্বার ২/১৫৩ ।

[11]. আল-বায়ান লিআখতাই বা‘যিল কিতাব ১/৩০৫।

[12]. ঐ ১/৩০৪।

[13]. ঐ ১/৩০।

[14]. নববী, শরহু মুসলিম ৩/১৩১।

[15]. শরহ মুসলিম ৩/১৩১।

[16]. ই‘লামুল মুআক্কিঈন ১/৩২-৩৪।

[17]. ফৎহুল বারী ১০/৩৫১।

[18]. তিরমিযী হা/২৭৬২; মিশকাত হা/৪৪৩৯।

[19]. যঈফাহ হা/২৮৮।

[20]. শু‘আবুল ঈমান হা/৬০২০।

[21]. যঈফাহ হা/২৩৫৫ ও এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[22]. বুখারী হা/৫৮৯২; মুসলিম হা/২৫৯; মিশকাত হা/৪৪২১।

[23]. আবূদাউদ হা/২৩৫৭; ইরওয়া হা/৯২০, সনদ হাসান।

[24]. মুওয়াত্ত্বা মালেক হা/১৮৬।

[25]. কিতাবুল উম্ম ২/২৩২; বায়হাকী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০০০৬।

[26]. নায়লুল আওত্বার ১/১৪৯।

[27]. ফৎহুল বারী ১৬/৪৮৩; তোহফাতুল আহওয়াযী ৮/৩৯।

[28]. ফৎহুল বারী হা/৫৮৯২-এর ব্যাখ্যা ১০/৩৫০-৫১ পৃ.।

[29]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ৮/৩৭০, ১০/৭৯, ২৫/২৯৬, ২৯/৩৫।

[30]. আলী আহমাদ তাহতাবী, আল-লিহইয়াতু ফী যুইল কিতাবে ওয়াস-সুন্নাহ ১৩০ পৃ.।

[31]. তাফসীরে তাবারী হা/১১৩৮৫; আবু আব্দির রহমান ফুযী, আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৮ পৃ., সনদ ছহীহ।

[32]. তাবাকাতে ইবনু সা‘দ ৪/১৩৪, ৩৭, সনদ ছহীহ; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৫ পৃ.।

[33]. ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৪৮৬।

[34]. আবু হাতেম, আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ৬/৯৮, রাবী নং ৫১২।

[35]. আবূদাউদ হা/৪২০১; বায়হাকী, সুনানুল কুবরা হা/৮৯৪৮।

[36]. আলবানী, আবুদাউদ হা/৪২০১-এর আলোচনা; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ২৭-২৮ পৃ.

[37]. আদ-দুর্রুল মুনতাকা ২৮ পৃ.

[38]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৪৮০।

[39]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, তাকরীবুত তাহযীব রাবী নং ২০৪০; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ৩১ পৃ.।

[40]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৫৬৭৩; ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল উমদাহ ৩/৫।

[41]. আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৩৫ পৃ.

[42]. বিস্তারিত দ্র. আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৩৫ -৪০ পৃ.

[43]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩৫২৩।

[44]. তাকরীবুত তাহযীব ১১৩ পৃ.; তাহযীবুল কামাল ৩/২৬৮; ইবনু হিববান, আল-মাজরূহীন ১/১৭১; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৩৩ পৃ.

[45]. শু‘আবুল ঈমান হা/৬০১৮; যঈফাহ হা/৫৪৫৩৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[46]. আবু হাতেম, আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল ৯/৩০৫, রাবী নং ১৩১২; তাহযীবুল কামাল ৩২/৩৯২; যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল ৪/৪৫৮, রাবী নং ৯৮৩৮; তাহযীবুত-তাহযীব ১১/৪০১-২, রাবী নং ৭৭৯; তাকরীবুত তাহযীব ৬০৯ পৃ. রাবী নং ৭৮৪৪; ইবনু রজব, শারহু ইলালিত-তিরমিযী ২/৮১২; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৩০ পৃ.

[47]. খাল্লাল বাগদাদী, আল-উকূফু ওয়াত-তারাজ্জুল মিন মাসায়েলে ইমাম আহমাদ হা/৯৭-৯৮; আল-উকূফু ওয়াত-তারাজ্জুল মিন মাসায়েলে ইমাম আহমাদ হা/৯৯; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ৩০ পৃ.; মুহাম্মাদ ইবনু হাসান, আল-আছার হা/৯০০; আব্দুল্লাহ জাদী‘ ৫পৃ.; আল-মুদাউওয়ানাহ ২/৪৩০; আত-তামহীদ ২৪/১৪৫; কিতাবুল উম্ম ২/২৩২; বায়হাকী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১০০০৬; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৫৪৮২; ইহ্ইয়াউ ঊলূমিদ্দীন ১/১৪৩; ফাৎহুল বারী ১০/৩৫০; আল-ইস্তিযকার ৪/৩১৭; ফৎহুল কাদীর ২/২৭০; ইবনু বাত্তাল, শারহুল বুখারী ৯/১৪৭; আল-ইনছাফ ১/১২১; শারহুল ‘উমদাহ ১/২৩৬; শারহু মিশকাত ৮/২৫৪; ফৎহুল বারী ১০/৩৬; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীন ২/৪৫৯; ত্বরহুত তাছরীব ২/৪৯; যঈফাহ হা/৬২০৩-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।

[48]. ইকমালুল মু‘আল্লিম ২/৩৬; আল-বাহরুর রায়েক ৩/১২; আল-মুফহাম ১/৫১৬।

[49]. ফৎহুল বারী ১০/৩৫০।

[50]. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহায্যাব ১/২৯০।

[51]. শরহ মুসলিম ৩/১৫১।

[52]. মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৪৪৩।

[53]. ফাতাওয়া নূরুন আলাদ দারব ১০/১৭৩।

[54]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৫৬।

[55]. ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৫/১৫৬।

[56]. উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২, ১২৬।

[57]. ত্বরহুত তাছরীব ফী শারহিত তাকরীব ২/৮৩।

[58]. ইহ্ইয়াউ উলুমিদ্দীন ১/২৭৭, ১/১৪৩।

[59]. আহমাদ হা/৫৭০০; তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ

[60]. আহমাদ হা/৫৭০০; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা হা/৫৫৬৩; আবু আওয়া‘না হা/ ৩৩৬৬, সনদ ছহীহ।

[61]. আল-ফাক্বীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ ১/৩৭০-৭২।

[62]. ই‘লামুল মুয়াক্কিঈন ৩/৩৬।

[63]. হুকমুদ্দীন ৩১ পৃ.; আদ-দুর্রুল মুনতাকা ফী তাবঈনে ই‘ফাইল লেহ্ইয়া ১৩ পৃ.

[64]. দুরূসুন লিশ শায়খ আলবানী ৩৬/১১।

[65]. ফৎহুল বারী ১০/৩৫১।

[66]. ফৎহুল কাদীর ৪/৩১০; ইবনু আবেদীন, আল-‘উকূদুদ দুররিয়া ১/৩২৯।

[67]. শারহু যাদিল মুস্তাকনে‘ ৩২/২৪৪।

[68]. দ্রঃ সুন্নাতে রাসূল ও আধুনিক বিজ্ঞান ১/২৪১-৪৩।

[69]. যাকারিয়া কান্ধলভী, উজূবু ই‘ফাইল লিহইয়াহ ৩৩ পৃ.।

[70]. আত-তিবইয়ানু ফী আকসামিল কুরআন ১/৩১৭।






বিষয়সমূহ: সুন্নাত
ইখলাছ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল্লাহর নিদর্শন (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
বায়তুল মাক্বদিস মুসলমানদের নিকটে কেন এত গুরুত্ববহ? - ড. মুখতারুল ইসলাম
সমাজ সংস্কারে আত-তাহরীক-এর ফৎওয়া সমূহের ভূমিকা - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
শরী‘আতের আলোকে জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
পিতা-মাতার সাথে আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
আহলেহাদীছ আন্দোলন ও অন্যান্য ইসলামী আন্দোলন : তুলনামূলক আলোচনা - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
আল্লাহর প্রতি ঈমানের স্বরূপ (পঞ্চম কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
জামা‘আতে ছালাত আদায়ের গুরুত্ব, ফযীলত ও হিকমত (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
বিদ‘আত ও তার পরিণতি (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.